সেনানায়ক মুহাম্মদ (স.)
এম এ রাজ্জাক হাওলাদর
ভুমিকা:
মহানবী মুহাম্মদ (স.) মহান আল্লাহর বান্দা ও সর্বশেষ রাসূল। তাঁকে প্রেরণের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণতা দান করেছেন। তিনি মানুষকে এমন পথ দেখিয়ে গেছেন, যা অনুসরণ করলে দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিক কল্যাণ লাভ করা সম্ভব হবে। মহানবী (স.) কে মানুষের কল্যাণে যুদ্ধও করতে হয়েছে। যুদ্ধ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সেনানায়ক।
মহানবী (স.)
বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হয়ে যুদ্ধ করলেন কেন ?
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনুল কারীমে মুহাম্মদ (স.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি আপনাকে বিশ^বাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (আম্বিয়া-১০৭) যাকে আল্লাহ তায়ালা রহমত স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠালেন, তাঁর হাতে অস্ত্র কেন উঠল? তিনি কেন এমন কাজ করলেন যাতে মানুষের রক্ত ঝরে। তরবারীর সাহায্যে কি ধর্মের বিস্তার ঘটিয়েছেন? নাকি শত্রুর নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল? রাজ্য বিস্তার কিংবা ভোগ-বিলাসের বশীভূত হয়ে কি যুদ্ধ করেছেন? স্বভাবতই এ ধরণের প্রশ্ন মানুষের মনে উদিত হয়। আসলে কি জন্য তিনি যুদ্ধ করেছেন?
কতিপয়
অপবাদ মুহাম্মদ (স.) এর নামে:
কতিপয় অমুসলিম বিশেষতঃ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ
মহানবী (স.) এর যুদ্ধগুলোর সমালোচনা করে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। জনৈক
ঐতিহাসিক বলেছেন, ইসলাম তরবারীর
সাহায্যে প্রসার লাভ করেছে। অপর একজন বলেছেন, মুহাম্মদ প্রথমে আত্মরক্ষার্থে অস্ত্রধারণ
করলেও পরে শত্রুদের অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণের মানসে যুদ্ধ করেছেন। পরিশেষে
অধিকার সংরক্ষণ, আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা ও রাজ্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন জাতির সাথে যুদ্ধ করেছেন।
অপবাদ
খন্ডন:
এ কথা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, অস্ত্রের সাহায্যে ইসলাম বিস্তার লাভ করেনি।
তিনি জোর করে কাউকে ধর্মে দীক্ষিত করেননি। মহানবী (স.) এর উত্তম চরিত্রে আকৃষ্ট
হয়ে তারা ইসলাম গ্রহন করেছেন। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, ধর্মের মধ্যে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। (সূরা বাকারাহ-২/২৫৬)
মহানবী (স.) কখনো যুদ্ধ চাননি। নিচের হাদিসটি
থেকে এটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়:-
عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي أَوْفَى، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِي لَقِيَ فِيهَا
الْعَدُوَّ، يَنْتَظِرُ حَتَّى إِذَا مَالَتِ الشَّمْسُ قَامَ فِيهِمْ، فَقَالَ:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ، وَاسْأَلُوا اللهَ
الْعَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ
تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، وَقَالَ: اللهُمَّ، مُنْزِلَ الْكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ،
وَهَازِمَ الْأَحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ، وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) যে সব যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিলেন তার কোন এক যুদ্ধে অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে পড়লো তখন তিনি সঙ্গীদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোকজন! তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্খা করো না। বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। আর যখন তোমরা শত্রুর সামনা-সামনি হয়ে যাও তখন ধৈর্য ধারণ করবে। আর জেনে রেখো যে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে। তারপর মহানবী (স.) দাঁড়িয়ে দোয়া করলেন, ইয়া আল্লাহ! কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী এবং শত্রুদলকে পরাস্তকারী। তুমি তাদের পরাস্ত করো এবং তাদের উপর আমাদেরকে সাহায্য করো। (মুসলিম-৪৪৩৪)
মহানবী (স.)
