Thursday, April 10, 2025

ইসলামী দৃষ্টিতে যুদ্ধের প্রয়োজন কখন?

 

ইসলামী দৃষ্টিতে যুদ্ধের প্রয়োজন কখন?

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 সলামী দৃষ্টিতে যুদ্ধ (জিহাদ) একান্ত প্রয়োজনে ও নির্দিষ্ট নৈতিক নীতিমালার ভিত্তিতে অনুমোদিত, এবং তা কখনোই নিছক দখল, লোভ বা নিরপরাধ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়। যুদ্ধের প্রয়োজন ইসলামী দৃষ্টিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে রয়েছে:

১. অন্যায় ও জুলুম প্রতিহত করার জন্য:

ইসলামে যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দুর্বল, নির্যাতিত বা নিপীড়িত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো এবং তাদের রক্ষা করা। কুরআনে বলা হয়েছে:

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا  

"তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো না সেইসব নিপীড়িত পুরুষ, নারী ও শিশুদের জন্য, যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে এই অত্যাচারী জনগণের শহর থেকে মুক্তি দাও।" — (সূরা আন-নিসা, ৪:৭৫)

২. ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য:

ইসলামে মানুষকে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করাতে নিষেধ করা হয়েছে:

لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ

"ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই..." (সূরা আল-বাকারা, ২:২৫৬)

তবে যদি কাউকে তার ধর্মচর্চা করতে বাধা দেওয়া হয়, তখন যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে যাতে ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকে।

৩. আত্মরক্ষার জন্য:

যদি মুসলিম জাতির উপর আগ্রাসন বা আক্রমণ হয়, তখন আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করা বৈধ এবং কখনো কখনো তা ফরজ (অবশ্য পালনীয়) হয়ে যায়। কুরআনে বলা হয়েছে:

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

"যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।" — (সূরা আল-বাকারা, ২:১৯০)

৪. চুক্তিভঙ্গ বা বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দেওয়ার জন্য:

যদি অন্য পক্ষ মুসলিমদের সঙ্গে করা চুক্তি ভঙ্গ করে, মিথ্যা বলে বা আক্রমণ করে, তখন ইসলামে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

 যুদ্ধের শর্ত ও নৈতিকতা:

ইসলামী যুদ্ধনীতি খুবই পরিষ্কার ও নৈতিকভিত্তিক। এর মধ্যে রয়েছে:

  • নিরপরাধ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুকে হত্যা করা হারাম।
  • গাছপালা, ঘরবাড়ি ও ফসল ধ্বংস করা নিষেধ।
  • যুদ্ধ শুরু করার আগে শান্তির সুযোগ দেওয়া।

ইসলামী দৃষ্টিতে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা কিছু নির্দিষ্ট ও ন্যায়সঙ্গত কারণে সীমিত। ইসলাম কখনোই অযথা যুদ্ধ বা আগ্রাসনকে সমর্থন করে না। বরং ইসলাম শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। তবে কিছু পরিস্থিতিতে যুদ্ধকে বৈধ ও প্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। নিচে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার মূল কারণগুলো তুলে ধরা হলো:

১. আত্মরক্ষার কৌশল গ্রহন: (Self-defense):

যদি মুসলিম জনগোষ্ঠী বা দেশ আক্রমণের শিকার হয়, তখন নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ অনুমোদিত।

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا

"তোমাদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হলো, কারণ তোমাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে।" — (সূরা হজ্জ, ২২:৩৯)

২. জুলুম ও নিপীড়ন প্রতিরোধ: (Oppression Removal):

যেখানে মানুষ অন্যায়ভাবে নির্যাতিত বা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সেই নির্যাতন বন্ধের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করা বৈধ।

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا  

"তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো না, সেইসব নির্যাতিত পুরুষ, নারী ও শিশুদের মুক্তির জন্য যারা বলছে, 'হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এই জালিম জাতির হাত থেকে মুক্তি দাও'?" — (সূরা নিসা, ৪:৭৫)

৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা: (Protection of Religious Freedom):

যখন ধর্ম পালনের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে, তখন সেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা যেতে পারে।

الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَنْ يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ

"...যদি আল্লাহ্‌ মানুষের একদলকে অপর আরেকদলের দ্বারা ঠেকিয়ে না দিতেন, তবে ভেঙে যেত গির্জা, উপাসনালয়, ইহুদিদের পবিত্র স্থান এবং মসজিদসমূহ..." — (সূরা হজ্জ, ২২:৪০)

৪. চুক্তিভঙ্গ বা বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিক্রিয়া:

যদি শত্রুপক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করে বা বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাহলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুদ্ধ বৈধ হতে পারে।

ইসলামিক যুদ্ধনীতি (Ethics of War in Islam):

  • নিরপরাধ নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং নিরস্ত্র ব্যক্তিদের হত্যা করা হারাম।
  • গাছপালা, পশুপাখি ও প্রকৃতি ধ্বংস করা নিষিদ্ধ।
  • বন্দীদের প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে।
  • যুদ্ধের লক্ষ্য কখনোই দখল বা লুণ্ঠন নয়, বরং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।

 অতএব আজ যেমন করে ফিলিস্তিনের মানুষ একটু বাচার জন্য আর্থানাথ করছে দুমোট খাবারের জন্য, পানি নেই, খাবার নেই, নেই মাথা গোজার একটু জায়গা। বিশ্বমানতার বিবেক আজ শুন্য। গাজা ও ফিলিস্তিনের মানব শুন্য হয়ে যাচ্ছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যদি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত তবেই ঐ মানুষগুলো পৃথিবীর বুকে বেচে থাকতে পারত। এজন্যই বলতে হয়ে যে, আবারো ইসলামী যুদ্ধের প্রয়োজন। আসুন !----------তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।

 পরিশেষ কথা হলো:  ইসলামে যুদ্ধ কোনো আগ্রাসী উদ্দেশ্যে নয়, বরং শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানবতার রক্ষায় সর্বশেষ উপায় হিসেবে বিবেচিত। যুদ্ধের মাধ্যমে শান্তির পথ সুগম করাই ইসলামী দৃষ্টিতে মূল উদ্দেশ্য।

Bottom of Form

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com