Showing posts with label শিল্প-সাহিত্য. Show all posts
Showing posts with label শিল্প-সাহিত্য. Show all posts

Thursday, February 17, 2022

সাহসী নারী মুসকান

 


সাহসী নারী মুসকান

এম রাজ্জাক হাওলাদার

 

মুসলিম নারী তুমি মুসকা্ন

মুখে আছে আল্লাহর স্লোগান,

বিশ্বের মাঝে রাখলে তুমি মুসলমানের মান

আল্লাহু আকবারের ধ্বনি

উচ্চ করেছে সকলের মান

আল্লাহর নাম মুখে তোমার

দিলে বিশাল হুংকার

তারী ডাকে জয় শ্রীরামের ধ্বনি

চুপসে গেলো তার মান

মুসকান তুমি উত্তরসূরী সুমাইয়ার

ভয় নেই তোমার, ভয় নেই বোন

সৃষ্টিকর্তা রেখেছে তোমার মান

উচ্চ কন্ঠে ডাক দিয়েছ সৃষ্টিকর্তার নাম,

রাখবে মহান আল্লাহ তায়ালা

আল্লাহু আকবারের সম্মান

Wednesday, September 16, 2020


উম্মুক্ত দিগন্ত-২৭
‘‘আঁধারে আশার আলো-লকডাউন’’


      বিশ্বব্যাপী আজ করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ মৃত্যুপুরী তৈরী করেছে। পৃথিবীর আকাশে-বাতাসে যেন সকল জায়গায় একটি শব্দ তা হচ্ছে কোভিড-১৯ আসছে। দিক হতে দ্বীপান্তরে  এ যেন অজানা কান্নার শব্দ। আজ অনেকটা সময়, দিন এবং মাস পেরিয়ে এলো। আমি যে চার দেয়ালের মাঝে শিকল ছাড়া বন্দী আছি। পূর্ব দিগন্তে সকালের সূর্য উঠে হাসিমুখ নিয়ে আর সন্ধ্যার আঁধার নামে হতাশা ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে। দানা পিনা আস্তে আস্তে ফুরিয়ে গেল বাচ্চার মায়াবি কান্নায় মনকে আর ধরে রাখতে পারিনা। পেটের জ¦লা যে কতবড় তা যদি কেউ না পড়ে তাকে তা বুঝবার নয়। বাচ্চার কান্নায় তার মা খালি হাড়িতে পানি বসিয়ে রাখে আমিও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে চিন্তা করি কিছু একটা  উপায় মহান আল্লাহতো দিবেন-ই। জানালার পাশে বসা ছিলাম কোথা হতে যেন কান্নার আওয়াজ আসে। উপর তলা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি কিছু মানুষ পরে রয়েছে। মনতো মানেনা সরকার দিয়েছে লকডাউন কি কের লাশের কাছে যাব বের হলেই গুলি। সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের ধ্বনি আমাদের কানে ভেসে আসে।

      আমার ছোট ছেলে সে অবুঝ কোনটা আইন আর কোনটা বে-আইন তার মাথায় কাজ করেনা। বললো, বাবা চলো মসজিদে যাই নামাজের আজান হয়েছে জামাতে নামাজ আদায় করতে হবে। মাছুম বাচ্চা সে বুঝেনা করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ কি?  প্রশ্ন করে আমার কাছে বাবা এটাকি? আমি তাকে বলি আগেতো আল্লাহর হুকুম পালন করি পরে না হয় তোমাকে বলি। ছেলে স্ত্রী সহ আমরা সালাত আদায় করলাম। নামাজ শেষে তাদের বোঝাতে চাইলাম যে, করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ হলো একটি মহামারী রোগ যা হলে মানুষ মানুষ থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবে। কিংবা নিজ অবস্থান হতে মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত বের হবেনা। কুরআনে বর্ণীত ঐ আয়াত খানা তাদের সামনে তেলাওয়াত করে শুনালাম। তা হলো----
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
অর্থঃ তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। (সুরা বাকারা-১৯৫)
আল্লাহর রাসূলের ঐ হাদীস খানাও বললাম,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏ لاَ يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ
হযরত আবু হুরায়রা বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যেন তার অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের কাছে নিয়ে না যায়। (সহীহ বুখারী-৫৭৭৪ তা.প) 

