ইসলামের দৃষ্টিতে যাকাত ও ইনকাম ট্যাক্স
الزَّكَاةِ যাকাত শব্দের আভিধানিক
অর্থঃ اَلْنِّمَاءُ শ্রী বৃদ্ধি,
উহার আর একটি অর্থঃ اَلْطُّهْارَةُ পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা,
পরিশুদ্ধতা ইত্যাদি। ফিকাহ শাস্ত্রের পরিভাষায় যাকাত হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদত।
পরিভাষায় নিজের ধনসম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ গরীব মিসকীন ও অভাবী লোকদের মধ্যে বন্টন
করাকে যাকাত বলে। সালাতের পরে ইসলামের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত।
দ্বিতীয় হিজরীতে মদীনা শরীফে ফরয করা হয়।
অন্য দিকে যাকাতের
সাথে ইনকাম ট্যাক্স এর বিধান একটু বিন্নতর। আমরা অনেক সময় মনে করি যে যাকাতের মতই ইনকাম
ট্যাক্স এর বিধান। ব্যক্তির মোট আয়ের উপর সরকার কর্তিক নির্ধারিত টাকার পরিমান হলে
তাকে ইনকাম ট্যাক্স প্রধান করতে হয়। এটি এক এক দেশের এক এক পদ্ধতি। বিশেষ করে বাংলাদেশের যার আয় বৎসরে আয় (মাসের চাকরীর
বেতন ১৬হাজার টাকার উপরে) তাদের জন্য মোট টাকার ১০% হাজারে ও ১৫% অর্জিত টাকার কর বা
ট্যাক্স প্রধান করতে হয়।
কুরআন হাদীস পর্যালোচনা
করলে দেখা যায় যে, ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হচ্ছে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " بُنِيَ
الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ
إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ،
وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ
رَمَضَانَ "» )بخارى-7-مسلم-20)
ইব্নে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। যথা একথার সাক্ষ্যদান
করা যে,আল্লাহ ব্যতীত কোন
মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়িম করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ সম্পাদন করা এবং
রমযানের সিয়াম পালন করা।” (বুখারী-০৭ ই.ফা,মুসলিম-২০ ই.ফা)
০৩. যাকাত ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মৌলভিত্তি
ও ফরয ইবাদত। ইসলামী অর্থনীতির মেরুদন্ড হলো যাকাত। ইসলামী অর্থনীতির অন্যমত মৌলিক
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের সুষম বন্টন। উপরন্তু স¤পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার জন্য ইসলাম প্রত্যেক মুসলমানকে
তাকীদ প্রদান করেছে। স¤পদের এ সুষম বন্টনের
জন্য ইসলাম যে সকল ব্যবস্থা মানুষকে উপহার দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যাকাত।
০৪. মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়লে
সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বিশৃংখলা দেখা দেয়া ফলে মানুষের অভাব অনটন বেড়ে যায়, আইন শৃংখলার অবনতি ঘটে ও মানুষের নৈতিক চরিত্রের
বিপর্যয় ঘটে। এ সব সমস্যা থেকে মানব জাতিকে রক্ষার লক্ষে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ধনী
মুসলিম ব্যক্তির উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন। অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্স সরকার কর্তৃক আরোপিত
বাধ্যতামূলক প্রদেয় অর্থ, যা ব্যক্তির আয়ের উপর
নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।
০৫. যাকাতের পরিচিতি:
الزكوة আরবী শব্দ এর অভিধানিক
অর্থ বৃদ্ধি, সংশোধিত হওয়া, প্রাচুর্য,পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা
ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় যাকাত হচ্ছে একটি আর্থিক ইবাদত। নিজের ধন সম্পদের
একটি নির্দিষ্ট অংশ গরীব, মিসকীন ও অভাবী লোকদের মধ্যে বন্টন করাকে যাকাত বলা হয়।
যাকাতের গুরুত:
যাকাতের ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক
গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্মে যাকাতের গুরুত্ব গুলি আলোচনা করা হলো:
০৬. ক। যাকাত এর ধর্মীয় গুরুত্ব:
(১) যাকাত একটি ফরয ইবাদতঃ কুরআন মজীদে বহু স্থানে
সালাতের সাথে সাথে যাকাতের উল্লেখ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
وَأَقِيمُوا
الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ ﴿البقرة:
٤٣﴾
“সালাত কায়েম করো এবং
যাকাত প্রদান করো নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়।” (সূরা বাকারা-৪৩)
(২) যাকাত সম্পদ পবিত্র করেঃ মহান
আল্লাহ বলেন,
خُذْ مِنْ
أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ﴿التوبة:
١٠٣﴾
“হে রাসূল আপনি তাদের
সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন।” (সূরা তাওবা-১০৩)
০৭(৩) যাকাত জাহান্নাম হতে পরিত্রান দেবে: আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ
يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا
يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ -يَوْمَ
يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ
وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا
كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ ﴿التوبة:
34-35﴾
“আর যারা স্বণর্- রৌপ্য জমা করে, অথচ আল্লাহর রাস্তায়
তা খরচ করে না অর্থ্যাৎ যাকাত দেয় না আপনি তাদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ প্রদান করুন।
কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট,
পার্শ্ব ও পৃন্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের
জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।” (সূরা তাওবা-৯/ ৩৪-৩৫)
০৮. হাদীসে এসেছে,
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
" مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ، مُثِّلَ لَهُ
مَالُهُ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ،
يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ - يَقُولُ: أَنَا مَالُكَ أَنَا
كَنْزُكَ " ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ: (وَلَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ
يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ) إِلَى آخِرِ الآيَةِ -بخارى১৩১৮-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন
“মহান আল্লাহ যাকে ধন সম্পদ দিয়েছেন কিস্তু সে উহার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ঐ ধন
সম্পদ মাথার উপর কালো দাগ
বিশিষ্ট বিষধর সাপে পরিনত করে তার গলায় পেচিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর সাপ ঐ ব্যক্তির দু গালে
কামড়াতে থাকবে। এবং বলবে আমি তোমার মাল ও সঞ্চিত সম্পদ।” (বুখারী- ১৩১৮ই.ফা)
০৯. যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়গুলো হল:
(১) একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা করা।
(২) রিয়া ও প্রদর্শনেচ্ছা পরিহার করা।
(৩) গর্ববোধ ও অহংকার থেকে বাঁচতে হবে।
(৪) কৃতজ্ঞতা লাভের মানসিকতা থেকে মুক্ত থাকতে
হবে।
(৫) দানের খোঁটা ও কষ্ট দেয়া পরিত্যাগ করা।
(৬) বিনম্র ব্যবহার ও হৃদয়ের প্রশস্ততা।
(৭) যাকাতে হালাল উপায়ে অর্জিত স¤পদ ব্যয় করা।
(৮) সর্বোৎকৃষ্ট মাল ব্যয় করা।
১০. খ। যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব:
যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব
অপরিসীম। নিম্মে যাকাতের সামাজিক গুরুত্ব সম্বন্ধে আলোচনা করা হলোঃ
(১) দারিদ্রতা লাঘব:
সমাজে সাধারণতঃ দুই শ্রেণীর মানুষ বসবাস করে
ধনী ও গরীব। ধনী ব্যক্তিরা যদি তাদের স¤পদের যাকাত বিতরণ করে তাহলে সমাজে গরীবগণ
তাদের দারিদ্রের নিষ্ঠুর কষাঘাত হতে রেহাই পেতে পারে।
১১.(২) ভাতৃত্ববোধ:
যাকাত হলো সমাজে ধনী ও গরীবদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ
জাগরণের একটি উপকরণ।
عَنْ
أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: " الزَّكَاةُ قَنْطَرَةُ الْإِسْلَامِ " بيهقى-৩০৩৮-المعجم
لاوسط-৮৯৩৭-
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যাকাত হলো ইসলামের সেতুবন্ধন।”
(বায়হাকী-৩০৩৮, তাবারানী-৮৯৩৭)
১২. (৩) সহমর্মিতা:
যাকাত গরীবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয় বরং ইহা
গরীবের ন্যায্য অধিকার। ধনী ব্যক্তি যখন গরীবকে যাকাত প্রদান করে তখন স্বভাবত সে তাহার
প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। এভাবে যাকাতের মাধ্যমে ধনীরা গরীবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন
করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَفِي
أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ﴿الذاريات: ١٩﴾
“ধনীদের স¤পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত
ও বঞ্চিতদের অধিকার।”
(সূরা যারিয়াত- ৫১/১৯)
১৩. গ। যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
(১) রাষ্ট্রীয় আয়:
যাকাত রাষ্ট্রীয় আয়ের একটি উৎস। যাকাত রাষ্ট্রের
অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় করতে পারে ।
(২) অর্থনৈতিক ভারসাম্য: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলেন,
