‘‘আল-কুরআন মানবতার মুক্তির সনদ’’
০২. ভুমিকা
পবিত্র আল-কুরআন মাজীদ আল্লাহ তায়ালার বাণী। মহান
আল্লাহ মানব জাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল আসমানী কিতাবসহ প্রেরণ
করেছেন। তার মধ্যে আল-কুরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর
প্রতি আল্লাহর নিকট হতে জিব্রাইল (আঃ)-এর মারফত সুদীর্ঘ (২৩) তেইশ বছর ধরে অবতীর্ণ
হয়। আল-কুরআন সকল মানুষের মুক্তির দিশারী বা গাইড লাইন।
০৩. ইহকালীন শান্তি
ও পরকালীন মুক্তির যা কিছ‚ দরকার আল-কুরআনে সব কিছুর নিদর্শন রয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ
“আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যেটি এমন যে, তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের
জন্যে সুসংবাদ।” (সুরা নাহল-৮৯)
০৪. পবিত্র কুরআন মানব জাতির জন্য একটি
পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।
নবী (সাঃ)-এর প্রতি
অবতীর্ণ আল-কুরআন
মানুষ ও জ্বীন জাতির
হিদায়াতের জন্য নাজিলকৃত কিতাব হচ্ছে আল-কুরআন
যা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ভাষায়,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۙ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ
بَالَهُمْ ﴿محمد: ٢﴾
“আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে
বিশ্বাস করে, আল্লাহ্ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।” (সূরা মুহাম্মদ-০২)
০৫. অপর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا
لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ
يُؤْمِنُونَ ﴿النحل: ٦٤﴾
“আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিষ্কার বর্ণনা
করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে।” (সুরা নাহল-৬৪)
০৬. আল-কুরআন নির্ভুল গ্রন্থ
কুরআনুল করিম এমন একটি গ্রন্থ, যার মধ্যে ভুলত্র“টি নেই, এবং যার মধ্যে কোন রকম সন্দেহের অবকাশও নেই। এর বিশুদ্ধতার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে
মহান আল্লাহ বলেন,
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ ﴿البقرة: ٢﴾
এ সেই কিতাব যাতে কোনই
সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী মুত্তাকীদের (পরহেযগারদের) জন্য। (সূরা আল-বাকারা-০২)
তাই কুরআন নাযিলের
শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কেউ কোন রকমের ভুলত্রæটি বের করতে সক্ষম হয়নি। কিয়ামত পর্যন্ত কেউ
ভুল দেখাতে পারবে না।
০৭. আসমানী গ্রন্থ আল-কুরআন
আল-কুরআন সম্পূর্ণ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত আসমানি কিতাব, যার প্রতিটি অক্ষর, শব্দ আল্লাহ প্রদত্ত।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ هَٰذَا الْقُرْآنُ أَن يُفْتَرَىٰ مِن دُونِ اللَّهِ وَلَٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ
وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ ﴿يونس: ٣٧﴾
“আর কুরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে
এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোন সন্দেহ নেই-
তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে।” (সূরা ইউনুস-৩৭)
০৮. পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের সমর্থক
আল-কুরআন শুধু মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উম্মতের পথ প্রদর্শক নয় বরং আগের সকল আসমানী গ্রন্থের
সত্যায়নকারী। মহান আল্লাহ বলেন,
نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ
مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ- مِن
قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ
لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ
“তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী
কিতাবসমূহের। নাযিল করেছেন তওরাত ও ইঞ্জিল,
এ কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন মীমাংসা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ্র
আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।” (সূরা আলে ইমরান-৩-৪)
০৯. কুরআনের চ্যালেঞ্জ
আল-কুরআন আল্লাহর বাণী কোন মানুষের বাণী নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়লা বলেন,
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ
مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
﴿هود: ١٣﴾
“তারা কি বলে? কুরআন তুমি তৈরি করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরি করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাকে পার ডেকে
নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।” (সূরা হুদ-১৩)
১০. অপর অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তায়লা বলেন,
قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنسُ وَالْجِنُّ
عَلَىٰ أَن يَأْتُوا بِمِثْلِ هَٰذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ
وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ﴿الإسراء: ٨٨﴾
“বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের
সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।” (সূরা বনী ইসরাঈল-৮৮)
১১. অপর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়লা বলেন,
وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا
عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ
وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿البقرة: ٢٣﴾
“এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা
রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সে সব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও-এক আল্লাহ্কে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী
হয়ে থাক।” (সূরা আল বাক্কারাহ্-২৩)
১২. পৃথিবীর সকল মানুষ
শ্রেষ্টা করেও কুরআনের সূরার মত সূরা কিংবা আয়াত তৈরী করতে সক্ষম হবেনা। তাই আল্লাহ
নিজেই জবাব দিয়ে বলেছেন,
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِين
“আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানি হবে মানুষ
ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।”
(সূরা আল বাক্কারাহ্-২৪)
সুতরাং মহান আল্লাহর
এ চ্যালেঞ্জ কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
১৩. কুরআন পরিচিতি
আল-কুরআন নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন এ ভাবে,
بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَّجِيدٌ- فِي لَوْحٍ
مَّحْفُوظٍ
বরং এটা মহান কুরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।
(সূরা আল বুরূজ-২১-২২)
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়লা বলেন,
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ- فِي كِتَابٍ
مَّكْنُونٍ
নিশ্চয় এটা সম্মানিত
কুরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে।
(সূরা আল্ ওয়াকিয়াহ্-৭৭-৭৮)
পবিত্র কুরআনে সকল জ্ঞান-বিজ্ঞান কে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
১৪. আল-কুরআনের পরিচিতি
এক নজরে আল-কুরআনের
কণিকা সমূহ
আল-কুরআনে সর্বমোট
সূরা সংখা ১১৪টি
আল-কুরআনে মাক্কী সূরা ৯২টি মতান্তরে ৮২টি
আল-কুরআনে মাদানী সূরা ২২টি মতান্তরে ২০
মক্কী কিংবা মাদানী
নিয়ে মতবেদ ১২টি
আল-কুরআনে আয়াত সংখ্যা ৬,৬৬৬/ ৬২৩৬টি
আল-কুরআনে পারা সংখ্যা ৩০টি
আল-কুরআনে মঞ্জিল সংখ্যা ০৭টি
আল-কুরআনে রুকু সংখ্যা ৫৫৪টি
আল-কুরআনে সিজদার সংখ্যা ১৪টি/ ১৫টি
আল-কুরআনে শব্দ সংখ্যা ৮৬,৪৩০টি
আল-কুরআনে হরফ সংখ্যা ৩,২২,৬৭১টি
আল-কুরআনে যবর সংখ্যা ৫৩,২৪৩টি
আল-কুরআনে যের সংখ্যা ৩৯,৫৮২টি
আল-কুরআনে পেম সংখ্যা ৮,৮০৪টি
আল-কুরআনে তাশদীদ সংখ্যা ১২৫৩টি
আল-কুরআনে মাদ সংখ্যা ১৭৭১ বার
আল-কুরআনে নুকতা সংখ্যা ১,০৫,৬৮২ টি
তত্থ সূত্রঃ (বুখারী; মুসলিম; মিশকাত পৃষ্টা-১৭৯)
১৫. বিশ্ব মানবতার জন্য হিদায়াত
পবিত্র কুরআনুল কারিম বিশ্ব মানবতার জন্য হিদায়াত হিসাবে অবতির্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহ
তায়লা বলেন,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ
الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ﴿البقرة: ١٨٥﴾
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায়
ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।” (সূরা বাক্বারা-১৮৫)
১৭. মহান আল্লাহ তায়লা
বলেন,
إِنَّ هَٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ
أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ
أَجْرًا كَبِيرًا ﴿الإسراء: ٩﴾
“এই কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার
রয়েছে।” (সূরা বানী ইসরাঈল-০৯)
১৮. দুঃখের একমাত্র চিকিৎসা আল-কুরআন
মহান আল্লাহ কুরআনকে
সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে নাযিল করেছেন। এটা মানুষের মানসিক ও শারীরিক রোগের মহা ঔষধও
বটে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم
مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ
لِّلْمُؤْمِنِينَ ﴿يونس: ٥٧﴾
“হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুমিনদের
জন্য।” (সূরা ইউনুস-৫৭)
পবিত্র কুরআনুল কারীমকে
যদি সঠিক ভাবে অনুসরণ করা হলে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমগ্র মানব মুক্তির পথ পেয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ
مُّبِينٌۚيَهْدِي
بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ
إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
“তোমাদের কাছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ। এর দ্বারা
আল্লাহ্ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার
থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন।” (সূরা মায়েদা-১৫-১৬)
هُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ عَلَىٰ عَبْدِهِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُم
مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِۚ وَإِنَّ اللَّهَ بِكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ
﴿الحديد: ٩﴾
“তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি প্রকাশ্য আয়াত অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে অন্ধকার
থেকে আলোকে আনয়ন করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।” (সূরা আল হাদীদ-৯)
মানবতার মুক্তির সনদ আল-কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যাতে কোনরুপ পরিবর্তন, পরিবর্ধনতো দূরের কথা, যার একটি শব্দও কেউ
