Thursday, October 08, 2020

কুরআনের আয়না (১) কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব

 


কুরআনের আয়না

১.কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ----

 

শুরুকথাঃ

পবিত্র কুরআন শরীফ যে মহান আল্লাহতায়ালারই বাণী এবং এই ধরনের কিতাব মানুষের পক্ষে তৈরী করা আদৌ সম্ভব নয়। এর অসংখ্য প্রমাণ কুরআনেই বর্তমান। স্বয়ং কুরআনই একাধিকবার আরবের অমুসলিমদের খোলাখুলী চ্যালেঞ্জ করছে।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও বিধানাবলীর একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের উপর এটি একটি মহা নিয়ামত। এর মাধ্যমে বান্দারা তাদের প্রভুর নৈকট্য হাসিল করতে পারে। এর আনুগত্যের মধ্যে রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির সনদ। এতে উল্লেখিত বিধান যারা বাস্তব জীবনে মেনে চলবে তারা কখনও গোমরাহ (বিপথগামী) হবে না।

 আল-কুরআনের পরিচিতি    

প্রত্যেকটি বিষয়ের একটি পরিচিতি থাকে যার দ্বারা ঐ বিষয়ের উপর জ্ঞানঅর্জন করে। তাই কুরআনেরও বিভিন্ন পরিচিতি রয়েছে।

১.আল-কুরআন একটি সম্মানিত গ্রন্থঃ

পবিত্র কুরআনেই কুরআনকে সম্মানিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন

إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ ﴿الواقعة: ٧٧﴾

নিশ্চয় ইহা সম্মানিত কুরআন” (সুরা ওয়াকেয়া-৭৭)। এ সম্মানের প্রকৃতি কিরূপ তা মহানবী (স.) এভাবে বলেছেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «الْقُرْآنُ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ» (الدارمى : 3401)

 ‘‘আসমান ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তম্মধ্যে কুরআনই আল্লাহ তাআলার নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয়।’’ (দারেমী-৩৪০১)

অন্য একখানা হাদীসে এসেছে,

وَفَضْلُ كَلَامِ اللَّهِ عَلَى سَائِرِ الْكَلَامِ كَفَضْلِ اللَّهِ عَلَى خَلْقِهِ "( رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ)

 ‘‘অন্যান সকল বাণীর উপর আল্লাহর বাণী তথা কুরআনের মর্যাদা হল সেরূপ যেমন সমস্ত সৃষ্টি জীবের উপর স্বয়ং আল্লাহ তাআলার মর্যাদা।’’ (তিরমিযী-২৯২৬; মিশকাত-২১৩৬)

২.শেফা (আরোগ্যদানকারী):

কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء ﴿الإسراء: ٨٢﴾

‘‘আর আমি কুরআন নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্য শেফা (আরোগ্যকারী)।’’ (সূরা বনী ইসরাইল-৮২)

আত্মিক ও শারীরিক উভয় রোগের শেফা বা প্রতিষেধক হতে পারে। যেমনঃ

৩.আত্মিক শেফা বা প্রতিষেধকঃ

এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ هَذِهِ الْقُلُوبَ تَصْدَأُ كَمَا يَصْدَأُ الْحَدِيدُ إِذَا أَصَابَهُ الْمَاءُ» . قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا جِلَاؤُهَا؟ قَالَ: «كَثْرَةُ ذِكْرِ الْمَوْتِ وَتِلَاوَةِ الْقُرْآنِ» )رَوَى الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ(

 ‘‘লোহা পানির সংস্পর্শে আসলে তাতে যেমন মরিচা ধরে, তেমনি (মানুষের) এ অন্তরসমূহেও মরিচা ধরে (অর্থাৎ অন্তর রোগগ্রস্থ হয়)। রাসূলুল্লাহ(স.)-কে জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলাল¬াহ! তা পরিস্কার করার উপায় কি? উত্তরে তিনি বললেন: বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং কুরআন তিলাওয়াত করা।’’ (মিশকাত, খ.১, পৃ. ৬৬৬, হাঃ ২১৬৮; বায়হাকী)

