Thursday, October 08, 2020

কুরআনের আয়না (৩) আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান

 


কুরআনের আয়না

৩.আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান-----

 

সূচনাকথা:

            মানব জাতীর উপর হেদায়াতের বাণী হিসেবে কুরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব যা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রতি নাযিল করা হয়েছে। যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং তাদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে বাণী বা বর্তা বহক হিসেবে কিতাব ও  কারও কাছে ছহিফা নাযিল করেছেন। পথ হারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধানের জন্য। আমাদের শেষ নবী মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর অবতীর্ণ কিতাব কুরআন নাযিল হয়। সমগ্র মানব জাতির জল্যাণ, পথ প্রদর্শন ও বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তাইতো বিশ্ব গ্রন্থ  হিসেবে কুরআনের অবস্থান। যার মধ্যে জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষ সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথ খুঁজে পেতে পারে। সুতরাং বলা যায় যে ‘‘কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান সুসংগত না অসংগত’’ The quran & Modern Science Compatible or INcompatible|

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের পরিচয় তুলে দরে এরশাদ করেনঃ-

كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُوْلُوا الأَلْبَابِ -

 ‘‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।’’ (সূরা ছোয়াদ-২৯)

            এ গ্রহে মানুষ প্রথম যেদিন এসেছিল সেদিন থেকেই সর্বদা প্রকৃতি সৃষ্টি পরিক্রমায় তার অবস্থান এবং তার জীবনের একান্ত উপদ্দেশ্যকে  বুঝতে চেষ্টা করছে। সত্য অনুসন্ধানের এ পরিক্রমায় বহু শতাব্দী এবং ইতিহাস গতিপথকে  বহুলাংশে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে বিভিন্ন ধর্ম।  এসব ধর্মের মধ্যে কতিপয় ধর্ম বইভিত্তিক। আর  এসব বইকে ঐসব ধর্মের অনুসারীরা ঐশী প্রত্যাদেশ  বলে দাবি করেন। এছাড়া অন্য ধর্মগুলো মানবীয় অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে। সুতরাং ইসলামী আক্বীদা বা ধর্ম বিশ্বাসের প্রধান উৎস হচ্ছে আল-কুরআন, মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, এটি  সম্পূর্ণভাবে স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ। মুসলমানরা আরও বিশ্বাস করে যে, এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য  পথনির্দেশক।

অন্য এক স্থানে আল্লাহ পরিশুদ্ধ কুরআন পড়ার কথা বলে এরশাদ করেনঃ

وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِآيَةٍ قَالُواْ لَوْلاَ اجْتَبَيْتَهَا قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَى إِلَيَّ مِن رَّبِّي هَذَا بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ-  وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُواْ لَهُ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

‘‘আর যখন আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে না যান, তখন তারা বলে, আপনি নিজের পক্ষ থেকে কেন অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে। এটা ভাববার বিষয় তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে। আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।’’ (সুরা আরাফ-২০৩-২০৪)

হাদিসে রাসূলে কারিম (সাঃ) বলেনঃ-

عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلِّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : اِقْرَؤُوا القُرْآنَ ؛ فَإنَّهُ يَأتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعاً لأَصْحَابِهِ - رواه مسلم

‘‘হযরত আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ কুরআন পড়। কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীর জন্য শাফাআতকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে।’’ (মুসলিম, রিয়াদ-৩য়-৫৪পৃঃ ৯৯১নং হাদিস)

সুতরাং আসুন আমরা  পৃথিবীর যতগুলি ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে বেশী পঠিত কিতাব হচ্ছে আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান  নিয়ে  বিস্তারিত  আলোচনা করি।

 

প্রিয় পাঠক ভাইয়েরা! আজকের বিষয়টিকে বুঝার জন্য ০৩টি পর্বে  ভাগ করে আলোচনা করবো।

 

পর্ব-০১

কুরআনের পরিচয়

কুরআনে আধুনিক বিজ্ঞানের সমাহর

কুরআন মানব জাতির ম্যানুয়াল

 

 