فَأَخْبِرْهُمْ
أَنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ
فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ،-بخارى-১৪০৬-مسلم২৯-
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর যাকাত ফরয
করেছেন। যা তাদের ধনীদের নিকট হতে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হবে।”
(বুখারী-১৪০৬ ই.ফা,মুসলিম-২৯ ই.ফা)
১৪. যাকাতের নিসাব:
যাকাত ধার্য হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে নিসাব
পরিমান স¤পদ থাকা। নিসাব বলা হয় শরীয়তের নির্ধারিত নিম্মতম সীমা বা পরিমানকে।
কারো নিকট ২০ মিসকাল বা সাড়ে সাত তোলা পরিমান স্বর্ণ অথবা পাঁচ আওকিয়া বা সাড়ে বায়ান্ন
তোলা রৌপ্য অথবা সমপরিমান টাকা থাকে এবং যদি একবছর অতিক্রম করে তবে তাতে ২.৫% যাকাত
প্রদান করতে হবে।
১৫. যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যঃ
যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ
উদ্দেশ্যসমূহ নিম্মরূপ-
ক। আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ: মহান আল্লাহ বলেন,
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا
أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ
وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ
حَمِيدٌ- الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ
وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ
وَاسِعٌ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ২৬৭-২৬৮﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং
যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু
ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ
করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ্ অভাব মুক্ত,
প্রশংসিত। শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রের ভয়দেখায় এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়।আর
আল্লাহ তোমাদের কে তার ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রæতি প্রদান করেন।”
(সূরা বাকারা ০২/ ২৬৭,২৬৮)
১৬. খ। আত্মার পরিশুদ্ধি: যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আত্মা ও সম্পদ পরিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
خُذْ
مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ﴿التوبة: ١٠٣﴾
হে নবী (সাঃ) তুমি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত
গ্রহণ করবে এবং এর দ্বারা তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে। (সূরা তাওবা-৯/১০৩)
১৭. গ। আল্লাহর নৈকট্য লাভ: যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ হয়।
وَمِنَ
الْأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا
يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللَّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ ۚ أَلَا إِنَّهَا قُرْبَةٌ
لَّهُمْ ۚ سَيُدْخِلُهُمُ اللَّهُ فِي رَحْمَتِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
﴿التوبة: ٩٩﴾
“মরুবাসীদের কেউ কেউ যারা ঈমান আনে আল্লাহ্র
উপর, কেয়ামত দিনের উপর এবং নিজেদের ব্যয়কে আল্লাহ্র নৈকট্য এবং রসূলের দোয়া লাভের উপায়
বলে গণ্য করে। জেনো! তাই হল তাদের ক্ষেত্রে নৈকট্য। আল্লাহ্ তাদেরকে নিজের রহমতের অন্তর্ভূক্ত
করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, করুনাময়।” (সূরা তাওবা-৯/৯৯)
১৮. ঘ। বঞ্চিতদের প্রতিপালন:
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের
প্রতিপালন হয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَالَّذِينَ
فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ [٧٠:٢٤] لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
﴿المعارج: -٢٤-٢٥﴾
“যাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত হক আছে।
অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের।” (সূরা মা’আরিজ-৭০/২৪,২৫)
ঙ। আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য:
যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার,
প্রসার ও কায়েমের কার্যক্রম করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
وَجَاهِدُوا
بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن
كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿التوبة: ٤١﴾
“তোমরা আল্লাহ্র পথে প্রাণপন প্রচেষ্টা কর
নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।”
(সূরা তাওবা-৪১)
১৯. যাকাতের ব্যয়ের খাতসমুহ:
পবিত্র কুরআনে যাকাতের
ব্যয়ের আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ
বলেনঃ
إِنَّمَا
الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا
وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ
اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
﴿التوبة: ٦٠﴾
“নিশ্চই যাকাত ফকির, মিসকিন,যাকাত উত্তোলন ও বন্টন
সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত লোকদের জন্য, যাদের মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য,
দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর
বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা ৯/৬০)
২০. যাকাত ও করের মধ্যে পার্থক্য:
যাকাত ও কর দুটি সম্পন ভিন্ন জিনিস। যাকাত
ট্যাক্স নয়। যাকাত হলো মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক সম্পদশালীদের উপর আরোপিত
আদেশ। আজকাল অনেকেই যাকাতের ব্যাপারে অনেক যুক্তি উপস্থাপন করে থাকেন। তাদের ধারণা
যাকাত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্যান্য ট্যাক্সের মতই এক ধরনের ট্যাক্স। প্রকৃতপক্ষে যাকাত
রাষ্ট্র কর্তৃক ধার্যকৃত কোন ট্যাক্স নয়, এমন কি ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রথম যুগে
নবী করীম (সাঃ) ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ট্যাক্সের প্রবর্তন করেননি।
২১
অন্যদিকে কর হলো দেশের সরকার কর্তৃক সম্পদশালীদের উপর আরোপিত
অর্থকর। যা সমগ্র দেশবাসীর হক হিসেবে চিহ্নিত। সুতরাং এ অর্থে যাকাত ও কর দুইটির আদেশদাতা
ভিন্ন ও দুইটির হকদার ভিন্ন। নিম্মে
যাকাত ও কর এর মধ্যে অন্তর্নিহিত পার্থক্যসমূহ উপস্থাপন করা হলোঃ
২২. ক। যাকাত আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত বাধ্যতামূলক
প্রদেয় আর্থিক ইবাদাত। অন্যদিকে কর দেশের সরকার কর্তৃক আরোপিত বাধ্যতামূলক প্রদেয় অর্থ।
খ।যাকাত হলো বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চিত
স¤পদের উপর আরোপিত ব্যয়। অন্যদিকে কর হলো ব্যক্তির আয়ের উপর আরোপিত ব্যয়।
২৩.
গ। যাকাত ধর্মীয় বিধান, যা শুধু দেশের মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য অন্যদিকে কর দেশের সকল
মুসলিম অমুসলিম নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য।
ঘ। যাকাতের অর্থ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দিষ্ট
খাতে ব্যয়যোগ্য। অন্যদিকে করেরঅর্থ সরকার যে কোন কাজে ব্যয় করতে পারে।
২৪. ঙ। যাকাত মূলতঃ দরিদ্রের হক। অন্যদিকে
কর সমগ্র দেশবাসীর হক।
চ। যাকাত প্রদানকারী মহান আল্লাহ তায়ালার
আদেশ মেনে চলে ইহজগতে শান্তি ও আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। অন্যদিকে কর প্রদানকারী কোন
রকম ব্যক্তিগত প্রতিদান প্রত্যাশা করতে পারে না।
২৫. ছ। যাকাত আদায়ের জন্য নুন্যতম নিসাব পরিমাণ
সম্পদের কথা উল্লেখ রয়েছে।ফলে
তা কম সম্পদশালীদের উপর বাধ্যতামূলক নয়। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে
করযোগ্য আয়ের নূন্যতম সীমা থাকলেও পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে কোন সীমা উল্লেখ নেই।
জ। যাকাত সব সময়ই স্থির। অন্যদিকে কর আয়ের
উপর নির্ভর করে পরিবর্তনশীল।
২৬. ঝ। যাকাত নির্দিষ্ট বস্তুর মাধ্যমে প্রদান
করা উত্তম। অন্যদিকে কর অর্থের মাধ্যমেই প্রদান করা হয়।
ঞ। দেশে ইসলামী বিধি-বিধান মুতাবিক যাকাত
আদায়ের কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান নেই। অন্যদিকে কর আদায়ের জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
২৭. উপসংহারঃ
প্রিয় হাজেরীন! যাকাত
শুধুমাত্র ইবাদত নয়, ইসলামী অর্থনীতির মূল মেরুদন্ডও বটে। সাম্য, সহমর্মীতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ
যাকাতের মূল শিক্ষা। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করে। তাই পবিত্র কুরআনে সালাত
আদায়ের সাথে সাথে যাকাত আদায়ের তাকীদ করা হয়েছে। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স সরকার কর্তৃক
ব্যক্তির আয়ের উপর প্রদত্ত কর। আমাদের সকলকে মুমিন হিসেবে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে মহান
আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে কর ও টেক্স প্রদান করে সমাজ
ও রাষ্ট্রের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com