ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ
হারাম----
১। ভূমিকা:
ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। এতে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই; বরং ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে সকল প্রকার সন্ত্রাস, নির্যাতন-নিপীড়ন ও শোষণের হিংস্র অক্টোপাস থেকে মানবতাকে মুক্ত করে বিশ্ব সমাজে শান্তির অনাবিল সমীরণ প্রবাহিত করার জন্য। তাই আল্লাহতা’লা প্রিয় নবী (সাঃ)-কে রহমত হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়------ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া-১০৭)।
২। ইসলামের অর্থ:
ইসলাম শব্দের অর্থ সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন। পরিভাষায় মহান শ্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধের উপর নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পন করা। আল্লাহ তাআলার পবিত্র সুন্দর গুণবাচক নাম সমূহের অন্যতম হচ্ছে সালাম তথা শান্তি। তাই আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামে কোন প্রকার অশান্তি-অস্থিরতা, অসহনশীলতা-অসহিষ্ণুতা, অনিয়ম-অরাজকতা, অন্যায়-অনাচার, অত্যাচার-অবিচার ইত্যাদি থাকতে পারেনা। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوافِيالسِّلْمِ كَافَّةً
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ﴿البقرة: ٢٠٨﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অর্ন্তভূক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না- নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ। (সূরা বাক্বারা-২০৮)
৩। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায়
ইসলামের দিক নির্দেশনা:
চরম বিশৃংখলপূর্ণ সমাজে
আরবের বুকে রাসূল (সাঃ) প্রেরিত হয়ে ছিলেন। বিশৃংখলা বিদূরীত করে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা
করেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আল-কুরআনের ঘোষণা-
وَاعْبُدُوا
اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ
وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ
وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ
بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ
إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا [٤:٣٦]
তোমরা আল্লাহ্র উপাসনা কর, তার সাথে অপর কাউকে শরীক
করো না । পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অমুসলিম
প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির
এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্দাম্ভিক-অহংকারীজনকে পছন্দ করেন না। (সূরা নিসা-৩৬)
অশান্তি সৃষ্টি নাহওয়ার
জন্য অমুসলিমদের দেব-দেবীদের গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। আল-কুরআনের ঘোষণা-
وَلَا
تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا
بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ
أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا
كَانُوا يَعْمَلُونَ [٦:١٠٨]
তোমরা তাদেরকে গালি দিওনা, যাদের তারা আরাধনা (পুজা) করে আল্লাহ্কে ছেড়ে। তাহলে তারা
ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহ্কে গালি দিবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক স¤প্রদায়ের
দৃষ্টিতে তাদের কাজকর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন
করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (সূরা আন
আম-১০৮)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «المُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ
المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ
عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ»
যার মুখের ও হাতের অনিষ্ট থেকে লোকজন নিরাপদ সে-ই প্রকৃত মুসলমান।
আর যার নির্যাতন থেকে মানুষের রক্ত ও সম্পদ নিরাপদ সে-ই প্রকৃত মু’মিন। (বুখারী-১০, মুসলিম-৬৮, তিরমিজি-২৬২৭,নাসায়ী-৪৯৯৫)
রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন-
أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ،
وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»
মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি,আর হত্যা করা কুফরী। (বুখারী-৪৬,মুসলিম-১২৫,তিরমিজি-২৬৩৫, নাসায়ী-৪১০৫)
মহানবী (সাঃ)-এর বর্ণাঢ্য
ও ঘটনা বহুল জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবিরোধী মনোভাব ও কর্মকান্ড সুস্পষ্ট ভাবে
প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন নবুয়তের পূর্বে হিলফুল ফুযুল গঠন। মদীনা সনদের ৪৭ টি
ধারার মধ্যে অন্যতম হল- প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো
উপর হস্তক্ষেপ করবেনা। যদি কোন গোত্রের উপর বহিঃশত্রæ আক্রমণ করে, তবে সম্মিলিত
ভাবে তাপ্রতিহত করা হবে।
তাছাড়া মহানবী (সাঃ) ধর্ম
প্রচার করেছেন নিজ আদর্শ ও উদারতা দিয়ে, যার প্রমাণ কুরআন-হাদীসে
অসংখ্য। তাই কুরআনে বলা হয়েছে-
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ
اللَّهِ أُسْوَةٌحَسَنَةٌ﴿الأحزاب: ٢١﴾﴿الممتحنة: ٦﴾
তোমাদের জন্যে রসূলুল্লাহ্র মধ্যে উত্তম নমুনা (চারিত্রিক আদর্শ)
রয়েছে। (সূরা আহযাব-২১, মুমতাহিনা-৬)
ঠিক একই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে অলি-আউলিয়াদের আদর্শ ও উদারতায় দলে দলে মানুষ ইসলামের পতাকা তলে সমবেত হয়েছিল। ইতিহাস আমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়েছে, আমাদেরকে তা স্মরণ রাখা অতি প্রয়োজন।
৪। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ
পরিচিতি:
সন্ত্রাস
বাংলা শব্দ। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ÔTerrorism’এবং আরবীতে ইহা ইরহাব নামে পরিচিত।
সন্ত্রাস সমাজের একটি ব্যাধি। মানবতার চরম শত্রæ ইবলিসের উর্বর মস্তিস্ক
থেকে এটি আবিস্কৃত। সন্ত্রাসের পরিচয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে-Terrorism : The systematic use of violence to create a
general climate of fear in a population and there by to bring about a
particular political object.” নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশৃঙ্খলভাবে সহিংসতা ব্যবহারের মাধ্যমে কোন জনগোষ্টির মধ্যে ভয়ের
পরিবেশ সৃষ্টি করা”। মার্কিন
সরকারের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (এফ বি আই) সন্ত্রাসের সংজ্ঞায় বলেছে- কোন
সরকার সাধারণ নাগরিকদেরকে ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক বা সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ব্যক্তি
বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতা বা সহিংসতার বেআইনী ব্যবহার।
জঙ্গি, জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবাদী শব্দগুলো ইংরেজী
Militant, Militancy শব্দগুলোর
অনুবাদ। ইদানিং এগুলো বিশ্বে অতি পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত শব্দ । এ শব্দগুলো কিছুদিন
আগেও এত প্রচলিত ছিল না। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ধর্ম নিয়ে একশ্রেণীর লোক চরম
বাড়াবাড়ি করছে। ইসলামের অনুসারী একশ্রেণীর লোক যেমন এর সাথে জড়িত, ঠিক তেমনি
হিন্দু, ইহুদি ও
খ্রিষ্টানদের মাঝেও এদের অস্তিত্ব লক্ষণীয়।
৫। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে
ইসলাম সমর্থন করেনা:
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা
বলেন-
مَن
قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ
النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا ۚ
যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা
ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার
জীবন রক্ষা করে।
(সূরা মায়েদা-৩২)
পৃথিবীতে সন্ত্রাস বিরাজ
করুক আল্লাহ তায়ালা আদৌ পছন্দ করেননা। পবিত্র কুরআনের ভাষায়-
وَمِنَ
النَّاسِ مَن يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ
عَلَىٰ مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ [٢:٢٠٤]وَإِذَا تَوَلَّىٰ
سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ ۗ
وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ [٢:٢٠٥]وَإِذَا قِيلَ لَهُ اتَّقِ اللَّهَ