পর্ব-০২

কুরআন জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়

আল-কুরআনের চ্যালেঞ্জ

কুরআনের এক হাজারের অধিক আয়াতে বিজ্ঞান সম্পর্কে

আধুনিক বিজ্ঞান পবিত্র কুরআনকে নিশ্চিত করেছে

 

 

পর্ব-০৩

কুরআন অধ্যয়নের সমস্যা ও সমাধানের উপায়

কুরআন সম্পর্কীয় টিপস্

 

 

 

কুরআনের পরিচয়

            কুরআন আল্লাহ নাযিলকৃত সেই কিতাবকে বলা হয়, যা  তিনি তাঁর শেষ পয়গাম্বর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উপরে দীর্ঘ ২৩ বৎসর কালব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ে, প্রয়োজন মোতাবেক অল্প অপ্ল করে অবতীর্ণ করেছিলেন। ভাষা এবং ভাব উভয় দিক হতেই  কুরআন আল্লাহর কিতাব। অর্থাৎ কুরআনের ভাব (অর্থ) যেমন আল্লাহর তরফ হতে আগত তেমনি তার ভাষ্যও।

            কুরআন আরবি শব্দ  যা ক্বারাথেকে অর্থাৎ পড়া। তাই কুরআনে এর শাব্দিক  অর্থ একটি  বই যা পড়ার, অনুধাবনের, গবেষণার ও ব্যুৎপত্তি অর্জনের। কুরআন অন্য একটি প্রতিশব্দ ফোরকান  যা কুরআনের মধ্যে বিবৃত হয়েছে। ফোরকান এজন্য  যে, কুরআনে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, মঙ্গল-অমঙ্গল এবং সর্বোপরি গ্রহণীয় ও বর্জনীয় কর্মগুলোকে পৃথক করে, একটি থেকে  অন্যটিকে আলাদা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে। কোনটি ন্যায় ও কোনটি অন্যায় তাই  আল-কুরআন মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করে।

            যদি আমরা কুরআনকে জিজ্ঞাসা করি কুরআন তোমার পরিচয় কি ?  তখন নিজেই তার উত্তর দিয়ে দিবেন এমন করে।

اِنَّهُ لَقُرْاَنُ  كَرِيْمُ  - فِىْ كِتَبٍ  مَّكْنُوْنٍ - لاَّ يَمَسُّهُ اِلاَّ الْمُطَهَّرُوْنَ -

‘‘নিশ্চয় এটি সম্মানিত কুরআন, যা সংরক্ষিত পবিত্র লাওহে মাহফুজে, যেখানে অপবিত্র অবস্থায় কেউ ছুঁতেও পারে না।’’ (সূরা ওয়াকিয়াহ-৭৭-৭৯)

 

কুরআনে আধুনিক বিজ্ঞানের সমাহর

            মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত গ্রন্থ, যা সকল অলৌকিকতার অলৌকিকতা ও বিজ্ঞানের সমাহর। সুতরাং আমাদের এ বিশ্বাস নির্ভূলতার অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানের প্রমান দিতে হবে। কুরআন কোন বিজ্ঞানের বই নয় বরং এটি হচ্ছে নিদর্শনের বই। যেমন আয়াত যার অর্থ হচ্ছে নিদর্শন কুরআনে  ৬হাজারেরও বেশি নিদর্শন বা আয়াত রয়েছে-যারা মধ্যে ১০০০হাজারেরও বেশি আয়াত বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোকপাত করেছে।

            আমরা সকলেই জানি যে বিজ্ঞান অধিকাংশ সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এ বইতে আমি এখানে বৈজ্ঞানিক সত্য নিয়ে আলোচনা করছি যা কল্পনা  বা ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা কোনো বত্ত¡ বা  কল্পনা নয় বরং যা প্রমাণিত হয় নি এম কোনো বিষয়ও নয়। বিজ্ঞানের সমাহর বলতে আমরা বুঝি। সূতরাং এবিষয় নিয়ে বিজ্ঞান সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তা হচ্ছেঃ

