হযরত
উসমান (রা:)ব্যাংক একাউন্ট এখনো সক্রিয়
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ইসলামের তৃতীয় খলিফা ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর
মেয়ের জামাতা উসমান ইবনে আফফান (রা.) ছিলেন ধনী ও দানশীল ব্যক্তি। জীবদ্দশায় তিনি
মানবকল্যাণে বহু সম্পদ দান ও ওয়াকফ করেন। তার সেসব দান ও ওয়াকফকৃত সম্পদ দ্বারা
এখনো উপকৃত হচ্ছে।
#ঐতিহাসিক
রুমা কূপ:
মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে খাবার
পানির সংকটে পড়ে। মদিনায় এক ইহুদির একটি কূপ ছিল। সে মুসলিমদের কাছে চড়া মূল্যে
পানি বিক্রি করত। কূপটির নাম ছিল রুমা। মহানবী (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে ঘোষণা
দিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে এই কূপটি কিনে
মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করে দেবে? এটা যে করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে একটি ঝরনা
দান করবেন। ঘোষণা শুনে উসমান (রা.) ইহুদির কাছে কূপ বিক্রয়ের প্রস্তাব দিলেন।
কিন্তু ইহুদি বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানাল।
অতঃপর উসমান (রা.) অর্ধেক কূপ বিক্রির প্রস্তাব করলেন; এভাবে যে কূপ
থেকে একদিন ইহুদি পানি নেবে অন্যদিন তিনি। ইহুদি এতে সম্মত হলো। উসমান (রা.) কূপ
কেনার পর বিনা মূল্যে পানি বিতরণ শুরু করেন, এতে ইহুদির পানির ব্যবসা বন্ধ হলো এবং তিনি
পুরো কূপ বিক্রি করে দিলেন। ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে উসমান (রা.) পুরো কূপের
মালিকানা লাভ করেন এবং তা থেকে মুসলমানরা বিনা মূল্যেই পানি নিত। পরে সর্বসাধারণের
পানি পানের জন্য ওয়াকফ করে দেন।
#কূপ
থেকে আধুনিক হোটেল:
আশপাশের জায়গাও কূপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিছুকাল পরে সেখানে বেশ কিছু খেজুর গাছ বড় হয়ে উঠল। পরে একসময় এসব গাছ থেকে বিপুল
পরিমাণ খেজুর উৎপন্ন হয়। উসমানি সুলতান ও সৌদি শাসকদের পরিচর্যায় এখন এখানে প্রায়
১৬ শর মতো খেজুর গাছ আছে। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পরে কূপ ও এ বাগান কৃষি
মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবছর বাগান থেকে আহরিত খেজুর
বিক্রি করে যে অর্থ উপার্জিত হয়, তার অর্ধেক এতিম-গরিবদের দান করা হয় এবং
অর্ধেক উসমান (রা.)-এর নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতে থাকে। অ্যাকাউন্টটি
পরিচালনা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এভাবে ব্যাংকে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হয়
যে তা দিয়ে মসজিদ-ই-নববী (সা.)-এর পাশেই আকর্ষণীয় একটি জায়গা কিনে সেখানে একটি
পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করা হয়, যার নেমপ্লেটে লেখা আছে ‘মালিক
সাইয়্যিদুনা উসমান (রা.)। যেহেতু তার ওয়াকফকৃত সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থে এটি
নির্মিত, তাই মালিক হিসেবে তার নামই উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪-১৫ সালে হোটেলটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। হোটেলের আয়ও উসমান (রা.)-এর অন্য
সম্পদের মতো একভাগ এতিম-মিসকিনদের দান করা হয় এবং আরেক ভাগ তার নামে চলিত
অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, সৌদিআরবে এখনও আমিরুল মু'মিনিন ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.) নামে
