Tuesday, August 05, 2025

থাইরয়েড কী ?


থাইরয়েড-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 থাইরয়েড কী?

থাইরয়েড হলো গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটি প্রজাপতির মতো দেখতে হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থি। এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া, ওজন, তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন, ঘুম ও মনোভাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।

থাইরয়েডের প্রধান হরমোন:

T3 (Triiodothyronine)

T4 (Thyroxine)

এই হরমোন দুটি শরীরকে সচল রাখেঅর্থাৎ কতটা শক্তি তৈরি হবে, কতটা দ্রুত শরীর কাজ করবে, তা নির্ধারণ করে।

থাইরয়েডের দুই প্রধান সমস্যা:

১. হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism)

যখন থাইরয়েড কম হরমোন তৈরি করে

লক্ষণ:

ক্লান্তিভাব ওজন বেড়ে যাওয়া ঠাণ্ডা লাগা চুল পড়া ও ত্বক শুষ্ক হওয়া মনোযোগে ঘাটতি ও বিষণ্নতা

মূল কারণ:

হ্যাশিমোটো ডিজিজ আয়োডিনের ঘাটতি

থাইরয়েডের আংশিক অপসারণ

২. হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism)

যখন থাইরয়েড অতিরিক্ত হরমোন তৈরি করে

লক্ষণ:

ঘাম হওয়া ও গরম লাগা

দ্রুত হৃদস্পন্দন

ওজন কমে যাওয়া

নার্ভাসনেস বা উদ্বিগ্নতা

ঘুমের সমস্যা

মূল কারণ:

গ্রেভস ডিজিজ

থাইরয়েড নডিউল

অতিরিক্ত আয়োডিন

থাইরয়েড সমস্যা নির্ণয়ের উপায়:

TSH, T3 T4 রক্ত পরীক্ষা

থাইরয়েড স্ক্যান ও আলট্রাসোনোগ্রাফি

অ্যান্টিবডি টেস্ট (Autoimmune সমস্যা শনাক্তে)

চিকিৎসা:

হাইপোথাইরয়েডিজমে: হরমোন রিপ্লেসমেন্ট ওষুধ (যেমন লেভোথাইরক্সিন)

হাইপারথাইরয়েডিজমে: অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ, রেডিওআইডিন থেরাপি বা অপারেশন

যা মনে রাখা জরুরি:

১. থাইরয়েড সমস্যা থাকলে আজীবন নজরদারি দরকার।

২.নিয়মিত রক্তপরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শে চলা উচিত।

৩.নিজের মতো করে ওষুধ শুরু বা বন্ধ করা বিপজ্জনক হতে পারে।

৪.স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।

৫.একটি সুস্থ জীবন শুরু হয় সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতায়।

থাইরয়েডকে অবহেলা নয়জেনে রাখুন, যত্ন নিন!

 

Monday, May 19, 2025

মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করার পদ্ধতি কি?

 


মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করার পদ্ধতি কি?

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

যার উপর মালে নেসাব রয়েছে তাকেই কুরবানী করতে হবে এটি ওয়াবি। মৃত ব্যক্তির উপর কুরবানীর হুকুম বা ওয়াজিব নয়। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের আদেশ। আমাদের সমাজের মধ্যে অনেকটা মতানক্য রয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যায়।বহু আলে-ওলামাগণও তার পক্ষে মত দিয়ে থাকেন। নিম্নে আমি তার কিছু সমাধান দিতে চেষ্টা করছি। জানিনা আপনি কোন পদ্ধতি অনুস্মরণ করবেন।

আহলে হাদীস (Ahl-e-Hadith) মতবাদ অনুসারে, ইবাদতের ক্ষেত্রে তারা কেবলমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং বিদআত বা নব উদ্ভাবিত আমল থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। তাই, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানির বিষয়টি তারা সরাসরি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কিনা তা দিয়ে মূল্যায়ন করে।

মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানী আহলে হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি:

১. জীবিত ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারে।
সাহাবি আবু আইউব আনসারী (রাঃ) বলেন:

فَقَالَ: كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّي بِالشَّاةِ عَنْهُ وَعَنْ أَهْلِ بَيْتِهِ،

রসূল (সা.) জীবিত থাকা অবস্থায় একজন ব্যক্তি তার নিজের ও পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন।” (তিরমিযি: ১৫০৫)

২. মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট করে কুরবানী করার প্রমাণ নেই
আহলে হাদীস স্কলাররা সাধারণভাবে বলেন:

মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্টভাবে কুরবানী করার কোন সহীহ ও প্রামাণিক হাদীস পাওয়া যায় না। সুতরাং এটি করা উচিত নয় যদি না জীবিত ব্যক্তির কুরবানীতে মৃত ব্যক্তিকে শরিক করা হয়।

৩. ব্যতিক্রম ওসিয়ত করা থাকলে
কেউ যদি মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করে যান, তাহলে তার ত্যাজ্য সম্পদ থেকে কুরবানী করা যেতে পারে, যতক্ষণ না তা সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে থাকে।

৪. জীবিত ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করে মৃত আত্মীয়কে সওয়াবের অংশীদার করতে পারেন

قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الأَضْحَى فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مَنْبَرِهِ وَأُتِيَ بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ بِيَدِهِ، وَقَالَ: بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي.

উদাহরণস্বরূপ, রাসূল (সা.) নিজ পক্ষ থেকে কুরবানী করে উম্মতের সকলের জন্য দোআ করতেন। (আবু দাউদ: ২৮১০)

আহলে হাদীসের মতে, সরাসরি মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই তারা এটিকে বিদআত বলে গণ্য করে। তবে, জীবিত ব্যক্তি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করে ইচ্ছা করলে সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করতে পারে এটি দুআ ও ইছালে সওয়াবের অংশ হিসেবে গণ্য হয়।

 

 

হানাফি মাযহাব অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয (বৈধ) এবং সওয়াবের কাজতবে কিছু শর্ত ও প্রেক্ষাপট আছে।

🔹 হানাফি মাযহাবে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করার মাসায়েল:

১. ওসীয়ত থাকলে:

মৃত ব্যক্তি যদি জীবিত অবস্থায় বলে যান যে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হোক, তাহলে তার ত্যাগ করা সম্পদ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব (যদি ত্যাগের এক-তৃতীয়াংশ থেকে সম্ভব হয়)। এ ক্ষেত্রে ওসীয়ত অনুযায়ী তা আদায় করা হবে।

২. ওসীয়ত না থাকলেও:

কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করে, তাহলে এটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে এবং এতে মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছবে। এটি জায়েয এবং নেক আমল।

৩. নিয়্যতের বিষয়:

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করলে নিয়্যত করতে হবে যে, “এই কুরবানীর সওয়াব অমুক মৃত ব্যক্তির রূহের জন্য

৪. মৃত ও জীবিত উভয়ের জন্য:

একটি পশু (যেমন গরু বা উট যেখানে ৭ ভাগ করা যায়) তাতে একজন ব্যক্তি নিজের জন্য এক ভাগ, মৃত আত্মীয়ের জন্য এক ভাগ নিতে পারেন এভাবে নফল কুরবানী করা বৈধ।

🔸 কিছু দলিল ও ফিকহি বক্তব্য:

  • হানাফি ফিকহ কিতাব "আল-হিদায়া" এবং "ফাতাওয়া হিন্দিয়া" তে উল্লেখ আছে
    "يُضَحِّي عَنِ الْمَيِّتِ تَطَوُّعًا وَيَبْلُغُهُ الثَّوَابُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ"
    মৃতের পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করা যায় এবং আল্লাহ চাইলে তার কাছে সওয়াব পৌঁছবে।
  • ওসীয়ত থাকলে: মৃতের সম্পদ থেকে করা ওয়াজিব
  • ওসীয়ত না থাকলে: জীবিত ব্যক্তি নিজের সম্পদ থেকে নফল কুরবানী করতে পারেন জায়েয ও সওয়াবের কাজ

 

