জ্ঞান বিজ্ঞানে ভরপুর আল-কুরআন
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
সূচনা:
এ মহাবিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য তার সুশৃংখল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞান
ভান্ডারের নাম বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগ চলছে। প্রতিটি পদক্ষেপে
বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করছে মানুষ। বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে আল কুরআন মোটেও
পিছিয়ে নেই বরং সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে আছে অনেক ক্ষেত্রে। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে
আল কুরআন যে তথ্য ও তত্ত্ব পরিবেষন করেছে একবিংশ শতাব্দীতে তার সত্যতা উদঘাটন
নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হচ্ছেন বিজ্ঞানীগণ। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় বিজ্ঞানের সাথে
আল কুরআনের সম্পর্ক মোটেও বিরোধপূর্ণ নয়। তবে কোন কোন সময় বিজ্ঞান সঠিক সিদ্ধান্তে
উপনীত হতে না পেরে আল কুরআনের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত আল কুরআনের
বিষয়ই সত্যে পরিণত হয়। সমকালীন বিভিন্ন বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে এটি প্রমাণীত
হয়েছে। তাই আমাদের নতুন করে বিজ্ঞান ও আল কুরআন মিলিয়ে দেখার সময় এসেছে।
বিজ্ঞানীরা আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে অনেক
সময় আল কুরআনের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ করে থাকেন। এটা তাদের জ্ঞানের দৈনতা। প্রকৃতপক্ষে
আল কুরআন সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্ব পরিবেশন করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে
দিয়েছে। ক্ষুদ্র জ্ঞানে সে সমস্ত বিষয় কিছুটা বিশ্লেষণ করে আল কুরআন ও বিজ্ঞানের
পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবো ইনশা আল্লাহ। মহান আল্লাহর
কাছে তাওফীক কামনা করছি।
আলবার্ট
আইনস্টাইনের মন্তব্য:
বিখ্যাত জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আরবার্ট আইনস্টাইন (১৫/০৩/১৮৭৯-১৮/০৪/১৯৫৫) বলেছেন, বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই, প্রভেদ শুধু দৃষ্টিভঙ্গিতে। বিজ্ঞান শুধু কি এর উত্তর দিতে পারে। কেন বা কি হওয়া উচিত তার উত্তর দেয়ার ক্ষমতা বিজ্ঞানের নেই। অপর দিকে ধর্ম শুধু মানুষের কাজ আর চিন্তার মূল্যায়ন করতে পারে কিন্তু সেই লক্ষে পৌঁছাবার পথ বলে দেয় বিজ্ঞান। তাই ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু, আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।
আল-কুরআন
একটি বিজ্ঞানময় গ্রন্থ:
বিজ্ঞান মানে বিশেষ জ্ঞান। যা ব্যাপক গভেষনা
ও পরীক্ষার-নিরীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াতে বিশেষ
জ্ঞান শুধু নয় সকল জ্ঞানের নির্যাস এতে সঞ্চিত রয়েছে। তাই কুরআন গভেষকগণের গভেষনায়
ধরা পড়েছে পবিত্র কুরআন একটি পরিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ যা বিজ্ঞানের অনেক উর্ধ্বে
ঐশী জ্ঞান ব্যতীত কিছু নয়। আল কুরআনের বিজ্ঞানময়তা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يس وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ
ইয়া সীন! বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ। (সূরা ইয়া সীন:৩৬/০১-০২)
الم تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ
আলিফ লাম মীম! এগুলো বিজ্ঞানময় কুরআনের
নিদর্শন। আর এই কুরআন সৎকর্মশীলগণের জন্য ফথ প্রদর্শক ও রহমত। (সূরা লোকমান:৩১/০১-০২)
মহান আল্লাহ আল কুরআনুল কারীমকে বিজ্ঞানময়
গ্রন্থ ও পথ নির্দেশ বলেছেন। অতএব আল কুরআন বিজ্ঞানসম্মত গ্রন্থ ও বিজ্ঞান কুরআন সম্মত বিষয়।
সমস্ত
জ্ঞান-বিজ্ঞানের মালিক আল্লাহ:
এই পৃথিবীতে সমস্ত জ্ঞানীর জ্ঞান ও
বিজ্ঞানীগণের বড় বড় আবিষ্কার সবই আল্লাহ প্রদত্ত সামান্য জ্ঞানের ফসল। আর সমস্ত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের মালিক হলেন মহান
