ইকরা-১২
‘‘আদর্শ সৈনিকের গুণাবলী’’
শুরুকথা
ইসলাম
শান্তির ধর্ম, কিন্তু সেই শান্তি সবসময় প্রীতির মাধ্যমে
আসেনা। পৃথিবীর মানুষের মধ্যে একদল মানুষ আছে যারা সবসময় পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার, নীপিড়নের মাধ্যমে অশান্তি সৃষ্টি করে। এরা কখনো পরদেশ
দখল বা লুন্ঠনের মাধ্যমে নিজেদের লালসা পুরন করে। দূর্বল মানুষের উপর শক্তির দাপট দেখায়।
ধার্মিককে পরিহাস করে। এবং লাঞ্চিত করে। ইসলাম মানবতার কল্যাণের জন্য যুদ্ধ সমর্থন করে। এই কল্যাণ তথা শান্তি স্থাপনের জন্য
ইসলাম সেনাবাহিনী অর্থাৎ সৈনিকের প্রয়োজন বোধ করে। ইসলামের পরিভাষায় এই সৈনিকদিগকে মুজাহিদ হিসাবে অভিহিত করা হয়। তারা ধর্মের জন্য, সত্যের জন্য, শান্তির জন্য তথা মানবতার কল্যাণের জন্য যুদ্ধ করে থাকেন। কুরআন ও হাদীসে তাদের
বৈশিষ্ট ও গুনাবলীর বর্ণনা আছে।
আমরা
জানি সেনাবাহিনী দেশ রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী দেশের আভ্যন্তরীন বিদ্রোহ বিশৃংখলা দমন এবং বহির শত্রুর আক্রমন প্রতিহত করিয়া
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা বিধান করিয়া থাকেন। সুতরাং সেনাবাহিনীর দায়িত্ব
ও কর্তব্য অপরিসীম এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিককে হইতে
আদর্শবান, চরিত্রবান, ধৈর্য্যশীল ও দৃঢ়মনোবল সম্পন্ন, তাই কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করিতে গিয়া যেসব বৈশিষ্ট ও গুনাবলী দরকার তা আলোচনা
করব।
মানব
জীবনের একটি শ্রেষ্ট জীবন হচ্ছে সৈনিক জীবন। সৈনিক জীবন হচ্ছে মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত।
সৈনিক হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সর্বভ্যেমত্ব রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরী ও দেশের শ্রেষ্ট
সম্পদ। জাতির আশা ভরবর্ষার সর্বশেষ আশ্রয় সুতরাং একজন
আদর্শ সৈনিক আমাদের সকলের কাম্য। আদর্শ
সৈনিক কিভাবে হওয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করা। আমরা জানি আদর্শ সৈনিক নানবিধ গুণ রয়েছে।
একজন
আদর্শ সৈনিকের অন্যতম গুণ হচ্ছে সততা, ন্যায়পরায়নতা, উদ্দামী, জবাবদেহীতা ইত্যাদি। আদর্শ সৈনিক গঠনে
উপরে উল্লেখিত গুণ গুলির শমাবেস থাকলেই সে আদর্শবান হতে পারে। ইসলাম একটি সাশত জীবন
বিধান। (Islam
is the Complete code of life)ইসলাম হলো আল্লাহরদেয়া
পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এই পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ হল
দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা। প্রত্যেক নবী ও রাসূল ইকামতে দ্বীনের সৈনিক ছিলেন। ইসলাম ও
দ্বীনের জন্য অনেক নবী ও রাসূলগণকে মাঠে-ময়দানে রক্ত ঝড়াতে হয়েছে।
সুতরাং আমরা আমাদের আলোচনার বিষয় ইসলামের দৃষ্টিতে সৈনিকের গুণাবলী ও কর্তব্য তাইতো কোন কাজ করলে পড়ে উন্নত চরিত্রবান হওয়া যাবে তার নমুনা গ্রহণ করা
আমাদের কর্তব্য।
মহান
আল্লাহ্ সুরায় হজ্জে সৈনিকের মর্যদা তুলে ধরে বলেন,
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ
هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ
إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ
তোমরা
আল্লাহ্র পথে জিহাদ কর যেমনটি করা উচিৎ। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে
তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ধর্মে কায়েম থাক।
তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন। (সূরা হজ্জ-২২/৭৮)
হাদীছে
সৈনিকের উন্নত চরিত্রের কথা বলে এরশাদ করেন-
قَالَ رَسًوْلُ اللهِ (صـ)
لاَ اِيْمَانَ لِمَنْ لاَ اَمَنَةَ لَهُ وَلاَ صَلَوةَ لِمَنْ لاَ طُهُوْرَ لَهُ وَلاَ
دِيْنَ لاَصَلَوةَ لَهُ اِنَّمَا مَوْضِعُ الصَّلَوةِ مِنَ الدِّيْنِ كَمَوضِعِ الرَّاسِ مِنَ
الْجَسَدِ
হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। যার পবিত্রতা নেই, তার নামায নেই। যার নামায নেই তার দ্বীন নেই। গোটা শরীরের
মধ্যে মাথার যে মর্যাদা, দ্বীন ইসলামের নামাযের সে মর্যাদা। (আল মুজামুস ছগীর, কুহাস-১ম ৩৩ পৃঃ)
সুতরাং
আদর্শ সৈনিকের গুণাবলী গুলি তাকে নিজেকে অর্জন করতে হবে। তাহলে মহান আল্লাহ্ তাদের
উপর রহমত নাযিল করবেন।
আদর্শ সৈনিক কাকে বলে ?