১.জ্যেতির্বিজ্ঞানঃ বিগ ব্যাঙ (মহাবিস্ফোরণ)-(সুরা আম্বিয়া-৩০), ছায়াপথ সৃষ্টির পূর্বে গ্যাস পিন্ড-(সুরা ফুচ্ছিলাত-১১), পৃথিবী গোলাকার-(সূরা লোকমান-২৯, সূরা যুমার-৫, সূরা নাযিআত-৩০, চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো-(সূরা ফুরকান-৬১, সূরা ইউনুস-৫), সূর্য আবর্তিত হয়-(সূরা আম্বিয়া-৩৩, সুরা ইয়াসিন-৩৮ এবং ৪০, সূরা যুমার-৫, তাকভির-০১), মহাশুন্যে বস্তুর অস্তিত্ব-(সূরা ফোরকান-৫৯), সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব-(সূরা যারিয়াত-৪৭)।

২.পদার্থজ্ঞানঃ অতি পারমাণবিক কণিকার অস্তিত্ব-(সুরা সাবা-০৩)।

৩.ভুগোলঃ পানিচক্র-(সূরা যুমার-২১,সূরা রূম-২৪, সূরা মুমিনুন-১৮), বাতাস মেঘকে পূর্ণ করে-(সূরা হিজর-২২, রূম-৪৮, নূর-৪৩, ত্বারিক-১১, রাদ-১৭, ফুরকান-৪৮-৪৯, ফাতির-০৯, ইয়াসীন-৩৪, জাসিয়া-০৫২২, রূম-৪৮, নূর-৪৩, ত্বারিক-১১, রাদ-১৭, ফুরকান-৪৮-৪৯,ফাতির-০৯, ইয়াসীন-৩৪, জাসিয়া-০৫, ক্বাফ-৯-১১)।

৪.ভূ-ত্বক বিজ্ঞানঃ পাহাড় পর্বতগুলো তাঁবুর পেরেক সদৃশ-(সূরা নাবা-৬-৭, আম্বিয়া-৩১, লুকমান-১০, নাহল-১৫), পাহাড়-পর্বত দৃঢ়ভাবে প্রোথিত-(সূরা নাযিয়াত-৩২, গাশিয়াহ-১৯, লুকমান-১০, নাহাল-১৫।

৫.সমুদ্রবিজ্ঞানঃ মিষ্টি ও লবনাক্ত পানির মধ্যেকার অন্তরায়-(সূরা আর-রহমান-১৯-২০, নমল-৬১, ফুরকান-৫৩), সমুদ্রের গভীরে অন্ধকার-(সূরা নূর-৪০) ।

৬.জীববিদ্যাঃ প্রতিটি জীবকে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়-(সূরা আম্বিয়া-৩০, নূর-৪৫, ফুরকান-৫৪)।

৭.উদ্ভিদবিজ্ঞানঃ উদ্ভিদ সৃষ্টি হয় জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও স্ত্রীরুপে-(সূরা ত্ব-হা৫৩) ফলের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রীলিঙ্গ আছে- (সূরা রাদ-০৩) সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি-(সূরা যারিয়াত-৪৯, ইয়াসিন-৩৬)।

৮.প্রাণীবিজ্ঞানঃ জ্ঞানী ও পাখি দল বা সম্প্রদায় হিসেবে বাস করে-(সূরা আনআম-৩৮), পাখির উড্ডয়ন-(সূরা নাহাল-৭৯,মূলক-১৯), মৌমাছি-(সূরা নাহল-৬৮-৬৯), মাকড়সার জাল/বাসস্থান ক্ষণভঙ্গুর দুর্বল-(সূরা আনকাবুত-৪১), পিপঁড়ার জীবনধারা ও যোগাযোগ-(সূরা নামল-১৭-১৮)।

৯.চিকিৎসাবিদ্যাঃ মধু মানুষের জন্য আরোগ্যকারী-(সূরা নাহল-৬৯)

