Wednesday, October 13, 2021

সমাজ সংস্কারক হিসেবে মহানবী(স.)-এর অবদান

 


সমাজ সংস্কারক হিসেবে মহানবী(স.)-এর অবদান

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার 

ভুমিকা:

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহানবী (স.)-কে যে সমাজে প্রেরণ করেছিলেন তা ছিল অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। প্রচলিত কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল পুরো জাতি। আগুন, পাথর ও বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় তারা লিপ্ত ছিল তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলাতে এবং মহান স্রষ্টার নৈকট্য হাসিলে। মহানবী (স.) তাদের অজ্ঞতা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে নিয়ে আসেন প্রকৃত সংস্কারসমূহ যেগুলো সমাজ জীবনে প্রভূত কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে। আজকের উপস্থাপনায় মহানবী (স.)-এর কতিপয় সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ।

 

সমাজ:

সমাজ মূলত এমন এক ব্যবস্থাকে বুঝায়, যেখানে একাধিক চরিত্র একত্রে কিছু নিয়ম-কানুন প্রতিষ্ঠা করে, একত্রে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলে। মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে লিখিত কিংবা অলিখিত নিয়ম-কানুন তৈরী করে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এ রকম একত্রে বসবাসের ব্যবস্থাকে সমাজ বলে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

সমাজ সংস্কার:

সংস্কার শব্দের অর্থ হল শোধন করা, শুদ্ধ করা, পরিষ্কার করা, ভেজালমুক্ত করা ইত্যাদি। সমাজ সংস্কার বলতে বুঝায়, সমাজে যদি অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে, গুনে ধরে, ভুল পথে চলে, অন্যায়ই ন্যায় হয়ে যায়, অনিয়মই নিয়ম হয়ে যায়। তখন সে সমাজকে সংশোধন করা জরুরী হয়ে পড়ে। আর এ সংশোধন ব্যবস্থার নাম হচ্ছে সমাজ সংস্কার।

সংস্কারক হিসাবে মহানবী (স.) এর আগমন:

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

আল্লাহ্ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (আলে ইমরান-৩/১৬৪)

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গাম্বর প্রেরণ করুন যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। (সূরা বাকারা-২/১২৯)

হিলফুল ফুযুল গঠন করেন:

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পাওয়ার আগেই একজন সচেতন মানুষ হিসাবে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সমাজ সংস্কারের কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে হিলফুর ফুযুল গঠন করা। এর শর্তগুলোর দিকে তাকালেই তাঁর সংস্কার মনস্ক চিন্তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।

হিলফুল ফুযুল এর শর্তাবলী:-

ক। মাযলুম ও অসহায়দের সাহায্য করা

খ। সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখা

গ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী ও প্রীতির বন্ধন স্থাপন করা

ঘ। পথিক ও মুসাফিরদের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করা

ঙ। কোন জালেমকে মক্কায় প্রবেশ করতে না দেয়া

তাওহীদের ভিত্তিতে সমাজ গঠন:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ: {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ} [الشعراء وَرَهْطَكَ مِنْهُمُ المُخْلَصِينَ، خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى صَعِدَ الصَّفَا فَهَتَف يَا صَبَاحَاهْ فَقَالُوا: مَنْ هَذَا؟، فَاجْتَمَعُوا إِلَيْهِ، فَقَالَ: أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا تَخْرُجُ مِنْ سَفْحِ هَذَا الجَبَلِ، أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ قَالُوا: مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ كَذِبًا قَالَ: فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ قَالَ أَبُو لَهَبٍ: تَبًّا لَكَ، مَا جَمَعْتَنَا إِلَّا لِهَذَا؟ ثُمَّ قَامَ، فَنَزَلَتْ: {تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, (তুমি তোমার আত্মীয়-স্বজনকে সতর্ক করে দাও) আয়াতটি অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (স.) বের হয়ে সাফা পর্বতে গিয়ে উঠলেন (সকাল বেলার বিপদ থেকে সাবধান) বলে উচ্চস্বরে ডাক দিলেন। আওয়াজ শুনেতারা বলল, এ কে? তারপর সবাই তাঁর কাছে যেয়ে সমবেত হল। তিনি বললেন আমি যদি তোমাদেরকে বলি, একটি অশ্বারোহী সেনাবাহিনী এ পর্বতের পিছনে তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তাহলে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে? সকলেই বলল, আপনার মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করছি(সূরা সাবা-৪৬) এ কথা শুনে আবু লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এ জন্যই আমাদেরকে একত্র করেছ? অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স.) দাঁড়ালেন। তারপর অবতীর্ণ হলঃ ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। (বুখারী-৪৯৭১)

