মহাভারত কি অশুদ্ধ ?
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
"মহাভারত
কি অশুদ্ধ হয়ে গেছে"?
এরূপ বলা ঠিক নয়। এরূপ কি
কোন মুসলিম বলতে পারেন?
"মহাভারত" মহাকাব্যের X Ray Report. মহাভারতের X
Ray Report.
১.মহাভারত পরিচিতি:
মহাভারত সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন ভারতের দু‘টি প্রধান
মহাকাব্যের অন্যতম বৃহত্তর গ্রন্থ (অপরটি হল রামায়ণ)। এ মহাকাব্যটি হিন্দু শাস্ত্রের
ইতিহাস অংশের অন্তর্গত। মহাভারতের মূল উপজীব্য বিষয় হল কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবিবাদ
এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি। মহাভারত কথাটির অর্থ: ভরত বংশের মহান
উপাখ্যান। (উইকিপিডিয়া)
২.মহাভারতের রচয়িতা:
কৃষ্ণ
দ্বৈপায়ন বেদব্যাস।
৩.মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা ও আয়তন:
মহাভারতে ১ লক্ষ শ্লোক ও অনেক দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এ
মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ। এ মহাকাব্যটির আয়তন প্রায় ইলিয়াড ও
ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের ১০ গুণ এবং রামায়ণের ৪ গুণ।
৪.মহভারতের প্রধান ২ চরিত্র:
প্রায় ২৯টি প্রধান চরিত্র রয়েছে যথা- কুন্তি, শ্রীকৃষ্ণ, কর্ণ, অর্জুন, দ্রপদী, নকুল, পান্ডুর, বিধূর, ভীম, ব্যাসদেব, যুধিষ্ঠির, শকুনি, শল্য, সত্যবতী, সহদেব
ইত্যাদি।
৫.মহাভারত রচনাকাল:
বেদব্যাস লিখিত মহাভারতের কাহিনি রচনা করতে প্রায় ৩ বছর
সময় লেগেছিল। ইহা খৃষ্ট পূর্ব ৩০০০ অব্দের পূর্বে রচিত।
"মহাভারত" নিয়ে এ বাজে প্রবাদ রীতি কখন, কোথ্যেকে,
কিভাবে আমাদের নিকট এলো?
সম্ভবত: এ
দেশ এক সময় পাক-ভারত উপমহাদেশের অংশ ছিল। সে সময় বেশিরভাগ লোকই সনাতন ধর্ম হিন্দু ধর্মের অনুসারী
ছিল। ভারত
উপমহাদেশে যেহেতু ইসলাম ধর্ম অনেক পরে এসেছে। অনেকেই এটা গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছে
কিন্ত কৃষ্টি কালচার ও ভাষায় অপরিপক্ক থেকে গেছে। তাই
মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি এ কথাটা ঠাই করে নিয়েছে মুসলিমদের মন ও মগজে।
"মহাভারত" হচ্ছে
সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের একটি ধর্মীয় মহাকাব্যের নাম।
### একটু ভেবে দেখি:
১.আমাদের
মধ্যে অনেকে প্রায়ই বলে থাকি, "এতে কি হয়েছে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে?"
২.একটু
ভাল করে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে, এই কথাটি বলার মাধ্যমে আমরা নিজেদের অজান্তেই
"মহাভারতকে" শুদ্ধ অর্থাৎ সঠিক বলে
ঘোষণা দিয়ে কত বড় মারাত্বক ঈমান বিধ্বংসী ভুল করছি।
(আস্তাগফিরুল্লাহ)
৩.মহাভারত
একটি উপন্যাস। যার পুরোটাই অশুদ্ধ ও মিথ্যা দিয়ে লিখা। তাই তা শুদ্ধ মানা আমাদের
জন্য হারাম যা কুফরির সমতুল্য। সে ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারিনা এই কাজটা করলে মহাভারত
কি অশুদ্ধ হয়ে গেল?
(দৈনিক সংগ্রাম, এপ্রিল ২, ২০১৯)
৪.আমাদের
দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময় বলে থাকি এ কাজটি করলে বা এ কথা শুনলে কি ‘মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল?’ এ বাক্যটি একটি কুফরি বাক্য। মহাভারত হিন্দু সম্প্রদায়ের
কাছে সংবিধানের মতো হতে পারে! মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে এর কোন মূল্য নেই। মুসলমানদের
জীবনাচারণ হতে হবে পবিত্র কুরআনের
আলোকে। মুসলমানদের কাছে মহাভারত পবিত্র কোন গ্রন্থ নয়। এখানে শুদ্ধ বা অশুদ্ধের
কোন কিছু নেই। তাই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল এ বাক্যটি পরিহার করা আবশ্যক। (দৈনিক ইনকিলাব, জুলাই-১১, ২০১৯)
৫.অনেকে
মহাভারতকে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলে গুলিয়ে ফেলেন। মহাভারত হিন্দুদের একটি ধর্মগ্রন্থ বললে ভুল বলা হবে।
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলা মানে মহাভারতকে একটি ধর্মের মধ্যে যেন বেঁধে রাখা।
কিন্তু তাতো নয়। মহাভারত কোন
ধর্মগ্রন্থ নয়। সমস্ত ধর্ম,
দর্শন, সাহিত্য, কাব্যের
ঊর্ধ্বে। (Jajadarchi.
Com)
### মহাভারত শুদ্ধ না
অশুদ্ধ গ্রন্থ ?
১.মহাভারতে
যে অসংখ্য ভুল আছে তা অনেক বড় বড় হিন্দু পন্ডিতেরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
২.হিন্দু
ধর্মে প্রধান ২টি মহাকাব্য রয়েছে। যথা:
ক.
মহাভারত খ. রামায়ণ
যেহেতু
এটা নিছক কাল্পনিক মহাকাব্য তাই অসংখ্য ভুল থাকা খুব স্বাভাবিক।
৩.এটা
যেহেতু মানব রচিত তাই বিশুদ্ধ হতেই পারে না। এটার উপজীব্য হলো কৌরব ও পাণ্ডবদের
গৃহবিবাদ এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনাবলি মাত্র।
৪.এর
প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক মূল বিষয় ও কাল্পনিক কেমনে তা শুদ্ধ হয়?
৫.আমরা
মুসলিমরা নিজেদের অজ্ঞতাবশত হিন্দুদের অনুকরণে অনবরত ভুলটাকে সঠিক বলে গ্যারান্টি সার্টিফিকেট দিচ্ছি!! (প্রচলিত ভুল ও অন্যান্য
গ্রন্থ)
মূল কথা:
১.এটা
আক্বীদা গত (ঈমানী) জটিলতা/ সমস্যা অতীতে ভুল করে যা বলেছি তাওবা করি আর দীপ্ত শপথ
নেই আর কখনোই কিছুতেই এ ভুলটি আর করবোনা ইনশাআল্লাহ।
২.অথবা ' মহাভারত' ' কি অশুদ্ধ
হয়ে গেছে'
না বলে, বলতে পারি 'মহাভারত কি শুদ্ধ হয়ে গেছে?
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে
বুঝার তৌফিক দান করুন,
আমীন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com