আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী
ও বৈশিষ্ট্য
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
আদর্শ শিক্ষকের পরিচয় :
শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত মানুষকে আমরা শিক্ষক বলে জানি।
আনুষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক
ইত্যাদি নানানভাবে শিক্ষাদানের কাজ চলছে। তবে মক্তব, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষাদানে জড়িত তাদেরই সাধারণত শিক্ষক বলা হয়।
আদর্শ শব্দের অর্থ অনুকরণযোগ্য, শ্রেষ্ঠ, নমুনা, দৃষ্টান্ত, আয়না, দর্পণ
ইত্যাদি। আদর্শ পুরুষ, যে মহৎ পুরুষের অনুকরণে
চরিত্র উন্নত করা যায়। আদর্শ বিদ্যালয়,
যে
বিদ্যালয়ে চরিত্র গঠন ও জীবনমান উনণয়নের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে উন্নত ধরনের শিক্ষা
দেওয়া হয়।[1]
অভিধানে আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ বিদ্যালয়ের যে পরিচয় দেওয়া
হয়েছে তার আলোকে বলব যে, আদর্শ শিক্ষক তিনি, যার
অনুকরণের মাধ্যমে চরিত্র গঠন ও উন্নত করা যায় এবং জীবনের মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন
বিষয়ে উন্নত ধরনের শিক্ষা লাভ করা যায়। আদর্শ শিক্ষকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে
শ্রেণীকক্ষে পাঠদান এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরের জীবন। শ্রেণীকক্ষে তিনি থাকেন তার
শিক্ষার্থীদের সাথে, আর শ্রেণীকক্ষের বাইরে
কাটে তার ছাত্র-শিক্ষকসহ বৃহত্তর মানব সমাজের সাথে। তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী
সর্বত্রই প্রস্ফুটিত হওয়া স্বাভাবিক।
সবার আদর্শ যিনি :
এই ধরণীতে সবার আদর্শ শিক্ষক হ’লেন
আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)। তাঁর রিসালাতের অনেক দায়িত্বের একটি
অংশ ছিল শিক্ষাদান। আল্লাহ বলেছেন,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّيْنَ رَسُولًا مِنْهُمْ
يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ
وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِيْنٍ،
‘তিনিই সেই সত্তা,
যিনি
নিরক্ষরদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর
আয়াত সমূহ পাঠ করেন ও তাদেরকে পবিত্র করেন। আর তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষা দেন’ (জুমু‘আহ ৬২/০২)।
রাসূল
(ছাঃ) বলেছেন, وَإِنَّمَا بُعِثْتُ
مُعَلِّمًا ‘আমি শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত
হয়েছি’।[2] মু‘আবিয়া
বিন হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে বলেন,مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أَحْسَنَ
تَعْلِيمًا مِنْهُ فَوَاللهِ مَا كَهَرَنِى وَلاَ ضَرَبَنِى وَلاَ شَتَمَنِى ‘আমি তাঁর পূর্বে ও পরে তাঁর চেয়ে সুন্দর
শিক্ষাদানকারী শিক্ষক আর দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে বকাবকি করেননি, মারেননি
এবং গালমন্দও করেননি’।[3]
মক্কায়
আরকাম (রাঃ)-এর গৃহ ছিল তাঁর শিক্ষাদান কেন্দ্র। এছাড়া কা‘বা
চতবর, বিভিন্ন জনসমাবেশ ও মেলায় গিয়ে তিনি শিক্ষাদানের কাজ করতেন।
মদীনায় হিজরতের পর মসজিদে নববীতে প্রতিনিয়ত শিক্ষাদানের কাজ চলত। তাঁর বহু
ছাহাবীকেও তিনি শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন। পুরুষ, নারী, বয়স্ক, শিশু, মুসলিম, অমুসলিম
নির্বিশেষে সবাই তাঁর কাছে শিক্ষালাভ করতেন। তাঁর শিক্ষার বিষয় ছিল দ্বীন ইসলাম।
মানুষ কিভাবে শিরক, কুফর, নিফাক, বিদ‘আত
ও জাহিলিয়্যাত থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহর নির্দেশিত পথে একমাত্র তাঁর ইবাদত করতে
পারে এবং দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি অর্জন করতে পারে তিনি সেই শিক্ষা
দিতেন। মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক
জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন যাতে আল্লাহর দেওয়া পথে কাটানো সম্ভব হয় তিনি সে সম্পর্কে
শিক্ষা দিতেন। চরিত্রের ভাল ও মন্দ গুণাগুণ সম্পর্কে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন
এবং ভাল গুণগুলো আয়ত্ব করা ও মন্দগুণ থেকে বেঁচে থাকার উপায় শিখিয়েছেন। চরিত্রকে
তিনি মানুষের সবচেয়ে দামী জিনিস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান, কুপ্রবৃত্তি
ও কাফির নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে তিনি সবাইকে সাবধান করে গেছেন। কুরআন ছিল তাঁর
শিক্ষাদানের মাধ্যম। কুরআনকে কেন্দ্র করে তাঁর শিক্ষা আবর্তিত হ’ত।
তাঁর সে শিক্ষার সমষ্টি এখন আমরা হাদীছ রূপে পাই। যার বাস্তব অনুশীলন এখনও
মুসলিমদের মধ্যে অনেকাংশে বিদ্যমান। যদিও আমরা বর্তমানে আমাদের জীবনের অনেক
ক্ষেত্র থেকে তাঁর শিক্ষা নির্বাসন দিয়ে বিধর্মীদের শিক্ষা ও কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ
করেছি। ফলে বনী ইসরাঈলরা যেমন আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে কাফের বাদশাহ বখতে নছরের
