গীবত ও চোগলখুরি
(পর্ব-০১)
০২. সূচনাঃ
মানুষের মাঝে ভাল এবং মন্দ দু’টি স্বভাব বিরাজমান। মন্দ স্বভাবগুলির মধ্যে গীবত ও চোগলখুরি করা সবচেয়ে বেশী খারাপ। অনিচ্ছা সত্তে¡ খিয়ালীপনার বসবর্তী হয়ে অথবা নিজের অজান্তে এ কাজ মানুষ অহরহ করে থাকে। অথচ এ স্বভাব মানুষের নেক আমলগুলিকে ধ্বংস করে দেয়।
গীবত আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা, কুৎসা রটনা করা, অন্যের দোষ ক্রটি প্রকাশ করা। আর ইসলামের পরিভাষায় কারো অনুপস্থিতিতে এমন কোন দোষের কথা বলা, যা সে শুনলে মনে কষ্ট ও দুঃখ পাবে।
গীবতঃ
০৩. গীবতের সংজ্ঞাঃ রাসূল (সাঃ) স্বয়ং গীবতের সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ
্রأَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟ قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ:ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: ্রإِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ(مسلم,
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা কি জান গীবত কী? তাঁরা জবাব দিলেন; আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই এ ব্যপারে অধিক জ্ঞাত। রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তোমার ভাই সম্পর্কে এমন বিষয় আলোচনা করা যা জানতে পারলে তিনি অপছন্দ করবেন। পুনরায় আরয করা হল; যা বলছি যদি বিষয়টি সত্যসত্যই আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকেই থাকে, তাহলেও কি তা গীবত? তিনি বললেনঃ তুমি যা বলছ, তা যদি সত্যসত্যই তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তবে তা-ই গীবত। আর যদি তোমার বলা বিষয়টি তোমার ভাইয়ের মধ্যে না থাকে, তবে তা অপবাদ হিসেবে পরিগণিত হবে। (মুসলিম-৬৩৫৭ ইফাবা; তিরমিযি-১৯৪০ ইফাবা)
০৪. চোগলখুরির সংজ্ঞা ঃ
রাসূল (সাঃ) চোগলখুরির সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেনঃ
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রأَتَدْرُونَ مَا الْعَضْهُ؟ قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ্রنَقْلُ الْحَدِيثِ مِنْ بَعْضِ النَّاسِ إِلَى بَعْضٍ، لِيُفْسِدُوا بَيْنَهُمْ [قال الشيخ الألباني] : صحيح (ادب المفرد-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
أَلَا أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ؟ هِيَ النَّمِيمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, তোমরা কি জানো চোগলখোর কে? সকলে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লোকজনের মধ্যে বিবাদ ও হানাহানি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একের কথা অপরের কানে লাগায়। মুসলিম শরীফের বর্ননায় এসেছে- চোগলখুরী হচ্ছে, কুৎসা রটনা করা, যাতে মানুষের মাঝে বৈরিতার সৃষ্টি হয়। (মুসলিম-ই.ফা-৬৩৯৮,ই.সে-৬৪৪৯,আদাবুল মুফরাদ-৪২৬, বায়হাকী-১০৫৯৪)
গীবতের নিষেধাজ্ঞা
০৫. গীবত মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার সাদৃশঃ
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ ﴿الحجرات: ١٢
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ্। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে ? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহ্কে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজরাত, আয়াত-১২)
০৬. গীবতের পরিনামঃ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেনঃ
وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ ﴿الهمزة: ١