এর যুদ্ধের প্রস্তুতি:
মানবজাতির জরুরী প্রয়োজনে মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর
অনুসারীগণকে যুদ্ধ করতে হবে। এ কথা আল্লাহ তা’আলা ভাল করেই জানতেন বিধায় কুরআনুল কারীমের
মাধ্যমে তিনি মুসলিম জাতিকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন:-
وَأعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ
الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِنْ
دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُون
আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর পথে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। (সূরা আনফাল-৮/৬০)
জিহাদের
অনুমতি দেয়া হল নির্যাতিত হওয়ার কারণে:
أذن للذين يقاتلون بانهم ظلمووا و إن الله على نصرهم لقادر
যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম। (সূরা হজ্জ-২২/৩৯)
অন্যায়ভাবে
বহিষ্কৃত হওয়ার কারণে:
الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَنْ
يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ
যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে
বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্। (সূরা হজ্জ-২২/৪০)
খারাপ শ্রেণীর
মানুষকে প্রতিহত করার জন্য:
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ
لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ
اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ
لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
আল্লাহ্ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে খ্রীষ্টানদের নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, ইহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহ্র নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী শক্তিধর। (সূরা হজ্জ-২২/৪০)
মাযলুমকে
সাহায্য করার জন্য:
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ
يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا
وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর পথে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সূরা নিসা-৪/৭৫)
সমাজ
থেকে অন্যায় দূরীভূত করার জন্য:
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ
كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
وَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَوْلَاكُمْ نِعْمَ الْمَوْلَى
وَنِعْمَ النَّصِيرُ
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহ্র সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ্ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। আর তারা যদি না মানে, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্ তোমাদের সমর্থক এবং কতই না চমৎকার সাহায্যকারী। (সূরা আনফাল-৮/৩৯, ৪০)
মহানবী (স.)
ছিলেন বিশ্বসেরা সেনাপতি
তাঁর জীবনে পরাজয়ের কোন গ্লানি নেই। কেবল
উহুদ যুদ্ধের সাময়িক বিপর্যয় ছাড়া সকল যুদ্ধেই তিনি জয় লাভ করেছিলেন।
বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডারকে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট বলা হয়। আর এটা এ জন্য বলা হয় যে, তিনি ইউরোপ ও এশিয়ার কিয়দংশ অল্প কিছু দিনের মধ্যেই জয়লাভ করেছিলেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাকে শতভাগ সফল বলা যায় না। কারণ একবার তারই বাহিনী কোন এক কারণে তার আদেশ অমান্য করেছিল। যার দরুণ তাকে নিজের সংকল্প ত্যাগ করে ভারতবর্ষ থেকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরতে হয়েছিল।
সম্রাট
নেপোলিয়ান:
নেপোলিয়ানের সামরিক ক্ষমতা ছিল অতুলনীয় ও
প্রশংসনীয়। তিনি সমগ্র ইউরোপ লন্ড-ভন্ড করে দিয়েছিলেন। তার যুদ্ধনীতি ছিল
ত্রুটিহীন ও খুবই সুন্দর। বর্তমান ইউরোপের সামরিক কলেজগুলোতে তার যুদ্ধনীতি পড়ানো
হয়। তিনি ছিলেন অসম সাহসী। তার মত যশস্বী জেনারেলও শেষ পর্যন্ত পরাজয় বরণ করেছিলেন
এবং একজন সাধারণ মানুষের ন্যায় দুঃখ-কষ্টের ভিতর দিয়ে নির্বাসনে মৃত্যুবরণ করতে
হয়েছে।
হিটলারের
আত্মহত্যা:
আমরা হিটলারের কথা জানি। সমগ্র পৃথিবীতে তিনি
আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। একটি দুর্ধর্ষ বাহিনী তিনি তৈরী করেছিলেন। ৬০ লাখ ইহুদীকে
তিনি হত্যা করেছিলেন কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, আত্মহত্যা করে দুনিয়া ত্যাগ করতে হয়েছিল।
সেরা
সেনাপতির নযীর স্থাপন করেন:
যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য যুদ্ধের নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সকল পর্যায়ে যে পরিমাণ বিচক্ষণতা, নিপুণতা, দক্ষতা ও দূরদর্শিতা থাকা প্রয়োজন, তা দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত কেউ পূর্ণরূপে প্রদর্শন করতে পারেনি। বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স.)-এর ব্যতিক্রম। একমাত্র তিনিই সর্বক্ষেত্রে পূর্ণ দক্ষতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। কাজেই সর্বকালের দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সমরবিদ ও সেরা সেনাপতি বলতে মুহাম্মদ (স.) কেই বুঝায়।
মহানবী (স.)
