অন্যায়-অনাচার প্রতিরোধে ঈমানের ভূমিকা
০২. ভূমিকা
কুরআন ও হাদীসে নিজে
ভাল কাজ করার পাশাপাশি সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার দূরীভূত করে সামাজে শান্তির পরিবেশ
সৃষ্টি করা মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর সেই দায়িত্বকে ন্যায়ের
আদেশ, অন্যায়ের নিষেধ, আল্লাহর পথে দাওয়াত, তাবলীগ, ওয়াজ-নসিহত, দ্বীন প্রতিষ্ঠা, জিহাদ প্রভৃতি নামে অখ্যায়িত করে বারংবার এই দায়িত্ব পালনের জন্য মহান আল্লাহ নির্দেশ
দিয়েছেন।
০৩. মুলত অন্যায়-অনাচার
রোধে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে আহবান করাই সকল নবী ও রাসূলের মূল দায়িত্ব ছিল। আর
এই দায়িত্বই সর্বশেষ উম্মাৎ, উম্মাতে মুহাম্মাদীর অন্যতম বৈশিষ্ট। আল্লাহ বলেন,
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّه
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।
তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা আলে-ইমরান-১১০)
০৪. আল্লাহ আরো বলেন,
وَلْتَكُن مِّنكُمْ
أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ
الْمُنكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿آلعمران: ١٠٤﴾
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল
থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ
করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।”
(সূরা আলে-ইমরান-১০৪)
আল্লাহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে
তাদের দায়িত্ব শিক্ষা দিয়ে বলেনঃ
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ
فِي الأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا
عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الأُمُورِ ﴿الحج: ٤١﴾
“তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে
শক্তি-সামর্থ্য দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও
অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহ্র এখতিয়ারভুক্ত।” (সূরা হজ্ব-৪১)
০৫. এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ
بْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَلاَ كُلُّكُمْ
رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ،
فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ،
وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ،
وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ
زَوْجِهَا، وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ
عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ
وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»)بخارى-6653-مسلم-4573)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। রাষ্ট্রের আমির জনসাধারণের তত্ত্বাবধায়ক এবং সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনের তত্ত্বাবধায়ক, সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে এবং একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহ ও তার সন্তানদের তত্ত¡াবধায়িকা সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। চাকর তার মনিবের সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করা হবে। সাবধান! এইভাবে তোমাদের প্রত্যেকেই তত্ত¡াবধায়ক এবং প্রত্যেকেই তত্ত্বাবধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বুখারী-ই.ফা;৬৬৫৩, মুসলিম-ই.ফা;৪৫৭৩)
০৬. অন্যায় অনাচার রোধে ঈমানের মূল ভূমিকা
অন্যায় অনাচার, জুলুম অত্যাচার ও গর্হিত কর্ম দেখলে তার বা তাদের উপর সামষ্টিকভাবে দায়িত্ব হয়ে
যাবে সাধ্যমত ও সুযোগমত তার প্রতিবাদ বা প্রতিকার করা। আর একাজই হবে তাওহীদবাদী ঈমানদার
ব্যক্তির ঈমানের মূল ভূমিকা।
০৭. যেমন রাসূল (সাঃ) বলেন,
عَن أبي سعيدٍ الخدريِّ
عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ
مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ
يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ
“তোমাদের কেউ যখন কোন মন্দ কাজ
হতে দেখে তখন সে যেন তা (শক্তি থাকলে) হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে, যদি হাত দ্বারা প্রতিরোধ করার শক্তি না থাকে তবে যেন কথা দ্বারা প্রতিবাদ করে, যদি তারও সামর্থ্য না থাকে তাহলে সে যেন অন্তর দ্বারা সেটাকে ঘৃণা করে। আর এটা
হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ম স্তর।” (মুসলিম-৮৩ ই.ফা.বা)
০৮. প্রতিরোধকারীর জন্য পুরস্কার
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সমাজকে অন্যায়-অনাচার,
অশ্লীল-অপকর্ম ঘুষ-দূর্নীতি ও সার্বিক অপরাধ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রানপন চেষ্টা
