Thursday, September 17, 2020

‘‘আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা’’


 

‘‘আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা’’


০২. ভুমিকা

                মুহাররম মাস একটি ফজীলতপূর্ণ মাস। পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তায়ালার নিকট মাসের সংখ্যা ১২টি (বারটি) এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যথাঃ মুহাররম, জিলক্বদ, জিলহজ্জ্ব ও রজব। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوْرِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ ﴿التوبة: ٣٦﴾

নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। (সূরা তওবা-৩৬)

০৩. আশুরার সম্মান ও মহত্ব 

হিজরী সনের প্রথম মাস হলো মুর্হারম। এর ১০ম দিবসটি আশুরা হিসাবে পরিচিত। মূলত আশুরা শব্দটি আরবী ‘‘আশারা’’ থেকে এসেছে। আর আশারা শব্দের অর্থ দশ। আশুরার দিবসকে জাহিলী যুগেও আরবের অধিবাসীরা অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাশীল হিসেবে বিবেচনা করত। তারা মুর্হারম মাসে অন্যায়, অবিচার, জুলুম, অত্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি, হানাহানি এবং যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে বিরত থাকত। আর আশুরার দিনে তারা সাওম পালন করত।

 এ দিনে আল্লাহ্ তায়ালা হযরত মূসা (আঃ) ও তার জাতিকে পরিত্রান দান করেন এবং ফিরআউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন। এজন্যে মুসা (আঃ) কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এ দিন সিয়াম পালন করেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنْجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنْتُمْ تَنْظُرُونَ

আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অত:পর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরআউনের লোকদিগকে অথচ তোমরা দেখছিলে। (সুরা বাকারা-২/৫০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ

আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের অনুস্মর করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। (সূরা ইউনুস-৯০)

০৪.  হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ ، بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ ، صَلَاةُ اللَّيْلِ» رواه مسلم-2626

 

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন-রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-রমজান মাসের পরে উত্তম রোজা হলো মুর্হারাম মাসের রোজা। ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের নফল নামাজ।(মুসলিম-২৬২৬.ই.ফা.বা)

০৫. হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا،: أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُوْمُ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، ثُمَّ أَمَرَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ، وَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ

হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার দিন রোজা পালন করতেন। রাসূল (সাঃ) ও এ রোজা পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমজানের রোজা ফরজ হলে তিনি বলেন, যার ইচ্ছা সে আশুরার রোজা পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে পালন করবেনা। (বুখারী-ইফা-১৭৭২; মুসলিম-ই.ফা.-২৫০৮)

মুহতারাম হাজেরীন! ১০-মুহাররম আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে।  যতই আমরা দূরে থাকতে চাইনা কেন অস্তিত্বের টানেই আমাদের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হতে বাধ্য। আবেগ কখনো কখনো আমাদের ঈমানকে শাণিত করে। তবে মাত্রতিরিক্ত আবেগ ঈমানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে বসে। তাই এ সমস্ত আবেগ বর্জন  করে ভাল কাজ করতে হবে।

 ০৬. হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِيْنَةِ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِيْ تَصُوْمُوْنَهُ؟» فَقَالُوْا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيْمٌ: أَنْجَى اللَّهُ فِيْهِ مُوْسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوْسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُوْمُهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوْسَى مِنْكُمْ» فَصَامَهُ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ . رواه البخاري-1878 و مسلم-2527

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মদীনায় এসে দেখেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সিয়াম পালন করে। তিনি তাদেরকে বলেন, এ দিনটির বিষয় কি যে তোমরা সিয়াম পালন কর? তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এদিনে আল্লাহ্ মূসা (আঃ) ও তার জাতিকে পরিত্রান দান করেন এবং ফিরআউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন। এজন্যে মুসা (আঃ) কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এ দিন সিয়াম পালন করেন। তাই আমরা এদিন সিয়াম পালন করি। তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, মূসার (আঃ) বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশী এর পর তিনি এ দিবসে সিয়াম পালন করেন এবং সিয়াম পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। (সহীহ বুখারী-১৮৭৮ই,ফা, সহীহ মুসলিম-২৫২৭ ই.ফা.বা)

 ০৭. হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلَّا هَذَا الْيَوْمَ: يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَهَذَا الشَّهْرُ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে এ সওম ছাড়া অন্য কোন সওমকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। আর তা হল আশুরার সওম ও এই রমজান মাসের সওম। (সহীহ বুখারী-ইফা-১৮৮০, ইসে-১৮৬৫)