আল্লাহ। পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা বানী ইসরাঈলের-১৭/৮৫ নং বলা হয়েছে-
-وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي
وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে
দিন: রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা
হয়েছে। (বানী ইসরাঈল-১৭/৮৫)
উক্ত আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ প্রদত্ত সামান্য
জ্ঞান থেকে কিছু অংশের মালিক হয়ে তা কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীগণ অনেক কিছু আবিষ্কার
করেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা সম্পূর্ণ জ্ঞানের মালিক মানুষের কল্যাণের জন্য সকল
সমস্যার সমাধান সম্বলিত গ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেছেন।
আল-কুরআন
বিজ্ঞানসম্মত বিধান দিয়েছে:
আল-কুরআন মানব জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক
সার্বিক কল্যাণের জন্য যে সমস্ত বিধান দিয়েছেন সেগুলো বিজ্ঞানসম্মত।
ক।
সালাত:
কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অনেক ফযীলতের কথা
কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সালাত যারা নিয়মিত আদায় করেন তারা নানাবিধ জাগতিক
শারীরিক উপকারিতা লাভ করে থাকেন।
১.পবিত্রতা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন
করা যা সুস্থ জীবন যাপন করার জন্য জরুরী। অযু-গোসলের মাধ্যমে পবিত্র ও পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন হয়ে সালাত আদায় করতে হয়। প্রতিদিন পাঁচবার সালাতের প্রয়োজনে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাসিলের মাধ্যমে জীবানর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২.পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করার
জন্য মাসজিদে নিয়মিত আসা-যাওয়া করার ফলে শারীরিক ব্যায়াম হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস রোগে
আক্রান্ত ব্যক্তিরা সকাল-সন্ধা নিয়ম করে হাটেন।
৩.সালাতের কার্যক্রমে আছে কিয়াম বা দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা, বৈঠক ও সালাম ফিরানো। এই সমস্ত কর্মকান্ডের
সময় শারীরিক প্রায় সকল প্রকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। আমরা প্রতিদিন
পিটিতে ও গেইমসে ব্যায়াম করে থাকি শারীরিক উপযুক্ততা অর্জন ও ধরে রাখার জন্য।
৪.বর্তমানে অনেকে যোগ ব্যায়াম করে থাকেন।
পদ্মাসন, ধ্যানাসন, সিদ্ধাসন, বজ্রাসন নামে ধ্যান করা হয়। সালাত হচ্ছে
সবোত্তম ধ্যান যা মহান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে এক নিভিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। মহানবী (স.)-এর তিন প্রিয় জিনিসের একটি ছিল
সালাতের মাধ্যমে চক্ষু শীতল করা বা নয়নের প্রশান্তি অর্জন।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: حُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيبُ، وَجُعِلَ
قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلَاةِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পার্থিব বস্তুর মধ্যে স্ত্রী, সুগন্ধি এবং সালাতে রাখা হয়েছে আমার নয়নের
প্রশান্তি। (নাসাঈ : ৩৯৩৯)
৫.মহানবী (স.) তাঁর জীবনের সকল যুদ্ধে জয়লাভ
করেছিলেন। কোন যুদ্ধে তিনি পরাজয় বরণ করেননি। প্রায় সকল যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য
সংখ্যা কম ছিল। এরপরও জয়লাভ করার অনেকগুলো কারণ ছিল। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ
কারণ হল মহানবী (স.) এবং যোদ্ধাগণ সকলেই নামাযী ছিলেন। এমনকি চলমান যুদ্ধ
পরিস্থিতিতে যুদ্ধের ময়দানেই সালাত আদায় করেছেন। ফলে তারা কেউ শারীরিকভাবে অযোগ্য
ছিলেন না।
খ।
সাওম বা রোযা:
আল-কুরআনে রমযানে এক মাস সিয়াম পালনের জন্য
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানকে আদেশ প্রদান করা হয়েছে। কুরআনূল কারীমে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ
كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা
হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যাতে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন
করতে পার। (সূরা
বাকারাহ-২/১৮৩)
অপর আয়াতে বলা হয়েছে,
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى
لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ
الشَّهْرَ
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ
যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে
পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। (সূরা বাকারাহ-২/১৮৫)
২০১৬ সালে জাপানের প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী
ইওশিনরি ওশুমি অটোফেজি আবিষ্কার করে নোবেল পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন।
Autophagy শব্দ। যার
অর্থ হল নিজে নিজেকে খেয়ে ফেলা। শরীরের কোষগুলো যখন বাইরে থেকে খাবার না পেয়ে নিজে
নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে অটোফেজি বলা
হয়।
আমাদের ঘরে যেমন ডাষ্টবিন আছে, আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে
তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে একটি করে ডাষ্টবিন আছে। মানব দেহের সাইজ অনুপাতে
সাড়ে ৬ লক্ষ কোটি থেকে ১০ লক্ষ কোটি কোষ থাকে। কোষ হল দেহের সবচেয়ে ক্ষুদ্র গাঠনিক
একক। দেহ সঠিকভাবে বৃদ্ধি ও কার্যকর থাকার জন্য আমিষ বা প্রোটিন, শর্করা বা কার্বোহাইড্রেড, চর্বি বা ফেট, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবন এবং পানি এই ৬টি উপাদান সম্বলিত যে
সুষম খাদ্য সঠিক পরিমাণে গ্রহন করা জরুরী তার প্রধান উপাদান আমিষ বা প্রোটিন দেহের
উপকারে আসার জন্য এম্যাইনো এসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। আমরা প্রতিদিন প্রোটিন হিসাবে যা গ্রহন করি
তার শতকরা ৭০ ভাগ দেহের উপকারে আসার মত উপযুক্ততা অর্জন করতে পারে। বাকী ৩০ ভাগ
উপযুক্ততা অর্জন করতে না পেরে ময়লা আবর্জনা রূপে কোষের ভিতরে ডাষ্টবিনে জমা হয়।
শরীরের কোষগুলো যদি তাদের ডাষ্টবিনগুলো
নিয়মিত পরিষ্কার করার সুযোগ না পায় তাহলে কোষগুলো এক সময় নিষ্কৃয় হয়ে শরীরে
বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধির জন্ম দেয়। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মত বড় বড় রোগ জন্ম
নেয় এখান থেকেই।
মানুষ যখন খালি পেটে থাকে তখন শরীরের কোষগুলো
অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে কিন্তু তারা তো আর আমাদের মত বসে থাকে না। তাই প্রতিটি কোষ
তার ভিতরের আবর্জনা পরিষ্কার করতে থাকে। কোষগুলোর আমাদের মত আবর্জনা ফেলার জায়গা
নেই। তাই তারা নিজের আবর্জনা পরিশোধন করে নিজেই খেয়ে ফেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের
ভাষায় এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ তাদের গভেষনা দ্বারা এটাও উদ্ভাবন করেছেন যে বছরে একমাস উপবাস করলে কোষে জমে থাকা আবর্জনাগুলো সম্পূর্ণ পরিষ্কার হয়ে যায়। আর এই আবিষ্কারের ফলে বিশ্বের অনেক মানুষ স্বেচ্ছায় উপবাস শুরু করেছে। বলা চলে উপবাসের হিরিক পড়ে গেছে। আল কুরআন মাহে রামাদানে এক মাসের সিয়াম পালন ফরয করে বিজ্ঞানীগণের ১৪০০ বছর আগেই অটোফেজির ব্যবস্থা করেছেন। তাদের উপবাস শারীরিক সুস্থতার জন্যে আর আমাদের সিয়াম সবার আগে আল্লাহর গোলামী এরপর শারীরিক ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ।
মৌমাছি
সম্পর্কে আল কুরআনের বক্তব্য ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার:
আমরা অনেকেই মনে করি মৌমাছি দুই প্রকার।
পুরুষ মৌমাছি ও স্ত্রী মৌমাছি। এমন কি সেক্সপিয়ারের মত বিশ্ব বিখ্যাত সাহিত্যিক তার
লিখা Henry The Fourth নাটকে মৌমাছি সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় তিনিও মৌমাছি দুই
প্রকার মনে করতেন। তার জন্ম ১৫৬৪ এবং মৃত্যু ১৬১৬ খীষ্টাব্দে।
