Monday, December 12, 2022

ইসলামে মানবাধিকার

 


ইসলামে মানবাধিকার

(আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-২০২২)

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

(প্রথম পর্ব)

সূচনা:

মানুষ জন্ম নেওয়ার পরে দুনিতে বেচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি। তাইতো জন্মের পর মানুষের জন্মগত অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার।

“১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস৪ ডিসেম্বর ১৯৫০ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ঘোষণা করে এবং সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে তা উদযাপনের আহ্বান জানায়। ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের ওপর সর্বজনীন ঘোষণার খসড়া অনুমোদন করেঘোষণাপত্রটি "সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র" হিসেবে পরিচিত। ঘোষণাপত্রে মোট ৩০টি ধারায় মানুষের মৌলিক ও অমৌলিক অধিকারগুলো বিবৃত হয়েছে।

# ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে রুশো বলেছিলেন "মানুষ স্বাধীন স্বত্বা হিসেবে জন্ম গ্রহণ করলেও সর্বত্রই সে শৃংখলিত"। (মৌলিক মানবাধিকার-৬পৃ.)

# হজ্জের সফরে জনৈক ব্যক্তি হযরত আমর বিন আস কে পিছে ফেলে অগ্রগামী হয়ে গেলে, তাঁকে নাকি বলেছিলেন অসম্মানিত ব্যক্তি আমার মতো সম্মানিত ব্যক্তির সন্তান সম্মানিত ব্যক্তিকে পিছে ফেলে গেলে? তাকে চরম তিরস্কার করে বেত্রাঘাত করছিলেন, হযরত উমর এর কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করলে তিনি আমর বিন আস বলেছিলেন, متى استعبدتم الناس وقد ولدتهم أمهاتهم أحرارا ؟ (কখন তোমরা মানুষের গলায় দাসত্বের শেকল পড়ালে? অথচ তাদের মায়েরা তাদেরকে স্বাধীন হিসেবে জন্ম দিয়েছে)।

এ কথা যদিও এ কাহিনী অসমর্থিত। (https :// islam qa. info/ar/ answers/279025)

# মানবাধিকার কি?

মানবাধিকার কি এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যথা:

১. কেউ কেউ বলেন: মানুষের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে বলা হয় "মানবাধিকার"।

২. আবার কেউ কেউ বলেন: মানুষ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও আত্মোপলব্ধির জন্য জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে যে ধরণের সমসুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করতে পারে কিংবা দাবী করতে পারে সেগুলোই "মানবাধিকার"।

৩. মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তি যে সম্মান, অধিকার, শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা প্রাপ্ত হবার অধিকার রাখে, সেগুলোকে Human Rights বা মানবাধিকার বলা হয়। (https: //www. grammar bd.কম)।

# ইসলামে মানবাধিকারের ধারণা:

মানবাধিকারের ধারণা ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে জড়িত এবং অত্যন্ত ব্যাপক। ইসলাম মানুষের সামগ্রিক অধিকার ও নিরাপত্তার কথা বলে। শরীয়তের প্রধান ৫টি উদ্দেশ্য (মাকাসিদ) হলো ৫টি বিষয়ের মানবাধিকারের নিরাপত্তা প্রদান করা।

ইমাম শাতিবী (র:) বলেন, সেগুলো হলো:

ক.ধর্ম বিশ্বাস

.জীবন

.সম্পদ

.বংশধারা ও মেধা-বুদ্ধি।

সুতরাং ইসলামী আইন মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবন ও সম্পদ, সম্মান ও সম্ভ্রম, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। (তাওদিউল আহকাম মিন বুলুগিল মারাম-১/৪৪ ও মাকাসিদ আশ শরীয়াহ ও ইসলামের সৌন্দর্য)

# পৃথিবীর ১ম মানবাধিকারের ঘোষণা:

    আমরা জানি পৃথিবীতে প্রথম মানবাধিকার ঘোষণা হয় "কুয়েত ইউনিভার্সিটির" তত্ত্বাবধানে ইসলামে মানবাধিকারবিষয়ে অনুষ্ঠিত ৬ দিনব্যাপী ওয়ার্কশপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, "নবীজী (সা.)-এর বিদায় হজ্বের ভাষণকে মানবাধিকারের সর্বপ্রথম ঘোষণা হিসাবে উল্লেখ করা হয়। (https ://www. alkawsar. কম/bn /article/2185, দৈনিক জঙ্গ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮০)

# ইসলাম সব ধর্মের মানুষকে "মানব" হিসেবে বিশেষ মর্যাদা দেয়:

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ مَرَّ بِنَا جَنَازَةٌ فَقَامَ لَهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَقُمْنَا بِهِ‏.‏ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهَا جَنَازَةُ يَهُودِيٍّ‏.‏ قَالَ ‏ "‏ إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُومُوا ‏"‏‏

