মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করতে গিয়ে কারোনাকারো
পাশে তাকে বসবাস করতে হয়। যে যার পাশে বা বাড়ির পাশে বা সমাজের পাশে বা গ্রামের পাশে
বা দেশের পাশে বসবাস করে সে তার প্রতিবেশি। ইসলাম প্রতিবেশির জন্যে কিছু হক্ব বা অধিকারের
ঘোষণা করেছে। আমরা সে অধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করব।
০৩.মানুষ একা নয়,সামাজকি জীব। সমাজবদ্ধতা
মানুষরে স্বভাবজাত চাহদিা। তাই তো সমাজরে সংজ্ঞা এভাবে দয়ো হয়, পরস্পররে সহযোগীতায়
অবস্থানকারী মানব সংঘকে সমাজ বলে। সমাজে মানুষ একে অপরকে সহযোগীতার করে। মানুষরে এ পারস্পরকি
সহযোগীতা সূচনা হয়ছেলিো হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.)-এর সময়কাল থেকে। পরর্বতীতে ধীরে ধীরে
মানুষরে সামাজকি পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষরে সামাজকি
চাহদিা ও প্রয়োজন। তাই ইসলাম পরস্পররে মাঝে হক যথাযথ আদায়রে ব্যাপারে কঠোর উচ্চারণ
করেছে। প্রয়িনবী (সা.) বলনে, জবিরাঈল (আ.) আমাকে
প্রতবিশেীর হক সর্ম্পকে এত বেশী তাগদি করতনে যে এক র্পযায়ে আমার মনে হয়েছে হয়তো অচরিইে প্রতবিশেীকে
উত্তরাধকিারী সাব্যস্ত করা হবে। (বোখারী : ২/৮৮৯)
মানুষ জন্মগত ভাবে সামাজিক জীব। সমাজ বা প্রতিবেশী
ছাড়া মানুষ চলতে পারেনা। প্রতিবেশীরা আতœীয়স্বজনের চাইতেই অধিক কাছের। আতœীয়-স্বজন সবাই কাছে
থাকেনা, বিপদ-আপদ সুখে-দুঃখে প্রথমে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী। সুখে-দুঃখে
ছোট বড় অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীর ভূমিকা উল্লেখ যোগ্য। জাতি ধর্ম বর্ণ এলাকা গোত্র নির্বিশেষে
সকলের প্রতিবেশীর সাথে সৎ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
০৫. আল-কুরআনে প্রতিবেশী সম্পর্কে বলা হয়েছে,
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا
تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ
وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ
وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ
اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا
“আর ইবাদত কর আল্লাহ্র, শরীক করোনা তার সাথে
অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীন,
প্রতিবেশী, অসহায় ,মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিত
জনকে।’’ (সূরা নিসা-৩৬)
প্রতবিশেী হচ্ছে আশপোশরে মুসলমি, অমুসলমি যে কোন র্ধমাবলীর
অনুসারী, নকে বান্দা, ফাসকে, বন্ধু, শত্রু, ভিনদেশি, স্বদশেী, উপকারী, অনষ্ঠিকারী, আত্মীয়, অনাত্মীয়, কাছরে বা দূররে সবাই প্রতবিশেীর অর্ন্তভুক্ত। শুধু মাত্র পাশরে
ঘররে লোকরোই প্রতবিশেী তা নয়। প্রতবিশেী বভিন্নিভাবে হতে পারে। একজনরে জমরি পাশে
আরকেজনরে জমি থাকলে তারা একে অপররে প্রতবিশেী। একজনরে ব্যবসা প্রতষ্ঠিানরে পাশে আরকেজনরে
প্রতষ্ঠিান থাকলে তারাও পরস্পর প্রতবিশেী। কোন বাহনে কোথায় যাওয়ার সময়ে যাত্রীরাও কছিু
সময়রে জন্য একে অপররে প্রতবিশেী। মা আয়শো (রাঃ) বলনে,"তোমার ঘররে চারপাশে
৪০ ঘররে অধবিাসীরা তোমার প্রতবিশেী। "
০৭.প্রতিবেশীর
প্রকারভেদ:
হাদীস শরীফে হক বা অধিকার অনুসারে প্রতিবেশীকে
তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা:-
১। হক বিশিষ্ট প্রতিবেশী যারা আত্মীয় নয় শুধু প্রতিবেশী।
২। হক বিশিষ্ট প্রতিবেশী যারা মুসলিম প্রতিবেশী।
৩। হক বিশিষ্ট প্রতিবেশী যারা মুসলিম আত্মীয়।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে,
