Thursday, November 25, 2021

রাসূল(স.)এক ইহুদির থেকে ঋণ গ্রহন

 


রাসূল(স.)এক ইহুদির থেকে ঋণ গ্রহন

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

একজন স.হাবীর প্রয়োজন মেটানোর জন্য রাসূল (স.) এক ইহুদির কাছ থেকে ঋণ নেন। নবিজী (স.) ইহুদিকে একটি তারিখ বলেন, যে তারিখে তিনি ঋণ ফেরত দিবেন।

একদিন নবিজী (স.) স.হাবীদেরকে নিয়ে একটি জানাযা থেকে ফিরছেন। তাঁর স.থে ছিলেন আবু বকর, উমরের (রাঃ) মতো মহান স.হাবী।

ঠিক সেই সময় ঐ ইহুদি লোকটি রাসূল (স.) এর গলার চাদরে ধরে রাগতস্বরে, অভদ্র ভাষায় বললো-

ও মুহাম্মদ! আমার কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছিলে, সেটা কখন দিবে? আমি তো তোমার পরিবারকে চিনি। ঋণ নিলে তোমাদের আর কোনো খবর থাকে না!

নবিজী (স.) তখন মদীনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁকে সবার স.মনে এতো বড়ো অপমান করা হলো অথচ ঋণ পরিশোধের যে তারিখ ধার্য করা হয়েছিলো, সেটা এখনো বাকি আছে। একেত সময়ের আগেই  চেয়েছে তাও আবার অভদ্র ভাষায়। উমর (রা) সহ্য করতে পারলেন না। তিনি বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি অনুমতি দিন, তার গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলি?”

নবিজীর (স.) এক্ষেত্রে যেমন ক্ষমতা ছিলো, তেমনি তিনি ছিলেন ন্যয়পরায়ণ। ইহুদির অমার্জিত আচরণকে তিনি শাস্তি দিতে পারেন। তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেবার অধিকার রাখেন।

কিন্তু, তিনি উল্টো উমর (রা:)কে বললেন:

উমর, তোমার কাছ থেকে তো উত্তম ব্যবহার আশা করা যায়। তুমি এভাবে না বলে বরং আমাকে বলতে পারতে- আপনি তাঁর ঋণ পরিশোধ করুন কিংবা তাকে বলতে পারতে- আপনি সুন্দরভাবে ঋণের কথা বলতে পারতেন।

অসুন্দরের জবাব সুন্দর দ্বারা, অনুত্তমের জবাব কিভাবে উত্তম দ্বারা দিতে হয় সেটা নবিজী (স.) উমর  সহ স.থে উপস্থিত স.হাবীদেরকে শেখালেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স.) উমরকে নির্দেশ দিলেন-

উমর, যাও তার স.থে এবং তাকে তার ঋণ পরিশোধের পর আরো বিশ স.’ (৩২ কেজি) খেজুর দিও। কারণ, তুমি তাকে ভয় দেখিয়েছো।

উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইহুদিকে স.থে নিয়ে গেলেন। তাকে তার প্রাপ্য ঋণ প্রদান করলেন এবং স.থে আরো ৩২ কেজির মতো খেজুর দিলেন। ইহুদি তো অবাক!

সে একে তো সময়ের আগেই পাওনা দাবি করেছে, তারউপর সবার স.মনে নবিজীকে অপমান করেছে; তবুও নবিজী (স.) তাকে পাওনা দিয়ে দিলেন, স.থে দিচ্ছেন আরো ৩২ কেজি খেজুর!?

সে জিজ্ঞেস করলো, “অতিরিক্ত এগুলো কেনো?”

উমর (রা:) বললেন, “কারণ, আমি তোমাকে হুমকি দিয়েছি। সেটার কাফফারা হিশেবে নবিজী এগুলো দিতে বললেন।

এটা শুনে ইহুদি বললো, “উমর, তুমি কি জানো আমি কে?”

উমর (রাঃ) বললেন, “না, আমি জানি না। তুমি কে?”

ইহুদি বললো, “আমি যায়িদ ইবনে সুনাহ।

তার নাম শুনে উমরের  চক্ষু চড়কগাছ!

যায়িদ ইবনে সুনাহ? মদীনার সেই বিখ্যাত ইহুদি রাবাই (ইহুদিদের আলেম)? উমর তার নাম জানতেন, কিন্তু তিনিই যে ঐ ব্যক্তি, সেটা তিনি জানতেন না।

যায়িদ ইবনে সুনাহ বললেন, “হ্যাঁ, আমিই সেই ইহুদি রাবাই। আমাদের ধর্মগ্রন্থ অনুস.রে মুহাম্মদ এর নবী হবার প্রমাণের যতো ভবিষ্যৎবাণী পাওয়া যায়, সবগুলোই আমি তাঁর মধ্যে পেয়েছি। শুধু দুটো বিষয় পরীক্ষা করা বাকি ছিলো।

সেই দুটো ছিলো:

তাঁকে কেউ রাগালে তিনি সহনশীলতা দেখাবেন।

কোনো মূর্খ তাঁর কাছে এসে মূর্খের মতো আচরণ করলে তিনি বরং সেই মূর্খের স.থে ভালো আচরণ করবেন। অর্থাৎ তিনি মন্দের জবাব ভালোর মাধ্যমে দিবেন, অনুত্তমের জবাব উত্তমের মাধ্যমে।

যায়িদ ইবনে সুনাহ নবিজীর (স.ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া স.ল্লাম) মধ্যে সেই দুটো গুণও এবার দেখতে পান। তিনি নবিজীকে (স.) রাগানো সত্ত্বেও নবিজী (স.) তাঁর স.থে রাগ করেননি; উল্টো তার পাওনা অর্থের বেশি তাকে দিয়েছেন।

এবার যায়িদ ইবনে সুনাহ বললেন:

ও উমর, তুমি স.ক্ষী থাকো- আমি আল্লাহকে আমার রব হিশেবে, ইসলামকে আমার ধর্ম হিশেবে এবং মুহাম্মদকে (স.) আমার নবী হিশেবে মেনে নিলাম। আমার অনেক সম্পদ আছে। আমি আমার অর্ধেক সম্পদ ইসলামের তরে দান করে দিলাম।

তথ্যসূত্র:

সহীহ ইবনে হিব্বান: ২৮৮, আল-বায়হাকী: ১১০৬৬, মুস্তাদারক হাকিম: ৬৫৪৭। ইমাম হাকিম (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে সহীহবলেছেন।

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com