০৮.  হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، يَقُوْلُ: حِيْنَ صَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا: يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ» قَالَ: فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ، حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ــ رواه  المسلم-2537

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন আশুরার সিয়াম পালন করেন এবং সাহাবীদেরকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! ইহুদী ও নাসারাগণ এ দিনকে সম্মান করে থাকে। এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। রাবী বলেন আগামী বছর আসার আগে রাসূল (সাঃ) দুনিয়া থেকে চলে গেলেন (ইন্তেকাল করলেন)। (সহীহ মুসলিম-২৫৩৭ ই.ফা)

০৯. আশুরার সিয়ামের ফজিলতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ» رواه مسلم-2626

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন -রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-রমজান মাসের পরে উত্তম রোজা হলো মুর্হারাম মাসের রোজা। ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের নফল নামাজ। (সহীহ মুসলিম-২৬২৬.ই.ফা.বা)

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ؟ فَقَالَ: «يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ»وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ». رواه مسلم-2617

আমি আশা করি যে, আশুরার দিনে রোযা রাখলে পেছনের এক বছরের গোনাহ ক্ষমা হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম-২৬১৭,ই.ফা.বা)

১০. পূর্ব যুগে সংঘটিত কিছু ঘটনা

                পূর্ববর্তী নবীগণের যুগে ঘটেছে এমন অনেক সত্য ঘটনা আশুরার দিনের সাথে সম্পর্ক করা হয়, যার সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি বলে আমরা এখানে উল্লেখ করলাম না। তবে মূসা (আঃ) ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে ছিলেন এবং সে ও তার দলবল নদীতে ডুবে মরে ছিল। এটি এই দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে সহীহ হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য যেসব ঘটনার কথা বলা হয়, তাও সত্য ঘটনা। কিন্তু এর সাথে আশুরার দিনের সম্পর্ক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

১১. কারবালার ঘটনা

                রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তিকালের প্রায় ৫০ বছর পর হিজরী ৬১ সালে কারবালার ময়দানে জান্নাতী যুবকদের নেতা রাসূল (সাঃ)-এর প্রিয় নাতী ইমাম হুসাইন (রাঃ) আশুরার দিনে (১০ই মুহাররাম) শাহাদাত বরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম উম্মার জন্যে এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। ইমাম হুসাইন (রাঃ) সত্য, ন্যায় তথা রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই ইমাম হোসাইন ও তার পরিবারের ১৯ জন সহ মোট ৭২ জন নবী প্রেমিক সাথীসহ সপরিবারে শাহাদত বরণ করেছিলেন। নবী পরিবারের উপর এটি ছিল বড় নির্মম ঘটনা।

১২.দশই মুহাররামের তাৎপর্য

১০-ই মুহাররাম কারবালা ট্রাজেডির পূর্ব থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তাৎপর্যের কারণগুলো হলঃ (জাল-যঈীফ হাদীসের সমন্নায়)

১.এ দিনেই আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টির সূত্রপাত করেন এবং  এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

২.এ দিনেই হযরত আদম (আঃ)-এর তওবা কবুল করা হয়।

৩.এ দিনেই হযরত মুসা (আঃ) ও ফিরাউনের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা হয়।

৪. এ দিনেই হযরত ঈসা (আঃ) আসমানে উত্থিত হন।

৫.এ দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের আগ্নিকুন্ড থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসেন।

৬.এ দিনেই হযরত ইউসুফ (আঃ) কূপ থেকে উদ্ধার হন।

৭.এ দিনেই হযরত আইয়ুব (আঃ) রোগ মুক্তি লাভ করেন।

৮.এই দিনে রমজানের রোজা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা ফরয ছিল। (বুখারী; ইফা-১৭৭২, ১৮২৪, মুসলিম; ইফা-২৫০৮, ১৯১৯)

৯.এ দিনের রোজা  রাসুল (স.) কখনো ছাড়তেন না। (নাসাঈ)

১০.এ দিনের রোজা পুর্ববর্তী এক বছরের রোজার কাফফারা স্বরুপ হয়। (সহীহ মুসলিম-২৬১৭,ই.ফা.; ইবনে মাজাহ )