হাতে পরাজিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিল (বানী ইসরাইল ১৭/৪-৭) আমাদেরও আজ সেই দশা হয়েছে। বস্ত্তত হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)
জীবনের মানোন্নয়নের সাথে চরিত্র গঠনের উপর বেশী জোর দিয়েছেন। তাই একজন আদর্শ
শিক্ষক তাঁর শিক্ষাদানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁকে আদর্শ মানলে ইনশাআল্লাহ উত্তম
মানের শিক্ষক হ’তে পারবেন।
আদর্শ শিক্ষকের চরিত্র :
তাই আদর্শ শিক্ষক সচ্চরিত্রের গুণাবলী অর্জন
ও চর্চায় কোন আপোষ করেন না। ঈমান, আমলে ছালেহ সম্পাদন, তাক্বওয়া, সত্যবাদিতা, সততা, আমানতদারী, ওয়াদা
পালন, শালীনতা, শিষ্টাচারিতা, ন্যায়পরায়ণতা, আত্মীয়তা, মেহমানদারী, মানবসেবা, সৎকাজের
আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, কর্তব্যপরায়ণতা, মিতব্যয়িতা, পরোপকারিতা, আত্মার
পবিত্রতা, পরিচ্ছন্ন বেশভূষা ইত্যাদি
সৎগুণ তার চরিত্রের ভূষণ। হালাল ভক্ষণ,
ছোটদের
স্নেহ, বড়দের কদর ও আলেমদের সম্মান ও হক প্রদানে তিনি আগুয়ান।
পক্ষান্তরে শিরক, কুফর, নিফাক, বিদ‘আত, জাহিলিয়্যাত
থেকে তিনি দূরে থাকেন। মিথ্যা বলা,
প্রতারণা, যুলুম, অহংকার, হিংসা, কৃপণতা, অপব্যয়, ধূমপান, মাদকাসক্তি, ব্যভিচার, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নকলে
সহযোগিতা, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, সূদ-ঘুষ, হারামখোরি, যৌতুক, নির্যাতন, অলসতা, উদাসীনতা, কর্তব্যে
অবহেলা, পার্থিব স্বার্থে দ্বীন বিক্রয় করা ইত্যাদি মন্দ
স্বভাব-চরিত্র থেকে তিনি বেঁচে থাকেন। তার জানা আছে ক্বিয়ামতে চরিত্রই হবে মীযানে
সবচেয়ে ভারী।[4] তিনি এও জানেন যে, চরিত্র
সবচেয়ে সুন্দর যার, ঈমান সবচেয়ে পূর্ণ তার।[5] দুশ্চরিত্র
লম্পট জান্নাতে যাবে না।[6]
কাজেই একজন আদর্শ শিক্ষক নিজে যেমন চরিত্র সুন্দর রাখতে চেষ্টা করেন তেমনি তার শিক্ষার্থীদেরসহ অন্যদের চরিত্রও সুন্দর করতে চেষ্টা করেন। তিনি এ কথাও জানেন যে, যে আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য কাউকে কিছু দেয় এবং আল্লাহর জন্য দেয়া থেকে বিরত থাকে সে ঈমান পূর্ণ করে। কাজেই একজন আদর্শ শিক্ষক তার কথায় কাজে আল্লাহর উপর নির্ভর করেন। যারা আল্লাহর পথের পথিক ও সৈনিক আল্লাহর জন্য তিনি তাদের ভালোবাসেন। আর যারা আল্লাহর পথের বিরুদ্ধাচারী তাদের জন্য তার মনে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষেই তীব্র ক্ষোভ জন্মে। তবে দোষ-গুণের সমন্বয়ে মানুষ। মানুষ হিসাবে একজন শিক্ষক শয়তানের ফেরেবে, নফসের তাড়নায় কিংবা দুষ্টমতিদের পাল্লায় মন্দ কিছু করে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে এলে তাকে মন্দ ভাবা ঠিক হবে না।
আদর্শ শিক্ষকের ব্যবহার :
অন্য মানুষের সঙ্গে যে আচার-আচরণ করা হয় তাই ব্যবহার।
সদ্ব্যবহার সচ্চরিত্রের অংশ। হাদীছে এসেছে,
الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ অর্থাৎ ‘সুন্দর
ব্যবহারই সচ্চরিত্র’।[7]
একজন
ভাল শিক্ষক নিজের শিক্ষার্থীসহ অন্য কাউকে কষ্ট দেন না। শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝিয়ে
দিতে রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করেন না।
উচ্চ মেধার শিক্ষার্থী,
স্বল্প
মেধার শিক্ষার্থী, ধনীর দুলাল, গরীবের
সন্তান, ক্ষমতাধর ও ক্ষমতাশূন্য সকলকে তিনি এক মনে করে শিক্ষা দেন।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান
জৈন, পার্সীতে কোন ভেদাভেদ করেন না। শিক্ষার্থীরা তার সম্বন্ধে
ভাবে, আমার শিক্ষক আমাকেই বেশী ভালোবাসেন।
শিক্ষার্থীদের কেউ অসুস্থ হ’লে
তিনি তাকে দেখতে যান। তাদের কারও আর্থিক সমস্যা থাকলে তা দূর করতে চেষ্টা করেন।
বিদ্যা শিক্ষা সংক্রান্ত তাদের কোন কৌতূহল বা জিজ্ঞাসা থাকলে তা যথাসাধ্য মিটাতে
চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের দৈহিক,
মানসিক, সামাজিক, আত্মিক
ও ধর্মীয় বিকাশে নিজের মেধা ও যোগ্যতা যথাসাধ্য ব্যয় করেন। কেউ সাক্ষাৎ করতে এলে
হাসিমুখে তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বলেন। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বিলম্ব হেতু
বিচলিত হন না, বরং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা
করেন। কারও প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হ’লে বিনয়ের সঙ্গে নিজের
অপারগতা প্রকাশ করেন। কারও বেয়াদবীর জন্য গালমন্দ করেন না। রূঢ় আচরণ ও কর্কশ ভাষায়
কথা বলা থেকে দূরে থাকেন।
কেউ তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করলে তিনি তার সঙ্গে কোমল আচরণ করেন
এবং ধৈর্য ধরেন। স্ত্রী, মাতা-পিতা, সন্তানাদি, প্রতিবেশী, ও
চেনা-অচেনা সকলের সাথে তিনি ভাল ব্যবহার করেন। কথা বললে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলেন।
বাজে তামাশা কিংবা কারও মনে আঘাত লাগে এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। এমন কথা বলেন
