মৃত ব্যক্তির নামে
কুরবানী করার পদ্ধতি কি?
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
যার উপর মালে
নেসাব রয়েছে তাকেই কুরবানী করতে হবে এটি ওয়াবি। মৃত ব্যক্তির উপর কুরবানীর হুকুম
বা ওয়াজিব নয়। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশ। আমাদের সমাজের মধ্যে অনেকটা
মতানক্য রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যায়।বহু আলে-ওলামাগণও তার পক্ষে
মত দিয়ে থাকেন। নিম্নে আমি তার কিছু সমাধান দিতে চেষ্টা করছি। জানিনা আপনি কোন
পদ্ধতি অনুস্মরণ করবেন।
আহলে হাদীস (Ahl-e-Hadith)
মতবাদ অনুসারে, ইবাদতের ক্ষেত্রে তারা কেবলমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ
করে এবং বিদআত বা নব উদ্ভাবিত আমল থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। তাই, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানির বিষয়টি তারা সরাসরি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত
কিনা তা দিয়ে মূল্যায়ন করে।
মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানী — আহলে হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি:
১. জীবিত ব্যক্তি
নিজের পক্ষ থেকে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারে।
— সাহাবি আবু আইউব
আনসারী (রাঃ) বলেন:
فَقَالَ: كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّي بِالشَّاةِ عَنْهُ وَعَنْ
أَهْلِ بَيْتِهِ،
“রসূল (সা.) জীবিত থাকা অবস্থায় একজন ব্যক্তি তার নিজের ও
পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন।”
(তিরমিযি: ১৫০৫)
২. মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট করে কুরবানী করার প্রমাণ নেই
— আহলে হাদীস
স্কলাররা সাধারণভাবে বলেন:
“মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্টভাবে কুরবানী করার কোন সহীহ ও প্রামাণিক হাদীস
পাওয়া যায় না। সুতরাং এটি করা উচিত নয় যদি না জীবিত ব্যক্তির কুরবানীতে মৃত
ব্যক্তিকে শরিক করা হয়।”
৩. ব্যতিক্রম —
ওসিয়ত করা থাকলে
— কেউ যদি মৃত্যুর পূর্বে
ওসিয়ত করে যান, তাহলে তার ত্যাজ্য সম্পদ থেকে কুরবানী
করা যেতে পারে, যতক্ষণ না তা সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের
মধ্যে থাকে।
৪. জীবিত ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করে মৃত আত্মীয়কে
সওয়াবের অংশীদার করতে পারেন
قَالَ رَسُولِ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الأَضْحَى فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ
نَزَلَ مِنْ مَنْبَرِهِ وَأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ بِيَدِهِ، وَقَالَ: بِسْمِ
اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي.
— উদাহরণস্বরূপ, রাসূল (সা.) নিজ পক্ষ থেকে কুরবানী করে উম্মতের সকলের জন্য দোআ করতেন। (আবু
দাউদ: ২৮১০)
আহলে হাদীসের মতে,
সরাসরি মৃত
ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা —
এটি সহীহ হাদীস
দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই তারা এটিকে বিদআত বলে গণ্য করে। তবে,
জীবিত ব্যক্তি
নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করে ইচ্ছা করলে সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করতে পারে — এটি দুআ ও ইছালে সওয়াবের অংশ হিসেবে গণ্য হয়।
হানাফি মাযহাব অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয (বৈধ) এবং সওয়াবের কাজ
— তবে কিছু শর্ত ও
প্রেক্ষাপট আছে।
🔹 হানাফি মাযহাবে
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করার মাসায়েল:
১. ওসীয়ত থাকলে:
মৃত ব্যক্তি যদি
জীবিত অবস্থায় বলে যান যে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হোক, তাহলে তার ত্যাগ করা সম্পদ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব
(যদি ত্যাগের এক-তৃতীয়াংশ
থেকে সম্ভব হয়)। এ ক্ষেত্রে ওসীয়ত অনুযায়ী তা আদায় করা হবে।
২. ওসীয়ত না থাকলেও:
কেউ যদি
ইচ্ছাকৃতভাবে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করে, তাহলে এটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে এবং এতে মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব
পৌঁছবে। এটি জায়েয এবং নেক আমল।
৩. নিয়্যতের বিষয়:
মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী
করলে নিয়্যত করতে হবে যে, “এই কুরবানীর
সওয়াব অমুক মৃত ব্যক্তির রূহের জন্য”।
৪. মৃত ও জীবিত উভয়ের জন্য:
একটি পশু (যেমন
গরু বা উট – যেখানে ৭ ভাগ করা
যায়) – তাতে একজন
ব্যক্তি নিজের জন্য এক ভাগ, মৃত আত্মীয়ের
জন্য এক ভাগ নিতে পারেন — এভাবে নফল
কুরবানী করা বৈধ।
🔸 কিছু দলিল ও ফিকহি
বক্তব্য:
- হানাফি ফিকহ কিতাব "আল-হিদায়া" এবং "ফাতাওয়া
হিন্দিয়া" তে উল্লেখ আছে —
"يُضَحِّي عَنِ الْمَيِّتِ تَطَوُّعًا وَيَبْلُغُهُ الثَّوَابُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ"
“মৃতের পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করা যায় এবং আল্লাহ চাইলে তার কাছে সওয়াব পৌঁছবে।”
- ওসীয়ত থাকলে: মৃতের সম্পদ
থেকে করা ওয়াজিব।
- ওসীয়ত না থাকলে: জীবিত
ব্যক্তি নিজের সম্পদ থেকে নফল কুরবানী করতে পারেন — জায়েয ও সওয়াবের কাজ।
মোটকথা মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানীর সহীহ কোন হাদীসে নেই।আছে শুধু মাসয়ালা গ্রন্থের কিছু
কিতাবে। সুতরাং না করাই উত্তম।