Saturday, September 12, 2020

আখলাকে হামীদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র


আখলাকে হামীদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র

০২. ভূমিকাঃ
আখলাক বা চরিত্র মানুষের আসল চিত্র। মানুষের মূল্যায়ন হয় চরিত্রে। চারিত্রিক মূল্যবোধ যার ভেতর যত বেশী সে তত উন্নত। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবী (সাঃ)-এর আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানব চরিত্রের সংশোধন করা। তাই মহানবী (স.) বলেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ صَالِحَ الْأَخْلَاقِ» [قال الشيخ الألباني] صحيح (الادب المفرد-273)
َআমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্য প্রেরিত হয়েছি। (আদাবুল মুফরাদ-২৭৩)
০৩. আখলাক অর্থ চরিত্র স্বভাব। আর হামিদা অর্থ প্রশংসনীয়। সুতরা আখলাকে হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয় চরিত্র, সচ্চরিত্র। ইসলামি পরিভাষায় যেসব স্বভাব বা চরিত্র সমাজে প্রশংসনীয় ও সমাদৃতম আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (স.) এর নিকট প্রিয় সেসব স্বভাব বা চরিত্রকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়।
এককথায় মানব চরিত্রের সুন্দর নির্মল ও মার্জিত গুণাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয়। মানুষের সার্বিক আচার আচারণ যখন শরিয়ত অনুসারে সুন্দর, সুষ্ঠু ও কল্যাণকর হয় তখন সে স্বভাব-চরিত্রকে বলা হয় আখলাকে হামিদাহ।

