Thursday, September 24, 2020

ইভটিজিং

 


ইভটিজিং ---

সূচনাঃ

ইসলামের মানবিক অপরাধসমূহের যে সব শাস্তি  আল-কুরআনে  নির্ধারিত রয়েছে তæধ্যে ব্যভিচারের শাস্তি সব চাইতে কঠোর ও গুরুতর। ব্যভিচার একটি মহা অপরাধ যা অনেক অপরাধের সমষ্টি। ব্যভিচার বা যিনা বলতে  বুঝায় একজন পুরুষ ও একজন নারী  বিবাহিক স্বামী-স্ত্রী হওয়া ছাড়াই  অবৈধভাবে যৌন চারে লিপ্ত হওয়া। 

        সমাজে আজ ইভটিজিং  বা উত্ত্যক্ত করা, অসম্মান করা ইত্যাদি বেড়েই চলছে। অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার গহবরে নব্য নারী-পুরুষ নিমজ্জিত। ব্যক্তি,  পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইসলাম পরিপূর্ণ না থাকায় প্রতিটি  পত্র পল­বে অন্যায় অশ্লীলতা ঢুকে পড়েছে। আমাদের সন্তানরা অন্যায়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে।  যে সময়ে আমাদের সন্তানের হাতে বই -খাতা, কলম থাকার কথা সেই সময়ে আছে শুধু বর্তমানে মুবাইল, ইয়ার ফোন  কিংবা নেশা মাতি।

        মনে পড়লো কবির কথা-

 ‘‘জ্ঞানের লক্ষী, গানের লক্ষী, শস্য-লক্ষী নারী

সুষমা-লক্ষী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।’’ -কাজী নজরুল ইসলাম

        বর্তমান সময়ে ইভটিজিং একটি মহামারি আকার ধারণ করেছে যার ফলে বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে প্রায়ই ইভটিজিং  দুএকটি খবর পত্র-পত্রিকায়  ছাপা হচ্ছে।  ২০১০ সালের ১লা নভেম্বর ইভটিজিং এর অপমান  সইতে না পেরে ফাঁসিতে ঝুলে প্রাণ দেয় রূপালি।       অক্টোবর/২০১০ সালে প্রাণ দিতে হয় ফরিদপুর মধুখালির চার মেয়ের মা চাঁপা রাণী ও  নাটোরের  কলেজের প্রশিক্ষক ‘‘জনাব মিজানুর রহমান’’  প্রতিবাদের কারণে  ইভটিজিং  কারীরা  দিবা লোকে হত্যা করে।

        ইসলাম  এ সমস্ত  অন্যায় বন্ধের জন্য স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন-

وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً

‘‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।।’’ (সূরা  বনী ইসরাঈল-৩২)

        উপরোল্লোখিত আয়াতে কারীমা দ্বারা বুঝা যায় যে, ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি আর এর থেকে বের হতে হলে আমাদের সামাজিক সচেতন হতে হবে।

ইভটিজিং শব্দের অর্থঃ

        ইভটিজিং শব্দটির অর্থ নারীকে উত্ত্যক্ত করা, অসম্মান করা। সংবাদপত্রের পাতা উঠালেই ইভটিজিং নামক কুৎসিত চরিত্রের খবর আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে।  ডিজিটাল যুগের হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের  মাঝে, সেই হাওয়ার  দাপটে তারা হারিয়ে ফেলছে  তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সভ্যতা সংস্কৃতি। আর  এজন্য  তারা মানব জাতির আদি মাতা ‘‘হাওয়া’’ (আঃ)-এর নাম ভুলে পশ্চিমাদের ইভকে চিনতে শুরু করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো তাদের চেনা  ইভ সম্মানিত মাতা নন, শুধুই একজন নারী। আর বস্তুবাদী সভ্যতার ধারক এ  ডিজুস তরুণদের কাছে নারী মানে উপাদেয় আর দশটা ভোগ্যবস্ত  বৈ অন্য কিছু নয়। ইভটিজিংয়ের মূল কারণ নিহিত এখানেই ।

