wemwgjvwni ivngv‡bi ivwng
পারিবারিক
জীবনে ধর্মীয় অনুসান মানা
আরটি-১২২৮৫
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভূমিকা: সমাজ জীবনের
প্রথম ভিত্তি হলো পরিবার। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, সকল রক্ত সম্পর্কিত একান্নাভুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠে সংক্ষিপ্ত মানব পরিমন্ডলকে
পরিবার বলে। মানব জীবনের শুরু থেকেই এ পরিবারের সূচনা। আর এ পরিবারের পথ বিন্যাস ছিল
স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে, কাজেই
একজন মুমিনের বিশাল দায়িত্ব রয়েছে তার স্ত্রী, সংসার ও পারিবারিক জীবন পরিচালনার প্রতি। নিম্নেœ একজন মুমিনের এ সকল বিষয়ের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য
সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
(ক) পরিবারের প্রতি দায়িত্ব: পরিবার গঠনের সূত্রপাত ঘটে স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে।
পরিবারের প্রধান হলেন স্বামী। এজন্য একজন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অনেক অধিকার রয়েছে।
আর এ অধিকার যথাযথভাবে প্রদান করাই হলো স্ত্রীর
প্রতি দায়িত্ব পালন।
সুতরাং এ দায়িত্ব পালন করতে হলে কতিপয় গুরু দায়িত্ব
রয়েছে। তা হচ্ছে-----
১.ভরণ পোষণ প্রদান: নারীদের উপর
যেমন পুরুষের অধিকার রয়েছে, এবং
যা প্রদান করা একান্ত জরুরী, তেমনি
ভাবে পুরুষদের উপরও নারীর অধিকার রয়েছে। স্ত্রীকে সঠিকভাবে ভরণ পোষণ দেয়া স্বামীর দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে,
وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِيْ عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ
دَرَجَةٌ وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيْمٌ
আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম
অনুযায়ী। আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব্ রয়েছে। (সূরা বাকারা-২:২২৮)
অন্য আয়াতে এসেছে,
هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ
“তারা তোমাদের জন্য পোষাক, এবং তোমরাও তাদের জন্য পোষাক।” (সূরা বাকারা-২:১৮৭)
এ সম্পর্কে রাসূলের হাদীসে এসেছে,
“তুমি যা খাবে তোমার স্ত্রীকে তা খাওয়াবে, তুমি যা পরবে তাকে তা পরাবে।(আবু দাউদ-)
২.সহযোগী হিসাবে মর্যাদা দেওয়া: স্ত্রীকে
একান্ত সহযোগী হিসাবে মেনে নিতে হবে। যেন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আল্লাহ
পাক বলেছেন,
هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ
“স্ত্রীরা তোমাদের পোশাক স্বরুপ আর তোমরাও তাদের জন্য
পোশাক স্বরুপ।” (সূরা
বাকারা-২:১৮৭)
৩.স্ত্রীকে সঙ্গ দেওয়া: স্বামীর
দায়িত্ব হলো স্ত্রীকে সঙ্গ দেওয়া। তার সহিত হাসি খুশি থাকা। এ সম্পর্কে প্রিয় নবী হযরত
মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর যখন প্রেমের দৃষ্টিতে তাকায় তখন
আল্লাহ তায়ালা তাহাদের প্রতি রহমতের নজর দান করেন। অতঃপর স্বামী যখন তার স্ত্রীর হাত ধরেন তখন তাদের
আঙ্গুলির ফাঁক দিয়ে গুনাহ সমূহ ঝরিয়া যায়। (জামি ছগীর-)
৪.প্রহার না করা: স্ত্রীর ভূল-ক্রটি
ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। প্রহার করা যাবে না। এ সম্পর্কে রাসূল করিম (সা.)
বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : " مَا ضَرَبَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , بِيَدِهِ شَيْئًا قَطُّ , إِلَّا أَنْ يُّجَاهِدَ فِي سَبِيْلِ
اللهِ ، وَلَا ضَرَبَ خَادِمًا أَوِ امْرَأَةً
“স্ত্রীর চেহারায় আঘাত করবে না।” (মেশকাত) সহীহ মুসলিম, হ/৬১৯৫; আবু
দাউদ,
হা/৪৭৮৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৮৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৬৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৮৮; বায়হাকী, হা/২০৫৭৭; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৬৭; শু’আবুল
ঈমান,
হা/১৩৫৮।
৫.দেন-মোহর পরিশোধ: দেন-মোহর
পরিশোধ করা ফরয। স্বামী হিসাবে একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো স্ত্রীর মোহরের ধার্যকৃত অর্থ
পরিশোধ করা। কোন প্রকার টাল-বাহানা বা কৌশলে পরিশোধ না করলে কঠিন গোনাহগার হতে হবে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ পাকের ঘোষণা হচ্ছে,
وَآتُوا النِّسَآءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيْئًا مَرِيْئًا
“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহর ঠিকভাবে আদায় করে দাও
খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” (সূরা নিসা-৪:৪)
৬.অন্যান্য: স্ত্রীকে পর্দা পুশিদার
তাগীগ দেওয়া, তার
গোপন কথা অন্য কারো কাছে না বলা, পিত্রালয়ে
রাখলে খোর-পোষ দেওয়া, সদা-সর্বদা
খোঁজ খবর নেওয়া স্বামীর একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
(খ).সন্তানের প্রতি দায়িত্ব: পবিত্র
ইসলামে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সন্তানের ভবিষ্যৎ
নির্ভর করে পিতা-মাতার দিক নির্দেশনার উপর। আর একটি পরিবার সুখী পরিবার হিসেবে গঠনের
জন্য প্রয়োজন সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন।
নিম্নে পিতা-মাতাকে সন্তানের প্রতি কতিপয় দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে
আলোচনা করছি।
১.ধর্মীয় উপদেশের মাধ্যমে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা: ছেলে-মেয়েকে সর্ব প্রথম ধর্মীয় উপদেশের মাধ্যমে
ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য। যে মানুষের মধ্যে মনুষত্ব রয়েছে, আদব কায়দা, সততা, ন্যায়পরায়নতা
ও ইনসাফ রয়েছে সেই প্রকৃত মানুষ। প্রকৃত ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় উপদেশের
বিকল্প নেই। এই মর্মে আল্লাহ পাক বলেছেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ
وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ
لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُوْنَ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উ¤মত, মানবজাতির
কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায়
কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু
তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (সূরা আল-ইমরান-৩:১১০)
২.সচ্চরিত্র গঠন: সন্তান যাতে
করে সচ্চরিত্রবান হতে পারে এজন্য ছোট বেলা থেকেই তাদেরকে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর
শিক্ষা এবং উপদেশ প্রদান করতে হবে। মানুষের ভাল মন্দ নির্ণয় করা হয় চরিত্রের মাপ কাঠি
দিয়ে। যার চরিত্র যত সুন্দর সে তত বেশী ভাল মানুষ এবং উন্নত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সকল প্রকার মানবিক গুণে গুণান্বিত
এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। বন্ধু ও শত্রু সকলের মুখে সমভাবে তাঁর অনুপম চরিত্র মাধুর্যের
প্রশংসা বর্ণিত হয়েছে। কঠোর প্রতিপক্ষ আবু সুফিয়ান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের সম্মুখে অকুণ্ঠ
চিত্তে তাঁর সততা, আমানতদারী
ও সচ্চরিত্রতার উচ্চ প্রশংসা করেছেন। (সহীহ বুখারী-৭)
আল্লাহপাক নিজেই স্বীয় রাসূলের প্রশংসায় বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (ক্বলম-৬৮:৪)। রাসূল (সা.) বলেন, بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الأَخْلاَقِ ‘আমি প্রেরিত হয়েছি সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের
জন্য’। (হাকেম-৪২২১; সহীহহ-৪৫)
সুতরাং দেখা যা যে, নবুঅত-পূর্ব জীবনে সকলের নিকটে প্রশংসিত হিসাবে তিনি
ছিলেন ‘আল-আমীন’ (বিশ্বস্ত, আমানতদার) এবং নবুঅত পরবর্তী জীবনে চরম শত্রুতাপূর্ণ
পরিবেশেও তিনি ছিলেন ধৈর্য ও সহনশীলতা, সাহস
ও দৃঢ়চিত্ততা, দয়া
ও সহমর্মিতা, পরোপকার
ও পরমত সহিষ্ণুতা, লজ্জা
ও ক্ষমাশীলতা প্রভৃতি অনন্য গুণাবলীর জীবন্ত প্রতীক।
আল্লাহ বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيُ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو
اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ
নিহিত রয়েছে, যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে’। (আহযাব-৩৩:২১)
তাঁর অনুপম চরিত্রমাধুর্য ও অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ পূর্ণভাবে