       আমার বাচ্চা ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে মায়ের আচল ধরে টানে আর বলে মা একটু খাবার দেওনা। মা সন্তানকে কি বলবে বুঝে উঠলনা তখন বাবা হিসেবে আমাকে দু‘চোখ দিয়ে অঝোরে কান্না আসে কিন্তু কাঁদতে পারিনি তখন।  দু‘মুঠো খাবার খেয়ে বাচ্চা শান্ত মনে ঘুমিয়ে পড়লো। বাসার পাশেই গোড়স্থান লাশের পর লাশ পরে আছে।  সাফাই কিংবা দাফন করার লোক নেই। দু‘এক সপ্তাহ পড়ে সিটি কর্পোরেশনের লোক আসে এবং সাফাই করে নিয়ে দুর অজানা পথে নিয়ে রেখে আসে। ওরা কি আসবে তাদের মধ্যে অধিকাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মারাগেছে। সংবাদ কিংবা মিডিয়ায় অহরহ প্রচার করছে সংবাদ। মিনিটে মিনিটে আপডেট দেওয়া করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বার্তাবাহকরাও অনেকেই আক্রান্ত। সংবাদ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াও যেন নিস্তব্দের দিকে। রাস্তা-ঘাট মনে হয়  ঘুমিয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে আইন শৃংখলা বাহিনীর গাড়ীর আওয়াজ ও রোগী কিংবা লাশবাহী গাড়ীর শব্দ শোনা যায়।

আমাদের এখানে অনেকগুলো পরিবার এক সাথে থাকতাম। অনেকেই অসুস্থ হয়ে চলে গেছে হাসপাতালে কিংবা না ফেরার দেশে। আবার কেউ কেউ বা শ্মশানে ছাই হয়ে উড়ে গেছে অনেক দূরে। এ ভাবে কাটে আরও অনেক দিন। বাসা বাড়িতে সারাদিনে মাত্র কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। আর পানি তা আর কি থাকে? কে চালাবে পাম্প বা মটর।  দিন যায় আর বারে মৃত্যুর মিছিল ক্রমবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। প্রথম দিনে-০৫ দ্বিতীয় দিনে-০৯ তৃতীয় দিনে-১৯ আর চতুর্থ দিন হতে দিগুণ হতে শুরু করল। আমাদের আবাস স্থলের লোকগুলো বোকা সব সময় খাঁ খাঁ করেছে। সব সময় তারা বাহিরে ঘোরাঘুরি করে। কাজ না থাকলেও এমনিতে আড্ডা করে। লকডাউনে পরে শরীরটা কিট কিট করছে। আমার পাশের বাসার সাদী সে বড় দুষ্ট সব সময় বাহিরে ঘুরে। এর মধ্যে একদিন শুনি সে হাসপাতালে গিয়েছে দু‘এক দিন পরে আর নেই। তার কথা শুনে আমার মন খুব খারাপ লাগল।  এই আড্ডাপ্রিয় লোকগুলি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর  আউটব্রেক শুরু হয়। এই ভাবেই আমাদের সমাজটি মহামারীতে আক্রান্ত হলো। পাল্টে গেলো সারা বিশ্বের  মতো আমাদের দেশের চিত্র। 

      সরকারের দেওয়া আইন অমান্য করে কঠিন শাস্তিতে পরে গেলো। আমার মনে হলো দেশের ৫০ শতাংশ লোক আক্রান্ত। সরকারী পরিসংখ্যান এখন আর দেওয়া হয় না। দেবেইবা কে সেও  করোনায় আক্রান্ত। সরকারী হাসপাতাল গুলিতেও তিল রাখার জায়গা নাই ওষুধতো দুরের কথা। এখন প্রতিটি বাড়ি-ঘর যেনো হাসপাতালে পরিনত হয়েছে। রোজ খাওয়ার ঔষুধ গুলো আর কিনতেও পারছেনা কেউ। করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ না মরলেও সুগার বেরে প্রেশারে কিংবা অন্য রোগেও মরছে কতশত লোকজন। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে মানুষ কে দিবে তাকে ঔষুধ? দায়িত্বশীলরাও আইনের লাগাম ছেড়ে দিয়েছে। সোশ্যালমিডিয়া বলছে প্রচুর ঘনবসতি লোকের আইন অমান্যই আউটব্রেকের মহামারীর মুল কারণ। 