০৪. আখলাকে হামীদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্রের গুণাবলীঃ
            আখলাকে হামিদাহ মানবীয় মৌলিক গুণ ও জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এর দ্বারাই মানুষ পূর্ণমাত্রায় মনুষত্বের স্তরে উপনীত হয়। মানবিকতা ও নৈতিকতার আদর্শ আখলাকে হামিদাহর মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করে। নিম্মে আখলাকে হামীদাহ এর চারিত্রিক গুণাবলী গুলো দেওয়া হলোঃ
০৫. ক। তাকওয়াবান হওয়া: 
            তাকওয়া এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে খোদাভীতি, পরহেযগারী, বিরত থাকা, আত্মশুদ্ধি। আর শরীয়াতের পরিভাষায়, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাঁর বিধি বিধান মেনে চলার নাম তাকওয়া। তাকওয়া বা খোদাভীতি সম্পর্কে আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলেছেন-
وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ ﴿البقرة: ١٩٤﴾
আল্লাহ্কে ভয় কর এবং জেনে রাখ আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৯৪)
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا*  وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ 
আর যে আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে নিষ্কৃৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ওপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। (সূরা তালাক্ব-৬৫ঃ২-৩)
০৬. আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ 
নিশ্চয় আল্লাহ্র কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত-৪৯ঃ১৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ﴿آل‌عمران: ١٠٢﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আলে ইমরান-৩/১০২)
০৭. খ। সততা ও সত্যবাদীতা হওয়াঃ 
            সিদক অর্থ সততা, সত্যবাদিতা বা সত্যপ্রিয়তা। যে ব্যক্তির মধ্যে এ সত্যবাদিতা গুণটি রয়েছে, তাকে সাদিক বা সত্যবাদী বলে। সত্যবাদিতা মানব জীবনের একটি মহৎগুণ। সত্যের মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থা ও ঘটনা প্রকাশ পায় বলে এর দ্বারা জীবনের মহৎ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। সত্যকে আকড়িয়ে ধরলে জীবনে প্রকৃত সাফল্য আসে। এজন্যই আল্লাহর নবী ও রাসূলগণ সত্যের প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيْدًا * يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا :
হে মুমিনগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সূরা আহযাব-৩৩/৭০-৭১)
০৮. গ। মানুষকে কষ্ট না দেয়া:
            কাউকে কষ্ট দেয়া ইসলামে সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। আমাদের সমাজে অনেকে আছেন যারা ব্যঙ্গ-বিদ্রæপ বা জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায় অভাবে পড়ে কেউ যদি কারও কাছ থেকে টাকা ধার নেয় তবে সে যদি যথাসময়ে তা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে  ঐ ঋণগ্রস্ত মানুষের ওপর নানা রকম হয়রানি বা জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া হয়।
মহা নবী (সাঃ) বলেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ» (الْبُخَارِيِّ-9 وَلِمُسْلِمٍ-68)
(প্রকৃত) মুসলিম তো সে, যার মুখ ও হাত থেকে অপরাপর মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত) মুহাজির সে, যে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করে। (বুখারী-৯ ই.ফা,মুসলিম- ৬৮ ই.ফা)
০৯. ঘ। ধৈর্যশীল হওয়া: 
            ধৈর্যের অপর নাম সবর, আর সবর একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাধা দেয়া, বিরত রাখা, বেধে রাখা, ধৈর্যসহ্য ও সহিষুতা, মেজাজের ভারসাম্যতা, আত্মসংযম, অটল অবিচলিত থাকা, অধ্যবসায়।  আর পারিভাষিক অর্থে সবর বা ধৈর্য বলতে আমরা বুঝি-যুগের পরিবর্তিত পরিবেশে নিজের মন মেজাজকে পরিবর্তন না করা বরং সর্বাবস্থায়ই এক সুস্থ ও যুক্তিসঙ্গত আচরণ রক্ষা করে চলা।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ *
হে মুমিনগন। তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা-/১৫৩)
وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِيْنَ *
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-আর যারা সবর করে, আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান-১৪৬)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর, ধৈর্যের কাজে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবল¤¦ন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (সূরা আলে ইমরান-৩/২০০)
১০. ঙ। ক্ষমাশীল ও উদার হওয়া: 
            ক্ষমাশীল ও উদারতা হল মানুষের মহত গুণের  একটি। যে ব্যক্তি ক্ষমা করতে পারে সেই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ ﴿الأعراف: ١٩٩﴾
আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।(সূরা আরাফ-/১৯৯)
قَالَ لَا تَثْرِيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ ۖ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ 
ইউছুফ (আঃ) বললেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি অধিক দয়াবান। (সূরা ইউছুফ-১/৯২)
১১. চ। বিনয়ী ও নম্র হওয়া: 
            বিনয় ও নম্ররতা উত্তম চরিত্রের ভূষণ। যার মূর্ত প্রতীক হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবী (স.) ও তাঁর সাহাবীগণ। বিনয় ও নম্ররতা দ্বারাই তাঁরা মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। বিনয়ী ব্যক্তিকে আল্লাহ যেমন ভালবাসেন মানুষও তাকে পছন্দ করেন। সুতরা যে ব্যক্তি বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ ﴿آل‌عمران: ١٥٩﴾
আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচিছন্ন হয়ে যেতো। (সূরা আলে ইমরান-৩/১৫৯)
وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا 
রহমান-এর বাšদা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম। (সূরা ফোরকান-২/৬৩)
১২. ছ। আমানতদারী হওয়া: 
            আমানত অর্থ গচ্ছিত রাখা। এটি খিয়ানত-এর বিপরীত শব্দ। সাধারণত কারো কাছে কোন অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত দ্রব্যকে যথাযথভাবে হিফাযতে রাখেন এবং তার প্রকৃত মালিক চাওয়া মাত্র তা প্রত্যার্পন করেন, তাকে আমীন বা বিশ^স্ত বলা হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ ﴿المؤمنون: ٨﴾
মুমিনগণ নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রতি রক্ষা করে।” 
(সূরা মুমিনুন-২৩/৮)
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ۚ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا ﴿النساء: ٥٨﴾
(হে মুমিনগণ) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ্ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।  (সূরা নিসা-৪/৫৮)
১৩.হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: فَلَمَّا خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا قَالَ: «لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ -4045)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) খুৎবায় বয়ানে বলেছেন, ‘‘যার কাছে ঈমান নাই তার আমানত নাই, যার দ্বীন নাই তার কোন কিছুই নাই। (বায়হাকী শুআইবুল ঈমান-৪০৪৫)
১৪. জ। অংগীকার পূর্ণকারী হওয়া:
            আহদ অর্থ অঙ্গীকার, ওয়াদা, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভায়াষ কারো সাথে কোন অঙ্গীকার করলে তা পালন করার নামকে ওয়াদা। ওয়াদা পূর্ণ করা আখলাকে হামীদা বা প্রশংসনীয় আচরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অঙ্গীকার ও চুক্তি পূর্ণ করা ঈমানের একটি অঙ্গ। এ দিক থেকে অঙ্গীকার রক্ষা করা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব। ওয়াদা বা অঙ্গীকার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا ﴿الإسراء: ٣٤﴾
আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার স¤পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনি ইসরাঈল-১৭/৩৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ 
আল্লাহ্র নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না, অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা জানেন।” (সূরা নাহল-১৬/৯১)
১৫.  আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَالَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ ﴿الرعد: ٢٥﴾
যারা আল্লাহ্ অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ্ যে, ম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, ওরা ঐ সমস্ত লোক যাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা রাদ-১৩/২৫) 
১৬. ঝ। লজ্জাশীল হওয়া: 
            লজ্জাশীলতা এমন একটি মানবিক গুণ যা মানুষকে বিনয়ী করে। অন্যায় থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত  করে।  লজ্জাশীলতার অধিকারী যারা তারা বেআব্রু হওয়ার নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে। 
এ প্রসংঙ্গে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ، إِذَا لَمْ تَسْتَحْيِ فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ» (بخارى-3235-5577)
আবু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আগের যুগের নবীদের বাণী যা মানব জাতি লাভ করেছে, তম্মধ্যে একটি হল, “যদি তোমার লজ্জা-শরম না থাকে, তখন তুমি যা খুশি তাই করতে পার।” (বুখারী- ৩২৩৫,৫৫৭৭ ই.ফা,৩২২৬ আধু)
অন্য হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ» (الْبُخَارِيِّ-8 وَلِمُسْلِمٍ-59)
আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনছেন, ঈমানের শাখা ষাইট/সত্তরটিরও অধিক। আর লজ্জা-শরম ঈমানের অংশ।” (বুখারী-৮ ই.ফা, মুসলিম-৫৯ ই.ফা)
১৭. ঞ। দানশীল হওয়া: 
            পার্থিব দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের যেসব ভালো গুণ অবলম্বনের যোগ্যতা দিয়েছেন দানশীলতা তার অন্যতম। এটি বান্দার মহৎ গুণাবলীর একটি। মানুষ ও আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম পন্থা। দানশীল ব্যক্তিকে সবাই ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। এটি বান্দার প্রতি আল্লাহর প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত। কারণ ধন থাকলেই দান করা যায় না। দান করতে হলে মন থাকা চাই।  তা না হলে পৃথিবীতে ‘‘কারুণের’’ ইতিহাস সৃষ্টি হতো না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا *
আর তারা আল্লাহ্র প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।” (সূরা দাহার-৭৬/০৮)
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ ﴿آل‌عمران: ٩٢﴾
তোমরা কখনও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তূ থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ্ তা জানেন। 
(সূরা আলে-ইমরান-৩ঃ৯২)  
১৮.  আল্লাহ তায়ালা বলেন-
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ٢٦١﴾
যারা আল্লাহ্ রাস্তায়  স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ্ যাকে চান তাকে আরো বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ্ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা-২/২৬১)