যুদ্ধের একটি পরিসংখ্যান:
মহানবী (স.) যুদ্ধের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা
যাবে যে, তিনি কত উঁচু
মানের রণকৌশলী ও সমরবিদ ছিলেন:-
১.বদরের যুদ্ধ মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ৩১৩ জন
অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০ জন, মুসলমানগণ বিজয়ী।
২.উহুদের যুদ্ধ মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ৭০০ জন
অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ৩০০০ জন, মুসলমানগণের সাময়িক বিপর্যয়।
৩.খন্দক বা আহযাবের যুদ্ধ মুসলিম সৈন্য
সংখ্যা ৩০০০ জন অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ২৪০০০ জন, মুসলমানগণ বিজয়ী।
৪.খায়বরের যুদ্ধ মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১৪০০ জন
অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ২০০০০ জন, মুসলমানগণ বিজয়ী।
৫.মক্কা বিজয় মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০০ জন
অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা মক্কার সকল অমুসলিম, মুসলমানগণ বিজয়ী।
৬.হুনাইনের যুদ্ধ মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১২০০০
জন অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা হাওয়াযনি ও সাকীফ গোত্র, মুসলমানগণ বিজয়ী।
৭.তাবুকের যুদ্ধ মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ৩০০০০ জন অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা অগণিত, মুসলমানগণ বিজয়ী।
উহুদ
যুদ্ধে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি দক্ষ সেনাপতির পরিচয় বহন করে:
عَنِ البَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يُحَدِّثُ
قَالَ: جَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الرَّجَّالَةِ
يَوْمَ أُحُدٍ، وَكَانُوا خَمْسِينَ رَجُلًا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ جُبَيْرٍ،
فَقَالَ: إِنْ رَأَيْتُمُونَا تَخْطَفُنَا الطَّيْرُ فَلاَ تَبْرَحُوا
مَكَانَكُمْ، هَذَا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ، وَإِنْ رَأَيْتُمُونَا هَزَمْنَا
القَوْمَ وَأَوْطَأْنَاهُمْ، فَلاَ تَبْرَحُوا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ
فَهَزَمُوهُمْ قَالَ: فَأَنَا وَاللَّهِ رَأَيْتُ النِّسَاءَ يَشْتَدِدْنَ، قَدْ بَدَتْ
خَلاَخِلُهُنَّ وَأَسْوُقُهُنَّ، رَافِعَاتٍ ثِيَابَهُنَّ، فَقَالَ أَصْحَابُ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جُبَيْرٍ: الغَنِيمَةَ أَيْ قَوْمِ الغَنِيمَةَ، ظَهَرَ
أَصْحَابُكُمْ فَمَا تَنْتَظِرُونَ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جُبَيْرٍ:
أَنَسِيتُمْ مَا قَالَ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟
قَالُوا: وَاللَّهِ لَنَأْتِيَنَّ النَّاسَ، فَلَنُصِيبَنَّ مِنَ الغَنِيمَةِ،
فَلَمَّا أَتَوْهُمْ صُرِفَتْ وُجُوهُهُمْ، فَأَقْبَلُوا مُنْهَزِمِينَ
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) বলেন, মহানবী (স.) উহুদ যুদ্ধের দিন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) কে ৫০ জন তীরন্দাজ যুদ্ধার উপর আমীর নিযুক্ত করে গিরিপথে মোতায়েন করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পাখিরা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তবুও তোমরা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রুদলকে পরাস্ত করেছি, তবুও আমার পক্ষ থেকে সংবাদ প্রেরণ না করা পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করবে না। অতঃপর মুসলমানগণ যুদ্ধে কাফেরদের পরাস্ত করে দিল। বারা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিক নারীদেরকে দেখলাম তারা নিজ বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করছে। যাতে পায়ের অলংকার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সহযোগীরা বলতে লাগলেন, লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কেন? তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর বললেন, মহানবী (স.) তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা কি তোমরা ভুলে গিয়েছো? তারা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা লোকদের সাথে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহ করবো। অতঃপর তারা যখন স্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তারা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকে। (বুখারী-৩০৩৯)