১৯৭৩ খ্রীষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী কার্ল
ভন ফ্রিচ Physiology of medicine বিষয়ে গভেষনার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার লাভ করেছেন। তার গভেষনার বিষয় ছিল মৌমাছির জীবনচক্র। এই গভেষনা চালাতে
গিয়ে তিনি এমন সব বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন যা সেক্সপিয়ারের সময়ের বিশ্বাসকে পাল্টে
দিয়েছে। তিনি ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখিয়েছেন যে, মৌমাছি দুই প্রকার নয়, মৌমাছি আসলে তিন প্রকার।
প্রথম প্রকার : পুরুষ মৌমাছি, এদের কাজ হল প্রজনন করা।
দ্বিতীয় প্রকার : স্ত্রী মৌমাছি, এদের কাজ হল সন্তান উৎপাদন করা।
তৃতীয় প্রকার : এই দুই প্রকারের বাইরে আরেকটি
প্রকার।
এই তৃতীয় প্রকারের মৌমাছিরা লিঙ্গ ভেদে
স্ত্রী মৌমাছি, তবে একটু
ভিন্ন। এরা সন্তান জন্মদানে অক্ষম, এক কথায় বন্ধা। কার্ল ভন ফ্রিচ এই শ্রেণীর
মৌমাছির নাম দিয়েছেন ওয়ার্কার বী অর্থাৎ শ্রমিক মৌমাছি। এরাই মৌচাক নির্মাণ করে ও
মধু সংগ্রহ করে থাকে। ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করলো তা ১৪০০ বছর আগে আল
কুরআন বলে দিল। দেখুন কুরআনুল কারীমে নাহল বা মৌমাছি নামে একটি সূরা আছে। এই সূরার
৬৮ ও ৬৯ নং আয়াতদ্বয়ের দিকে লক্ষ্য করুন।
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ
بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ
الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ
مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً
لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেন:
পর্বতগাহে, বৃক্ষে এবং
উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর, এরপর
সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উ¤মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে
বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়
এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল : ১৬/৬৮-৬৯)
উপরোক্ত আয়াত দুটিতে اتَّخِذِي – كُلِي – فَاسْلُكِي (ইত্তাখিযী, কুলী ও ফাসলুকী) এই শব্দগুলো থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা মৌচাক নির্মাণ, মুধু সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ধরণের ফল খাওয়ার এবং প্রতিপালকের দেখানো পথে চলার আদেশ যাদেরকে দিয়েছেন তারা স্ত্রী জাতি। আরবী গ্রামার অনুপাতে আজ্ঞাসূচক যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো স্ত্রীবাচক। আর এটি বুঝার জন্য আরবী ভাষার জ্ঞান থাকতে হবে। আর প্রমাণ করার জন্য যাচাই করতে হবে। বিস্তারিত জানার জন্য আরিফ আজাদ লিখিত প্যারডক্সিক্যাল সাজিদ প্রথম খন্ড ১৪৬ পৃষ্ঠা কুরআনে বিজ্ঞান কাকতালীয় নাকি বাস্তবতা দেখা যেতে পারে।
দি
বিগ ব্যাং থিওরী:
আধুনিক বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে মৌলিক
তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন তার নাম The Big Bang Theory বা মহা বিস্ফোরন তত্ত্ব। এটি এমন একটি ঘটনা
যার পূর্বে নভোমন্ডল, ভূমন্ডল, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি কোয়াসার, পালমার কিছুই ছিল না। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বের
পদার্থ, শক্তি, স্থান ও কাল একটি বস্তুপিন্ডে কেন্দ্রীভূত
ছিল। ঐ বস্তুপিন্ডে অসীম ঘনত্ব ও অগাধ উষ্ণতা ছিল। এর উষ্ণতা 10 to
the power 32 ডিগ্রী
Kelvin বলে উল্লেখ
করা হয়।
১৯২৭ সনে বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী G
Lemaitre সর্বপ্রথম এই
বিগ ব্যাং থিওরী উপস্থাপন করেন। এরপর তত্ত্বটি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন জর্জ
গ্যামও, এইচ আলফার ও
আর হেরমান। ১৯৬৫
সনে উইলসন ও পেনজিয়াস 30K এর সমান তাপমাত্রা বিকিরণের যে মাইক্রো তরঙ্গ বিকিরণ পটভূমি (Cosmic
micro wave background radiation) আবিষ্কার করেন তা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে মাইক্রো তরঙ্গ বিকিরণের উৎস