বিলীন করে দিতে পারবেনা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا
بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ لاَ يَرْجُونَ لِقَاءَنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ
هَذَا أَوْ بَدِّلْهُ قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاء نَفْسِي
إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوحَى إِلَيَّ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي
عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ - قُل لَّوْ شَاء اللَّهُ مَا تَلَوْتُهُ عَلَيْكُمْ وَلاَ
أَدْرَاكُم بِهِ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِ أَفَلاَ
تَعْقِلُونَ
আর যখন তাদের কাছে
আমার প্রকৃত আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কুরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও। তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই
আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের
ভয় করি। বলে দাও, যদি আল্লাহ্ চাইতেন, তবে আমি এটি তোমাদের সামনে পড়তাম না, আর নাইবা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করতেন এ সম্পর্কে। কারণ, আমি তোমাদের মাঝে ইতঃপূর্বেও
একটা বয়স অতিবাহিত করেছি। তারপরেও কি তোমরা চিন্তা করবে না? (সূরা ইউনুস-১৫-১৬)
২২. কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: خَرَجَ
رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ، فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ
يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ، أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ، فَيَأْتِيَ مِنْهُ
بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ، وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ؟ فَقُلْنَا:
يَا رَسُولَ اللهِ نُحِبُّ ذَلِكَ، قَالَ: أَفَلَا يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى
الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ، أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ
وَجَلَّ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ، وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلَاثٍ،
وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ، وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ
উকবা ইকনে আমের (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) হুজরা থেকে বেরিয়ে আসলেন, আমরা সুফ্ফায় ছিলাম।
তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমনটা পছন্দ করবে যে, সে প্রতি দিন সকালে
বুতহা-কিংবা আকীক উপত্যকায় যাবে এবং সেখান থেকে কোন পাপের আশ্রয় নানিয়ে বা কোন প্রকার
আত্মীয়তা ছিন্ন নাকরে বড়
বড় কাজ বিশিষ্ট উটনী নিয়ে
আসবে? ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা তা পছন্দ করি।
তিনি বললেন, তোমাদের যে কেউ সকাল বেলায় মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত শিখে অথবা তিলাওয়াত করে যা তার জন্য দুটি উটনির চেয়ে উত্তম। বরং তিন আয়াত তার জন্য তিনটি উটনির চেয়ে উত্তম এবং চারটি আয়াত চারটি উটনির চেয়ে উতাতম। (সহীহ মুসলিম, ই.ফা;১৭৪৩, ই.সে;১৭৫০)
২৩. কিয়ামতের দিন কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ
প্রসংঙ্গত হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ
الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ (رَوَاهُ مُسلم
আবু উমামা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করবে। কেননা কিয়ামতের দিন তা তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারীরুপে
উপস্থিত হবে। (সহীহ মুসলিম-ই.ফা;১৭৪৪, ই.সে;১৭৫১)
২৪. শেষ কথা
প্রিয় উপস্থিতি! কোন একটি হিদায়াত আসার পর আরেকটি হিদায়াত আসার প্রয়োজন তখনই অনুভুত
হয়, যখন প্রথম আসা হিদায়াতটি লোপ পেয়ে যায় এবং তাকে পূর্নজীবন দান করার প্রয়োজন দেখা
দেয়। কিন্তু মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এমনই একটি গ্রন্থ যা কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত গ্রন্থ
বা হিদায়াত হিসেবে থাকবে। এ হিদায়াত এর সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার
জিম্মায় রেখেছেন।
অতঃপর একথা নির্ধীদায় বলা যেতে পারে যে,
আল-কুরআন একটি জীবন্ত গ্রন্থের নাম। আল-কুরআন একটি চালিকা শক্তির
নাম। সর্বোপরি আল-কুরআন একটি জীবন্ত আন্দোলনের নাম। জাহেলিয়াত ও বর্বরতার নিকশ আঁধারে
নিমজ্জিত একদল মানুষের জীবনকে আলোকমালায় উদ্ভাসিত করার জন্যে আল্লাহর এক সাহসী বান্দাহর
ওপর এই পুস্তত অবতীর্ণ হয়েছে সুতরাং এই পুস্তক থেকে হেদায়াত পেতে হলে এই পুস্তকের প্রদর্শিত
সেই সাহাসী বান্দাহর সংগ্রামে পথ ধরেই এগুতে হবে।
সুতরাং পৃথিবী যতদিন থাকবে ততোদিন আল-কুরআন সর্বশেষ হিদায়াতনামা হিসাবে বিশ্ব মানবতার
মুক্তির সনদ হয়ে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই কিতাব তথা আল-কুরআন থেকে হিদায়াত গ্রহণ
ও অনুস্মরণ অনুকরণ করার তাওফিক দিন। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com