মানবচরিত্রের অন্যতম
একটি বৈশিষ্ট্য ‘‘অবস্থান বদল’’
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
অবস্থান বদল মানবচরিত্রের
অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। যখন মানুষ বিপদে পড়ে,
তখন এক রকম কথা বলে
আবার বিপদমুক্ত হলে তার আসল চরিত্র প্রকাশ পায়।
দেখবেন বিপদে পড়লে অনেক নাস্তিক
আস্তিক হয়ে যায়। ড. মোহিত কামালের লেখা পড়ে দেখতে পারেন। সমুদ্র অস্থির আচরণ শুরু
করলো, সমুদ্রের ঢেউ এলোমেলোভাবে
বিক্ষিপ্ত হতে থাকলো, তখন আল্লাহকে গালি দেয়া মানুষটিও
চিৎকার করে ‘আল্লাহ-আল্লাহ’ করতে থাকেন! (ড. মোহিত কামাল, মানব মনের গতিপ্রকৃতি; পৃষ্ঠা ৭১-৭২)
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর আত্মজীবনীতে
এক লোকের ইউটার্নের একটি ঘটনা উল্লেখ করেন।
“আমি একজন ঘোরতর নাস্তিককে চিনতাম, তার ঠোঁটে একবার একটা গ্রোথের মতো হলো। ডাক্তাররা সন্দেহ করলেন
ক্যানসার। সঙ্গে সঙ্গে সেই নাস্তিক পুরোপুরি আস্তিক হয়ে গেলেন। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার
জন্য মসজিদে যান। বায়োপসির পর ধরা পড়ল গ্রোথের ধরন খারাপ নয়। লোকালাইজড গ্রোথ। ভয়ের
কিছু নেই। অপারেশন করে ফেলে দিলেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোক আবার নাস্তিক হয়ে পড়লেন।
ভয়াবহ ধরনের নাস্তিক।” (হুমায়ূন আহমেদ, ছায়াসঙ্গী; পৃষ্ঠা ২১)
মানুষের এই সুবিধাবাদী চরিত্র
সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত আছে। চলুন আয়াতগুলো দেখেনি-
এক.
إِذَا
مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا (20) وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا (21)
সে (মানুষ) যখন বিপদে পড়ে, তখন খুব হা-হুতাশ করে। আর যখন বিপদ কেটে যায়, তখন কৃপণ হয়ে যায়। (সুরা: মাআরিজ:৭০/২০-২১)
দুই.
وَإِذَا
مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُونَ إِلَّا إِيَّاهُ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ
إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ وَكَانَ الْإِنْسَانُ كَفُورًا
সমুদ্রের মাঝখানে যখন তোমরা বিপদে পড়ো,
তখন তোমরা (স্বাভাবিক
অবস্থায়) আল্লাহ ছাড়া যাদের ডাকো তাদের ভুলে যাও। তারপর যখন আল্লাহ তোমাদের স্থলে
(সৈকতে) এনে উদ্ধার করেন, তখন তোমরা (আল্লাহর দিক থেকে)
মুখ ফিরিয়ে নাও। (সুরা বনি ইসরাঈল:১৭/৬৭)
তিন.
وَإِذَا
مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا
كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَسَّهُ كَذَلِكَ
زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে আমাকে
(আল্লাহকে) ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তার দুঃখ-দৈন্য দূর করে দিই, তখন মানুষ এমন ভাব করে যেন সে আপতিত দুঃখ-কষ্টের জন্য কখনোই
আমাকে ডাকেনি। (সুরা ইউনুস:১০/১২)
চার.
وَلَئِنْ
أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ
عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
যদি দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর আমি তাকে সুখ ভোগ করাই, তখন সে বলতে থাকে, আমার বিপদ দূর হয়ে গেছে। তখন
সে উত্ফুল্ল ও অহংকারী হয়ে যায়। (সুরা হুদ:১১/১০)
পাঁচ.