কুসংস্কার পরিত্যক্ত:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ، وَحَوْلَ البَيْتِ [ص:৮৭] سِتُّونَ وَثَلاَثُ مِائَةِ نُصُبٍ، فَجَعَلَ يَطْعُنُهَا بِعُودٍ فِي يَدِهِ، وَيَقُولُ: {جَاءَ الحَقُّ وَزَهَقَ البَاطِلُ، إِنَّ البَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا} [الإسراء: ৮১]،}جَاءَ الحَقُّ وَمَا يُبْدِئُ البَاطِلُ وَمَا يُعِيدُ{

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন কাবা ঘরের চারপাশে ৩৬০ টি মুর্তি ছিল। তিনি তাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে এগুলোকে ঠোকা দিতে লাগলেন এবং বলতে থাকলেন, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আর মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই বিষয় (সূরা ইসরা-১৭/৮১)

সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করতে। (সূরা সাবা-৪৯) {বুখারী-৪৭২০}

 কুসংস্কার আকড়ে ধরে থাকা যাবে না:

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ

আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ্ তায়ালা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও। (সূরা বাকারাহ-২/১৭০)

একনিষ্টভাবে আল্লাহর উপাসনা করতে হবে:

إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ

আমি আপনার প্রতি এ কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব, আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহই জন্য। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।(সুরা যুমার-৩৯/,৩)

তাওহীদ ব্যতীত জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব নয়:

عَنِ سعيد بْنِ المُسَيِّبِ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ أَبَا طَالِبٍ لَمَّا حَضَرَتْهُ الوَفَاةُ، دَخَلَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدَهُ أَبُو جَهْلٍ، فَقَالَ: أَيْ عَمِّ، قُلْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، كَلِمَةً أُحَاجُّ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللَّهِগ্ধ فَقَالَ أَبُو جَهْلٍ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي أُمَيَّةَ: يَا أَبَا طَالِبٍ، تَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَلَمْ يَزَالاَ يُكَلِّمَانِهِ، حَتَّى قَالَ آخِرَ شَيْءٍ كَلَّمَهُمْ بِهِ: عَلَى مِلَّةِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ، مَا لَمْ أُنْهَ عَنْهُ فنَزَلَتْ: {مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الجَحِيمِ} وَنَزَلَتْ: {إِنَّكَ لاَ تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْت{

সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, যখন আবু তালিব মুমূর্ষ অবস্থায় তখন মহানবী (স.) তার নিকট গেলেন। আবু জাহেলও তার নিকট উপস্থিত ছিল। মহানবী তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমাটি একবার পড়, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহর কাছে কথা বলতে পারব। তখন আবু জাহেল, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু উমাইয়া বলল, হে আবু তালিব! তুমি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম হতে ফিরে যাবে? এরা দুজন তার সাথে এ কথাটি বারবার বলতে থাকল। সর্বশেষ আবু তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল তা হল, আমি আব্দুল মুত্তালিবের মিল্লাতে উপরই আছি। এ কথা বলার পর মহানবী (স.) বললেন, আমি আপনার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়।এ প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হয়। নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে, যদিও তারা আত্মীয় হোক একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা দোযখী (তাওবা-১১৩)। আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ্ তায়ালাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন (সুরা কাসাস-৫৬) (বুখারী-৩৮৮৪)

