Wednesday, September 09, 2020

শিরক

 


‘‘শিরক’’
(পর্ব-০১)
০২. ভূমিকাঃ
আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে তাওহীদের বিশ্বাস দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকেন। তাওহীদই হল ঈমান ও আমলের মূলভিত্তি। শয়তান বিভিন্ন কায়দায় বনী আদমের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমানকে শিরকের আবর্জনায় কুলষিত করে দেয় এবং এর মাধ্যমে নিঃশেষ হয়ে যায় তার মহামূল্যবান আমল সমুহ।  শিরক অর্থ অংশীদার হওয়া, অংশীদার করা বা সহযোগী বানানো।
০৩. ক. শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ হলোঃ
অংশীদার করা। শিরক অর্থ শরীক করা, শরীক হওয়া। এর বহুবচন হলোঃ আশরাক ও শুরাকাউ অর্থাৎ অংশীদারগণ। তাই প্রসঙ্গত আল্লাহ পাক বলেছেন-
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ﴿النساء: ٣٦
“আর তোমরা এক আল্লাহ্র ইবাদত কর, তাঁর সাথে অপর কাউকে শরীক করো না।” (সূরা নিসা-০৪ঃ৩৬)
কুরআনের ভাষায় শিরক হলো কাউকে আল্লাহর সমতুল্য, সমকক্ষ বা তুলনীয় বলে মনে করা। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ 
অতএব তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাবে না। (সুরা বাকারা-০২ঃ২২)
প্রিয় হাযেরীন! আল্লাহর কোনো ক্ষমতায়, গুণে বা ইবাদতে অন্য কাউকে অংশীদার করাই শিরক। পরিচালনা, জীবনদান, মৃত্যুদান, বৃষ্টিদান, অলৌকিক সাহায্য, কল্যাণ, অকল্যাণ ইত্যাদি সকল ক্ষমতা আল্লাহর। আর কারো এরূপ ক্ষমতা বা অধিকার আছে বলে  বিশ্বাস করা শিরক।

০৪. খ. শিরক শব্দের পারিভাষিক অর্থ ঃ
আল্লাহর পাশাপাশি গায়রুল্লাহকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করা। আকীদার পরিভাষায় শিরক হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা যে সমস্ত কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, ইবাদত, আনুগত্য এবং নাম ও গুনাবলীর মধ্য থেকে যা নিজের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, তাকে অন্য কাউকে অংশীদার করাই হচ্ছে শিরক।

০৫. মানবজাতির স্বভাবজাত ধর্ম ঃ
ক. শিরক না করাই মনুষের স্বভাবজাত ধর্ম। এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا ۛ أَن تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَٰذَا غَافِلِينَ ﴿الأعراف: ١٧٢
“স্মরণ কর যখন তোমার রব বনী আদমের পৃষ্ঠ থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদের নিজেদেরকে সাক্ষী করলেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই, আমরা সাক্ষ্য দিলাম। (এর উদ্দেশ্য ছিল এই যে) তোমরা যেন কিয়ামতের দিন একথা বলতে না পারো যে, আমরা তো এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম।” (সূরা আ’রাফ-০৭ঃ ১৭২)
০৬. খ. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، (بخارى
“প্রতিটি সন্তানই তার সহজাত প্রকৃতি তথা তাওহীদের উপর জন্ম গ্রহণ করে, অতঃপর পিতামাতা তাকে ইহুদী অথবা খৃষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়।” (বুখারী-১৩০২ ই.ফা, মুসলিম-৬৫১৪ ই.ফা)
০৭. গ. আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَإِذَا مَسَّ الْإِنسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهُ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُو إِلَيْهِ مِن قَبْلُ وَجَعَلَ لِلَّهِ أَندَادًا لِّيُضِلَّ عَن سَبِيلِهِ ۚ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيلًا ۖ إِنَّكَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ ﴿الزمر: ٨
“যখন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট ¯পর্শ করে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে, অতঃপর তিনি যখন তাকে নেয়ামত দান করেন, তখন সে কষ্টের কথা ভুলে যায়, যার জন্যে পূর্বে ডেকেছিল এবং আল্লাহ্র সমকক্ষ স্থির করে; যাতে করে অপরকে আল্লাহ্র পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। বলুন, তুমি তোমার কুফর সহকারে কিছুকাল জীবন উপভোগ করে নাও। নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা যুমার-৩৯ঃ ০৮)
০৮. শিরকের সূচনাঃ
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শিরক প্রচারের ক্ষেত্রে ইহুদী যড়যন্ত্র ছিল মূল। আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা নামক ইহুদী  নিজেকে মুসলিম দাবি করে মক্কা-মদীনা থেকে দুরবর্তী ইরাক, মিসর ইত্যাদি এলাকায় নও মুসলিমদের মধ্যে শিরকের চালু করে। (খুঃ ইঃ ১১৪পৃ.) শিরকের সূচনা কবে কিভাবে এসেছে তা সঠিক ভাবে বলা যায় না। তবে ইসলামী ইতিহাসে তিনটি মতামত পাওয়া যায় যথাঃ