না যাতে ব্যক্তিত্ব খর্ব হয় এবং মূর্খতা প্রকাশ পায়। তিনি খুব গুরুগম্ভীর নন, বরং
সহজ-সরল। যে কেউ সহজেই তার সঙ্গে মিশতে পারে। নিজের কাজ নিজেই করেন, পারতপক্ষে
অন্যের উপর নির্ভর করেন না। অসহায়,
ইয়াতীম, বিধবা, রোগী
ও অভাবী মানুষের প্রতি সর্বদা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন
ও প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কৃপণতা করেন না। আল্লাহর বান্দা হিসাবে সকলে
ভাই ভাই হিসাবে মিলেমিশে বসবাস করেন।
আদর্শ শিক্ষকের সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা
বলেন, فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا
تَعْلَمُونَ ‘তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস
কর, যদি তোমরা না জানো’ (আম্বিয়া ২১/৭)। তোমাদের জানা না থাকলে জ্ঞানীদের নিকটে তোমরা
জিজ্ঞেস করবে। সুতরাং একজন আদর্শ শিক্ষককে সর্ববিদ্যাবিশারদ কিংবা তার বিষয়ে তাকে
খুব জানাশোনা হ’তে হবে এমন নয়। তবে তাকে জ্ঞানচর্চা অব্যাহত
রাখতে হয়। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যে শিক্ষক জ্ঞানের বিষয় যত
চর্চা করেন, পড়ার পরিধি যত বাড়িয়ে দেন
তার জ্ঞান তত তরতাজা থাকে এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। ফলে একজন দুর্বল শিক্ষকও
এভাবে তার দুর্বলতা কাটিয়ে ভাল শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন।
আবার যে শিক্ষক অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন চর্চার অভাবে তার
বিদ্যা লোপ পেতে থাকে। শিক্ষক যে যে শ্রেণীতে যে যে বিষয় পাঠদান করেন সেই সেই
বিষয়ে তার এতখানি পড়া জানা থাকতে হয় যে,
তার
পাঠদানে শ্রেণীর সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবৃত হয়। আর যারা
মধ্য ও স্বল্প মেধার তারাও পাঠ ভালোভাবে বুঝতে ও আয়ত্ত করতে পারে। তাদের সকলের
মধ্যে জানার কৌতূহল তৈরি হয়। জ্ঞাতব্য বিষয় তারা ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারে এবং যা
প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক তা তারা তার মাধ্যমে হাতে কলমে বা কার্যকরভাবে শিখতে পারে।
কোন জিজ্ঞাসার তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে না পারলে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্ষোভ
প্রকাশ করেন না, কিংবা নিজের অক্ষমতা ঢাকার
ব্যর্থ চেষ্টা চালান না। বরং যারা আরও বেশী জানেন তাদের থেকে জেনে উত্তর দেওয়ার
চেষ্টা করেন। নিজের বিষয় জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য তিনি নতুন ও পুরাতন লেখকদের বই অধ্যয়ন
করেন।
আধুনিক কালে ইন্টারনেট ও ইউটিউবে প্রচুর বই-পুস্তক ও লেকচার
পাওয়া যায়। একজন উত্তম শিক্ষক এগুলো ব্যবহারের কলাকৌশল জেনে তার মাধ্যমে নিজের
প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ করেন। অনেক ভাল শিক্ষকের পাঠদান পদ্ধতিও অনুসরণ করেন। শিক্ষক
শিক্ষালয়ের পাঠাগার তো ব্যবহার করেনই,
উপরন্তু
তার নিজেরও একটা সমৃদ্ধ লাইব্রেরী থাকে। শিক্ষাদান পদ্ধতির মানোন্নয়নে তার পক্ষে
যেসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ সম্ভব তা তিনি আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেন। আরবী, উর্দূ, ইংরেজী
ইত্যাদি ভাষায় পাঠ্য বইয়ের শিক্ষকদের স্ব স্ব ভাষার ব্যাকরণ জানা থাকা আবশ্যক।
পাঠদান ও পাঠগ্রহণও উক্ত ভাষাতে হওয়া দরকার,
যাতে
শিক্ষার্থীরা শোনা, বলা, পড়া
ও লেখার মাধ্যমে উক্ত ভাষাগুলো সহজেই আয়ত্ত করতে পারে।
শিক্ষার কারিকুলাম,
সিলেবাস, পরীক্ষা
পদ্ধতি, নম্বর বণ্টন ইত্যাদি সম্পর্কে তার সম্যক জ্ঞান থাকে।
শিক্ষার্থীদের তিনি তা অবহিত করেন এবং তার আলোকে পাঠদান করেন। তার পাঠদান ফলপ্রসূ হচ্ছে
কি-না তা তিনি চূড়ান্ত মূল্যায়নের আগে অনেকবার গাঠনিকভাবে মূল্যায়ন করেন। তার
পাঠদানকালে শিক্ষার্থীরা নিষ্ক্রিয় থাকে না, বরং
তিনি তাদের সক্রিয় করে তোলেন। অন্যান্য সহকর্মীদের সাথেও তিনি পাঠ্য বিষয় আলোচনা
করেন। তিনি সময়ের খুব দাম দেন। সময়ের কাজ সময়ে করা তার অভ্যাস। তিনি অলস সময় নষ্ট
করেন না। প্রকাশ ক্ষমতাও শিক্ষকের অন্যতম গুণ। অনেক শিক্ষক ভাল জানেন বটে, কিন্তু
উপস্থাপনার দোষে শিক্ষার্থীরা তার পাঠদানে অতৃপ্তি বোধ করে। আসলে শিক্ষকের
সার্থকতা শিক্ষাদানে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের পাঠ
আয়ত্ত করতে সক্ষম করার মধ্যে।
আদর্শ শিক্ষকের ভাষা :
আদর্শ শিক্ষক প্রমিত বা আদর্শ উচ্চারণে কথা বলেন। ঘরোয়া
পরিবেশে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললেও জনসমক্ষে তিনি শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করেন। বিশেষত
পাঠদান কালে তিনি শুদ্ধ ভাষার বাইরে যান না। মার্জিত ও শুদ্ধ উচ্চারণ ব্যক্তিত্ব
ফুটিয়ে তোলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় কথা বললে যথাসম্ভব
শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করেন।
শিক্ষার্থীর চরিত্র ও মানস গঠনে শিক্ষক :