১০.শারীরবিদ্যাঃ রক্ত সঞ্চালন এবং দুগ্ধের উৎপাদন-(সূরা নাহল-৬৬, মুমিনুন-২১)।

১১.ভ্রণবিদ্যাঃ মানুষ আলাক’¡ জোঁকের মত বস্তুু হতে সৃষ্টি-(সূরা আম্বিয়া-০৭, আলাক্ব-১-২), মেরুদন্ড ও পাজরের মধ্য থেকে নির্গত তরল পদার্থের ফোটা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে-(সূরা তারিক্ব-৫-৭), লিঙ্গ নির্ধারণ-(সূরা আন-নাজম-৪৫-৪৬,ক্বিয়ামাহ-৩৭-৩৯), অন্ধকারে তিনটি পর্দার দ্বারা ভ্রণ সংরক্ষিত-(সূরা যুমার-০৬, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির অনুভতি-(সূরা সাজদাহ-০৯,মুমিনুন-৭৮,আদদাহার-০২)।

১২.সাধারণ বিজ্ঞানঃ আঙ্গুলের ছাপ-(সূরা ফুরকান-৩-৪), ত্বকে ব্যথা অনুভাবকারী গ্রন্থির উপস্থিতি-(সূরা নিসা-৫৬)।

 

(তথ্য সূত্রঃ বাছাইকৃত ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র-৭৯পৃঃ)

 

কুরআন মানব জাতির ম্যানুয়াল:

            কুরআন মানব জাতির ম্যানুয়াল স্বরূপ। একটি উদাহরণ দিলে আমরা সহজে বুঝতে পারব। আমরা কোন নতুন মূল্যবান জিনিষ ক্রয় করলে তার সাথে একটি ম্যানুয়াল বই দিয়ে দেয়। কেন দেয়া হয় ? কারণ ঐ যন্ত্রটি কীভাবে চালাতে হবে, কীভাবে কোন সুইচ দিয়ে কোন কাজ সমাধা করা যাবে তার বিশদ বর্ণনা থাকে ঐ ম্যানুয়ালে। ধরা যাক আপনি একটি টেপ রেকর্ডার কিনলেন, আপনাকে  ম্যানুয়েল দেয় হবে।তাতে বর্ণনা করা হবে কোন সুইচ দিয়ে ক্যাসেট ঢুকাবেন কোনটা দিয়ে  চালাতে হবে। কোনটা দিয়ে কিছু সময়ের জন্য থামাতে হয়, আবার কোন বাটন টিপ দিলে বন্ধ হয়।এভাবে আপনি যদি পণ্যটি ভালোভাবে অপারেট করতে চান তবে অবশ্যই ম্যানুয়াল বা নির্দেশিকা বইটি অনুস্মরণ করে চলতে হবে।

            প্রিয় ভাইয়েরা লক্ষ করুন ঐ ম্যানুয়েল কিন্তুু অন্য কেউ সরবরাহ করে না বরং পণ্যটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই দিয়ে থাকে। কেন নিজেরা দেয় ? কেননা যেহেতু পণ্যটি তাদের উৎপাদন তারাই এর টেকনোলজি সম্পর্কে ভালো জানে, তারাই এর দিক নির্দেশনা ও চালানোর রীতিনীতি বেশি ভালো করে দিতে পারবে। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো ? যারা যে যন্ত্র নির্মাণ করে তারাই তার পরিচালনা পদ্ধতি ম্যানুয়াল বা দিক নির্দেশনামূলক পুস্তক যা-ই বলি না কেন সেটা দিতে পারবে।

            সুতরাং প্রসঙ্গটি এজন্যই আনা হলো যে, মানুষ একটি জটিল যন্ত্র একটি সুপার কম্পিউটারের চেয়েও লক্ষ লক্ষ গুণ জটিল হচ্ছে মানুষের দেহযন্ত্র। তাই এটিও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটি সুন্দর যথাযথ ম্যানুয়াল। আর এই ম্যানুয়াল তথা জীবন পরিচালনা পদ্ধতি বা দিক নির্দেশনাই হচ্ছে  ‘‘আল-কুরআন’’  আমরা লক্ষ করলে বুঝতে পাড়ব যে, পণ্য প্রস্তুত বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই ম্যানুয়াল বই দিয়ে থাকে। তেমনিভাবে মানুষের চলার পদ্ধতি, জীবনাচার দিক নির্দেশনা সম্বলিত তথ্য ও নির্দেশনা মানুষের নির্মাতা, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ-ই দেয়ার ক্ষমতা, এখতিয়ার ও সামর্থ্য রাখেন অন্য কেউ নয়।