“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ। (সূরা হুমাযাহ্, আয়াত-০১)(ক) দোযখের ভয়াবহ শাস্তি ডেকে আনেঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ، فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ، قَالَ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ، وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ "")رَوَاهُ أَبُو دَاوُد-৪৮৭৮-مسند احمد-১৩৩৪০-بيهقى-৬২৯০(
যখন আমাকে মি‘রাজে (দোযখে) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন আমি এক দল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখগুলো ছিল তামার। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ খামচাচ্ছিল। আমি বললামঃ হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা মানুষের গোশত খেত এবং মানুষের মান-ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলত।(আবু দাউদ-৪৮৭৮,আহমদ-১৩৩৪০,বায়হাকী-৬২৯০)
০৭. (খ) গীবত যেনা থেকেও শক্ত গুনাহঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
عَن أبي سعيدٍ وجابرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
: ্রالْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: ্রإِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِ - وَفِي رِوَايَةٍ: ্রفَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ اللَّهُ لَهُ وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يغفِرَها لَهُ صَاحبه "(بيهقي في شعب الايمان-جم الاوسط-مشكوة
গীবত, যিনা থেকেও কঠিনতর অপরাধ। সাহাবাগণ আরয করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কিভাবে গীবত যিনা অপেক্ষায় জঘণ্যতম গুনাহ? তিনি জবাব দিলেন; যেনাকার যেনা করে যদি তওবা করে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু গীবতকারীকে আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ পর্যস্ত ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ না তার ভাই (যার গীবত করা হয়েছে) সে তাকে ক্ষমা করেছে। (বায়হাকী-৬৩১৫,মো’জামুল আওসাত-৬৫৯০, মিশকাত-৪৮৭৪)
০৮. (গ) গীবত সৎকর্ম বিনষ্ট করেঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ الْعَبْدَ لَيُعْطَى كِتَابَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْشُورًا، فَيُرِيهِ فِيهِ حَسَنَاتٍ لَمْ يَعْمَلْهَا فَيَقُولُ: رَبِّ، لَمْ أَعْمَلْ هَذِهِ الْحَسَنَاتِ فَيَقُولُ: إِنَّهَا كُتِبَتْ بِاغْتِيَابِ النَّاسِ إِيَّاكَ. وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيُعْطَى كِتَابَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْشُورًا، فَيَقُولُ: رَبِّ، أَعْمَلُ حَسَنَةً يَوْمَ كَذَا وَكَذَا؟ فَيُقَالُ لَهُ: مُحِيَتْ عَنْكَ بِاغْتِيَابِكَ النَّاسَ " (مساوئ الاخلاق للخرائطي
হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন উম্মুক্ত অবস্থায় এক বান্দার হাতে তার আমলনামা প্রদান করা হবে। তখন সে তাতে এমন কিছু সওয়াব দেখতে পাবে যা সে নিজে আমল করেনি। তখন সে প্রশ্ন রাখবে; হে আমার প্রভু! এই সৎ কর্মগুলি তো আমি আমল করিনি! আল্লাহ তায়ালা বলবেনঃ লোকেরা তোমার নামে যে গীবত করেছিল তার বিনিময়েই এ সওয়াব আমি তোমার আমলনামায় লিখে দিয়েছি।
০৯. অপর এক বান্দাকে কিয়ামতের দিন তার আমলনামা উম্মুক্ত অবস্থায় প্রদান করা হবে। সে বলবেঃ হে আমার প্রভু! অমুক অমুক দিন কি আমি সওয়াবের কিছু কাজ করেছিলাম না? (সেগুলি তো আমি আমার আমলনামায় দেখছি না, এর কারণ কি?) তাকে বলা হবে; তুমি মানুষের যে গীবত করতে, তার কারণেই তোমার আমলনামা থেকে তা মুছে ফেলা হয়েছে। (হাদীস কুদসী-হা: নং-৩৫৭)
১০. অন্য একটি হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ
: ্রأَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟ . قَالُوا: الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ. فَقَالَ: ্রإِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَأْتِي يَوْم الْقِيَامَة بِصَلَاة وَصِيَام وَزَكَاة وَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا. وَأَكَلَ مَالَ هَذَا. وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يَقْضِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرح فِي النَّار (رَوَاهُ مُسلم
তোমরা কি জান কোন ব্যক্তি নিঃস্ব গরীব? সাহাবাগণ বললেন, আমাদের মধ্যে গরীব হচ্ছে সে, যার কোন অর্থ সম্পদ নেই। তিনি বললেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিঃস্ব গরীব ব্যক্তি হবে সে, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় এবাদত সহ আবির্ভূত হবে।
১১. কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও মাল আত্মসাত করেছে, কারও রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। এদেরকে তার নেক আমল গুলো দিয়ে দেয়া হবে, উল্লেখিত দাবি সমূহপূরণ করার পূর্বেই যদি তার নেক আমলও শেষ হয়ে যায় তবে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে, অতঃপর তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম-৬৩৪৩ ই.ফা; তিরমিযি-২৬০৩)
১২. (ঘ) গীবত ও চোগলখোরী কবর আযাবের কারণঃ মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَبْرَيْنِ فَقَالَ
: ্রأَمَا إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، قَالَ فَدَعَا بِعَسِيبٍ رَطْبٍ فَشَقَّهُ بِاثْنَيْنِ ثُمَّ غَرَسَ عَلَى هَذَا وَاحِدًا وَعَلَى هَذَا وَاحِدًا ثُمَّ قَالَ:لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا-
“একদা রাসূল (সাঃ) দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ এ দুই ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। কোন বড় গুনাহের কারণে তাদের শাস্তি হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ! বিষয়টা বড়ই। তাদের একজন চোগলখুরী করে বেড়াত। আর অন্য জন পেশাবের সময় পর্দা করত না। (বুখারী-১২৯৫,৫৫১৩ ই.ফা, মুসলিম-৫৬৮ ই.ফা)১৩. (ঙ) গীবত ও চোগলখোর জান্নাতে যাবে নাঃ হাদীসে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌوَفِي نَمَّامٌ
হজরত হোযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি-“চোগলখোর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী-৫৫১৭ ই.ফা, মুসলিম-১৯৩.১৯৪ ই.ফা)----------চলবে
ইকরা-০৩
গীবত ও চোগলখুরি
(পর্ব-০২)
গীবত ও চোগলখুরি থেকে বাঁচার উপায়
গীবত ও চোগলখুরি থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন দিক রয়েছে যথাঃ
১৪. (ক) নিজের মুখকে সংজত রাখাঃ এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ (سورة ق
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সর্বদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। (সুরা ক্বাফ-১৮)অন্য স্থানে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
إِنَّالسَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا ﴿الإسراء: ٣٦
নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অস্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা বাণী ইস্রাঈল-৩৬)১৫. হাদীসে এসেছে-
عَن عُقْبةَبن عامرٍ قَالَ: لَقِيتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: مَا النَّجَاةُ؟ فَقَالَ: ্রأَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ وَالتِّرْمِذِيّ
“উক্ববা ইবনে আমের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম! ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কিসে মুক্তি মিলবে? রাসূল (সাঃ) বললেন,‘তোমার জিহবাকে (মুখকে) সংযত রাখ। ‘‘তোমার ঘর প্রশস্থ করবে,স্বীয় অপরাধের জন্য কান্নাকাটি করবে।” (তিরমিযী-২৪০৬; আহমদ-২২২৩৫)