ইভটিজিং শব্দটি যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা  পরিহার করা উচিত। কারণ এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করে অপরাধীদের ঘৃণার মাত্রা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যাই হোক ইভটিজিং বা নারীকে অসম্মান করা হয় এমন কাজ কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি  মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ। এ প্রসংঙ্গে কুরআনে এসেছে--

وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ

‘‘নির্লজ্জতার যত পন্থা আছে তার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য।’’ (সূরা আনআম-১৫১)

        সুতরাং যারা এ ধরণের কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে  কঠিন শাস্তির  আওতায় নিয়ে আসা সময়ের দাবী। যথাযথ শাস্তি না দেয়ার ফলে এ জঘন্য অপরাধ  বেড়েই চলছে। এর প্রতিকারে বক্তৃতা আর বিবৃতি আর কিছু প্রদর্শন করার মত কাজ করেই দায়িত্ব  শেষ নয়। কেননা এই ব্যাধি সমাজে ব্যাপৃত হচ্ছে এবং এর জন্য আমাদের কি করণীয় আছে তা বের  করা দরকার।  সেই সাথে কার্যকর এবং  বাস্তব ভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেয়া খুবই  প্রয়োজন। এ বর্তমান সমায়ের দাবি।

 ইভটিজিং কেনন হয় এবং কারা করেঃ

        সমাজে ছেলেদের উচ্ছৃঙ্খল মানসিকতার জন্য ইভটিজিং হয়ে থাকে। ইভটিজিং-এর মাধ্যমে মেয়েদের হয়রানি করে তারা এক ধরণের বিকৃত প্রশান্তি লাভ  করে। নারীবাদী সংগঠন ‘women for women’ Ges ‘Steps toward Development’ এর যৌথ সমীক্ষায় ইভটিজিংকারীদের সামাজিক  অবস্থান সম্পর্কে জানা  যায় যে উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ১৫% মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ৬০% এবং নিম্মবিত্ত পরিবারের সন্তান ২৭% ইভটিজিং-এর সাথে জড়িত।

 ইভটিজিং সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তুতি করার কারণঃ

        ইভটিজিং সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তুতি করার কারণগুলো  নিম্মে  দেওয়া হলো-

 ১.আল্লাহর  আদেশের অমান্য করাঃ

        মহান আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষ সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার কিভাবে চলবে এবং জীবন-যাপন করবে তার একটি স্পষ্ট  নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা  আজ তার সেই  নির্দেশনা না মানার কারণেই এই মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা  কুরআনে বলেন--

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا-

‘‘হে নবী! আপনি আপনার পতœীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল­াহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু । ’’ (সূরা  আহযাব-৫৯)

২.অশ্লীলতা বেহায়াপনার সয়লাবঃ

        আজকের সমাজের অশ্লীলতা বেহায়াপনার ছয়লাবে ভরপুর। টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, গান, নাটক, সিনেমাসহ নানাবিধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে অশ্লীলতা, বেহায়াপনার সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। যার কারণে ইভটিজিংয়ের মত কাজ অহরহ হচ্ছে। অথচ আল­াহ তায়ালা অশ্লীলতা, বেহায়াপনার কাছে যেতেও নিষেধ  করেছেন।  মহান আল­াহ বলেন--

وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً

‘‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।।’’ (সূরা বনী ইসরাঈল-৩২)

৩.নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়াঃ

        আমরা অনেকেই নৈতিক শিক্ষার কথা বলি, কিন্তু  প্রকৃতপক্ষে নৈতিকতা কোনটি? আজ থেকে ১৪শত  বছর  পূর্বে   আমাদের প্রিয়নবী যে সমাজে আগমন করেছিলেন সে সমাজের মানুষরা কন্যা সন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দিত। তাদেরকে বর্বর বলা হতো। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে যে শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সেই বর্বর জাতিকে প্রথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করলেন, সেটিই হলো নৈতিক শিক্ষা। আজকে আমরা সেই শিক্ষার কথা না বলে অন্য পথে হাঁটছি।