            অতএব আমি মনে করি যে কুরআন মানুষের জন্য একটি ম্যানুয়াল স্বরূপ এইযে কিভাবে তাতের পথ চলবে তার নিয়ম কানুন  বলে দিয়েছেন।

 

কুরআন জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়:

            কুরআন মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়। কুরআন বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোর উপস্থিতিকে সমকালে সংঘটিত কোন ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা সাধারণ জ্ঞান ও সাহিত্যকার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী। প্রকৃত কুরআনের আয়াতসমূহের বৈজ্ঞানিক নির্ভূলতাই কুরআনের উম্মুক্ত ঘোষণার নিশ্চয়তা প্রদান করেঃ

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الأَلْبَابِ

‘‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে সুষ্পষ্ট নিদর্শন।’’ (সূরা আলে-ইমরান-১৯০)

            এ ছাড়াও কুরআনের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে মহান আল্লাহ তায়ালা বিজ্ঞানের তুলনা দিয়েছেন। আজ থেকে কয়েক হাজার  বছর আগের কথা নবী যা বলেন বিজ্ঞানের বিজ্ঞানীর গভেষনায় তা ফুটে আসে। কুরআন তো নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে বিজ্ঞানের কথা বলেনঃ

يس ·  وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ -

 ‘‘ইয়া সিন-বিজ্ঞানময় কুরআনের শপফ।’’ (সূরা ইয়াসিন-১-২)

একই সূরা অন্যস্থানে আল্লাহ যার যার মঞ্জিল দিয়ে বলেনঃ

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ-  وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ-0 لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ-

‘‘সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, ল্লাহ্ নিয়ন্ত্রণ।

ন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দির্নে প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।’’ (সূরা ইয়াসিন-৩৮-৪০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বিজ্ঞান ও হিকমা শিক্ষা দিয়ে বলেনঃ

إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ

‘‘তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।’’ (সূরা জুমআ-০২)

            সুতরাং আমরা বলতেই পারি যে, কুরআনে জ্ঞান বিজ্ঞানে বরপুর। এখান থেকে যদি কোন মানুষ শিক্ষা নিতে চায় তবে সে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তবে নির্বোদদের জন্য এখান থেকে কোন শিক্ষাই নাই।

           

আল-কুরআনের চ্যালেঞ্জ:

            আল-কুরআন সকল সংস্কৃতিতে সাহিত্য ও কবিতা মানুষের ভাবাবেগ এবং সৃজনশীলতা প্রকাশের উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিশ্ব এমন একটি যুগ অবলোকন করেছে যখন সাহিত্য ও কবিতা গর্বের মর্যাদা লাভ করেছিল। যেমন- বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অর্জন করেছে। মুসমানরা তো বটেই এমনকি অমুসলিমরা পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে, কুরআন হচ্ছে চমৎকার এক আরবি সাহিত্য ভুপৃষ্ঠে এটা সর্বোৎকৃষ্ট আরবি সাহিত্য। আল্লাহর নিকট থেকে কুরআন মানবজাতিকে  নিক্তো আয়াতে অনুরূপ গ্রন্থ রচনায় চ্যালেঞ্জ করে বলেনঃ

وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُواْ شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ-

 فَإِن لَّمْ تَفْعَلُواْ وَلَن تَفْعَلُواْ فَاتَّقُواْ النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ-

‘‘এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বাšদার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত রয়েছে কাফেরদের জন্য।’’ (সুরা বাকারা-২৩-২৪)

            প্রিয় ভাইয়েরা! এখানে কুরআনের অন্তভূক্ত সুরাগুলোর ন্যায় যেকোন একটি সূরা রচনা করার জন্র কুরআন চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। কুরআন বিভিন্ন জায়গায় চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সৌন্দর্য, বাচনভঙ্গি, গভীরতা, মর্মার্থের দিক বিবেচনায়, কুরআনের সূরার সমপর্যায়ের হওয়ার মতো অন্য একটি সূরা তৈরির চ্যালেঞ্জ  অদ্যাবধি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে।

            সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যিক ভাষায় পৃথিবীকে চ্যাপ্টা হিসেবে যে ধর্মগ্রন্থ বর্ণনা করে  তা বর্তমান যুগের আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন  মানুষ কখনই গ্রহণ করবে না। কারণ আমরা এমন এক যুগে বাস করি যেখানে মানবিক কারণ যুক্তি এবং বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কুরআনের অভতপূর্ব চমৎকার ও সাবলীল ভাষার জন্য  অনেকেই এটাকে আল্লাহর গ্রন্থ হিসেবে মেনে নিতে চাইবে না। আল্লাহর গ্রন্থ হবার  দাবিদার কোনো গ্রন্থকে অবশ্যই তার নিজস্ব কারণ এবং যুক্তির ওপর গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

            প্রখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী ও নোবেল পুরুস্কার বিজয়ী আলবার্ট আইনষ্টাইনের মতে ‘‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু, বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ’’ সুতরাং আমাদেরকে কুরআন অধ্যয়ন করতে হবে এবং বিশ্লেষণ করতে হবে যে,  কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান কি সুসঙ্গত না অসঙ্গত ? কুরআন বিজ্ঞানের কোনো বই নয় বরং এটি হচ্ছে নিদর্শনের বই। তাইতো কুরআনে ৬হাজারেরও বেশি নিদর্শন বা আয়াত রয়েছে যার মধ্যে থেকে  ১হাজারেরও বেশী  আয়াত আছে বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

 

কুরআনের এক হাজারের অধিক আয়াতে বিজ্ঞান সম্পর্কে:

            প্রিয় সাথিরা আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার যে, কুরআন কি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, না অসঙ্গতিপূর্ণ?  নিশ্চয়ই আপনারা বলবেন যে সঙ্গতিপূর্ণ। কুরআন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘‘বিজ্ঞানী আলবার্ট ’’ বলেছেনঃ- ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান খোঁড়া, এবং বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ। আমরা এ কথাও জানি যে কুরআন কোন বিজ্ঞানের বই নয়। বরং এটা হচ্ছে চিহৃ বা ইঙ্গিতের বই। এটা আয়াত বা নিদর্শনের বই। এর মধ্যে রয়েছে ৬০০০-এর অধিক আয়াত রয়েছে যার মধ্যে ১০০০ হাজারের অধিক বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেছেন।

            ডা. উইলিয়াম ক্যাম্পবেল, যিনি ড. মুরিস বুকাইলির ‘‘ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে বাইবেল ও কুরআন’’ শীর্ষক বইয়ের উত্তর লিখেছেন তিনি তার লেখায় বলেছেন, উপস্থাপনার দুটি বিশেষ রীতি রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে-সামঞ্জস্যপূর্ণ রীতি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে-অসামঞ্জস্যপূর্ণ রীতি।

 

            পবিত্র কুরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে যতদূর সংশ্লিষ্ট, বিজ্ঞানীরা এবং জ্যোতির্বিদরা কয়েক দশক পূর্বে যেভাবে বর্ণ বিশ্বজগতের অস্তিত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছিলেন তারা একে বলেছিলেন বিগ ব্যাং। তখন তারা বলেছিলেন প্রাথমিক পর্যায়ে একটি প্রাথমিক নেবুলা ছিল যা পরবর্তীকালে বিস্তৃতি লাভ করে বিগ ব্যাং এর পরিণত হয়েছিল, যারা ফলে সৃষ্টি হয় ছায়াপথ, নক্ষত্র, সূর্য এবং আমাদের বসবাস কারী পৃথিবীর।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلا يُؤْمِنُونَ

‘‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী একত্রে ছিল অতঃপর আমি তাদেরকে পৃথক করে দিয়েছি।’’ (সূরা আম্বিয়া-৩০)

 