হল বিগ ব্যাং। এই আবিষ্কারের ফলে উইলসন ও পেনজিয়াস নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।
উপরোক্ত The Big Bang Theory টি আল কুরআনুল কারীমের সূরা আম্বিয়ার ৩০ নং
আয়াতের সাথে মিলে যায়।
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ
أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (সূরা আম্বিয়া-২১/৩০)
মহাবিশ্বের
সম্প্রসারণ:
পদার্থ বিজ্ঞানের সকল ছাত্র Doppler
effect এর মাধ্যমে
জানতে পেরেছে যে, আমাদের কাছ
থেকে নক্ষত্রসমূহ দূরে সরে যাচ্ছে এবং সমগ্র আলোক দৃশ্য লাল বা দীর্ঘ তরঙ্গের শেষ
দিকে সরে যাচ্ছে। এ ধরণের সরে যাওয়াকে Astronomy বা জ্যোতির্বিদ্যায় red
shift বলা হয়। ১৮১৮
সালে জার্মান বিজ্ঞানী H.C. Vosset প্রথম নক্ষত্রসমূহের red shift আবিষ্কার করেন। ১৯২৯ সালে বিজ্ঞানী Hubble
প্রকাশ করেন
যে, গ্যালক্সিগুলো
আমাদের দিক থেকে সকল দিকে ছুটে চলেছে। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী Albert
Einstein তার আলোড়ন
সৃষ্টিকারী তত্ত্ব Cosmological Constant (মহাজাগতিক ধ্রুবক) এ বলেছেন, একটি রহস্যময় স্বতাড়িত বৈশিষ্ট্যের কারণে মহাবিশ্ব
ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যেটি বুঝতে পারেননি কিংবা বুঝেও না
বুঝার ভান করেছেন, স্বীকার
করেননি। সেটি হল মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর হস্তক্ষেপেই এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত
হচ্ছে। মহান আল্লাহ ৭ম শতাব্দীতে এই বিস্ময়কর তত্ত্ব আল কুরআনের মাধ্যমে
বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন।
وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং
আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী। (সূরা যারিয়াত-৫১/৪৭)
Doppler Effect
An
increase in the frequency of sound, light or other waves as the source and
observer move toward or away from each other the effect causes the sudden
shange in pitch noticeable in a passing siren, as well as the red shift seen by
astronomers.
Austrian physicist Cristian Doppler
Closed Big Bang Theory:
মহাবিশ্বের সকল বস্তু পরপস্পরকে আকর্ষণ করে।
এই আকর্ষণকে বলা হয় Gravitational Force বা মহাকর্ষীয় শক্তি। সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যের আকর্ষণে আবর্তিত হয়। উপগ্রহ
গ্রহের আকর্ষণে ঘুরে বেড়ায়। গ্রহানুপুঞ্জ সূর্যের চারদিকে ঝাঁক বেঁধে পরিক্রমন
করে। প্রত্যেকটি বস্তু একে অপরের সাথে মিলতে চায় কিন্তু মিলতে পারে না যে শক্তির
কারণে তা হল Force of Expansion বা সম্প্রসারণ শক্তি। এই শক্তির বলে Space তৈরী হয় এবং দূরত্ব বজায় থাকে।
সুতরাং যদি সম্প্রসারণ গতি ক্রমান্বয়ে থেমে যায়, তাহলে মহাকর্ষীয় টানে গ্রহ, নক্ষত্রগুলো পরস্পরের কাছে এসে যাবে। তখন প্রচন্ড সংঘর্ষ শুরু হবে। এখন প্রশ্ন
হচ্ছে সম্প্রসারণ গতি কোন দিন থেমে যাবে কি না। এ বিষয়ে একটি তথ্য হল, মহাকর্ষ শক্তি সম্প্রসারণ বন্দ করতে পারবে কি
না তা নির্ভর করছে মহাজাগতিক পদার্থের গড় ঘনত্বের উপর। আর এর তাত্ত্বিকি
প্রতিরূপগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ ঘনত্ব যদি সংকট ঘনত্ব (Critical
Value) থেকে বেশী হয়
তখন মহাকর্ষ যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিশালী হবে। এ রকম হলে মহাবিশে^র সম্প্রসারণণ বন্ধ হয়ে মহাসংকোচনের দিকে
যাবে। এই অবস্থাকে Closed Big Bang ইধহম বলা হয়।
আমেরিকান বিজ্ঞানী Freeman
Dyson এটিকে Big
Crunch বলেছেন।
অর্থাৎ মহাজগৎ পুণরায় একটি বিন্দুতে এসে বিস্ফোরিত হবে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক
তথ্যগুলো থেকে দেখা যায় মহাকাশে নতুন নতুন নক্ষত্র কোয়াসার তথা নতুন গ্যালাক্সি
জন্ম নিচ্ছে। যার ফলে মহাজাগতিক গড় ঘনত্ব প্রভাবিত হচ্ছে। আবার বিশ্বের প্রতিটি
পরমানুর ভিতর ১০ কোটি নিউট্রিনো (Neutrino) আছে। তাদের পরিমাণ বিশাল ভরে সমৃদ্ধ এবং
