Saturday, August 05, 2023

বিবাহ পড়ানোর পদ্ধতি

 

বিবাহ পড়ানোর পদ্ধতি

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার 

বিবাহ মজলিস অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই মহর নির্ধারিত হয়ে যাবে। মেয়ের অভিভাবক মেয়ের নিকট থেকে আগেই দুই বিষয়ের অনুমতি নিয়ে রাখবে।

প্রথমতঃ প্রস্তাবিত ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিবাহে সম্মত আছে কিনা

দ্বিতীয়তঃ উক্ত অভিভাবক মেয়ের উকিল হিসেবে বিয়ের মজলিসে ছেলের নিকট মেয়ের পক্ষ থেকে বিবাহের প্রস্তাব দিবেন। অতঃপর বিবাহের মজলিসে যদি সম্ভব হয় তাহলে মেয়ের পিতা বা ভাই বা অভিভাবক নিজেই খুতবা পড়ে মেয়ের উকিল হিসেবে ছেলেকে প্রস্তাব দেবেন।

আর মেয়ের পিতা যদি খুতবা পড়তে না পারেন তাহলে ছেলের পিতা বা অন্য কোন আলেম সাহেব বিবাহের খুতবা পড়বেন।

খুতবার পরে মেয়ের অভিভাবক নিজে ছেলের কাছে প্রস্তাব দেবেন যে, আমি আমার অমুক মেয়েকে এত টাকা দেন মোহরের বদলে তোমার নিকট বিবাহ দিচ্ছি বা বিবাহ দিলাম। তখন ছেলে বলবে আমি কবুল করলাম।

ঈজাব এবং কবুল একবার বলাই যথেষ্ট। অনেক স্থানে তিনবার বলা ভালোআর যদি এমন হয় যে, মেয়ের অভিভাবক নিজে ছেলেকে প্রস্তাব দিতে পারেন না, তাহলে যিনি খুতবা পড়াবেন মেয়ের পক্ষ থেকে তাকেই অনুমতি দিয়ে দেবেন যে, আপনি আমার অমুক মেয়ের বিবাহ এত টাকা মোহরের বিনিময়ে এই ছেলের সাথে করিয়ে দিন। সেক্ষেত্রে আলেম সাহেব আগে খুতবা পড়বেন তারপরে মেয়ের উকিল হিসাবে ছেলের নিকট প্রস্তাব করবেন যে, আমি এত টাকা মহরের বিনিময়ে অমুকের অমুক মেয়ের বিবাহ আপনার সাথে দিচ্ছি- আপনি রাজি আছেন বা কবুল করলেন?

ছেলে স্পষ্ট আওয়াজে বলবে যে, আমি কবুল করলাম। তার এই কবুল বলাটা যেন কমপক্ষে দুই’জন স্বাক্ষী শুনতে পান সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

ছেলে কবুল বলার পরে উপস্থিত সকলে তাদেরকে হাদীসে বর্ণিত দুআ দিবেন। “বারাকাল্লাহু লাকুমা, ওয়া বারাকাল্লাহু আলাইকুমা ওয়া জামাআ বাইনাকুমা ফী খাইর।”

অনেক জায়গায় বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পরে ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে সালাম করে। এর কোন প্রয়োজন নেই।

এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পরে উপস্থিতিদের মধ্যে “খুরমা” বণ্টন করে দেয়া হবে। অতঃপর দুআ ও মুনাজাতের মাধ্যমে মজলিশ শেষ করা ভাল।

সুন্নতি পদ্ধতিতে বিবাহ পড়ানো

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনেই মুখ্য। তাই বিয়ের আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। সম্মতি না থাকলে কোনো অবস্থায়ই ছেলে-মেয়েকে বিয়েতে বাধ্য করা উচিত নয়

বিবাহ সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিবাহ সুন্নাহসম্মত না হলে এর সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হয় বর-কনে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই। ইসলামী বিবাহ মসজিদে ও জুমার দিন হওয়া উত্তম। এতে ঘোষণা ও জনসমাগম বেশি হয়। তবে অন্য দিন ও অন্য স্থানেও বিবাহ পড়ানো যায়।