 ৪.শারীরিক শেফা বা প্রতিষেধকঃ

যুগে যুগে অনেক ঈমানদার এ কুরআনকে বিভিন্ন রোগীর উপর প্রয়োগ করে অলৌকিক ফলাফল লাভ করেছেন। হাদীসে রয়েছে,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: انْطَلَقَ نَفَرٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفْرَةٍ سَافَرُوهَا، حَتَّى نَزَلُوا عَلَى حَيٍّ مِنْ أَحْيَاءِ العَرَبِ، فَاسْتَضَافُوهُمْ فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمْ، فَلُدِغَ سَيِّدُ ذَلِكَ الحَيِّ، فَسَعَوْا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ لاَ يَنْفَعُهُ شَيْءٌ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَوْ أَتَيْتُمْ هَؤُلاَءِ الرَّهْطَ الَّذِينَ نَزَلُوا، لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ عِنْدَ بَعْضِهِمْ شَيْءٌ، فَأَتَوْهُمْ، فَقَالُوا: يَا أَيُّهَا الرَّهْطُ إِنَّ سَيِّدَنَا لُدِغَ، وَسَعَيْنَا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ لاَ يَنْفَعُهُ، فَهَلْ عِنْدَ أَحَدٍ مِنْكُمْ مِنْ شَيْءٍ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: نَعَمْ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرْقِي، وَلَكِنْ وَاللَّهِ لَقَدِ اسْتَضَفْنَاكُمْ فَلَمْ تُضَيِّفُونَا، فَمَا أَنَا بِرَاقٍ لَكُمْ حَتَّى تَجْعَلُوا لَنَا جُعْلًا، فَصَالَحُوهُمْ عَلَى قَطِيعٍ مِنَ الغَنَمِ، فَانْطَلَقَ يَتْفِلُ عَلَيْهِ، وَيَقْرَأُ: الحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ العَالَمِينَ فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ، فَانْطَلَقَ يَمْشِي وَمَا بِهِ قَلَبَةٌ، قَالَ: فَأَوْفَوْهُمْ جُعْلَهُمُ الَّذِي صَالَحُوهُمْ عَلَيْهِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: اقْسِمُوا، فَقَالَ الَّذِي رَقَى: لاَ تَفْعَلُوا حَتَّى نَأْتِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَذْكُرَ لَهُ الَّذِي كَانَ، فَنَنْظُرَ مَا يَأْمُرُنَا، فَقَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرُوا لَهُ، فَقَالَ: «وَمَا يُدْرِيكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ»، ثُمَّ قَالَ: «قَدْ أَصَبْتُمْ، اقْسِمُوا، وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا» فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، (بخارى : 2276)

 ‘‘ আবূ সাঈদ (স.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর নবীর (স.) সাহাবাদের একটি দল সফরে বের হল। সফরে তারা আরবীয় এক গোত্রে গিয়ে উঠল এবং তাদের নিকট মেহমানদারী প্রার্থনা করল, কিন্তু গোত্রীয় লোকেরা তাদের মেহমানদারী করতে সম্মত হল না। ইতিমধ্যে তাদের গোত্রপতিকে সাপে দংশন করল। তারা তাদের গোত্রপতির আরোগ্যের জন্য যথাসম্ভব সব ধরণের চেষ্টা করল, কিন্তু তাতে কোন লাভ হল না। তাদের কতক লোক বলল, যদি তোমরা ঐ কাফিলার নিকট যেতে, যারা তোমাদের নিকট মেহমানদারী প্রার্থনা করেছিল হয়ত তাদের কারো নিকট আরোগ্যের কিছু থাকতে পারে। কথামত তারা ঐ কাফিলার নিকট গেল এবং বলল, হে কাফিলাবাসী! আমাদের সরদারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা তার আরোগ্যের জন্য যথাসাধ্য সবকিছুই করেছি, কিন্তু তাতে কোন লাভ হয় নি। আপনাদের মধ্যে কারো নিকট কি এটা আরোগ্যের কিছু আছে? সাহাবাদের একজন বললেন: আল্লাহর শপথ! আমি ঝাড় ফুঁক করে থাকি, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা আপনাদের নিকট মেহমানদারী প্রার্থনা করেছিলাম, আপনারা আমাদের মেহমানদারী করতে সম্মত হন নি। কাজেই আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাড় ফুঁক করব না যতক্ষণ না এর বিনিময়ে কোন সম্মানী ধার্য করা হবে। অবশেষে তাদের মাঝে এক পাল ছাগলের বিনিময়ে এর সমঝতা হল। তিনি -সূরা ফাতিহা পড়ে তার উপর দম দিলেন, এতে সে আরোগ্য লাভ করল। চুক্তিমত তারা তাদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করল। তাদের কেউ বললেন, তোমরা ছাগলগুলো বন্টন করে নাও। কিন্তু দম দাতা বললেন, তোমরা এমনটি কর না, যতক্ষণ না আমি নবীর (স.) নিকট গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বলব এবং দেখব তিনি কী সিদ্ধান্ত দেন। তারা নবীর নিকট আসল এবং ঘটনা বর্ণনা করল। নবীজী (স.) বললেন, তুমি কেমনে জানলে যে এটা ঝাড় ফুঁক (রোগারোগ্যের) উপযোগী সূরা ? তুমি ঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বন্টন করে নাও এবং আমার জন্যও ইহার কিছু অংশ রেখ, একথা বলে নবীজী হাঁসলেন।’’ (সহীহ বুখারী-২২৭৬)

 ৫.হিদায়াত (পথ প্রদর্শনকারী)গ্রন্থঃ

আল্লাহ তাআলা বলেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ ﴿البقرة: ١٨٥﴾

