Tuesday, April 15, 2025

মসজিদে ‘আল-আকসা’ নির্মাণের ইতি কথা

 


মসজিদে ‘আল-আকসা’ নির্মাণের ইতি কথা

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদে আল-আকসা। অসংখ্য নবী ও রাসুলের পুণ্যভূমি এ মসজিদ। অত্যন্ত বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে এ মসজিদকে মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিষ্টান তিন ধর্মের অনুসারীরাই নিজেদের দাবি করে এবং তীর্থস্থান বলে দাবিও করে।

আল-আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা। ছবি: সংগৃহীত

অসংখ্য নবী, সুল, সাহাবি, তাবেয়িদের পুণ্যভূমি মসজিদুল আকসা। পবিত্র এ মসজিদ খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৫৭ সালে প্রথম নির্মাণ হয়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১০০৪ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন যুগে এর সংস্কার হতে থাকে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি ৩৫ একর জমির ওপর নির্মিত। মসজিদের নির্মাণশৈলী মুসলিম ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। 

এ প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ: أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الْأَرْضِ أَوَّلُ؟ قَالَ: «الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ» قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «الْمَسْجِدُ الْأَقْصَى» قُلْتُ: كَمْ بَيْنَهُمَا؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ سَنَةً، وَأَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ فَصَلِّ فَهُوَ مَسْجِدٌ» وَفِي حَدِيثِ أَبِي كَامِلٍ «ثُمَّ حَيْثُمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ فَصَلِّهِ، فَإِنَّهُ مَسْجِدٌ»

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! পৃথিবীতে নির্মিত প্রথম মসজিদ কোনটি? প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন ৪০ বছরের ব্যবধান। (সহিহ বুখার:৩১১৫,৩৩৬৬শামে; মুসলিম: ১০৫২ ইসে; শামেলা-৫২০)

মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা সর্বপ্রথম ফেরেশতাদের মাধ্যমে অথবা আদম (আ.)-এর কোন সন্তানের মাধ্যমে নির্মিত হয়। উপর্যুক্ত হাদিস থেকে জানা যায়, পবিত্র মসজিদ কাবা শরীফ নির্মাণের চল্লিশ বছর পরে নির্মিত হয়। হজরত ইয়াকুব (আ.) কে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিলে তিনি তা পুনর্নির্মাণ করেন। তার প্রায় হাজার বছর পরে হজরত দাউদ (আ.) পুনর্নির্মাণ শুরু করেন। হজরত দাউদ (আ.) নির্মাণ শেষ করতে পারেননি। তার ছেলে হজরত সুলাইমান (আ.)-এর হাতে তার সংস্কার সমাপ্ত হয়।

 

হজরত সুলাইমান (আ.) ছিলেন একজন নবী। পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা প্রতাপশালী বাদশাহদের একজন। তার রাজত্বকাল ছিল প্রায় ৯৭০ থেকে ৯৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী। তিনি ছিলেন হজরত দাউদ (আ.)-এর ছেলে। হজরত সুলাইমান (আ.) আল-আকসা ঘিরে জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।

 

মহান আল্লাহ তাকে এমন নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কোনো নবীকে দেননি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন

وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ 

“আমি দাউদের জন্য সুলাইমানকে দান করেছিলাম, সে কতই না উত্তম বান্দা। অবশ্যই সে ছিল আমার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল।” (সুরা সদ-৩৮: ৩০)

মসজিদে আল-আকসা নির্মাণে জিন জাতি:

মহান আল্লাহ জিনদের বশীভূত করার ক্ষমতা হজরত সুলাইমান (আ.) কে দান করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন

وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهْرٌ وَرَوَاحُهَا شَهْرٌ وَأَسَلْنَا لَهُ عَيْنَ الْقِطْرِ وَمِنَ الْجِنِّ مَنْ يَعْمَلُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِإِذْنِ رَبِّهِ وَمَنْ يَزِغْ مِنْهُمْ عَنْ أَمْرِنَا نُذِقْهُ مِنْ عَذَابِ السَّعِيرِ 

“আর আমি সুলাইমানের অধীন করেছিলাম বাতাস, যা সকালে এক মাসের পথ ও বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরনা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব। তারা সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউজসদৃশ বৃহদাকার পাত্র ও চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” (সুরা সাবা-৩৪:১২)

জিনদের দিয়ে হজরত সুলাইমান (আ.) অনেক কাজ করাতেন। জিনেরা সাগরে ডুব দিয়ে তলদেশ থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত তুলে আনত। ঈমানদার জিনেরা সাওয়াবের আশায় হজরত সুলাইমান (আ.)-এর আনুগত্য করত। দুষ্ট জিনগুলো সুলাইমানের (আ.)-এর ভয়ে কাজ করত। মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ দুষ্ট জিনরা হজরত সুলাইমান (আ.)-এর কোনো ক্ষতি করতে পারত না। বরং সর্বদা তার নির্দেশ পালনের জন্য প্রস্তুত থাকত। জিনদের মাধ্যমেই আল-আকসা নির্মাণ ও সংস্কার করেন হজরত সুলাইমান (আ.)