দলিল করা প্রপার্টি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও।
আরও মজার বিষয় হল-মাস ফুরালে এখনও তার নামেই
আসে বিদ্যুতের বিল।সম্প্রতি শুরু হয়েছে উসমানের (রা.) মালিকানাধীন বিলাসবহুল হোটেল
নির্মাণের কাজ! অবাক করা এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইতিহাসের পথ ধরে আপনাকে একটু
পেছনে নিয়ে যেতে চাই রাসূলের (স.) যুগেঃ
মহানবী (স.)নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৩তম বছর। মুসলমানরা মাত্র
মক্কা ছেড়ে মদিনায় এসেছেন। অচেনা পরিবেশে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
মদিনায় ‘বিরে রুমা’ বা রুমার কূপ নামে ইহুদির একটি কূপ ছিল। আর
মুসলমানদের কঠিন অবস্থায় ইহুদিরা এ সুযোগে কূপের পানি মুসলমানদের কাছে চড়া দামে
বিক্রি করতে শুরু করল।
সাহাবারা রসূল (স.)-কে এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছো, যে এই রূমার কূপ মুসলমানদের জন্য ক্রয় করে
দিবে। মুসলমানদের এই কূপ যে খরিদ করে দেবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন । [সুনান নাসায়ীঃ ৩১৮২]
রসূল (স.) কথা শুনে
উসমান (রা.) ইহুদির কাছে এই কূপ ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। উসমান (রা.) কূপ প্রায়
৩৫ হাজার রৌপ্য মূল্য ক্রয় করে রসূল (স.)-এর নিকট এসে তাকে সংবাদ দিলে তিনি বলেনঃ তুমি
তা মুসলিমদের পানি-পানের স্থান করে দাও। (অর্থাৎ ওয়াকফ করা)
অতঃপর উসমান (রাঃ) বিনামূল্যে পানি বিতরণ
করতে লাগলেন (ওয়াকফ করে দিলেন)। এ সময় এক ধনী লোক উসমান (রা.) থেকে কূপটি দ্বিগুণ
দামে খরিদ করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চাহিদা এর চেয়ে আরও অনেক বেশি। লোকটি
মূল্য বাড়িয়ে বলতে লাগল। উসমান (রা.) জবাবে আমার চাহিদা এর চেয়ে আরো বেশি বলতে
লাগলেন।
শেষে ধনী লোকটি বলল, এমন কেউ আছে যে আপনাকে কূপটির মূল্য ১০ গুণ
বলেছে? উসমান (রা.)
জবাবে বলেন, আমার আল্লাহ
আমাকে প্রতি নেকিতে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন।
উসমানের (রা.) শাসনামলে এই কূপের চারপাশে
খেজুর বাগান তৈরি হয়। সময়ের চাকা ঘুরে বহু বহু উত্থান- পতনের পর সৌদি রাজপরিবার
সৌদি আরবের রাজ সিংহাসনে বসার সময় এই বাগানে খেজুর গাছের সংখ্যা ১৫৫০ টিতে পৌঁছায়।
সরকার বাগানের চারদিকে দেয়াল তৈরি করে দেয়।
এই ভূসম্পত্তি উসমানের (রা.) নামে দলিল করে দেয় এবং তার নামে খুলে একটি ব্যাংক
অ্যাকাউন্ট। সৌদির কৃষি মন্ত্রণালয় এই বাগানের খেজুর বিক্রি করে অর্জিত অর্থ
উসমানের (রা.) অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে মদিনায় একটি বড় প্রপার্টি
ক্রয় করা হয়েছে।
যেখানে ‘হোটেল উসমান বিন আফফান’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে।
এই হোটেল থেকে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় হবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার।
এই অর্থের অর্ধেক অসহায়-দুস্থদের মানবতার
সেবায় ব্যয় করা হবে আর অর্ধেক উসমানের (রা.) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। উসমানের
(রা.)এ দান আল্লাহ এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন যে, কেয়ামত পর্যন্ত তা চালু থাকবে। উসমানের (রা.) আখেরাতের অ্যাকাউন্টেতো সওয়াব
জমা হচ্ছেই দুনিয়ার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সও ফুরাবার নয়।-সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com