বর্ণনা করা ঐরূপ অসম্ভব, যেরূপ
পূর্ণচন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ণনা করা এবং খালি চোখে আকাশের তারকারাজি গণনা করা অসম্ভব।
তবুও দৃষ্টান্ত স্বরূপ কিছু চারিত্রিক নমুনা ও বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-
এই মর্মে রাসূল করিম (সা.) বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে সেই পূর্ণ মুমিন যার চরিত্র সুন্দর।
(মিশকাত-)
অন্য হাদীসে এসেছে,
“সাহাবাগণ রাসূলের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন কোন কারণে অধিক
লোক জান্নাতে যাবে ? রাসূল
(সা.) বলেছেন, আল্লাহর
ভয় ও উত্তম চরিত্র।”
অন্য একটি হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ , مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا
“চরিত্র মাধুর্যে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ।” (শারহুস সুন্নাহ-৩৬৪; দারেমী-৬২; মুসনাদে আহমাদ-১৩০৫৭; সহীহ ইবনে হিব্বান-২৮৯৪)
৩.সুশিক্ষা প্রদান: সন্তানদের
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে সুশিক্ষা প্রদান করা একান্ত কর্তব্য। কারণ দেশের শিক্ষিত
লোকের অভাব নেই, কিন্তু
সুশিক্ষিত লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আর এজন্যই অন্যায় বা দূর্নীতি সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান।
তাই আমাদের সন্তানদেরকে যদি সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে পারি তাহলেই আমরা তাদের থেকে অন্যায়
ও দূর্নীতিমূক্ত সমাজ বা দেশ সেবার আশা করতে পারি। আর এ শিক্ষার গুরুত্ব সর্ম্পকে আল্লাহ
পাক বলেন,
اِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ
“পড়ুন
আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা
আলাক-৯৬:১)
এ প্রসঙ্গে রাসূল করিম (সা.) বলেন,
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَمَهٗ
“তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই, যে নিজে কুরআন শেষে এবং অন্যকে তা শেখায়।” (সহীহ বুখারী-৫০২৭)
রাসূল (সা.) আরো বলেন,
“প্রত্যেক নর-নারীর উপর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।” ( )
অন্য হাদীসে এসেছে,
“পিতা তার সন্তানকে যা কিছু দান করেন, তার মধ্যে সর্বত্তোম দান হলো সুশিক্ষা ও উত্তম প্রশিক্ষণ।
(তিরমিযি-)
রাসূল করিম (সা.) আরো বলেন,
“নিজ সন্তানকে একটি ইসলামী আদব শিক্ষা দেয়া এক ‘সা’ (৩কেজি
৬৫০গ্রাম) শস্য দান করা অপেক্ষা উত্তম।” (তিরমিযি-)
হাদীসে এসেছে,
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ مِنْ صَدَقَةٍ
جَارِيَةٍ وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সকল আমলের দুয়ারই বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল
এর ব্যতিক্রম- এক. সদকায়ে জারিয়া, দুই.
উপকারী ইলম,
তিন. তার জন্যে দুআ করে
এমন নেক সন্তান। -(সুনানে নাসাঈ-৩৬৫১)
৪.অন্যান্য: সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ, পানাহার, বেশ-ভূষণ, শিক্ষা-দীক্ষা, চরিত্র গঠন, চিকিৎসা, বিবাহ শাদী ইত্যাদির জন্য তত্বাবোধানের দায়িত্ব পিতাকে
বহন করতে হয়। মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণাঃ
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَآءِ
“স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতিকে ভালবাসা মানুষের জন্য সৌন্দর্যময়ী
করে দেয়া হয়েছে।” (সূরা
আল-ইমরান-৩:১৪)
গ। পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব : সন্তানের
সব থেকে আপন হলেন পিতা-মাতা। পিতা-মাতার হক কোনভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। কাজেই তাদের
দেখা শুনা করা আল্লাহ ফরজ করেছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا
أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيْمًا (২৩) وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا
كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيْرًا (২৪) رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوْسِكُمْ إِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَإِنَّهُ
كَانَ لِلْأَوَّابِيْنَ غَفُوْرًا
“তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে
সদ্য -ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্ধাশায় বার্ধক্যে উপনীত
হয়;
তবে তাদেরকে উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে
শিষ্টাচারপূর্ণ কথা।
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, ন¤্রভাবে
মাথা নত করে দাও এবং বল: হে পালনকর্তা, তাদের
উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন
তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা
বনী ইসরাঈল-১৭:২৩-২৪)
ঘ। বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের প্রতি দায়িত্ব : বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের মর্ধ্যে গুরুত্ব পূর্ণ হলো নিম্নের ব্যক্তিবর্গ। যথা:-
১.ভাই-বোনদের প্রতি দায়িত্ব: পরিবারের
