শহীদের মৃত্যু নেই তারা
জীবিত
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
প্রথম পর্ব
কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে শহীদের মৃত্যু নিয়ে বিশেষ ধারণা রয়েছে। ইসলাম
অনুযায়ী, শহীদরা মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকে এবং
তাদের মৃত্যু সাধারণ মৃত্যু নয়, বরং তাদেরকে আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করার
কারণে এক বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
কুরআনে শহীদের
মৃত্যু সম্পর্কে বলা হয়েছে:
وَلَا
تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ
عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
"যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, তবে তোমরা তা বুঝতে পারো না এবং আল্লাহর নিকট থেকে তারা রিযিক
প্রাপ্ত।" (সুরা আল-ইমরান, 3:169)
অন্য আয়াতে
আল্লাহ বলেন,
وَلَا
تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ
لَا تَشْعُرُونَ
আর যারা আল্লাহর
পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। প্রকৃত পক্ষে তারা
জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমরা অনুভব করতে পার না। (সূরা বাকারা-২:১৫৪)
উল্লেখ্য কুরআনে
মোট ৯টি সূরার মধ্যে শহীদের কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া হাদীসে
রয়েছে:
عَنْ
عَمْرٍو، سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ:
قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ
أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فَأَيْنَ أَنَا؟ قَالَ: «فِي الجَنَّةِ فَأَلْقَى
تَمَرَاتٍ فِي يَدِهِ، ثُمَّ
قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ»
আমর ইবনে দীনার (রা.)
হতে বর্ণিত। তিনি জাবের ইবনে আবদুল্রাহকে (রা.)
বলতে শুনেছেন যে, ওহদের যুদ্ধের দিন এক
ব্যক্তি নবী (সা.)কে বললো, আমি যদি শহীদ হই তাহলে আমার অবস্থা কি হবে অর্থাৎ কোথায় অবস্থান করবো ?
নবী (সা.) বললো জান্নাতে
থাকবে। তখন সে তার হাতের খেজুরগুলো যা সে খেতেছিলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে জিহাদের ময়দানে
ঝাপিয়ে পড়ে লড়াই করলো এবং শহীদ হলো। (সহীহ বুখারী-৪০৪৬)
অন্য একখানা
হাদীসে এসেছে,
"যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যায়, তাদেরকে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দেন এবং তারা জীবিত থাকে, তাদের রিযিক (পুষ্টি) আল্লাহ সরাসরি প্রদান করেন।" --(সহীহ মুসলিম)
উপরের আয়াত ও হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, শহীদের মৃত্যু হলো এক ধরনের বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ঘটনা, যেখানে তারা আল্লাহর পথে আত্মত্যাগ করেছে। শহীদের আত্মা জীবিত থাকে এবং তারা
আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার লাভ করে,
এমনকি তাদের জন্য
পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত বস্তু আল্লাহর দয়া ও রহমত দ্বারা সম্মানিত হয়।
এভাবে ইসলাম
শহীদদেরকে সম্মানিত করে এবং তাদেরকে জীবিত হিসেবে অভিহিত করে, যদিও তাদের শারীরিক মৃত্যু ঘটেছে।
শহীদদের মৃত্যু
সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, শহীদদের মৃত্যুর পর তারা মৃত হিসেবে গণ্য হয় না, বরং তাদেরকে জীবিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যারা আল্লাহর পথে
