ঈমান ভঙ্গের কারণ
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
আমরা ওযু ভাঙ্গার কারণ জানি কিন্তু বড় আফসোসের কথা আমরা এখনও
ঈমান ভাঙ্গার কারণ জানি না।
মৌলিক ভাবে ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণ:
ওযু করার পর কিছু কাজ করলে যেমন ওযু নষ্ট হয়ে যায়, ঠিক তেমনি ঈমান আনার পর কিছু কথা, কাজ ও বিশ্বাস আছে, যা সম্পাদন করলে বা পোষণ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। ঈমান
ভঙ্গের কারণগুলো মূলত ৩ প্রকার। বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত। আলিমগণ এ ব্যাপারে অনেক লম্বা আলোচনা করেছেন। সাহেবে নেদায়ে তাওহীদ সেগুলোকে দশটি পয়েন্টে
সাজিয়েছেন।
#এক. আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্রে কাউকে শরীক করা: যেমন: আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করা,মাজারে গিয়ে মাজারওয়ালার কাছে কিছু চাওয়া।
إِنَّ
اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ
يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
(নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে
অংশীদার করা ক্ষমা করেন না। তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।)
[সুরা নিসা ৪ : ৪৮]
مَنْ
يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ
النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
(কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য
জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী
নেই।) [সুরা মায়িদা ৫:৭২]
#দুই. আল্লাহ এবং বান্দার
মধ্যে কাউকে মাধ্যম স্থির করা: যেমন:নিজে
সরাসরি কোনো কিছু আল্লাহর দরবারে না চেয়ে পীরের মাধ্যম ধরে চাওয়া।একথা মনে করা যে,নিজে চাইলে পাওয়া যাবে না,পীর চেয়ে দিলে পাওয়া যাবে।
وَيَعْبُدُونَ
مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ
هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا
يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا
يُشْرِكُونَ
‘তারা আল্লাহকে ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে
পারে না,
উপকারও করতে পারে না। তারা
বলে,
এরা আল্লাহর নিকট আমাদের
সুপারিশকারী। বল,
তোমরা কি আল্লাহকে
আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র
এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ [সুরা ইউনুস, ১০ : ১৮]
أَلَا
لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا
نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ
يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي
مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ
‘জেনে রাখ, অবিমিশ্র
আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরুপে গ্রহণ করে
তারা বলে,
‘আমরা তো এদের পূজা এজন্যই
করি যে,
ইহারা আমাদের আল্লাহর
সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।’
তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে
মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দিবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎপথে
পরিচালিত করেন না।’
[সুরা যুমার, ৩৯ : ৩]
#তিন. মুশরিক-কাফিরদের
কাফির মনে না করা:
(এমন কাফির, যার
কুফরির ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ একমত। সেটা আসলি কাফির হতে পারে—যেমন ইহুদি, খৃস্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়—আবার মুরতাদ, যিনদিকও হতে পারে, যেমন প্রকাশ্যে আল্লাহ, রাসুল বা দীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী; যাদের কুফরির ব্যাপারে হকপন্থি আলিমগণ একমত)
#চার. নবি (সা.)’র আনীত সংবিধানের চেয়ে অন্য কোনো সংবিধানকে
পূর্ণাঙ্গ মনে করা: কিংবা
অন্য কোনো সংবিধানকে ইসলামের সংবিধান থেকে উত্তম মনে করা।যেমন:বর্তমান যুগে
ইসলামের বিধানকে অচল মনে করা। ইসলামের বিধানকে বর্বর বলে আখ্যায়িত করা, আর মানব রচিত সংবিধানকে উত্তম ও যুগোপযোগী মনে করা।
أَلَمْ
تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ
وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ
وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ
ضَلَالًا بَعِيدًا
‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ
হয়েছে,
আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি।
তারা বিচার-ফয়সালা নিয়ে যেতে চায় তাগুতের কাছে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের
প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬০]
#পাঁচ. ইসলামের কোনো
বিধানকে আন্তরিকভাবে অপছন্দ করা যদি ও বাহ্যিকভাবে ইসলামের উপর আমল করা হোক না কেন: যেমন: পর্দার হুকুমকে অপছন্দ করা কিংবা উপযুক্ত ব্যক্তির
একাধিক বিবাহকে অপছন্দ করা।এমনিভাবে জিহাদকে অপছন্দ করা।জিহাদের প্রতি বিদ্বেষ
পোষণ করা।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ
بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ
وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘অতএব, তোমার পালনকর্তার
কসম,
সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে
বিচারক বলে মনে না করে। এরপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম
সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ [সুরা নিসা, ৪ : ৬৫]
#ছয়. দীনের কোনো বিধান
নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা: যেমন: দাড়ি, টুপি বা মেসওয়াক নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বিদ্রুপ করা।
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ
وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ
(65) لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ
طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ
“তুমি তাদের প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।’ বলো,
‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে?’ তোমরা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর
কুফরি করেছ।”
[সুরা তাওবা, ৯ : ৬৫-৬৬]
#সাত. যাদু করা বা কুফুরি কালাম করা:
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا
يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ
‘সুলাইমান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত…।’
[সুরা বাকারা, ২ : ১০২]
#আট. ইসলামের বিপক্ষে বা
মুজাহিদদের বিপক্ষে কাফিরদেরকে সাহায্য করা: অতএব যে বা যারা মুজাহিদদের বিপক্ষে কাফেরদেরকে সাহায্য
করবে তারা কাফের হয়ে যাবে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ
وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ
وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইও যদি ঈমানের বিপরীতে
কুফরিকে বেছে নেয়,
তবে তাদের অন্তরঙ্গরূপে
গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’ [সুরা তাওবা, ৯ : ২৩]
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ
بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খৃস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো
না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই
একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৫১]
#নয়. কাউকে দীন-শরিয়তের
ঊর্ধ্বে মনে করা: যেমন : মারেফতের ধোঁয়া তুলে নিজেকে ইসলামের হুকুম আহকামের উর্ধ্বে মনে করা। বাতেনীভাবে
নামাজ-রোযা আদায়ের কথা বলা।
(বর্তমানে কোন ব্যক্তি / দল বা মতাদর্শও এর অন্তর্ভূতঃ)
اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ
نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ
غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের
প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ [সুরা মায়িদা, ৫ : ৩]
#দশ: দ্বীন থেকে মুখ
ফিরিয়ে নেয়া: দ্বীনের হুকুম আহকামকে বোঝা
মনে করা। মৌলিকভাবে দ্বীনকে অপছন্দ করা।
وَمَنْ
أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ
الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি দ্বারা উপদিষ্ট
হয়েও তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার অপেক্ষা অধিক অপরাধী আর কে? আমি অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকি।’ [সুরা সাজদা, ৩২ : ২২]
#উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটি কারণ এমন, যার একটি যদি কারো মধ্যে পাওয়া যায়, তাহলে তার ঈমান ভেঙ্গে যাবে। সে কাফের-মুরতাদ হয়ে যাবে।ঐ
অবস্থায়
তার কোনো ইবাদাত কবুল হবে
না।ঐ হালতে মৃত্যু হলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে।
Ø
আকীদাতুত তহাবী,
Ø
শরহে আকাইদ,
Ø
আকীদাতুল ওয়াসেতিয়্যাহ,
Ø কিতাবুত তাওহীদ,
Ø কেফায়াতুল মুস্তাযীদ শরহু
কিতাবিত তাওহীদ।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com