ক. কওমে নূহঃ
দুনিয়ায় প্রথম শিরক শুরু হয় নূহ (আঃ) এর কওমে। আর তা হয়েছিল সৎ ও বুযুর্গ লোকদের প্রতি তাদের অতিরিক্ত ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। তার কওমকে নেককার লোকদের অতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শনের নসীহত করে শয়তান তাদেরকে শিরকে লিপ্ত করেছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا ﴿نوح: ٢٣
“তারা বলল- তোমরা তোমাদের ইলাহদের কোন অবস্থায়ই বর্জন করো না, তোমরা ওয়াদ্দ, সুওয়াআ, ইয়াগুছ, ইয়াঊক এবং নাসরকে ত্যাগ করো না।” (সূরা নূহ-৭১ঃ ২৩)

০৯. খ. বনী ইসরাঈলে শিরকের সূচনাঃ
বনী ইসরাঈলে প্রথম গো বৎস পূজার প্রচলন করে সামেরী। এ ঘটনাটি আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা ত্বা-হা এর ৮৫-৮৯ আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
قَالَ فَإِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِنْ بَعْدِكَ وَأَضَلَّهُمُ السَّامِرِيُّ (৮৫) فَرَجَعَ مُوسَى إِلَى قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا قَالَ يَا قَوْمِ أَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًا أَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ أَمْ أَرَدْتُمْ أَنْ يَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِنْ رَبِّكُمْ فَأَخْلَفْتُمْ مَوْعِدِي (৮৬) قَالُوا مَا أَخْلَفْنَا مَوْعِدَكَ بِمَلْكِنَا وَلَكِنَّا حُمِّلْنَا أَوْزَارًا مِنْ زِينَةِ الْقَوْمِ فَقَذَفْنَاهَا فَكَذَلِكَ أَلْقَى السَّامِرِيُّ (৮৭) فَأَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ فَقَالُوا هَذَا إِلَهُكُمْ وَإِلَهُ مُوسَى فَنَسِيَ (৮৮) أَفَلَا يَرَوْنَ أَلَّا يَرْجِعُ إِلَيْهِمْ قَوْلًا وَلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا 
বললেনঃ আমি তোমার স¤প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি তোমার পর এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। অত:পর মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলেন ক্রদ্ধ ও অনুতপ্ত অবস্থায়। তিনি বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের পালনকর্তা কি তোমাদেরকে একটি উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতির সময়কাল তোমাদের কাছে দীর্ঘ হয়েছে, না তোমরা চেয়েছ যে, তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার ক্রোধ নেমে আসুক, যে কারণে তোমরা আমার সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করলে?
তারা বললঃ আমরা তোমার সাথে কৃত ওয়াদা  ইচ্ছায় ভঙ্গ করিনি; কিন্তু আমাদের উপর ফেরউনীদের অলংকারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আমরা তা নিক্ষেপ করে দিয়েছি। এমনি ভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করেছে। অতঃপর সে তাদের জন্য তৈরী করে বের করল একটি গো-বৎস, একটা দেহ, যার মধ্যে গরুর শব্দ ছিল। তারা বললঃ এটা তোমাদের উপাস্য এবং মূসার ও উপাস্য, অতঃপর মূসা ভুলে গেছে। তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন কথার উত্তর দেয় না এবং তারে কোন ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতাও রাখে না? (সূরা ত্বাহা-২০ঃ ৮৫-৮৯)