(খ) কথা কম বলাঃযে কথা কম বলে তার ভূল কম হয়। কারণ মুখ এমন একটি জিনিস যা চুপ থাকা কঠিন যে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেই সফল কাম হয়।
(গ) মন্দ কথা থেকে বিরত থাকাঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
আল্লাহ্ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ্ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ। (সূরা নিসা-১৪৮)গীবত শ্রবনকারীর করণীয়ঃ
১৬. (ক) সম্ভব হলে আলোচনা বন্দ করে দেয়াঃ প্রিয় নবী মুহাম্মদুর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ
: ্রمَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللَّهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ القِيَامَةِ ثُمَّ تَلا هَذِهِ الآيَةَ: {وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ} [الرّوم:[حكم ا
“যে ব্যক্তি অন্য ভাইয়ের উজ্জত-সম্মান রক্ষার জন্য জবাব দেবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার মুখ থেকে দোযেেখর আগুন সরিয়ে দেবেন। (তিরমিযি-২০৫৬, আহমদ-২৭৫৪৩)১৭. (খ) মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়াঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ ﴿القصص: ٥٥
তারা যখন অবাঞ্জিত বাজে কথা-বার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না। (সূরা কাছাছ, আয়াত-৫৫)
(গ) অনর্থক কথা-বর্তা বর্জনঃ
১৮. আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ ﴿المؤمنون: ٣
যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত। (সূরা মুমিনুন, আয়াত-০৩)
وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا ﴿الفرقان: ٧٢
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। (সূরা ফুরকান-৭২)গীবতের বৈধ ক্ষেত্র
১৯. (ক) নিরুপায় মাজলুম হলেঃ আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ
لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا ﴿النساء: ١٤٨
আল্লাহ্ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ ্শ্রবণকারী, বিজ্ঞ। (সূরা নিসা-১৪৮)২০. (খ) কোন বিষয়ে ফাতওয়া জিজ্ঞাসাঃ হাদীসে রয়েছেঃ
قالت هِنْدُ امْرَأةُ أَبي سفْيَانَ للنَّبيِّ صلي الله عليه وسلم : إنَّ أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ وَلَيْسَ يُعْطِينِي مَا يَكْفيني وولَدِي إِلاَّ مَا أَخَذْتُ مِنْهُ، وَهُوَ لا يَعْلَمُ ؟ قَالَ خُذِي مَا يَكْفِيكِ وَوَلدَكِ بِالمَعْرُوفِ-(متفق عليه
আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা, রাসূল (সাঃ)-এর খেদমতে এসে আরয করল, আবু সুফিয়ান খুব কৃপণ স্বভাবের লোক। সে আমাকে আমার সন্তানাদির ভরণ-পোষণের উপযোগী ধন-মাল দান করে না। তখন আমি যদি তার অজ্ঞাতে তার ধন-মাল থেকে কিছু ব্যয় করি তবে সেটা কি সঠিক হবে? রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তোমার ও তোমার সন্তানাদির ভরণ-পোষণের উপযোগী মালামাল গ্রহণ করলে এতে দোষের কিছু হবে না। (বুখারী-২০৬৯,৬৬৯১; মুসলিম-৪৩২৮ ই.ফা)
২১. (গ) কারও ষড়যন্ত্র বা প্রতাড়না থেকে জনগণকে সজাগ করে দেয়াঃ হাদীসে এসেছে,
يَقُولُ (زَيْدُ بْنُ أَرْقَمُ) خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ أَصَابَ النَّاسَفِيهِ شِدَّةٌ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَىٍّ لأَصْحَابِهِ لاَ تُنْفِقُواعَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى يَنْفَضُّوا مِنْحَوْلِهِ وَقَالَ لَئِنْ رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّالأَعَزُّ مِنْهَا الأَذَلَّ - قَالَ - فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلمفَأَخْبَرْتُهُ بِذَلِكَ فَأَرْسَلَ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُبَىٍّ فَسَأَلَهُفَاجْتَهَدَ يَمِينَهُ مَا فَعَلَ فَقَالَ كَذَبَ زَيْدٌ رَسُولَ اللَّهِ صلى اللهعليه وسلم - قَالَ - فَوَقَعَ فِي نَفْسِي مِمَّا قَالُوهُ شِدَّةٌ حَتَّى أَنْزَلَاللَّهُ تَصْدِيقِي { إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ} قَالَ ثُمَّدَعَاهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِيَسْتَغْفِرَ لَهُمْ - قَالَ - فَلَوَّوْا رُءُوسَهُمْ-(بخارى
হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। সে সফরে লোকদেরকে খুব কঠিন অবস্থার (অভাব-অনটনের) সম্মুখিন হতে হল। তাই মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার সঙ্গীদের বললঃ যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে রয়েছে, তাদের জন্য তোমরা কিছু খরচ কর না। ফলে তারা এখান থেকে (যুদ্ধের ময়দান থেকে) পালিয়ে যাবে এবং এটাও বলল, যখন আমরা মদীনায় ফিরে যাব তখন সম্মানিত লোকেরা সেখান থেকে অসম্মানিত লোকদেরকে বের করে দেবে। তারপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে এই ঘটনার ব্যপারে অবহিত করলাম। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এতে সে অত্যন্ত কঠিন ভাষায় হলফ করে বললঃ সে এ ধরণের কথাই বলেনি। এর ফলে লোকেরা বলাবলি করল যে, যায়েদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে মিথ্যা বলেছে। লোকদের এ সংক্রাস্ত কথাবার্তা আমার মনে প্রচন্ড আঘাত লাগল। এমনকি আল্লাহ তা‘য়ালা আমার কথার সত্যতা স্বরূপ আয়াত নাজিল করলেনঃ “হে নবী! এই মুনাফিকরা যখন তোমার নিকট আসে তখন তারা বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিন্তু তা সত্তে¡ও আল্লাহ তা‘য়ালা সাক্ষ্য দিচ্ছেন, এই মুনাফিকরা চরমভাবে মিথ্যাবাদী। তারা নিজেদের শপথ সমূহকে ঢাল বানিয়ে নিয়েছে --আয়াতের শেষ পর্যন্ত)। এর পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে মাগফিরাত চাওয়ার জন্য ডাকলেন কিন্তু সে (উবাই অহংকার বশত) নিজের মাথা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে নিল।’’
(বুখারী-৪৫৩৯ ই.ফা; মুসলিম-৬৭৬৭ ই.ফা)
(ঘ) পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে যেমনঃ কানা, লেংড়া ইত্যাদি বলাঃ হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ: أَخْبَرَنِي ابْنُ أَخِي أَبِي رُهْمٍ كُلْثُومُ بْنُ الْحُصَيْنِ الْغِفَارِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا رُهْمٍ - وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِينَ بَايَعُوهُ تَحْتَ الشَّجَرَةِ - يَقُولُ: غَزَوْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ تَبُوكَ، فنُمْتُ لَيْلَةً بِالْأَخْضَرِ، فَصِرْتُ قَرِيبًا مِنْهُ، فَأُلْقِيَ عَلَيْنَا النُّعَاسُ، فَطَفِقْتُ أَسْتَيْقِظُ وَقَدْ دَنَتْ رَاحِلَتِي مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَيُفْزِعُنِي دُنُوُّهَا خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَ رِجْلَهُ فِي الْغَرْزِ، فَطَفِقْتُ أُؤَخِّرُ رَاحِلَتِي حَتَّى غَلَبَتْنِي عَيْنِي بَعْضَ اللَّيْلِ، فَزَاحَمَتْ رَاحِلَتِي رَاحِلَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَرِجْلُهُ فِي الْغَرْزِ، فَأَصَبْتُ رِجْلَهُ، فَلَمْ أَسْتَيْقِظْ إِلَّا بِقَوْلِهِ: ্রحَسِّ ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اسْتَغْفِرْ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রسِرْ . فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُنِي عَنْ مَنْ تَخَلَّفَ مِنْ بَنِي غِفَارٍ فَأُخْبِرُهُ، فَقَالَ - وَهُوَ يَسْأَلُنِي: ্রمَا فَعَلَ النَّفْرُ الْحُمُرُ الطِّوَالُ الثِّطَاطُ؟ قَالَ: فَحَدَّثْتُهُ بِتَخَلُّفِهِمْ، قَالَ: ্রفَمَا فَعَلَ السُّودُ الْجِعَادُ الْقِصَارُ الَّذِينَ لَهُمْ نَعَمٌ بِشَبَكَةِ شَرَخٍ؟ فَتَذَكَّرْتُهُمْ فِي بَنِي غِفَارٍ، فَلَمْ أَذْكُرْهُمْ حَتَّى ذَكَرْتُ أَنَّهُمْ رَهْطٌ مِنْ أَسْلَمَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أُولَئِكَ مِنْ أَسْلَمَ، قَالَ: ্রفَمَا يَمْنَعُ أَحَدَ أُولَئِكَ، حِينَ يَتَخَلَّفُ، أَنْ يَحْمِلَ عَلَى بَعِيرٍ مِنْ إِبِلِهِ امْرَءًا نَشِيطًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ فَإِنَّ أَعَزَّ أَهْلِي عَلَيَّ أَنْ يَتَخَلَّفَ عَنِّي الْمُهَاجِرُونَ مِنْ قُرَيْشٍ وَالْأَنْصَارُ، وَغِفَارٌ وَأَسْلَمُ-(اداب المفرد
৭৫৯-مسند احمد-১৯০৭৪-صحيح ابن حبان-৭২৫৭
হযরত আবূ রেহেম বলেছেন, আর তিনি ছিলেন বৃক্ষ তলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাতে যারা বায়াত হয়েছিলেন তাদের অন্যতম।----------------------------দীর্ঘ হাদীস) অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেনঃ বনী গিফার গোত্রের কে, যে পিছনে রয়ে গেল (যুদ্ধে অংশ নেয়নি)? তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ যে গৌঢ় বর্ণ, দীর্ঘাঙ্গী আর যাদের কেবল চোয়ালের মধ্যে সামান্য দাড়ি রয়েছে তারা কি করেছে? (অর্থাৎ তারা আমাদের সঙ্গী হয়েছে কিনা?) তারা যে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে আসেনি আমি সেটা তাঁকে জানালাম। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আর ঐ যে কৃষ্ণবর্ণ, খর্বাকৃতির লোকগুলি তারা কি করল? যাদের শাবকা শাদাখ পানির উৎসের পশুপাল আছে। তখন গিফার গোত্রের মধ্যে আমার স্মৃতির চোখ বুলাতে লাগলাম, কিন্তু সে গোত্রে তেমন কেউ আছে বলে আমার স্মরণ পড়ল না। অবশেষে আমার স্মরণ হল যে, ওহে তারা তো আসলাম গোত্রের লোক! তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তারা যখন আসতে পারে নাই তখন তাদের উটনীর উপর আল্লাহর রাস্তায় বের হতে আগ্রহী কোন যুবককে আরোহণ করাইয়ে কেন পাঠালাম না? কেননা, একথাটি চিস্তা করতে আমার কষ্ট হয় যে, কোরাইশ বংশীয় মুহাজিরগণ, আনসারগণ, গিফার গোত্রের লোকজন বা আসলাম গোত্রের কেউ যুদ্ধ যাত্রা কালে পিছনে পড়ে থাকবে।
(আদাবুল মুফরাদ-৭৫৯,আহমদ-১৯০৭৪,ছহীহ ইবনে হিব্বান-৭২৫৭)
গীবতের কাফ্ফারাঃ
২২. জীবিত থাকলে গীবতকৃত ব্যক্তির কাছে মাফ চাওয়াঃ
গীবতকৃত ব্যক্তির কাছে মাফ চাওয়া সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রمَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لِأَخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهَا، فَإِنَّهُ لَيْسَ ثَمَّ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ، مِنْ قَبْلِ أَنْ يُؤْخَذَ لِأَخِيهِ مِنْ حَسَنَاتِهِ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ أَخِيهِ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ بخارى
কোন ব্যক্তির উপর তার অপর ভাইয়ের যদি কোন দাবি থাকে, তা যদি তার মান-ইজ্জতের উপর অথবা অন্য কিছুর উপর জুলুম সম্পর্কিত হয়, তবে সে যেন আজই কপর্দকহীন-নিঃস্ব হওয়ার পূর্বেই তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে নেয়। অন্যথায় কিয়ামতের দিন তার জুলুমের সমপরিমাণ নেকী তার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হবে। যদি তার কোন নেকী না থাকে, তবে তার প্রতিপক্ষের গুনাহ থেকে জুলুমের সমপরিমাণ গুনাহ তার হিসেবের অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হবে। (বুখারী-২২৮৭ ই.ফা.বা)
