Thursday, October 08, 2020

কুরআনের আয়না (২).মহাগ্রন্থ আল-কুরআন

 


কুরআনের আয়না

২.মহাগ্রন্থ আল-কুরআন

 

শুরু কথাঃ

          কুরআন আল্লাহ পাকের বাণী এবং তাঁর পক্ষ থেকে অবতারিত সর্বশেষ আসমানী কিতাব যা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি নাযিল  করা হয়েছে। আল্লাহ যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেন এবং তাদের জন্য তার পক্ষ থেকে বাণী বা বর্তা বহক হিসেবে কারও কাছে কিতাব ও  কারও কাছে ছহিফা দিয়েছেন। পথ হারা মানুষকে সঠিক পথের সন্দান দেওয়ার জন্য। সে হিসেবে আমাদের শেষ নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর ওপর অবতীর্ণ কিতাব কুরআন নাযিল হয়। সমগ্র মানব জাতির জল্যাণ, পথ প্রদর্শন ও বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য  মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তাইতো বিশ্ব গ্রন্থ  হিসেবে কুরআনের অবস্থান। যার মধ্যে জাতি, ধর্ম  বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষ সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথ খুঁজে পেতে পারে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের পরিচয় দিয়ে  এরশাদ করেন:

كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الأَلْبَابِ -

এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে। (সূরা ছোয়াদ-২৯)

অন্য এক স্থানে আল্লাহ পরিশুদ্ধ কুরআন পড়ার কথা বলে এরশাদ করেন:

وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِآيَةٍ قَالُواْ لَوْلاَ اجْتَبَيْتَهَا قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَى إِلَيَّ مِن رَّبِّي هَذَا بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ-  وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ-

 ‘‘আর যখন আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে না যান, তখন তারা বলে, আপনি নিজের পক্ষ থেকে কেন অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে। এটা ভাববার বিষয় তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে। আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। ’’(সুরা আরাফ-২০৩-২০৪)

হাদিসে রাসূলে কারিম (সাঃ) উল্লেখ করেন-

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلِّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : اِقْرَؤُوا القُرْآنَ ؛ فَإنَّهُ يَأتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعاً لأَصْحَابِهِ - رواه مسلم

‘‘হযরত আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ কুরআন পড়। কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীর জন্য শাফাআতকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে।’’ (মুসলিম, রিয়াদ-৩য়-৫৪পৃঃ ৯৯১নং হাদিস)

সুতরাং আসুন আমরা  পৃথিবীর যতগুলি ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে বেশী পঠিত কিতাব হচ্ছে আল-কুরআন নিয়ে  বিস্তারিত  আলোচনা করি।

          প্রিয় ভাইয়েরা আজকের বিষয়টি নিম্মের দিকগুলো আলোচনা করব।

Ø ক.

১.কুরআনের পরিচয়

২.কুরআন নাযিলের কারণ

৩.কুরআনে বুঝে পড়ার গুরুত্ব

৪.কুরআন কেন বুঝে পড়বো

 

Ø খ.

১.কুরআনে অধ্যায়নের পদ্ধতী

২.কুরআন অবতীর্ণর উদ্দেশ্য

৩.কুরআন এসেছে ন্যায়  ও এনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য

 

Ø গ.

১.কুরআন একটি ঐশীগ্রন্থ

২.কুরআন পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

৩.অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের সাথে কুরআনের তুলনা

৪.কুরআন অধ্যয়নের সমস্যা ও সমাধানের উপায়

৫.কুরআন সম্পর্কীয় টিপস্

 

v ক.

১-কুরআনের পরিচয়ঃ

          কুরআন আল্লাহ নাযিলকৃত সেই কিতাবকে বলা হয়, যা  তিনি তাঁর শেষ পয়গাম্বর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপরে দীর্ঘ ২৩ বৎসর কালব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ে, প্রয়োজন মোতাবেক অল্প অপ্ল করে অবতীর্ণ করেছিলেন। ভাষা এবং ভাব উভয় দিক হতেই  কুরআন আল্লাহর কিতাব। অর্থাৎ কুরআনের ভাব (অর্থ) যেমন আল্লাহর তরফ হতে আগত তেমনি তার ভাষ্যও।

          কুরআন আরবি শব্দ  যা ক্বারাথেকে অর্থাৎ পড়া। তাই কুরআনে এর শাব্দিক  অর্থ একটি  বই যা পড়ার, অনুধাবনের, গবেষণার ও ব্যুৎপত্তি অর্জনের। কুরআন অন্য একটি প্রতিশব্দ ফোরকানযা কুরআনের মধ্যে বিবৃত হয়েছে। ফোরকান এজন্য যে, কুরআনে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, মঙ্গল-অমঙ্গল এবং সর্বোপরি গ্রহণীয় ও বর্জনীয় কর্মগুলোকে পৃথক করে, একটি থেকে  অন্যটিকে আলাদা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। কোনটি ন্যায় ও কোনটি অন্যায় তাই আল-কুরআন মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করে।

          যদি আমরা কুরআনকে জিজ্ঞাসা করি কুরআন তোমার পরিচয় কি ?  তখন নিজেই তার উত্তর দিয়ে দিবেন এমন করে।

اِنَّهُ لَقُرْاَنُ  كَرِيْمُ  - فِىْ كِتَبٍ  مَّكْنُوْنٍ -لاَّ يَمَسُّهُ اِلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ

 ‘‘নিশ্চয় এটি সম্মানিত কুরআন, যা সংরক্ষিত পবিত্র লাওহে মাহফুজে, যেখানে অপবিত্র অবস্থায় কেউ ছুঁতেও পারে না।’’ (সূরা ওয়াকিয়াহ-৭৭-৭৯)

 

২-কুরআন নাযিলের কারণঃ

          আমরা কুরআনে সুরা বাকারা অধ্যায়ন করলে জানতে পারি যে, নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের পরে হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ)-কে বেহেশ্ত হতে দুনিয়ায় পাঠনোর প্রাক্কালে আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছিলেন:

قُلْنَا اهْبِطُواْ مِنْهَا جَمِيعًا فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ-

‘‘আমি হুকুম করলাম, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অত:পর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রন্ত ও সন্তপ্ত হবে।’’(সূরা বাকারা-৩৮)

          মহান আল্লাহ তায়ালার উক্ত ঘোষণা মোতাবেকই যুগে যুগে আদম সন্ততির কাছে আল্লাহর তরফ হতে হেদায়াত বা জীবন বিধান এসেছে। এই জীবন বিধানেরই অন্য নাম ‘‘কিতাবুল্লাহ’’। যখনই কোন মানব গোষ্ঠী আল্লাহর পথকে বাদ দিয়ে  নিজেদের মন গড়া ভ্রান্ত পথে চলতে থাকে তখনই কিতাব নাযিল করে আল্লাহ  মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে থাকেন।

৩-কুরআনে বুঝে পড়ার গুরুত্ব:

          এই বিশ্বের মুসলমানের মত আমাদের দেশের মুসলমানগণও কুরআন মজীদকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করে তেলাওয়াত করে থাকেন।  এটা অত্যন্ত নেক ও সওয়াবের কাজ। কিন্তু তেলাওয়াতের সাথে সাথে কুরআন যে বুঝে পড়া দরকার সে বিষয়টি আমাদের দেশে সাধারণ্য উপেক্ষিত । কোনো ক্ষেত্রে কিছু যুবক সহ সাধরণ মুসলমানগণ বাংলা ভাষায় কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পড়ে কুরআন বুঝার চেষ্টা করছেন।  তবে তা আশানুরুপ নয়। অথচ কুরআনের অর্থ অনুধাবন ও উহার মর্মের উপর চিন্তা ভাবনা করাই কুরআন তিলাওয়াতের মূখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। বিশিষ্ট চিন্তাবিধ ও লেখক  এবং পিচ টিভি চেনেলের আলোড়ণকারী ব্যক্তিত্য ডা. জাকির নায়েক বলেন-‘‘আল-কুরআন বুঝে পড়া উচিত’’ (Al-Quran Should It Be Read Wtth understanding)

পবিত্র কুরআন সংক্ষিপ্ত পরিচয়ে বলা যায় যে, মহান আল্লাহ কর্তৃক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর  প্রতি নাযিলকৃত সর্বশেষ গ্রন্থ বা বাণী সংকলনই হলো কুরআন। এখানে আরো বিশদভাবে বলা যায় যে, পবিত্র কুরআন হলো সর্বোত্তম পান্ডুলিপি যা পুরো মানবজাতির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট ‘‘ইশতেহার’’। অপর দিকে একজন অবিশ্বাসীর জন্য নিশ্চিতভাবেই এটি একটি হুশিয়ারি বার্তা যেমনি বিপরীতক্রমে বিশ্বাসী তথা মুমিনের জন্য সুসংবাদের সবিশেষ উৎসস্থল। কেননা এই কুরআনেকে কোনো সন্দেহের অবকাশ না রেখেই যে কোনো ভক্তভোগীর জন্য সর্বময় সমস্যার সুস্পষ্ট সুলিখিত সমাধান। নিরাশ ব্যক্তিরা এর মধ্যে খুঁজে পায় পরম আশার আলো।

          সুতরাং এটা কীভাবে সম্ভব অথবা কীভাবে আশা করতে পারেন যে, যথাযথ অন্তর্নিহিতভাব, অর্থ, নির্দেশনা ও  মর্মভেদ না করেই কুরআনের সর্বময় কল্যাণে নিজেদের রাঙাবেন? কুরআনি অনুশাসনের প্রয়োগ ও  সার্বক্ষণিক চর্চাই এ কল্যাণ নিশ্চিত করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।

কুরআন বুঝে পড়ার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

 ‘‘তারা কি কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা গবেষণা করেনি। না কি তাদের অন্তকরণে তালা লেগে গিয়েছে ? ’’ (সূরা মুহাম্মদ-২৪)

অন্য আয়াতে বলেনঃ

الم - ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ-

 ‘‘এটা সেই বিতাব যাতে নেই সন্দেহের লেশ মাত্র, আর এটি মুক্তকিদের জন্য পথপ্রদর্শক।’’ (সূরা বাকারা-০১-০২)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

الر- كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ -

 ‘‘এট সেই কিতাব যা মানুষকে নেতৃত্ব দেয় অন্ধকার থেকে আলোকের পথে।’’ (সূরা ইবরাহীম-১-২)

 

কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল বলেনঃ

‘‘হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন, কুরআনে ০৫টি বিষয় নাযিল হয়েছে যথাঃ- 

১-হালাল সম্পর্কে  ২-হারাম সম্পর্কে   ৩-মুহকামাত সম্পর্কে ৪-মুতাশাবেহ সম্পর্কে ৫-আমছাল বা ঘঠনা বলী সম্পর্কে ।

সূতরাং তোমরা হালালকে হালাল জানবে, এবং হারামকে হারাম মানবে, মুহকাম আয়াতের উপর আমল করবে, মুতাশাবেহ আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আমছাল হতে শিক্ষা গ্রহণ করবে।’’ (মিশকাত)

 

৪-কুরআন কেন বুঝে পড়বো ?