أَخَذَتْهُ الْعِزَّةُ بِالْإِثْمِ ۚ فَحَسْبُهُ جَهَنَّمُ ۚ
وَلَبِئْسَ الْمِهَادُ [٢:٢٠٦]
আর এমন কিছু লোক রয়েছে যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা তোমাকে
চমৎকৃত করবে। আর তারা সাক্ষ্য স্থাপন করে আল্লাহ্কে নিজের মনের কথার ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে
তারা কঠিন ঝগড়াটে লোক।যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে ফ্যাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা
সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণনাশ করতে পারে। আল্লাহ্ ফ্যাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা
পছন্দ করেন না।আর যখন তাকে বলা হয় যে, আল্লাহ্কে ভয় কর, তখন তার
পাপ তাকে অহঙ্কারে উদ্বুদ্ধ করে।
সুতরাং তার জন্যে জাহান্নামই
যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে তা হলো নিকৃষ্টতর ঠিকানা। (সূরা বাক্বারা-২০৪-২০৬)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ
الْقَتْلِ ۗ
ফেতনা-ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন
অপরাধ।”(সূরা বাক্বারা-১৯১)
“আর ধর্মের
ব্যাপারে ফেতনা- ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। (সূরা বাক্বারা-২১৭)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তায়ালা বলেন-
وَالَّذِينَ
يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ
اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَٰئِكَ
لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ
الدَّارِۚ
যারা আল্লাহ্র অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ
করে, আল্লাহ্
যে সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে
অশান্তি (দাঙ্গা-হাঙ্গামা) সৃষ্টি করে, ওরা ঐ সমস্ত লোক যাদের
জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। (সূরা রা‘দ-২৫)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
وَأَحْسِن كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ
إِلَيْكَ ۖ
وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ ۖ
إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ [٢٨:٧٧]
তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ্ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ (দাঙ্গা-হাঙ্গামা) সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ অনর্থ (দাঙ্গা-হাঙ্গামা) সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেননা। (সূরা ক্বাছাছ-৭৭)
৬। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের শাস্তি:
পবিত্র কুরআন ও হাদীসেসন্ত্রাসী
এবং জঙ্গিবাদীদের শাস্তির ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তায়ালা বলেন-
إِنَّمَا
جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ
فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ
وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ۚ
ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا ۖ
وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ [٥:٣٣]
যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে সন্ত্রাস
সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়,
তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে
অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ
থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্যে পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে
রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা মায়েদা-৩৩)
প্রিয় নবী (সাঃ) রাহমাতুললিল আলামীন হয়েও সন্ত্রাসীদেরকে
শাস্তি দিয়েছিলেন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ
أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَدِمَ أُنَاسٌ مِنْ عُكْلٍ أَوْ عُرَيْنَةَ، فَاجْتَوَوْا
المَدِينَةَ «فَأَمَرَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِلِقَاحٍ،
