‘‘তাওহীদের গুরুত্ব’’
(পর্ব-০১)
০২. ভূমিকা:
তাওহীদ বা একত্ববাদ ইসলামী শরীয়তের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামের পরিশুদ্ধতা ও সুস্থতা সঠিক আকিদা তাওহীদের উপর নির্ভরশীল। তাওহীদের আকীদার পরিশুদ্ধতা না থাকলে ঈমানের কোন মুল্য নেই এবং আমল গৃহীত হওয়ারও কোন অবকাশ নেই। কেননা পবিত্র কুরআন তাওহীদের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
০৩. তাওহীদের সাক্ষ্য মহান আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। যেমন-
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ ﴿آلعمران١
“আল্লাহ নিজেই এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ নেই এবং সকল ফেরেশতা ও জ্ঞানীগণ সত্যতা ও ইনসাফের সাথে এ কথার সাক্ষী যে, সত্যিই ঐ মহাশক্তিশালী ও পরম জ্ঞান বুদ্ধির মালিক ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই।” (সুরা আলে-ইমরান - ১৮)০৪. তাওহীদের আভিধানিক অর্থ : তাওহীদ (ﺘﻭﺣﻴﺩ ) শব্দটি বাবে তাফয়ীল (باب تفعيل ) এর মাসদার। وحد (ওয়াহদুন) মূল থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে একত্ববাদ, কাউকে একক বলে স্বীকার করা।
তাওহীদের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
তাওহীদের পারিভাষিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আবু বকর আল-জাযায়েরী বলেন- “আল্লার সত্তা, গুণাবলী ও কর্মের সাথে কারো সামঞ্জস্যতা ও সমতাকে অস্বীকার করা এবং তার প্রভুত্ব ও ইবাদতের ক্ষেত্রে যে কোন ধরণেরে অংশীদারিত্ব থেকে নিজেকে বিরত থাকাকে তাওহীদ বলে।
০৫. আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে সূরা ইখলাছ।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ-اللَّهُ الصَّمَدُ-لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ-وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা এখলাছ-১-৪)
عَنْ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدُ الْمُطَّلِبٍ (رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا
০৬. “আব্বাস ইবনে আবদুল মোতালেব (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন- সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসাবে আল্লাহকে, দীন হিসাবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসাবে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে।” (মুসলিম; ই.ফা. ৫৮, ই.সে.৫৯)
০৭. তাওহীদের প্রকারভেদঃ তাওহীদকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন-
ক। توحيد الربوبية ( রব ও প্রতিপালক হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ)।
খ। توحيد الوهية (ইলাহ ও মাবুদ হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ)।
গ। توحيدالا سماء والصفات (নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদ) ।
০৮.ক। তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ:
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ হচ্ছে সৃষ্টি, রাজত্ব এবং কার্যাবলীর পরিকল্পনার দিক থেকে আল্লাহর একত্ববাদ সাব্যস্ত করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ জেনে রাখ সৃষ্টি একমাত্র যার, নির্দেশও একমাত্র তার।” (সূরা আরাফ- ৫৪)
০৯. মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ اللَّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَىٰ ۖ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ ﴿الأنعام ٩٥﴾
নিশ্চয় আল্লাহ্ বীজ ও আঁটি থেকে অঙ্কর সৃষ্টিকারী; তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন ও মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ্ অতঃপর তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?” (সূরা আন আম-৯৫)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ ﴿فاطر٣
হে মানুষ, তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ সরণ কর। আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছ্? (সূরা ফাতির-৩)১০. মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخَذَ اللَّهُ سَمْعَكُمْ وَأَبْصَارَكُمْ وَخَتَمَ عَلَىٰ قُلُوْبِكُم مَّنْ إِلَٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيْكُم بِهِ ۗ انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ ثُمَّ هُمْ يَصْدِفُونَ ﴿الأنعام ٤٦﴾
“আপনি বলুনঃ বল তো দেখি, যদি আল্লাহ্ তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি নিয়ে যান এবং তোমাদের অন্তরে মোহর এঁটে দেন, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে এগুলো এনে দেবে? দেখ, আমি কিভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিদর্শনাবলী বর্ণনা করি। তথাপি তারা বিমুখ হচ্ছে।” (সূরা আন আম-৪৬)১১. মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْض
আসমান জমিনের মালিকানা আল্লাহরই। (সুরা জাছিয়াহ-৪৫ঃ২৭)এই প্রকার তাওহীদ কাফেররাও মেনে নিয়েছিল।
১২. খ। তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ:
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহকে তাওহীদুল ইবাদাহও বলা হয়। বান্দার ইবাদত বন্দেগী তথা সকল কার্যবলীতে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা করা। যেমন- সালাত, সাওম, হজ্জ¦, যাকাত, দো‘আ, মান্নত, ভয়, আশা, ভালবাসা ইত্যাদি। যেমনঃ