বদর
যুদ্ধের দিন সৈন্যদলের মনোবল বৃদ্ধির জন্য শুরুতে রাসূলুল্লাহ (স.) আল্লাহর কাছে
প্রার্থনা করেন:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ فِي قُبَّةٍ: اللَّهُمَّ
إِنِّي أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ، اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ لَمْ تُعْبَدْ
بَعْدَ اليَوْمِ فَأَخَذَ أَبُو بَكْرٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: حَسْبُكَ يَا رَسُولَ
اللَّهِ، فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ وَهُوَ فِي الدِّرْعِ، فَخَرَجَ وَهُوَ
يَقُولُ: {سَيُهْزَمُ الجَمْعُ، وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ بَلِ السَّاعَةُ
مَوْعِدُهُمْ، وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ} وَقَالَ وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا
خَالِدٌ، يَوْمَ بَدْرٍ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,মহানবী (স.) বদরের দিন একটি গুম্বুজওয়ালা
তাবুতে অবস্থান কালে দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদার
দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদত হবে না। এ
সময় আবু বকর (রাঃ) তাঁর হাত ধরে ফেললেন। (ক্বামার-৪৫, ৪৬)
অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার
বার নত হয়ে আপনার প্রতিপালকের কাছে দোয়া করছেন। সে সময় মহানবী বর্ম আচ্ছাদিত
ছিলেন। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করতে করতে বেড়িয়ে এলেন: শীঘ্রই দুশমানরা পরাস্ত হবে
এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, তদুপরি কিয়ামত
তাদের প্রতিশ্রুত সময়। আর কিয়ামত অতি ভয়ঙ্কর ও অধিক তিক্ত। ক্বামার-৪৫, ৪৬। (বুখারী-২৯১৫)
অভয় দান
ও বিজয়ের আশ্বাস:
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ
كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি
তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী
হবে। (সূরা
আলে ইমরান-৩/১৩৯)
উৎসাহ
দান ও বিজয়ের আশ্বাস:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ
إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ
مِنْكُمْ مِائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ
لَا يَفْقَهُونَ الْآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا
فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ
مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ
الصَّابِرِينَ
হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য।
তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ
লোক, তবে জয়ী হবে
হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন। (সূরা আনফাল-৮/৬৫)
রাসূলুল্লাহ
(স.)-এর মটিভেশন:
عَنْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا،
قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ
أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فَأَيْنَ أَنَا؟ قَالَ: فِي الجَنَّةِ فَأَلْقَى
تَمَرَاتٍ فِي يَدِهِ، ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (স.)-এর
কাছে এসে বললেন, আমি যদি শহীদ
হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায় থাকব বলে আপনি মনে করেন? তিনি বললেন, জান্নাতে। তখন ঐ ব্যক্তি হাতের খেজুরগুলো
ছুঁড়ে ফেললেন, এরপর তিনি
লড়াই করলেন, এমনকি শহীদ
হয়ে গেলেন। (বুখারী-৪০৪৬, নাসাঈ-৩১৫৪)
عَنْ ابِى هعُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ
