শূকরের মাংস ইসলামে হারাম কেন?
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভূমিকা:
মহান আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনীত ধর্মের নাম ইসলাম।
সৃজনশীল এই ধর্মে রয়েছে সুশৃংখল নিয়ম-কানুন, রয়েছে নানা ধরণের বিধি নিষেধ।
##ইসলামের দৃষ্টিকোণ
থেকে কেনো শুকরের মাংস হারাম?
১.বিধি
নিষেধগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শুকরের গোশত। ইসলামের বিধি মোতাবেক কোনো মুসলমান
শুকরের গোশত খেতে পারবে না। কারণ ইসলাম মোতাবেক শূকরের গোশত হারাম। মুসলমানদের
জন্য যা কিছু খারাপ,
ক্ষতিকর, বিপদজনক তাই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে আর যা কিছু ভালো, উপকারী তার সব কিছু হালাল।
২.আমাদের
প্রতি মহান আল্লাহর রহমত হচ্ছে তিনি আমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ খাওয়া বৈধ
করেছেন এবং শুধুমাত্র অপবিত্র বস্তুসমূহ হারাম করেছেন। তিনি বলেন, وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ
‘তিনি তাদের জন্য পবিত্রবস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু
হারাম করেন।’
(সূরা আল আরাফ-৭/১৫৭)
এখানে
খাবায়েছ এর অর্থ যা শারিরীক, মানসিক
ক্ষতিকর বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
৩. আল্লাহ
আল কোরআনের ৪টি আয়াতে শুকরের গোশত হারাম ঘোষণা করেছেন।
إِنَّمَا
حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ
‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত। (সূরা আল বাক্বারাহ-২/১৭৩)
حُرِّمَتْ
عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ
‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের
গোশত। (সূরা আল মায়েদা-৫/৩)
قُلْ
لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا
أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ
‘আপনি বলুন যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোনো হারাম খাদ্য পাই না কোনো ভক্ষণকারীর
জন্যে,
যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত।
(সূরা আল আনআম-৬/১৪৫)
অন্য আয়াতে এসেছে,
إِنَّمَا
حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ
‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত।(সূরা আন নাহল-১৬/১১৫)
##শুকুরের গোশত কেন
নিষেধ করা হয়েছে এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন তাই হারাম।
# # শুকরের মাংস এর
ব্যাপারে তাফসীরকার দের ভাষ্য:
ইমাম কুরতুবী সহ অন্যান্যদের ভাষ্য হলো এখানে মাংস উল্লেখ
দ্বারা শুধু মাংস ভক্ষণ হারাম বুঝানো হয় নি। বরং এর দ্বারা সমগ্র অংশ যথা হাড়, চর্বি, রগ, পশম,
চামড়া সবই হারাম বুঝানো
হয়েছে। এখানে মাংস উল্লেখ করার কারণ হলো শুকর "নাজাসে আইনী" (মৌলিক)
ভাবেই হারাম যবেহ করা,
মৃত সর্বাবস্থায় হারাম।
যবেহ করলেও হালাল হবেনা। তবে পশম দিয়ে সূতা বানিয়ে ব্যবহার বৈধ এটা সবার মত।
(আহকামুল কুরআন,
কুরতুবী, ইবনে কাসীর, মায়ারিফুল কুরআন থেকে ঐ আয়াতগুলোর তাফসীর দেখুন)।
###অন্যান্য ধর্মের
দৃষ্টিকোণ:
১.
বাইবেলেও শুকরের গোশত নিষেধ করা হয়েছে। বাইবেল "লেভীটিকাস্থ" গ্রন্থে
শুকরের গোশত খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে, ‘এবং শুকর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট।
এমন কী সে চিবিয়ে খায়,
যাবর কাটে না। (তবু) ওটা
অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য।’
২. ঐ
গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছে, ‘ওগুলোর গোশত তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শও
করবে না,
ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার
জন্য।’
৩.
বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমী’ তেও শুকরের গোশত ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছে, ‘আর শুকর তা তুমি খাবেনা। (ডিউট্যারনমীঃ ১৪:৮)
৪. ৩
সেমেটিক ধর্মের মধ্যে মাত্র খ্রিস্টানরা শুকরের মাংস ভক্ষণ করে।
৫.