করা অবশ্যই ঈমানের দাবী, এই প্রচেষ্টা সফল হোক বা না হোক আমাদের মাধ্যমে একটি প্রতিকার বা প্রতিরোধ করাই
বড় ইবাদত যেমন রাসূল (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ،
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ
سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ
صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ
صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى»-(مسلم-83)
“ভাল কাজের নির্দেশ করা সাদকা বলে গন্য, এবং মন্দ বা খারাপ থেকে নিষেধ/প্রতিবাদ
বা প্রতিরোধ করা সাদকা বলে গন্য” (সহীহ মুসলিম-ই.ফা. ১৫৪১, ই,সে. ১৫৪৮)
০৯. আমরা যারা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, প্রতিকার বা মানুষকে সৎপথে আহবান করতে মুখ খুলতে চাইনা তাদের অবশ্যই ভেবে দেখা
দরকার যে, প্রতিদিন অগনিতবার আমরা সুযোগ পাই কিছু ভাল কাজ করার বা বলার। আর প্রতিরোধ বা বলার
মাধ্যমে কারো উপকার হবে কিনা অথবা শুনবে কিনা তা কোন বিষয়ই নয়। বরং সৎ নিয়তে উদ্যোগ
গ্রহন করার জন্য মহান আল্লাহর নিকট অগনিত পুরস্কার লাভ হবে। সাথে সাথে সমাজ বা ব্যক্তির
জীবন থেকে দূর হবে অন্যায়- অনাচার। এর মাধ্যমে তারাও পার্থিব জীবনে উপকৃত হবে। আর এমনটি
হলে আমরা ২য় পর্যায়ের পুরস্কারটিও পাব।
১০. আর যদি আপনার কাজে
কেউ হিদায়াত প্রাপ্ত হয় তবে তার সমপরিমাণ সাওয়াব আপনি লাভ করবেন। মাহনবী (সাঃ) বলেন,
فَوَاللَّهِ لَأَنْ
يُهْدَى بِكَ رَجُلٌ وَاحِدٌ خَيْرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ
“আল্লাহর কসম! যদি তোমার আহŸানের কারণে একজন লোকও হেদায়াত প্রাপ্ত হয় তাহলে সেটা তোমার জন্য একদল লাল উট অপেক্ষাও
উত্তম বিবেচিত হবে।” (বুখারী-২৭৩৭ ই.ফা.বা)
১১. রাসুল (স.) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ
مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ
دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ،
لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا» (رَوَاهُ مُسلم-6560)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি কোন ভাল পথে আহবান করে তবে যত মানুষ
তার অনুসরণ করবে তাদের সকলের পুরস্কারের সমপরিমাণ পুরস্কার সেই ব্যক্তি লাভ করবে, তবে এতে অনুসরণ কারীদের পুরস্কারে কোন ঘাটতি হবেনা। আর যদি কোন ব্যক্তি বিভ্রান্তির
দিকে আহবান করে তবে যত মানুষ তার অনুসরন করবে তাদের সকলের পাপের সমপরিমান পাপ সেই ব্যক্তি
লাভ করবে, তবে এতে অনুসরণকারীদের পাপের কোন ঘাটতি হবে না।” (মুসলিম- ই.ফা. ৬৫৬০, ই. সে. ৬৬১৪)
সম্মানিত ভাইয়েরা! ন্যায়ের
আদেশ, অন্যায়ের নিষেধ বা প্রতিরোধ করলে পুরস্কার যেমন অফুরন্ত, আর তা পালনে অবহেলার শাস্তিও ভয়াবহ। কুরআন হাদীস থেকে জানা যায় এ ধরনের ইবাদতে
অবহেলা করলে চার প্রকারের শাস্তি অবধারিত (১) দুনিয়াবি গযব (২) পারস্পারিক সৌহার্দ্য
সম্প্রীতি নষ্ট (৩) দোয়া কবুল না হওয়া এবং (৪) পাপ না করেও শুধুমাত্র নিরব থাকা বা
আপত্তি না করার কারণে পাপের ভাগী হওয়া।
১৩. হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ
بْنِ جَرِيرٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ قَوْمٍ يُعْمَلُ فِيهِمْ بِالْمَعَاصِي، هُمْ أَعَزُّ مِنْهُمْ وَأَمْنَعُ، لَا يُغَيِّرُونَ، إِلَّا
عَمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ» (ابْن مَاجَه-4009)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন- কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে
পাপাচার হতে থাকে এবং তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতা থাকা সত্বেও তাদের বাধা দেয়
না, তখন আল্লাহতায়ালা তাদের উপর ব্যাপক ভাবে শাস্তি পাঠান। (ইবনে মাজাহ-৪০০৯)
অন্য হাদীসে এসেছে,
عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي
حَازِمٍ، قَالَ: قَامَ أَبُو بَكْرٍ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ:
" يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الْآيَةَ: {يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ}
[المائدة: 105] ، وَإِنَّا سَمِعْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
يَقُولُ: «إِنَّ النَّاسَ إِذَا
رَأَوُا الْمُنْكَرَ لَا يُغَيِّرُونَهُ، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابِهِ»(ابو داؤد-4338-ابْن مَاجَه-4005)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যখন মানুষেরা অন্যায় দেখেও তার পরিবর্তন বা সংশোধন করবেনা তখন যে কোন মূহুর্তে
আল্লাহর শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে” (আবু দাউদ-৪৩৩৮; ইবনু মাজাহ্ - ৪০০৫)
১৪.