وَأَنْ يَشْرَبُوا مِنْ أَبْوَالِهَا وَأَلْبَانِهَا» فَانْطَلَقُوا، فَلَمَّا صَحُّوا، قَتَلُوا رَاعِيَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، وَاسْتَاقُوا النَّعَمَ، فَجَاءَ الخَبَرُ فِي أَوَّلِ النَّهَارِ،
فَبَعَثَ فِي آثَارِهِمْ، فَلَمَّا ارْتَفَعَ النَّهَارُ جِيءَ بِهِمْ، «فَأَمَرَ
فَقَطَعَ أَيْدِيَهُمْ وَأَرْجُلَهُمْ، وَسُمِرَتْ أَعْيُنُهُمْ، وَأُلْقُوا فِي
الحَرَّةِ، يَسْتَسْقُونَ فَلاَ يُسْقَوْنَ». قَالَ أَبُو قِلاَبَةَ: «فَهَؤُلاَءِ
سَرَقُوا وَقَتَلُوا، وَكَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ، وَحَارَبُوا اللَّهَ
وَرَسُولَهُ»(بخارى-233-مسلم-4206)
আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত. তিনি বলেন- উকাইল বা উরায়না গোত্রের কিছু লোক ইসলাম গ্রহনের জন্য মদীনায় এলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। রাসূল (সাঃ) তাদেরকে (সাদকার) উটের কাছে যাবার এবং দুধ ও পেশাব পান করতে বললেন। তারা সেখানে গেল। দুধ ও পেশাব পান করাতে সুস্থ হয়ে রাসূল (সাঃ)-এর রাখালদেরকে হত্যা করে উট নিয়ে পলায়ন করল। এ খবর রাসূল (সাঃ)-এর কাছে পৌছলে, তিনি তাদের পেছনে লোক পাঠায়ে ধরে নিয়ে আসলেন। তারপর রাসূল (সাঃ)-এর আদেশে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হল, তপ্ত পাথুরে ভূমিতে রাখা হল। তারা পানি চেয়েছিল, কিন্তু পানি দেওয়া হয়নি। এভাবে তাদের মৃত্যু হল। এ শাস্তির কারণ তারা চুরি করেছিল, হত্যা করেছিল, ঈমান আনার পর কুফরী করেছিল এবং আল্লাহও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। (বুখারী-২৩৩ ই.ফা, মুসলিম-৪২০৬ ই.ফা)
৭। জিহাদ ও জঙ্গিবাদ
এক নয়:
প্রকৃতি, তাৎপর্য, অর্থ, ভাব, কারণ, প্রকারভেদ, ফলাফল, উদ্দেশ্য ও শরীয়তের হুকুমের ক্ষেত্রে জিহাদ এবং জঙ্গিবাদের মধ্যে ব্যাপক প্রার্থক্য রয়েছে। জিহাদ ইসলামী বিধান ও বৈধ, আর জঙ্গিবাদ ইসলামে নিন্দনীয়, ঘৃণিত ও নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নাগরিকদের জান মাল ও ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করারলক্ষ্যে বহির শত্রæর আক্রমণকে প্রতিহত করার নাম হলো জিহাদ। অর্থাৎ জিহাদ হলো প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের সংরক্ষণ, রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তার মাধ্যম। আর সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ হলো-শান্তি প্রিয় রাষ্ট্রে নাগরিকদের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করা।
৮। ইসলামে মানুষ হত্যা
হারাম:
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
مَن
قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ
النَّاسَ جَمِيعًا
যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা
ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। (সূরা মায়েদা-৩২)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا
بِالْحَقِّ ۗ
সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ্ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। (সূরা বনী
ইসরাঈল-৩৩,আন আম-১৫১)
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَمَن
يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ
اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا [٤:٩٣]
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি
জাহান্নাম, তাতেই সে
চিরকাল থাকবে। আল্লাহ্ তার প্রতি ক্রদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন
এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা নিসা-৯৩)
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَالَّذِينَ
لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي
حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ
أَثَامًا [٢٥:٦٨]يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ
مُهَانًا [٢٥:٦٩]
যারা আল্লাহ্র সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ্
যার হত্যা অবৈধ করেছেন,
সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা
একাজ করে, তারা শাস্তির
সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল
বসবাস করবে। (সূরা ফোরকান-৬৮-৬৯)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ،
وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»
মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি, আর হত্যা করা কুফরী। (বুখারী-৪৬,মুসলিম-১২৫,তিরমিজি-২৬৩৫, নাসায়ী-৪১০৫)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজেই
অনুমিত হয় যে, ইসলাম কখনও
সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদকে লালন করেনি।
রাসূলুল্লাহ বলেছেন,
عَنْ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «مَنْ قَتَلَ
مُؤْمِنًا فَاعْتَبَطَ بِقَتْلِهِ، لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ مِنْهُ صَرْفًا، وَلَا
عَدْلًا»
যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবে, আল্লাহ তা’আলা তার
কোন নফল ও ফরয ইবাদত কবুল করবেন না। (আবুদাউদ হাদীস নং ৪২৭০, হাদীছ ছহীহ)
অন্যত্র এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বর্ণনা করেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَزَوَالُ الدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ
قَتْلِ رَجُلٍ مُسْلِمٍ»
আল্লাহর নিকট সারা দুনিয়া ধ্বংস হওয়ার চেয়েও গুরুতর বিষয় হচ্ছে মুসলিম হত্যা করা। (তিরমিযী- ১৩৯৫ ছহীহ)
৯। মুসলিম কখন হত্যাযোগ্য:
একজন মুসলিম বিভিন্ন কারণে
হত্যাযোগ্য হতে পারেন। এক্ষেত্রে ঐ মুসলিমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণিত
হতে হবে। আর ইসলামী শরীআতে হদ বা শাস্তির বিধান কার্যকর করার দায়িত্ব হচ্ছে দেশের সরকারের।
কোন বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী বা ব্যক্তির নয়। মুসলিম কোন বড় ধরনের অপরাধ করলে তার জন্য ইসলামে
তওবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কোন মুসলিম ব্যক্তি হত্যাযোগ্য অপরাধী প্রমাণিত হলে কেবল
মুসলিম শাসক তাকে হত্যা করতে পারেন। হত্যাযোগ্য অপরাধ হচ্ছে-
عَنْ عَبْدِ
اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَا
يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي
رَسُولُ اللهِ، إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: الثَّيِّبُ الزَّانِي، وَالنَّفْسُ
بِالنَّفْسِ، وَالتَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ "
(ক) কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে। (খ) বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে। (গ) ইসলাম ত্যাগ করলে। (বুখারী-আ.প্র. ৬৩৯৯, ই.ফা. ৬৪১২, মুসলিম-ই.ফা৪২২৮)
১০। মানুষকে ভয়-ভীতি
প্রদর্শন করা হারাম:
মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন
করা ইসলামে জায়েয নয়। তেমনি তাকে হত্যার হুমকি দেয়াও ইসলামে নেহায়েত অন্যায়। এমনকি
একজন মুসলিম অপর মুসলিমকে হাত ও মুখ দ্বারা কোনভাবে কষ্ট দিতে পারে না। এ সম্পর্কে
হাদীছে এসেছে,
عَنْ
عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، قَالَ حَدَّثَنَا أَصْحَابُ، مُحَمَّدٍ
صلى الله عليه وسلم أَنَّهُمْ كَانُوا يَسِيرُونَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه
وسلم فَنَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَانْطَلَقَ بَعْضُهُمْ إِلَى حَبْلٍ مَعَهُ
فَأَخَذَهُ فَفَزِعَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ
يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يُرَوِّعَ مُسْلِمًا "
ইবনু আবী লায়লা (রাঃ) বলেন, মুহাম্মদ এর সাহাবীগণ বলেছেন
যে, তারা রাসূলুল্লাহ
এর সাথে সফর করতেন। এক রাতে তাদের একজন ঘুমিয়ে পড়েছিল। এমন সময়ে তাদের এক সঙ্গী একটি
রশির দিকে অগ্রসর হল,
যা ঐ ঘুমন্ত লোকটির নিকট ছিল এবং এই লোক সে রশিখানা হাতে নিয়ে
নিল। হঠাৎ ঘুমান্ত লোকটি ঘুম হতে উঠে রশিসহ ঐ লোকটিকে নিজের কাছে দেখে ভীষণভাবে ভয়
পেল। তখন রাসূলুল্লাহ বলেছেন, কোন মুসলিমের জন্য এটা জায়েয নয় যে, সে অন্য
কোন মুসলিমকে ভীতি প্রদর্শন করবে। (আবুদাউদ-৫০০৪ হাদীস ছহীহ)