‘‘রমদান মাস সেই মাস যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য দিক নির্দেশনা, হিদায়াতের বিস্তারিত বর্ণনা এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়কারী একটি গ্রন্থ।’’ (সূরা বাকারা-১৮৫)

মহানবী (স.) বলেছেন,

عَن مَالك بن أنس مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ .(رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأ ,مشكوة : 186»

 ‘‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন তোমরা জিনিস দুটি আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন তোমরা গোমরাহ হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাহ।’’ (মিশকাত, খ.১, পৃ. ৬৬, হাঃ ১৮৬; মুয়াত্বা)

৬.সন্ধেহমুক্ত গ্রন্থঃ

দুনিয়ার যত নামী-দামী লেখকই হোক না কেন তিনি যখন কোন বই রচনা করে তা প্রকাশ করেন তখন সে বইয়ের শুরুতেই পাঠকদের উদ্দেশ্যে এ মর্মে আবেদন রাখেন যে, “কোন সহৃদয় পাঠক যদি বইটিতে কোন ভুল-ত্রুটি লক্ষ্য করেন তাহলে আমাদের জানাবেন, পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে নেয়া হবে। কিন্তু পবিত্র আল কুরআন এমন গ্রন্থ যাতে কোন ধরণের ভুল-ভ্রান্তি বা সন্ধেহ-সংশয় নেই, আল্লাহ তাআলা এ গ্রন্থের শুরুতে ঘোষণা করেছেন,

ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ ﴿البقرة: ٢﴾

 ‘‘ইহা এমন একটি গ্রন্থ যাতে কোন সন্ধেহ-সংশয় নেই এবং ইহা মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত।” (সূরা বাকারা-০২)

এ জন্য যে ইহার হিফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন,

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ﴿الحجر: ٩﴾

‘‘আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ নাযিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’’ (সূরা হিজর-০৯)

তবে এমন কিছু লোক অতীতেও ছিল বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে যারা এ কুরআনের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে থাকবেন, তাদেরই উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এভাবে যে,

وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ﴿البقرة: ٢٣﴾

‘‘আমি আমার বান্দার প্রতি যা (কুরআন) নাযিল করেছি এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে তাহলে এর মত একটি-সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।’’ (সূরা বাকারা-২৩)

এ চ্যালেঞ্জের যে তারা কোন জবাব দিতে পারবে না তাও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন,

قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَـذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ﴿الإسراء: ٨٨﴾

‘‘বলুন: যদি মানব ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্যও করে; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।’’ (সূরা বনী ইসরাইল-৮৮)

৭.কুরআনের অন্তরঃ

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا، وَقَلْبُ القُرْآنِ يس، وَمَنْ قَرَأَ يس كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ القُرْآنِ عَشْرَ مَرَّاتٍ» (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ ,مشكوة : 2147)

 ‘‘প্রত্যেকটি বস্তুর একটি অন্তর থাকে আর কুরআনের অন্তর হল (সূরা ইয়াসিন)। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাআলা তাকে দশবার কুরআন খতমের সওয়াব দান করবেন।’’ (তিরমিযী; মিশকাত-২১৪৭)

 ৮.কুরআন হল আল্লাহর রশিঃ

আল্লাহ বলেন,

فَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ، فَإِنَّ حَبْلَ اللَّهِ الْقُرْآنُ " (الدارمى : 3360)

 ‘‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে মজবুত করে ধারণ কর, আর আল্লাহর রজ্জু হচ্ছে পবিত্র কুরআন।’’ (দারেমী-৩৩৬০)

 কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব মাহাত্ম্যঃ

গ্রন্থ হিসেবে কুরআন যেমন একটি মহৎ গ্রন্থ, এ কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়াও একটি মহৎ কাজ। হাদীসে রয়েছে,

 عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: « خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ القُرْآنَ وَعَلَّمَه » (رَوَاهُ البُخَارِيّ ,مشكوة : 2109)

‘‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী; মিশতকাত-২১০৯)

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ، لَأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللَّهِ، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ مِائَةَ رَكْعَةٍ، وَلَأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ بَابًا مِنَ الْعِلْمِ، عُمِلَ بِهِ أَوْ لَمْ يُعْمَلْ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ أَلْفَ رَكْعَةٍ» (ابن ماجة : 219)

 আবূ যার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) আমাকে বললেন, হে আবূ যার! সকালবেলা কুরআনের একটি আয়াত শিক্ষা করা তোমার জন্য একশত রাকআত (নফল) সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। সকালবেলা জ্ঞানের কিছু অংশ শিক্ষা করা তোমার জন্য এক হাজার রাকআত সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম, তদনুযায়ী কাজ করা হোক বা না হোক।” (ইবন মাজাহ-২১৯)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَشْرَافُ أُمَّتَيْ حَمَلَةُ الْقُرْآنِ وَأَصْحَابُ اللَّيْلِ» (رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَان ,مشكوة : 1239)