পর্বতের পাশে একদল শুয়োর চরছিল, আর তারা
(অশুচি আত্মারা) যীশুকে অনুনয় করে বলল, ‘আমাদের এই শুয়োরের পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন।’তিনি তাদের অনুমতি দিলে সেই অশুচি আত্মারা বের হয়ে
শুয়োরদের মধ্যে ঢুকে পড়ল।”
[মার্ক, অধ্যায়-০৫; স্তবক
১১-১৩]
# বিবেকের বিচারে
শুকরের মাংস কেনো হারাম?
১.সুস্থ
বিবেক,
স্বভাব মাত্রই শুকরের মাংস
ঘৃণা করে। কেননা তা নাপাক।
২.সুস্থ
রুচি আকর্ষণ করে না। শুকরের সব লোভনীয় খাদ্য হলো সব রকমের পায়খানা, ময়লা, আবর্জনা।
৩.আধুনিক
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শুকরের মাংস ভক্ষণ সর্বত্র বিশেষভাবে গ্রীষ্ম প্রধান
দেশে খুবই ক্ষতিকর। (ইসলামে হালাল হারামের বিধান ৬৭,৬৮ পৃষ্ঠা)
৪.এটা নির্লজ্জ্ব
প্রাণী। এটার মাংস খেলে মানুষের মধ্যে হায়া কমে যাবে বিধায় হারাম।
৫.অনেকেই
বলেছেন শুকরের প্রজনন ক্ষমতা খুবই স্বল্প। ১০০ বারের অধিক মিলনের ফলে নাকি প্রজনন
ঘটে। এটার মাংস খেলে প্রজনন ক্ষমতা যাবে।
৬.শুকর
হলো অলস,অশ্লীল রুচিশীল প্রাণী। এটা ভক্ষন করলে মানুষ ঐ সব খারাপ
অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
৭.পৃথিবীতে
শুকর অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কারণে নিকৃষ্টতম প্রাণী। শুকর তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলন
করার জন্য অন্য পুরুষ শুকর কে ডেকে নিয়ে আসে। আমেরিকার ও ইউরোপের জনগণের প্রিয়
খাদ্য শুকরের মাংস ভক্ষণের ফলে তারা এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা প্রমাণ হয়ে গেছে।
ওদের প্রিয় সংস্কৃতি ডান্স পার্টিতে নেচে নেচে উত্তেজনায় উন্মত্ত হয় তখন একে অপরের
সঙ্গে স্ত্রী বদল করে। অনেকেই জীবন্ত নীল ছবির স্বাদ নিতে স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে
বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয় ঠিক শুকরের মতোই।
৮.অপরদিকে
ভায়াগ্রার বিকল্প হিসেবে শুকরের মাংস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আর্জেন্টিনার
প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডে কির্শনার৷ (d w . Com)
## স্বাস্থ্য
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শুকরের মাংস ভক্ষণ হারাম কেনো?