      সরকারী আইন তোয়াক্কা না করে তারা আড্ডাবাজী  করে মহামরী ছড়িয়ে পরেছে প্রকটরূপে। আস্তে আস্তে আমাদের সকল কিছু সংকোচিত হয়ে আসছে। চাল, ডাল, লবন, আলু, মরিচ, আরও কতকি যে আছে তা ফুরিয়ে গিয়েছে। বাসা বাড়িতে খাদ্য, পানি না থাকার কারণে মানুষ গুলো যেন শুকিয়ে নর কংকাল হয়ে আছে। মানুষ পেটের ক্ষুধায় মরিয়া হয়ে রাস্তায় খাবারের খোঁজ করছে। অধিকাংশ দোকানই করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারনে  নিজেরাই আক্রান্ত হয়ে দোকান পাট খুলতে পারছে না। দোকান খুললেও পন্যও পাচ্ছে না কিছুলোক। কেউবা দোকান বন্ধ করে গিয়েছে আর মানুষ খাদ্যের হাহাকারে দোকানের তালা ভেঙ্গে লুট তরাজ করে নিয়েছে। এ ভাবে দিনের পর দিন  এবং সময় কেটে যাচ্ছে----------------------------।

কোন এক সময় মোয়াজ্জিনের আজান শেষে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করে। এই বলে---
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
‘‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শে^ত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি  (যেগুলোর নাম জানি না) থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’’ (আবু-দাউদ-১৫৫৪)

হে আল্লাহ!  তুমি আমাদের বাচাঁও, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই, জীবন হায়াতে মালিক তুমি। প্রিয় মুছুল্লিয়ানে কেরাম আপনারা সবাই ঘরে বসে সালাত আদায় করুন, ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে  ক্ষমা করে দেয় এই বিপদ বা মহামারী হতে। 

          ক্ষুধার যন্ত্রণা ও জীবন নাশের হানি থেকে রক্ষার জন্য ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কঠিন সময়ে (কারফিউ বা লকডাউন চলছে)  শহরের আবাস ছেড়ে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। স্ত্রীর আলতো পা আর বাচ্চার আকাঁবাকা করে হাটা জেন প্রতিটি মিনিট ঘন্টার সমান। শক্তির অভাবে পায়ে যেন কেউ শিকল বেধেঁ রেখেছে মনে হয়।  পথ আর ফুরাচ্ছেনা যতদূর যাই শূন্য রাস্তা কাউকে দেখছি না চার পাশে গাছ পালা গুলো নিরব স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের যেন অক্সিজেনের অভাব হয়েছে। কারণ তারা অক্সিজেন পাবেই বা কোথায় রাস্তা ঘাটের বাতাস হয়েছে দুর্গন্ধময়। খালি রাস্তা হাটতে বেশ মজাই ছিল কিন্তু ক্ষুধার জালায় ক্লান্ত শরীরে পা যেন চলছেনা। ঘন্টা চারিক হাটার পর হঠাৎ পুলিশের গাড়ির শব্দ কানে আসে। বাচ্চাটা ভয়ে তার মায়ের আঁচল তলে লুকিয়ে গেল। পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে আমাকে লাঠি তাক করে বলে তোমরাকি জানোনা এখন কারফিউ চলছে?  আমি তখন ফেঁল ফেঁল চোখে তাকে বলি স্যার পেটের জালা যে বড় জালা  আজ অনেক দিন গত হলো দানা-পানি বাসায় নাই তাই কষ্ট করে গ্রামের বাড়ী যাচ্ছি। রাস্তায় চলতে চলতে সে কি করুন দৃশ্য দেখি------------------।

অনেক বাধা অতিক্রম করে রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছালাম। মা তখন ঘরের আঙ্গিনায় শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বসে বসে আমারদের কথা ভাবছেন। এমন দুর্দিনে আমার সন্তানদের কি দেখতে পাবো? বলে চোখের পানি ঝড় ঝড় করে পড়ছে। তখন-ই আমরা বাড়ীর আঙ্গিনায় হাজির হলাম। মা তার নাতিকে দেখে বুকে নিয়ে আদর সোহাগ করে আর বলে তোমরা ভাল আছতো ? বাবাতো অনেক আগে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন। মা তার সন্তানদের পেয়ে খুশি হতে না হতেই মসজিদের মাইকে ঘোষণা আসে ওপাড়ার কাছেম মোল্লা আর নেই। গ্রামের মানুষ গুলো কেন যেন আড্ডাবাজ। কারণ দেশে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকই শহর ছেড়ে গ্রামে এসেছে। মনের সুখে তারা বাড়ীর পাশের বাজারে ঘুড়ে আর গল্পে মত্ত কারণ অনেক দিন পরে বাড়ী এসেছে তাই। মৃত কাছেম মোল্লার লাশ আর কেউ ধরেনা কারণ সে করোনা ভাইরাসে মারা গিয়েছে। আমার কাকা দুর থেকে একেবারে কাছে এসে বলে বাবা তোমরা এখনো বেঁচে আছো ? সে কি দীঘ এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন --------। 