১৯. ট। কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হওয়াঃ  
            কৃতজ্ঞতা দুই প্রকার। এক- আল্লাহর কৃতজ্ঞতা। দুই- বান্দার কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে প্রতি মুহুর্তে তাঁর সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নানাভাবে যে অফুরন্ত নেয়ামত ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এজন্য আজীবন তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেও শেষ করা যাবে না। সে কারনে সর্বাবস্থায় বলতে হবে   আল-হামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ ﴿البقرة: ١٧٢﴾﴿النحل: ١١٤﴾
হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তূ সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে জীবিকা হিসাবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় কর আল্লাহ্র, যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হও। (সূরা বাকারা-২/১৭২)
২০.  আল্লাহ তায়ালা বলেন-
قُلْ هُوَ الَّذِي أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ ﴿الملك: ٢٣﴾ ﴿المؤمنون: ٧٨﴾
বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা মূলক-৬৭ঃ২৩, সূরা মুমিনুন-২৩/৭৮)
অন্য আয়াতে এসেছে,
لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِیدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِیدٌ ﴿ابراهيم: ٧﴾
যদি কৃতজ্ঞতা  স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম-১৪/৭)
২১. ঠ। ন্যায় বিচারকারী হওয়া:
            যুগে যুগে আল্লাহ যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন তার উদ্দেশ্য সমাজে ন্যায় নিষ্ঠতা ও সুশৃঙ্খলার বিধান করা। মানুষের মাঝে যেমন হায়েনার চরিত্র বা পশুত্ব রয়েছে তেমনি ফেরেশতা সূলভ উত্তম প্রবৃত্তিও রয়েছে। পশুত্বের ওপর সুন্দর গুণাবলীকে জাগিয়ে তোলাই নবী, রাসূল, আম্বিয়াদের কাজ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ۚ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَىٰ بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَىٰ أَن تَعْدِلُوا ۚ وَإِن تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا 
হে মুমিনগণ, আল্লাহর স্বাক্ষীস্বরূপ তোমরা ন্যায়বিচারে প্রতিষ্ঠিত থাক। যদিও ইহা তোমাদের নিজেদের, মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও হয়। সে ব্যক্তি ধনী বা গরীব যাই হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায় বিচার করতে প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর অনুগামী হয়োনা। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে তোমরা যা কিছু কর মহান আল্লাহ সে বিষয়ে খরবর রাখেন।  (সুরা নিসা-৪/১৩৫)
২২.  আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ  وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ ﴿المائدة: ٨﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রয়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহ্কে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ সে বিষয়ে অবগত।” (সূরা মায়েদা-৫/০৮)
২৩. ড। পিতা-মাতার সেবাকারী হওয়াঃ 
সন্তানের নিকট পিতা-মাতার প্রাপ্য অধিকারই তাদের হক। সৃষ্টি জগতের মানুষের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি হচ্ছে পিতা মাতা। তাই পিতা-মাতাই তার সর্বাপেক্ষা আপনজন। আর সন্তানের নিকট পিতা-মাতার প্রাপ্যই সর্বাবৃহৎপ্রাপ্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُواْ لِلنَّاسِ حُسْنًا
পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দীন-দরিদ্রের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে। (সুরা বাকারা-২/৮৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا * (اسرائيل:২৩)
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে উহ্শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল, তাদেরকে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। (সূরা  ইস্রাইল-১৭/২৩)
২৪. ঢ। আনুগত্য করাঃ 
আনুগত্য অর্থ মান্য করা, মেনে চলা, আদেশ ও নিষেধ পালন করা, উপরন্ত কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী কাজ করা। আল-কুরআন এবং রাসূলের হাদীসে এর প্রতি শব্দ হিসেবে আমরা যেটা পাই সেটা হল এতায়াত। যার বিপরীত শব্দ হল  মাছিয়াত বা এহইয়ান। মাছিয়াত অর্থ নাফারমানী করা, হুকুম অমান্য করা প্রভৃতি। নেতার আনুগত্য ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় ব্যক্তিদের উপর অবশ্য কর্তব্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللَّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنكُمْ 
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্র নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। (সূরা নিসা-৪/৫৯)
২৫. আখলাকে হামীদাহ বা সচ্চরিত্রের গুরুত্ব:
সৃষ্ঠির উষা লগ্নে মানুষ সভ্য জীবন যাপন করত না নানা বৈরী পরিবেশ ও হিংস্ জীব জন্তর সাথে যুদ্ধ  করে তাদের বেঁচে থাকতে হতো। কালক্রমে মানুষ ক্রমাগত চর্চার ফলে অর্জন করে নানা মানবীয় গুণাবলী। এসব মানবীয় গুণের  সমষ্টিই হচ্ছে চরিত্র।
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে- 
Money is lost nothing is lost,
Health is lost something is lost,
But character is lost everything is lost.