শহীদ হন, তাদের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাদেরকে জীবিত
রাখেন। তবে, আমাদের জন্য তাদের জীবন অনুভব করা সম্ভব
নয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক অবস্থার কথা বলে,
যেখানে তারা
আল্লাহর কাছেই বিশেষ মর্যাদা ও সুখে অবস্থান করে।
হাদীসে রয়েছে: "যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হয়, সে তার মৃত্যু পরবর্তী জীবন উপভোগ করে,
তার শরীরে ক্ষত বা
আহত হওয়ার পরও সে তা অনুভব করে না।" (সহীহ মুসলিম)
এটি শহীদদের
মর্যাদার কথা প্রকাশ করে, যারা আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদেরকে আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দেন। শহীদরা নি:সন্দেহে জীবিত আছেন এবং তাদের
প্রাপ্ত সম্মান অনন্ত এবং অমর।
অতএব, কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী শহীদরা শারীরিকভাবে মৃত হলেও আধ্যাত্মিকভাবে তারা
জীবিত এবং আল্লাহর নিকটে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে।
শহীদের মৃত্যু নেই তারা
জীবিত
-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
শেষ পর্ব
শহীদি মৃত্যু বা শহীদ হওয়া ইসলামিক দর্শনে এক মহান ও মর্যাদাপূর্ণ মৃত্যু
হিসেবে বিবেচিত। শহীদ হওয়ার সাথে কিছু বিশেষ উপহার ও পুরস্কার সম্পর্কিত বিশ্বাস
রয়েছে। ইসলামে শহীদ হওয়া ব্যক্তির জন্য কিছু বিশেষ উপহার দেওয়া হয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. জান্নাতে প্রবেশ: শহীদদের জন্য আল্লাহ তাআলা সরাসরি জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেন, যেটি অন্যান্য মানুষের জন্য কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পর হবে।
২. শহীদের রক্তের ক্ষরণ হওয়া: ইসলামে বলা হয়, শহীদ মৃত্যুর সময় তার শরীর থেকে রক্তের
কোনো গন্ধ আসে না। এর পরিবর্তে এটি মুসক বা সুগন্ধি হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. দুআর মাধ্যমে ক্ষমা: শহীদরা তাদের পরিবার ও অন্যান্য মুসলিমদের জন্য দুআ করতে পারেন, এবং আল্লাহ তাদের দুআ কবুল করেন।
৪. শহীদের আত্মা একটি বিশেষ মর্যাদা পায়: শহীদদের আত্মা আল্লাহর কাছে এক বিশেষ মর্যাদা পায়। তারা এক আলোকিত অবস্থায়
থাকে, তাদের জন্য বিশেষ সৌভাগ্যের ব্যবস্থা করা
হয়।
৫. পৃথিবীতে শান্তি ও সান্ত্বনা: শহীদদের মৃত্যুর পর তাদের পরিবার,
আত্মীয়স্বজন এবং
বন্ধুদের জন্য অনেক শান্তি ও সান্ত্বনার ব্যবস্থা করা হয়। শহীদের পরিবারে ঈমানের
শক্তি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়।
৬. শহীদরা এক ধরনের বিশেষ পোশাক পরিধান করেন: শহীদের জন্য বিশেষ ধরনের পোশাক বা সিল্কের কাপড় দেওয়া হয়, যা তাদের মর্যাদা ও বিশেষত্বের প্রতীক।
৭.স্বাভা বিক মৃত্যু থেকে বেশি সম্মান: শহীদরা আল্লাহর পথে জীবন দান করার কারণে সাধারণ মানুষের তুলনায় বিশেষ মর্যাদা
লাভ করেন।
৮.ক্ষমা ও বেহেশত: শহীদরা তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহর
কাছে দ্রুত ক্ষমা লাভ করেন এবং তাদের জন্য বেহেশত প্রতিশ্রুত থাকে।
৯.রক্তের বিনিময়ে পাপ মাফ: শহীদদের রক্তের বিনিময়ে তাদের পূর্ববর্তী সকল পাপ মাফ করা হয় এবং তাদেরকে
সৎকর্মী হিসেবে গণ্য করা হয়।
১০.পুনর্জীবন: শহীদদের মৃত্যুর পরেও তারা মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব করেন না। তাদের আত্মা
বেহেশতে যায় এবং তারা শান্তিতে থাকে।