৪.দুষ্টের দমন না করাঃ

        প্রতিদিন খবর খুললেই আমরা দেখি দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের দাপটে বিভিন্ন জায়গায় অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হওয়ার পরও  সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন একশন নেয়া হয় না। এর ফলে অন্যরাও অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করার বিষয়ে ভয় পায়না।

 ইভটিজিং বন্ধের করণীয় কাজঃ

        সমাজ থেকে ইভটিজিং বন্ধ করতে হলে নারীদের উত্ত্যক্ত করার মত জঘন্য কাজ থেকে মুক্তি পাবার জন্য করণীয় কতগুলো কাজ আমাদে করতে হবে তা  হচ্ছে-

(১)  নারীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে মুক্তিঃ

        নারীদের উত্ত্যক্ত করা থেকে মুক্তি দিতে  হলে  সবচেয়ে বেশী ভুমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো জনগণের জানমাল এবং সম্পদের নিরাপত্তা দেয়া। এটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠারও প্রথম শর্ত। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও যানবাহনে ইভটিজিং মহামারি আকার ধারণ করেছে, এটা সরকার ইচ্ছে করলে কন্ট্রোল (Control) করতে পারে। ইতোমধ্যে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে অনেক তরুণী লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছে। বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায়  পিতামাতাকে জীবন দিতে হয়েছে। এজন্য এই মূহূর্তে কঠোর আইন করে তার বাস্তাবায়ন করতে হবে। আইন করতে দেরি হলে ঘটনাটা এরকমই হবে যে, ‘‘ডাক্তার আসার পুর্বে রোগীটি মারা গেল’’ এ অবস্থা হওয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।

(২) পরিবারের দায়-দায়িত্ব

        ইভটিজিং  বন্ধের জন্য পরিবারকে এ বিষয়ে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা,  ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ  করে আপনার সন্তান কোথায় কি করছে তা আপনাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ বয়সে উপনীত হলে অবশ্যই তার প্রতি নজর দিতে হবে।

(৩) নারীদের চলা-ফেরা শালীনতাঃ

        নারীদের চলাফেরায় শালীন হতে হবে। তা না হলে এ ধরণের কর্মকান্ড বন্ধ করা যাবে না। অশ্লীলতা ও যৌন সুড়সুড়ি দেয় এমন আচরণ অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।  নিজেকে ¯মার্ট বা আধুনিক হতে গিয়ে নিজের মর্যাদা নিজেই  ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে  হবে।  প্রচলিত সহশিক্ষা ব্যবস্থা যা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা,  পরস্পরের  প্রতি আকৃষ্টকরণ ও সর্বোপরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কাজে ধাবিত করে। বেপর্দা ও অশ্লীল চাল চলন আজ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন অপরাধ গুলোকে দেখে আজ কালের তরুনরা অসুস্থ চিন্তার তৈরী হচ্ছে । পক্ষান্তরে  নারী যত শালীন হবে তার তত মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

‘‘ ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল­াহ্র সামনে তওবা কর,  যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’’ (সূরা আন নূর-৩১)

(৪) পাশ্চাত্যের জোয়ারে গা ভাসিয়ে  দেয়াঃ

        বর্তমানে এক শ্রেণীর নারী দেহ প্রদর্শনের প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছে ঐ পাশ্চাত্যের জোয়ারের নারীমত । এরা বিভিন্ন প্রতিযোগীতার নামে নারীকে পণ্য হিসেবে  বাজারে বিক্রয়ের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে যা নারীর মান-সম্মান, ইজ্জত-আব্রর প্রতি এক ভয়ানক পদক্ষেপ। এর ফলে নারীকে শুধু ভোগের  সামগ্রী বানিয়ে চলছে এবং নারীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতি এক ধরণের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা এ প্রসংঙ্গে বলেন-

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى

‘‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।’’ (সূরা আহযাব-৩৩)

প্রসংঙ্গত হাদীসে এসেছে, ‘‘ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল­াহ (সাঃ) বলেছেন, জাহান্নামবাসী দুধরনের লোক যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি।