অর্থঃ যার অর্থ হারিয়েছে এটা কিছুই ক্ষতি হলো না।
যার স্বাস্থ্য হারিয়েছে এটা সামান্য কিছু ক্ষতি হলো।
আর যার চরিত্র হারিয়েছে তার সকল কিছু হারিয়ে গেল।

২৬. আর ইসলামের প্রশংসনীয় চরিত্র হচ্ছে সর্বোত্তম সম্পদ 
তাই আল্লাহ তায়ালা বলেন- 
صِبْغَةَ اللَّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ ﴿البقرة: ١٣٨﴾ 
আমরা আল্লাহর রং ধারণ করেছি এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি।” (সুরা বাকারা-২ঃ১৩৮)
আল্লাহর গুনে গুনান্বিত হও, কেননা আল্লাহ কোন অন্যায় কাজ পছন্দ করেন না। সুতরাং মানুষ তার প্রতিনিধি হিসেবে কোন অন্যায় করবে না বরং সর্বদা থাকবে সৃষ্টির কল্যাণের চিন্তায়। হাদীসে এসেছে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا»[حكم الألباني] : حسن صحيح (ترمزى-1162-ابو داؤد-4682)
মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ যার চরিত্র উত্তম সেই পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী।” (তিরমিযি- ১১৬২,আবু দাউদ-৪৬৮২)

২৭. আখলাকে হামীদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্র অর্জনের উপায়:

ক। আল-কুরআনের শিক্ষা গ্রহণঃ 
আল-কুরআন ইসলামী শরীয়ার প্রধান উৎস। কুরআনের যাবতীয় আহকাম পালনের মাধ্যমে একজন মানুষ উত্তম ও প্রসংসনীয় চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا ﴿الإسراء: ٩﴾
নিশ্চয়ই এই কুরআন সুদৃঢ় ও সঠিক পথের দিকে হেদায়াত করে এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণকে সু-সংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।”  (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭/৯)

২৮. খ। রাসুল (সাঃ)-এর আদর্শ গ্রহণঃ 
রাসুল (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ। রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহ, আদর্শ ও হাদীস অনুসরণের মাধ্যমে এই মহৎ চরিত্রের অধিকরী হওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ﴿الأحزاب: ٢١﴾
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলের জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সুরা আহযাব-৩৩/২১)

২৯. গ। আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে:
মানুষের শরীরের একটি অংশ আত্মা তা কুলষিত হলে গোটা দেহই কলুষিত হয়ে যায়, সুতরাং আত্মা পরিশুদ্ধি চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ﴿الأعلى: ١٤﴾
সফল হয়েছে তারা, যারা তাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে। (সুরা আলা-৮৭/১৪)

৩০. ঘ। ফরজ ইবাদত গুলো যথাযথ ভাবে আদায় করাঃ
            উপস্থিত হাজেরীন! ফরজ ইবাদতের মধ্যে সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি আরকান গুলো যথা যথ ভাবে আদায় করা আখলাকে হামীদায়ের অংশ। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং সালাতে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। (সূরা বাকারা-০২/৪৩)
হজ্জ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, 
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
মানুষের উপর আল্লাহর এ অধিকার যে, বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌছার শক্তি সামর্থ রাখে সে যেন হজ্জ করে এবং যে এ নির্দেশ অমান্য করে কুফরের করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ব প্রকৃতির ওপর অবস্থানকারীদের মুখাপেক্ষী নন। (আলে-ইমরান-৩/৯৭)
৩১. (ঙ) নফল ইবাদত আদায়ঃ
            বান্দার পরকালে মুক্তির জন্য ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি সুন্নাত ও নফল ইবাদ করতে হবে। ফরজে ঘার্তি হলে সুন্নাত ও নফল দ্বারা পুরন করা হয়। সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে সর্ব উত্তম হচ্ছেঃ তিলাওয়াতে কুরআন, এরপর সালাত ও যিকের এবং তাসবীহ-তাহলিল আদায় করা ইত্যাদি।
৩২. উপসংহার:
প্রিয় মুজাহেদ্বীন ও মুছুল্লিয়ান! ইসলামে আখলাক বা চারিত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী। চরিত্রের দুটি দিক একটি হলো প্রশংসনীয়অপরটি হলো নিন্দনীয়। আখলাকে হামীদাহ বা প্রশংসনীয় চরিত্রের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করে প্রসংশিত হতে পারে। পরিশেষে রাসূলুল্লাহর একটি হাদীসের বানী শুনিয়ে শেষ করছি। 
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَخْيَرِكُمْ أَحْسَنَكُمْ خُلُقًا»(الْبُخَارِيِّ-5594)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি, যার স্বভাব-চরিত্র সর্বোত্তম। (বুখারী-৫৫৯৪ আধু, ৫৪৯০-ই.ফা)
     মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আখলাকে হামীদাহ বা প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
https://drive.google.com/file/d/1no8HobNVV4eDargBCE3FoKDa8JqjM80P/view?usp=sharing


No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com