 

আল-আকসার মূল নির্মাণ কাজ পূর্ণ শেষ হওয়ার পূর্বেই হজরত সুলাইমান (আ.)-এর শেষ সময় চলে আসে। অথচ এই কাজগুলো অবাধ্য জিনদের উপরে ন্যস্ত ছিল। দুষ্ট জিনেরা হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ভয়ে কাজ করত। যদি তারা মৃত্যু সংবাদ জানতে পারে কাজ ফেলে পালিয়ে যাবে। তাই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হয়ে হজরত সুলাইমান (আ.) কাচ নির্মিত মেহরাবে প্রবেশ করেন। যাতে বাইরে থেকে ভেতরের সবকিছু দেখা যায়। তিনি বিধান অনুযায়ী ইবাদতের উদ্দেশ্যে লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে গেলেন। যেন রুহ বেরিয়ে যাবার পরেও লাঠিতে ভর দিয়ে স্বস্থানে দাঁড়িয়ে থাকে।

 

নবী এক বছর লাঠিতে দাড়িয়ে থাকেন:

মহান আল্লাহর নির্দেশে তার দেহ লাঠিতে ভর করে এক বছর দাঁড়িয়ে থাকল। সুবহানাল্লাহ! দেহ পচেনি, পড়ে যায়নি। দুষ্ট জিনেরা ভয়ে কাছে যায়নি। ফলে তারা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে কাজ শেষ করে। এভাবে পূর্ণ কাজ শেষ হলে মহান আল্লাহর হুকুমে কিছু উই পোকা খেয়ে লাঠি ভেঙ্গে দেয়। লাঠি ভেঙ্গে যাওয়ায় হজরত সুলাইমান (আ.)-এর দেহ মাটিতে পড়ে যায়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন

فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ الْمَوْتَ مَا دَلَّهُمْ عَلَى مَوْتِهِ إِلَّا دَابَّةُ الْأَرْضِ تَأْكُلُ مِنْسَأَتَهُ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ الْجِنُّ أَنْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ الْغَيْبَ مَا لَبِثُوا فِي الْعَذَابِ الْمُهِينِ

“যখন আমি সুলাইমানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুনপোকাই জিনদেরকে তার মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। হজরত সুলাইমানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্য বিষয় জানতো, তাহলে তারা (মসজিদ নির্মাণের) এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির আজাবের মধ্যে আবদ্ধ থাকতো না (সুরা সাবা-৩৪ : ১৪)

Monday, April 14, 2025

ইহুদী ধর্মের এবং ইসলাম ধর্মের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম(আঃ)

 



ইহুদী ধর্মের এবং ইসলাম ধর্মের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম(আঃ)

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 

ইহুদী ধর্মের জাতির পিতা এবং ইসলাম ধর্মের জাতির পিতা একজন ই, হযরত ইবরাহীম(আঃ)।ইবরাহীম(আঃ)-এর দুই পুত্র, ইসহাক(আঃ) আর ইসমাইল(আঃ)।

হয়রত ইসহাক(আঃ)-এর পুত্র ছিলেন হযরত ইয়াকুব(আঃ), উনার আরেক নাম ইস/রা/ইল। এই ইয়াকুব(আঃ)-এর বংশকে আল্লাহ্ তা'আলা বনি-ই/সরা/ইল নামে সম্বোধন করেছেন।

হযরত ইয়াকুব(আঃ)-এর ১২সন্তানের মধ্যে ১জনের নাম ছিলো ইয়াহুদা। এই ইয়াহুদা এর বংশই পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে। তাই, বনি-ই/সরা/ইল এর আরেক নাম ই/হু/দী। ই/হু/দী ধর্ম আর বংশ দুটো আলাদা।

সব ইহুদী বংশের লোক ইহুদী ধর্মের হলেও সব ইহুদী ধর্মের লোক ই ইয়াহুদার বংশ নয়।

সুতরাং এই ইয়াহুদা ই কিন্তু তার আপন ভাই ইউসুফ(আঃ)-কে কূপে ফেলে হত্যা করতে চেয়েছিল!৪হাজার বছর আগে ইসহাক(আঃ)-এর মৃত্যুর পর ইয়াকুব(আঃ) আল্লাহ্‌'র নির্দেশে শামনগরী (সিরিয়া) থেকে কেনানে হিজরত করেন। এই কেনান ই বর্তমানের ফিলিস্তিন। এরপর কেনানে (ফিলিস্তিন) দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে ইয়াহুদা তার সব ভাই এর সাথে মিশরে চলে যায় এবং মিশরে বসবাস শুরু করে।