আধুনিক বিজ্ঞান পবিত্র কুরআনকে নিশ্চিত করেছে:

            আমরা  ছোট সময় যখন মাদ্রাসা/ স্কুলে লেখা-পড়া করি তখন কোন লোখায় পড়েছি  সূর্য পৃথিবীর চেয়ে স্থির। পৃথিবী এবং চাঁদ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে কিন্তু সূর্য স্থির থাকে। কুরআনের একটি আয়াত  পড়ে বুঝতে পারলাম যে, সূর্য ও চাঁদ নিজ নিজ কক্ষপথে গুরনীয় মান।

আল্লাহ কুরআনে বলেনঃ

وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

‘‘তিনিই আল্লাহ যিনি দিন ও রাত এবং সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন। আর এদের প্রত্যেকেই নিজস্ব কক্ষপথে নিজ গতিতে সদা প্রবহমান।’’ (সূরা আম্বিয়া-৩৩)

তাইতো আমরা সহজেই বলতে পারি যে,আধুনিক বিজ্ঞান কুরআনের বর্ণনাকে নিশ্চিত করেছে।

 

কুরআন অধ্যয়নের সমস্যা ও সমাধানের উপায়:

            সমস্যাসমূহ

Ø  অন্যান্য সাধরণ গ্রন্থের মতো মনে করা।

Ø  একই বিষয়ের বার বার উল্লেখ করা।

Ø  নাসেখ ও মানসুখ সমস্যা (নাসখে ও মানসুখ ঃ এক আয়াতের পরিবর্তে যে আয়াত ‘‘নাযিল’’  হয় তাকে নাসেখ বলে। আর যে আয়াত রহিত হয় তাকে ‘‘মানসুখ’’ বলে।)

Ø  কোনো বিষয়সূচি নেই।

Ø  কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট না জানা।

সমাধানের উপায়

ü  অধ্যয়নের সময় নিরপেক্ষ মগজ নিয়ে বসা।

ü  কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট ও রাসূলের  বিপ্লবী আন্দোলন বিভিন্ন ও পর্যায় সম্পর্কে জ্ঞান।

ü  ঘরে বসে কুরআন বুঝার সাথে সাথে কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

 

 

কুরআন সম্পর্কীয় টিপস্:

যেহেতু আমরা মুসলমান সে হিসেবে  কুরআন সম্পর্কে আমাদের বেশী জ্ঞান রাখা উচিৎ। এক নজরে আল-কুরআনের কতিপয় টিপস্ আপনাদের সামনে উপস্থান করছিঃ

Ø  কুরআন মুসলমানের ধর্মীয় গ্রন্থ

Ø  কুরআনে ৩০টি পাড়া, ১১৪টি সূরা, মক্কী-৮৬টি মাদানী-২৮টি, ৬৬৬৬টি আয়াত, রুকু-৫৪০টি

Ø  সর্ব প্রথম অবতীর্ণ আয়াত- সূরা আলাকের প্রথম পাঁটি আয়াত।

Ø  সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত-সূরা বাকারার ২৮১নং আয়াত।

Ø  সবার বড় সূরা- আল-বাকারা-আয়াত-২৮৬   সবার ছোট সূরা- সূরা কাওসার আয়াত-০৩টি

Ø  শব্দ সংখ্যা-৮৬৪৩০টি  হরফ সংখ্যাঃ ৩২০২৬৭/৩২২৬৭১/৩২৩৭৬০টি

Ø  সিজদার সংখ্যা-১৪টি শাফেয়ী দের মতে-১৫টি

Ø  কুরআনে মোট মঞ্জিল-০৭টি

Ø  কুরআন অবতরনের সময় লেগেছে-২২বছর ৫মাস ১৪দিন

Ø  কোন সূরায় বিসমিল্লাহ নাই-সূরা ‘‘তাওবায়’’ বিসমিল্লাহ নাই

Ø  কোন সূরায় বিসমিল্লাহ দুই বার আছে-সূরা নমলে

Ø  কুরআনে আলোচ্য বিষয় কি ? মানুষ-তথা মানুষের কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ তা বর্ণনা করা।