১১.এ দিনে হযরত ইদ্রিস (আঃ)-কে উঁচু স্থানে উঠিয়েছেন।

১২.এ দিনে হযরত নূহ (আঃ)-কে কিশতী হতে বের করেন।

১৩.এ দিনে মুসা (আঃ)-কে তওরাত প্রদান করেন।

১৪.এ দিনে ইউসুফ (আঃ)-কে জেলখানা হতে বের করেন।

১৫.এ দিনে ইয়াকুব (আঃ)-এর চোখের জ্যোতি ফেরত দেন।

১৬.এ দিনে আইয়ুব (আঃ)-এর বিপদ দূর করেন।

১৭.এই দিনে হযরত ইউনুস নবী মাছের পেট থেকে বের করেন।

১৮.এ দিনে হযরত দাউদ (আঃ)-কে মাফ করেন।

১৯. এ দিনে হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে বাদশাহী দান করেন। উমদুল কারী-১১/১১৭-১১৮পৃ.; বায়হাকী-২৩৭নং হাঃ; (আশুরা.কা-লেখক-আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল- ৫৬,৫৭পৃ.)

১৩. আশুরার শিক্ষা

                আশুরার দিবসে সংঘটিত মুসা (আঃ) ও ফিরাউনের ঘটনা থেকে আল্লাহর কুদরত বা অসীম ক্ষমতার কথা অনুভব করতে পারি। যারা আল্লাহর হুকুম পালন করে তাদেরকে তিনি সাহায্য করেন এবং যারা তাঁর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সাময়িক ভাবে খুব ক্ষমতাসীন হলেও শেষ পর্যন্ত আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায় না। কারবালার ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, সর্বদা নিজের জান বাঁচানো ফরয নয়; বরং প্রয়োজনে সত্য ও ন্যায়ের জন্য জীবন দেওয়া ফরয। যুদ্ধ থেকে পলায়ন করা হারাম।

১৪. অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধেও  যুদ্ধ হতে পারে। কারণ ইমাম হুসাইন (রাঃ) যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ছিলেন তারা সবাই ছিল মুসলিম। দ্বীন ইসলামের জন্যে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা নিজের জীবন বিলিয়ে দেন তাদের জন্যেও মাতম করা যাবে না। কারণ সাহাবীগণ ইমাম হুসাইনের জন্য কোনো মাতম করেননি।

১৫. মুহাররম মাসে আমাদের করণীয়

মুহাররম মাসে বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফার করা-(জামে তিরমিজি-৭৪১) এবং সিয়াম পালন করা-(সহীহ মুসলিম-২৬২৬.ই.ফা.; ইবনে মাজাহ-১৭৩৮; তিরমিজী-৭৫২)। বিশেষ করে আশুরার দিনে এবং সেই সাথে তার আগে বা পরে একদিন (৯ ও ১০  এবং ১১ আশুরা) সিয়াম পালন করা।

১৬. আশুরার দিনে করনীয় আমল

আশুরার দিনে করনীয় আমল সমুহ যা সহীহ ও যয়ীফ হাদীস দ্বারা প্রমান পাওয়া যায়।

১.পরিবার পরিজনের জন্য উত্তম আহারের ব্যবস্থা করা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، وَعَنْ أَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ وَسَّعَ عَلَى أَهْلِهِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهِ "قَالَ الشَّيْخُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: فَرُوِيَ مِنْ وَجْهَيْنِ آخَرَيْنِ عَنْ جَابِرٍ، وَأَبِي هُرَيْرَةَ مَرْفُوعًا (بيهقي فى شعب الايمان-3513-3514-المعجم الوسط للطبرني-9302-امالى ابن بشران-الجزء الثانى-1584-ترتيب الاماللى الخميسية للشجرى-1793-1821-1832-) وَذَلِكَ مَجْرَبِ لِلْبِرَكَةِ وَالتَّوْسِعَةِ قَالَ جَابِرٍ الصَّحَابِيْ: جَرَبَنَاهُ فَوَجَدْنَاهُ صَحِيْحًا وَقَالَ اِبْنِ عَيْيَنِةَ: جَرِبَنَاهُ خَمْسَيْنِ أَوْ سِتَّيْنِ سَنَةً وَقَالَ ابْنِ حَبِيْبَ أَحَدَ أِئْمَةُ الْمَالِكَيْةُ : لَا تَنْسَ يَنْسُكَ الرَّحْمَنِ عَاشُوْرَا. . . وَاذَكَرَهُ لَا زِلَّتَ فِيْ الَأَخْبَارِ مَذْكُوْرَ ا(فيض القدير-9075)

হজরত আবু সাঈদ কুদুরী (রাঃ) হতে বর্নিত,তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবারের জন্য উত্তম আহারের ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ সারা বছর তাদের জন্যে উত্তম আহারের ব্যবস্থা করবেন।  (বায়হাকী-৩৫১৪, তাবারানী-৯৩০২; মেশকাত-১৯২৬;  সহীহ ও যয়ীফুল জামে-আলবানী হা: নং ৫৮৭৩; আলবানী এই হাদীসটিকে যঈফ  বলেছেন)