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَهْوَنُ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا أَبُو طَالِبٍ، وَهُوَ مُنْتَعِلٌ بِنَعْلَيْنِ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বনিম্ন শাস্তি হবে আবু তালিবের। তাকে দুটি আগুনের জুতা পড়িয়ে দেয়া হবে, ফলে এ দুটির কারণে তার মগজ পর্যন্ত উতলাতে থাকবে। (মুসলিম-৪০৩)

বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহ্র কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত-৪৯/১৩)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَنْتَ بِأَفْضَلَ مِنْ أَحْمَرَ وَأَسْوَدَ مِنْهُمْ إِلَّا مَنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ فِي الدِّينِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, লাল ও কালো বর্ণ হওয়ার কারণে তোমাদের কেউ মর্যাদাবান নও বরং মর্যাদাবান সে, যে বেশী দ্বীনদার। (মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই-৪৯৩)

أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের উপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম। (সুরা যুখরুফ-৪৩/৩২)

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا

হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহ ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। (সূরা নিসা-৪/১৩৫)

ন্যায়বিচারের একটি উদাহরণ:

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ قُرَيْشًا أَهَمَّهُمْ شَأْنُ الْمَرْأَةِ الْمَخْزُومِيَّةِ الَّتِي سَرَقَتْ، فَقَالُوا: مَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالُوا: وَمَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلَّا أُسَامَةُ، حِبُّ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللهِ؟ ثُمَّ قَامَ فَاخْتَطَبَ، فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمِ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمِ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ، وَايْمُ اللهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا وَفِي حَدِيثِ ابْنِ رُمْحٍ: إِنَّمَا هَلَكَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ

আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার প্রতি শাস্তি প্রয়োগের ব্যাপারে কুরাইশগণ চিন্তিত হয়ে পড়লো। তারা বললো কে এই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (স.) এর সাথে কথা বলতে পারে? তারা বললো এ ব্যাপারে উসামা ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) এর প্রিয় ব্যক্তি। তিনি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (স.) এর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তির মধ্যে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স.) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করতো, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদ কন্যা ফাতিমাও চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম। (মুসলিম-৪৩০২, বুখারী-৩৭৩৩)

নারীগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা:

বর্তমান বিশ্বে ইসলাম ও মহানবী (স.) কে অনেক বেশী দোষারূপ করা হয় এই মর্মে যে, নারীদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। অথচ ইসলামপূর্ব যুগে কতটা জঘন্য রকমের ব্যবহার করা হতো নারীদের সাথে তা নিচের আয়াতগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলেই পরিষ্কার বোঝা যায়।

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالْأُنْثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ مِنْ سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَى وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِمْ مَا تَرَكَ عَلَيْهَا مِنْ دَابَّةٍ وَلَكِنْ يُؤَخِّرُهُمْ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ

যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকেতাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট। যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তাদের উদাহরণ নিকৃষ্ট এবং আল্লাহ উদাহরণই মহান, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুত সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরান্বিত করতে পারবে না। (সূরা নাহল-১৬/৫৮,৬১)

নারীগণের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী (স.) এর বক্তব্য:

عَنْ نُبَيْطٍ ابْنَ شَرِيطٍ رض قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا وُلِدَ لِلرَّجُلٍ ابْنَةٌ بَعَثَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مَلَائِكَةً يَقُولُونَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ، يَكْسُونَهَا بِأَجْنِحَتِهِمْ وَيَمْسَحُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى رَأْسِهَا وَيَقُولُونَ: ضَعِيفَةٌ خَرَجَتْ مِنْ ضَعِيفَةٍ، الْقَيِّمُ عَلَيْهَا مُعَانٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الصَّغِيرِ، وَفِيهِ جَمَاعَةٌ لَمْ أَعْرِفْهُمْ