আল্লাহ বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষিট করেছি। (সূরা যারিয়াত- ৫১/ ৫৬)
১৩. মহান আল্লাহ আরো বলেন ,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ
একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করোনা। ( সূরা নিসা- ৪ ঃ ৩৬)
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ﴿الأنعام١٦٢
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্যে।” (সূরা আনআম-১৬২)১৪. গ। তাওহীদুল আসমায়ি ওয়াস সিফাতঃ
মহান আল্লাহ যেসব সুন্দর নাম ও উন্নত গুণাবলীর দ্বারা নিজেকে গুণান্বিত করেছেন, রাসূল (সাঃ) যেভাবে আল্লাহর গুণাবলীর উল্লেখ করেছেন, হুবহু সেভাবে এ গুণগুলো আল্লাহর জন্য এককভাবে সাব্যস্ত করাই হচ্ছে তাওহীদুল আসমায়ি ওয়াস সিফাত। যেমনা মহান আল্লাহ বলেন,
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ ﴿الشورى١١
“তাঁর মত কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শূরা- ৪২/ ১১)১৫. মহানা আল্লাহ আরো বলেন ,
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَٰنَ ۖ أَيًّا مَّا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ ﴿الإسراء ١١٠﴾
“বলুনঃ আল্লাহ্ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই।” (সূরা ইসরা-১১০)
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُوْنَ ﴿الأعراف١٨٠
“আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।” (সূরা আরাফ- ৭ / ১৮০)
ইকরা-০১
তাওহীদের গুরুত্ব
(পর্ব-০২)
১৬. তাওহীদের গুরুত্ব:
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আমলের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে তাওহীদের উপর।
ক। তাওহীদ ইসলামের মূল খুঁটি ঃ ইসলাম পাঁচটি খুটির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই খুটি গুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট, সর্ব প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ খুটি হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেয়া।
১৭. যেমন হাদীসে এসেছে ,
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَقَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ-
“আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এ কথার সাক্ষ্য দান করা যে, মহান আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।” (বুখারী-৭ ই.ফা,মুসলিম-১৯ ই.ফা)
১৮. খ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বপ্রথম আবশ্যকীয় বস্তু হচ্ছে তাওহীদঃ
ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বপ্রথম আবশ্যকীয় বিষয় হচ্ছে তাওহীদ। মানুষকে দাওয়াত দিতে গেলে প্রথমে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিতে হবে।
১৯. যেমন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামেনে পাঠালেন তখন তাকে বললেন
إِنَّكَ تَأتِيَ قَوْمِا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ. فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِأَنْ لَاإِلَهَ إِلَّااللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ
তুমি আহলে কিতাবদের নিকট যাচ্ছ, সর্বপ্রথম যেদিকে তুমি তাদেরকে ডাকবে তা হবে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল এর সাক্ষ্য প্রদান। (সহীহ মুসলিম-২৯)২০. গ। তাওহীদই সঠিক পথ পাওয়ার মাধ্যম: মহান আল্লাহ বলেন,
الَّذِيْنَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُولَٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ ﴿الأنعام ٨٢
“যারা ঈমান আনল এবং তাদের ঈমানকে জুলুম তথা শিরকের সাথে মিশ্রিত করল না, তাদের জন্যই রয়েছে নিরাপত্তা, আর তারা হচ্ছে সঠিক পথ প্রাপ্ত।” (সূরা আনয়াম- ৮২ )২১. ঘ। তাওহীদ ছাড়া ইবাদত কবুল হবেনা: যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ﴿الزمر٦٥
হে নবী, আপনার নিকট এবং আপনার পূর্বে যারা এসেছেন তাদের নিকট এ মর্মে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, যদি আপনি শিরক করেন তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। (সূরা যুমার- ৩৯ঃ ৬৫)২২. ঙ। তাওহীদ হচ্ছে জান্নাতের প্রবেশ করার একমাত্র মাধ্যম:
তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। কেউ যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর সাক্ষ্য দেয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " مَنْ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، وَأَنَّ عِيْسَى عَبْدُ اللهِ، وَابْنُ أَمَتِهِ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَأَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ، وَأَنَّ النَّارَ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللهُ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ شَاءَ "- بخارى
২৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক আর মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চই ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা, তার বাঁদী মরিয়মের পুত্র ও তার সেই কালেমা যা তিনি মরিয়মকে পৌছিয়েছেন এবং তার পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি রুহ মাত্র। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য,আল্লাহ তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে, প্রবেশ করাবেন। (বুখারী-৩১৯০ ই.ফা, মুসলিম-৪৭ ই.ফা)