২.চোখে সুরমা ও গোসল করা

হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنِ اكْتَحَلَ بِالْإِثْمِدِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ لَمْ يَرْمَدْ أَبَدًا»جُوَيْبِرٌ ضَعِيْفٌ (بيهقي فى شعب الايمان-3517-فضائل الاوقات للبيهقى-246)

 যে ব্যক্তি আশুরার দিনে চোখে সুরমা লাগাবে, সে বছর তার চোখে উঠবে না। (চক্ষুপ্রদাহে আক্রান্ত হবে না) আর যে আশুরার দিনে গোসল করবে সে বছর তার কোন অসুখ হবে না। (বায়হাকী-২৪৬; বায়হাকী ফি শুআইবুল ঈমান-৩৫১৭; আলবানী (রহঃ)-এর লেখা সহীহ ও যঈফুল জামে আলবানী-হা: নং ৫৪৬৭  ও সিলসিলা যঈফা: ২/৮৯ দ্রঃ)

১৭. মুহাররম উপলক্ষে বর্জণীয় কাজ সমূহ

(ক) তাযিয়া

ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর কথা স্মরণ করে, কারবালার কথা স্মরণ করে যা কিছু করা হচ্ছে যেমনঃ মাতম করা, বুক চাপড়ানো (শিকল বা প্রভৃতি দিয়ে শরিরে আঘাত করা) হায় হুসাইন, হায় হুসাইন, ইয়া আলী! বলে আবেগ জাহির করা, শোক মিছিল করা, তাজিয়া বের করা। এগুলো হচ্ছে বিশেষ কোন সম্পদায়ের সৃষ্টি করা রুসম এবং কুসংস্কার। তাজিয় সর্বপ্রথম আব্বাসীয় বাদশাহ মতীউল্লাহ এর যুগে মিশরের আমীর মুইজ্জুদ্দৌলা ৩৫২ হিজরিতে মিশরে চালু করেছিল। (আশুরা.কা-লেখক-আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল ৪৫পৃ.) কুরআন-হাদীসে এসবের কোন ভিত্তি  খুজে পাওয়া যায় না।

১৮. (খ) ঢাকঢোল ও বাজনা বাজানো

আশুরার দিনে এবং তার আগে ঢাক ঢোল আর বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন শরীয়ত বিরোধী। এ দিবসকে কেন্দ্র করে ঢোল, তবলার আওয়াজ আর জারী ও কাওয়ালীর সুর নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الْجَرَسُ مَزَامِيْرُ الشَّيْطَانِ» رواه مسلم-5366

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَصْحَبُ الْمَلَائِكَةُ رِفْقَةً فِيْهَا كَلْبٌ أَوْ جَرَسٌ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد-

ফেরেশতাগণ ঐ সব লোকদের সাথী হন না, যাদের সাথে কুকুর ও  বাদ্যযন্ত্র থাকে। (আবু দাউদ, হাদীস নং-২৫৫৫)

১৯. (গ) আহাযারী করা বা মর্সিয়া (শোক গাথা) পাঠ

কিছু লোক এ দিনে হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে আহাজারী করতে থাকে, বুক চাপড়াতে থাকে। এটাও গোনাহের কাজ এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ وَشَقَّ الْجُيُوبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ» رواه البخاري-1217-1219-3268 و مسلم-187)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (মৃতের জন্য) নিজের গালে চপেটাঘাত করে, জামা-কাপড় ছিড়ে মাতম করে এবং জাহিলী যুগের মানুষের ন্যায় চিৎকার (বিলপ) করে, সে আমাদের দলর্ভূক্ত নয়। (সহীহ বুখারী-১২১৭,১২১৯,৩২৬৮ ই.ফা, সহীহ মুসলিম-১৯৩ ই.সে)

২০. (ঘ) শোক পালন

শোক পালনের ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে যে, স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীদের জন্য চার মাস দশ দিন এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুতে তিন দিন পর্যন্ত শোক পালনের বিধান রয়েছে।

عَنْ أُمِّ حَبِيْبَةَ وَزَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشِ عَنْ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثِ لَيَالٍ إِلَّا عَلَى زَوْجٍ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا» رواه البخاري-1206 و مسلم-3593)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা জায়েজ নয়। শুধু স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। (সহীহ বুখারী-১২০৬ ই.ফা; সহীহ মুসলিম-৩৫৯৩ ই.ফা)