(১) একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে।

(২) আর এক দল এমন নারী যারা  পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধি ও পাবে না, যদিও  তার সুগন্ধি বহু দুর থেকে পাওয়া যায়।’’ (মুসলিম-     )

(৫) পুরুষের সাথে নারীর অবাধে মেলামেশার উপর কঠোর দৃষ্টি রাখাঃ

        নারী-পুরুষ তার উভয়ে সমাজের একে অপরের পরিপুরক তাদের অবাধে মেলামেশার উপর বাবা-মার দৃষ্টি রাখতে হবে।  পাড়া-প্রতিভেশী, নিকট আত্মীয়দের মাঝে যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করতে হবে।

হাদীসে এসেছে-‘‘হযরত উকাহ ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেন, তোমরা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে। মদিনার আনসারদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করল হে আল­াহর রাসূল ! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ?  তিনি  উত্তরে বললেনঃ  এ ধরণের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু।’(মুসলিম )

 (৬) নারী-পুরুষ সকলকে পর্দার বিধান পালনঃ

        পর্দা (হিযাব) শব্দের  আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আবরণ বা অন্তরাল যাকে ইংরেজীতে বলে Curtain অথবা  Cloak covering the whole body. আর শরীয়তের পরিভাষায়, ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ঢেকে রাখার নামই হিযাব বা  পর্দা।  নারী পুরুষ প্রত্যেকের জন্যই পর্দা করা ‘‘ফরজ’’   পর্দা সম্পর্কে মহান আল্লাহর বানী-

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

‘‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ্ তা অবহিত আছেন।’’ (সূরা নূর-৩০)

        নারী-পুরুষ সকলকে পর্দার বিধান মানতে হবে। পর্দার বিধান মানলে নারীর  প্রতি অসম্মানজন আচরণ কমে  যাবে। পর্দার নির্দেশনা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,  ‘‘মেয়েগণ হল পর্দা। যখন তারা ঘর থেকে বের হয়  তখন শয়তান তাদের পিছনে অংশ নেয়।’’ (সুনানে তিরমিজী-  )

এ সম্পর্কে হাদীসে  এসেছে-

لاَ تَتَّبِعُ النَّظْرَ فَاِنَّكَ    الاُوْلَى  وَلَيْسَتْ  لَكَ  الاَخِرَةُ 

‘‘কোন অপরিচিতা মহিলার উপর হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে তা ফিরিয়ে নিবে এবং দ্বিতীয়বার তার প্রতি আর দৃষ্টিপাত  করবে  না। কেননা  প্রথম  দৃষ্টি  তোমার আর দ্বিতীয়টি তোমর নয় (বরং তা শয়তানের)। ’’  (আহমদ, তিরমিজি)

প্রসিদ্ধ একখানা হাদীসের কথা  ল্লেখ না করলেই নয়, ‘‘ হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি এবং মায়মুনা  (রাঃ) উভয়েই নবী পতন্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত  হলেন। এমন সময়ে ‘‘আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে  মাকদুম  (রাঃ) ’’ (যিনি অন্ধ সাহাবী)  উপস্থিত হলেন এবং ভিতর কক্ষে প্রবেশ করতে  লাগলেন। তখন রাসূলুল যল্লাহ (সাঃ) আমাদের  বললেন, তোমরা উভয়েই পর্দা করে নাও।       আমি  তখন বললাম, হে রাছুলুল্লাহল্লাহর রাসূল (সাঃ) তিনি তো  অন্ধ, আমাদের তো দেখছেন না। রাসূল কারীম (সাঃ) বলেন, তোমরাও কি অন্ধ হয়ে গিয়েছ যে তোমরা ও দেখবে না।’’ (মুসনাদে আহমাদ)

        সুতরাং এই হাদীস থেকে পর্দার প্রথাকে অমন্য করলে শয়তান সব সময় পিছনে প্ররোচনা দিয়েই চলে।