Ø  কুরআনে কতজন নবীর নাম উল্লেখ করেন-২৬জন

v  কুরআনে মোট ১০টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় যথাঃ

১-আদেশ সূচক আয়াত-১০০০টি

২-নিষেধ সূচক আয়াত-১০০০টি

৩-উদাহরণ সম্বলিত আয়াত-১০০০টি

৪-ঘটনার বর্ণনা উল্লেখ করে আয়াত-১০০০টি

৫-ওয়াদা সম্বলিত আয়াত-১০০০টি

৬-ভীতি প্রদর্শক আয়াত-১০০০টি

৭-হালাল নির্দেশক আয়াত-২৫০টি

৮-হারাম নির্দেশক আয়াত-২৫০টি

৯-তাসবীহ আদায় সম্বলিত আয়াত-১০০টি

১০-বিবিধ বিষয়ক আয়াত-৬৬টি

 সর্বমোটঃ আয়াতা সংখ্যা=৬৬৬৬টি 

(সূত্রঃ কুরআন সার সংক্ষেপ-০৮পৃ)

 

সারকথা:

            পরিশেষে বলতে হয় যে তার চেয়ে কে আর চরম হতভাগ্য যে কিনা পবিত্র কুরআনের সংস্পর্শে এলো অথচ কিঞ্চিৎ পরিমাণও  কল্যাণ গ্রহণ করতে পারলো না তা থেকে?  আপনি অনেক অধ্যবসায় করে, অনেক শ্রম বিনিয়োগে অনেক সার্টিফিকেট অর্জন করেন। কিন্তু কি নিশ্চয়তা আছে যে, সেটি কাজে লাগবেই? আমরা অনেক সনাতক/ডিগ্রী উত্তীর্ণকেই চিনি যারা বেকার চাকুরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে। আবার অনেক  সনাতকোত্তর ও আছেন যাদের সারা জীবনের  অধ্যয়ন পেশা জীবনে কোনো কাজে আসে না। তবে এটা পরিস্কার যে সাধারণভাবে  শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু কুরআনে শিক্ষাকে অন্য শিক্ষার থেকে কম গুরুত্ব দেয়া বা ভাবা কোনোভাবেই গ্রহণীয় নয়। এই কুরআনের চেয়ে মূল্যবান কিছুর আশায় ঘোরে তার ঘোরা সবই মারা, মরীচিকার পেছনে, অহেতুক সময় ও শ্রমের অপব্যয়। প্রকৃত বান্দা কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি বুঝার চেষ্টা করে এ প্রসংগে বলা হয়েছেঃ-

فَلَوْلا نَصَرَهُمُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ قُرْبَانًا آلِهَةً بَلْ ضَلُّوا عَنْهُمْ وَذَلِكَ إِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوا يَفْتَرُونَ

‘‘যখন আমি একদল জিনকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কুরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পর বলল, চুপ থাক। অত:পর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল।’’ (সূরা আহকাফ-২৯)

            পরিশেষে  আল্লাহর রাসূলের  একটি হাদীসে কথা বলে আমি শেষ করব।  তা হলোঃ-

عَنْ عُمَرِ بْنِ الخَطَّابَ رَضِي اللهُ عَنْهُ : أنَّ النبيَّ صَلِى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ :إنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الكِتَابِ أقْوَاماً وَيَضَعُ بِهِ آخرِينَ - رواه مسلم .

 ‘‘হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেনম, নবী করিম (সাঃ) বলেছেনঃ এই কিতাব (কুরআন মজীদ) মাধ্যমে আল্লাহ বহু জাতির উত্থান ঘটান (অর্থাৎ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা সমপন্ন করেন) আবার এই কিতাবের মাধ্যমে (অর্থাৎ এর নির্দেশ অমান্য করার কারণে) বহ জাতির পতন ঘটান।’’

(সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

আমর এই আলোচনা দ্বারা এটাই বুঝতে পারি যে, মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র এ গ্রন্থের সাথে আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করুন এবং বিবৃত আদেশ নিষেধগুলো মেনে চলে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের তৌফিক দিন। আমিন।।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com