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে ভীতি প্রদর্শন করা হারাম। কাজেই বিভিন্ন স্থানে বোমা মারার হুমকি দিয়ে মানুষকে সন্ত্রস্ত করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
১১। কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে
অস্ত্র উত্তোলন করা হারাম:
কোন মুসলিমকে হত্যা করা
কুফরী এবং তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করা হারাম। তেমনি মুসলিম ব্যক্তির প্রতি অস্ত্র উত্তোলন
করাও ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ। এসম্পর্কে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا»
যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলিমদের) বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করে
সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
(বুখারী-৭০৭০ ই.ফা, মুসলিম-৯৮ ই.ফা)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন,
عَنْ إِيَاسِ
بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: «مَنْ سَلَّ عَلَيْنَا السَّيْفَ فَلَيْسَ مِنَّا»
যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে তরবারী উত্তোলন করল সে আমার শরীআতের
অন্তর্ভুক্ত নয়।
(মুসলিম-ই.ফা. ১৮৩)
সুতরাং যারা মুসলিম হওয়া
সত্তে¡ও মুসলিমের
বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে কিংবা ভীতি প্রদর্শন করে তারা প্রকৃত মুসলিম নয়। তারা মুসলিমের
রীতিনীতিকে বিসর্জন দিয়েছে। তেমনি বর্তমানে যারা ধর্মের নামে বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার
হুমকি দিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করছে এবং বোমা মেরে নির্বিচারে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে
তারা মুসলিমদের দলভুক্ত নয়। তাদেরকে ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত মনে করে তাদের কোন সহযোগীতা
করা যাবে না। তাদেরকে কোন প্রকার আশ্রয়-প্রশ্রয়ও দেয়া যাবে না। বরং তাদের বিরুদ্ধেই
অবস্থান নিতে হবে।
১২। কোন মুসলিমকে হুমকি
দেওয়া হারাম:
অস্ত্র বা ঐ জাতীয় কোন
বস্তু দ্বারা কোন মুসলিমকে হুমকি দেওয়া ও ভয় দেখানো ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। সেটা স্বেচ্ছায়
হোক বা হাসি-তামাশার ছলেও হোক। এমনকি মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার
উদ্দেশ্যে তলোয়ার খোলা অবস্থায় বহন করা থেকেও নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ
هَمَّامٍ، سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ يُشِيرُ أَحَدُكُمْ عَلَى أَخِيهِ بِالسِّلاَحِ، فَإِنَّهُ
لاَ يَدْرِي، لَعَلَّ الشَّيْطَانَ يَنْزِعُ فِي يَدِهِ، فَيَقَعُ فِي حُفْرَةٍ
مِنَ النَّارِ»
রাসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমাদের মাঝে কেউ তার মুসলিম
ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা যেন ইশারা না করে। কেননা হতে পারে যে, তার অনিচ্ছা
সত্তে¡ও শয়তান
তার হস্তদ্বয়ে আঘাত হানার ফলে হতাহত সংঘটিত হবে। অতঃপর সে এ অপরাধের কারণে জাহান্নামে
নিক্ষিপ্ত হবে।
(বুখারী-৭০৭২ ই.ফা, মুসলিম-২৬১৭ ই.ফা)
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত
হয় যে, কেউ কারো
প্রতি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আঘাত করা তো দূরের কথা অস্ত্র দ্বারা ইশারাও করতে পারে না।
কারণ শয়তান সর্বদা মুসলিমের দ্বারা অঘটন ঘটাবার সুযোগ অনুসন্ধান করতে থাকে। হাদীসে এসেছে-
قَالَ
أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَشَارَ إِلَى أَخِيهِ
بِحَدِيدَةٍ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَلْعَنُهُ، حَتَّى يَدَعَهُ وَإِنْ كَانَ
أَخَاهُ لِأَبِيهِ وَأُمِّهِ»
রাসূলুল্লাহ আরো বলেন, কোন ব্যক্তি যদি অস্ত্র দ্বারা তার ভাইকে হুমকি দেয়, তা থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার প্রতি অভিশাপ করতে থাকে, যদিও হুমকি প্রদানকৃত ব্যক্তি তার বৈপিত্রিয় বা বৈমাত্রীয় ভাই হয়। (মুসলিম-৬৪৭৮ ই.সে)।
১৩। আত্মঘাতি বা আত্মহত্যা
ইসলামে অবৈধ:
আত্মহত্যাকরীর পরিণাম জাহান্নাম।
ধর্মের নামে আত্মহত্যাকারীরাও জাহান্নামী। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাথে জিহাদে