لَوْلاَ أَنَّ رِجَالًا مِنَ المُؤْمِنِينَ لاَ تَطِيبُ أَنْفُسُهُمْ أَنْ
يَتَخَلَّفُوا عَنِّي، وَلاَ أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ مَا تَخَلَّفْتُ
عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ
لَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ،
ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ، ثُمَّ أُحْيَا، ثُمَّ أُقْتَلُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মু’মিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তাহলে যারা আল্লাহ রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া হতে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, অতঃপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। (বুখারী-২৭৯৭)
খন্দক বা
পরিখা খননের পরিকল্পনা ও নিজে খননে অংশগ্রহণ:
খন্দকে যুদ্ধের সময় মহানবী (স.) বিখ্যাত
সাহাবী সালমান ফারসী (রাঃ) এর পরামর্শ গ্রহণ করে যে খন্দক বা পরিখা খনন করেছিলেন
তা তাঁর যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শিতার পরিচয় বহন করে:-
عَنِ البَرَاءَ بْنِ عَازِبٍ اَنَّهُ يُحَدِّثُ، قَالَ: لَمَّا
كَانَ يَوْمُ الأَحْزَابِ، وَخَنْدَقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، رَأَيْتُهُ يَنْقُلُ مِنْ تُرَابِ الخَنْدَقِ، حَتَّى وَارَى عَنِّي
الغُبَارُ جِلْدَةَ بَطْنِهِ، وَكَانَ كَثِيرَ الشَّعَرِ، فَسَمِعْتُهُ يَرْتَجِزُ
بِكَلِمَاتِ ابْنِ رَوَاحَةَ، وَهُوَ يَنْقُلُ مِنَ التُّرَابِ يَقُولُ:
اللَّهُمَّ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا ... وَلاَ
تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا،
فَأَنْزِلَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا ... وَثَبِّتِ الأَقْدَامَ إِنْ
لاَقَيْنَا،
বারা ইবনে আযিব (রাঃ) বলেন, খন্দক যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (স.) পরিখা
খনন করছেন। আমি তাঁকে খন্দকের মাটি বহন করতে দেখেছি। এমনকি ধূলিবালি লাগার কারনে
তাঁর পেটের চামড়া ঢেকে গিয়েছিল। তিনি অধিকতর পশম বিশিষ্ট ছিলেন। সে সময় আমি মহানবী
(স.) কে মাটি বহন রত অবস্থায় ইবনু রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি।
(বুখারী-৪১০৬)
হুদাইবিয়ার
সন্ধি, সেনাপতি
হিসেবে দূরদর্শিতার পরিচয়:
মহানবী (স.) ষষ্ঠ হিজরীর জি¦লকদ মাসে হুদাইবিয়া নামক স্থানে কুরাইশদের সাথে একটি সন্ধি স্থাপন করেন। ইতিহাসে এটি হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। বাহ্যতঃ সন্ধির সকল শর্ত কুরাইশদের অনুকুলে ছিল। তাই উমর (রাঃ) এর মত ব্যক্তিও এই চুক্তি সম্পাদন করতে অপমানিত বোধ করলেন। তথাপিও মহানবী (স.) কুরাইশদের সাথে ১০ বছরের এক শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে দূরদর্শী সেনানায়কের পরিচয় দেন। যেটিকে কুরআনুল কারীমে ফাতহুম মুবীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মক্কা
বিজয় ও সাধারণ ক্ষমা মহানবী (স.)বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে:
১০ই রমযান মহানবী (স.) মক্কা অভিমুখে রওয়ানা
হন। সাথে তাঁর ১০ হাজার মুজাহিদ যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত। পথিমধ্যে বনু সালীম ও বনু
মুযাইনার ২ হাজার সৈন্য যোগদান করলে মোট সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার। বিনা বাধায়
ও বিনা রক্তপাতে তিনি মক্কা জয় করেন। তিনি কোন প্রতিশোধ গ্রহণ না করে সাধারণ ক্ষমা
ঘোষনা করেন। যারা তাঁকে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করলো তাদেরকে হাতের মুঠোয় পেয়েও
ক্ষমা করে দেয়ায় দলে দলে মানুষ ইসলাম কবুল করেন।
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ
يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ
وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। আপনি
মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা
করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল। (সূরা নাসর: ১-৩)
মহানবী (স.)