হযরত জাবির ইব্‌নু আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ব দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। নবী (সা.)তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! এ তো ইয়াহূদীর জানাযা। তিনি বললেন, তোমরা যে কোন জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে পড়বে। (বুখারী-১৩১১; মুসলিম-২১১১; নাসায়ী-১৯২২; আবু দাঊদ-৩১৭৪, মিশকাত-১৬৪৯; মুসনাদ আহমদ-১৪৪২৭)

 

# বিশ্বব্যাপী মানবধিকারের লঙ্ঘনের কিছু নমুনা:

বিশ্বব্যাপী অযাচিত যুদ্ধের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মারণাস্ত্র ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতা আতঙ্কের ব্যাপার। ১৪ বছর পূর্বের রিপোর্ট:

১. বিশ্বে প্রতিদিন ১শ১৫ কোটি শিশু অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটায়।

২. শক্তিধর দেশগুলোর কাছে দরিদ্র ও ৩য় বিশ্বের জনগণ অসহায়।

৩. মুসলিম বিশ্বের জনগণের করুণ অবস্থা।বর্তমানে যারাই তথাকথিত মানবাধিকারের সবক দিতে আসে তাদের দ্বারাই তা পদলিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

৪. বিশ্বে শত শত বিলিয়ন ডলার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ব্যয় হচ্ছে।

৫. ঐসব টাকা দিয়ে যদি গরীব মিসকীন অসহায় মানুষের খেটে খাওয়ার জন্য গরীব দেশগুলোতে মিল, কল-কারখানা, হাসপাতাল প্রভৃতি কর্মমুখী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হত তাহলে লক্ষ কোটি মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের জীবন পরিচালনা করতে পারত। (http:// imam. gov. bd/ singlepost-/5419)

৬. ইচ্ছেমতো ভিন্ন মতের/অন্য ধর্মের লাখো কোটি মানুষকে নির্বিচারে হত্যা।

৭. দেশ ছাড়া করা।

৮. বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া।

৯. বসত বাড়ি ভেঙে দেয়া।

১০. সবচেয়ে বেশী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, ইরাক, মিয়ানমার, চীনের উইঘুর, সিরিয়া সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশেগুলিতে

 

# আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সর্বজনীন ৩০টি ঘোষণা পত্রের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ধারা:

ধারা-১:

সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

ধারা-:

মানুষের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিৎ।

ধারা-৩:

জীবন, স্বাধীনতা এবং দৈহিক নিরাপত্তায় প্রত্যেকের অধিকার আছে।

ধারা-৪:

কা‌উকে অধীনতা বা দাসত্বে আবদ্ধ করা যাবে না। সকল প্রকার ক্রীতদাস প্রথা এবং দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করা হবে।

ধারা-৫:

কা‌উকে নির্যাতন করা যাবে না; কিংবা কারো প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ করা যাবে না অথবা কা‌উকে এহেন শাস্তি দেওয়া যাবে না।

ধারা-৬:

আইনের সামনে প্রত্যেকেরই ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার আছে।

ধারা-৭:

আইনের চোখে সবাই সমান এবং ব্যক্তিনির্বিশেষে সকলেই আইনের আশ্রয় সমানভাবে ভোগ করবে। এই ঘোষণা লঙ্ঘন করে এমন কোন বৈষম্য বা বৈষম্য সৃষ্টির প্ররোচনার মুখে সমান ভাবে আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই আছে।

ধারা-৮:

শাসনতন্ত্রে বা আইনে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের কাছ থেকে কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।

ধারা-৯:

কাউকেই খেয়ালখুশীমত গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নির্বাসন দেওয়া যাবে না।

ধারা-১০:

নিজের অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ এবং নিজের বিরুদ্ধে আনীত ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য প্রত্যেকেরই পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে প্রকাশ্য শুনানি লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১১:

ক.দণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চিত অধিকারসম্বলিত একটি প্রকাশ্য আদালতে আইনানুসারে দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ গণ্য হওয়ার অধিকার থাকবে।

খ. কা‌উকে‌ই এমন কোন কাজ বা ত্রুটির জন্য দণ্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, যে কাজ বা ত্রুটি সংঘটনের সময় জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আ‌ইনে দণ্ডনীয় অপরাধ ছিলনা। দণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনের সময় যে শাস্তি প্রযোজ্য ছিল, তার চেয়ে গুরুতর শাস্তি‌ও দে‌ওয়া চলবে না। (মৌলিক মানবাধিকার-৫৩-৫৫পৃষ্ঠা)

 

(চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বের দিকে ফেইস বু্কে লেখা আসবে)

 

 

 

 

 

ইসলামে মানবাধিকার

(আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-২০২২)

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

(দ্বিতীয় পর্ব) শেষ

 