অংশগ্রহণকারী আত্মহত্যাকারী সাহাবীকেও জাহান্নামী বলে ঘোষণা করেছেন। হাদীসে এসেছে-
عَنْ سَهْلِ بْنِ
سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَقَى هُوَ وَالمُشْرِكُونَ فَاقْتَتَلُوا، فَلَمَّا مَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى عَسْكَرِهِ وَمَالَ
الآخَرُونَ إِلَى عَسْكَرِهِمْ، وَفِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ لاَ يَدَعُ لَهُمْ شَاذَّةً وَلاَ فَاذَّةً إِلَّا
اتَّبَعَهَا يَضْرِبُهَا بِسَيْفِهِ، فَقِيلَ: مَا أَجْزَأَ مِنَّا اليَوْمَ
أَحَدٌ كَمَا أَجْزَأَ فُلاَنٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ»، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ:
أَنَا صَاحِبُهُ، قَالَ: فَخَرَجَ مَعَهُ كُلَّمَا وَقَفَ وَقَفَ مَعَهُ، وَإِذَا
أَسْرَعَ أَسْرَعَ مَعَهُ، قَالَ: فَجُرِحَ الرَّجُلُ جُرْحًا شَدِيدًا،
فَاسْتَعْجَلَ المَوْتَ، فَوَضَعَ سَيْفَهُ بِالأَرْضِ وَذُبَابَهُ بَيْنَ
ثَدْيَيْهِ، ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَى سَيْفِهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَخَرَجَ الرَّجُلُ
إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ
رَسُولُ اللَّهِ، قَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالَ: الرَّجُلُ الَّذِي ذَكَرْتَ آنِفًا
أَنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَأَعْظَمَ النَّاسُ ذَلِكَ، فَقُلْتُ: أَنَا
لَكُمْ بِهِ، فَخَرَجْتُ فِي طَلَبِهِ، ثُمَّ جُرِحَ جُرْحًا شَدِيدًا،
فَاسْتَعْجَلَ المَوْتَ، فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ فِي الأَرْضِ، وَذُبَابَهُ
بَيْنَ ثَدْيَيْهِ، ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَيْهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ(بخارى--مسلم-207)
কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন। মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে মুশরিকদের কোন একাকী কিংবা দলবদ্ধ কোন শত্রট্টকেই তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেয়নি বরং সবাইকেই তাড়া করে তার তরবারির আঘাতে হত্যা করেছে। তখন (তার ব্যপারে) বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল অমুক ব্যক্তি আজ যে পরিমাণ আমল করেছে অন্য কেউ আজ সে পরিমাণ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তি তো জাহান্নামী। তারা বললো, তা হলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতবাসী হতে পারবে যদি এ ব্যক্তিই জাহান্নামী হয়? তখন কাফেলার মধ্যে থেকে একজন বলল, অবশ্যই আমি তাকে অনুসরণ করে দেখব (যে তার পরিণাম কি ঘটে) (তিনি বলেন) লোকটি যখন দ্রæত চলতো আর ধীরে চলতো সর্বাবস্থায় আমি তার সাথে থাকতাম। পরিশেষে লোকটি আঘাতপ্রাপ্ত হলোআর (আঘাতের যন্ত্রণায়) সে দ্রæত মৃত্যু কামনা করে তার তরবারির বাট মাটিতে স্থাপন করল এবং ধারালো ভাগ নিজের বুক বরাবর রেখে এর উপর সজোরে ঝুঁকে পড়ে আত্মহত্যা করলো। তখন (অনুসরণকারী) সাহাবী নবী (সাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন নবীজি জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার ? তিনি তখন নবী (সাঃ)-কে সব ঘটনা জানালেন। (বুখারীঃআ.প্র.৩৮৮৬, ই.ফা. ৩৮৮৯, মুসলিমঃ ই.ফা.২০৭, ই.সে. ২১৪)
আত্মহত্যা সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা বলেন,
وَلَا تُلْقُوا
بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ [٢:١٩٥]
আর তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ্ অনুগ্রহকারীদেরকে
ভালবাসেন।
(সূরা বাক্বারা-১৯৫)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
وَلَا
تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ
رَحِيمًا [٤:٢٩]وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ
نَارًا ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ
يَسِيرًا [٤:٣٠]
আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্গন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহ্র পক্ষে খুবই সহজসাধ্য। (সূরা নিসা-২৯-৩০)