          কুরআন কেন বুঝে পড়বো তার কারণ খুজলে দেখা যায় যে, ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য, ভালা ও মন্দের ব্যবধান ও কল্যাণ ও অকল্যাণের দূরত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে হলে  কুরআনে অর্থসহকারে বুঝে পাঠ করা অতীব জরুরি। কেননা কুরআনে কোন স্থানে কি বলা আছে তা জানতে হলে তার অর্থ ও বুজে পড়া অতিব জরুরি। প্রিয় সৈনিক ভাইয়েরা আসুন বিষয়টি পরখ করে দেখি, যে কারণে মুসলমানদের নিকট প্রদত্ত সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুস্কারটি কেন বোধগম্য তথা উপলদ্ধি ছাড়াই পঠিত হয়। কয়েকটি কারণে কুরআন না বুঝেই পড়া হয়ঃ যথা-

ক-  আরবি ভাষা না জানাঃ

এ দুটি কারণের মধ্যে সর্বপ্রধান কারণটি হলো কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায়, যার সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশেরই  ন্যূনতম ধারণা বা জ্ঞান নেই।  বর্তমান পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬৫০ কোটিরও বেশি যার ২০ ভাগ লোক তথা ১০ কোটিরও বেশী মুসলিম। এর মধ্যে মাত্র ১৫শতাংশ আরবি ভাষা-ভাষী লোক, যারা কেবল আরবি ভাষাতে কথা বলতে পড়তে ও লিখতে পারে। এছাড়াও  খুব নগন্য সংখ্যক মুসলিমই আরবি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। মোট কথা আরবি ভাষার উপর জ্ঞান থাকলেই  কুরআন বুঝা সহজ হবে।

প্রসংগত উদাহরণ না দিলে অপূনাঙ্গ থাকে-‘‘ফ্রান্সের ড.মরিস বুকাইলি। বুকাইলি একজন ফরাসি বিজ্ঞানী ও সার্জন। তিনি গভীরভাবে  বিশ্বাস করতেন বাইবেলে উল্লিখিত ফারাও  হযরত মূসা (আঃ) এর কিসসা। কিন্তু এ সম্পর্কিত গবেষণা করতে গিয়ে তিনি অবাক বিস্ময়ে অবিভত হয়ে লক্ষ্য করলেন যে, তিনি যা এই মাত্র আবিস্কার করলেন তা হাজার বছরেরও অনেক পূর্বেই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে।’’  এ বিষয় তাকে আরবী ভাষা শিক্ষার উদ্দমী করেছেন। যার ফলে তিনি ৫০বছর বয়সে আরবি  ভাষা যথাযথভাবে আয়ত্ত করতে মনোনিবেশ করেন।  যার ফলে সে কোন সহযোগিতা ছাড়াই সরাসরি  কুরআনের অনুধান করতে পারেন। তাই তিনি কুরআন সম্পর্কে লিখে গিয়েছেন যে ‘‘বাইবেল, কুরঅনে ও বিজ্ঞান’’ (The Bible, The Quran and Seience)

 

 

 

খ-  গভীর ইচ্ছাঃ

প্রত্যেকটি মানুষের গভীর ইচ্ছা থাকা। আমি যে কোন মূল্যে এই ভাষার শিক্ষা করব এবং এর উপর পান্ডিত্ত নিব তাহলে তিনি পারেন। প্রবল ইচ্ছাই মানুষকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। একজন বিধর্মী যদি পারে আমরা মুসলমান হয়ে কেন তা পারব না।

একটি উদাহরণঃ

বর্তমান মোবাইলে আপনার কোন বন্ধু একটি ম্যাসেস দিল আপনাকে আপনি যদি পরতে পারেন তবে তার লোখা আপনার কাছে ভাল গালবে ও বুঝতে পারবেন সে কি লেখছে ঐ পত্রে। অনেক সময় নিজে পরতে না পারলেও অন্য ব্যক্তি দিয়ে পরিয়ে আন্দোবোধ করি।নিশ্চয় আপনার প্রিয় বন্ধুর ম্যাসেস কী আছে তা জানার জন্য অধীর আগ্রহ থাকে।তাই যদি এমন হয় যে পবিত্র কুরআনের মতো মহান বন্ধু আপনাকে  ম্যাসেস কি বললো তা জানতে  ও বুঝতে কী এতোটুকুও ইচ্ছে হয় না আমরা মুসলমান সব সময়ই জানি এবং স্বীকার করি যে,  পৃথিবীর সবার ইচ্ছের ওপর আল্লাহর ইচ্ছে।

সুতরাং আমাদের কেন ইচ্ছা হয় না তাঁর  কথা জানার ও বুঝার। অথচ আন্তরিকভাবে  ইচ্ছে করলেই যে কোনো অনুবাদ সংগ্রহ করে যে  কোনো সময় আমরা কুরআন বুঝে পড়তে পারি। 

 

v খ.

