Friday, September 25, 2020

ইসলামে পানাহারের আদব

 


ইসলামে পানাহারের আদব----


০২. ভূমিকাঃ

          শরীর সুস্থ-সুন্দর রাখার জন্য নিয়ম মতো পানাহার অত্যাবশ্যক। সু-স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন সুষমা খাবার। বিশ্ব চড়াচড়ে সকল প্রাণীর পানাহারের প্রয়োজন রয়েছে। জীব মাত্রেই পানাহারে অভ্যস্থ। পানাহার ছাড়া জীবনধারন সম্ভব নয়। ইসলামে অন্যান্য সবকিছুর মত পানাহারের বেলায়ও কিছু নিয়ম কানুন ও আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে। মুসলমান হিসাবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর প্রিয় রাসূলের শিখানো আদব বা শিষ্টাচার পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এ সম্পর্কে  মহান আল্লাহ বলেন,

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا ﴿الأحزاب: ٢١﴾

যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক সারণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। (সূরা আহযাব-২১)

অন্য আয়াতে এসেছে,

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ ﴿آل‌عمران: ٣١﴾

০৩. মহান আল্লাহ বলেনঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভাল বাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুনাময়। (সূরা আল ইমরান-৩-৩১)

মহানবী (সাঃ) বলেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ» (رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةَ-104) وَقَالَ النَّوَوِيُّ فِي أَرْبَعِينِهِ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ رَوَيْنَاهُ فِي كتاب الْحجَّة بِإِسْنَاد صَحِيح

তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্নাঙ্গ মুমিন হবে না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যে বিধান নিয়ে এসেছি তার অনুগত হবে। (শরহুস সুন্নাহ-১০৪; মিশকাত-১৬৭)

০৪. নিম্মে পানাহারের আদব বর্ণনা করা হলো

ক/ খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা, ভুলে গেলে স্মরণ হলে বলাঃ রাসূল (সাঃ) বলেন,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى، فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ» )رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ-1858- وَأَبُو دَاوُد-3767 (

 

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন তোমাদের কেউ যখন খানা খায় তখন শুরুতে যেন আল্লাহ তাআলার নাম নেয়। সে শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে গেলে যেন বলে বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (আবু দাউদ ৩৭৬৭, তিরমিযি ১৮৫৯)

০৫. খ/ খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে শয়তান সেখানে প্রশ্রয় পায়না

হাদীসে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: لَا مَبِيتَ لَكُمْ، وَلَا عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ، فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ، وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ " (رَوَاهُ مُسلم-5091)

যাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বলতে শুনেছি: যখন কোন লোক তার ঘরে প্রবেশ কালে এবং খাবার গ্রহণ কালে আল্লাহর তাআলার নাম স্মরণ করে তখন শয়তান তার সাথীদের বলে তোমাদের জন্য এ ঘরে রাত কাটাবার অবকাশ নেই এবং রাতের খাবারও নেই। আর যখন সে আল্লাহ তাআলার নাম না নিয়েই তার ঘরে প্রবেশ করে এবং আহার করে তখন শয়তান তার সাথীদের বলে তোমাদের রাত কাটাবার ব্যবস্থা হয়ে গেল এবং রাতে খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে গেল। (মুসলিম-ই.ফা.বা- ৫০৯১,ই.সে-৫১০১)

০৬. গ/  ডান হাতে আহার করা

হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنَ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِشِمَالِهِ»(مسلم-5093)

ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন পানাহার করবে, সে যেন ডান হাতে পানাহার করে। কেননা শয়তান বাম হাতে আহার করে ও বাম হাতে পান করে। (মুসলিম-ই.ফা;৫০৯৩,ই.সে;৫১০৪)

عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا يَأْكُلَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِشِمَالِهِ، وَلَا يَشْرَبَنَّ بِهَا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ، وَيَشْرَبُ بِهَا»(مسلم-5095)

০৭. ছালেম (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে আহার না করে এবং বাম হাতে পান না করে; কেননা শয়তান বাম হাতে আহার করে ও বাম হাতে পান করে। (মুসলিম-ই.ফা.বা-৫০৯৫,ই.সে-৫১০৬)