 ইভটিজিং বন্ধের সরকারী ভূমিকাঃ

        ইভটিজিং বন্ধের জন্য নিজ উদ্দোগের পাশা-পাশি সরকারী উদ্দোগও থাকতে হবে। নিম্মোক্ত উদ্দোগ গুলো ইচ্ছা করলে সরকার নিতে পারেন । যথা---

১। আইন শৃংখলা বাহিনীকে এ বিষয় আন্তরিক ও জবাবদিহির আওতায় আনা।

২। দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদের ইমাম পড়া-মহল­ার লোকদের সচেতন করা।

৩। ধর্মভিরু লোকদের মধ্যে আলেম সমাজকে কাজে লাগন।

৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরকে সজাগ ও সচেতন করা।

৫। গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি  (ইভটিজিং কমিটি) করা।

৬। অপরাধী নিজের কাছের লোক হলেও তাকে শাস্তি দেওয়া।

৭। বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে মতবিনিময় সভার ব্যবস্থা করা।

৮। প্রিন্ট ও ইলিকটনিক মিডিয়ায় যথা যত ভূমিকা (ইভটিজিং এর শস্তি ও করনীও দিক) রাখা।

৯। সর্ব পরি ইভটিজিংয়ের শিকারী ব্যক্তি/ব্যক্তিনীকে সাহায্য  সহায়তা  প্রদান করা।

১০। গুরুত্ব পূর্ন স্থানে অপরাধিকে ধরার জন্য ভিডিও ফুটেজের ব্যবস্থা করা। এবং সে অনুযায়ী বিচার করা।

ইভটিজিং প্রতিরোধে করণীয় প্রস্তাবঃ

১। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত করা

২। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কো-এডুকেশনের পরিবর্তে ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক পৃথক পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রমের পাঠদানের ব্যবস্থা করা।

৩। ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ করে  ছাত্রীদের শালীন ও মার্জিত ড্রেস/ পোশাক পরিধান করা।

৪। টিভি অথবা বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে যৌন উত্তেজক বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করা।

৫। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন রোধে সাংস্কৃতিক বিধিমাল আরোপ করা।

৬। চরিত্র সংশোধনে নৈতিক প্রশিক্ষণের জন্য ধর্মীয়  নীতিমালা অনুস্মরণের জন্য তাগিদ দেয়া।

 ইভটিজিং মহামারি আকার ধারণ করেছেঃ

         ইভটিজিং আজ আমাদের জন্য মহামারি আকার ধারণ করেছে। এমনকি ইভটিজিং করে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধিরা। উদাহরন সরূপ বলা যেতে পারে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত  ১২  মাসে ইভ টিজিংয়ের কারণে  আত্মহত্যা  করেছে ৩০ জন তরুনী। ইভটিজিং এর জ্বালা সইতে না পেরে সর্বশেষ প্রাণ দিলো সিরাজগঞ্জ উপজেলার ‘‘রূপালী রানী বরাতী’’ ওরফে টুনি ১৪ বছরের যুবতীকে। পত্র-পত্রীকার ভাস্য নুযায়ী গড়ে  প্রতি মাসে  ৪জনেরও বেশী তরুনীর প্রাণ দিতে হয়। এমনকি ই্ভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে নাটোরের প্রতিবাদকারী শিক্ষক ‘‘মোঃ মিজানুর রহমানকে-২০১০সালে ‘‘এবং ফরিদপুরের মধুখালিতে চার মেয়ের মা ‘‘চাঁপা রাণী ’’কে।   (তথ্যঃ-সাপ্তাঃ সোঃ বাঃ  নভেম্বর/ ২০১৯ )

          ২০১৯ সালের নভেম্বর ‘‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’’  উদৃতি দিয়ে একটি ডেটা দেওয়া হলো-

সাল ইভ টিজিং এর সংখ্যা   ইভ টিজিংয়ের স্থান মোট সংখ্যা   তুলনা মূলক গড়

২০১৫   ২৪         ২৭.৬

২০১৬   ২০        ২৩.৮৮

২০১৭   ৩৯        ২৫.৯

২০১৮   ৩৮        ৩০.৫

২০১৯   ৪২         ৩৯.৬

শতকরা  ৯১ ভাগ নারী ইভটিজিং হচ্ছে।

বাংলাদেশের   শতকরা ৬৫/৭০ ভাঘ ইভটিজিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশ থেকে।