 

১.কুরআনে অধ্যায়নের পদ্ধতী:

          কুরআন অধ্যায়নের পদ্ধতী বা উপায় গুলি আলোনা করলেই প্রথমে যে কথাটি উঠে আসে তা হচ্ছে, বুঝে পড়া, অর্থ সহ তেলোওয়া করা, প্রতি দিন অধ্যয়ন করা। পবিত্র কুরআন অনেকভাবেই তেলোওয়াত করা যায়। যেমন মনে করুন আয়াতগুলো শুধু  অর্থসহ  মোটামুটি পড়ে যাওয়া। এটা খুবই সহজ এবং এতে অনেক সময়ও লাগে না। একজন মানুষ অল্প কয়েক দিনেই এভাবে সম্পূর্ণ কুরআন পড়তে সক্ষম হবে। দ্বিতিয় আর একশ্রেণীর লোক আছে যারা গভীর জ্ঞানের সাথে কুরআন অধ্যায়ন করে। এমনকি তারা প্রত্যেকটি আয়াত গভীরভাবে অর্থ বুঝে তিলাওয়াত করা। সুতরাং এই ভাবে তেলোওয়াত করে কেউ কোনদিন বলতে পারে না যে আমি কুরআন শেষ করতে পেরেছি। আর গভীর অর্থসহ সত তেলোওয়াত করবে ততই নতুন নতুন পথ আপনার সামনে খুলে যাবে। সুতরাং প্রতি দিন আমাদের নিয়মিতভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত।

          আমাদের দরকার প্রত্যেক পরিবারের কমপক্ষে একটি কুরআন ও পবিত্র ভাষা অর্থসহ কুরআন। যে ভাষা বুঝে সে ভাষায় অনুবাদসহ কুরআন ঘরে রাখা। অনেকের বুকসেলফে কুরআন অনুবাদ সাজানো থাকে, কিন্তু কখনো ছুঁয়েও দেখে না। এতে লাভ কি ? অবশ্যই আমাদেরকে কুরআন বুঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রথম স্থানে থাকবে কুরআন। অপনার সন্তানের জন্য প্রথম বইটি হোক কুরআন। আপরনার সন্তানের জন্য কোনো প্রথম উপহারটি হোক কুরআন। এর অর্থ কি ? এর অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে প্রথম থেকেই আপনি আপনার সন্তানকে কল্যাণ ও সত্যের পথে  সন্তানের পথে সন্তানের ভবিষ্যতের সুন্দর পথ খুলে দিলেন।

          পরিবারের সবাই মিলে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিৎ। একটি পরিবারের মধ্যে  কুরআন শিক্ষার নিদৃষ্ট একটি সময় করে নিয়ে এক  একজন করে প্রতি দিন কুরআনে তেলোওয়াত করে অর্থ বলার অভ্যাস তৈরী করুন । দেখবেন একদিন আপনার পরিবারে কুরআন না পড়া লোক থাকবে না। একটি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানীর মধ্যে  কোন একটি সময় নির্দারিত করে এই ব্যাবস্থ করলে এটা একটা ব্যাবসা বিনিয়োগের মত প্রতিটি হরফের জন্য তার সাওয়াব পাবে। কুরআন তেলোওয়াতের মাধ্যমে কর্মকতা-কর্মচারীদের কাজ শুরু করা একনিষ্ঠতা ও কর্তব্যবোধ আসবে তা আপনার অভাবকে মুছে দেবে। এছাড়া এটা একটা বড় বিনিয়োগও বটে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاء وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ-

 ‘‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজের সম্পদ ব্যয় করে তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায় এবং প্রত্যেক শীষ একশতটি দানা থাকে। ’’ (সূরা বাকারা-২৬১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ কুরআন পঠের পদ্ধতি  বা নিয়ম সম্পর্কে বলেনঃ

وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ لا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا-

 ‘‘আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না। ’’ (সূরা কাহাফ-২৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَى وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوا لأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ-

 ‘‘কাজেই কুরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ, ততটুকু তেলোওয়াত  কর। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হবে, কেউ কেউ আল্লাহ্র অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে এবং কেউ কেউ আল্লাহ্র পথে জেহাদে লিপ্ত হবে। কাজেই কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্যে সহজ ততটুকু আবৃত্তি কর। তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্যে যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহ্র কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে। তোমরা আল্লাহ্র কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালূ। ’’ (সূরা মুজাম্মিল-২০)

 

 

 

২.কুরআন অবতীর্ণর উদ্দেশ্য:

          কুরআন অবতীর্ণ করার উদ্দেশ্য জানতে হলে আমাদেরকে প্রথমে কুরআন কি ও কেন নাজিল করা হলো এটা জানতে হবে। কুরআন মুলতঃ নাজিল করা হয়েছে মানুষ ও বিশ্ববাসীকে হেদায়াতের সঠিব পথ দেখানোর জন্য। মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَاعْتَصِمُواْ بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُواْ وَاذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاء فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىَ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ-

 ‘‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পর¯পর বিচিছন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স¥রণ কর, যা আল্লাহ্ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পর¯পর শত্রু ছিলে। অত:পর আল্লাহ্ তোমাদের মনে স¤প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পর¯পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অত:পর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই  আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার।’’ (সূরা আলে-ইমরান-১০৩)