১৪। আত্মঘাতি বা আত্মহত্যার
শাস্তি:
হাদীসে এসেছে-
قَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ
فَحَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ
خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا، وَمَنْ شَرِبَ سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ
فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا،
وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِي نَارِ
جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا»
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা
আত্মহত্যা করবে,
সে অস্ত্র তার হাতে থাকবে, জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র
দ্বারা সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল
অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের
আগুনের মধ্যে অবস্থান করে উক্ত বিষ পান করতে থাকবে, এভাবে সে চিরকাল অবস্থান
করবে। আর যে ব্যক্তি নিজকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, যে ব্যক্তি
সর্বদা পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে
ব্যক্তি সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। (বুখারী- আ. প্র. ৫৩৫৪, ই.ফা. ৫২৫০, মুসলিম; ই.ফা. ২০১, ই.সে. ২০৮)
হাদীসে এসেছে-
قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ
يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِي يَطْعَنُهَا يَطْعَنُهَا فِي النَّارِ» .
رَوَاهُ البُخَارِيّ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শ্বাসরুদ্ধ
করে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে সর্বক্ষণ শ্বাসরুদ্ধ করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর
যে ব্যক্তি অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামে সর্বক্ষণ অস্ত্রের আঘাতে আত্মহত্যা
করতে থাকবে। (বুখারী-আ.প্র.
১২৭৪, ই.ফা. ১২৮১)
উল্লেখিত হাদীস সমূহ দ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি যা দ্বারা আত্মহত্যা করবে জাহান্নামে সে বস্তু তার হাতে থাকবে এবং সে তথায় সর্বক্ষণ তাদ্বারা আত্মহত্যা করতে থাকবে। এমন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হবে চিরস্থায়ী বাসস্থান। ধর্মের নামে কেই আত্মহত্যা করলেও তার পরিণতি হবে অভিন্ন। সুতরাং ধর্মের নামে এসব আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরাও জাহান্নামে একইভাবে আত্মহত্যা করতে থাকবে এবং তারা সেখানে চিরদিন অবস্থান করবে।
১৫। মদ্দ কথা:
আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে
এটাকে সৎকাজ বলে আহŸানের প্রচেষ্টা
কিংবা ধ্বংসাত্মক কাজে আত্মহত্যা করে তাকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বলে আখ্যায়িত করে
শাহাদাৎ লাভের ধারণা যারা করে, তারা জাহান্নামে যাওয়ার এবং শাস্তি পাওয়ার হক্কদার হয়ে যায়।
তাই এসব কর্মকান্ডকে জিহাদ বলার কোন অবকাশ নেই, যেসব কাজে শরয়ী কোন কল্যাণ
নিহিত নেই সেসব অকল্যাণকর,
অনিষ্টকর, ঝুকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর
কাজে নিজেকে সোপর্দ ও সম্মুখীন করাও বৈধ নয়।
সুতরাং কুরআন ও হাদীছের
উপরোক্ত দলীল-প্রমাণ দ্বারা বুঝা যায় যে, যারা জিহাদ বা ইসলামী শাসনব্যবস্থা
কায়েমের নামে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অফিস-আদালত, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা
ও নিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বোমা হামলা করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে
তারা নিছক সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কাজ করছে। যারা এ সমস্ত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তারা
ইসলাম ও মুসলিমদের দুশমন,
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতির শত্রæ। আল্লাহ আমাদের
সবাইকে ইসলামের সঠিক বুঝ দান করে এহেন ঘৃন্যতম কর্মকান্ড থেকে হিফাজত করুন! আমীন!!

No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com