নাবীত ইবনে শুরাইত (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, যখন কোন ব্যক্তির কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সেখানে আল্লাহ ফেরেশতা পাঠান। তারা গিয়ে বলে, হে গৃহবাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারা কন্যাটিকে ডানার ছায়ায় আবৃত করে নেয়, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় এবং বলে একটি অবলা জীবন থেকে আরেকটি অবলা জীবন ভূমিষ্ট হয়েছে। এর তত্ত্বাবধানকারী কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ-১৩৪৮৪)

কন্যা সন্তানকে উত্তমরূপে লালন-পালন:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুটি মেয়ে সন্তানকে প্রাপ্ত বয়ষ্কা হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করবে, কিয়ামতের দিনে সে ও আমি এমন পাশাপাশি অবস্থায় থাকব, এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুগুলো মিলিয়ে দিলেন। (মুসলি-৬৫৮৯, তিরমিযী-১৯১৪)

মোহরের অধিকার প্রতিষ্ঠা:

وَأُحِلَّ لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُمْ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهِ مِنْ بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা মিলিত হবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সূরা নিসা-৪/২৪)

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সূরা নিসা-৪/০৪)

ভরণ-পোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা:

عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ

হাকিম ইবনে মুয়াবিয়া আল কুশাইরী (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক্ব রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক পরিধান করাবে। তার মুখমন্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে। (আবু দাউদ-২১৪২)

উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা:

لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا

পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশী। এ অংশ নির্ধারিত। (সূরা নিসা-৪/০৭)

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান। (সূরা নিসা-৪/১১)

সর্বশেষ বিদায় হজ্জের ভাষণে নারীদের কথা বলেছেন:

فَاتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ، بِأَمَانَةِ اللَّهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বিদায় হজ্জের ভাষণে এক পর্যায়ে বলেছেন, তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর! তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামানতে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর কালামের মাধ্যমে তাদেরকে তোমরা বৈধ করে নিয়েছো। (ইবনে মাজাহ-৩০৭৪)

দাস প্রথা বিলুপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ:

মহানবী (স.) দাস প্রথা বিলুপ্ত করার বিষয়ে জোড়ালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি ভাবলেন, মানুষ কেন মানুষের গোলামী করবে? সে তো গোলামী করবে একমাত্র আল্লাহর। সে কেন হাটে-বাজারে গরু-ছাগলের মত বিক্রি হবে? তবে যে প্রথা পূর্ব থেকে চলে আসছিল তিনি তা সরাসরি বিলুপ্ত না করে পর্যায়ক্রমে প্রথাটি বিলুপ্তির সুব্যবস্থা করেন।

মহানবী (স.) নিজে ৬৩ জন ক্রীতদাস মুক্ত করেন;

আয়শা (রাঃ) ৬৭ জন ক্রীতদাস মুক্ত করে;

ওমর (রাঃ) ১০০০ জন ক্রীতদাস মুক্ত করেন;

ইবনে আওফ (রাঃ) ৩০০০০ জন ক্রীতদাস মুক্ত করেন;

শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসাবে ক্রীতদাস মুক্তি:

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ الْأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। (সূরা মায়িদাহ-৫/৮৯)

ভুলক্রমে মানুষ হত্যার কাফফারা হিসাবে ক্রীতদাস মুক্তি:

وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلَّا أَنْ يَصَّدَّقُوا فَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوٍّ لَكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِنَ اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا

যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভুলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহ্র কাছ থেকে গোনাহ্ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা-৪/৯২)

যিহারের কাফফারা হিসাবে ক্রীতদাস মুক্তি:

الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْكُمْ مِنْ نِسَائِهِمْ مَا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنْكَرًا مِنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا ذَلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرَ

তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ্ খবর রাখেন তোমরা যা কর। (সূরা মুজাদালাহ-৫৮/০২,০৩)