১১.বিশেষ মর্যাদা: শহীদরা আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ দান লাভ করেন,
যেমন তাদের আত্মা
মাটি থেকে আলাদা থাকে এবং তাদের প্রতি আল্লাহর আশীর্বাদ বর্ষিত হয়।
১২.পরিবারের জন্য দোয়া: শহীদদের পরিবারকে আল্লাহ বিশেষ দোয়া এবং সহানুভূতি দেন, যাতে তারা তাদের প্রিয়জনের জন্য গর্বিত হতে পারে।
এগুলি ইসলামিক
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী শহীদের জন্য প্রাপ্ত কিছু উপহার এবং মর্যাদার বিষয়।
নেটের জগতে আমার দেখা “ফিলিস্তিন
ও গাজা অঞ্চলের” একজন শহীদের লাশের হাত- কি দৃশ্য
দেখালেন। মহান আল্লাহ তায়ালা- হঠাৎ করে ছবিটা দেখলে মাথায় আসবে, ধ্বংসস্তুপের মাঝে একটা হাত দেখা যাচ্ছে।
হাতের মাঝ থেকে গাছ বের হয়ে আসছে। কিন্তু একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবলে এই ছবির পিছনের
গল্পটা মাথায় আসবে।
এই হাতটায় একটা খেজুর ধরা ছিলো। হয়তো খাওয়ার
জন্য তুলে ছিলেন। কিন্তু খাওয়া হয়নি। খেজুরের বীজ থেকে জার্মিনেট হয়ে এমন চারার
পর্যায়ে আসতে ৩মাসের মত লাগে। তিন মাসে এই বীজ থেকে চারা রূপান্তরিত হয়ে গেলো। এতে
অবাক করার কি আছে?
অবাক করার বিষয় হচ্ছে হাতটা। আঙুলগুলো স্পষ্ট, চামড়ার রং ঠিক জীবন্ত মানুষের মত। এতদিনে হাত, হাতের আঙুল পচে গলে যাওয়ার কথা। কাদের শরীর
মৃত্যুর পরেও সুন্দর সতেজ রয়ে যায়, বলুন তো?---উত্তরটা আপনাদের থেকে আশা
করি। এমন মৃত্যু কতজনে হতে পারে?
যুদ্ধের জন্য কোন সাহাহী খেজুর ফেলে দিয়ে যুদ্ধের গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন। আমরা কি জানি ?
এটি ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাহাবী আলী ইবন আবি তালিব (রাঃ) যুদ্ধের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর
হাতে থাকা একটি খেজুর ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,
"আমি এই খেজুর খেতে
চাই না যতক্ষণ না আল্লাহর রাস্তায় আমি যুদ্ধ শেষ করি।" এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সাহাবীরা নিজেদের জীবনের দুনিয়াবী সুখ-সুখ্যাতি ত্যাগ করে আল্লাহর পথে নিজেদের
উৎসর্গ করেছিলেন।
অন্য একটি বর্ননায় এসেছে,--ঘটনাটি ঘটে ছিলো-প্রখ্যাত সাহাবী হাজারা (Hazrat) আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه) সম্পর্কিত ঘটনা হতে পারে, যিনি মক্কার যুদ্ধে (Battle of Uhud) অংশগ্রহণ করেছিলেন।
হাদিসে উল্লেখ আছে যে, উহুদ যুদ্ধে যাত্রার সময়, তিনি তাঁর খেজুরের ফল (খেজুরের কিছু গুচ্ছ) ফেলে দিয়ে যুদ্ধের জন্য রওনা হন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে যুদ্ধের জন্য তার মনোযোগ প্রয়োজন এবং এসব বিষয়
তাতে বাধা সৃষ্টি করবে।
অপর একটি কিতাবে এসেছে--সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) সম্পর্কিত একটি ঘটনা। তিনি একদিন যুদ্ধের
প্রস্তুতির সময়, যখন সেনা
প্রস্তুত হচ্ছিল, তখন তাঁর খেজুরের
কিছু ফল ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি যুদ্ধের পথে চলে যান। এই ঘটনা তার আত্মত্যাগ
এবং ইসলামের জন্য তার কষ্টের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচিত।
এটি একটি মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে,
যেখানে সাহাবী তার
ব্যক্তিগত বা সাময়িক বিষয়গুলো আল্লাহর রাস্তায় লাগিয়ে দিয়েছেন, এমনকি তাদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ইসলামকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com