তাদের মোট ওজন মহাবিশ্ব Closed করার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ মহাজাগতিক ধুলি (Cosmic
Dust) মহাবিশ্বের গড়
ঘনত্ব বৃদ্ধি করে চলেছে। বিজ্ঞানীগণ বলছেন, প্রতি বছর ১০ হাজার টন মহাজাগতিক ধুলি কণা শুধু
পৃথিবী গ্রহে পতিত হয়। তাছাড়া এখন মহাকাশে অনেক Black Hole বা কৃষ্ণ বিবরের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীগণ ধারণা করে থাকেন, মহাকর্ষের টানে নক্ষত্রগুলো পরস্পরের
নিকটবর্তী হলে সংঘর্ষ বাধে। যার কারণে Black Hole গুলো সৃষ্টি হয়েছে।
অতএব পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, সম্প্রসারণ গতি এক সময় থেমে গিয়ে Closed
Big Bang সংঘটিত হবে। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা যে Closed
Big Bang এর কথা জানতে
ও বুঝতে পারলাম। অবাক করা বিষয় হল ঠিক একই রকম কথা ৭ম শতাব্দীতে নাযিলকৃত আসমানী
কিতাব আল কুরআনে বলা হয়েছে। এমন নয় যে, বিজ্ঞানীগণের কাছে শুনে কুরআনে লিপিবদ্ধ
হয়েছে। বরং বলা যায় কুরআনে কাছে শুনে বিজ্ঞানীগণ এইভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা
চালিয়েছে। আসুন দেখি Closed Big Bang সম্পর্কে আল-কুরআন কি বলেছে।
يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ كَمَا
بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ
সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি
প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায়
সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বিয়া-২১/১০৪)
إِنْ كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ
لَدَيْنَا مُحْضَرُونَ
এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ। সে মুহুর্তেই
তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে। (সূরা ইয়াসীন-৩৬/৫৩)
إِذَا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ
وَإِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে, এবং যখন কবরসমূহ উম্মোচিত হবে। (সূরা ইনফিতার :৮২/০১-০৪)
إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে। (সূরা ইনশিকাক-৮৪/০১)
كَلَّا إِذَا دُكَّتِ الْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا
যখন পৃথিবী চুর্ণ-বিচুর্ণ হবে (সূরা ফজর-৮৯/২১)
সৌরজগত:
ছায়াপথ গ্যালাক্সির একটি নক্ষত্র, যার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকানো যায় না; চোখ ঝলসে যেতে চায়। তার নাম সূর্য। সূর্য তার
১১টি গ্রহ, ৪৮টি উপগ্রহ, হাজার হাজার ধূমকেতু এবং লক্ষ লক্ষ
উল্কাপিন্ড, নীহারিকা
প্রভৃতি নিয়ে ছায়াপথ গ্যলাক্সিতে যে পরিবার গড়ে তুলেছে তার নাম সৌরজগত। উনবিংশ
শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানীগণ সৌরজগতে মোট ৯টি গ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন। সে গ্রহগুলোর
নাম হচ্ছে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেফচুন ও প্লুটু। বর্তমানে আমাদের সৌরজগত আরো
২টি গ্রহের সন্ধান মিলেছে। তার একটি হচ্ছে ভলকান, অপরটির নাম হচ্ছে প্লানেট এক্স। ফলে সৌরজগতে
১১টি গ্রহ পূর্ণ হয়েছে এবং প্রত্যেক গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
সৌরজগতের ১১টি গ্রগ সম্পর্কে আল কুরআনুল
কারীমে ৭ম শতাব্দীতেই তথ্য পেশ করেছে। আল্লাহর বিশিষ্ট নবী ইউসুফ (আঃ) এর স্বপ্নকে
উদ্ধৃত করে বলেছেন-
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ
عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা! আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি। (ইউসুফ-০৪) এই আয়াতের আলোকে বিজ্ঞানীগণ মনে করছেন ইউসুফ (আঃ) কে স্বপ্নে সৌরজগতকেই দেখানো হয়েছে। তাই মনে করা হয় ভবিষ্যতে সৌরজগতে আর নতুন কোন গ্রহ আবিষ্কার হবে না।
ভ্রুণের
ক্রমবিকাশ:
وَقَدْ خَلَقَكُمْ أَطْوَارًا
আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন স্তরে সৃষ্টি করেছি। (সূরা নূহ-৭১/১৪)
