ধৈর্যশীল হওয়া একই মুদ্রার
এপিঠ ওপিঠ
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
صبر শব্দটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাধা
দেয়া, বিরত রাখা, বেধে রাখা,
ধৈর্যসহ্য ও সহিযুতা, মেজাজের ভারসাম্যতা, আত্মসংযম, অটল অবিচলিত থাকা, অধ্যবসায়।
আর পারিভাষিক অর্থে ধৈর্য বা صبر বলতে আমরা বুঝি
যুগের পরিবর্তিত পরিবেশে নিজের মন মেজাজকে পরিবর্তন না করা বরং সর্বাবস্থায়ই এক
সুস্থ ও যুক্তিসঙ্গত আচরণ রক্ষা করে চলা।মহান আল্লাহ বলেন,
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيلًا
অতএব (হে মুহাম্মদ) সবর করো, সবরে
জামীল। (সুরা মায়ারিজ-৭০ :৫)
হাদীসে এসেছে,
عَنِ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ
اللَّهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ، وَلَنْ تُعْطَوْا عَطَاءً خَيْرًا
وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ» (بخارى ــ6470)
যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণের চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্যের শক্তি প্রদান করবেন। আর ধৈর্য হতে
অধিক উত্তম ও ব্যাপক কল্যাণকর বস্তু আর কিছুই কাউকে দান করা হয়নি। (বুখারী-৬৪৭০
মুসলিম-১০৫৩ শামে-১২৪)
কৃতজ্ঞ থাকা এবং ধৈর্যশীল হওয়া একই মুদ্রার এপিঠ
ওপিঠ। একটা ছাড়া অন্যটা পাওয়া অসম্ভব। কেন ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ? কেন তাদেরকে একত্রে থাকতে হবে? কেন একটা ছাড়া অন্যটা পাওয়া অসম্ভব?
আমি আপনাদের একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন, আপনি খুবই বাজে এক চাকরি করেন। চাকরিটা এতোই খারাপ যে, চাকরি তো নয় যেন প্রতিদিন আপনাকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।
দিন দিন শুধু কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ছেড়ে দেওয়ার কথা কি আপনার মাথায় আসে না? মনে মনে ভাবেন—
"না ভাই, আর পারছি না সহ্য করতে। এভাবে আর পারা যায় না। অনেক বেশি কঠিন।"
হতাশা বাড়তে থাকে। সকালে উঠে কাজে যাওয়ার জন্য আর অনুপ্রেরণা খুঁজে পান না। এভাবে যদি
বার বার, বার বার আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা
নেওয়া হয় আপনি সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে পার পেতে চাইবেন। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু, একদিন যদি আপনার বস আপনাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে বলে—শুনেন, আমাদের পাঁচশ কর্মচারী রয়েছে।
আমি শুধু পাঁচ জনকে সিলেক্ট করেছি। নতুন এক প্রজেক্ট হাতে এসেছে যা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য, এর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। এর জন্য আমি অন্য কাউকে সিলেক্ট
করিনি। আমি আপনাকেসহ পাঁচ জনকে সিলেক্ট করেছি। পরবর্তী ছয় মাস আপনাদের অমানসিক পরিশ্রম
করতে হবে। এবার শুনুন, এটা করতে পারলে কী পুরস্কার
পাবেন। নতুন একটা ডিপার্টমেন্ট খোলা হচ্ছে। এ প্রজেক্টের কাজ শেষ করতে পারলে আপনাদেরকে
ঐ ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপনাদের অন্য সবার চাইতে বেশি
কাজ করতে হবে। আপনাদের অন্য সবার চাইতে বেশি ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে।
এখন, কেউ যদি না জানে কাজ শেষে
তার জন্য কী পুরস্কার অপেক্ষা করছে, তার জন্য এটা চালিয়ে যাওয়া
হবে নিদারুণ কষ্টসাধ্য। আর যে বেশি কাজ করার পরেও জানে যে, কী পুরস্কার তার জন্য অপেক্ষা করছে সে মনে মনে কৃতজ্ঞ হবে যে
তাকে এই কাজের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। কেউ যখন তাকে এসে বলে— ভাই, আপনাকে তো অনেক কাজ করতে হচ্ছে।
সে তখন বলে— "হ্যাঁ, ভাই। আমি কৃতজ্ঞ যে এই সুযোগ পেয়েছি। আমি জানি আমার কোমর ব্যথা
করছে কিন্তু তবু আমি খুশি যে এই সুযোগ পেয়েছি।" কেন? কারণ, কাজ শেষে বিশাল এক পুরস্কার
অপেক্ষা করছে।
তাই, আপনাকে যদি কোনো কাজের জন্য
সিলেক্ট করা হয়, যে কাজ আপনাকে অসাধারণ কোনো
গন্তব্যে পৌঁছে দিবে—তখন আপনাকে যে এই কঠিন কাজের
জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে এটা ভেবে আপনার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
যখন আমরা ঠিক কাজ করার কারণে কোনো প্রতিকূল অবস্থার
মুখোমুখি হই, কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন
হই, যখন মনোবল হারিয়ে ফেলার উপক্রম
হয়— সে সময় আমাদের এই ভেবে কৃতজ্ঞ
হওয়া উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধৈর্যের
পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সিলেক্ট করেছেন। কারণ,
আল্লাহ তার পছন্দনীয়
বান্দাদের সবচে কঠিন কঠিন কাজ দিয়ে থাকেন, যেন তাদের মর্যাদা আরো উন্নত
করে তাদেরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ঈমানদারদের মাঝে শামিল করে নিতে পারেন। আমরা কৃতজ্ঞ
যে আল্লাহ আমাদেরকে সিলেক্ট করেছেন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com