Friday, October 13, 2023

মসজিদে আকসার অজানা কথা

 

মসজিদে আকসার  অজানা কথা

(ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকসা সম্পর্কে)

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

আমরা জাতীগত ভাবে মুসলমান, মুসলমানদের সব দল, উপদল, মাজহাবএ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক উচ্চতর এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সব মুসলিমের ওপর ওয়াজিব বা কর্তব্যপবিত্র করআন ও হাদসে ফিলিস্তিনের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি বিষয় তুলে ধরছি

এক. মিরাজের ভূমি:

আল্লাহ বলেন,

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ (سورة الاسراء ـ 1)

পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সুরা বনি ইসরাইল-১৭:০১)

জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর(সা.)রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।

এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, বিশ্ব ধর্মীয় নেতৃত্ব ইহুদীদের কাছ থেকে নতুন রাসুল, নতুন কিতাব ও নতুন উম্মতের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এখানে যদি ফিলিস্তিনিদের গুরুত্ব না থাকত, তা হলে আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে মক্কা থেকেই সরাসরি ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করাতেন।

দুই. ১ম কিবলা:

মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.)ও সাহাবিরা ১০(দশ)বছর নামাজ আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِي وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِي عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ (سورة البقراة ـ 150)

“তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।” (সুরা বাকারা-২:১৫০)

তিন. নবুয়ত ও বরকতময় ভূখণ্ড :

আল-করআনের ৫টি স্থানে মহান আল্লাহ ফিলিস্তিনকে বরকতময়, পুণ্যময় ভূখণ্ড বলেছেন। তা হলো:

১. সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে। “যার আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।

২. সাইয়িদুনা ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনার সময়-

وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ (سورة الانبياء ــ 71)

“আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।” ( সুরা আম্বিয়া-২১:৭১)

৩. মুসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনায়, যখন ফিরাউনের কবল থেকে মুসা (আ.) ও বান ইসরাইলকে উদ্ধার করে আনা হয় এবং ফেরাউন ও তার সৈন্যদলকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়। আল্লাহ বলেন,

وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ (سورة الاعراف ــ137)

“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বনি ইসরাইল সমন্ধে আপনার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল।” (সুরা আ'রাফ-:১৩৭)

৪. হরত সুলায়মান (আ.)-এর ঘটনায়। মহান আল্লাহ তাকে রাজ্য দান করেছিলেন এবং সব কিছুকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন,

وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ عَاصِفَةً تَجْرِي بِأَمْرِهِ إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا وَكُنَّا بِكُلِّ شَيْءٍ عَالِمِينَ (سورة  الانبياء ــ81)

“আর সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; সে তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই ভূখণ্ডের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।” (সুরা আম্বিয়া-২১:৮১)

৫. সাবা-এর ঘটনায় আল্লাহ তাদের কীভাবে সুখ-শান্তিতে রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন,

وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ الْقُرَى الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا قُرًى ظَاهِرَةً وَقَدَّرْنَا فِيهَا السَّيْرَ سِيرُوا فِيهَا لَيَالِيَ وَأَيَّامًا آمِنِينَ (سورة سبا ــ18)

ওদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওইসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং ওদেরকে বলেছিলাম—‘তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ কর দিনে ও রাতে। (সুরা সাবা-৩৪:১৮)

আল্লামা মাহমুদ আলুসী তাফসিরে রুহুল মাআনীতে উল্লেখ করেছেন, এই জনপদ বলতে শামকে ঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস বলেন, এ জনপদ হলো, বায়তুল মুকাদ্দাস। (রুহুল মা'আনী-২২/১২৯)

চার. তৃতীয় সম্মানিত শহর:

হাদসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিতমক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস। সহহ বুখারও মুসলিমে হরত আবু সাইদ খুদুরি (রা.)হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সা.)বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ: المَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى (بخارى ــ1189)

হযতর আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো (জায়গা ইবাদাতের) উদ্দেশ্যে ভ্রমণে বের হওয়া যাবে না-মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা এবং আমার এই মসজিদ।” (সহীহ বুখারী-১১৮৯,৫৮৬,১৮৬৪; মুসলিম-৮২৭,; নাসায়ী-৫৬৬,৫৬৭; ইবনু মাজাহ-১২৪৯,১৪১০,১৭২১; আহমাদ-১০৬৩৯,১০৯৫৫,১১০১৭; দারেমী-১৭৫৩)

অন্য হাদসে এসেছে,

 

মসজিদুল আকসায় ১ রাকাত নামাজ আদায় অন্যান্য মসজিদের তুলনায় ৫০০ গুণ, মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুন নববী ব্যতীত।” (বুখার ও মুসলিম)

এসব কারণে ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা ঈমানের দাবি।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com