০৮. ঘ/ সম্মিলিত ভাবে খানা খাওয়ার আদব

হাদীসে এসেছে,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَدُ اللَّهِ مَعَ الجَمَاعَةِ»حكم الألباني: صحيح(ترمزى-2166-2167-نسائى-4020)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন-রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“ একতাবদ্ধতার উপর আল্লাহর রহমতের হাত রয়েছে। (তিরমিজি-২১৬৬,২১৬৭,নাসায়ী-৪০২০)

অন্য হাদীসে এসেছ,

عَنْ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُوا جَمِيعًا، وَلَا تَفَرَّقُوا، فَإِنَّ الْبَرَكَةَ مَعَ الْجَمَاعَةِ»(ابْنُ مَاجَهْ-3287)

ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন-রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা একতাবদ্ধভাবে আহার কর,বিচ্ছিন্ন ভাবে আহার করনা, কেননা একতাবদ্ধতার মাঝে বরকত রয়েছে। (ইবনে মাজাহ-৩২৮৭)

০৯. একত্রে বেশ কয়েকজন মিলে খাবার খেতে বসলে বয়োজেষ্ঠ্য/দলনেতা খাদ্য শুরু করলে তখন সবাই খাওয়া শুরু করবে এবং সবাই শৃঙ্খলা ও শিষ্টাচারবোধ বজায় রাখবে। এ প্রসঙ্গে নিম্মের হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য।

عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا لَمْ نَضَعْ أَيْدِيَنَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَضَعَ يَدَهُ، وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَامًا، فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ، فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهَا، ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَأَخَذَ بِيَدِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ، وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا، فَجَاءَ بِهَذَا الْأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ فِي يَدِي مَعَ يَدِهَا(مسلم-5089)

হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে আমরা কখনো আহারের জন্য একত্রিত হলে, রাসূল (সাঃ) যতক্ষণ পর্যন্ত খানা শুরু না করতেন, আমরা খানায় হাত দিতাম না। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে খানা খেতে উপস্থিত হলাম। এমন সময় একটি মেয়ে এমন ভাবে খাদ্যের উপর ঝুঁকে পড়ল (যেন সে ক্ষুধায় কাতর) সে খাবার হাত রাখছিল অমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার হাত ধরে ফেললেন। তার পর এসে এক বেদুঈন সেই যেন খাবারের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল রাসূল (সাঃ) তারও হাত ধরে ফেললেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ যে খাদ্যে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না, শয়তান তাকে (নিজের জন্য) হালাল করে নেয়। শয়তান এ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছিল এর দ্বারা তার নিজের জন্য খাদ্যকে হালাল করার জন্য। আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর শয়তান এ বেদুঈনকে নিয়ে আসে এর সাহায্যে তার নিজের খাদ্য হালাল করার উদ্দেশ্যে। আমি তারও হাত ধরে ফেললাম। যেই সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ এ দুইজনের হাতের সাথে শয়তানের  হাতও আমার হাতের মধ্যে (মুষ্টিবদ্ধ) আছে। তারপর তিনি আল্লাহর নাম নিলেন (বিসমিল্লাহ পড়লেন) এবং খানা খেলেন। (মুসলিম-ই.ফা.বা-৫০৮৯; ই.সে;৫০৯৯)

১০. ঙ/ খানার শেষে দোয়া বলা

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِهِ قَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ» . (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ-3457- وَأَبُو دَاوُدَ-3850- وَابْن مَاجَه-3283)

عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ أَكَلَ طَعَامًا ثُمَّ قَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا الطَّعَامَ، وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ( أَبُو دَاوُدَ-4023-ترمزى-3458-ابن ماجة-3285)

মুয়ায ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি আহার শেষে বলে, আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আতআমানী হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াহ। (সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে খাওয়ালেন এবং আমাকে রিযিক দিলেন আমার কোনরূপ চেষ্টা শক্তি ছাড়াই) তার পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (আবু দাউদ ৪০২৩,৩৮৫০; তিরমিজি-৩৪৫৭,৩৪৫৮; ইবনে মাজাহ-৩২৮৩,৩২৮৫)

১১. চ/ খাদ্যের দোষ অনুসন্ধান না করা এবং খাদ্যের প্রশংসা করাঃ

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: «مَا عَابَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ، إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ، وَإِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ» (بخارى-3308-مسلم-5206)