২১. উপসংহার

        সম্মানিত হাজেরীন! পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মুহাররম মাস একটি মর্যাদাবান মাস। আর এই মাসের উল্লেখযোগ্য দিন হলো ১০ই মুহাররম আশুরার দিন। উপরের বর্ণনা মোতাবেক আমরা এই মাস ও দিনের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে চলব। এবং যাবতীয় কুসংস্কার থেকে বিরত থাকব।

২২. প্রিয় উপস্থিতি! আমাদের অনেক ভাই আশুরার সঙ্গে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাকে একাকার করে ফেলে। তাদের ধারণা কারবালার ময়দানে মুহাররমের ১০ তারিখে হযরত হুসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করার কারণেই এই রোজা  রাখার বিধান এসেছে। আসলে আশুরার রোজার সঙ্গে কারবালার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা রাসুল (স.)-এর ইনতিকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরীর ১০ মুহাররমের ঘটনা অনুষ্ঠিত হয়।

সুতরাং ইমাম হুসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাত নিঃসন্দেহে তার উঁচু মাকাম ও উচ্চমর্যাদার বিষয়। আমাদের জন্য অত্যন্ত এক হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি। মহান আল্লাহ আমাদের এই বিষয় থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দিন। আমিন!!

  

 

আশুরা সম্পর্কে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ হাদীস

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كُتِبَتْ لَهُ عِبَادَةُ سِتِّينَ سَنَةً بِصِيَامِهَا وَقِيَامِهَا، وَمَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ أُعْطِي ثَوَابَ عَشَرَةِ آلَافِ مَلَكٍ، وَمَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ أُعْطِي ثَوَابَ أَلْفِ [ص:441] حَاجٍّ وَمُعْتَمِرٍ، وَمَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ أُعْطِي ثَوَابَ عَشَرَةِ آلَافِ شَهِيْدٍ، وَمَنْ صَامَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ كُتِبَ لَهُ أَجْرُ سَبْعِ سَمَاوَاتٍ، وَمَنْ أَفْطَرَ عِنْدَهُ مُؤْمِنٌ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ فَكَأَنَّمَا أَفْطَرَ عِنْدَهُ جَمِيعُ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، وَمَنْ أَشْبَعَ جَائِعًا فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ فَكَأَنَّمَا أَطْعَمَ جَمِيْعَ فُقَرَاءِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَشْبَعَ بُطُونَهُمْ وَمَنْ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِ يَتِيمٍ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ رُفِعَتْ لَهُ بِكُلِّ شَعْرَةٍ عَلَى رَأْسِهِ دَرَجَةٌ فِي الْجَنَّةِ» قَالَ: قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: يَا رَسُوْلَ اللَّهِ، لَقَدْ فَضَّلَنَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، قَالَ: «نَعَمْ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَالْأَرَضِيْنَ كَمِثْلِهِ، وَخَلَقَ الْعَرْشَ فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَالْكُرْسِيَّ كَمِثْلِهِ، وَخَلَقَ الْجِبَالَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ وَالنُّجُومَ كَمِثْلِهِ، وَخَلَقَ الْقَلَمَ فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ وَاللَّوْحَ كَمِثْلِهِ، وَخَلَقَ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ وَمَلَائِكَتَهُ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَخَلَقَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَحَوَّاءَ كَمِثْلِهِ، وَخَلَقَ الْجَنَّةَ فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَأَسْكَنَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَوُلِدَ إِبْرَاهِيمُ خَلِيْلُ الرَّحْمَنِ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَنَجَّاهُ اللَّهُ مِنَ النَّارِ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَفَدَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَأَغْرَقَ فِرْعَوْنَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَرَفَعَ إِدْرِيسَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَكَشَفَ اللَّهُ عَنْ أَيُّوبَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَرَفَعَ عِيْسَى بْنَ مَرْيَمَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَوُلِدَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَتَابَ اللَّهُ عَلَى آدَمَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَغَفَرَ ذَنْبَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي يَوْمِ عَاشُورَاءَ، وَأُعْطِيَ مِلْكُ سُلَيْمَانَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَوُلِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَاسْتَوَى الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى الْعَرْشِ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، وَيَوْمُ الْقِيَامَةِ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ» [ص:442] قَالَ الْقَاضِي أَبُو بَكْرٍ: اسْتَوَى مِنْ غَيْرِ مَمَاسَّةٍ وَلَا حَرَكَةٍ كَمَا يَلِيْقُ بِذَاتِهِ. قَالَ الشَّيْخُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: هَذَا حَدِيْثٌ مُنْكَرٌ، وَإِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ بِمَرَّةٍ وَأَنَا أَبْرَأُ إِلَى اللَّهِ مِنْ عُهْدَتِهِ، وَفِي مَتْنِهِ مَا لَا يَسْتَقِيمُ وَهُوَ مَا رُوِيَ فِيهِ مِنْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرَضِينَ وَالْجِبَالِ كُلِّهَا فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ وَاللَّهُ تَعَالَى يَقُوْلُ: {اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ} وَمِنَ الْمُحَالِ أَنْ تَكُوْنَ السِّنَّةُ كُلُّهَا فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ فَدَلَّ ذَلِكَ عَلَى ضِعْفِ هَذَا الْخَبَرِ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ، وَاخْتَلَفُوا فِي صَوْمِ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ، هَلْ كَانَ وَاجِبًا فِي الِابْتِدَاءِ ثُمَّ نُسِخَ أَوْ لَمْ يَكُنْ وَاجِبًا قَطُّ؟ فَمَنْ زَعَمَ أَنَّهُ كَانَ وَاجِبًا فِي الِابْتِدَاءِ ثُمَّ نُسِخَ اسْتَدَلَّ بِمَا (فضائل الاوقات للبيهقي-237)