আদর্শ
সৈনিকের গুণাবলী ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমাদের জানা উচিৎ আদর্শ সৈনিক
কাকে বলে। একজন সুশৃংখল আনুগত্যশীল, সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন, রুচিশীল, পরি-পাটি, মার্জিত, কর্তব্যপরায়ন, পরিশ্রমী, ধার্মীক, মঙ্গলকামী কাজের প্রতি দরদীমন, চৌকোষ, সময়ানুবর্তীতা উন্নত শারীরিক যৌগত্য সম্পন্ন, নিষ্ঠাবান দক্ষ ইত্যাদি গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তিকে আমরা আদর্শ সৈনিক বলতে পারি।
আদর্শ
সৈনিকের গুন উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন-
الَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ
وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ
دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
আল্লাহর
নিকট তো সেই (মুজাহীদ সৈনিক) লোকদেরই অতি বড় মর্যাদাবান যারা তার পথে নিজেদের ঘরবাড়ী
ছেড়েছে, নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ
করেছে, সুতরাং তারাই সফলকাম। (সূরা তওবা-২২/২০)
অপর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা আরও বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ
يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ
আল্লাহ্
তায়ালা ভালবাসেন সেই লোকদেরকে (আল্লাহর পথের সৈনিক) যারা তার পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে
লড়াই করে, যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীরের
ন্যায়। (সূরা ছফ-৬১/০৪)
সুতরাং
আদর্শ গুণবীর সৈনিক তারই হতে পারে যাদের ঐ
গুনাগুণ দিয়ে অন্য একজন ব্যক্তিকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।
আদর্শ সৈনিক কি ভাবে গঠন করা যায়
একজন
সৈনিক হতে হলে তাকে অনেক গুণের অধিকারী হতে
হয়। একখন্ড লোগাতে যেভাবে আগুণে পুড়িয়ে হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে একটি ধারালো অস্ত্র বানান
হয় ঠিক তেমনি ভাবে একজন সাধারণ মানুষকে ও আদর্শ সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কিছু নিয়ম
মাফিক, কঠোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি মানুষের দুটি রুপ আছে এক তার
বাহ্যিক রুপ দ্বিতীয় তার অভ্যন্তরীন রুপ। অন্যদিকে সৈনিক জীবনের অন্যতম দিকগুলো হলো সামরিক শৃঙ্খলা, একজন সৈনিকের সামরিক শৃঙ্খলা। সুতরাং একজন সৈনিকের দুই ধরণের শৃঙ্খলা যথা-
১। বাহ্যিক বা প্রকাশ্য শৃঙ্খলা
২। আভ্যন্তরীন বা অন্তকরণের শৃঙ্খলা
সুতরাং
যখন একজন ব্যক্তির দুটি দিক বা রুপদুই ধরণের তখন সে প্রকৃত সৈনিক হতে পারে না। উহাহরন- সাণাম দেয়া মনে মনে পছন্দ করেনা। পেছনে
গীবত করে শ্রদ্ধা দেখানো যায় না। দেখলে জোর
করে পা মেরে সেলুট দেয়া, আর পেছনে মনে মনে বকা দেয়া সমুচিৎ কাজ
নয়। সুতরাং এহেন কাজ যারা করে তাদের কে আমরা সৈনিক বলতে পারিনা।
অতএব
ইসলামী জীবন ব্যবস্থা অনুসরণের মাধ্যমে আভ্যন্তরীন আনুগত্য শৃঙ্খলা অর্জন যায়। আর তা অর্জনের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্রতম
সেনাবাহিনীর দল নিয়েও বিশ্ব বিক্ষাত সেনাপতি খালিদ-বিন ওয়ালিদ ৩৪ টি যুদ্ধে জয় লাভ করেছেন।অপর
দিকে জেনারেল তাখির বিন যিয়াদ ৭০০ শত সৈন্য দাল নিয়ে
আটল্যান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করে স্পেন বিজয় করেছেন। মুহাম্মদ
বিন কাসেম কয়েক হাজার সৈন্য নিয়ে জয় করেছিলেন বিশাল উপমহাদেশ ভারত।
সুতরাং
এ সকল বিশ্ব বিখ্যাত বীরদের সেনাবাহিনীর মধ্যে যদি অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক শৃঙ্খলা ও
আনুগত্যের ভারসাম্য না থাকত তাহলে কখনও এত বড় বিজয় ছিনিয়া আনা সম্ভব হতোনা। তাই তো আমরা বলতে পারি যে, আদর্শ সৈনিক দ্বারাই তা সম্ভব হতে পারে।
আদর্শ সৈনিকের গুণাবলী এবং কর্তব্য
একজন
আদর্শ সৈনিকের অনেক গুলি
গুণাবলী ও কর্তব্য রয়েছে।
যেমন-
ক।
আত্মিক
খ।
শারীরিক
গ।
সামাজিক
ঘ।
পারলৌকিক ইত্যাদি । নিন্মে এ চারটি বিষয় আলোচনা
করা হলোঃ
ক। আত্মিক
প্রত্যেক
সৈনিককে নামাযের মাধ্যমে আত্মিক উপকার হতে
পারে আল্লাহ্ ও বান্দার ধম্যকার আনুগত্যের
বাস্তব রূপ ও আল্লাহর সাথে মিরাজ সমতুল্য।
কাজেই আল্লাহকে হাযির-নাযির জেনে অন্তরে আল্লাহরভয় রেখে শুধু আল্লাহরসন্তুষ্টি অর্জনের
জন্য যদি আল্লাহরপ্রতি চরম আনুগত্যের ধ্যান সহ তার হুকুম আদায় করে তবে অবশ্যই
আত্মিক উন্নতি হবে। পবিত্র কুরআনে বলা
হয়-
حم - تَنزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ
الْعَلِيمِ-
অবশ্যই
সফলকাম হয়েছে সেই সমস্ত মুমিনগন (মুজাহিদ সৈনিক) যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাত কায়েমে।(সূরা মুমিনুন-২৩/১-২)
বিখ্যাত
কিতাব এহয়ায় উলুমুদদিনে উল্লেখ আছে-
اَلنَّظَ فَةُ شَطْرُ الاِيْمَانِ
اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ الاِيْمَانِ
পরিস্কার
পরিচ্ছন্নতা ঈমানের শর্ত, আর পবিত্রতার শর্ত হচ্ছে ঈমান
মুসলিম
শরিফের ২২৩নং হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الطُّهُورُ
شَطْرُ الْإِيمَانِ
মোটকথা
শরীরপাক, পোষাকপাক, যে সৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে সে সব সময় পরীস্কার
পরিচ্ছন্ন ও পবিত্রতা অর্জন করবে। ফলে সে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ও প্রফুল্ল ভাবে থাকতে
পারবে।
খ। শারীরিক
একজন মুসলিম সৈনিক নামাযে পরলে তার শারীরিক উপকারিতা
হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়
করতে হলে দৈনিক পাঁচবার উযু বা পবিত্রতা অর্জন করতে হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সৈনিক নামায আদায়
করতে শারীরিক নড়াচড়া হয় তাও স্বাস্থ্যের জন্য
কল্যাণকর। তাছাড়াও মসজিদে গিয়ে নামায
আদায়ের জন্য কিছু হাঁটাচলা করতে হয় তাও শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে ফজরের নামায
পড়ার জন্য ঘুম থেকে জেগে মসজিদে যাতায়াত করে সকালের মৃদুমন্দ বাতাস উপভোগ করা স্বাস্থ্যের
জন্যই বড়ই কল্যাণকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এ কথা অকুন্ঠচিত্তে সমর্থন করে। সুতরাং সৈনিকের
আদর্শ গুণাবলী অর্জন করলে শারীরিক সুস্থ্যতা থাকা চাই।
গ। সামাজিক
নামাযের
সামাজিক উপকারিতা হলো- নামায আদায় মানুষকে নিয়মানুবর্তিতা ও কর্তব্যবোধ শিক্ষা দেয়।
নিয়মিত নামাযী ব্যক্তি কখনো কর্তর্বে অবহেলা
এবং অনিয়ম প্রদর্শন করতে পারেনা। জামাআতের নামায তো এছাড়াও অনেক
উপকারিতা নিহিত রয়েছে।
ঘ। পারলৌকিক
নামাযের
পারলৌকিক উপকারিতা হলো নামায যেহেতু আল্লাহর মহব্বত ও আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম পন্থা, নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ্ ও বান্দার মধ্যে গভীর সম্পর্ক
সৃষ্টি হয়। তাই নামায হচ্ছে আল্লাহরসন্তুষ্টি ও আখিরাতে জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়
বা উসীলা। সুতরাং এ কারণেই নামাযকে আল্লাহর রাসূল (স.) জান্নাতের চাবি বলেছেন।
উপরের
আলোচনা ছাড়াও নিম্মে আমি কতগুলি আদর্শ সৈনিকের গুনাবলীর
কথা আলোচনা করছি।
(১) ঈমানী দৃঢ়তা পোষণ
মুসলিম
সৈনিকের প্রধান শুণাবলী হলো ঈমান। প্রত্যেক সৈনিককে ঈমানের বণে বলীয়ন হতে হবে। মুসলমান
আল্লাহ্ ও রাসূলের উপর বিশ্বাস এবং কুরআন-হাদীস তার জীবনের চলার পথ। দেশের স্বাধীনতা
ও সর্বোভৌমত্ব রক্ষাকল্পে সত্য ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা অন্যায় অসত্যের বিলুপ্তি সাধন, সর্বত্র শান্তি ও
নিরাপত্তা স্থাপনের জন্য সকল প্রচেষ্ট করা। সকল কাজে ঈমানী দৃঢ়তা নিয়ে আগাতে হবে।তাই মহান আল্লাহ কুরআনে
ঘোষণা দেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ
بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ
الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ
وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً بَعِيدًا
হে
ঈমানদারগণ, আল্লাহ্ উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস
স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত
কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহ্ উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে। (সুরা নিসা-৪/১৩৬)
ঈমানের
দৃঢ়তা সম্পর্কে নবী কারিম (সাঃ) এরশাদ করেন-
اِنَّمَا اَعْمَالُ بِالنِّيَاتِ
বুখারী
শরীফের সর্ব প্রথম হাদীসে উল্লেখ করেন যে, সকল কাজের মূল হল নিয়ত। (সহীহ বুখারী-০১)
(২)সদুদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীতে যোগদান
মুসলমান
মাত্রই প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হইবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যে কাজের উদ্দেশ্য আল্লাহর
সন্তুষ্টি নয় তাহা ধর্মীয় হইলেও সাংসারিক হিসাবে
গন্য হইবে। আর যে কাজের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন তা সাংসারিক হইলেও ইবাদত
হিসাবে গন্য হইবে। সুতরাং একজন ঈমানদার সৈনিকের ও কর্তব্য তাহার সৈনিক বৃক্তির মত মহান
পেশার উদ্দেশ্য হইবে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ-
قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ
وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আপনি
বলুন হে রাসূল (সাঃ) আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্যে। (সুরা আনআম-৬/১৬২)
নিয়ত
ও মনোবলের ইচ্ছা আকাংখার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (স.) এরশাদ করেন,
اِنَّ اللهَ لاَ يَنْظُرُ اِلَىْ صُوَرِكُمْ وَاَمْوَالَكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ اِلَىْ قُلُوْبِكُمْ وَاَعْمَالِكُمْ-