গ. আরব ভূখন্ডে মূর্তি পূজার সূচনাঃ
রাসূল (সাঃ)-এর রিসালাতের প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে খুযাআহ গোত্র প্রধান আমর ইবন লুহাই এর মাধ্যমে আরব ভূখন্ডে মূর্তি পূজা শুরু হয় । (আল-ফাওযুল কাবীর পৃ . ০৫)

১০. শিরকের কারণঃ
নিম্মে শিরকের কয়েকটি কারণ দেওয়া হলোঃ
ক। আল্লহ সম্পর্কে সঠিক ধারনার অভাব
খ। অতিরিক্ত ভক্তি ও আবেগ
গ। ওয়াসীলার ভুল ব্যাখ্যা
ঘ। পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুসরণ
ঙ। শাফাআতের ভুল ব্যাখ্যা
চ। অজ্ঞতা
-----এ বিষয় বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আমি যাচ্ছি না।

১১. শিরকের প্রকারভেদঃ
উল্লেখ থাকে যে শিরক প্রধানত চার প্রকার।  যথাঃ---
(১) আশ শিরকু ফিয্যাত (আল্লাহর সত্তার ক্ষেত্রে শিরক)।
(২) আল শিরকু ফির রুবুবিয়্যাহ (আল্লহার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় অন্য কাউকে অংশীদার বলে বিশ্বাস করা)। আল্লাহর কাজে অন্যকে শরীক করা।
১২. (৩) আশ শিরকু ফিল উলুহিয়্যাহ (ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করার নাম হচ্ছে আশ শিরকু ফিল উলুহিয়্যাহ)। এটাকে শিরক ফিল উবূদিয়্যাহ বা শিরক ফিল ইবাদতও বলা হয়।
(৪) আশ শিরক ফিল আসমায়ে ওয়াস সিফাত (আল্লাহর সত্তাগত নাম ও গুনবাচক নামের সাথে শিরক করা)।
১৩. শিরক সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-এর সাবধান বাণীঃ
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ: ্রلَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ شَيْئًا، وَإِنْ قُطِّعْتَ أَوْ حُرِّقْتَ ، وَلَا تَتْرُكْ صَلَاةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا، فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا، فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ، وَلَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ، فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّগ্ধ [حكم الألباني] حسن (الادب المفرد-১৮-ابن ماجة-৪০৩৪)
“হজরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন- তুমি আল্লাহর সাথে শরীক করবেনা যদিও তোমাকে টুকরা টুকরা করে হত্যা করা হয় কিংবা তোমাকে আগুণে জ¦ালানো হয়। স্বেচ্ছায় ফরজ নামাজ ত্যাগ করবেনা, তাহলে তুমি আল্লাহর জিম্মা থেকে বেরিয়ে যাবে। মদ পান করবেনা, কেননা মদ হল সকল মন্দের মূল।”
(আদাবুল মুফরাদ-১৮, ইবনে মাজাহ-৪০৩৪)

চলবে--------------------------


ইকরা-০২

শিরক
(পর্ব-০২)
১৪. শিরকের কুফলঃ
শিরক এমন এক জঘণ্য অপরাধ যাতে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হন। শিরক জাহান্নামকে অবধারিত করে দেয়। শিরকের কিছু পরিনতি ও কুফলতা নিম্মরূপ আলোচনা করছি ।

(ক) সবচেয়ে বড় জুলুমঃ
এ বিষয় সম্পর্কে কুরআনে এসেছে,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿لقمان: ١٣
“নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম।” (সূরা লুকমান ৩১ঃ ১৩)
১৫. (খ) শিরকের গুনাহ ক্ষমার অযোগ্যঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ ﴿النساء: ١١٦
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য অপরাধ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। (সূরা নিসা ৪ঃ ১১৬)