শিক্ষার্থীরা মাতা-পিতা ও পরিবারের আদর্শ যতখানি না অনুসরণ
করে তার থেকেও বেশী অনুসরণ করে শিক্ষককে। অবচেতন মনেই তাদের মাঝে এ মানসিকতা গড়ে
ওঠে। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন শিক্ষক কোন কিছু না বললেও শিক্ষার্থীদের মাঝে তার
চারিত্রিক ও ব্যবহারিক প্রভাব সঞ্চারিত হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের
চারিত্রিক গুণাবলী ও আচার-আচরণ লক্ষ্য রাখলে এবং প্রয়োজনীয় হেদায়াত দিলে
শিক্ষার্থীদের চরিত্র ও মনমানসিকতা আরও সুন্দরভাবে গড়ে ওঠা স্বাভাবিক। তিনি তাদের
দ্বীনী আক্বীদা সংশোধন, ইবাদত-বন্দেগীতে আগ্রহ ও
মানুষের সাথে মেলামেশায় পারদর্শী করে তোলেন। যারাই আত্মজীবনী লিখেছেন তারাই কমবেশী
এমন প্রভাবক শিক্ষকের কথা তুলে ধরেছেন। বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েক তার শিক্ষক উস্তাদ
আহমাদ দিদাতের নাম তার অনেক লেকচারে বলে থাকেন। একজন আহমাদ দিদাত না থাকলে হয়তো
একজন ডাঃ জাকির নায়েকের দেখা মিলত না। তাই ইসলামী তরীকায় রাসূলের আদর্শে জীবনধারা
গড়তে শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা এখানে বিশেষভাবে কাম্য।
আজকের সমাজে অতিরিক্ত যৌনলিপ্সা চরিতার্থ করার সুযোগে
ব্যভিচার, ধর্ষণ বেড়ে চলছে।
লোভ-লালসা ও দীর্ঘ আশায় লাগাম দেওয়ার মত নীতি-নৈতিকতার চর্চা না থাকায় সূদ, ঘুষ, জুয়া, সরকারি
সম্পদ আত্মসাৎ, কালোবাজারি, মজুদদারী, বিদেশে
অর্থপাচার বেড়ে যাচ্ছে। একশ্রেণীর মানুষ চাইছে যে কোন কৌশলে রাতারাতি ধনী হ’তে।
অসহিষ্ণুতা, ক্ষমাহীনতা, যে
কোন উপায়ে শত্রুকে পদানত করা, পরাজিত শত্রুর দুর্দশায়
খুশীতে আত্মহারা হওয়া, বিরোধী পক্ষকে হয়রানি করা, নিজেদের
মধ্যে দলাদলি করা, শাসক দলের পদলেহন করা, তাদের
স্তাবকতা করে নিজের আখের গোছানো, তাদের বেআইনি ও দ্বীন
বিরোধী কাজের জন্য তাদের কোনভাবে কিছু না বলা ইত্যাদি নেতিবাচক দিকগুলোর চর্চা
সমাজে ঐক্যের বদলে অনৈক্য ডেকে আনছে। একজন আদর্শ শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের এসব
নেতিবাচক আচরণ পরিহার করে সমাজ ও জনগণের কল্যাণে ইতিবাচক চিন্তা গ্রহণে ভূমিকা
রাখেন।
শ্রেণীকক্ষে আদর্শ পাঠদান :
যারা শিক্ষাগ্রহণ করে তারা শিক্ষার্থী বা ছাত্র। শিক্ষা
একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষা চলমান। যে কোন নতুন ও
পরিবর্তিত পরিস্থিতে খাপ খাওয়ানোর কাজে শিক্ষা সাহায্য করে। আর মানুষকে প্রতিনিয়তই
নতুন নতুন পরিস্থিতির মুকাবেলা করতে হয়। কাজেই শিক্ষা তার প্রতিদিনই দরকার। একজন
শ্রেণীশিক্ষক তার ছাত্রকে সেই নতুন পরিস্থিতি মুকাবেলার যোগ্য করে গড়ে তোলেন।
শিক্ষক পড়ানোর জন্য একটা ডায়েরী রাখেন। তাতে তিনি শিক্ষার্থীদের শ্রেণীভিত্তিক যে
পড়া দেন তা লেখা থাকে। পরবর্তী ক্লাসের পাঠদানে তিনি ডায়েরীর সহায়তা নেন। বইয়ের
কতদূর তিনি পড়িয়েছেন তা তার জানা থাকে। ফলে তিনি সময় মতো পাঠদান ও পাঠ্য বই শেষ
করতে পারেন। ডায়েরীতে তিনি পাঠপরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের কথা লিখে
রাখেন। পাঠদানে তিনি কম্পিউটার ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে তৎপর থাকেন।
প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠোন্নতি হচ্ছে কি-না তা যাচাই করেন
এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
তাদের বাড়ির কাজ দেওয়া ও পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি
আগামী দিন যা পড়াবেন আগের দিন নিজে তার প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি নেন, নোট
নেন, প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগাড় করেন এবং শিক্ষার্থীদেরও আগের দিন তা
বাড়ি থেকে ভালোভাবে পড়ে আসতে বলেন। এর ফলে শিক্ষার্থী কোন জায়গায় পড়া বুঝতে পারছে
না তা চিহ্নিত করতে পারে এবং শিক্ষকের পড়ানোর সময় মনোযোগ দিয়ে তা বুঝে নিতে পারে।
তিনি একার মত একা বক্তৃতা দিচ্ছেন আর শিক্ষার্থীরা যার যার মত কথা বলছে কিংবা
ভিন্ন কিছু ভাবছে এমনটা তার ক্লাসে হয় না। বরং তার পাঠদানে এমন কারিশ্মেটিক ভাব
থাকে যা শিক্ষার্থীদের তার সঙ্গে পাঠে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। পাঠদান শেষে তিনি
শিক্ষার্থীদের গ্রুপ স্টাডি, তাকরার বা পুনরালোচনা করতে
বলেন এবং তা মনিটরিং করেন। এর ফলে সবল-দুর্বল সকল শিক্ষার্থীই তার পাঠে উপকৃত হয়।
তিনি শিক্ষার্থীদের শ্রেণীপরীক্ষা ও বাড়ির কাজের মূল্যায়নে নম্বর প্রদান করেন। এর
ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের মান বুঝতে পারে এবং উত্তরোত্তর উন্নতির চেষ্টা করে।
শ্রেণীপাঠদান কালে ভাল,
খুব
ভাল, চেষ্টা চালিয়ে যাও,
ভাল
ফল করবে ইত্যাদি বলে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। মোটকথা, তিনি
ইখলাছ বা সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পঠন-পাঠনের কাজ করেন এবং নিজের কর্তব্যে ফাঁকি
দেন না। শিক্ষা একটি জটিল প্রক্রিয়াও বটে। অনেকে তাই বলেন যে, শিক্ষাকে
