লাইলাতুল ক্বদরের
রাত প্রসঙ্গ:
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
Ø
অনেকে মনে
করে এশার পর থেকে ক্বদরের রাতের শুরু। কিন্তু মাগরিবের পরই শুরু হয়ে যায় ক্বদরের
রাত। চলে ফজর পর্যন্ত। আর এই ভুল ধারনার ফলে, মাগরিবের পর ইফতার শেষে দুনিয়াবি হাসি-তামাশা কিংবা
পরচর্চার মত খোশগল্পে ব্যস্ত হয়ে গেলে। গুনাহ দিয়েই সূচনা হয়ে যায় হাজারো মাসের
চাইতেও অধিকতর পূন্যময় মহিমান্বিত রাতটি।
Ø
রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদত
করতেন। তিনি নিজে রাত জাগতেন এবং উনার পরিবারবর্গকে জাগিয়ে দিতেন। তাই অবশ্যই
আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও জাগিয়ে দিয়ে এ রাতের সৌভাগ্য লাভে উৎসাহিত করতে হবে।
Ø
অনেকেরই জিজ্ঞাসা। ক্বদরের এই মহিমান্বিত রাতে কি কি ইবাদত
করবো?
এর সরল ও সহজ উত্তর রাসুলুল্লাহ
(সা.) নিজেই দিয়েছেন।
Ø
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন,
‘একদা আমি রাসুল (সা.)কে
জিজ্ঞাসা করলাম,
হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি
ক্বদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি; তবে আমি কি করব? তখন রাসুল (সা.) আমাকে এই দোয়া পাঠ করার জন্য বললেন। দোয়াটি
হলো: اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوُّ تُحِبُّ الْعَفْوَ
فَاعْفُوْ عَنَّا ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন
তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি’। অর্থাৎ: ‘হে
আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল;
আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
Ø
তাই এ রাতে নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বেশি বেশি তাওবা, এস্তেগফার, দোয়া, মোনাজাত করি।
Ø
আল্লাহর ফরজ বিধান এ রাতের মাগরিব, এশা এবং ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতের সঙ্গে আদায় করি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর
জামাতের সঙ্গে পড়ল,
সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে
নামাজ পড়ল।’
Ø
তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, কিয়ামুল লাইল, নফল নামাজ, কুরআন
তিলাওয়াত,
জিকির-আজকারসহ নেক আমলে রাত
কাটাই।
Ø
কুরআনের অনেকগুলো পারা দ্রুতগতিতে তিলাওয়াত করার চাইতে। পরিমানে
অল্প হলেও ধীরে সুস্থে শ্রুতিমধুর ভাবে। আয়াতের অর্থ বুঝে। শুদ্ধভাবে আদবের সাথে।
পরিপূর্ণ তৃপ্তির সাথে আল্লাহর কালাম তেলাওয়াত করি।
Ø
এ রাতে দান, খয়রাত, সাদাকাহ, চ্যারেটি বা সৎকর্ম বেশী পরিমানে করি। কারন, দোয়া ও চ্যারেটির মাধ্যমে মানুষের তাকদিরের পরিবর্তন হয়ে
থাকে।
Ø
পিরিয়ড অবস্থায় মা-বোনরা এ মহিমান্বিত রজনীর সাওয়াব-সৌভাগ্য
অর্জন থেকে বঞ্চিত থাকবেন না। তারাও বেশি বেশি দোয়া-ইস্তিগফার-তাওবা ও জিকির-আজকার
করতে পারবেন এবং দান-সাদাকাহ, চ্যারেটি
বা সৎকর্ম করতে পারবেন।
Ø
ক্বদরের রাতগুলোতে টিভি বা মোবাইল স্ক্রিনের আসক্তি থেকে
নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখি। প্রয়োজনে এগুলোর সঠিক ব্যবহারও করতে পারি। বিভিন্ন
ইসলামিক স্কলারের লেকচার শুনি। মোবাইল স্ক্রিনে সূরা, তরজমা, তাফসির
শিখি।
Ø
সারারাত জেগে দ্রুতগতিতে শত রাকাত মনোযোগবিহীন নামাজের
চাইতে। ধীরে সুস্থে লম্বা রাকাতের। লম্বা রুকু-সেজদার। কোয়ালিটিসম্পন্ন অল্প নামাজই আল্লাহর সাথে অনেক বেশী
কানেক্টেভিটি বা যোগাযোগ তৈরি করতে সক্ষম। আর ক্বদরের রাতে আল্লাহর সাথে এরকম
কোয়ালিটি বা মানসম্পন্ন কানেক্টেভিটিই তৈরি করতে হবে। যেমনটা রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন,
‘তুমি এমনভাবে নামাজ আদায় কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ; যদি তুমি দেখতে অক্ষম হও, তাহলে মনে কর আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।’
Ø
প্রশ্ন হচ্ছে— আল্লাহর সাথে এই কানেক্টেভিটির পরিমাপটা মাপবো কিভাবে? হিসাবটা সোজা। সেজদায় গিয়ে যতটুকু চোখের পানি ফেলতে পারি।
কানেক্টেভিটির পরিমাপটাও ততটুকু বাড়বে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়, যখন সিজদারত থাকে। অতএব তোমরা তখন অধিক দোয়া করতে থাকো।’
Ø সারাংশ একটাই।অনুতপ্ত হয়ে, চোখের পানি ফেলে, গুনাহ মাফ চেয়ে। ভবিষ্যতের জন্য পুরোপুরি সংশোধিত হয়ে।
নিজের ভিতরের ইগো বা অহংকারের এখনই দাফন করি। এখন থেকেই নিজের মধ্যে দৃশ্যমান
পরিবর্তন আনি। মানুষের হক ফিরিয়ে দিয়ে ও মানুষের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে। আমৃত্যু
আল্লাহর হুকুম ও রাসূল (সা.)এর প্রদর্শিত জীবন বিধান মত বাকি হায়াতের জীবনটুকু
অতিবাহিত করতে পারাটাই হচ্ছে শবে ক্বদরের আসল প্রাপ্তি। সাথে অবশ্যই বোনাস হিসাবে
পাচ্ছি,
একনাগারে হাজারো মাসের
চাইতেও অধিকতর পূন্যময় রাতের ইবাদতের সওয়াব।
Ø আল্লাহ আমাদেরকে মহিমান্বিত এই রাতের মহাসৌভাগ্য দান করুন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com