فَوَيْلٌ
لِّلْمُصَلِّينَ*الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ*الَّذِينَ هُمْ
يُرَاءُونَ*وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
“অতএব দূর্ভোগ সে সব নামাজীর, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে
বে-খবর। যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে। এবং নিত্য ব্যবহার্য বস্তু অন্যকে দেয় না।’’
(সূরামাউন: ৪-৭)
এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ لَا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ
لَا يُؤْمِنُ» . قِيلَ: مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «الَّذِي لَا يَأْمَنُ
جَارُهُ بَوَائِقَهُ» (بخارى-5478-مسلم-78)
“আল্লাহর শপথ সে মুসলমান
নয়, সে মুসলমান নয়, সে মুসলমান নয়’ জিজ্ঞেস করা হলো কে
সে ইয়া রাসূলুল্লাহ? উত্তরে বললেন, যে তার প্রতিবেশীকে
কষ্ট দিয়ে থাকে।’’ (বুখারী-৫৪৭৮ ই.ফা, মুসলিম;৭৮ ই.ফা)
১০. এ
প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِي جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيسْكُتْ» (بخارى-4807-مسلم-80)
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাস
রাখে তার উচিত সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, আর যে ব্যক্তি আল্ল¬াহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাস
রাখে তার উচিত সে যেন মেহমানকে সম্মান করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ
তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার উচিত সে যেন মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করে,
না হয় সে যেন চুপ থাকে।’’ (বুখারী-৪৮০৭ ই.ফা, মুসলিম-৮০ ই.ফা)
১১. রাসূলুল্লাহ
(স.) আরো বলেছেন,
عَنِ
ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي
بِالْجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ» (بخارى-5476-مسلم-6448)
“জিব্রাইল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এমন ভাবে অনবরত ওয়াসিয়াত
করে যাচ্ছিলেন যেন তারা আমার ওয়ারিশ হয়ে যায়।’’ (বুখারী; ৫৪৭৬ই.ফা, মুসলিম; ৬৪৪৮ ই.ফা)
عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ الْخُزَاعِيِّ،
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، (مُسلم -81-ابن
ماجه-3672)
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর
সাথে ভাল ব্যবহার করে।’’ (মুসলিম-৮১ ই.ফা, ইবনে মাজাহ-৩৬৭২)
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ» . رَوَاهُمُسلم-6449)
‘‘হে আবূ জর! যখন তুমি তরকারী পাকাও, তাতে একটু বেশী পানি
দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তা তোমার প্রতিবেশীকে হাদিয়া দাও।’’ (মুসলিম-৬৪৪৯ ই.ফা)
১৩. মুমিনের
প্রতিবেশী উপবাস থাকতে পারে না:
এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُسَاوِرِ قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يُخْبِرُ ابْنَ
الزُّبَيْرِ يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ: «لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ
جَائِعٌ» (الادب المفرد
للبخارى-112-بيهقى-3117)
“সে ব্যক্তি মুমিন হতে পারেনা,যে নিজে পেটপুরে খাবে
আর তার পাশের প্রতিবেশী নাখেয়ে থাকবে।’’ (আদাবুল মুফরাদ-১১২, বায়হাকী-৩১১৭)
এ প্রসংগে হাদীসে এসেছে-
عَنْ
عَائِشَةَ، قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ لِي
جَارَيْنِ، فَإِلَى أَيِّهِمَا أُهْدِي؟ قَالَ: «إِلَى
أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا» (بخاري-5482)
হযরত আয়শা (রাঃ) জিজ্ঞেস
করলেন- হে আল্লাহর রাসূল (স.)! আমার দু’ ঘর প্রতিবেশী রয়েছে এদের মধ্যে কাকে হাদিয়া
দেবো? তিনি বললেন যার ঘরের দরজা তোমার সব চেয়ে বেশী কাছে হয়। (বুখারী-২১১৬,২৪২৩,৫৪৮২ ই.ফা.বা)
عَنْ
عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «أَوَّلُ
خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ جَارَانِ» (أَحْمد-17372-المعجم الكبير للطبرانى-836)
কিয়ামতের দিন মানুষের অধিকার হরণ সংক্রান্ত
ব্যাপারে সর্বপ্রথম দু’ ব্যক্তিকে হাজির করা হবে যারা একে অপরের প্রতিবেশী ছিল কিন্তু
তারা প্রতিবেশীর দায়িত্ব পালন না করে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত ছিল। এ রকম ব্যক্তির মামলাই
আল্লাহর কাছে পেশ করা হবে। (মুসনাদে আহমদ-১৭৩৭২,তাবারানী-৮৩৬)
عَنْ
سَعِيدِ بْنِ زَيْدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُولُ: «مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا، فَإِنَّهُ يُطَوَّقُهُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ» (بحارى-2968-مسلم-3989)
হজরত সাঈদ ইবনে যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জোরপূর্বক
(তার প্রতিবেশীর) এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন তাকে
সাত তবক জমির বেড়ি গলায় লাগিয়ে দেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী-২৯৬৮ ই.ফা, সহীহ মুসলিম-৩৯৮৯ ই.ফা)
এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا
نِسَاءَ المُسْلِمَاتِ، لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ
لِجَارَتِهَا، وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ» (بحارى-2396-5479-مسلم-2248)
“হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন রাসূল (স.)
বলেছেন- হে মুসলিম নারীগণ! এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে অল্পপরিমান দান করাকে যেন
তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা একটি ছাগলের খুরও হয়।’’
(বুখারী-২৩৯৬,৫৪৭৯ই.ফা, মুসলিম-২২৪৮ ই.ফা)
ব্যক্তির ব্যবহারের দ্বারা তার পরকাল নির্ধারণ
করা হবে সে জান্নাতী কিংবা জাহান্নামী। হাদীসে এসেছে,
عَنْ
أَبِي يَحْيَى، مَوْلَى جَعْدَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، رَضِيَ
اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فُلَانَةً
تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا
تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا. قَالَ: «هِيَ فِي النَّارِ» . قَالَ: يَا
رَسُولَ اللَّهِ فَإِنَّ فُلَانَةً تُذْكَرُ قِلَّةَ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا
وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنَ الْأَقِطِ وَلَا تؤذي جِيرَانَهَا. قَالَ: «هِيَ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ-9675- وَالْبَيْهَقِيّ -9099-هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ(صحيح
حاكم-7304)
আমর ইবন শুয়াইব তার দাদা ও পিতা সূত্রে বর্ণনা
করেছেন। নবী করীম (স.) বলেছেনঃ
عَنْ
عَمْرِو
بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ: " مَنْ أَغْلَقَ بَابَهُ دُونَ جَارِهِ مَخَافَةً عَلَى
أَهْلِهِ وَمَالِهِ فَلَيْسَ ذَاكَ بِمُؤْمِنٍ، وَلَيْسَ بِمُؤْمِنٍ مَنْ لَمْ