নিশ্চয়ই
আল্লাহ তোমাদের চেহারা সুরাত ও ধন-দৌলতের দিকে তাকান না বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কার্যাবলীর
দিকে তাকান। (মুসলিম-২৫৬৪, রিয়াদ-১ম-০৫পৃ. ০৭নং হাঃ)
অন্য
একখানা হাদীসে কে কেন উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে তার নিয়ত সেই দেকে যায়। রাসূল বলেনঃ
عَنْ أَبِيْ مُوْسَى عَبْدِ اللهِ بنِ
قيَِسٍ الَأشْعَرِيِّ رَضِي اللهُ عَنْهُ
قَالَ : سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً ،
وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً، وَيُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذَلِكَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ؟
فَقَالَ رَسُولُ اللهً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ
العُلْيَا ، فَهوَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ - مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
হযরত
আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে, আর কেউ আত্মসম্মান ও বংশগত মর্যাদার জন্য লড়াই করে, আবার কেউবা
লোক দেখানোর জন্য লড়াই করে এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে? রাসূল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার (দেশ জাতীর) জন্য লড়াই করে সেই আল্লাহর পথের যুদ্ধা।(বুখারী-১২৩,২৮১০,৩১২৬,৭৪৫৮; মুসলিম-১৯০৪, রিয়াদ-১ম-০৫পৃঃ ০৯নং হাদীস)
প্রিয়
হাবিব রাসূল (স.) বদ নিয়তের পরিনাম সম্পর্কে বলেনঃ শেষ বিচারের দিন সর্ব প্রথম এক ব্যক্তির
বিচার করা হবে যিনি শহীদ হয়েছেন। তাকে দরবারে হাজির করে তার প্রতি আল্লাহর প্রদত্ত
যাবতীয় নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়াহবে এবং
সে ঐ সমস্ত নেয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে
তুমি আমার এসব নেয়ামত পেয়ে কি করছ? আমি আপনার পথে লড়তে লড়তে শেষ পর্যন্ত
শহীদ হয়ে গেছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বীর হিসাবে খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে লড়াই করছো এবং সেখ্যাতি তুমি দুনিয়াতে
পেয়েগেছো অতঃপর তাকে উপুর করে পা ধরে টেনে হিচড়ে দোযখে নিক্ষেপ করার হুকুম দেয়া হবে
এবং এভাবেই সে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর
হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে যে ইলম অর্জন করেছে ইলম শিক্ষা দিয়েছে এবং আল-কুরআন
পড়েছে। তাকে তার প্রতি প্রদত্ত নিয়ামতের কথা
স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে ব্যক্তি এসব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্মরণ করবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে
এসব ভোগের পর তুমি কি করছো ? সে
বলবে, আমি ইলম হাসিল করেছি ইলম
শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য আল-কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি আলিম রূপে খ্যাত হবার জন্য ইলম অর্জন করেছো। তুমি ক্বারী রূপে খ্যাত হবার জন্য কুরআন
পড়েছো। সে খ্যাতি তুমি অর্জন ও করেছো, তারপর ফায়সালা
দেয়া হবে এবং তাকে উপর করে পা ধরে টেনে হিচরে
নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এর
পর হাজির করা হবে এমন এক ব্যক্তিকে যাকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা ও নানারকম ধন সম্পদ দান করেছেন। তাকে তারপ্রতি প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে
এসব নিয়ামত প্রাপ্তি ও ভোগের কথা স্বীকার করবে।
তাকে জিজ্ঞাস করা হবে এসব পেয়ে তুমি কি করেছো? সে বলবে আমি আপনার পছন্দ নীয় যাতেই আমার সম্পদ খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেন তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি
দাতা রূপে খ্যাত হবার জন্যই দান করছো। সে খ্যাতি
তুমি অর্জন করেছো। তারপর ফায়সালা
দেয়া হবে এবং উপর করা অবস্থায় পা ধরে টেনে হিছড়ে তাকে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ( সহীহ মুসলিম)
(৩) সুদৃঢ় সংকল্প ও উন্নত মনোবল
সুদৃঢ়
সংকল্প ও উন্নত মনোবল যুদ্ধক্ষেত্রের সাফল্য প্রধানত সৈনিকদের মনোবল বা সংকল্পের উপর
নির্ভরশীল। মনোবল বা সংকল্প যত সুদৃঢ় ও শক্তিশালী
হইবে সৈনিকের শক্তি সাহস শৌর্য-বীর্য ও বীরত্বের
পরিধিও ততবিস্তৃত হইবে। সুতরাং সৈনিকদের নিজেদের
মহান পেশার গুরুত্ব ও মাহাত্ম এবং আল্লাহর পক্ষ হইতে উহার বিনিময়ে পুরস্কার লাভের কথা স্মরণ
করিয়া নিজেদের মনোবল সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করিবে।
এ সম্পর্কে কুরআনের ঘোষণা হচ্ছেঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ
الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِن يَكُن مِّنكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ
يَغْلِبُواْ مِئَتَيْنِ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّائَةٌ يَغْلِبُواْ أَلْفًا مِّنَ
الَّذِينَ كَفَرُواْ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُونَ
হে
নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত
করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন। (সূরা আনফাল-৬/৬৫)
আমরা
জানি সেনাবাহিনীতে এক কথা আছে যে একটি বুলেট এক শত্রু এটা মনোবলের উপর নির্ভর করে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে উচ্চ মনোবল বিজয় এনেদিতে পারে। তার
জলন্ত প্রামান হচ্ছে বদর, ওহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে ১৯৭১সালের স্বাধীনতার যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে অংশ
নিয়ে উচ্চ ও উন্নত মনোবল নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে।
(৪) শপথ বা অংগীকার রক্ষা
শপথ
বা অংগীকার রক্ষাকরা সততা ও সত্যবাদিতার এক বাস্তব নিদর্শন। অংগীকার ভংগ করা মিথ্যাবাদির
নামান্তর। অংগীকার ভংগ করা জঘন্য অপরাধ। আমরা সকলে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করে মহাগ্রন্থ
আল-কুরআন বা যার যার ধর্মীয় কিতাব নিয়ে শপথ
বাক্য পাঠ করে এসেছি। সুতরাং বাস্তাবে তার প্রতি
ফলন দেখাতে হবে।
শপথ
বা অংগীকার পুরনের জন্য মহান আল্লাহ্ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَوْفُواْ
بِالْعُقُودِ
হে
ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তি সমূহ পূরণ কর। (সূরা মায়িদা-৫/০১)
এমনকি
হাদীসে উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে বলেনঃ
اَيَةُ المُنَافِقِ ثَلَثّ اِذَا حَدَّثَ كَذَّبَ وَعَدَ اَخْلَفَ وَاِذَا اُؤْتُمِنَ خَانَ
মুনাফিকের
আলমত তিনটি যথাঃ
(১) যখন কথাবলে তখন সে মিথ্যা বলে।
(২) যখন সে ওয়াদা করে তখন সে ওয়াদা বঙ্গ করে।
(৩) যখন তার কাছে কোন ব্যক্তি কিছু সম্পদ জামানত রাখে তখন সে তা খেয়ানত করে।
(বুখারী-৩৩,২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; মুসলিম-৫৯,৭৪)
(৫) একতা ও শৃংখলা
ইসলাম
সাম্যের ধর্ম। ইসলামের এই সাম্য দুনিয়ার নজিরবিহীন।
ঈমানদার মুজাহিদগণকে সংকীর্ণ মনোভাব পরিহার
করিয়া একই ভ্রাতৃত্ব বোধে উদ্ধুদ্ধ হইয়া সুদৃঢ়
ঐক্য ও সংহতি গড়িয়া তুলিতে হইবে। সুদৃঢ় বন্ধনে
আবদ্ধ হইয়া সামরিক বিধি নিষেধ ও প্রশিক্ষণ
অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে শৃংখলা স্থাপন করিতে
হইবে। যেমন- আল্লাহ বলেনঃ
وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا
وَلاَ تَفَرَّقُواْ
আর
তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পর¯পর বিচিছন্ন হয়ো না। (সূরা আলে-ইমরান-৩/১০৩)
অন্য
আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ
يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ
আল্লাহ্
তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর। (সুরা সাফ-৬১/০৪)
আল্লাহর
রাসূল বলেন, যে মুসলমান একতা ভঙ্গ করে সে ইসলামের বাইরে চলে যায়। (মিশকাত)
(৬) শারীরিক ও সামরিক শক্তি সঞ্চয় করা
দুশমনের
মনে ভীতি সঞ্চার ও তাদের মুকাবিলা করার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শারীরিক ও সামরিক
শক্তি সঞ্চার করিতে হইবে সত্য ও ন্যায়ের এই জিহাদকে মহানবী (স.) ইসলামের সর্বোচ্চ চুড়া
হিসাবে উল্লেখ করিয়াছেন। আল্লাহ তায়ালা এজন্য যথাসাধ্য শারীরিক ও সামরিক শক্তি সঞ্চার
করার জন্য মুসলিম জাতিকে নির্দেশ দিয়াছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن
قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لاَ تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا
تُنفِقُواْ مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ
আর
প্রস্তূত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে
মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহ্র শত্রæদের উপর এবং তোমাদের শত্রæদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন। বস্তূত: যা কিছু তোমরা ব্যয়
করবে আল্লাহ্র রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। (সূরা আনফাল-৮/৬০)
রাসুলের
হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, ‘‘যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ বিদ্যা শিখিবার পর তাহা ত্যাগ করে সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত
নহে। (সহীহ মুসলিম-)
অন্য
একখানা হাদীসে রাসূল বলেনঃ
قَالَ مَنْ جَهَزَّ غَزِيًا فِىْ سَبِيْلِ اللهِ فَقَدْ غَزَاوَ مَنْ
خَلَقَ غَازِيًا فِىْ سَبِيْلِ اللهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا
যে
ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীকে যুদ্ধ সরঞ্জম দিয়ে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত
করে দেয় সে যেনো নিজেই জিহাদ করলো। আর যে ব্যক্তি
আল্লাহর পথের মুজাহিদদের অনুপস্থিতিতে তার পরিবার পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাগুনা করলো, সেও যেনো নিজেই জিহাদ করলো। (বুখারী-২৮৪৩, কুহাসা-২৪৩পৃঃ)
রাসূল
করিম (স.) শারীরিক ভাবে যুদ্ধের জন্য তৈরী থাকতেন, হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলের নিকটে নিজ স্ত্রীর পর ঘোড়া ব্যতীত অন্য (যুদ্ধ বিদ্যা শিক্ষায় প্রশিক্ষীতঘোড়া)
ছাড়া অন্য কোন জিনিস আদরের ছিল না। (সুনানে নাসাই)
রাসূল
ছিলেন একজন সমরকৌশলী, তিনি উহুদের যুদ্ধে নিজের দেহে দুইটি বর্ম বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় বের হলেন। (সূত্রঃ আবুদাউদ) মোট কথা শারীরিক ও সামরিক শক্তি সঞ্চর
থাকা অতিব প্রয়োজন।
(৭) আমানতদারী
সাধারণ
অর্থে কাহারও নিকট কোন টাকা পয়সা বা মূল্যবান জিনিস গচ্ছিত রাখাকে আমানাত বলে। ব্যপক অর্থে প্রতিনিধিত্ব মূলক ভাবে যাহার
যাহা দায়িত্ব তাহাও আমানত। আমানাতদারী ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করিয়াতোলে মানুষের সামগ্রিক
জীবনকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণকরে তুলে সরকারী কাজ কর্মের সাফল্য ইহার উপরে নির্ভরশীল।
সরকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য হই একটি মহৎগুণ।
আভান্তরীন
বিদ্রোহ বিশৃংখলা ও বহিঃশত্রুর আক্রমন প্রতিহত করতঃ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার দায়িত্বভার জনগন
দেশের সেনাবাহিনীর উপর অর্পণ করিয়া থাকে। ইহা সেনাবাহিনীর নিকট দেশবাশী কর্তৃক অর্পিত
একটি বিরাট আমানাত। জীবনের বিনিময়ে ও এই আমানাতের
রক্ষনাবেক্ষণ করা সেনাবাহিনীর উপর অপরিহার্য কর্তব্য।
সুতরাং
একজন নিষ্টবান ও আদর্শ সৈনিকের কর্তব্য এই যে, অত্যন্ত সততা ও বিশ্বস্ততার সহিত স্বীয়
দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ পালন করিবে। অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কোন রূপ
অবহেলা বা ফাঁকিবাজির আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত নয়। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য জাতীয়
স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়া ঠিক নয়।
আমানত
রক্ষার জন্য কুরআনে নির্দেশ হচ্ছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ
تَخُونُواْ اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُواْ أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ
تَعْلَمُونَ
হে
ঈমানদারগণ, খেয়ানত করোনা আল্লাহ্ সাথে
ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পার¯পরিক আমানতে জেনে-শুনে খেয়নত করনা। (সূরা আনফাল-৮/২৭)
হাদীসে
আমানত সম্পর্কে বলেনঃ
عَنْ
اَبِىْ هُرَيْرَةَ (رضـ) عَنِ النَّبِىِّ
(صـ) قَالَ اَدِّالاَمَانَةَ
اِلَىْ مَنِ انْتَمَنَكَ وَلاَ تَخُنْ مَنْ خَانَكَ
হযরত
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তোমার নিকট আমানত রেখেছে তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি
তোমার আমানত আত্মসাৎ করে তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না। (তিরমিযী-১২৬৪, আবু দাউদ, কুহাসা-৩য়-২৪পৃঃ)
(৮) যথারীতি ধর্ম কর্ম পালন করা
দেশেরক্ষার
মহান দায়িত্ব পালন করার সাথে সাথে ইবাদত বন্দেগীও
যথারীতি পালন করিতে হ¦ইবে। কখনও কোন কারণ বশত উহা পড়িতে না পারিলে পরে কাযা আদায় করিয়া নিবে। ইবাদত
বন্দেগীতে অবহেলা করা যাইবেনা। কেননা আল্লাহ
আমাদেরকে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। মহানবী (স.) ও সাহাবায়ে
আকরাম জীবন ভর শত্রæর মোকাবিলায় লিপ্ত ছিলেন। তাঁহাদের শক্তি ও প্রেরনার উৎস ছিল আল্লাহ পাকের ইবাদত
বন্দেগী তাহারা রাত্রিবেলায় গভীর মনোনিবেশ সহকারে ইবাদত ও বন্দেগীতে রত থাকিতেন। আর
দিনের বেলায় বাঘের ন্যায় দুশমনদের উপর ঝাপাইয়া পড়িতেন।
আল্লাহর
হুকুম নামায ফরয ইবাদত ঈমানদার দের জন্য তার ঘোষণা হচ্ছেঃ
فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ
فَلْيَعْمَلْ عَمَلا صَالِحًا وَلا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
বলুন:
আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম স¤পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।(সূরা কাহাফ-১৮/১১০)
একই
সুরা অন্যত্রে আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا
الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلاَ - خَالِدِينَ فِيهَا لا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلَا
যারা
বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম স¤পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না। (সূরা কাহাফ-১৮/১০৭,১০৮)
হাদীসে রাসূল করিম (স.) বলেন,
قَالَ النَّبِىُّ (صـ) اَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَوةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ
حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُوْرًا وَّبُرْهَانًا وَّنَجَاةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَّمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ تَكُنْ لَّهُ نُوْرًا وَّلاَ نَجَاةَ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَمَانَ وَاُبَىِّ بْنِ خَلَفِ
যে
ব্যক্তি রীতিমত নামায আদায় করতে থাকবে তাদের জন্য কিয়ামতের দিন একটি সূর, অকাট্য দলীল এবং পূর্ণ মুক্তি নির্দিষ্ট হবে। পক্ষান্তরে যে লোক নামায সঠিকভাবে আদায় করবে না, তাদের জন্য নূর, অকাট্য দলীল এবং মুক্তি কিছুই হবে না। বরং কিয়ামতের দিন তার পরিণতি হবে কারুন, ফিরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফ এর সাথে।(আহমদ-, দারেমী, বায়হাকী, কুহাসা-১ম-৩৪পৃঃ)
সুতরাং
সকলে যার যার ধর্ম কর্ম যথা রীতি পালন করবে। ধর্মীয় নিতি যার যার পালন করা তার জন্য
কর্তব্য। সময় পেলে ধর্মীয় বিধান তাকে অধ্যায়ন করা উচিৎ।
(৯) পবিত্রতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জন
একজন
ভাল আদর্শ সৈনিক সব সময় পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন থাকে। ঈমানের দাবী হচ্ছে পরিস্কার হয়ে
চলা। নোংরা বা অপরিস্কার থাকা বাঞ্চনিয় নয়। নামাজের মাধ্যমে এই গুণটি অর্জিত হয়। বিখ্যাত
কিতাব এহয়ায় উলুমুদদিন গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়-
اَلنَّظَ فَةُ شَطْرُ
الاِيْمَانِ اَلطُّهُوْرُ شَطْرُ
الاِيْمَانِ
পরিস্কার
পরিচ্ছন্নতা ঈমানের শর্ত, আর পবিত্রতার শর্ত হচ্ছে ঈমান (মুসলিম-২২৩)
স্বাস্থ্যের
প্রতি খেয়াল রাখিতে হইবে। মনকে খারাপ চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্ত রাখিতে হইবে। আল্লাহ
তায়ালা পবিত্রতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে
বলেনঃ
-إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ
وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ
নিশ্চয়ই
আল্লাহ্ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা-২/২২২)
রাসূল (স.) বলেছেনঃ মনোদৈহিক রোগ থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি পবত্র মন।
পরিচ্ছন্ন
জীবন ও পবিত্রতা সম্পর্কে ব্যক্তিকে ঐ ০৫টি বিষয় সম্পর্কে কদর নেওয়া উচিৎ তা হচ্ছেঃ
(১) বার্ধক্য আসিবার পূর্বে যৌবনের।
(২) রোগ আসিবার পূর্বে সু-স্বাস্থ্য শরীরির।
(৩) দারিদ্র্য আসিবার পূর্বে ঐশ্বার্যের।
(৪) অস্থিরতা আসিবার পূর্বে নিশ্চিয়তার।
(৫) মৃত্যু আসিবার পূর্বে জীবনের।------(তিরমিযি)
এছাড়াও
রাসূলে কারিম (স.) বলেনঃ স্বীয় দেহের প্রতিও তোমার কর্তব্য রহিয়াছে এবং স্বীয় চক্ষের
প্রতিও তোমার কর্তব্য রহিয়াছে। (বুখারী ও মুসলিম)
আধুনিক
বিজ্ঞানেও পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রমাণিত করে। বর্তমান বিজ্ঞানেও পরিস্কার ও পরিচ্ছন্নতার
প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিশেষত রোগ প্রতিরোধ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার
ভূমিকা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আর এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্বন্ধীয় দু‘টি কথা স্মরনীয় তা হচ্ছেঃ
ÔÔPreventton is better than
cureÕÕ প্রতিরোধ রোগ নিরাময়ের চাইতে শ্রেয়।
ÔÔPreventton is cheaper than
cureÕÕ প্রতিরোধ নিরাময়ের চাইতে সস্তা।
সুতরাং
আধুনিক যুগের এই ধ্যান-ধারণাগুলো পবিত্রতা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ ইসলামের মৌল স্বাস্থ্যনীতির অনুস্মরণ মাত্র। (সুত্রঃ
দৈজীই-১৭২পৃঃ)
(১০) উর্ধ্বতন কর্ম কর্তার আনুগত্য
আল্লাহ
তায়ালার দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে এক আদম ও হাওয়া থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাই সকল মানুষ জন্মের
দিক থেকে সম্মান মর্যাদার অধীকারী। কিন্তু কর্মক্ষেত্র ও ধর্মের দিক থেকে সকল মানুষ
সমান নহে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم
مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ
أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা
গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে।
তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুত: তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়