মোটকথা মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানীর সহীহ কোন হাদীসে নেই।আছে শুধু মাসয়ালা গ্রন্থের কিছু কিতাবে। সুতরাং না করাই উত্তম।

 

Sunday, May 11, 2025

সত্যের বিজয়

 



সত্যের বিজয়

-এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

 

ত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। এ জন্য ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্যের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। মিথ্যার অনুসরণ ও সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। 

গত ১০মে ২০২৫ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সত্যের উম্মোচন হলো ইতিহাসের মাইল ফলক হয়ে থাকবে যুগ হতে যুগান্তর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় কার্যকর হয়েছে এবং এটি বহাল থাকবে যতক্ষণ না একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দলটির বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

"সত্যের জয় সকল সময় - ইসলামী দৃষ্টিকোণ

বিষয়ে বলতে গেলে কুরআন, হাদীস এবং ইসলামী ইতিহাসের আলোকে বুঝতে হবে ইসলাম সত্যকে কীভাবে মূল্যায়ন করে এবং মিথ্যার পরিণাম কীভাবে চিত্রিত করে। নিচে বিষয়টির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা দেওয়া হলো:

সত্যের জয়: ইসলামী দৃষ্টিকোণ

ইসলামে সত্য (الحقّ) একটি মৌলিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ। কুরআন ও হাদীসে বারবার সত্য বলার, সত্যের পথে থাকার এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও পার্থিব জীবনে কখনও কখনও মিথ্যা সাময়িকভাবে সফল হতে দেখা যায়, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যই শেষপর্যন্ত বিজয়ী হয়।

কুরআনের দৃষ্টিতে সত্যের গুরুত্ব

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا

"বল, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হবারই ছিল।"
(
সূরা আল-ইসরা-১৭:৮১)

এই আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন, সত্য যখন আসে তখন মিথ্যা থাকতে পারে না। মিথ্যা টিকেও না, টেকেও না।

রাসূল (সা.) ও সাহাবাদের জীবন থেকে উদাহরণ

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের পুরোটা জুড়ে সত্যের জন্য সংগ্রাম ছিল। যখন গোটা মক্কা মিথ্যা, মূর্তিপূজা ও অন্যায়-অবিচারে ডুবে ছিল, তখন তিনি একাকী সত্যের ডাক দেন। তাঁর ওপর কঠিন নির্যাতন এসেছিল, কিন্তু তিনি সত্য থেকে বিচ্যুত হননি। পরিণামে আল্লাহ তাঁকে বিজয় দিয়েছেন।

হাদীসের বাণী

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ، وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْـجَنَّةِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا، وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ، وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا.

‘‘তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরো। কারণ, সত্য পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য জান্নাতের পথ। কোন ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বললে এবং সর্বদা সত্যের অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার নিকট সত্যবাদী হিসেবেই লিখিত হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো। কারণ, মিথ্যা পাপাচারের রাস্তা দেখায় আর পাপাচার জাহান্নামের রাস্তা। কোন ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বললে এবং সর্বদা মিথ্যার অনুসন্ধানী হলে সে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার নিকট মিথ্যাবাদী রূপেই লিখিত হয়’’(মুসলিম-২৬০৭)

ইসলামী ইতিহাসে সত্যের জয়

ইসলামের ইতিহাসে অসংখ্য যুদ্ধ, আন্দোলন, বিপ্লব এবং সমাজ সংস্কারে দেখা যায় যারা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সত্যকে আঁকড়ে ধরেছেন, তাঁরাই পরিশেষে বিজয়ী হয়েছেন। বদর যুদ্ধ, হুদায়বিয়ার সন্ধি, ফাতহে মক্কাসব ক্ষেত্রেই সত্যের বিজয়ের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

উপসংহার

ইসলামী দৃষ্টিতে সত্যের জয় নিশ্চিত, যদিও তা কখনো দেরিতে আসে। একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো সত্যের পক্ষে দৃঢ় থাকা, কারণ আল্লাহর সাহায্য সত্যবাদীদের সঙ্গেই থাকে। সাময়িক দুঃখ-কষ্ট থাকলেও চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে বিজয় কেবল সত্যেরই হয়।