সংজ্ঞায়িত করা যায় না। শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। শিক্ষার্থী নিজের চেষ্টায় শিক্ষা
অর্জন করে। শিক্ষক এক্ষেত্রে একজন সহযোগিতাকারী মাত্র।
একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীকে দ্বীনের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ
করতে পারেন, তার মন ও আত্মাকে সক্রিয়
করতে পারেন, তার মধ্যে জ্ঞানের পিপাসা
জাগিয়ে তুলতে পারেন, জানার প্রতি তাকে আগ্রহী ও
কৌতূহলী করতে পারেন, জ্ঞান আহরণে কোথায় কী করতে
হবে, কার কাছে যেতে হবে,
কী
কী ধরনের বই পড়তে হবে, কোন কোন উৎস থেকে যথার্থ
জ্ঞান লাভ করা যাবে তার সন্ধান দিতে পারেন,
কোন
জ্ঞান উপকারী এবং কোন জ্ঞান অপকারী তা বলতে পারেন, তার
মেধা, মনন ও পারঙ্গমতা যাচাই করে তার জন্য উপযোগী বিদ্যা নির্দেশ
করতে পারেন, অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগের
বাস্তব ও ব্যবহারিক কলাকৌশল দেখাতে পারেন। তার ভিতরে যে কর্মশক্তি ও কর্মস্পৃহা
লুকিয়ে আছে পরিচর্যা করে তা ফুটিয়ে তুলতে পারেন। একজন দক্ষ পেশাজীবী হওয়ার পথও
তিনি দেখাতে পারেন। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের এসব নির্দেশনা মেনে নিজের
অভিরুচিমত বিদ্যা নিজে অর্জন করে। সে নিজেকে ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হিসাবে গড়ে
তুলতে পারে এবং নিজের কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোতে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারে। তবে একথা
অনস্বীকার্য যে, একজন আদর্শ শিক্ষক তার
শিক্ষার্থীদের যতখানি অর্থ উপার্জনের উপযোগী করে গড়ে তোলেন তার থেকেও বেশী তাকে
দ্বীন-ধর্ম পালন, মানব কল্যাণ, দেশপ্রেম
ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন।
আমাদের পাঠে সমস্যা :
শ্রেণীকক্ষে কিংবা বাইরে পঠন-পাঠনে আমাদের কিছু মৌলিক
সমস্যা রয়েছে। ভাষা শিক্ষা, কুরআন, হাদীছ
ও ফিক্বাহর বিধান হাতে কলমে তথা ব্যবহারিকভাবে করে দেখানো, বিজ্ঞানের
পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কম্পিউটারের ব্যবহার
ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা ও উদাসীনতা চোখে পড়ার মত। আরবী
ইংরেজী ভাষার পারদর্শিতা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।
শিক্ষাকর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষাকে জেনারেল শিক্ষার সমান
করার মানসে আরবী ভাষাকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে। যদিও প্রতি ক্লাসে আরবী বই আছে
কিন্তু আরবী বলা, পড়া, লেখা
ও বুঝার মত শিক্ষার্থী খুব কমই তৈরি হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কুরআন, হাদীছ
ও ফিক্বাহ-এর বই-পুস্তক সরাসরি আরবী থেকে পড়া ও পড়ানোর যোগ্যতা তৈরি হচ্ছে না।
কুরআন, হাদীছ ও ফিক্বাহ-এর যে ব্যবহারিক শিক্ষা আছে এবং
শিক্ষার্থীদের তা শেখানো প্রয়োজন আমরা মনে হয় তা ভুলেই গেছি।
আমরা আরবী পাঠ বা লেখা পড়ে তার তর্জমা করেই খালাস। কেউ একটু
বুঝিয়েও দেন। কিন্তু তাতে যে শিক্ষার্থীরা সঠিক আমলের দিশা পায় না তা আমাদের
সামাজিক আমল লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, وَصَلُّوْا كَمَا
رَأَيْتُمُونِى أُصَلِّى، ‘আমাকে যেভাবে তোমরা ছালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে
তোমরা ছালাত আদায় করো’।[8]
কিন্তু
ক’টি মাদ্রাসায় শিক্ষকগণ ছাত্রদের রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত
শিক্ষা দেন? তারা এর ওর দেখাদেখি ছালাত
শেখে। ফলে মসজিদে দেখা যায় কি সাধারণ লোক,
কি
মাদ্রাসা শিক্ষিত, কি ইমাম, কি
মুওয়াযযিন প্রায় সকলেই খুশূ‘-খুযূর ধার ধারছেন না, ইতমিনান
বা ধীর-স্থিরতার সাথে সময় নিয়ে রুকূ‘
করা, রুকূ‘ থেকে
উঠে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকা, দু’টি
সিজদা ধীর-স্থিরভাবে আদায় করা এবং দুই সিজদার মাঝে স্থিরভাবে বসার গুরুত্ব আমরা
দেখি না। তাড়াহুড়া করে কত দ্রুত ছালাত শেষ করা যায়, তাই
আমাদের লক্ষ্য। ইমামের আগে তো নয়ই এমনকি সাথে সাথেও রুকূ‘-সিজদায়
যাওয়া এবং মাথা উঠানো উচিত নয়। হাদীছে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ইমাম
তোমাদের আগে রুকূ‘ করবে এবং তোমাদের আগে মাথা
তুলবে।[9]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ
لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوْا وَلاَ تُكَبِّرُوْا حَتَّى
يُكَبِّرَ وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوْا وَلاَ تَرْكَعُوْا حَتَّى يَرْكَعَ وَإِذَا
قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُوْلُوْا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ
الْحَمْدُ. قَالَ مُسْلِمٌ وَلَكَ الْحَمْدُ. وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا وَلاَ
تَسْجُدُوْا حَتَّى يَسْجُدَ وَإِذَا صَلَّى قَائِمًا فَصَلُّوْا قِيَامًا وَإِذَا
صَلَّى قَاعِدًا فَصَلُّوْا قُعُوْدًا أَجْمَعُوْنَ. ‘ইমাম কেবল এজন্যই যে,
তার