ইভটিজিং শিকার হচ্ছে বেশীর ভাগ ১০-১৮ বছরের যুবতী  ৯০ শতাংশ নারী ঘরের বাইরে ইভটিজিংয়ের শিকার।

সর্বমোট   ইভটিজিং সংখ্যা          ৪৫৩টি   ৩৯.৬ভাগ

 বাংলাদেশ ‘‘মহিলা পরিষদের’’ তথ্য অনুসারে-২০১৯সালের

         ইভটিজিংয়ের মূল্যবোধের অবক্ষয়ই এর প্রধান কারণ  সম্পর্কে প্রবীণ আইনজীবী  ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম বলেন- ‘‘সামাজিক পরিবর্তনের ফলে আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধ ও নীতি নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। ছেলেমেয়েরা  অবাধে মেলামেশা করছে। এসব কারণেই ইভটিজিং এর ঘটনা বাড়ছে।’’

ডঃ আকবর আলী খান (তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা) বলেন- ‘‘আইন করে ইভটিজিং বন্ধ করা যাবেনা। প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। পরিবার থেকে কাজ শুরু করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা  তৈরী করতে হবে।’’

 শেষ কথা:

        পরিশেষে আমরা লক্ষ করি যে, ইভটিজিং কৃত নারী  কখন আমার মাতা, বোন, বধু কিংবা  জাতি  ধর্মের লোক। সুতরাং নারী মাতা, নারী ভাগ্নি, নারী বধু তারা ভোগ্য পণ্য নয়, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা পাওয়া মতো আল্লহ তায়ালার এক অমূল্য নিয়ামত। আমাদের সমাজে যত দিন এ বিশ্বাসের লালন ছিল তত দিন ইভটিজিং সমস্যা ছিল না। আমাদের সমাজের চিরায়িত মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আর তা থেকে সৃষ্ট অবক্ষয়ের ফল   ইভটিজিং নামের এ যস্ত্রণা।

এইতো কয়েক দশক আগেও রাস্তাঘাটে কোন মেয়েকে  উত্ত্যক্ত করার কথা ভাবতেও ভদ্র ঘরের সন্তানরা লজ্জা পেত। এমন অপরাধের খবর অভিভাবকদের  কাছে পৌঁছিলে আদরের সন্তানকে নিজেরাই শাস্তি দিতেন। সামাজিকভাবেও  বিষয়টিকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। এখন বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়ে  ঠেকেছে যে রাস্তাঘাট নয় স্কুল কলেজ এমন কি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে’’ মেয়েরা নিরাপদ নয়। এ ভয়ংকার অবস্থা  থেকে জাতি এখনই মুক্তি পেতে চায়, নারীরা তাদের  সম্মানের আসনে থাকবে-এটাই জনগণের প্রত্যাশা।

বাংলারা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন,

নারীরা বিরহে নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ

যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গন

নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষধায় মিলে

জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে।’’

আজকের কথার শেষান্তে রাসূল (সাঃ)-এর একখানা হাদীসের কথা স্মরণ করিয়ে দেই, হাদীসটি হলো-

مَنْ  نَظَرَ اِلَى مُحَاسِنِ  اِمْرَأةٍ  اَجْنَبِيَةً عَنْ  شَهْوَةٍ صَبَّ  فِىْ   لِاَنَّكَ  يَوْمَ  الْقِيَمَةِ

‘‘যে ব্যক্তি কোন অপরিচিতি নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, কিয়ামতের দিনে তার চোখ উত্তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেয়া হবে।’’ (ফাতহুল কাদীর)

        সুতরাং আসুন আমরা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরণ করি, সমাজ থেকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও বখাটে  মাস্তানদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলি  তাহলে আমাদের সমাজে শান্তি আসবে। আমিন!!

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com