রোযা অবস্থায় স্ত্রী মিলনের কাফফারা হিসাবে ক্রীতদাস মুক্তি:

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْتُ. قَالَ: مَا لَكَ؟ قَالَ: وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي وَأَنَا صَائِمٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ، قَالَ: لاَ، فَقَالَ: فَهَلْ تَجِدُ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا قَالَ: لاَ، قَالَ: فَمَكَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبَيْنَا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَقٍ فِيهَا تَمْرٌ - وَالعَرَقُ المِكْتَلُ - قَالَ: أَيْنَ السَّائِلُ؟ فَقَالَ: أَنَا، قَالَ: خُذْهَا، فَتَصَدَّقْ بِهِ فَقَالَ الرَّجُلُ: أَعَلَى أَفْقَرَ مِنِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَوَاللَّهِ مَا بَيْنَ لاَبَتَيْهَا - يُرِيدُ الحَرَّتَيْنِ - أَهْلُ بَيْتٍ أَفْقَرُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي، فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ، ثُمَّ قَالَ: أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (স.) এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি রোয অবস্থায় স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি কোন ক্রীতদাস মুক্ত করতে পারবে কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি কি একাধারে দুমাস রোযা রাখতে পারবে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন, ৬০ জন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলল, না। রাবী বলেন, তখন মহানবী (স.) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় মহানবী (স.) এর কাছে এক আরাক (ঝুড়ি) পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। তিনি বললেন, এগুলো নিয়ে সাদাকাহ করে দাও। তখন লোকটি বলল, আমার চাইতেও বেশী অভাবগ্রস্থকে সাদাকাহ করব? আল্লাহর শপথ! মদিনায় আমার পরিবারের চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্থ আর কেউ নেই। রাসূলুল্লাহ (স.) হেসে উঠলেন এবং তাঁর দাঁত দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও। (বুখারীর-১৯৩৬)

সুদের উপর নিষেধাজ্ঞা:

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيم

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ্ তায়ালা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহ্র উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। আল্লাহ তায়ালা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্ল-াহ্ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। (সূরা বাকারাহ-২/২৭৫,২৭৬)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাকারাহ-২/২৭৮,২৭৯)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُضَاعَفَةً وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো। (আলে ইমরান-৩/১৩০)

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) লানত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দুজনের উপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (মুসলিম-৩৯৮৫)

عَنْ جَابِرٍ رض قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى الله عَلَيْهِ و سَلَّمَ فِى حَجَّةِ الْوَدَاعِ رِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ، وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُهُ رِبَانَا، رِبَا الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ،

জাহেলী যুগের সুদও রহিত করা হলো। আমাদের বংশের প্রাপ্য সুদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের প্রাপ্য সমুদয় সুদ রহিত করলাম। (ইবনে মাজাহ-৩০৭৪)

মদপান নিষিদ্ধ করেন:

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَعَنَ اللَّهُ الْخَمْرَ، وَشَارِبَهَا، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَمُبْتَاعَهَا، وَعَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদ, তা পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদক, শোধনকারী, যে উৎপাদন করায়, সরবরাহকারী এবং যার জন্য সরবরাহ করা হয় এদের সকলকে আল্লাহ লানত করেছেন। (আবু দাউদ-৩৬৭৪)

মদ হারাম করে কুরআনের ঘোষণা:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُون-

হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়িদাহ-৫/৯০,৯১) এ ছাড়া সূরা বাকারাহ-২/২১৯ ও সূরা নিসা-৪/৪৩-এ মদ সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে।

উপসংহার:

আজকের আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি মহানবী (স.) মানব সমাজে যে সংস্কার সাধন করেছেন, পৃথিবীর আর কোন সংস্কারক তা করে দেখাতে পারেনি। আমরা জোর গলায় বলতে পারি তাঁর সংস্কারগুলো মেনে চললে সমাজে পরিপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com