কুরআন অবতীর্ণর উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ

كِتَابٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلاَ يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ-0

‘‘এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভীতি-প্রদর্শন করেন। অতএব, এটি পৌছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত ন্য়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ। ’’(সূরা আরাফ-০২)

৩.কুরআন এসেছে ন্যায়  ও এনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য:

          কুরআন এসেছে ন্যায় ও এনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যে সমজে মানুষ মানুষের অধিকার পেতনা। হত্যা-রাহাজানি, যুলুম-অত্মাচার প্রতিদিনের কাজ ছিল তাদের। সেই অন্দকারকে দূরীভুত করে সত্যের আলো দেখালেন কুরআনের মাধ্যমে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে সত্য ও ন্যায় ইনসাফের কথা তুলে ধরে বলেনঃ

وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا- وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءُ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلاَّ خَسَارًا   -  وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَؤُوسًا-

 ‘‘বলুন: সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। আমি মানুষকে নেয়ামত দান করলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দুরে সরে যায়; যখন তাকে কোন অনিষ্ট ¯পর্শ করে, তখন সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।’’ (সূরা বনি ইসরাইল-৮১-৮৩)

অন্য আরএকটি আয়াতে ন্যায় ও ইনসাফ সম্পর্কে বলেনঃ

إِنَّهُ لَقَوْلٌ فَصْلٌ

 নিশ্চয় এই কুরআন সত্য-মিথ্যার ফয়সালা।

(সূরা তারিক-১৩)

 

v গ.

 

১.কুরআন একটি ঐশীগ্রন্থ:

          পবিহত্র কুরআন শরীফ যে আল্লাহতায়ালার বাণী এবং এই ধরণের কিতাব মানুষের পক্ষে তৈরী করা আদৌ সম্ভব নয়। এর অসংখ্য প্রমাণ কুরআনেই বর্তমান। স্বয়ং কুরআনই একাধিকবার আরবের অমুসলিমদেরকে  খোলাখুলী চ্যালেঞ্জ করেছে। তাইতো কুরআন যে ঐশীগ্রন্থ সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ-0

 ‘‘উহারা কি দাবী করে যে কুরআন (আপনার) বানানো ? আপনি বলুন, তোমরা যদি তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও তাহলে একটি সূরা অন্ততঃ তৈরী করে নিয়ে এস। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য প্রয়োজন বোধ কর, সাধ্যমত তাদেরকেও ডেকে নাও।’’ (সূরা ইউনুস-৩৮)

অপর আয়াতে আল্লাহ তোমরা জ্বিন ও মানুষ সকলে মিলে যদি চেষ্টা কর আমার মত একটি এয়াত তৈরী করতে  তবে কর কিন্তু আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত।

قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَن يَأْتُواْ بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا-

 ‘‘বলুন: যদি মানব ও জ্বিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পর¯পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।’’ (সূরা বনী ইসরাঈল-৮৮)

অপর আয়াতে কুরআনের সূরা ও আয়াত দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে চ্যালেঞ্জ ছুরে দিয়েছেন। তিনি বলেন,

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُواْ بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُواْ مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ-

 ‘‘ তারা কি বলে? কুরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।’’ (সূরা হুদ-১৩)

এখানে ও কি আমরা বুঝতে পারি না যে কুরআন মহান আল্লাহর ঐশীবানী তার মধ্যে  কোন সন্দেহ নাই। বিশ্বের সকল লোক যদি তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে ততে কিছু আসে যায় না। 

কুরআন ঐশীগ্রন্থ এ সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ রয়েছেঃ

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ (رضـ)  قَالَ قَالَ   النَّبِىُّ (صـ) مَا مِنَ الْاَنْبِيَاءِ  نَبِىُّ اِلاَّ  اُعْطِىَ مَا  مِثْلَهُ اُمَّتِىْ عَلَيْهِ الْبَشَرُ وَاِنَّمَا كَانَ الَّذِىْ اُوْتِيْتُ وَحْيًا  اَوْ حَاهُ  اللهُ  اِلَى فَاَرْجُوْا اَنْ اَكُوْنَ  اَكْثَرُ  تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ – (بخارى )  

‘‘হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সঃ) বলেছেন, এমন কোন নবী ছিলেন না যাকে মুজিজা দেয় হয়নি, যা দেখে লোকেরা ঈমান এনেছে। কিন্তু আমাকে যা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে অহী (কুরআন) যা আল্লাহ আমার কাছে নাযিল করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার উম্মতের সংখ্যা সর্বাধিক হবে।’’ (বুখারী, কুহাসা-১ম-২৯পৃঃ)

 

২.কুরআন পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত:

          মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আল্লাহর চিরন্তন ও শাশ্বত বাণী। মানব জীবনে কুরআন তেলোওয়াতের গুরাত্ব ও  ফজিলত অপরিসীম। যেহেতু ইহা আল্লাহর বানী সেহেতু তেলোওয়াতে মানব হৃদয়ে এক অনুপম অনুভতির সৃষ্টি করে। ঐচ্ছিক ইবাদতের মধ্যে কুরআন তেলোওয়াত সর্বোৎকৃষ্টি ইবাদত। কুরআন তেলোওয়াতের গুরাত্ব হচ্ছে তিনটি যথাঃ