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কখনও কোন খাদ্যের দোষ বর্ণনা করেননি। খাদ্য তাঁর রুচি সম্মত হলে খেতেন এবং রুচি সম্মত না হলে খেতেন না। (বুখারী-ই.ফা.বা-৩৩০৮, মুসলিম-ই.ফা.বা- ৫২০৬)

১২. ছ/ খাবার প্লে¬টের নিজের সামনে থেকে খাওয়া এবং অজানা লোককে আদব শিখানো হাদীসে এসেছে,

عن عُمَرَ بْنَ أَبِي سَلَمَةَ، يَقُولُ: كُنْتُ غُلاَمًا فِي حَجْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا غُلاَمُ، سَمِّ اللَّهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ» (بخارى-4871-مسلم-5097)

ওমর ইবনে আবি সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অধীন বালক ছিলাম। খাওয়ার সময় আমার হাত পাত্রের চতুর্দিকে বিচরণ করত। রাসূল (সাঃ) আমাকে বললেন, বৎস, আল্লাহর নাম লও (অর্থাৎ বিসমিল্লাহ বল) ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।  (বুখারী-ই.ফা.বা-৪৮৭১; মুসলিম-ই.ফা.বা-৫০৯৭)

১৩. জ/ পাত্রের এক পাশ থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ হাদীসে এসেছে,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «البَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ، فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ، وَلَا تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ»: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ(ترمزى-1805)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বরকত খাবারের মধ্যস্থান থেকে অবতীর্ণ হয়। কাজেই খাদ্যের যে কোন এক পাশ থেকে খাও, মধ্যস্থল থেকে খেয়োনা। (তিরমিজি-১৮০৫)

১৪. ঝ/ হেলান দিয়ে আহার করা মাকরুহ হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَلِيِّ بْنِ الأَقْمَرِ، سَمِعْتُ أَبَا جُحَيْفَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ آكُلُ مُتَّكِئًا»(بخارى-4893) 

আবু জুহাইফা ওয়াহাব ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করিনা। (সহীহ বুখারী ই.ফা.বা-৪৮৯৩; আধু;৪৯৯৭)

১৫. ঞ/ আংগুল ও পাত্র পরিস্কার করে খাওয়া

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهُ، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي فِي أَيَّتِهِنَّ الْبَرَكَةُ»(مسلم-5089)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন আহার করবে, সে যেন তখন তার আংগুল চেটে খায়। কেননা সে জানে না যে কোন খাদ্যে বরকত রয়েছে। (সহীহ মুসলিম-ই.ফা.বা-৫১৩৫,ই.সে-৫১৪৬)

১৬. ট/ পেটের একভাগ খাদ্য, একভাগ পানি ও একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখা

হাদীসে এসেছে,

عَنْ مِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ. بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ»[حكم الألباني] : صحيح (ترمزى-2380)

মিকদাদ ইবনে মাদিকারাব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: মানুষের ভরা পেটের চেয়ে খারাপ পাত্র আর নেই।  মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েকটি গ্রাসই তো যথেষ্ট। এর চেয়েও বেশি যদি প্রয়োজনই হয় তবে সে তার পেটকে তিন ভাগ করে নেবে। এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীর জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রেখে দিবে। (তিরমিযি-২৩৮০)

১৭. ঠ/খাবারের শুরুতে ও শেষে হাত ধৌত করাঃ

হাদীসে এসেছে,

عَن سلمانَ قَالَ: قَرَأْتُ فِي التَّوْرَاةِ أَنَّ بَرَكَةَ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ بَعْدَهُ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهُ وَالْوُضُوءُ بعدَه» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ-1846- وَأَبُو دَاوُد-3761)

সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: খানার বরকত হল খাবার গ্রহণের পূর্বে ও পরে অযূ (হাত উত্তমভাবে ধৈত) করা। (তিরমিযি-১৮৪৬; আবু দাউদ-৩৭৬১)

 ১৮.ড/ তিন শ্বাসে পানি পান করা

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ، «أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الْإِنَاءِ ثَلَاثًا» (بخارى-5116-مسلم-5114)

আনাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন। (বুখারী-ই.ফা.বা-৫১১৬,মুসলিম-ই.ফা .বা-৫১১৪)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَشْرَبُوا وَاحِدًا كَشُرْبِ البَعِيرِ، وَلَكِنْ اشْرَبُوا مَثْنَى وَثُلَاثَ، وَسَمُّوا إِذَا أَنْتُمْ شَرِبْتُمْ، وَاحْمَدُوا إِذَا أَنْتُمْ رَفَعْتُمْ»(ترمزى-1885)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমরা উটের ন্যায় এক নিঃশ্বাসে পানি পান কর না বরং দুই বা তিন শ্বাসে পানি পান কর। আর পান শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ বল এবং পান শেষ করে আলহামদু লিল্লাহ বল। (তিরমিযি-১৮৮৫)

১৯. ঢ/ পানির পাত্রে শ্বাস না ছাড়াঃ

হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ،(بخارى-5115-مسلم-5113)  

আবদুল্লাহ ইবনে আবু কাতাদাহ (রাঃ) স্বীয় পিতাথেকে বর্ননা করেন- রাসূল (সাঃ) পান করার সময় পাত্রে ফুক দিতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী-ই.ফা.বা-৫১১৫; সহীহ মুসলিম-ই.ফা.বা; ৫১১৩)

অন্য হাদীসে এসছে,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ يُتَنَفَّسَ فِي الإِنَاءِ أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ»: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ-1888- وَأَبُو دَاوُد-3728)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাত্রে শ্বাস নেয়া থেকে অথবা তাতে দম দিতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযি-১৮৮;,আবু দাউদ-৩৭২৮)

২০. ণ/ স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পানাহার না করা

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ شَرِبَ فِي إِنَاءٍ مِنْ ذَهَبٍ، أَوْ فِضَّةٍ، فَإِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارًا مِنْ جَهَنَّمَ»

উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি সোনা ও রূপার পাত্রে পানীয় পান করবে সে যেন জাহান্নামের আগুনই গলগল করে পান করে।

(সহীহ বুখারী-ই.ফা.বা-৫১১৯; মুসলিম-ই.ফা.বা-৫২১২)

২১. ত/ পানাহারের আদবের সমষ্টি:

* খাবার আগে হাত ধুয়ে নেওয়া। খাবারে ব্যবহৃত হাতগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে অন্তরে শান্তি অনুভূত হয়।

* বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে খাওয়া শুরু করা ভুলে গেলে বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু পাঠ করা।

* বিনয়ের সাথে পানাহার করা ও হেলান দিয়ে খাবার খেতে না বসা।

* সর্বদা ডান হাতে খাওয়া। আবশ্যক বোধে বাম হাতের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

২২. * লোকমা মাঝারি আকারে নেওয়া। এক লোকমা খাওয়ার পর আরেক লোকমা খাওয়া।

* প্লেটের নিজের নিকটস্থ দিক থেকে খাওয়া, প্লেটের মাঝখান থেকে না খাওয়া।

* খাদ্য বস্তু পরে গেলে উঠিয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া।

* সবাই একত্রে বসে খাওয়া ।

* খাদ্যের দোষ বের না করা।

* অতিরিক্ত গরম খাদ্য না খাওয়া ।

২৩. * খাবার সময় অট্টহাসি এবং অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকা। খাবার সময় হালকা বাক্যালাপ করাতে দোষ নেই।

* খাবার ও পানীয় বসে খাওয়া /পান করা।

* খাদ্য বস্তুতে ফুক দিবেনা এবং পানি তিন নিশ্বাসে থেমে থেমে পান করা।

* একত্রে খেতে বসলে মজলিসের শিষ্ঠাচার বজায় রাখা।

* খাবার শেষে আঙ্গুল পরিস্কার করে খাওয়া এবং হাত ধুয়ে ফেলা।

* ভাঙ্গা পাত্রে বা গøাসে পানাহার না করা।

* খাবার শেষে মাসনুন দোয়া পাঠ করবে।

 .  উপসংহারঃ

প্রিয় ভাইয়েরা! ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় পানাহারের আদব একটি অতি সুন্দর নিয়ম কানুনের সমষ্টি। যার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে একজন বান্দার আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভাবধারা। আমরা যদি এ বিধান মেনে চলি তবে ইহলৌকিক জীবনে আমাদের খাদ্যে বরকত নিশ্চিত হবে এবং পারলৌকিক জীবনে আমরা সুখী হতে পারব। মহান আল্লাহ আমাদের জীবনে এ আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তৌফিক দিন। আমিন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com