১.শুকরের
মাংস ভক্ষনের ফলে শরীরে ১ প্রকার পোকার জন্ম হয় যা স্বাস্হ্য কে কুড়ে কুড়ে
খায়।
২.ইহার
মাংস ভক্ষন করলে যেসব জীবাণু জন্মাতে পারে তাহলো:
Cysticerus,Teunicallus,
Cysticereus,
Cellulisae,
Spargamnue, Mousini, Echinociceus, Podymorphus, Paragonimus, Weater manall ইত্যাদি।
(আল্লামা ড: ইউসুফ আল কার্যাভীর ইসলামে হালাল হারামের বিধান
৬৭,৬৮ পৃষ্ঠা)
৩.শত
সাবধানতা সত্বেও America,
Urope, Canada, China, Russia, Japan, Korea, Thailand এর অধিবাসী শুকরের মাংস ভক্ষণ এর ফলে ট্রিচিনিয়াসিসে (সূতা
কৃমিতে) আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যায়।
৪.Washington Post এ ১৯৫২ এর ৩১ মার্চ প্রকাশিত গবেষণায় "ডা: প্লেন
শেফার্ড" বলেছেন America,
Canada তে মারা যাওয়া প্রতি ৬জনের
১জন ঐ রোগে মারা যায়।
৫.Times পত্রিকায় (১৯৪৬ সালের ৩ ডিসেম্বর) এর ৭৭পৃষ্ঠায় বলা
হয়েছে "ডা: এস গোল্ড" বলেছেন America এর ২৫% থেকে ৩৫% লোকই শুকরের মাংস ভক্ষণ এর ফলে ঐ জীবাণু
বহন করে। এ কৃমি কয়েক ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
৬.China Muslim Scholar
"অধ্যাপক ইব্রাহীম টি ওয়াই
মা" তাঁর বিখ্যাত "Why Muslims Abstain from Porks" পুস্তকে লিখেছেন শুকরের মাংস ভক্ষণ পুরাতন সব রোগ জাগিয়ে
তোলে।
৭.তিনি
আরো বলেছেন,
বাত, ব্যথা, হাঁপানী
রোগের জন্ম দেয় শুকরের মাংস।
৮.স্মরণ
শক্তি কমিয়ে দেয়।
৯.মাথার
চুল অকালে ঝরে পড়ে।
১০.শরীরের
জন্য বিষময়,
বিষাক্ত স্বরূপ। -(বুখারী-৫৪৭৫ হাদীসের ফুটনোট)
১১.সব
প্রাণীর মাংসের মধ্যে শূকরের মাংসে সবচে' বেশি চর্বিযুক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে। মানুষের রক্তে
কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালী ব্লক হয়ে যাবার সম্ভাবনা
বেড়ে যায়।
১২.শূকরের
মাংসে থাকা ‘ফ্যাটি এসিড’ অন্য সকল খাদ্যে থাকা "ফ্যাটি এসিড" থেকে
ভিন্নরকম ও ভিন্ন ধরণের। তাই অন্য যেকোনো খাদ্যের তুলনায় মানুষের শরীর খুব সহজে
একে চুষে নেয়।
ফলে রক্তে কোলেস্টেরল এর
পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
১৩.শূকরের
মাংস ও চর্বি মেদ বাড়ায় এবং মেদ সংক্রান্ত রোগ বাড়ায়।
১৪.শূকরের
মাংস ও চর্বি কোলন ক্যান্সার (বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার), রেক্টাল ক্যান্সার (মলদ্বারের ক্যান্সার) অণ্ডকোষের
ক্যান্সার,
স্তন ক্যান্সার ও ব্লাড
ক্যান্সার এর জন্ম দেয়।
১৫.শূকরের
মাংস ভক্ষন চর্মরোগ ও পাকস্থলির ছিদ্র ইত্যাদি রোগের কারণ।
১৬.শুকরের
মাংস ভক্ষণের ফলে ফিতা কৃমির ডিম্বগুলো যদি মস্তিষ্কে বৃদ্ধি পায় তাহলে পরবর্তীতে
মানুষ "পাগলামি" ও "হিস্টিরিয়া" রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
১৭.আর যদি
হার্টে বৃদ্ধি পায় তাহলে মানুষ উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টএটার্কে আক্রান্ত হতে পারে।
১৮.শূকরের
মাংস ভক্ষণের সৃষ্ট ফিতা কৃমি ও ফুসফুসের কৃমির কারণে ফুসফুস আলসার ও ইনফেকশনে
আক্রান্ত হয়।
১৯.আরো নানাবিধ রোগ ব্যাধি
জন্ম দিতে পারে,
সেগুলো হচ্ছে স্নায়ুবিক
সমস্যা ঘটায়,
স্নায়ু প্রদাহ। কোনো কোনো
ক্ষেত্রে কৃমির শূককীট মস্তিষ্কে পৌঁছে খিঁচুনি বা ব্রেইনের উচ্চ রক্তচাপ ঘটতে
পারে। ফলে মাথা ব্যথা,
খিঁচুনি, এমনকি প্যারালাইসিসও হয়ে যেতে পারে।
শেষকথা:
শুকরের মাংস ইসলামে হারাম করেছে তার কারণ
বিভিদ উপরে উল্লেখ করা হয়। তাই আসুন আমরা হারাম কিছু বক্ষণ না করি। হালাল যিনিস
খেতে পারি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন করি।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com