 

১.সৎ ও সঠিক পথের পরিচালিতর জন্য:

আল্লাহপাক মানব জাতিকে সৎ ও সঠিক  পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল করেছেন। এ কুরআন মানুষের সামনে সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ, জান্নাত-জাহান্নাম ও ইহকাল-পরকাল ইত্যাদি  সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। সুতরাং কুরআন তেলোওয়াত ও তার অর্থ অনুধাবনের মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা যায়।

 

২.মানব জাতির মুক্তির  সনদ:

কুরআন মানব জাতির মুক্তির সনদ এবং বিশ্ব মানবতার ধারক ও বাহক। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ-এর নবুওয়াতের অন্যতম দায়িত্ব ছিল কুরআন মাজীদ তেলোওয়াত করে শোনান, কুরআন শিক্ষা দেওয়া এবং এরই ভিত্তিতে মুসলমানদের  পরিশুদ্ধ করা।

 

৩.জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস:

কুরআন সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোন দিক নেই যার আলোচনা কুরআন উল্লেখ হয়নি। যেমনঃ আসমান-যমীন, চাঁদ-সূর্য্য, সাগর-মহা সাগর, গাছ-পালা, তরু-লতা, জীব-জন্তু ইত্যাদি সকল। সুতরাং কুরআন অর্থ অনুধাবন করে পড়া উপস্থিত আয়াত গুলির বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা।

আল্লাহ বলেনঃ

أَفَلا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا-  

 ‘‘তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা  করে না ? না তাদের অন্তর তালা বদ্ধ।’’ (সূরা মুহাম্মদ-২৪ )

কুরআন তেলোওয়াতের ফজিলত আলোচনা করতে হলে কয়েকটি দিক আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে তা হচ্ছেঃ----

 

ক-কুরআন তেলোওয়াত কার উত্তম ব্যক্তি:

কুরআন তেলোওয়াত কারী সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি। যে ব্যক্তি কুরআন তেলোওয়াত করেন তিনি করুণাময় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হন। এ প্রসঙ্গে হযতর মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ

خَيْرُ كُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْاَنَ   وَ عَلَّمَهُ -

‘‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী, রিয়াদ-৩য়-৫৫পৃঃ ৯৯৩নং হাদীস)

 

খ-মুমিনের অন্তর প্রশান্ত হয়:

কুরআন তেলোওয়াত কারীর অন্তর প্রশান্ত হয় কেননা তারা মুমিন। আর মুমিনের অন্তর আল্লাহর দিকে দাবিত হয়। এমনকি মুমিনগণ আল্লাহর বাণীর স্পর্শে প্রশান্তি লাভ করে। হৃদয় কোমল হয়। আল্লাহ বলেনঃ

اِذَا ذُكِرَ اللهُ  وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ  وَاِذَا تُلِيَتْ  عَلَيْهِمْ  اَيَاتُهُ  زَادَتْ هُمْ اِيْمَا نًا -

 ‘‘যখন আল্লাহর যিকির করা হয় তখন তাদের অন্তর ভীত ও শিহরিত হয় এবং যখন তাদের সামনে কুরআন তেলোওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।’’ (সূরা      )

গ-সর্বশ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত:

নফল ইবাদত সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে কুরআন তেলোওয়াত করা। তাই মহানবী হযতর মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ اَفِضَلُ الْعِبَادَةِ تِلاَوَةُ  الْقُرْاَنِ ‘‘নফল ইবাদত সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ  ইবাদত হলো কুরআন তেলোওয়াত।’’ (আল-হাদীস)

ঘ-অধিক পূণ্য লাভের মাধ্যম:

অধিক পূণ্য লাভের মাধ্যম হচ্ছে আল-কুরআন। যে ব্যক্তি বেশী করে তেলোওয়াত করে তার সম্মান ও ইজ্জত আল্লাহ তায়ালার কাছে অনে বেশী। এ মর্মে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ

مَنْ قَرَا حَرْفًا  مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ حَسَنَةٌ  وَالْحَسَنَهُ  بِعَشْرِ اَمْثَلِهَا

‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর তেলোওয়াত করবে সে একটি নেকী পাবে। আর প্রতিটি নেকী দশটি নেকীর সমান।’’ (আল-হাদীস)

ঙ-কুরআনহীন হৃদয় উজাড় গৃহ:

কুরআনহীন হৃদয় উজাড় গৃহ। কারণ যে ঘরে কুরআন নেই সেই ঘরে আল্লাহর রহমত নেই। রাসূলে কারীম (সঃ) বলেন,

اِنَّ الَّذِىْ لَيْسَ فِىْ جَوْفِهِ شَيْىٌ  مِّنَ   الْقُرْآنَ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ

‘‘যে ব্যক্তির হৃদয়ে কুরআনের কোন জ্ঞান নেই, সে হৃদয় উজাড় গৃহের ন্যয়।’’ কারণ যে গৃহে কোন লোক নেই সেই ঘরের কোন মূল্যও নেই।

চ-পরকালীন মুক্তি:

যে নিয়মিত কুরআন তেলোওয়াত  করে সে পরকালীন জীবনে জাহান্নামের কঠিন আজাব হতে নিস্কৃতি লাভ করবে।  এবং তেলোওয়াত কারী ব্যক্তি পরিবারের দশ ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি করতে পারবে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেনঃ

 اِقْرَا وَ الْقُرْاَنَ فَاِنَّهُ يَاْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ  شَفِيْعًا لِاَصْحَابِهِ   

‘‘তোমরা কুরআন মাজীদ তেলোওয়াত কর। কেননা কিয়ামতের দিন তা স্বীয় তেলোওয়াতকারীকে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে।’’ (আল-হাদীস)

 

ছ-আল্লাহর সাথে বাক্যলাপ:

পবিত্র কুরআন কারীম তেলোওয়াত কারী যেন আল্লাহর সাথে কথা বা বাক্য বলে। বান্দাহ যখন একাগ্রচিত্তে কুরআন তেলোওয়াত করে তখন সে প্রকারান্তরে সরা সরি আল্লাহর সাথেই বাক্যলাপ করে। এ প্রসঙ্গে নবী বলেনঃ ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি আল্লাহর সাথে বাক্যলাপ করতে চায় সে যেন বেশি বেশি করে কুরআন তেলোওয়াত করে।’’

 

জ-আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে:

কুরআন তেলোওয়াত কারী আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে  মনে অফুরন্ত ও অনাবিল শান্তি আনে। এ মর্মে মহানবী (সঃ) এরশাদ করেনঃ ‘‘ তোমাদের অন্তর সমূহে মরিচা ধরে তাঁকে পরিশুদ্ধ করার জন্য অধিক পরিমাণে মৃত্যুকে স্মরণ কর। এবং বেশি বেশি কুরআর তেলোওয়াত কর।’’ (আল-হাদীস)

 

৩.অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের সাথে কুরআনের তুলনা:

          যার যার ধর্ম তার কাছে বড়। পৃথিবীতে মানুষ আগমনের পর পর তাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার বাণী বা তাঁর আদেশ নিষেধ দিয়ে বিভিন্ন সময় নবীদের ওপর কিতাব দিয়েছেন। কোন কোন নবীর ওপর কিতাব  কিংবা ছহিফা দিয়ে প্রেরণ করেন। তাইতো ১০৪খানা কিতাবের মধ্যে প্রধান ০৪ খানা কিতাব  যথাঃ তরাত, যবুর, ইঞ্জিল, কুরআন।  পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক বাতা বাহক এসে তাদের বাণী প্রচার করেন।

          পৃথিবীর বুকের অন্যান্য কিতাব গুলি বিলুপ্তির মতই কিন্তু  এখনও পর্যন্ত কুরআন বা ফুরকান অবিক্রিত অবস্থায় আছে। কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।আর এর হেফাজাতের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তায়ালা নিয়েছেন।

আল্লাহ বলেনঃ

اِنَّهُ لَقُرْاَنُ  كَرِيْمُ  - فِىْ كِتَبٍ  مَّكْنُوْنٍ - لاَّ يَمَسُّهُ اِلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ -

‘‘নিশ্চয় এটি সম্মানিত কুরআন, যা সংরক্ষিত পবিত্র লাওহে মাহফুজে, যেখানে অপবিত্র অবস্থায় কেউ ছুঁতেও পারে না।’’ (সূরা ওয়াকিয়াহ-৭৭-৭৯)

ড. চার্টেন বলেনঃ কুরআনের আলোড়ন হৃদয়গ্রাহী, সংক্ষিপ্ত এবং অপ্ল কথায় অনেক বুঝায় এবং এটা আল্লাহর স্মরণ ক্ষুরধান পদ্ধতিতে করে। (সূত্রঃ লেকচার ড. জাকের নায়েক-৫৭১পৃঃ)

 

৪.কুরআন অধ্যয়নের সমস্যা ও সমাধানের উপায়ঃ

          সমস্যাসমূহঃ

Ø অন্যান্য সাধরণ গ্রন্থের মতো মনে করা।

Ø একই বিষয়ের বার বার উল্লেখ করা।

Ø নাসেখ ও মানসুখ সমস্যা (নাসখে ও মানসুখ: এক আয়াতের পরিবর্তে যে আয়াত ‘‘নাযিল’’  হয় তাকে নাসেখ বলে। আর যে আয়াত রহিত হয় তাকে ‘‘মানসুখ’’ বলে।)

Ø কোনো বিষয়সূচি নেই।

Ø কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট না জানা।

 

সমাধানের উপায়ঃ

ü অধ্যয়নের সময় নিরপেক্ষ মগজ নিয়ে বসা।

ü কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট ও রাসূলের বিপ্লবী আন্দোলন বিভিন্ন ও পর্যায় সম্পর্কে জ্ঞান।

ü ঘরে বসে কুরআন বুঝার সাথে সাথে কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

 

৬.কুরআন সম্পর্কীয় টিপস্:

যেহেতু আমরা মুসলমান সে হিসেবে  কুরআন সম্পর্কে আমাদের বেশী জ্ঞান রাখা উচিৎ। এক নজরে আল-কুরআনের কতিপয় টিপস্ আপনাদের সামনে উপস্থান করছিঃ

*   কুরআন মুসলমানের ধর্মীয় গ্রন্থ

*   কুরআনে ৩০টি পাড়া, ১১৪টি সূরা, মক্কী-৮৬টি মাদানী-২৮টি, ৬৬৬৬টি আয়াত, রুকু-৫৪০টি