কোন ফরিয়াদ বা আর্তনাদ কবূল হবে না
রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ اليَمَانِ،
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي
بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ أَوْ
لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ
فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ»: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ-ترمذى-2169-احمد-23301-بيهقى-7152)
“যার কব্জায় আমার জান তার শপথ!
তোমরা সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজে মানুষকে বাধা দিবে,অন্যথায় আল্লাহতালা তার নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন, তখন তোমরা তার নিকট প্রার্থনা করবে কিন্তু তিনি তোমাদের সেই প্রার্থনা আর কবূল
করবেন না।” (তিরমিযি-২১৬৯, আহমদ-২৩৩০১,বায়হাকী-৭১৫২)
১৫. সরকার, প্রশাসক বা নেতৃবৃন্দের অন্যায়ের ক্ষেত্রে
করণীয় ব্যাখ্যা করে রাসূল (সাঃ) বলেছেন
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ،
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَتَكُونُ أُمَرَاءُ
فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ، فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ،
وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ» قَالُوا: أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ؟ قَالَ:
«لَا، مَا صَلَّوْا» رَوَاهُ مُسلم
অচিরেই তোমাদের উপর অনেক
শাসক প্রশাসক আসবে যারা ন্যায় ও অন্যায় উভয় প্রকারের কাজ করবে। যে ব্যাক্তি তাদের অন্যায়কে
অপছন্দ করবে সে অন্যায়ের অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি আপত্তি, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করবে সে (আল্লাহর অসন্তষ্টি থেকে) নিরাপত্তা পাবে। কিন্তু যে এ সকল অন্যায়
কাজ মেনে নেবে বা তাদের অনুসরণ করবে (সে বাঁচতে পারবেনা) সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবনা ? তিনি বললেন, না, যতক্ষন তারা সালাত আদায় করবে” (মুসলিম- ই.ফা. ৪৬৪৭, ই.সে. ৪৬৪৯)
১৬. অন্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
عَن الْعرس بن عَمِيرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا عُمِلَتِ
الْخَطِيئَةُ فِي الْأَرْضِ مَنْ شَهِدَهَا فَكَرِهَهَا كَانَ كَمَنْ غَابَ
عَنْهَا وَمَنْ غَابَ عَنْهَا فَرَضِيَهَا كَانَ كَمَنْ شَهِدَهَا» [حكم الألباني] : حسن - (ابو
داؤد-4345)
“যখন কোন স্থানে গুণাহের কাজ করা
হয় তখন যে সব লোক সেখানে উপস্থিত থাকে অথচ সেই গুণাহের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে, তবে আল্লাহতায়ালার নিকট তারা অনুপস্থিত লোকদের ন্যায় (অর্থাৎ এই গুণাহে তাদের কোন
দায়বদ্ধতা নেই) আর যে ব্যক্তি এই গুণাহের স্থানে উপস্থিত নয়, কিন্তু সেই গুণাহের প্রতি সন্তুষ্ট, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে যারা
সেখানে উপস্থিত ছিল।” (আবু দাউদ-৪৩৪৫, কিতাবুল মালাহিম)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَايَحْقِرَنَّ أَحَدُكُمْ
نَفْسَهُ» ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ يَحْقِرُ أَحَدُنَا نَفْسَهُ؟ قَالَ:
" يَرَى أَمْرًا لِلَّهِ عَلَيْهِ فِيهِ مَقَالٌ، ثُمَّ
لَا يَقُولُ فِيهِ، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: مَا
مَنَعَكَ أَنْ تَقُولَ فِي كَذَا وَكَذَا؟ فَيَقُولُ: خَشْيَةُ النَّاسِ، فَيَقُولُ:
فَإِيَّايَ كُنْتَ أَحَقَّ أَنْ تَخْشَى"(ابن ماجة-4008-مسند
احمد-11255-11440-11868-ابي داؤد الطيالسى-2320)قال البوصيري في "الزوائد":
إسناده صحيح.