(গ) শিরক যাবতীয় নেক আমলকে নষ্ট করে দেয়ঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿الزمر: ٦٥
“তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে এ বিষয়ে ওহী পাঠিয়েছি যে, যদি তুমি শিরক কর, তাহলে তোমার যাবতীয় আমল অবশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে, আর তুমি হবে তখন নিশ্চিত ক্ষতি গ্রস্থদের একজন।” (সূরা যুমার-৩৯ / ৬৫)

১৬. ((ঘ) শিরক জান্নাত থেকে বঞ্চিত করেঃ
মহান আল্লাহ পাক বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ ﴿المائدة: ٧٢
“যে আল্লহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। আর তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ ৫/ ৭২)
এ প্রসংঙ্গে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ كُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَقَدْ سَأَلْتُكَ مَا هُوَ أَهْوَنُ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ، أَنْ لاَ تُشْرِكَ بِي، فَأَبَيْتَ إِلَّا الشِّرْكَ "
১৭. আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি- আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদের সব চেয়ে কম আযাব ভোগকারীকে বলবেন, যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ তোমার হয়, তবে তুমি কি আযাবের বিনিময়ে তা দিয়ে দিবে ? সে উত্তর দিবে হ্যাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, যখন তুমি আদম-এর পৃষ্ঠদেশে ছিলে, তখন আমি এর চেয়েও সহজ একটি জিনিস চেয়ে ছিলাম আর সেটা হলো আমার সাথে শরীক করবেনা। কিন্তু তুমি তা মানতে অস্বীকার করে শিরক করতে লাগলে।”
(বুখারী-৩০৯৬ ই.ফা, মুসলিম-৬৮২৪ ই.ফা)

১৮. (ঙ) শিরক জঘন্যতম পাপঃ   আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا ﴿النساء: ٤٨
“যে আল্লাহর সাথে শিরক করল, সে জঘন্য পাপ করল।” (সূরা নিসা ৪/ ৪৮)
শিরক হলো একটি জঘন্যতম পাপ যা ক্ষমার যোগ্য নয়। উপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সে কথাই বলেন।

 (চ) শিরক শীর্ষ কবীরা গুনাহঃ
এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ؟ قَالَ: ্রأَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ، (بخارى
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (বুখারী-৪৪০০ ই.ফা, মুসলিম-১৫৯ ই.ফা)
১৯. (ছ) শিরক হচ্ছে চরম পথভ্রষ্টতাঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿النساء: ١١٦
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহ্র সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।” (সূরা নিসা ৪ঃ ১১৬)
(জ) শিরক হল অপবিত্রঃ   আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ ﴿التوبة: ٢٨
হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। (সূরা তাওবা ৯ঃ২৮) এখানে আকীদাগত নাপাকী বুঝানো হয়েছে।
২০. (ঝ) শিরক ধ্বংস ও বিপর্যয়ের কারণঃ আল্লাহ বলেন,
وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ ﴿الحج: ٣١
“যে আল্লাহর সাথে শিরক করে, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে, আর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে নিক্ষেপ করে।” (সূরা হাজ্জ ২২ঃ ৩১)

২১. (ঞ) শিরক এক চরম ব্যর্থতা ঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُم مَّوْبِقًا ﴿الكهف: ٥٢
“স্মরণ কর সেদিনের কথা যেদিন তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক তখন তারা তাদেরকে ডাকবে। কিন্তু তারা এ ডাকে সাড়া দেবেনা। আমি তাদের জন্য ধ্বংসের গহŸর বানিয়ে রেখেছি।” (সূরা কাহ্ফ-১৮ঃ ৫২)
উপরের আয়াতের আলোকে বলা যায় যে, ইবাদাতের নামে যারা শিরক  বা গুনাহের কাজের দিকে নিয়ে গেল তারা  পরোকালে কোন কাজে আসবে না। নিম্মের চিত্র গুলো দেখুন মাজারে এবাদাতের নামে কিভাবে শিরক করছে।