বিবাহ পড়ানোর সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হলো, প্রথমে কনের কাছ থেকে ইজন বা অনুমতি নিতে হবে।

বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনেই মুখ্য, যারা সারা জীবন একসঙ্গে ঘর-সংসার করবে। তাই বিবাহের আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে।

কোনো অবস্থায়ই কোনো ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদের বিবাহ করতে বাধ্য করা উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।” (সুরা নিসা-৪: ১৯)

আবু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, আবু হুরায়রা (রা.) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না এবং কুমারি নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে তার অনুমতি নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তার চুপ থাকাই তার অনুমতি। (বুখারী : ৫১৩৬)

অতঃপর অভিভাবক (যদি বিবাহ পড়াতে সক্ষম হন) বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন। এরপর মেয়ের অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করবেন। তারপর তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। অথবা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। এটাকে ইসলামের ভাষায় ইজাববলা হয়।

বিবাহের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিবাহ নেই।’ (তিরমিজি: ১১০১)

যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশে বলবেন, যে অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন কবুলবা আমি গ্রহণ করলাম

বিবাহ পড়ানোর সময় কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে। তখন বর উচ্চ স্বরে কবুলঅথবা আমি গ্রহণ করলামবা সম্মতিসূচক আলহামদু লিল্লাহবলবেএরূপ তিনবার বলা উত্তম। (বুখারী: ৯৫)

স্মরণ রাখতে হবে যে আগে খুতবা পাঠ করতে হবে তারপর ইজাব-কবুল (প্রস্তাব দেওয়া-নেওয়া)।

শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের কাছ থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নেবেন। বর বোবা হলে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে।

এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর উপস্থিত সবাই পৃথকভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে : বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের।

অর্থ : আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন।’ (তিরমিজি : ১০৯১)

বিবাহের খুতবা:

বিবাহের খুতবার জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট কাঠামোতে হামদ ও ছানা বা আল্লাহর প্রশংসা করবে। অতঃপর পবিত্র কুরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করবে, যা যথাক্রমে সুরা নিসা-৪:১, সুরা আলে ইমরান-৩:১০২ এবং সুরা আহজাব-৩৩:৭০-৭১। (সূত্র : সুনানে আবু দাউদ: ২১১৮)

 

আরবী খুৎবাটি হলো:

«اَلْحَمْدُ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَرْسَلَهُ بِالْحَقِّ بَشِيْرًا وَنَذِيرًا، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ـ

 أَمَّا بَعْدُ، أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ،  بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحيْمِ : قَالَ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى فِيْ سُوْرَةِ النِّسَآءِ ـ 1

 (يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيْرًا وَنِسَآءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِيْ تُسْاءَلُوْنَ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا)

 وَقَالَ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى فِيْ سُوْرَةِ ألِ عِمْرَانَ ـ 102

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُّسْلِمُونَ) *

 وَقَالَ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى فِيْ سُوْرَةِ الْأحْزَابِ ـ71ـ70

 (يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوا قَوْلًا سَدِيْدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْلَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمَا)

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اَلنِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِيْ، فَمَنْ لَمْ يَعْمَلْ بِسُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّيْ، وَتَزَوَّجُوا، فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ، وَمَنْ كَانَ ذَاطَوْلٍ فَلْيَنْكِحْ، وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَعَلَيْهِ بِالصِّيَامِ، فَإِنَّ الصَّوْمَ لَهُ وِجَآءٌ» (رواه ابن ماجه ـ  1846  )

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ (صـ) : «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَآءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَآءٌ» (رواه البخارى ـ و مسلم )

 «اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حُمَيْدٌ مَجٍيْدً اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّك حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ»

بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكُمَا وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِىْ خَيْرً ـ(ترمذى ـ 1091)

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ * وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِيْنَ * وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ-


cwi‡k‡l †`vqv I †gvbvRvZ:

 

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com