মিশরের তখনকার রাজা ছিলেন ইউসুফ(আঃ), যিনি ইয়াকুব(আঃ)-এর ১২সন্তানের মধ্যে ১১তম। সেই কারণে ইয়াহুদা ও তার বংশ মিশরে অনেক দাপটের সাথে থাকতে শুরু করে। তারপর কালের পরিক্রমায় ক্ষমতা যায় ফারাও রাজাদের হাতে। ফেরাউন এসে বনি-ই/সরা/ইলদের এত অত্যাচার শুরু করে যে এরা সারাদিন 'ইয়া নাফসী' 'ইয়া নফসী' করতো।

তখন আল্লাহ্ তাদের কাছে তাওরাত কিতাব দিয়ে পাঠালেন মূসা(আঃ)-কে। আর মুসা(আঃ) ফেরাউনকে নীলনদে ডুবানোর মাধ্যমে বনি-ই/সরা/ইল মুক্তি পায়।

তারপর মূসা(আঃ) সবাইকে নিয়ে কেনানে (ফিলিস্তিন) ফিরে যান। পরে তারা সেখানে গিয়ে আল্লাহ্‌'র অশেষ রহমত পাওয়া সত্ত্বেও মুসা(আঃ)-এর ওফাতের পর আবার আল্লাহ্‌-কে ভুলে যায়, গরুপূজা সহ নানা রকম অনাচার শুরু করে।

তারপর তাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভে নিজেদের একতা ভেঙ্গে যায়, ভিনদেশীরা তাদের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের আবার গোলাম বানিয়ে অত্যাচার করতে থাকে। এর ১০০বছর পরে দাউদ(আঃ) আর উনার ছেলে সুলাইমান(আঃ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা আবারও এই অত্যাচার থেকে তাদেরকে মুক্তি দেন।

কিন্তু সুলাইমান(আঃ)-এর মৃত্যুর পর ই/হু/দীরা আবার শয়তানের পূজা শুরু করে। তাদের ভিতরে থাকা ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাওরাত কিতাবের মধ্যে নিজেদের সুবিধামত সংযোজন-বিয়োজন করার মতন ধৃষ্টতা দেখায়। তারা তাওরাতে সংযোজন করে যে, "আল্লাহ্ তায়ালা ইসহাক(আঃ)-এর স্বপ্নে কেনানকে ইহুদীদের জন্য প্রমিজ ল্যান্ড হিসেবে দিয়েছেন, এটা তাদের জয় করে নিতে হবে।"

এটাকে তারা 'জেকব লেডার ড্রিম' বলে।তাদের এমন নির্লজ্জতা ও ধৃষ্টতার কারণে তারা বারবার আল্লাহ্‌'র শা/স্তির মুখে পড়েছে। যেমনঃ

Ø কখনো গৃহহীন হয়ে যাযাবরের মতো ঘুরেছে,

Ø ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্যের দ্বারা গণহ/ত্যার শিকার হয়েছে,

Ø রোমান সাম্রাজ্যের দ্বারা সিরিয়া থেকে আরব দেশে বিতাড়িত হয়েছে।

মহানবী(সাঃ)-এর সময় তারা আরব দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে চলে যায় ইউরোপে। আর উমার(রা:) ফিলিস্তিন ও আল-আকসা বিজয় করেন।

আজ ইস/রা/য়েলের এতো ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইউরোপও তখন তাদেরকে আশ্রয় দেয়নি।

বনি-ইস/রা/ইলের এমন পরিণতির কারণ আল্লাহ তায়ালা এর শা/স্তির পাশাপাশি তাদের ব্যবহার! তখনকার লোকদের ভাষ্যমতে, তারা অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ ছিল। তাদেরকে যে জায়গায় আশ্রয় দেয়া হতো সেই জায়গাতেই তারা তাদের প্রতিবেশীর জমি দখল করতো!

ই/হু/দীরা বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ছিল আর তাদের ব্যবসা অন্যদের থেকে কৌশলগতভাবে আলাদা ছিলো, যার কারণে যাযাবরের মতো ঘুরলেও তাদের অর্থ-সম্পদ ভালোই ছিল। সেই অর্থ-সম্পদ এর দাপট দেখিয়ে তারা সেইসব এলাকার স্থানীয় লোকদের উপরই ছড়ি ঘুরাতো।

তাই তারা সেইসব এলাকার রাজা ও বাসিন্দাদের দ্বারা বার বার বিতাড়িত হতো।

বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত সয্য করার পর তারা একসময় বুঝতে পারে যে, যেকোনো সমাজকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে শিক্ষা ও অর্থের বিকল্প নেই।তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও অর্থ উপার্জনের উপর গুরুত্ব দেয়। তারা বিশ্বাস করে, কেনান তাদের জন্য সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক বরাদ্দকৃত ভূমি। তারা এটাও বিশ্বাস করে যে, একসময় তাদের একজন মসিয়াহ্‌(দাজ্জাল) এসে তাদের এই ভূমিকে উদ্ধার করে দিবে।