২৩. মারা গেলে তার জন্য দোয়া করাঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ كَفَّارَةِ الْغِيبَةِ أَنْ تَسْتَغْفِرَ لِمَنِ اغْتَبْتَهُ تَقُولُ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا وَلَهُ ) رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ
গীবতের কাফ্ফারা হল, তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য এভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও এবং তাকেও মাফ করে দাও।(বায়হাকী-৫৭৫, মাসাবি উল আখলাক-২০৬, মিশকাত-৪৬৬০ তাজ,৪৮৭৭)
২৪. উপসংহারঃ
প্রিয় মুত্তাকী ভাইয়েরা! মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। তাই মুমিনদের পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবন হবে ভ্রাতৃত্বের জীবন। আর পরস্পর আস্থা, বিশ্বাস, ভালবাসা, সম্প্রীতি ইত্যাদি এই ভ্রাতৃত্বের জন্য অপরিহার্য শর্ত। আর পরস্পরের মাঝে অনাস্থা, অবিশ্বাস, ঘৃণা, বিদ্বেষ, মনোমালিন্য সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার হল গীবত ও চোগলখুরি।
সুতরাং যে সমাজে এই সমস্ত ব্যধির চর্চা হয় সে সমাজকে কখনও শান্তিপূর্ণ সমাজ হিসেবে গঠন করা যায় না। তাই গীবত ও চোগলখুরি সামাজিক ব্যধিও বটে। আসুন আমরা এই সামাজিক ব্যধিকে না বলি। জীবন থেকে পরিহার করি। সুস্থ সমাজ বির্নামানে সহায়ক হই। শেষান্তে তিনটি হাদীছের কথা শুনুন।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ ابْنِ أَبِي حُسَيْنٍ، عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ غَنْمٍ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " خِيَارُ عِبَادِ اللَّهِ الَّذِينَ إِذَا رُءُوا، ذُكِرَ اللَّهُ، وَشِرَارُ عِبَادِ اللَّهِ الْمَشَّاءُونَ بِالنَّمِيمَةِ، الْمُفَرِّقُونَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ، الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ (مشكاة-تاج
২৭৫৯৯ - حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ ابْنِ خُثَيْمٍ، عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ، عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রأَلَا أُخْبِرُكُمْ بِخِيَارِكُمْ قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: ্রالَّذِينَ إِذَا رُؤُوا، ذُكِرَ اللَّهُ تَعَالَى ثُمَّ قَالَ: ্রأَلَا أُخْبِرُكُمْ بِشِرَارِكُمْ؟ لْمَشَّاءُونَ بِالنَّمِيمَةِ، الْمُفْسِدُونَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ، الْبَاغُونَ لِلْبُرَآءِ الْعَنَتَ
الأدب المفرد مخرجا (ص: ১১৯)
৩২৩ - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ قَالَ: حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ، عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ، عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ قَالَتْ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রأَلَا أُخْبِرُكُمْ بِخِيَارِكُمْ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: ্রالَّذِينَ إِذَا رُؤُوا ذُكِرَ اللَّهُ، أَفَلَا أُخْبِرُكُمْ بِشِرَارِكُمْ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: ্রالْمَشَّاؤُونَ بِالنَّمِيمَةِ، الْمُفْسِدُونَ بَيْنَ الْأَحِبَّةِ، الْبَاغُونَ الْبُرَآءَ الْعَنَتَ [قال الشيخ الألباني] : حسن مسند إسحاق بن راهويه-২৩০৬ مسند البزار-২৭১৯- بيهقى-৬২৮২-
আল্লাহর উত্তম বান্দা হচ্ছে তারা, যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। আর নিকৃষ্ট বান্দা হচ্ছে তারা, যারা চোগলখোরী করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং যারা আল্লাহর নিষ্পাপ বান্দাদেরকে কোন গুনাহে জড়িত করে দিতে অথবা কষ্টে ফেলে দিতে প্রয়াসী থাকে। (মা’আরেফুল হাদীস-২/১৮৬, বায়হাকী)
-----------(শেষ)
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com