অনুসরণ করতে হয়। সুতরাং সে যখন তাকবীর বলবে তোমরাও তখন তাকবীর বলবে। তার তাকবীর না
বলা পর্যন্ত তোমরা তাকবীর বলবে না। আর সে যখন রুকূ‘ করবে
তোমরাও তখন রুকূ‘ করবে। তার রুকূ‘ না
করা পর্যন্ত তোমরা রুকূ‘ করবে না। ইমাম ‘সামিআল্লাহু
লিমান হামিদাহ’ বললে তোমরা বলবে, ‘আল্লাহুম্মা রববানা লাকাল হামদ’।
মুসলিমের
বর্ণনায় রয়েছে, ‘ওয়া লাকাল হামদ’।
আর
ইমাম যখন সিজদা করবে তোমরাও তখন সিজদা করবে। তার সিজদা না করা পর্যন্ত তোমরা সিজদা
করবে না’।[10]
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি
বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّىْ إِمَامُكُمْ فَلاَ تَسْبِقُوْنِىْ
بِالرُّكُوْعِ وَلاَ بِالسُّجُوْدِ وَلاَ بِالْقِيَامِ وَلاَ بِالاِنْصِرَافِ، ‘হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের ইমাম।
সুতরাং তোমরা আমার আগে চলে যেও না,
না
রুকূ‘তে, না সিজদায়, না
ওঠায়, না বসায়, না সালাম ফিরানোতে’।[11]
বারা বিন আযিব (রাঃ) বলেন,كُنَّا نُصَلِّى خَلْفَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا
قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ. لَمْ يَحْنِ أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ حَتَّى
يَضَعَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم جَبْهَتَهُ عَلَى الأَرْضِ. ‘আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাতে
দাঁড়াতাম। তিনি যখন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সিজদার জন্য ঝুঁকতেন তখন তাঁর কপাল যমীনে
না রাখা পর্যন্ত আমাদের একজনও তার পিঠ নোয়াত না’।[12] দুই সিজদার মাঝের দো‘আ অধিকাংশ ইমাম-মুক্তাদী
পড়েন না। পড়লে যারা পড়েন তাদের পড়তে সমস্যা হ’ত না। সালামও তারা ইমামের সাথেই ফিরান, অথচ
ইমামের সালাম ফিরানোর পর তাদের সালাম ফিরানোর কথা। সূরা, দো‘আ-দরূদ
বলতে গেলে অধিকাংশ মুছল্লীর শুদ্ধ হয় না। মাদ্রাসায় যদি ছালাতের নিয়মিত তা‘লীম-তারবিয়াতের
ব্যবস্থা থাকত আর ইমামগণ মুছল্লীদের তা শিখাতেন তাহ’লে
ছালাতের এহেন দুর্দশা হ’ত না।
জানাযার ছালাতে মাইকিং করে লোক যোগাড় করা হয়। অথচ উক্ত
ছালাতের নিয়ম ও দো‘আ কালাম জানা লোক শতকরা পাঁচজন হবে কি-না
সন্দেহ। মুরদাকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি জানা,
কাফনের
কাপড় কাটতে পারা, আপনজনের জানাযায় ইমামতি
করতে পারার মত লোক পাওয়া এখন খুব দুষ্কর। অথচ পড়ানোর সময় শিক্ষক এগুলো ডামি (dummy) আকারে করে দেখাতে পারেন। এলাকায় কেউ মারা গেলে ছাত্রদের
সেখানে নিয়ে গিয়ে সরেজমিনে দেখাতে পারেন।
আমাদের কবর খননও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক হয় না। যারা কবর খনন
করে তারা সমাজ থেকে শিখেছে, আলেমদের থেকে নয়, ফলে ভুল হয়। লাহাদ বা বুগলী কবর হ’লে
অন্তত ৫/৬ ফুট খোঁড়ার পর পশ্চিম পাশে সাধারণত দেড় হাত উঁচু ও এক হাত চওড়া একটি
গর্ত করতে হয়। এই গর্তের মধ্যে লাশ পুরোটাই ডান কাতে শুইয়ে দিতে হয়। আর শাক্ব বা
সিন্দুক কবর হ’লে অন্তত ৪/৫ ফুট খোঁড়ার পর সিন্দুকের মাঝ
বরাবর দেড়-দুই হাত গর্ত করতে হয় এবং পূব দিক একটু চড়াই বা উঁচু রাখতে হয়।
এক্ষেত্রেও উক্ত গর্তের মধ্যে লাশ পুরোটাই ডান কাতে শুইয়ে দিতে হয়। তারপর লাশের
উপর কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে
দিতে হয়।[13] অতঃপর ৪-৬ ফুট যে পরিমাণ
গর্ত খোঁড়া হোক না কেন, তা পুরোই মাটি দিয়ে ঢেকে
দিতে হয়। কবর সমতল থেকে আধ হাতের বেশী উঁচু হয় না। এটি বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে না
এবং মুরদাখোর জানোয়ার লাশ তুলতে পারে না।
কিন্তু আমাদের কবরগুলোর খনন কালে চারিদিকে সচরাচর আধ হাত
একটা থাক রাখা হয়। তারপর ৫/৬ ফুট গর্ত করে তার মাঝে লাশ চিৎ করে শোয়ানো হয় এবং
মাথা কিক্বলামুখী করার চেষ্টা করা হয়। তারপর উক্ত থাকের উপর বাঁশ-চাটাই দিয়ে তার
উপর পুরো গর্তের মাটি চাপানো হয়। হাদীছে কবর আধ হাতের বেশী উঁচু করতে নিষেধ করা
হয়েছে। কিন্তু আমাদের কবর এক হাতের মতো উঁচু হয়। ভেতরে পুরোটাই ফাঁকা থাকায়
মুরদাখোর জানোয়ারে লাশ সহজেই তুলতে পারে এবং কবর অতি বর্ষণে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে
সম্মানের সাথে লাশ হেফাযতের উদ্দেশ্যই এ ধরনের কবরে ব্যাহত হয়।
মৃত ব্যক্তির পরকালীন মুক্তির জন্য তার ঈমান ও আমলে ছালেহ হ’ল
মূল। জীবিতরাও তার জন্য কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত দো‘আ-ইস্তিগফার, দান-ছাদাক্বা
ইত্যাদি কাজ করতে পারে। কিন্তু মৃতের জন্য মীলাদ, কুলখানি, মউতেখানা
বা শ্রাদ্ধাদি করার কথা মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ের কোন একটির পৃষ্ঠাতেও পাওয়া যাবে না।
তারপরও সমাজে কেউ মারা গেলে তার জন্য মীলাদ,
কুলখানি, মউতেখানা
বা শ্রাদ্ধাদি হবে না তা ভাবাই যায় না। মাদ্রাসা শিক্ষিতরাই সচরাচর এগুলো পরিচালনা
করেন। ইল্লা মাশাআল্লাহ। তাহ’লে আমরা মৃতের জন্য করণীয়
পড়লাম কি, আর সমাজে হচ্ছেটা কি?