মাতৃগর্ভে একটি শিশু স্তরের পর স্তর অতিক্রম
পরিপূর্ণতা লাভ করে। এটি এমন এক জটিল প্রক্রিয়া যা সংঘটিত হয় দয়াময় স্রষ্টা আল্লাহ
রাব্বুল আলামীনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং তাঁর রহমতের উপস্থিতিতে।
বৃটিশ ভ্রুণ বিজ্ঞানী Von
Bear ১৮২৭ সালে
ভ্রুণ বিকাশের স্তর (stage) গুলো আবিষ্কার করেন। আর ৭ম শতাব্দীতে আল কুরআন ভ্রুণ বিকাশের পর্যায়গুলো
বিভিন্ন সূরায় খন্ডিতভাবে বর্ণনা করেছেন। আবার সূরা মু’মিনূনের-২৩/১২-১৫নং আয়াতে এই পর্যায়গুলো ক্রমান্বয়ে
সাজিয়ে উপস্থাপন করেছেন। যে উপস্থাপনা বিজ্ঞান সম্মতভাবে ধারাবাহিক সামঞ্জস্যতা
বিধান করে। নিম্নে আল কুরআন এবং বিজ্ঞানে বর্ণিত ভ্রুণ সৃষ্টির পর্যায়গুলো সাজিয়ে
দেখানো হলো:-
ক্রমিক
আল কুরআন ক্রমিক বিজ্ঞান
১. سلالة
সুলালাহ (সার নির্যাস)= Sperm+Ovum (প্রজনন অনু)
২. نطفة
নুত্বফাহ (অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃষ্ট প্রজনন কোষ)=Zygote (নিষিক্ত কোষ)
৩. علقة আলাক্ব (জমাট রক্ত পিন্ড)= Blastocyst
(রক্ত পিন্ড)
৪. مضغة মুদগাহ (মাংস পিন্ড)= Somites
(বহুকোষী
মাংসপিন্ড)
৫. عظام ইযম (অস্থি) = Skeleton
(কংকাল বা
অস্থিতন্ত্র)
৬. لحم লাহম (মাংসপেষী)= Muscles
(মাংসপেসী)
৭ . روح রূহ (প্রাণ)= Foetus (মানব শিশু)
মহান
আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ طِينٍ ثُمَّ
جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَكِينٍ ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً
فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا
الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ
أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিনাদুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অত:পর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ কত কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনূন :২৩/১২-১৪)
সন্তান
ছেলে কিংবা মেয়ে হওয়ার রহস্য:
প্রত্যেক মানুষের (Sometic
cell) hf দেহ কোষে ৪৬
টি বা ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম (Chromosome) থাকে। শিশুর জীবনের প্রথম কোষে (Zygote) ২৩টি আসে শুক্রানু (Sperm)
থেকে আর ২৩টি
আসে ডিম্বানু (Ovum) থেকে। ২৩ জোড়া (Chromosome) এর মধ্যে ছেলে-মেয়ে সকলের জন্য ২২ জোড়া (Chromosome) এর আকার ও কাজ করার ক্ষমতা এক ও অভিন্ন।
অর্থাৎ এরা দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এদেরকে বলা হয় দেহ (Chromosome)
বাকী এক জোড়া
অর্থাৎ ২৩ তম (Chromosome) কে বলা হয় Sex Chromosome বা লিঙ্গ নির্ধারক (Chromosome) এই (Chromosome) আবার দুই প্রকার। Male Chromosome ও Female Chromosome মেইল (Chromosome) চিহ্নিত করা হয় Y দ্বারা এবং Female
Chromosome কে চিহ্নিত
করা হয় X দ্বারা। তাই
মেয়েদের (Chromosome) এর সাংকেতিক চিহ্ন XX কিন্তু ছেলেদের Sex Chromosome এর জোড়ায় থাকে একটি X অপরটি Y তাই ছেলেদের সাংকেতিক চিহ্ন XY এই Sex Chromosome এর মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আকৃতিগত ও
শরীর বৃত্তীয় পার্থক্য নির্দিষ্ট হয়।
মানব শিশু জন্ম নেয় পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্য
নিয়ে যা ক্রোমোজোমে বিদ্যমান থাকে। বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ
তত্ত্ব আবিষ্কৃত হয়।৭ম শতাব্দীতে নাযিল হওয়া আল কুরআন ক্রোমোজোমের যুগল সত্তার
প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে:-
وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى مِنْ
نُطْفَةٍ إِذَا تُمْنَى وَأَنَّ عَلَيْهِ النَّشْأَةَ الْأُخْرَى
এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।
একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়। পুনরুত্থানের দায়িত্ব তাঁরই। (সূরা নাজম:৫৩/৪৫-৪৭)
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ
جَعَلَكُمْ أَزْوَاجًا وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلَا تَضَعُ إِلَّا
بِعِلْمِهِ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلَّا
فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
আল্লাহ্ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল। কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তান প্রসব করে না; কিন্তু তাঁর জ্ঞাতসারে। কোন বয়স্ক ব্যক্তি বয়স পায় না। এবং তার বয়স হ্রাস পায় না; কিন্তু তা লিখিত আছে কিতাবে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূসা ফাত্বির-৩৫/১১)
মেয়ে
সন্তান হওয়ার জন্য স্ত্রীগণ দায়ী নন:
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ
يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ أَوْ
يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ
عَلِيمٌ قَدِيرٌ
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ্ তা'আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা
পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা
বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল। (সূরা শূরা :৪২/৪৯-৫০)
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا الشَّبَهُ فِي الوَلَدِ: فَإِنَّ الرَّجُلَ إِذَا
غَشِيَ المَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كَانَ الشَّبَهُ لَهُ، وَإِذَا سَبَقَ
مَاؤُهَا كَانَ الشَّبَهُ لَهَا
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সন্তান ছেলে-মেয়ে হওয়ার ব্যাপার এই যে, পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার সময় যদি পুরুষের বীর্য আগে স্খলিত হয় তাহলে ছেলে সন্তান হয়। আর যদি স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের আগে স্খলিত হয় তাহলে মেয়ে সন্তান হয়। (বুখারী : ৩৩২৯)
গ্রহ
ও নক্ষত্রের পরিক্রমন:
وَآيَةٌ لَهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُمْ
مُظْلِمُونَ وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ
الْعَلِيمِ وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ
الْقَدِيمِ لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا
اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহ্র নিয়ন্ত্রণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন :৩৬/৩৭-৩৯)
পানিচক্র:
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ إِلَى طَعَامِهِ أَنَّا صَبَبْنَا
الْمَاءَ صَبًّا ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا فَأَنْبَتْنَا فِيهَا حَبًّا
وَعِنَبًا وَقَضْبًا وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا وَحَدَائِقَ غُلْبًا وَفَاكِهَةً
وَأَبًّا مَتَاعًا لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক, আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি, এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি, অত:পর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, অত:পর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাক-সব্জি, যয়তুন, খর্জূর, ঘন উদ্যান, ফল এবং ঘাস তোমাদেরও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তূদের উপাকারার্থে। (সূরা আবাসা:৮০/২৪-৩২)
উপসংহার:
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জোর গলায় বলতে পারি
আল কুরআন মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ, মহাবিশ্বের পরম স্রষ্টা আল্লাহর কালাম। এতে
যে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্ব পরিবেশিত হয়েছে তাতে দৃষ্টি দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর
বিজ্ঞানীগণ হতবাক হয়ে গেছেন। আদা-জল খেয়ে লেগে গেছে কুরআন চর্চায়। মুসলিমগণ কুরআন
চর্চায় মনোযোগী হলে জাতি হিসাবে বিশ্বে আবারো তারা নেতৃত্বদানে সক্ষম হবে।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com