# ইসলামী মানবাধিকার আইনের বৈশিষ্ট্য:

ইসলামসী মানবাধিকারের আইনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ খালিদ বোরকান ইসলামী মানবাধিকার আইনের ৬টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, তা হচ্ছে:

১. আল্লাহ প্রদত্ত:

মানুষের যেসব অধিকার ঘোষণা করেছে, তা মৌলিকভাবে আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার। আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য কোন অধিকার প্রয়োজন তা সর্বাধিক অবগত।

২. ব্যাপক ও বিস্তৃত:

ইসলাম ঘোষিত মানবাধিকার ব্যাপক ও বিস্তৃত। তা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও আঞ্চলিকতার মধ্যে পার্থক্য করে না।

৩. ইবাদতের সঙ্গে সম্পৃক্ত:

ইসলাম মানুষের অধিকার রক্ষা ঈমান ও ইবাদতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। রাসূল (সা.) বলেছেন,

عَنْ أَبِي مُوسَى ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الإِسْلاَمِ أَفْضَلُ قَالَ ‏ "‏ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ

হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তারা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ইসলামে কোন্‌ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।” (বুখারী-১০,১১,৬৪৮৪; মুসলিম- ৬৬,৬৭,৬৮; নাসায়ী-৪৯৯৬,৯৯; আবু দাঊদ-২৪৮১; তিরমিজী-২৫০৪,২৬২৭,২৮; আহমাদ-৬৭৬৫)

৪. ভারসাম্যপূর্ণ:

ভারসাম্য ইসলামী আইন ও মুসলিম জাতির বৈশিষ্ট্য। ইসলাম অন্যসব ক্ষেত্রের মতো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়ও ভারসাম্য রক্ষা করেছে। ইসলাম ব্যক্তি অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা যদি সমাজ ও রাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলে, সমাজে পাপাচার বিস্তার লাভ করে, ইসলাম তাকে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেয়।

৫. স্থায়ী বিধান:

ইসলাম কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য জীবন বিধান। তাই ইসলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে বিধান দিয়েছে, তা কিয়ামত পর্যন্ত অনুসরণীয়। মহানবী (সা:) এর ইন্তেকালের পর ইসলামের মৌলিক বিধানে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের কোনো সুযোগ নেই।

৬. শর্তযুক্ত:

ইসলাম মানুষের সব অধিকার স্বীকার করে। তবে শর্ত হলো, তা আল্লাহর বিধানের বিপরীত হতে পারবে না। মানবাধিকারের নামে আল্লাহর বিধান অমান্য করার সুযোগ ইসলামে নেই। (প্রবন্ধ : হুকুকুল ইনসানি ফিল ইসলাম : খাসায়িসুহা ও মাজালাতুহা, পৃষ্ঠা ৪-৫)

# ইসলামে মানবাধিকারের ঘোষণা:

মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য সব অধিকারই ইসলাম মানুষকে দিয়েছে। যথা:

১. জানের নিরাপত্তার অধিকার:

ইসলাম সব মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিয়েছে। আল কুরআনে ১জন মানুষের জীবনকে সমগ্র মানবজাতির জীবনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে:

 مَنۡ قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَکَاَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاہَا فَکَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ جَمِیۡعً

যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে অন্য প্রাণের বিনিময় ব্যতীত, কিংবা তার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠে কোন ফিতনা-ফাসাদ বিস্তার ব্যতীত, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করে ফেলল; আর যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করল, তাহলে সে যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করলো (সূরা মায়িদা-৫:৩২)

অন্য আয়াতে এসেছে,

وَ لَا تَقۡتُلُوا النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ ؕ

আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করো না” (সূরা বণী ইসরাইল-১৭:৩৩)

# আত্ম হত্যাও হারাম:

আত্ম হত্যা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ

এবং তোমরা নিজেদের হত্যা করনা” (সূরা আন নিসা-৪:২৯)

# সন্তান হত্যা, ভ্রূণ হত্যাও হারাম:

সন্তান হত্যা একটি মহা পাপ ও হারাম এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

 وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ مِّنۡ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُکُمۡ وَ اِیَّاہُمۡ ۚ َ ﴿۱۵۱

“দারিদ্রতার ভয়ে নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবেনা। কেননা আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিই(সূরা আল আনআম-৬:১৫১)

২. ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার:

ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বাধীনতা দিয়েছে; যতক্ষণ না তার স্বাধীনতা অন্যের তথা সমাজের স্বাধীনতা ও কল্যাণকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। নিম্নোক্ত আয়াতে যার ইঙ্গিত আছে।

 وَ لَقَدۡ کَرَّمۡنَا بَنِیۡۤ اٰدَمَ وَ حَمَلۡنٰہُمۡ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ وَ رَزَقۡنٰہُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَ فَضَّلۡنٰہُمۡ عَلٰی کَثِیۡرٍ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِیۡلًا

আমিতো আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; আর তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি”(সূরা বণী ইসরাঈল-১৭: ৭০)

৩. সাম্য ও সুবিচার পাবার অধিকার:

ইসলাম সব মানুষের প্রতি সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছে:

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡا قَوّٰمِیۡنَ لِلّٰہِ شُہَدَآءَ بِالۡقِسۡطِ ۫ وَ لَا یَجۡرِمَنَّکُمۡ شَنَاٰنُ قَوۡمٍ عَلٰۤی اَلَّا تَعۡدِلُوۡا ؕ اِعۡدِلُوۡا ۟ ہُوَ اَقۡرَبُ لِلتَّقۡوٰی

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে বিধানসমূহ পূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠাকারী ও ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্যদানকারী হয়ে যাও, কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের শক্রতা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবেনা। তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটা আল্লাহ-ভীতির অধিকতর নিকটবর্তী” (সূরা আল মায়িদা-৫:৮)

৪.সম্পদের মালিকানার/অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার:

ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে সম্পদের মালিকানা লাভের অধিকার দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَ لَا تَتَمَنَّوۡا مَا فَضَّلَ اللّٰہُ بِہٖ بَعۡضَکُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ لِلرِّجَالِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا اکۡتَسَبُوۡا ؕ وَ لِلنِّسَآءِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا اکۡتَسَبۡنَ

পূরুষরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অংশ রয়েছে এবং নারীরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অংশ রয়েছে”(সূরা আন নিসা-৪:৩২)

৫. বিচরণ/অবাধ চলাফেরার অধিকার:

ইসলাম জীবিকার তাগিদে, জীবন রক্ষার প্রয়োজনে মানুষকে অবাধ চলাফেরার অধিকার দিয়েছে। এ সম্পর্কে কুরআনিক ঘোষণা হচ্ছে:

ہُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاکِبِہَا وَ کُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِہٖ ؕ وَ اِلَیۡہِ النُّشُوۡرُ ﴿۱۵

তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ কর; পুনরুত্থানতো তাঁরই নিকট” (সূরা মুলক-৬৭:১৫)

৬. বাসস্থান পাবার অধিকার:

মানুষকে বাসস্থান নির্বাচন, নির্মাণ ও তাতে স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার দিয়েছে।এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

وَ اللّٰہُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّمَّا خَلَقَ ظِلٰلًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنَ الۡجِبَالِ اَکۡنَانًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡکُمُ الۡحَرَّ وَ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡکُمۡ بَاۡسَکُمۡ ؕ

আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে (সূরা আন নাহল-১৬:৮০)

# অনুমতি না নিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ:

অনুমতি না নিয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশ নিষেদ্ধ। তাই এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتًا غَیۡرَ بُیُوۡتِکُمۡ حَتّٰی تَسۡتَاۡنِسُوۡا وَ تُسَلِّمُوۡا عَلٰۤی اَہۡلِہَا ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করনা; এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর” (সূরা আন নূর-২৪:২৭)

৭. সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার:

সমাজের অসহায় মানুষের জন্য ইসলাম সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 وَ فِیۡۤ اَمۡوَالِہِمۡ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَ الۡمَحۡرُوۡمِ ﴿۱۹

এবং তাদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক” (সূরা আয যারিয়াত-৫১:১৯)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, وَ یُطۡعِمُوۡنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّہٖ مِسۡکِیۡنًا وَّ یَتِیۡمًا وَّ اَسِیۡرًا ﴿۸

তাদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে” (সূরা আদ দাহর-৭৬/সূরা আল ইনসান-৭৬:৮)

উপরে উল্লেখিত বিষয় এগুলো ব্যতীত আরো কিছু নাগরিক অধিকার ইসলামে স্বীকৃত:

৮. পারিতোষিক ও বিনিময় লাভের অধিকার।

৯. রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণের অধিকার।

১০. দল/সংগঠন করার অধিকার।

১১. সভা সমাবেশের অধিকার।

১২. বিবেক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকার।

১৩. মান ইজ্জত রক্ষার অধিকার।।

-(সূত্র: মৌলিক মানবাধিকার-১৯৫ পৃষ্ঠা থেকে ২৭০ পৃষ্ঠা পর্যন্তই.ফা.বা)

 

পরিশেষ কথা:

    ইসলামে মানবাধিকার দিয়েছে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের আপনাদেরআজ অধিকার বাস্তবায়ন নামে বিভিন্ন ভাবে নিপিড়ন চলছে বিভিন্ন দেশে কিংবা দল তথা গুষ্টিতে।বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা অনেক কিছু চোখ মুখ বুঝে সজ্জ করছে। আর এক শ্রেণীর মানুষ তার জাতা কলের থিসে মরছে

    আসুন! আমরা সকলে মিলে কুরআন ও হাদীসের আলোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষের অধিকার রক্ষা করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com