জিলহজ্জ
মাসের প্রথম দশদিনের আমল
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা বছরের শ্রেষ্ঠ দশদিন পেতে যাচ্ছি; আর তা হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন, ইনশাআল্লাহ। ২০২৪ সালের জুন মাসের ৮ তারিখে সূর্যাস্ত
থেকে জিলহজ্জ
মাস শুরু হবে
ইনশাআল্লাহ। বছরের শ্রেষ্ঠ ১০ টি রাত হলো রমজানের শেষ দশক, আর বছরের শ্রেষ্ঠ ১০টি দিন হলো যিলহজ্জের
প্রথম দশক। মহান
রবের কাছে এই
১০ দিনের আমল অনেক অনেক প্রিয়।
-শাইখ ডক্টর সালেহ আল ফাউজান (حفظه الله)
-শাইখ ডক্টর আব্দুস সালাম আস সুলাইমান (حفظه الله)
এদের আলোচনা থেকে জিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ
আমলসমূহ তুলে ধরা হলো।
*জিলহজ্জ মাসের
প্রথম দশ দিন এর গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহঃ
(১) জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা; বিশেষত আরাফার দিনের রোজা রাখা। রাসূল (ﷺ)
বলেন,
صِيَامُ
يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ
السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ،
❝আরাফার দিনের
রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা বিগত বছর ও আগামী এক বছরের
গুনাহ মাফ করে দেবেন।❞[ সহীহ মুসলিম : ১১৬২ ]
(২) সামর্থ্যবান হলে কুরবানি করা।
(৩) এই দশ দিন নখ ও চুল না কাটা।
রাসূল (ﷺ)
বলেন,
عَنْ سَعِيدِ بْنِ
الْمُسَيِّبِ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، تَرْفَعُهُ، قَالَ: «إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ
وَعِنْدَهُ أُضْحِيَّةٌ يُرِيدُ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا، وَلَا
يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا»
❝তোমাদের কেউ
জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলে এবং কুরবানি করার ইচ্ছা করলে, সে যেন তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।❞ [ সহীহ মুসলিম : ১৯৭৭ ]
(৪) চার ধরনের যিকিরে লেগে থাকা।
রাসুল (ﷺ)
বলেন,
عَنِ ابْنِ
عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَا مِنْ
أَيَّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ، وَلَا أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنَ الْعَمَلِ فِيهِنَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ
الْعَشْرِ،
❝আল্লাহ তা‘আলার নিকট জিলহজ্জের দশ দিনের আমলের চেয়ে
মহান এবং প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং, তোমরা সেই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে তাসবিহ আদায় কর। তাসবিহ গুলো হলো:
তাসবিহ ( سُبْحَانَ اللّٰهِ
), সুবহানাল্লাহ
তাহমিদ ( ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ
), আলহামদুলিল্লাহ
তাহলিল ( لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
ও তাকবির (اللّٰهُ أَكْبَر
) আল্লাহ আকবার ,পড়ো।❞[ মুসনাদে আহমাদ:৫৪৪৬; হাদিসটির সনদ সহিহ]
(৫) বেশি বেশি তাকবির তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা
করা।
সাধারণভাবে এই দশ দিন সংক্ষেপে اللّٰهُ أَكْبَر বেশি বেশি পড়ুন। সাথে, নিচের বাক্যগুলোও সাধ্যানুসারে পড়ুন—
اَللّٰهُ أَكْبَرْ
اَللّٰهُ أَكْبَرْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرْ اَللّٰهُ
أَكْبَرْ وَلِلّٰهِ الْحَمْد
অর্থঃ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহ ছাড়া কোনও উপাস্য নেই। আল্লাহই
সর্বশ্রেষ্ঠ; আল্লাহই
সর্বশ্রেষ্ঠ; আর আল্লাহর জন্যই
সকল প্রশংসা। এটি ইবনু মাস‘উদ (রা.) ও অন্যান্য পূর্বসূরিদের থেকে
প্রমাণিত। [ দারাকুতনি, আস-সুনান: ১৭৫৬; আলবানি, ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪; সনদ সহিহ]
সুতরাং আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর
থেকে শুরু করে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একাকী বা জামাতে
নামাজ আদায়কারী, নারী অথবা
পুরুষ— প্রত্যেকের
জন্য একবার তাকবিরে তাশরিক (উপরে বর্ণিত তাকবিরটি) পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চ
আওয়াজে বলবে, আর নারীরা
নিচু আওয়াজে।
[ ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ২৪/২২০; ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা‘আদ: ২/৩৬০; ইবনু আবিদিন, রাদ্দুল মুহতার: ৩/৬১]
(৬) চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো জিলহজ্জ; তাই এই মাসের সম্মানে যথাসম্ভব সকল গুনাহ
থেকে বেঁচে থাকা। এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ
الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ
الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ
❝নিশ্চয়ই
আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত ফলকে (বছরে) মাসের সংখ্যা বারোটি—আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তার
মধ্যে চারটি (মাস) সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা (গুনাহ করার মাধ্যমে)
নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।❞ [ সুরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৬ ]
(৭) এই দিনগুলো বছরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ, তাই অধিক পরিমাণে নেক আমল করা।
রাসূল (ﷺ)
বলেছেন,
عَنْ ابْنِ
عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «مَا
العَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلَ مِنْهَا فِي هَذِهِ؟» قَالُوا: وَلاَ الجِهَادُ؟
قَالَ: «وَلاَ الجِهَادُ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ،
فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ»
❝আল্লাহ তা‘আলার নিকট জিলহজ্জের (প্রথম) দশ দিনের আমলের
চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই।❞ সাহাবিগণ বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ রাস্তায় জিহাদও কি
এর চেয়ে উত্তম নয়?’ তিনি বললেন, ‘‘না। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান ও মাল নিয়ে (জিহাদে) ঝাঁপিয়ে
পড়লো এবং এর কোনো কিছু নিয়েই আর ফিরে এলো না (অর্থাৎ, শহীদ হয়ে গেলো, তার কথা ভিন্ন)।❞[ সহীহ বুখারি :
৯৬৯; মুসনাদে আহমাদ
: ৬৫০৫; সুনান আবু
দাউদ : ২৪৩৮]
এই দশদিনের ফরজ ইবাদত অন্যান্য মাসের ফরজ
ইবাদতের তুলনায় অধিক মর্যাদার। এই দশদিনের নফল ইবাদত অন্যান্য মাসের নফল ইবাদতের
চেয়ে শ্রেষ্ঠ।[ ইবনু রজব, ফাতহুল বারি: ৯/১৫ ]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের ইলমে, আমলে বারাকাহ দিন।দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যান
দান করুন।আল্লাহ আমাদেরকে প্রিয় বান্দা হিসেবে প্রশান্ত আত্মা নিয়ে তাঁর কাছে
ফেরৎ যাওয়ার তৌফিক দান করুন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com