      গ্রামেও রাস্তার অলি গলিতে অনেক পড়ে রয়েছে লাশ আর লাশ। কে দিবে দাফন বা উঠাবে শ্মশানে ? আর কেবা করবে সহযোগিতা ? যদিও  সরকারের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই কিন্তু যে লোকগুলো কাজ করবে তারও মহামারীতে আক্রান্ত। চাচাকে বলি চলেন--------।

নিয়তির লেখা আছে বটে ব্যক্তি সমাজ ও নিজেদের সচেতনতার অভাব ছিলো। লোকজন যদি প্রথম থেকেই খেলার ছলে না নিয়ে ‘‘লকডাউনে’’ নিজ, পরিবার ও সমাজকে গৃহবন্দিত্ব হতো তবে আর এই বেহাল দশা হতোনা। আজ পুরোপুরি দেশের কাঠামো শেষ হয়ে গেছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার নিম্মমুখী, উন্নত দেশের তালিকায় থাকার আশা গুড়ে বালি, আমাদের অসচেতনতাই দ্বায়ী। ১ম ও ২য় বিশ^ যুদ্ধের পরবর্তী সময় পৃথিবী যে ভাবে ঘুরে দাড়িয়ে ছিলো ঠিক তেমনি আমাদেরও ঘুরে দাড়াতে হবে। ফের আবার মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শুনে মসজিদে ফিরে যাবো সালাত আদায়ের জন্য। থাকবেনা লকডাউনের মতো নিশেধাজ্ঞা নতুন এই পৃথিবী মাথা উচুঁ করে দাড়াবে বিশে^র বুকে। লকডাউন খুলে দিলেই  হবো শান্ত কিন্তু ততক্ষণে আমাদের অবস্থা হবে--------------শুন্য।


বিশেষ দ্রষ্টব্য: (উপরের গল্পের কাহিনীটি কাল্পনিক তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে যদি আমরা এই দিন দেখতে না চাই তবে সবাই প্রশাসনের নির্দেশ গুলো মেনে চলুন। লকডাউনে ঘর-বাড়ী অথবা বাসা থেকে বের হবেন না। আইন মেনে চলুন নিজ, দেশ ও জাতীর উন্নতি সাধনে এগিয়ে আসুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হউন)