يَأْمَنْ جَارُهُ بَوَائِقَهُ،(بيهقى-9113-طبراني-2430-مساوي
الاخلاق للخرائطى-387)
“যে প্রতিবেশী থেকে কেহ নিজের পরিবার পরিজন ও সম্পদের বিপদ আশংকা
করে এবং দরজা বন্ধ করে ঘুমায় সে প্রতিবেশী মু’মিন নয়। আর যার অত্যাচার
ও দৌরাতœ থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয় সেও মুমিন নয়।’’ (বায়হকী-৯১১৩,
তাবারানী-২৪৩০,খারায়িতী-৩৮৭,কানযুল উম্মাল-২৪৯৩২)
২০. প্রতিবেশীর
অধিকার:
এ প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেনঃ
عَنْ
عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:أَتَدْرِي مَا حَقُّ الْجَارِ: إِذَا
اسْتَعَانَكَ أَعَنْتُهُ، وَإِذَا اسْتَقْرَضَكَ أَقْرَضْتَهُ، وَإِذَا افْتَقَرَ
عُدْتَ عَلَيْهِ، وَإِذَا مَرِضَ عُدْتَهُ، وَإِذَا أَصَابَهُ خَيْرٌ هَنَّأْتَهُ،
وَإِذَا أَصَابَتْهُ مُصِيبَةٌ عَزَّيْتَهُ، وَإِذَا مَاتَ اتَّبَعْتَ
جِنَازَتَهُ، وَلَا تَسْتَطِيلُ عَلَيْهِ بِالْبِنَاءِ تَحْجُبُ عَنْهُ الرِّيحَ
إِلَّا بِإِذْنِهِ، وَلَا تُؤْذِيهِ بِقُتَارِ قِدْرِكَ إِلَّا أَنْ تَغْرِفَ لَهُ
مِنْهَا، وَإِنِ اشْتَرَيْتَ فَاكِهَةً فَاهْدِ لَهُ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ
فَأَدْخِلْهَا سِرًّا، وَلَا يَخْرُجُ بِهَا وَلَدُكَ لِيَغِيظَ بِهَا وَلَدَهُ، (بيهقى-9113 -كنز
العمال-25613)
হযরত ওমর বিন শুয়াইব তার পিতা তার দাদা থেকে
রাসূল করিম (স.) বলেন, তুমি কি জান প্রতিবেশীর অধিকার কী? তা হল:
(ক) যদি সে সাহায্য চায় তবে সাহায্য কর।
(খ) যদি সে ঋণ চায় তবে তাকে ঋণ দাও।
(গ) যদি সে অনাহারী হয় তবে তাকে খাদ্য দাও।
(ঘ) যদি সে অসুস্থ হয়ে যায় তবে তাকে দেখা শুনা
কর।
(ঙ) যদি কোন কারনে খুশি হয় তবে তাকে মোবারক
বাদ দাও।
(চ) সে যদি বিপদে পড়ে তবে তাকে সবরবা ধৈর্য্য
ধরতে বলো।
(ছ) সে যদি মারা যায় তবে তাকে কবরস্থান পর্যন্ত
নিয়ে যাও।
২১.(জ) তার ঘর অপেক্ষা উচু ঘর বেধে তার আলো
বাতাস বন্ধ করোনা।
(ঝ) তবে সে অনুমতি দিলে উচু ঘর বাধতে পারবে।
(ঞ) তুমি নিজের ঘরের আতরের সুগন্ধি দ্বারা
তাকে কষ্ট দিও না। যদি তার ঘরে কিছু পাঠাও সেটা অন্য কথা।
(ট) তুমি যদি নিজের ছেলে মেয়ের জন্য ফল ক্রয়
করো তবে তার ঘরেও পাঠিও আর যদি তা নাকরতে পারো তা চুপিচুপি ঘরে এনো। ছেলে মেয়েরাতা
যেন খেতে খেতে ঘরের বাহিরে না যায়। তাহলে প্রতিবেশীর ছেলে মেয়ে কষ্ট পাবে।”
(বায়হকী-৯১১৩, কানযল উম্মাল ঃ ২৫৬১৩)
আচার আচারণ এমন যে যদি তার আচারণ দ্বারা প্রতিবেশী
কষ্ট পায় তবে সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَايَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَايَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ» (رَوَاهُمُسلم-78)
হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন,
রাসূল (স.) বলেছেন-‘‘যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ থাকতে পারেনা, সে ব্যক্তি জান্নাতে
যেতে পারবেনা।’’ (মুসলিম;৭৮ ই.ফা)
২৩. অন্য
হাদীসে এসেছে,
عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: كَيْفَ لِي أَنْ أَعْلَمَ إِذَا أَحْسَنْتُ، وَإِذَا أَسَأْتُ؟ قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
" إِذَا
سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ: أَنْ قَدْ أَحْسَنْتَ،
فَقَدْ أَحْسَنْتَ، وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ: قَدْ أَسَأْتَ، فَقَدْ
أَسَأْتَ "[حكم الألباني]صحيح(ابن ماجه-4223-احمد-3808-ابن حبان-526)
হজরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ্এক ব্যক্তি রাসূল
(স.)-কে বলল, আমি কিভাবে জানব ভালো কাজ করি বা মন্দ কাজ করি ? রাসূল (স.) বললেনঃ
যখন তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে যে, তুমি ভালো কাজ করেছ, তবেই তুমি ভালো কাজ
করেছ। আর যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে যে, তুমি মন্দ কাজ করেছ,
তবেই তুমি মন্দ কাজ করেছ। (ইবনে মাজাহ-৪২২৩,আহমদ-৩৮০৮,
ছহীহ ইবনে হিব্বান-৫২৬)
হাদীসে এসেছে,
عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ
وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ
مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ
الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে র্বণতি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে, মুসলমান মুসলমানরে
ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালমিরে হাতে সোর্পদ করবে না। যে কউে তার ভাইয়রে
অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবনে। যে কউে তার মুসলমি ভাইয়রে বপিদ
দুর করবে, আল্লাহ তা‘আলা কয়িামতরে দনি তার বপিদসমূহ দূর করবনে। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানরে
দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কয়িামতরে দনি তার দোষ ঢেকে রাখবনে। (বোখারী-২৪৪২
তাওহীদ, আধুনকি প্রকাশনীঃ ২২৬৩, ইসলামকি ফাউন্ডশেনঃ
২২৭৮)
এ প্রসংগে রাসূল (স.) বলেন,
أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَسُولَ اللهِ صلَّى الله عَلَيْه
وَسَلَّمَ انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا
আনাস ইবনু মালকি (রাঃ) হতে র্বণতি। তিনি বলনে, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেনে, তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালমি হোক অথবা
মাযলুম। (র্অথাৎ যালমি ভাইকে যুলুম থেকে বরিত রাখবে এবং মাযলুম ভাইকে যালমিরে হাত হতে রক্ষা করাবে)। (বোখারী-২৪৪৩,
২৪৪৪, ৬৯৫২) (আধুনকি প্রকাশনীঃ ২২৬৪, ইসলামকি ফাউন্ডশেনঃ
২২৮১)
পরিশেষে বলতে হয়, মানুষ স্বাভাবিকভাবে
ও নিজেদের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করে। যেহেতু মানুষ পরস্পর নির্ভরশীল এই কারণেই
তারা পাশাপাশি ঘরবাড়ী তৈরী করে, সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে পরস্পরের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে পারে। জাতি,
ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও এলাকা নির্বিশেষে সকল প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহারের
নির্দেশ দেয়া হয়েছে ইসলামে।
عَنْ نَافِعِ بْنِ عَبْدِ الْحَارِثِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مِنْ سَعَادَةِ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ:
الْمَسْكَنُ الْوَاسِعُ، وَالْجَارُ الصَّالِحُ، وَالْمَرْكَبُ الْهَنِيءُ "
[قال الشيخ الألباني] : صحيح لغيره
হযরত নাফে (রাঃ) নবী করীম (স.) হতে বর্ণনা
করেন। তিনি বলেছেন, তিনটি জিনিস মুসলমানের সৌভাগ্যের অন্তর্ভূক্ত যথাঃ (১) প্রশস্ত
বাসস্থান (২) সৎ প্রতিবেশী (৩) চমৎকার সোয়ারী (যানবাহন)। (আদাবুল মুফরাদ,শামেলা-১১৬ ও ৪৫৭)
আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল (স.) আমাদের জন্য প্রতিবেশীর
অনেক দায়-দায়ীত্ব বর্ণনা করেছেন, আমরা চেষ্টা করব যাতে প্রতিবেশীর কিছু হলেও হক্ব আদায় করার।
আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com