 আমার উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ লোক তারা, যারা কুরআনের বাহক এবং রাত্রি জাগরণকারী।’’ (বায়হাকী; মিশকাত-১২৩৯)

অপর হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شاق لَهُ أَجْرَانِ» (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ ,مشكوة : 2112)

 আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, কুরআন মজীদে দক্ষ (অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞান রাখে ও সে অনুযায়ী আমল করে) ব্যক্তি (আখিরাতে), সম্মানিত নেককার লিপিকার ফেরেশ্তাদের সাথে থাকবে। যে ব্যক্তি ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে কুরআন পড়ে সে দুটি পুরস্কার পাবে।’’ (বুখারী; মুসলিম; আবূ দাঊদ; তিরমিযী; নাসাঈ; আহমদ; দারেমী; মিশকাত-২১১২)

 কুরআনের প্রতি অবহেলার পরিণামঃ

কুরআনের প্রতি অবহেলা দুধরণের হয়ে থাকে।

প্রথম দিক

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করতে না জানা, কুরআনে আল্লাহর আদেশ উপদেশ জানতে চেষ্টা না করা ইত্যাদি। একজন মুমিনের জন্য এটি খুবই দুঃখজনক। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ» (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ ,مشكوة : 2135)

 ‘‘যার অš¹রে কুরআনের কোন শিক্ষা নেই, সে যেন একটা বিরান ঘরের মত।’’ (তিরমিযী; দারেমী; মিশকাত-২১৩৫)

দ্বিতীয় দিক

কুরআনের তিলাওয়াত ও কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে পরক্ষণে তা আবার ভুলে যাওয়া। কুরআনের শিক্ষা ভুলে যাওয়ার পরিণতি সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে,

عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مَا من امْرِئٍ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ ثُمَّ يَنْسَاهُ إِلَّا لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَجْذَمَ» (رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ والدارمي ,مشكوة : 2200)

 যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে অতঃপর তা ভুলে যায় (তেলাওয়াত ভুলে যাওয়া অথবা কুরআনের কোন শিক্ষা ভুলে যাওয়া) কিয়ামতের দিন সে অঙ্গহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে।’’ (আবূ দাঊদ; দারেমী; মিশকাত-২২০০)

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «عُرِضَتْ عَلَيَّ أُجُورُ أُمَّتِي حَتَّى الْقَذَاةُ يُخْرِجُهَا الرَّجُلُ مِنَ الْمَسْجِدِ وَعُرِضَتْ عَلَيَّ ذُنُوبُ أُمَّتِي فَلَمْ أَرَ ذَنْبًا أَعْظَمَ مِنْ سُورَةٍ مِنَ الْقُرْآنِ أَوْ آيَةٍ أُوتِيهَا رَجُلٌ ثُمَّ نَسِيَهَا» (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد ,مشكوة : 720)

 ‘‘আমার নিকট আমার উম্মতের সেসব আমল পেশ করা হয় বা আমাকে দেখানো হয় যা সওয়াবের কারণ। এমনকি সে মসজিদ থেকে যে আবর্জনা অপসারণ করে তাও (আমার নিকট পেশ করা হয়)।একইভাবে আমার উম্মতের গুনাহসমূহকেও আমার নিকট পেশ করা হয়। আমি তার গুনাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারে দেখতে পাব সে গুনাহ যা কুরআনের আয়াত অথবা সূরা সে মুখস্ত করেছিল অতঃপর তা ভুলে গিয়েছে।’’ (তিরমিযী; আবূ দাঊদ; মিশকাত-৭২০)

তাইতো মহানবী (স.) কুরআনের জ্ঞান সংরক্ষণের প্রতি অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন,

عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَعَاهَدُوا الْقُرْآنَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهْوَ أَشَدُّ تَفَصِّيًا مِنَ الْإِبِلِ فِي عُقُلِهَا» (مُتَّفق عَلَيْهِ)

‘‘তোমরা এ কুরআনের ব্যাপারে খুবই যতœবান হও (যাতে ভুলে না যাও)। যে সত্ত¡ার কব্জায় মুহাম্মদের প্রাণ তার শপথ! উট তার বাঁধন থেকে যেভাবে পালাতে চায়, কুরআন তার চেয়েও দ্রæত মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে চায়।’’(বুখারী; মুসলিম; মিশকাত, খ. ১, পৃ. ৬৭১, হা-২১৮৭)

 কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত:

 ১.তিলাওয়াত কারীর জন্য সুপারিশ করবেঃ

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন,

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ» )رَوَاهُ مُسلم ,مشكوة : 2120)