১৭. রাসূল (সাঃ) বলেছেন-তোমাদের কেউ যেন নিজেকে অপমানিত না করে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লার রাসূল (সাঃ)! আমাদের কেউ কীভাবে নিজেকে অপমানিত করতে পারে? তিন বলেনঃ “তোমাদের কেউ কোথাও আল্লাহ জন্য কথা বলার প্রয়োজন বা সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যদি কথা না বলে তবে তার এই নীরব থাকাকে হালকা ভাবে দেখা হবেনা। কারন, আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি এ বিষয়ে কেন কথা বলনি? তখন সে বলবে, হে আল্লাহ, আমি মানুষকে ভয় পেয়েছিলাম। তখন তিনি বলবেন, আমার অধিকারই তো বেশী ছিল যে, তুমি আমাকেই বেশী ভয় করবে” (ইবনে মাজাহ-৪০০৮, আহমদ-১১২৫৫,১১৪৪০,১১৮৬৮, আবু দাউদ তায়ালুসী-২৩২০)
সম্মানিত হাজেরীন! আদেশ, নিষেধ ও অন্যায়-অনাচারের প্রতিকার ও প্রতিরোধে বিনয় ও নন্ত্রতা অন্যতম শর্ত। আমরা অনেক ক্ষেত্রে আপত্তি/প্রতিকারের নামে মুরব্বীয়ানা প্রকাশ
করতে চাই এবং অন্যায়কারীকে রুঢ় ভাষায় আদেশ বা নিষেধ করি। ফলে তার মধে মানসিক প্রতিরোধ
তৈরী হয় ও আমাদের কথা গ্রহন করেনা। তখন আবার তাকে আমরাই ইসলামের শত্রæ বানিয়ে ফেলি। আমাদের স্মরণে রাখা দরকার যে, যাদি আমাদের আচরনে বা কথায় কেউ
দীনের প্রতি রুষ্ট হয় তাহলে তার পাপ আমাদের উপরও বর্তাবে।
১৯. কুরআন ও হাদীসে আদেশ, নিষেধ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে আর তা হলো সবর, বিনয় ও উত্তম আচরনের মাধ্যমে যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ
وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ [٤١:٣٣] وَلَا تَسْتَوِي
الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ
بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ
وَلِيٌّ حَمِيمٌ - وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ
الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ ﴿فصلت: ٣٣- ٣٥﴾
“তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? যে আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ। ভাল ও মন্দ
সমান নয়। (কারো) জওয়াবে যা উৎকৃষ্ট তাই বলুন। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা
রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। এ চরিত্র তারাই
লাভ করে, যারা সবর করে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান।” (সূরা হা মীম সাজদাহ্-৩৩-৩৫)
২০. তিনি আরো বলেন-
اُدْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ
وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي
هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ
أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহŸান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন
পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।”
(সূরা নাহল-১২৫)
২১. পরিশেষ
অন্যায়কারীর নিকট গিয়ে
তাকে ভাল কাজের আদেশ দেওয়া অবশ্যই ইবাদত, অন্যায়কারীর অনুপস্থিতিতে তার
অন্যায় বা পাপের কথা অন্যের কাছে বলা গীবত ও কঠিন হারাম, অন্যায়কারীকে আদেশ করুন, নিষেধ বা দাওয়াত করুন। সম্ভব না হলে তার অন্যায়কে ঘৃনা
করুন ও তার হিদায়েতের জন্য দুআ করুন। অন্যায়কে অন্যায় বলুন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা
বলুন/সোচ্চার হউন। মহান আল্লাহ সকলকে অন্যায় অনাচার থেকে বিরত রাখুন এবং তা প্রতিরোধে
সর্বোচ্চ ঈমানের ভূমিকা পালনে তাওফকি দান করুন। আমিন!!
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com