এমনই সেনাপতি ছিলেন যার আদেশে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন:
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْثًا إِلَى مُؤْتَةَ فِي جُمَادَى الْأُولَى
مِنْ سَنَةِ ثَمَانٍ، وَاسْتَعْمَلَ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ وَقَالَ لَهُمْ: إِنْ
أُصِيبَ زَيْدٌ فَجَعْفَرُ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عَلَى النَّاسِ، فَإِنْ أُصِيبَ
جَعْفَرٌ فَعَبْدُ اللهِ بْنُ رَوَاحَةَ عَلَى النَّاسِ
উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন, ৮ম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল মাসে মু’তা অভিযানে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। যায়েদ ইবনে হারেসাকে ঐ সৈন্য দলের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। অতঃপর বলেন, যদি যায়েদ শাহাদত বরণ করেন তাহলে জাফর ইবনে আবু তালিব সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহন করবে। যদি জাফর শাহাদত বরণ করে তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি রাওয়াহাহ সেনাপতির দায়িত্ব পালন করবে। (মু’জামুল কবীর লিততাবারানী-৪৬৫৫)
রাসূলুল্লাহ
(স.)-এর সৈনিকের মান:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ
إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ
مِنْكُمْ مِائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ
لَا يَفْقَهُونَ
হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন যুদ্ধের জন্য।
তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ
লোক, তবে জয়ী হবে
হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন। (সূরা আনফাল-৮/৬৫)
الْآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا
فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ
مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ
الصَّابِرِينَ
এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা
তোমাদের উপর এবং তিনি জেনে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে। কাজেই তোমাদের
মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে
আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দুই হাজারের উপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের
সাথে। (সূরা
আনফাল-৮/৬৬)
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ
صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ
আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর। (সূরা সফ-৬১/৪)
যুদ্ধে
কিছু নিয়ম সব সময় মেনে চলার আদেশ মহানবী (স.) দিয়েছেন যাতে মানবাধিকার লংঘিত না
হয়:
ক। যারা ইবাদত খানায় মগ্ন থাকবে তাদের হত্যা
করা যাবে না।
খ। কোন স্ত্রীলোককে হত্যা করা যাবে না।
গ। কোন শিশু ও বৃদ্ধ লোককে হত্যা করা যাবে না
ঘ। ফল-ফসল ধ্বংস করা যাবে না।
জেনেভা
কনভেনশনে আমরা কি দেখি ?
ক। ১৮৬৪ সালে প্রথম জেনেভা কনভেনশনের লক্ষ্য
ছিল আহত ও অসুস্থদের উন্নতি।
খ। ১৯০৬ সালে দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশনের
লক্ষ্য ছিল সমুদ্রস্থ যুদ্ধক্ষেত্রে আহত, অসুস্থ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের সৈন্যদের
অবস্থার উন্নতি।
গ। ১৯২৯ সালে তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনের লক্ষ্য ছিল
যুদ্ধবন্দিদের প্রতি আচরণ, নিরাপত্তা ও
চিকিৎসা সংক্রান্ত।
ঘ। ১৯৪৯ সালে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের লক্ষ্য ছিল বেসামরিক জনগণকে রক্ষা।
উপসংহার:
আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মহানবী (স.) মানব জাতির কল্যাণে যুদ্ধ
করেছেন। তাঁর সারা জীবনের যুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি নেই। আর থাকবেই বা কেন? তিনি যে আল্লাহর নির্দেশে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর
পরিকল্পনা ছিল নিখুত। তাই তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সেনানায়ক।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com