Monday, September 14, 2020


অন্তিম যাত্রা এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
প্রতীকী ছবি
ইকরা। সম্পর্কে ভাগিনা হলেও বয়সে বড় হওয়ায় মামা ডাকতাম। বেশ মজার মানুষ তিনি। কিন্তু আজ অবধি মামার সঙ্গে খুব বেশি চলাফেরা হয়নি। দেখা-সাক্ষাৎ হতো বছরে দু-একবার। তাই দেখা হবে শুনলেই নিজের মধ্যে কিছু হাসি জমিয়ে রাখতাম। এরপর কখন মজা করবে, আর কখন একটু পেটপুরে হেসে নিবো সেই অপেক্ষায় থাকতাম।
কয়েক বছর আগে মামার কিডনি দুটো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি মামাকে।
২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর শেষবারের মতো পৃথিবীটা ঝাপসা চোখে দেখেছিলো। এরপর চিরতরে চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।
মামার ছোট ভাই আখিল; সেও বছরখানেক আগে কিডনি রোগে মারা গেছে। চোখের সামনে দুটো মানুষকে বেড়ে উঠতে আর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে দেখলাম।
মৃত্যুর দুদিন আগেই খবর এসেছিলো মামা মারা গেছে। ৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ নানা ব্যস্ততার কারণে চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়নি। পরে শুনলাম; কে যেন বিদেশ থেকে রওনা দেওয়ায় তার জন্য জানাযা একটু দেরিতে পড়বে। সেই রাতে যখন 'জানাযা পড়তে পারিনি' ভেবে আফসোস হচ্ছিলো, ঠিক তখনি এ খবর পেলাম। পরদিন সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে জানালো-মামা মারা যায়নি। বেশ অবাক হলাম। পরে শুনলাম অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাড়িতে মরদেহ আনার পথে সঙ্গে থাকা কেউ একজন বুঝতে পেরেছে ফুসফুস এখনো সচল। এরপর আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
যাই হোক,মনে কিছুটা স্বস্তি এলো। ভাবলাম বাড়ি যেহেতু যাচ্ছি হাসপাতালে গিয়ে একবার দেখে আসবো। ৩১ অক্টোবর রাতে মনে মনে সেই পরিকল্পনাই করছিলাম। কিন্তু রাত ১০টায় আবার খবর এলো- মামা এবার সত্যিই মারা গেছে। নিমিষেই ভেস্তে গেল সব পরিকল্পনা। ওদের বাড়ি থেকে জানালো, জানাযা তিন জায়গায় হবে।
পরদিন সকালে আমরা জানাযার উদ্দেশে রওনা দিলাম। প্রথম জানাযা তার নানার বাড়িতে হয়েছিলো। এরপর নোয়াখালীর মাইজদীতে দ্বিতীয় জানাযা হলো। সেখান থেকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটা সর্বশেষ গন্তব্য গ্রামের বাড়ি শরিফপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আমিও সেই অ্যাম্বুলেন্সে ছিলাম। একেবারে মরদেহের পাশেই বসেছিলাম সেদিন।
শহর থেকে বেশ দূরেই ওদের গ্রামটা। আঁকাবাঁকা পথ ধরে প্রায় ঘন্টাখানেক অ্যাম্বুলেন্স চলছিলো। রাস্তার এবড়োথেবড়ো জায়গাগুলোতে গাড়ি বেশ জোরে ঝাঁকি দিচ্ছিলো। ঝাঁকিতে আমরা স্থির থাকতে পারছিলাম না। খেয়াল করে দেখলাম মরদেহটাও নিথর হয়ে গাড়ি যেদিকে দুলছে সেদিকেই ঝুঁকছে। সম্ভবত এত নিশ্চুপ হয়ে আগে কখনো বাড়ি যায়নি মামা। কারণ, বাড়ি যাওয়ার আমেজটাই তো অন্যরকম।
আজ কত অতিথি যাচ্ছে তাদের বাড়ি। কোথায় সবাইকে মাতিয়ে রাখবে, অথচ নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনো সাড়া শব্দ নেই। যে মেঠোপথে ছোটবেলা থেকে হাজারো স্মৃতি, সেই মেঠোপথটা আজ একবারের জন্য গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখতেও পারছে না। এসব ভাবতেই চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। মামার সঙ্গে করা সব দুষ্টুমিগুলো বারবার মনে পড়ছিলো। খুব নিরবে কাঁদছিলাম তখন। যে মানুষটা দেখা হলেই হাসাতো; আজ সেই মানুষটা কত অদ্ভুতভাবে কাঁদাচ্ছে।
সত্যিই! মানুষের ভালো দিকগুলো মৃত্যুর পর কাঁদায়। আর খারাপ দিকগুলোর জন্য মৃত্যুর পর হয়তো মৃত মানুষটা নিজেই কাঁদে। এই যে আমরা কাঁদছি, মৃত মানুষটা যেমন দেখছে না, তেমনি মৃত ব্যক্তির কান্না বা আনন্দটাও জীবিতরা হয়তো দেখতে পায় না।
২৫ বছর বয়সে জীবনের প্রদীপ এভাবে নিভে যাবে, কে জানতো! শুনেছিলাম শেষ কটা দিন বছরখানেক আগে মারা যাওয়া ছোট ভাই আখিলকে স্বপ্নে দেখতো মামা। আখিল নাকি স্বপ্নে এসে মামাকে ডাকতো ওর কাছে যাওয়ার জন্য। এত তাড়াতাড়ি ছোট ভাইয়ের কাছে চলে যাবে মামা- বোধহয় নিজেও জানতো না।
ইকরার জীবনের অধ্যায় এখানেই শেষ। শুধু পৃথিবীতে রয়ে গেছে তার কিছু স্মৃতি, ছুঁইছুঁই কিছু অপূরণীয় স্বপ্ন, কিছু বন্ধু, আত্মীয় আর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী। এই তো বছরখানেক পর মৃত্যুর দিনক্ষণ সবকিছুই ভুলে যাবো আমরা। কিছুদিন ইকরা সবার আলাপচারিতার কেন্দ্রবিন্দু হবে। এরপর ধীরে ধীরে তার কথা ভুলতে থাকবো আমরা। হঠাৎ কোনো এক আলাপচারিতায় তার কথা আবারও মনে পড়বে। কিন্তু সেদিন আর স্মৃতিচারণ করে কেউ কেঁদে উঠবে না।--------