আল্লাহ্ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজরাত-৪৯/১৩)
আল্লাহ
পাক অন্যত্রে আনুগত্য সম্পর্কে বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ
اللَّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُولِي الأَمْرِ مِنكُمْ
হে
ঈমানদারগণ! আল্লাহ্ নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা পরিচালক তাদের আনুগত্য কর। (সূরা নিসা-৪/৫৯)
আল্লাহর
রাসূলের একখানা হাদীসের উদৃতি দিয়ে বলা যায়
যে, আমাকে যে মান্য করে সে আল্লাহকে মান্য করিল। আর যে আমার অবাধ্য হয় সে আল্লাহর ও অবাধ্য হয়। সে শাসনকর্তাকে
মান্য করে সে আমাকে ও মান্য করে যে শাসন কর্তাকে
অমান্য করে সে আমাকে অমান্য করে। নিশ্চয়ই দলপতি
হচ্ছে তোমাদের জন্য ঢাল স্বরূপ। তাহার অনুপস্থিততে তাহার যুদ্ধ বিগ্রহ করিয়া তাহার
প্রতিরক্ষা করে। (বুখারী ও মুসলিম)
(১১) উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী
একজন
সৈনিক মানসিকতা, আচার-ব্যবহার, কথা-বার্তা, চাল-চলন, অঙ্গ-ভঙ্গি ইত্যাদি। যখন সাবলীল হয় মুখে কোন অশ্লীলতা থাকবেনা সকলের সাথে ভদ্র ও নম্র আচরণ করে যে কোন
খারাপ কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকে। তখন আমরা তাকে উত্তম চরিত্রবান সৈনিক হিসেবে ধরে নেই।
তার দ্বারা নামাজ কায়েম করে প্রত্যেকে ভিতরে এসকল উন্নত আদর্শিক গুনাবলি সৃষ্টি করে
আদর্শ সৈনিকে রুপান্তিত করা যায় তার চেষ্টা
করা।
(১২) নিষ্ঠাবান
আদর্শ
সৈনিক মানি অত্যান্ত নিষ্ঠাবান। নামাজের মাধ্যমে এ গুণটি অর্জিত হয়। প্রকৃত পক্ষে আদর্শ
সৈনিক তাদেরকে বলা যেতে পারে, যারা সময়ের প্রতি নিষ্ঠাবান।কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
الَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلاتِهِمْ دَائِمُونَ
ঐ
সকল নামায প্রতিষ্ঠা কারী যারা সময় নিষ্ঠার সাথে সর্বদা নামাজ আদায় করে। (সূরা মায়ারিজ-৭০/২৩)
উক্ত
আয়াতের আলোকে নিম্মের কাজগুলো নিষ্ঠার সাথে করতে হয়।
(ক) প্যারেডের শৃঙ্খলা।
(খ) মনের প্রশান্তি।
(গ) সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করার শিক্ষা।
(ঘ) শিষ্টাচার আত্মসমর্পন বিনয় ও নম্রতা।
(ঙ) আনুগ্যত্য।
(চ) নিরহংকারী।
(ছ) পরোপকারী।
(জ) সত্যবাদী।
(ঝ) ধৈর্য্য শীলতা।
(ঞ) শারীরিক যোগ্যতা ।
(১৩) সালাম বিনিময়
একজন
অপর জনের সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময় করিতে হইবে। কেননা সালাম মুসলমানের প্রাথমিক
বন্ধন। হাদীসে রাসূল (স.) বলেনঃ তোমরা পরস্পর সালামের বেশী বেশী প্রচলন কর। সালামের
মাধ্যমে একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা সৃষ্টি হয় অন্য বর্ণনায় সালামকে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ট
আমল হিসাবে বলা হইয়েছে। সালাম দেয়া সুন্নাত আর জবাব দেয়া ওয়াজিব। সালাম সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ
بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ
حَسِيبًا
আর
তোমাদেরকে যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর; তারচেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ
গ্রহণকারী। (সুরা নিসা-৪/ ৮৬)
অন্য
একখানা হাদীসে আছে, যে প্রথমে সালাম দেয় সে অহংকার মুক্ত। প্রথম যে ব্যক্তি সালাম দেয় সে আল্লাহর
নিকট উত্তম। (বায়হাকী)
শেষকথা
আমাদের
সেনাবাহিনী দেশ মাতৃকার সাহসী সন্তনদের নিয়ে
গঠিত। মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। সেনাবাহিনী জাতীয় আন্তজার্তিক
পরিমন্ডলের অত্যন্ত সুনাম
ও সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ
বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আদর্শগত শুনাবলি যদি আরও বৃদ্ধি করা যায় তাহলে ইনশা আল্লাহ্ আরও উন্নতি হবে। এতক্ষণ ইসলামের দৃষ্টিতে
কয়েকটি গুণাবলী বা বৈশিষ্ট বর্ণনা করা হইল।
এজন
আদর্শ গুণাবলীর অর্জন কারি সৈনিক কখনও ভীতি শংকিত হয় না। পৃথিবীকেই সে ভয় পায়না। একমাত্র
মহাশক্তিশালী আল্লাহর সামনেই তার মাথা নত হয়। একজন আদর্শ সৈনিকের এ গুণটি অর্জিত হয় যে, সৈনিকের মৃতুকে বয় পায় সে কখনও আদর্শ গুণাবলীর সৈনিক হতে পারে না। মাতৃভুমির
স্বাধিনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য
সৈনিক হাসি মুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে। মরলে শহীদ বাচঁলে গাজী। এ বিশ্বাস আর তীব্রতার ঘঠিত হয় সেই ব্যক্তি। অস্ত্রবল, জন-বল দ্বারা মুসলমানরা বিজয় অর্জন করেনি। আল্লাহর পথের ঐ সৈনিক তীব্র ঈমানী শক্তি দিয়ে বিজয়
এনেছে। তাই আসুন আমরা আদর্শ সৈনিকের গুণাবলী গুলি ভাল করে জানি এবং আমলের জন্য চেষ্টা
করি আল্লাহ্ আমাদের সহয় হউন। আমিন\
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com