Saturday, June 17, 2023

জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের আমল সমূহ

 


জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিনের আমল সমূহ

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 

মুসলিম উম্মাহ জীবনে অনেক নেকীর কাজ করেন কিন্তু কোন কোন সময়ে এমন কিছু নেকীর কাজ আছে যা আদায় করলে অগণিত সাওয়াব পাওয়া যায়তেমনই একটি নেকীর কাজ হচ্ছে জিলহজ্ব মাসের আমলহজ্ব মুসলমানের জন্য একটি বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ও মহামিলন।এ মাসে বেশী বেশী নেক আমল করা যায়।

প্রসঙ্গত রাসূল করিম (সা.) হাদীসে বলেছেন

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَا العَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلَ مِنْهَا فِي هَذِهِ؟» قَالُوا: وَلاَ الجِهَادُ؟ قَالَ: «وَلاَ الجِهَادُ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ»

"জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০দিনের উত্তম আমল সমূহের চেয়ে, অন্য কোন দিনের আমল উত্তম নয়।" (সহীহ বুখারী-৯৬৯ শামেলা)

অমল সমূহ:

১. প্রথম ১০ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা।

২. চুল-নখ না কাটা।

৩. আরাফার দিন রোজা রাখা।

৪. তাকবীরে তাশরীক বলা।

৫.স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা।

বিস্তারিত হাদীস সমুহ:

১. প্রথম ১০ দিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা:

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত দিনে সম্ভব হলে নফল রোযা রাখা (কুরবানির দিনে রোযা নয়) আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা, যথা: নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।

#ফযীলত:

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الحِجَّةِ، يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ، وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ القَدْرِ.

জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশী প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় {তিরমিজী শরীফ, সিয়াম অধ্যায়,দশ দিনের আমল পরিচ্ছেদ, ৭৫৮শামেলা}

#হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল প্রিয় নয়।

{বুখারী শরীফ, দুই ঈদ অধ্যায়, আইয়ামে তাশরীক পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা}

২. চুল-নখ না কাটা:

যারা কুরবানী করবে তাদের জন্য যিলহজ্বের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব।

হাদীসে এসেছে:

হযরত উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করবে, তারা যেন [এই ১০ দিন] চুল ও নখ না কাটে। {সুনানে ইবনে মাজাহ, কুরবানী অধ্যায়, যে কুরবানী করবে তার জন্য চুল-নখ না কাটার বর্ণনার অধ্যায়, পৃষ্ঠা-২২৭, সহীহ মুসলিম-৫২৩৩}

৩. আরাফার দিন রোজা রাখা:

প্রথম নয় দিন বিশেষ করে আরাফার দিন অর্থাৎ নয় জিলহজ্বে নফল রোযা রাখা।

(তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য নয়)

#ফযীলত:

হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ.

আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।{তিরমিজী শরীফ, সাওম অধ্যায়, আরাফার দিনে রোযার ফযীলত পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা, সুনানে ইবনে মাজাহ, ১২৪ পৃষ্ঠা; তিরমিজী-৭৪৯শামেলা}

৪. তাকবীরে তাশরীক বলা-

যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে।

তাকবীরে তাশরীকঃ

اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ،  اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ وَ ﻭ ﻟِﻠّٰﻪِ الْحَمْدُ

#তাকবীর_হল-

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ {ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}

৫. স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা:

১০, ১১ অথবা ১২ ই যিলহজ্বের যে কোন একদিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য। {ফাতওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭ ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

#ফযীলত:

যায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবা রা. গণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা (রা.) পুনরায় আবার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-

عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ  وَسَلَّمَ  يَا رَسُوْلَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ؟ قَالَ «سُنَّةُ أبيكم إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامْ» قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُوْلَ اللَّهِ؟ قَالَ «بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ» . قَالُوا  فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ؟ قَالَ «بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِنَ الصُّوْفِ حَسَنَة» (رَوَاهُ أَحْمد -19283- ابْن مَاجَه-3127-مستدرك حاكم- 3467- هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ-سنن الكبرى-19017)

কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা (রা.) আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

#কঠোর_হুশিয়ারী:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا» (ابن ماجة-3123-دارقطنى-4743-احمد-8074)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬}

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে:

বছরে পাঁচটি দিন এমন রয়েছে, যেদিনগুলোয় রোজা রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ। দিনগুলো হলো-

১. ঈদুল ফিতরের (১ শাওয়াল) দিন।

২. ঈদুল আজহার (১০ জিলহজ) দিন।

৩. ঈদুল আজহার পরের তিন দিন।

অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ।

মহান আল্লাহ্ আমাদের জিলহজ্বের ফজিলত পূর্ণ দিন গুলোতে সুন্নাহ ভিত্তিক নেক আমল করার তওফিক দান করুন আমিন

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com