২২.  (ট) মুশরিকদের জন্য ক্ষমা চাওয়া যাবে না ঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ ﴿التوبة: ١١٣
“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত কামনা করবে যদিও তারা তাদের নিকট আত্মীয় হোক, এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী।” (সূরা তাওবা-৯ঃ ১১৩)
২৩.  (ঠ) শিরক দ্বারা আল্লাহর হক নষ্ট হয়ঃ
হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُعَاذٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى حِمَارٍ يُقَالُ لَهُ عُفَيْرٌ، فَقَالَ: ্রيَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِي حَقَّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ، وَمَا حَقُّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ؟، قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ্রفَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى العِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَحَقَّ العِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَلاَ أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ؟ قَالَ: لاَ تُبَشِّرْهُمْ، فَيَتَّكِلُوا 
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুয়ায (রাঃ) কে বললেন, হে মুয়ায, তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কী হক রয়েছে ? মুয়ায (রাঃ) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তারা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, যদি সে আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক না করে, তবে তাকে শাস্তি না দেয়া।” (বুখারী-২৬৫৬ই.ফা,মুসলিম-৫০ ই.ফা)
সম্মানিত ভাইয়েরা! এক শ্রেণীর মানুষ আল্লাহ হক নষ্ট করে বান্দার কাছে মাথা নত করছে। মুলতঃ তারা শিরক করছে।

ঐসমস্ত মাজারের পীর সাহেবরাও জানেন যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে মাথা নত করা যায়না। এরপরেও তারা কি করে এটা গ্রহণ করে ?

২৪. উপসংহারঃ
সম্মানিত হাযেরীন! সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল কথা ছিল একটাই- আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন তা হল, ‘‘তোমরা বল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তা হলে তোমরা সফল কাম হবে।’’ দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও কেউ কেউ নবী-ওলীগণের বিষয়ে এরূপ ক্ষমতা ও ইলম বিষয়ক শিরকে নিপতিত হয়।
মুসলিম সমাজেও অনেকে অনুরূপ মিথ্যা কাহিনী, জনশ্রæতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে বিপদে আপদে জীবিত বা মৃত পীর-ওলীগণকে ডাকে এবং তাদের কাছে গাইবী সাহায্য চায়। অথচ আল্লাহর কাছে আমরা প্রতিদিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হচ্ছি যে, তাঁর কাছে ছাড়া আর কারো কাছে সাহায্য চাব না।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ 
‘‘আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’’ (সুরা ফাতিহা-০১ঃ০৫)
প্রিয় হাবিবের হাদীসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: وَمَنْ لَقِيَنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطِيئَةً لَا يُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَقِيتُهُ بِمِثْلِهَا مَغْفِرَةً "(مسلم
حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً ": [حكم الألباني] : صحيح (ترمزى
২৫. হযরত আবুযর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন- “যে আমার সাথে পৃথিবী সমান গুনাহ নিয়ে মিলিত হবে, অথচ আমার সাথে কাউকে শরীক করে নাই, আমি তার সাথে অনুরুপ তুল্য মাগফিরাত নিয়ে মিলিত হব।”
(সহীহ মুসলিম-ই.ফা-৬৫৮৯, ই.সে-৬৬৪১)
প্রিয় ভাইয়েরা! শেষ করছি অন্য একটি হাদীছের বাণী উল্লেখ করে।
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " ثِنْتَانِ مُوجِبَتَانِ. قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْمُوجِبَتَانِ؟ قَالَ: (مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ وَمَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئا دخل الْجنَّة)(رَوَاهُ مُسلم
হযরত যাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘সিনতানে মুজিবাতানে’’। তখন এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেসা করল ইয়া রাসুল্লাহ ‘‘মুজিবাতানে কি?’’ তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুর শিরক করে মারা যায়, সে জাহান্নামী, আর যদি কেউ শির না করে মারা যায় তবে সে জান্নাতী। (মুসলিম-১৭১-ইফাবা, ইসে-১৭৭)
সুতরাং আমাদেরকে খাঁটি মুমিন হতে হলে শিরক থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে  শিরক মুক্তজীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

--------(শেষ)

ফাইলটি ডাউনলোড করতে হলে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করুন


No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com