*   সর্ব প্রথম অবতীর্ণ আয়াত- সূরা আলাকের প্রথম পাঁটি আয়াত।

*   সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত-সূরা বাকারার ২৮১নং আয়াত।

*   সবার বড় সূরা- আল-বাকারা-আয়াত-২৮৬   সবার ছোট সূরা- সূরা কাওসার আয়াত-০৩টি

*   শব্দ সংখ্যা-৮৬৪৩০টি হরফ সংখ্যাঃ৩২০২৬৭/৩২২৬৭১/৩২৩৭৬০টি

*   সিজদার সংখ্যা-১৪টি শাফেয়ী দের মতে-১৫টি

*   কুরআনে মোট মঞ্জিল-০৭টি

*   কুরআন অবতরনের সময় লেগেছে-২২বছর ৫মাস ১৪দিন

*   কোন সূরায় বিসমিল্লাহ নাই-সূরা ‘‘তাওবায়’’ বিসমিল্লাহ নাই

*   কোন সূরায় বিসমিল্লাহ দুই বার আছে-সূরা নমলে

*   কুরআনে আলোচ্য বিষয় কি ? মানুষ-তথা মানুষের কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ তা বর্ণনা করা।

*   কুরআনে কতজন নবীর নাম উল্লেখ করেন-২৬জন

*   কুরআনে মোট ১০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় যথাঃ

১-আদেশ সূচক আয়াত-১০০০টি

২-নিষেধ সূচক আয়াত-১০০০টি

৩-উদাহরণ সম্বলিত আয়াত-১০০০টি

৪-ঘটনার বর্ণনা উল্লেখ করে আয়াত-১০০০টি

৫-ওয়াদা সম্বলিত আয়াত-১০০০টি

৬-ভীতি প্রদর্শক আয়াত-১০০০টি

৭-হালাল নির্দেশক আয়াত-২৫০টি

৮-হারাম নির্দেশক আয়াত-২৫০টি

৯-তাসবীহ আদায় সম্বলিত আয়াত-১০০টি

১০-বিবিধ বিষয়ক আয়াত-৬৬টি

 সর্বমোটঃ আয়াতা সংখ্যা=৬৬৬৬টি 

(সূত্রঃ কুরআন সার সংক্ষেপ-০৮পৃ)

 

 

শেষ কথা:

          পরিশেষে বলতে হয় যে তার চেয়ে কে আর চরম হতভাগ্য যে কিনা পবিত্র কুরআনের সংস্পর্শে এলো অথচ কিঞ্চিৎ পরিমাণও কল্যাণ গ্রহণ করতে পারলো না তা থেকে ?  আপনি অনেক অধ্যবসায় করে, অনেক শ্রম বিনিয়োগে অনেক সার্টিফিকেট অর্জন করেন। কিন্তু কি নিশ্চয়তা আছে যে, সেটি কাজে লাগবেই? আমরা অনেক সনাতক/ডিগ্রী উত্তীর্ণকেই চিনি যারা বেকার চাকুরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে। আবার অনেক ডিগ্রীদারীও আছেন যাদের সারা জীবনের  অধ্যয়ন পেশা জীবনে কোনো কাজে আসে না। তবে এটা পরিস্কার যে সাধারণভাবে  শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কুরআনে শিক্ষাকে অন্য শিক্ষার থেকে কম গুরুত্ব দেয়া বা ভাবা কোনোভাবেই গ্রহণীয় নয়।এই কুরআনের চেয়ে মূল্যবান কিছুর আশায় ঘোরে তার ঘোরা সবই মারা, মরীচিকার পেছনে, অহেতুক সময় ও শ্রমের অপব্যয়। প্রকৃত বান্দা কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি বুঝার চেষ্টা করে এ প্রসংগে বলা হয়েছেঃ-

فَلَوْلا نَصَرَهُمُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ قُرْبَانًا آلِهَةً بَلْ ضَلُّوا عَنْهُمْ وَذَلِكَ إِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوا يَفْتَرُونَ

‘‘যখন আমি একদল জিনকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কুরআন পাঠ শুনছিল,। তারা যখন কুরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পর¯পর বলল, চুপ থাক। অত:পর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল।’’ (সূরা আহকাফ-২৯)

          পরিশেষে  আল্লাহর রাসূলের  একটি হাদীসে কথা বলে আমি শেষ করব।  তা হলোঃ-

عَنْ عُمَرِ بْنِ الخَطَّابَ رَضِي اللهُ عَنْهُ : أنَّ النبيَّ صَلِى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ :إنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الكِتَابِ أقْوَاماً وَيَضَعُ بِهِ آخرِينَ - رواه مسلم . .

‘‘হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেনম, নবী করিম (সাঃ) বলেছেনঃ এই কিতাব (কুরআন মজীদ) মাধ্যমে আল্লাহ বহু জাতির উত্থান ঘটান (অর্থাৎ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা সমপন্ন করেন) আবার এই কিতাবের মাধ্যমে (অর্থাৎ এর নির্দেশ অমান্য করার কারণে) বহ জাতির পতন ঘটান।’’

(বুখারী ও মুসলিম, কুহাসা-১ম ৪০পৃ)

আমার এই আলোচনা দ্বারা এটাই বুঝতে পারি যে, মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র এ গ্রন্থের  সাথে আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করুন এবং বিবৃত আদেশ নিষেধগুলো মেনে চলে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের তৌফিক দিন। আমিন।।

 

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com