বিবাহ ও তালাকও আমাদের মাদ্রাসার পাঠ্য। বিবাহ একটি শারঈ
চুক্তি এবং তালাক তার অবসান। কিন্তু আমরা কুরআন, হাদীছ
ও ফিক্বাহতে বিবাহ সম্পাদন ও তালাক প্রদানের যে নিয়ম লিপিবদ্ধ পাই তদনুসারে কোনটাই
করা হয় না। শারঈ নিয়মে বিবাহের ঈজাব ও কবুলের শব্দ হবে অতীতকাল বাচক। অথবা যে কোন
একটি আদেশবাচক। যেমন কনের অভিভাবক বলবে,
আমি
তোমার নিকটে এত মহরের বিনিময়ে আমার কন্যা/ভাতিজীকে বিবাহ দিলাম। বর বলবে, আমি
কবুল করলাম। ওলীর পক্ষ থেকে অন্য কেউ বিবাহ পড়ালে বলবে, আমি
অমুক নামের মেয়েকে এত মহরের বিনিময়ে তোমার/আপনার সাথে বিবাহ দিলাম। ছেলে বলবে ‘আমি
বিবাহের এ প্রস্তাব কবুল করলাম’। ঈজাব-কবুলের আগে বিবাহের জন্য খুৎবা পড়া
মুস্তাহাব। খুৎবা না পড়লেও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। ঈজাব-কবুলের কথা মেয়ের ওলী মেয়ের
অনুমতিক্রমে অথবা উভয় পক্ষের উকিল মক্কেলের অনুমতিক্রমে বলতে পারে। কিন্তু আমাদের
সমাজে মেয়ের ওখানে একবার ঈজাব-কবুল করা হয়,
আবার
ছেলের মজলিসে গিয়ে আরেকবার ঈজাব-কবুল করা হয়। মেয়ের পিতা কিংবা অন্য ওলী উপস্থিত
থাকার পরও তারা উকিল নিয়োগ করবেই। এসব উকিলের অধিকাংশেরই কিন্তু বিবাহ পড়ানোর
যোগ্যতা ও ভাষাজ্ঞান নেই। বিবাহ পড়ানো মাওলানা ছাহেব আগে আগে বলেন, আর
তিনি তা পিছে পিছে আওড়ান। তাদের সে ঈজাব-কবুলে অতীতকাল কিংবা আদেশবাচক শব্দের হদীছ
পাওয়া দুষ্কর।
তারা সাধারণত প্রথমে মেয়ের কাছে গিয়ে বলে, ‘অমুক গ্রাম নিবাসী অমুকের ছেলে অমুক তোমাকে এত টাকা দেনমহর
এওয়াজে বিবাহ করতে এসেছে, নগদ এত, বাকী
এত, এ শর্তে তুমি বল কবুল’। মেয়ে বলে,
কবুল।
এই একই কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করে এবং সাক্ষীরা তা স্বকর্ণে শোনে। তারপর ছেলের
কাছে গিয়ে বলে, ‘অমুক গ্রাম নিবাসী অমুকের
মেয়ে অমুককে আমি উকিল হয়ে তোমার সাথে এত টাকা দেনমহর ধার্য করে নগদ এত, বাকী
এত, বিবাহ দিচ্ছি তুমি বল কবুল’।
ছেলে
বলে, কবুল। মেয়ের মতই এই একই কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করে এবং
সাক্ষীরা তা স্বকর্ণে শোনে। এরপর ইমাম ছাহেব বিবাহের খুৎবা পড়েন এবং দো‘আ-মুনাজাত
করে বিবাহ পর্ব শেষ করেন। কিন্তু মাদ্রাসায় বিবাহ অধ্যায় পড়ানোর সময় সঠিক নিয়ম
বারবার বললে এবং সমাজে তা চর্চার আদেশ দিলে বিবাহ পড়ানোর ভুল রসম সমাজে থাকত কি?