মধ্যে ভাই-বোনদের হক রয়েছে। এ হক আদায় করা আমাদের দায়িত্ব। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِيْنَ
“তোমরা তোমাদের আত্মীয়-স্বজনদের হক আদায় কর।” (সূরা বনী ইসরাঈল-১৭:২৬)
২.শ^শুর-শাশুড়ির প্রতি দায়িত্ব : শ^শুর-শাশুড়ি
পিতা-মাতার মর্যাদা তুল্য। তাই যথাসম্ভব তাদেরকে দেখাশুনা করা কর্তব্য। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রসঙ্গে
বলেনঃ
وَابْنَ السَّبِيْلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
“অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরের অভাব দুরকর। এবং কিছুতেই অপব্যয়
করো না। (সূরা বনী ইসরাঈল-১৭: ২৬)
৩.পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে ভাল ব্যবহার করা: স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতাসহ পরিবারের সকলের সাথে সর্বদা ভাল ব্যবহার
করতে হবে। দূর্ব্যবহার কোন মুমিনের কাজ নয়। এ সম্পর্কে রাসূল করিম (সা.) বলেনঃ
“তোমরা প্রত্যেকে রক্ষক, আর তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (বুখারী- মুসলিম- )
প্রসঙ্গতঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا
“হে বিশ্বাসীগণ
তোমরা নিজেরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুণ
থেকে রক্ষা কর।” (সূরা
তাহরীম-৬৬:০৬)
অপর হাদীসে এসেছে,
“হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূল করিম (সা.) এরশাদ করেন, মহিলারা যখন ৫ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে এবং রমযান মাসের
রোযা রাখবে এবং স্বীয় লজ্জাস্থান রক্ষা করবে ও স্বামীর আনুগত্য থাকবে, তখন সে বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা বেহেশতে প্রবেশ
করতে পারবে। (মিশকাত- )
৪.সংসার ও পারিবারিক ব্যয় ভার বহন: একজন
মুমিনের দায়িত্ব হলো পরিবারের কর্তা হিসাবে সংসার বা পরিবারের ব্যয় ভার বহন করা। পরিবারের
দেখ শুনা করা। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেনঃ
“হযরত আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, মানুষ তার পরিবারের সওয়াবের নিয়তে যখন খরচ করে তখন তা
হয় তার জন্য সদকা স্বারুপ।” ( )
৫.সম্মান ও স্নহো দেখানো: মুসলিম পরিবারের দাবী হলো ছোট-বড় নির্বিশেষে পরিবারের
সকল সদস্যদের প্রতি সম্মান ও স্নহে
প্রদর্শন করতে হবে। এ মর্মে হাদীসে এসেছে,
مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيْرَنَا، ويَعْرِفْ حَقَ كَبِيْرِنَا؛ فَليْسَ مِنَّا
“যে ব্যক্তি ছোটদের স্নহে ও বড়দের সম্মান করে না সে আমার দলভুক্ত নয়।”(সহীহ মুসলিম; সুনানে আবু দাউদ-)
৬.পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রীতি ও ভালবাসা প্রদর্শন ও সঙ্গ প্রদান: মুসলিম পরিবারে একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো পরিবারের
সকল সদস্যদের প্রতি ভালবাসা, সহানুভূতি
প্রদর্শন করা। রোগে-শোকে খোজ-খবর নেওয়া ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা। নবী করীম (সা.) বলেন,
: مَنْ لَا يَرْحَمِ النَّاسَ لَا يَرْحَمْهُ اللهُ
“তুমি মুসলিমগণকে তাদের পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদার্শন, ভালবাসা এবং
পারস্পরিক সহানুভুতি প্রদর্শনের মধ্যে দেখতে পারে।” (বুখারী-
মুসলিম-)
৭.পরিবারবর্গকে বিশেষ করে সালাত আদায়ের নির্দেশ করা: একটি পরিবারে যাতে সকলে নামাজী হতে পারে এবং
সবাই আল্লাহর এ হুকুম পালনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে পারে এ জন্য পরিবারবর্গকে
সালাতের নির্দেশ প্রদান করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا
نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
“আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন।
আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ।” (সূরা ত্বহা-২০:১৩২)
৮.সমাজের প্রতি দায়িত্ব: মানুষ
জন্মগতভাবে সামাজিক জীব। বিচ্ছিন্ন মানব জীবনের কল্পনাও করা অসম্ভব। সমাজ ছাড়া মানুষ
কখনো চলতে পারে না। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে জান্নাতে একা
থাকতে দেওয়া হয়নি। বরং মা হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টি করে তার সাথে একত্রে বসবাস করতে দেওয়া
হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম কে বলেছিলেন,
وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ
“হে আদমা! তুমি তোমার জোড়াসহ জান্নাতে বসবাস কর।” (সূরা বাকারা-২:৩৫)
উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনার
পরিপ্রেক্ষিতে একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, শান্তি স্থাপনের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশিত
উপরোক্ত বিধি-বিধান মেনে চলা একান্ত জরুরী। তাহলে আমাদের পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে শান্তি বিরাজ করবে। মহান আল্লাহ
তায়ালা আমাদের সকলকে আজকের বিষয়ের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।।