النَّوْع الثَّالِث: لِمَ سُمِّيَ الْيَوْم الْعَاشِرَ عَاشُوْرَاء؟ اخْتلفُوا فِيْهِ، فَقِيْلَ: لِأَنَّهُ عَاشِرَ الْمُحَرَّمَ، وَهَذَا ظَاهِرُ، وَقِيْلَ: لِأَنَّ اللهَ تَعَالَى أَكْرَمَ فِيْهِ عَشَرَةَ مِنْ الْأَنْبِيَاءِ، عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ بِعَشَرِ كَرَامَاتِ. اَلأوَّلُ: مُوْسَى عَلَيْهِ السَّلَام، فَإِنَّهُ نَصَرَ فِيْهِ، وَفَلَقَ الْبَحْرِ لَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَجُنُوْدِهِ . اَلثَّانِي: نُوْحٍ عَلَيْهِ السَّلَام اِسْتَوَتَ سَفِيْنَتَهُ عَلَى الْجُوْدِيْ فِيْهِ. اَلثَّالِثُ: يُوْنُسٍ، عَلَيْهِ السَّلَامَ، أَنْجِيْ فِيْهِ مِنْ بُطُنِ الْحُوْتِ. اَلرَّابِعُ: فِيْهِ تَابَ اللهُ علَىَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامَ، قَالَهُ عِكْرِمَةِ. اَلْخَامِسُ: يُوْسُفَ عَلَيْهِ السَّلَامَ، فَإِنَّهُ أُخْرِجَ مِنْ الْجِبَ فِيْهِ. اَلسَّادِسُ: عِيْسَى عَلَيْهِ السَّلَامَ، فَإِنَّهُ وَلَدَ فِيْهِ، وَفِيْهِ رَفْعُ.  اَلسَّابِعُ: دَاوُدَ، عَلَيْهِ السَّلَامَ، فِيْهِ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ. اَلثَّامِنُ: إِبْرَاهِيْمَ، عَلَيْهِ السَّلَامَ، وَلَدَ فِيْهِ. اَلتَّاسِعُ: يَعْقُوْبَ، عَلَيْهِ السَّلَامَ، فِيْهِ رَدَّ بَصَرْهُ. اَلْعَاشِرَ: نَبِيَّنَا مُحَمَّدً، صَلِّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِيْهِ غَفَرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخّرَ. هَكَذَا ذَكَرُوْا عَشَرَةَ مِنْ الْأَنْبِيَاءُ، عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ. قَلَتْ: ذَكَرَ بَعْضَهُمْ مِنْ الْعَشْرَةَ: إِدْرِيسً، عَلَيْهِ السَّلَامَ، فَإِنَّهُ رَفَعَ إِلَى مَكَان فِي السَّمَاءِ، وَأَيُوْبَ، عَلَيْهِ السَّلَامَ، فِيْهِ كَشَفَ اللهُ ضُرَّهُ، وَسُلَيْمَانُ؟ عَلَيْهِ السَّلَامَ، فِيْهِ أَعْطِيْ الْمُلْكً.(عمدة القارى-جلد-11-صفحة-117-118)

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com