وَإِذَا
غَشِيَهُمْ مَوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا
نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ فَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلَّا
كُلُّ خَتَّارٍ كَفُورٍ
যখন সমুদ্রের ঢেউ মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঢেকে ফেলে, তখন মানুষ আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কিন্তু
যখন (আল্লাহ) তাদের সৈকতে ফিরিয়ে এনে উদ্ধার করেন, তখন দেখা যায় (অধিকাংশ
মানুষই অকৃতজ্ঞ) কোনো কোনো মানুষ সরলপথে থাকে।
(সুরা লোকমান:৩১/৩২)
ছয়.
وَإِذَا
مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّهُ مُنِيبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَهُ نِعْمَةً
مِنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُو إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ وَجَعَلَ لِلَّهِ أَنْدَادًا
لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِهِ قُلْ تَمَتَّعْ بِكُفْرِكَ قَلِيلًا إِنَّكَ مِنْ أَصْحَابِ
النَّارِ
মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে
ডাকতে থাকে। এরপর আল্লাহ যখন তাকে দয়া করেন,
তখন মানুষ ভুলে যায়
যে বিপদে পড়ে সে এর আগে আল্লাহকে ডেকেছিল। (সুরা জুমার :৩৯/৮)
সাত.
فَإِذَا
مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ثُمَّ إِذَا خَوَّلْنَاهُ نِعْمَةً مِنَّا قَالَ
إِنَّمَا أُوتِيتُهُ عَلَى عِلْمٍ بَلْ هِيَ فِتْنَةٌ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
মানুষকে বিপদ-আপদ স্পর্শ করলে সে আমাকে (আল্লাহকে) ডাকে। যখন আল্লাহর অনুগ্রহে
কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করে, তখন (মানুষ) বলতে থাকে, সে নিজের চেষ্টায়ই এ থেকে মুক্তি লাভ করেছে। (সুরা জুমার:৩৯/৪৯)
আট.
وَلَئِنْ
أَذَقْنَاهُ رَحْمَةً مِنَّا مِنْ بَعْدِ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ هَذَا لِي
وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِنْ رُجِعْتُ إِلَى رَبِّي إِنَّ لِي عِنْدَهُ
لَلْحُسْنَى فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِمَا عَمِلُوا وَلَنُذِيقَنَّهُمْ
مِنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ (50) وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى
بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيضٍ (51)
দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর যখন আমি তাকে দয়া করে সুখের স্বাদ দিই, তখন মানুষ বলতে থাকে,
‘এটা তো আমার প্রাপ্যই
ছিল। আমি তো মনে করি না কিয়ামত বলে কিছু আছে। ’
...আবার যখন মানুষ বিপদে-আপদে
অমঙ্গলে পড়ে যায়, তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনায় বসে
যায়। (সুরা হা-মিম-সাজদা:৪১/৫০-৫১)
নয়.
فَإِذَا
رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ
إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ
ওরা (মানুষ) যখন পানিপথে চলতে থাকে, তখন পবিত্র মনে আল্লাহকে ডাকতে
থাকে। আর আমি (আল্লাহ) যখন তাদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিই, তখন মানুষ শিরক করা শুরু করে। (সুরা আনকাবুত:২৯/৬৫)
দশ.
فَأَمَّا
الْإِنْسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي
أَكْرَمَنِ (15) وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ
رَبِّي أَهَانَنِ (16)
আল্লাহ যখন মানুষকে দয়া ও সম্মানিত করেন,
তখন মানুষ বলে, আমার প্রতিপালক আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন আল্লাহ মানুষকে
পরীক্ষা করার জন্য উপকরণ কমিয়ে দেন, তখন মানুষ বলতে থাকে, আল্লাহ আমাকে হেয় করে দিয়েছেন। (সুরা : ফাজর:৮৯/১৫-১৬)
আমাদের উচিত সুদিনে-দুর্দিনে সব সময়ই আল্লাহকে স্মরণ করা।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com