 ‘‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কেননা এ কুরআন কিয়ামতের দিন তার বাহকদের জন্য সুপারিশকারী হিসেবে উপস্থিত হবে।’’ (মুসলিম; মিশকাত-২১২০)

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فَاسْتَظْهَرَهُ فَأَحَلَّ حَلَالَهُ وَحَرَّمَ حَرَامَهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ كُلِّهِمْ قَدْ وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ (رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ ,مشكوة : 2141)

 ‘‘যে কুরআন পড়েছে এবং তা মুখস্থ রেখেছে, অতঃপর তার হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম জেনেছে (আমল করেছে), আল্লাহ তাকে বেহেশতে দাখিল করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য দোযখ অবধারিত হয়েছিল।’’ (আহদম; তিরমিযী; ইবন মাজাহ; দারেমী; মিশকাত-২১৪১)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ" (رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان)

 ‘‘রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট সুপারিশ করবে।’’ (বায়হাকী; মিশকাত, খ. ১, পৃ. ৬১২, হা ঃ ১৯৬৩)

২.প্রতি অক্ষরে দশ নেকীঃ

এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُولُ: آلم حَرْفٌ. أَلْفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ " (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ)

 ‘‘যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের একটি অক্ষর তিলাওয়াত করবে, সে বিনিময়ে একটি নেকী পাবে। আর তার একটি নেকীই দশ নেকীর সমতুল্য। আমি বলছি না যে আলিফ-লাম-মীমএকটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।’’ (তিরমিযী; দারেমী; মিশকাত-২১৩৭)

 ৩.প্রশান্তি নাযিল হয়ঃ

মহান আল্লাহ বলেন,

«وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ» )رَوَاهُ مُسلم(

 ‘‘কোন সম্প্রদায় যখন আল্লাহর ঘর সমূহের মধ্য থেকে কোন একটি ঘরে (মসজিদে) একত্রিত হয় এবং আল্লাহর কিতাব (কুরআন) তেলাওয়াত করে, পরস্পর এর বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করে, তখন তাদের প্রতি নাযিল হয় প্রশান্তি, রহমত তাদেরকে ঘিরে ধরে এবং রহমতের ফেরেশ্তাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে রাখেন। আর তাদের নাম আল্লাহ তাআলা তার নিকটবর্তীদের সাথে আলোচনা করেন।’’

(মুসলিম; মিশকাত-২০৪)

 ৪.কুরআন তিলাওয়াতকারীর রূযি-রোজগার প্রশস্ত হয়ঃ

আল্লাহ পাক বলেন,

إِنَّ الْبَيْتَ لَيَتَّسِعُ عَلَى أَهْلِهِ وَتَحْضُرُهُ الْمَلَائِكَةُ وَتَهْجُرُهُ الشَّيَاطِينُ، وَيَكْثُرُ خَيْرُهُ أَنْ يُقْرَأَ فِيهِ الْقُرْآنُ، وَإِنَّ الْبَيْتَ لَيَضِيقُ عَلَى أَهْلِهِ وَتَهْجُرُهُ الْمَلَائِكَةُ، وَتَحْضُرُهُ الشَّيَاطِينُ، وَيَقِلُّ خَيْرُهُ أَنْ لَا يُقْرَأَ فِيهِ الْقُرْآنُ» (سنن الدارمي : 3352)

 ‘‘কোন বাড়িতে যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন বাড়িটি তার অধিবাসীদের জন্য প্রশস্ত হয়, রহমতের ফেরেশতাগণ তাতে হাজির থাকেন, শয়তানরা ঐ গৃহ পরিত্যাগ করে, আর যাবতীয় কল্যাণ তাতে বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে কোন বাড়িতে যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয় না, তখন বাড়িটি তার জন্য সংকীর্ণ হয়, রহমতের ফেরেশতাগণ দূর হয়ে যান, শয়তান উপস্থিত হয় এবং সব ধরণের কল্যান হ্রাস পায়।’’ (দারেমী-৩৩৫২)

 ৫.ফেরেশতাদের অবিরাম দুআ কামনা:

হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدَةَ، قَالَ: «إِذَا خَتَمَ الرَّجُلُ الْقُرْآنَ بِنَهَارٍ، صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُمْسِيَ، وَإِنْ فَرَغَ مِنْهُ لَيْلًا، صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُصْبِحَ» (سنن الدارمى: 3518)

 ‘‘যখন কোন ব্যক্তি দিনের বেলা পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে তখন সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমতের দুআ করতে থাকেন। আর রাতের বেলা সে যখন অবসর হয় তখন সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমত কামনা করতে থাকেন।’’ (দারেমী-৩৫১৮)

 ৬.কুরআন তিলাওয়াতকারীকে আল্লাহ শাস্তি দিবেন না:

এ সম্পর্কে রাসূল (স.) বলেছেন,

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: «اقْرَءُوا الْقُرْآنَ وَلَا تغُرَّنَّكُمْ هَذِهِ الْمَصَاحِفُ الْمُعَلَّقَةُ، فَإِنَّ اللَّهَ لَنْ يُعَذِّبَ قَلْبًا وَعَى الْقُرْآنَ» (سنن الدارمى: 3362)

 ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঐ অন্তরকে শাস্তি দিবেন না যাতে কুরআনের জ্ঞান রক্ষিত রয়েছে।’’ (দারেমী-৩১৮৫)

 ৭.কুরআন তিলাওয়াতকারী আল্লাহর পরিবারের সদস্যঃ

এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ أَهْلِينَ مِنَ النَّاسِ». قِيلَ: مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَهْلُ الْقُرْآنِ» (سنن الدارمى: 3369)

 ‘‘মানুষের মধ্য থেকে কতিপয় লোক আল্লাহ তাআলার পরিবারের সদস্যভুক্ত। জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসূলাল¬াহ! (স.) তারা কারা? তিনি বললেন: কুরআনের ধারক-বাহকগণই আল্লাহর পরিবারের সদস্য।’’ (দারেমী-৩৩৬৯)

 ৮.জান্নাতী টুপি ও পোশাক পরানো হবেঃ

এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي صَالِحٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: " اقْرَءُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ نِعْمَ الشَّفِيعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. إِنَّهُ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: يَا رَبِّ، حَلِّهِ حِلْيَةَ الْكَرَامَةِ، فَيُحَلَّى حِلْيَةَ الْكَرَامَةِ، يَا رَبِّ، اكْسُهُ كِسْوَةَ الْكَرَامَةِ فَيُكْسَى كِسْوَةَ الْكَرَامَةِ، يَا رَبِّ، أَلْبِسْهُ تَاجَ الْكَرَامَةِ، يَا رَبِّ ارْضَ عَنْهُ، فَلَيْسَ بَعْدَ رِضَاكَ شَيْءٌ " (سنن الدارمى: 3354)

 ‘‘তোমরা কুরআন পাঠ কর, কেননা কিয়ামতের দিনে ইহা কতই না উত্তম সুপারিশকারী! কিয়ামতের দিন ইহা (কুরআন পাঠকারীর জন্য) বলবে, হে আল্লাহ! তাকে সম্মানের পোশাক পরিয়ে দিন! অতঃপর তাকে সম্মানের পোশাক পরিয়ে দেয়া হবে। হে আল্লাহ! তাকে সম্মানের বস্ত্র পড়িয়ে দিন। অতঃপর তাকে সম্মানের বস্ত্র পড়িয়ে দেয়া হবে। হে আল্লাহ! তাকে সম্মানের মুকুট পরিয়ে দিন। অতঃপর তাকে সম্মানের টুপি পরিয়ে দেয়া হবে। হে আল্লাহ! আপনি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, আর আপনার সন্তুষ্টির পর তো অন্য কিছু নেই।’’ (দারেমী-৩৩৫৪)

 ৯.ফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবে নাঃ

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: «مَنْ قَرَأَ فِي لَيْلَةٍ بِعَشْرِ آيَاتٍ، لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ» (سنن الدارمى: 3488)

 ‘‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে তার নাম গাফিলদের তালিকায় লিখা হবে না।’’ (দারেমী-৩৩১০)

 ১০.অন্যের তিলাওয়াত শ্রবণ করাঃ

            একজন লোকের দিনের প্রতিটি মুহুর্তেই নিজে কুরআন তিলাওয়াত করার ইচ্ছা, স্বাদ, রুচি বা শক্তি হয়ে উঠে না, তাই মাঝে মাঝে অন্যের থেকেও তিলাওয়াত শ্রবণ করা আবশ্যক। এ স¤পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেন,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «مَنِ اسْتَمَعَ إِلَى آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ، كَانَتْ لَهُ نُورًا» (سنن الدارمى: 3410)

 ‘‘যে ব্যক্তি অন্যের থেকে একটি আয়াত তিলাওয়াত শ্রবণ করবে ইহা তার জন্য নূর হবে।’’ (দারেমী-৩২৩৩)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ، قَالَ: «إِنَّ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ لَهُ أَجْرٌ، وَإِنَّ الَّذِي يَسْتَمِعُ لَهُ أَجْرَانِ» (سنن الدارمى: 3409)

 ‘‘নিশ্চয় যে কুরআন তিলাওয়াত করে, তার জন্য রয়েছে এক সওয়াব। আর যে তা শ্রবণ করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।’’ (দারেমী-৩৪০৯)

 ১১.যাদের জন্য দ্বিগুণ সওয়াবঃ

যারা কুরআন শিক্ষায় দুর্বল, কিন্তু তা সত্তে¡ও তিলাওয়াত পরিত্যাগ করে না, আটকা-আটকা ভাব নিয়ে তথা কাঠিন্যতা মোকাবেলা করে হলেও তিলাওয়াত জারি রাখে, তাদের জন্য দ্বিগুণ সওয়াবের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شاق لَهُ أَجْرَانِ» (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ ,مشكوة : 2112)

 আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, কুরআন মজীদে দক্ষ (অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞান রাখে ও সে অনুযায়ী আমল করে) ব্যক্তি (আখিরাতে), সম্মানিত নেককার লিপিকার ফেরেশ্তাদের সাথে থাকবে। যে ব্যক্তি ঠেকে ঠেকে কষ্ট করে কুরআন পড়ে সে দুটি পুরস্কার পাবে।’’ (বুখারী; মুসলিম; আবূ দাঊদ; তিরমিযী; নাসাঈ; আহমদ; দারেমী; মিশকাত-২১১২)

অপর একটি হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ: اقْرَأْ وَارَتْقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا " (رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ)

 ‘‘সেদিন কুরআনের বাহককে বলা হবে তুমি দুনিয়াতে যেমন থেমে থেমে তিলাওয়াত করতে তেমনি করে তেলাওয়াত কর এবং এক একটি উপরের স্তরে উঠতে থাক। তোমার ঠিকানা হবে তোমার শেষ আয়াতের নিকটে।’’ (আহমদ; তিরমিযী; আবূ দাঊদ; নাসাঈ; মিশকাত-১৪৬৬)

 ১২.আল-কুরআনের উপর আমলঃ

কুরআনের জ্ঞান অর্জন, কুরআনের তিলাওয়াত ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ থাকলে কেবল একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন হয় না বরং আমাদেরকে কুরআনের উপর আমল করতে হবে, ইহার হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জ্ঞান করে সে অনুযায়ী জীবন গড়তে হবে। কুরআনের উপর আমলের ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (স.)বলেছেন,

عَن معَاذ الْجُهَنِيّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَعَمِلَ بِمَا فِيهِ أُلْبِسَ وَالِدَاهُ تَاجًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ضَوْءُهُ أَحْسَنُ مِنْ ضَوْءِ الشَّمْسِ فِي بُيُوتِ الدُّنْيَا لَوْ كَانَتْ فِيكُمْ فَمَا ظَنُّكُمْ بِالَّذِي عَمِلَ بِهَذَا؟» )رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد(

 ‘‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা (বিধি বিধান) রয়েছে তার উপর আমল করেছে, তার মা-বাবাকে কিয়ামতের দিন এমন এক তাজ (মুকুট) পরানো হবে যার কিরণ সূর্যের কিরণ অপেক্ষাও উজ্জ্বল হবে। যদি সূর্য তোমাদের ঘরে থাকত। এখন তার সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা যে (স্বয়ং) তার উপর আমল করেছে? (অর্থাৎ বাবারই যদি এত এত সম্মান হয় তবে যে আমল করেছে তার কতই না সম্মান হবে)।’’ (আহমদ; আবূ দাঊদ; মিশকাত-২১৩৯)

 ১৩.আল-কুরআনের উপর আমল না করার পরিণামঃ

যে ব্যক্তি মৌখিক ভাবে দাবী করে যে, সে ঈমানদার। কিন্তু বাস্তব জীবনে কুরআন অনুযায়ী আমল করে না তাহলে তার দাবীর যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয় না। তাই তো রাসূলুল্লাহ (স.)বলেছেন,

عَنْ صُهَيْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا آمَنَ بِالْقُرْآنِ مَنِ اسْتَحَلَّ مَحَارِمَهُ» )رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ)

 ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের হারামকে হালাল জেনেছে, সে কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনি।’’ (তিরমিযী; মিশকাত-২২০৩)

অন্য হাদীসে রয়েছে,

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن الله يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ» (رَوَاهُ مُسلم)

 ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এ কুরআনের দ্বারা কতক সম্প্রদায়ের সম্মানকে বাড়িয়ে দেন। আবার কতককে তিনি নিচে নামিয়ে দেন।’’ (সুসলিম; মিশকাত-২১১৫)

 ১৪.কুরআনিক গবেষণার তাগীদঃ

হাদীসে কুদসীতে মহান ও বরকতময় রব বলেন,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَقُولُ الرَّبُّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: مَنْ شَغَلَهُ الْقُرْآنُ عَنْ ذِكْرِي وَمَسْأَلَتِي أَعْطَيْتُهُ أَفْضَلَ مَا أُعْطِي السَّائِلِينَ. وَفَضْلُ كَلَامِ اللَّهِ عَلَى سَائِرِ الْكَلَامِ كَفَضْلِ اللَّهِ عَلَى خَلْقِهِ " (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ)

