মুখের
ভাষা নিয়ন্ত্রণে ইসলামের আদেশ
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
***সুন্দর কথা মানুষকে সুন্দর চরিত্র ও নেক আমলের দিকে আহবান করে। যে তার নিজের
জিহ্বা তথা মুখের ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করলো সে যেন তার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করলো। এ
কারণেই ইসলাম মানুষকে মুখের ভাষা নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনা দেয়। আল্লাহ তাআলা
বলেন-
وَ قُلۡ لِّعِبَادِیۡ یَقُوۡلُوا الَّتِیۡ هِیَ
اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ یَنۡزَغُ بَیۡنَهُمۡ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ کَانَ
لِلۡاِنۡسَانِ عَدُوًّا مُّبِیۡنًا
আর আমার বান্দাদের বল, তারা যেন এমন কথা বলে যা অতি সুন্দর। নিশ্চয়ই
শয়তান মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে; নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শক্র। (সুরা বনি ইসরাই-১৭ : ৫৩)
এ আয়াতে মুখের কথা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে
দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আপোসে কথোপকথনের সময় জিহ্বাকে যেন সাবধানে ব্যবহার করা
হয়। যেন ভালো কথা বলা হয়। অতি সুন্দর কথা শুধু
মুমিন মুসলমানের সঙ্গেই বলার নির্দেশনা নয় বরং অবিশ্বাসী, কাফের, মুশরিক এবং আহলে কিতাবের অনুসারীদের সঙ্গে
কথা বলার প্রয়োজন দেখা দিলে, তাদের সঙ্গেও করুণাসিক্ত কণ্ঠে এবং নরমভাবে
কথা বলার দিকনির্দেশনা দেয় ইসলাম।
#শয়তান মানুষের চিরশত্রু। এ কারণে শয়তান
মানুষের জিহ্বার সামান্যতম বিচ্যুতি দ্বারা তাদের পরস্পরের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি
করতে পারে অথবা কাফের ও মুশরিকদের অন্তরে মুসলমানদের প্রতি আরো বেশি বিদ্বেষ ও
শত্রুতার কুমন্ত্রণা দিতে পারে। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যেন তার কোনো ভাই
(মুসলমান) এর প্রতি অস্ত্র (কথার) দ্বারা ইঙ্গিত না করে। কেননা সে জানে না, হতে পারে শয়তান তার হাত দ্বারা সেই অস্ত্র
চালিয়ে দেবে। আর এর কারণে সে জাহান্নামে গিয়ে পড়বে। (সহীহ বুখারী)
#অন্য আয়াতে মানুষের সঙ্গে উত্তম কথা বলার দিকনির্দেশনা দিলে মহান আল্লাহ বলেন-
وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا
‘আর তোমরা লোকের সঙ্গে উত্তমভাবে কথা বলবে’। (সুরা বাকারা-২ : ৮৩)
#এ আয়াতেও এমন কথাকে বুঝানো হয়েছে, যা সৌন্দর্যমণ্ডিত। এর অর্থ এই যে, যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলবে, নম্রভাবে হাসিমুখে ও খোলামনে কথা বলবে। তবে
দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য অথবা কারো মনোরঞ্জনের জন্য সত্য গোপন করা যাবে না।
কারণ, আল্লাহ তাআলা যখন মুসা ও হারূন আলাইহিমাস
সালামকে নবুয়ত দান করে ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলেন, তখন এ নির্দেশ দিয়েছিলেন-
فَقُوۡلَا لَهٗ قَوۡلًا لَّیِّنًا لَّعَلَّهٗ
یَتَذَکَّرُ اَوۡ یَخۡشٰی
‘তোমরা উভয়েই ফেরাউনের সঙ্গে নরম কথা বলবে; হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সুরা ত্বাহা-২০ : ৪৪)
#দ্বীনের পথে মানুষের দাওয়াত হবে নরম ভাষায়। যাতে দাওয়াতের এসব কথা মানুষের
অন্তরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যাতে দাওয়াত সফল হয়। এ কারণেই অন্য আয়াতে মহান
আল্লাহ ঘোষণা করেন-
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ
الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ
‘আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে
হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা। (সুরা আন-নাহল-১৬ : ১২৫)
আয়াতটি দাওয়াতের কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য
অনেক বড় প্রশিক্ষণ। তা হচ্ছে, ফেরাউন হচ্ছে সবচেয়ে বড় দাম্ভিক ও অহংকারী, আর মুসা হচ্ছেন আল্লাহর পছন্দনীয় লোকদের
অন্যতম। তারপরও ফেরাউনকে নরম ভাষায় সম্বোধন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ইবন
কাছির)
***তবে বর্তমান সময়ে যারা অন্যের সঙ্গে কথা বলে, তারা যেমন মুসা আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে উত্তম
নয় আবার যাদের সাথে কথা বলে, তারাও ফেরাউনের চেয়ে বেশি মন্দ বা পাপিষ্ঠ
নয়। সুতরাং সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত। হাদিসে পাকে এসেছে-
‘তোমরা নেক কাজের সামান্যতম কিছুকে খাটো করে
দেখ না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত করা। (সহীহ মুসলিম)
*** মনে রাখতে
হবে: আল্লাহর দিকে আহবানকারীদের জন্য নরম ও সুন্দর ভাষায় কথা বলা খুবই জরুরি। কারণ, কঠোরতা অবলম্বনের ফলে রাগে-ক্ষোভে কিংবা ভয়ে
মানুষ পালিয়ে যায়। পক্ষান্তরে নম্রতা অবলম্বনের ফলে মানুষ নিকটবর্তী, প্রভাবিত ও সত্য গ্রহণকারী হয়।
তাই নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হাদিসে পাকে মানুষকে কথা বলার ক্ষেত্রে সুন্দর ও উত্তম ভাষায় কথা বলতে
দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ
وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ
وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ»
যে আল্লাহ ও পরকালকে বিশ্বাস করে সে যেন ভালো
কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (সহীহ
মুসলিম-৪৭; শামেলা-৭৪; সহীহ বুখারী-৬১৩৫)
সুতরাং মানুষের কথা হবে- সুন্দর ও উত্তম।
পরস্পরের সঙ্গে বিনম্র ও কোমল কণ্ঠে কথা বিনিময়ের দিকনির্দেশনাই দেয় ইসলাম। এমনকি
প্রতিপক্ষের সঙ্গে শুভেচ্ছামূলক কথা এমনভাবে বলা, যাতে বিপরীত পক্ষের লোকও তা মন থেকে গ্রহণ
করে। আর এ জন্য কথা নরম হওয়া জরুরি।
অতএব মুমিন মুসলমানের উচিত, ইসলামের দিকনির্দেশনা মোতাবেক সবার সঙ্গে
সুন্দর ও উত্তম ভাষায় কথা বলা। সবার সঙ্গে বিনম্র ও কোমল আচরণ করা।আল্লাহ তাআলা
মুসলিম উম্মাহকে মুখের কথা নিয়ন্ত্রণে ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান
করুন। আমিন।

No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com