১৮ শতাব্দীতে ই/হু/দীরা তাদের ধর্ম-পরিচয় গোপন করে ইউরোপে বসবাস শুরু করে। তখন থিওডোর হার্জেল নামে তাদেরই একজন ব্যবসায়ী ফিলিস্তিনকে নিজেদের দখলে আনার লক্ষ্যে ১৮৯৭ সালে জিওনিজম আন্দোলন শুরু করে ই/হু/দীদেরকে আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখানো শুরু করে। এই আন্দোলনকে যারা সমর্থন করে, তাদেরকে জিওনিস্ট বলে।

যেহেতু ই/হু/দীরা অনেক শিক্ষা অর্জন আর অর্থ উপার্জন করেছিলো, তাই তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ ইউরোপে ধর্ম গোপন করে থাকলেও কেউ কেউ মেধার জোরে ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করতে, বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। তখন তারা শুধুমাত্র পদ দখল করেই থেমে থাকেনি, সেই সাথে নিজেদের একটা রাষ্ট্র গঠনেও প্রচুর সমর্থন সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে থাকে। তখন ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো, তাদেরকে আফ্রিকার উগান্ডায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ঠিক এমন সময় শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে যুক্তরাজ্য নিজেদের অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য এক ধরনের গ্লিসারিন ইউজ করতো, যেটা আসতো জার্মানি থেকে। কিন্তু যুদ্ধের সময় জার্মানি যুক্তরাজ্যের বিপক্ষে থাকায় গ্লিসারিন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তখন যুক্তরাজ্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে চাইম ওয়াইজম্যান নামক একজন ই/হু/দী গবেষক ও ব্যবসায়ী। তিনি গ্লিসারিন এর বদলে এসিটোন দিয়ে অস্ত্র সংরক্ষণের পদ্ধতি শিখিয়ে দেন এবং যুদ্ধে প্রচুর অর্থ সহায়তা দেন। তার এমন অভুতপূর্ব অবদানের জন্য যুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য যখন তাকে পুরস্কৃত করতে চায়, তখন সে জানায় যে তার একমাত্র পুরস্কার হবে তাদের প্রমিজল্যান্ড মানে ফিলিস্তিনে তাদের বসবাসের সুযোগ করে দেয়া!

এখানে উল্লেখ্য, চাইম ছিলেন জিওনিজম আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ফিলিস্তিন তখন ছিল উসমানী সালতানাতের দখলে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর তুরস্কের ক্ষমতা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়। সেই সুযোগে ধাপে ধাপে ই/হু/দীরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করতে থাকে।

প্রথমে তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে ঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করে, তারপর বেশি দামের লোভ দেখিয়ে সেগুলো কিনতে থাকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজয়ের পর পুরো বিশ্বের ক্ষমতা ইউরোপের হাতে চলে যায়।

ই/হু/দীরা তখন স্থানীয় ফিলিস্তিনিদেরকে অত্যাচার-জোর-জবরদস্তি করা শুরু করলে ফিলিস্তিনিরা প্রতিবাদ করে। তখনই ইউরোপ থেকে ঘোষণা আসে, পুরো ফিলিস্তিনের ৫৫ ভাগ থাকবে ফিলিস্তিনিদের দখলে আর বাকি ৪৫ ভাগ হবে ই/হু/দীদের।

৬লাখ ই/হু/দীর জন্য ৪৫% আর ১২কোটি ফিলিস্তিনির জন্য ৫৫% জায়গা!

জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার পর ই/হু/দীরা ইজ/রা/য়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।নবগঠিত এই রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয় চাইম ওয়াইজম্যান।

ইজ/রায়ে/ল রাষ্ট্র গঠন হওয়ার ঠিক ৬মিনিটের মধ্যে আমেরিকা তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়!

আর এভাবেই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে তারা ইয়াকুব(আঃ)-এর সাথে কেনানে আসা যাযাবর থেকে আজকে গাজাকে ধ্বংসকারী দানবে পরিণত হয়েছে!আর বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানেরা মুখে কুলুপ এঁটে চুপ করে বসে আছেন আর চোখে ঠুঁলি পরে সবকিছুকে না দেখার ভান করছেন!

সকল মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধানকে এহেন কর্ম-কান্ডের জাতিকে আজ একটি সমাধান দিতে হবে। যা মুসলিম ভাইয়ের সাহায্যের কাজে আসবে।

 

--তথ্যসূত্র: ইন্টানেট থেকে নেওয়া।