 ‘‘আমার জিকির করা এবং আমার নিকট চাওয়া থেকে যাকে আমার কুরআন ব্যস্ত রেখেছে (অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত, তার উপর আমল করা, তাকে নিয়ে গবেষণা করা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে যে আল্লাহ তাআলার জিকির করতে ও তার নিকট নিজের জন্য কিছু চাইতে পারে না), আমি তাকে প্রার্থনাকারীর চেয়েও বেশী প্রদান করে থাকি। সব কালামের উপর আল্লাহ্র কালামের মর্যাদা সেরূপ যেরূপ সকল সৃষ্টির উপর আল্লাহ্র মর্যাদা বিদ্যমান।।’’ (তিরমিযী; মিশকাত-২১৩৬)

 আল-কুরআনের বৈজ্ঞানিক গুরুত্বঃ

পবিত্র কুরআন বিজ্ঞানময় এক ঐশী গ্রন্থ। এতে বিজ্ঞানের এমন সব তত্ত্য ও তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে যা মানুষ কোনদিন ভাবতে পারেনি। অন্য কোন ধর্মগ্রন্থেও এমনিভাবে বিধৃত হয়নি। স্বয়ং আল্লাহ বলেন,

يس- وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ ﴿يس: ١-٢﴾

বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ।” (সূরা ইয়াসিন: ১-২)

বস্তুত কুরআনের যেসব তত্ত্য ও তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে তা শুধু ইসলামের আবির্ভাবকালে নয়, আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও রীতিমত বিস্ময়কর। মেযন মিরাজের কথাই ধরা যাক। আধুনিক বিজ্ঞনের অন্যতম বিষয় হচ্ছে মহাশূন্যে অভিযান। মাত্র কয়েক যুগ আগেও মানুষ মহাশূন্যে অভিযানের কথা কল্পনা করেনি। রাসূলুল্লাহ (স.)-ই প্রথম মানুষ যিনি মিরাজের মাধ্যমে মহাশূন্যে অভিযানের কথা ব্যক্ত করেছেন। আজকে বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ বায়ুর উপর ভর করে বিমান চালাচ্ছে। অথচ এ তথ্যটি দেড় হাজার বছর আগে কুরআন বলে দিয়েছে।

وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهْرٌ وَرَوَاحُهَا شَهْرٌ وَأَسَلْنَا لَهُ عَيْنَ الْقِطْرِ وَمِنَ الْجِنِّ مَن يَعْمَلُ بَيْنَ يَدَيْهِ بِإِذْنِ رَبِّهِ وَمَن يَزِغْ مِنْهُمْ عَنْ أَمْرِنَا نُذِقْهُ مِنْ عَذَابِ السَّعِيرِ ﴿سبإ: ١٢﴾

আর আমি সোলায়মানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম। কতক জ্বিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব। (সূরা সাবা-১২)

 তাইতো আধুনিক ফরাসী বিজ্ঞানী ড. মরিস বুকাইলী বলেছেন, ÔÔThe Quran may be regarded as an academy of Science for the Scientist.Ó কুরআন বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভ্রণ বিজ্ঞান (ভ্রণের ক্রমবিকাশ), জীব বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভূতত্ত্য বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও সংখ্যাতাত্ত্যিক তথ্য বিজ্ঞানে ভরপুর।

 সামরিক জীবনে কুরআনের প্রয়োজনীয়তা:

সামরিক জীবনে নির্দিষ্ট মেয়াদে ট্রেনিং শেষে চুড়ান্ত প্যারেডের দিনে আল-কুরআনের শপথ অনুষ্ঠিত হয় এবং সামরিক জীবনের মৌলিক কতগুলো উপাদান বিদ্যমান রয়েছে পবিত্র কুরআনে। যেমন-

১। প্রশিক্ষণ: (সূরা আনফাল-৬০;  সূরা আলাক-০১)

২। আনুগত্য: (সূরা নিসা-৫৯)

৩। শৃংখলা: (সূরা সফ-০৪)

৪। ঐক্যবদ্ধতা: (সূরা আলে-ইমরান-১০৩)

৫। ধৈর্য্যধ: (সূরা আনফাল-৬৫)

৬। কষ্ট সহিষ্ণুতা: (সূরা বাকারা-১৫৫)

৭। নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য: (সূরা আলে-ইমরান-১৫৯)

৮। যুদ্ধের জন্য বের হওয়ার নির্দেশ: (সূরা তাওবা-৪১)

 উপসংহারঃ

প্রিয় ভাইয়েরা! মহান আল্লাহ মানুষের সঠিক পথ-নির্দেশনার জন্য যুগে যুগে নবী রাসূলগণের নিকট যে সকল আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব হলো আল-কুরআন। ইহা হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎস। জীবনকে সুন্দর ও সৌন্দর্যময় করে গড়ে তুলতে এবং ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করতে কুরআনের শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য কুরআনকে একান্তভাবে বেশী বেশী অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

 

 

 

 

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com