২৪. চ। তাওহীদ দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদাপদ থেকে মুক্তির উপায়:
তাওহীদ আল্লাহর শত্রæ-মিত্র উভয়ের জন্যই আশ্রয়স্থল। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُوْنَ ﴿العنكبوت
যখন তারা নৌকায় চড়ে তখন তাদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লার জন্য খালেস করে নিয়ে আল্লাহকে ডাকে। তারপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে নিয়ে আসেন তৎক্ষণাত তারা শিরক করতে থাকে। (সূরা আনকাবুত- ২৯/ ৬৫)
পৃথিবীতে যখন নবী রাসূলগণ আগমন করেছিলেন সকলেরই দায়িত্ব ছিল তাওহীদের বাণী প্রচার কারা। আল্লাহর একত্ববাদের দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের অন্তরে স্থাপন করা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ ﴿النحل ٣٦
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি, আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার জন্য। (সূরা নাহল -৩৬)২৬. তাওহীদের দাবী সমূহঃ তাওহীদের দাবী সমূহ নিম্মরূপ:
ক। একমাত্র আল্লাহকে ভালবাসতে হবেঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِيْنَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ ﴿البقرة ١٦٥
“যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সবচেছে বেশী ভালবাসে।” (সূরা বাকারা ০২/ ১৬৫)খ। একমাত্র আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে: আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ ﴿البقرة
“আর আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমারা শুধু তারই ইবাদত কর।” (সূরা বাকারা -১৭২)২৭. গ। একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে: আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ﴿الحج ٧٧
“হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ স¤পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা হজ¦-৭৭)২৮. ঘ। আল্লাহকেই একমাত্র সিজদা করতে হবে:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ ﴿فصلت ٣٧
তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না, সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। (সূরা হা-মীম আস সাজদাহ- ৩৭)২৯. ঙ। একমাত্র আল্লাহ আনুগত্য করতে হবে:
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا أَطِيْعُوا اللَّهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ ﴿محمد ٣٣
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মদ-৩৩)৩০. চ। একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করতে হবে:
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُوْنَ ﴿النور٥٢
যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে, তারাই সফলকাম।” (সূরা নূর-৫২)৩১. ছ। আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে:
মাহন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ ـ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيْمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيْمٌ قَدِيْرٌ ﴿الشورى ٤٩- ٥٠
“নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ্ তা'আলারই। তিনি যা ইচছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।” (আশ শুরা-৪৯,৫০)
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴿البقرة ١٥٣
“হে মুমিনগন! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।নিশ্চই আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা বাক্বারা-১৫৩)অন্য আয়াতে এসেছে,
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
“আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরা ফাতিহা- ১ঃ৪)৩৩. জ। একমাত্র আল্লাহর উপরই নির্ভর করা উচিত:
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ ﴿التغابن ١٣
“আল্লাহ্ তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। অতএব মুমিনগণ আল্লাহ্ উপর ভরসা করুক।” (সূরা তাগাবুন-১৩)
৩৪. ঝ। আল্লাহর বিধানই মানতে হবে:মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اِتَّبِعُوْا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُم مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ ﴿الأعراف ٣
তোমাদের রবের নিকট থেকে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাঁকে ছাড়া অন্য অভিবাবকের আনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আরাফঃ০৩)
৩৫. উপসংহারঃ
প্রিয় ভাইয়েরা! ইসলামে তাওহীদের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ তাওহীদবিহীন নেক আমল কোন কাজেই আসবে না। নির্ভেজাল তাওহীদই মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে নাজাত বা মুক্তি দিবে। তাই তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করে শিরক মুক্ত সমাজ গঠণ করা আমাদের সকলেরই অন্যতম দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকেই শিরকমুক্ত তাওহীদের উপর অবিচল রাখুন। (আমীন)
--------------(শেষ)
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com