সমাজে তালাক প্রদানের প্রচলিত রীতি যে কত জঘন্য তা
ভুক্তভোগী মাত্রেই জানে। আমরা মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তালাক পড়াচ্ছি-পড়ছি। আমরা
খুব ভাল করে জানি, এক তুহুর বা পবিত্রতার
মাঝে এক সাথে তিন তালাক দেওয়া হারাম। তালাক দিতে চাইলে বুঝে-শুনে পবিত্রকালে
মেলামেশা না করে এক তালাক দিতে হয়। তারপর স্ত্রী স্বামীর আশ্রয়ে তিন মাসিক পর্যন্ত
ইদ্দত পালন করবে। এসময়ে স্বামী স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখে। ফিরিয়ে নিলে
তালাকের নাম হবে ‘রাজঈ তালাক’।
ইদ্দত
কালে ফিরিয়ে না নিলে তখন এক ‘তালাক বায়েন’ বা
বিবাহ বিচ্ছিন্নকারী এক তালাক হবে।
এখন স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে, আবার
ইচ্ছা করলে প্রথম স্বামীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে। দ্বিতীয়বার বিবাহ করলে এবং
প্রয়োজন হ’লে পুনরায় একই নিয়মে এক তালাক দিতে পারবে এবং
ইদ্দতকালে ফিরিয়ে নিতে পারবে। ফিরিয়ে নিলে দ্বিতীয় রাজঈ তালাক হবে, না
ফিরিয়ে নিলে দ্বিতীয় বায়েন তালাক হবে। এবারও স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্যত্র বিবাহ করতে
পারবে। আবার ইচ্ছা করলে প্রথম স্বামীকে পুনর্বিবাহ করতে পারবে। তৃতীয়বার বিবাহের
পর আবার তালাক দিলে তৃতীয় তালাক হয়ে যাবে,
যা
মুগাল্লাযা বা চূড়ান্ত তালাক নামে আখ্যায়িত। এবার আর স্বামী তাকে ফেরত নিতে পারবে
না। ইদ্দত শেষে তার অন্যত্র বিবাহ হ’তে হবে। তারপর যদি সে
স্বামী মারা যায় কিংবা স্বাভাবিক নিয়মে তালাক দেয়, তাহ’লেই
আবার প্রথম স্বামী তাকে বিবাহ করতে পারবে।
এক সাথে তিন তালাক দেওয়া যেমন হারাম, তেমনি
তাহলীল বা হিল্লা বিয়েও হারাম। সহজ পথ থাকতে কেন আমরা হারাম পথে যাব? অথচ
দেখুন, এদেশে যত তালাক দেওয়া হয়, তার
প্রায় নিরানববই ভাগ এক সাথে তিন তালাক এবং তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী একত্রিত হওয়ার
জন্য পাগলপারা হয়ে ওঠে। তখন হিল্লা বিয়ের মাধ্যমে তার সমাধান দেওয়া হয়, যা
হারাম। এত মাদ্রাসা, এত তা‘লীম-তারবিয়াত, এত
জুম‘আর বয়ান, এত রাতে ওয়ায! অথচ তালাককে
তার সঠিক পদ্ধতির উপর আনতে আমরা ব্যর্থ। এ নিয়ে কারও দুঃখ-বেদনা কিংবা মাথাব্যথা
আছে বলেও মনে হয় না। মাদ্রাসায় পড়ানো কালে শিক্ষকগণ যদি শিক্ষার্থীদের সামাজিক
দায়িত্বগুলো বুঝিয়ে দিতেন আর তারা ভেতরে-বাইরে এসব নিয়ে কাজ করত, তাহ’লে
জনগণ সচেতন হ’ত এবং অবস্থা এত খারাপ হ’ত
না। মোটকথা, মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপক
সামাজিক, প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক দিক
রয়েছে। কিন্তু আমাদের পাঠদান প্রক্রিয়ায় তা একরকম উপেক্ষিতই থেকে যায়।
শ্রেণীকক্ষের বাইরে শিক্ষক :
মানুষ মাত্রেই সামাজিক জীব। শিক্ষকও মানুষ। কাজেই তাকে
সমাজের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়। একজন ভাল শিক্ষক প্রথমেই তার পরিবারের
কথা ভাবেন। পরিবারের সদস্যদের দ্বীন শেখানো,
দ্বীনের
উপর চালানো, আদব-কায়দা ও ভদ্রতা শেখানো, সামাজিক
নিয়ম-নীতি সম্পর্কে বুঝানোর বিষয়ে তিনি সদাই সজাগ থাকেন। সমাজের অতীত, বর্তমান
ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার অধ্যয়ন থাকে। তিনি সমাজে ভাল কাজের প্রসার এবং মন্দ কাজের
নিষেধে সচেষ্ট থাকেন। সমাজের নানা প্রতিষ্ঠান যেমন শিক্ষালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, মৃত্যু-জানাযা, বিয়ে-শাদী
ইত্যাদির সাথে জড়িত থাকেন। নানা সামাজিক কাজে তিনি নিজ থেকে এগিয়ে যান কিংবা
ডাকলেই তাকে পাওয়া যায়। সামাজিক কোন প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রয়োজন পড়লে সেখানে তার
ভূমিকা থাকে। জামা‘আতবদ্ধ যিন্দেগী যাপন ও সমাজের মানুষগুলোর
দ্বীনী চেতনা তৈরিতে তিনি শ্রম ব্যয় করেন। তিনি সমাজের অসহায়, ইয়াতীম, বিধবা, অসুস্থ
ও দুস্থ মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা ও সেবা-যত্ন করেন।
শেষকথা :
আদর্শ শিক্ষক বিষয়টি মূলতঃ আপেক্ষিক। আমরা আদর্শ শিক্ষকের
যে গুণাবলী এবং দায়িত্ব-কর্তব্য বলেছি তাও চূড়ান্ত কিছু নয়। অনেক শিক্ষকের মধ্যে
এর থেকেও অনেক বেশী গুণ থাকতে পারে। আবার অনেকের মধ্যে এসব গুণ কম মাত্রায়ও থাকতে
পারে। মোটকথা সাধ্যমত দ্বীনদারী ও সততার সঙ্গে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক
ও পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষককে একজন আদর্শ শিক্ষক বলা যেতে পারে। আল্লাহ বলেন, لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজে
বাধ্য করেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। ওয়া ছল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা ওয়া আলা
আলিহী ওয়া আছহাবিহী ওয়া বারাকা ওয়া সাল্লাম।
[1]. বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক
বাংলা অভিধান, (ঢাকা: ৯ম পুনর্মুদ্রণ, ২০০৮ খৃঃ),
পৃঃ
১০৩।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২২৯; ছহীহাহ হা/৩৫৯৩।
[3]. মুসলিম হা/৫৩৭; নাসাঈ হা/১২১৮;
মিশকাত
হা/৯৭৮।
[4]. তিরমিযী হা/২০০২; ছহীহাহ হা/৮৭৬;
মিশকাত
হা/৫০৮১।
[5]. আবূদাঊদ হা/৪৬৮২; তিরমিযী হা/১১৬২;
মিশকাত
হা/৩২৬৪, সনদ ছহীহ।
[6]. আবূদাঊদ হা/৪৮০১; মিশকাত হা/৫০৮০।
[7]. মুসলিম হা/২৫৫৩; মিশকাত হা/৫০৭৩।
[8]. বুখারী হা/৬৩১; মিশকাত হা/৬৮৩।
[9]. মুসলিম হা/৪০৪; আবূদাঊদ হা/৯৭২;
মিশকাত
হা/৮২৬।
[10]. আহমাদ, আবূদাঊদ হা/৬০৩;
ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/২০৫।
[11]. মুসলিম হা/৪২৬; নাসাঈ হা/১৩৬৩; মিশকাত হা/১১৩৭।
[12]. বুখারী হা/৮১১; মিশকাত হা/১১৩৬।
[13]. ইবনু ক্বুদামা, আল-মুগনী ২/৩৭২,
ফিক্বহুস
সুন্নাহ ১/৫৪৫।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com