সবর
বা ধৈর্য্যের গুরুত্ব
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
১।
ভুমিকা:
মহান আল্লাহ মানব জাতিকে যে সমস্ত উত্তম গুণ দান করেছেন
তার মধ্যে সবর বা ধৈর্য্য অতি উত্তম একটি গুণ। যার দ্বারা মানুষ অন্যান্য উত্তম
চারিত্রিক গুণাবলী হাসিল করতে পারে। পথহারা মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারে।
সবরের ইতিবাচক প্রভাবে ইবাদতগুলো হয়ে উঠে অতি উন্নতমানের যা মহান আল্লাহর কাছে
গ্রহণযোগ্য হয়। যে কোন আপদ-বিপদে মানুষ বিচলিতবোধ করে না। সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে
নিয়োজিত থাকা সহজ হয়।
২।
সবরের আভিধানিক অর্থ:
সবর আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে
ধৈর্য্যধারণ, বাধা দেয়া বা
বিরত থাকা। আনন্দ, প্রতিকূলতা, দুঃখ এবং উদ্বেগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা।
সহ্য বা অপেক্ষা করার ক্ষমতা, সহিষ্ণুতা, ধীরতা।
৩।
সবরের পারিভাষিক অর্থ:
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় সবর বলা হয় অন্তরকে
অস্থির হওয়া থেকে, জিহবাকে
অভিযোগ করা থেকে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অহেতুক নাড়াচাড়া থেকে বিরত রাখা। যেমন কপাল
চাপড়ানো, কাপড় টেনে
ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি। আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট, ঝামেলা-উদ্বেগ ইত্যাদি সময়ে নিজেকে নিজে
নিয়ন্ত্রণে রেখে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নির্ধারিত সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখা।
৪।
জুনায়েদ বাগদাদী: হাসিমুখে তিক্ততার ঢোক গিলা।
৫।
যুননুন মিশরী:
আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ থেকে বিরত থাকা, বিপদের সময় শান্ত থাকা এবং জীবনের যুদ্ধ
ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের কষাঘাত সত্ত্বেও অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা।
৬।
ধৈর্য্যের একটি নমুনা সূরা ইউসুফে বর্ণিত হয়েছে:
قَالُوا يَا أَبَانَا إِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا
يُوسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَأَكَلَهُ الذِّئْبُ وَمَا أَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَنَا
وَلَوْ كُنَّا صَادِقِينَ وَجَاءُوا عَلَى قَمِيصِهِ بِدَمٍ كَذِبٍ قَالَ بَلْ
سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنْفُسُكُمْ أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ
عَلَى مَا تَصِفُونَ
তারা বললঃ পিতাঃ আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করতে
গিয়েছিলাম এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে বাঘে খেয়ে
ফেলেছে। আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী। এবং তারা তার জামায়
কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। বললেনঃ এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের মন তোমাদেরকে একটা কথা সাজিয়ে
দিয়েছে। সুতরাং এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্য
স্থল। (ইউসুফ : ১৭-১৮)
فَلَمَّا اسْتَيْأَسُوا مِنْهُ خَلَصُوا نَجِيًّا قَالَ
كَبِيرُهُمْ أَلَمْ تَعْلَمُوا أَنَّ أَبَاكُمْ قَدْ أَخَذَ عَلَيْكُمْ مَوْثِقًا
مِنَ اللَّهِ وَمِنْ قَبْلُ مَا فَرَّطْتُمْ فِي يُوسُفَ فَلَنْ أَبْرَحَ
الْأَرْضَ حَتَّى يَأْذَنَ لِي أَبِي أَوْ يَحْكُمَ اللَّهُ لِي وَهُوَ خَيْرُ
الْحَاكِمِينَ ارْجِعُوا إِلَى أَبِيكُمْ فَقُولُوا يَا أَبَانَا إِنَّ ابْنَكَ
سَرَقَ وَمَا شَهِدْنَا إِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ
حَافِظِينَ وَاسْأَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِي كُنَّا فِيهَا وَالْعِيرَ الَّتِي
أَقْبَلْنَا فِيهَا وَإِنَّا لَصَادِقُونَ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنْفُسُكُمْ
أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا إِنَّهُ
هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
অতঃপর যখন তারা তাঁর কাছ থেকে নিরাশ হয়ে গেল, তখন পরামর্শের জন্যে এখানে বসল। তাদের
জ্যেষ্ঠ ভাই বললঃতোমরা কি জান না যে, পিতা তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহ্র নামে
অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং পূর্বে ইউসুফের ব্যাপারেও তোমরা অন্যায় করেছো? অতএব আমি তো কিছুতেই এদেশ ত্যাগ করব না, যে পর্যন্ত না পিতা আমাকে আদেশ দেন অথবা
আল্লাহ আমার পক্ষে কোন ব্যবস্থা করে দেন। তিনিই সর্বোত্তম ব্যবস্থাপক। তোমরা
তোমাদের পিতার কাছে ফিরে যাও এবং বলঃ পিতা আপনার ছেলে চুরি করেছে। আমরা তাই বলে
দিলাম, যা আমাদের
জানা ছিল এবং অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি আমাদের লক্ষ্য ছিল না। জিজ্ঞেস করুন ঐ জনপদের
লোকদেরকে যেখানে আমরা ছিলাম এবং ঐ কাফেলাকে, যাদের সাথে আমরা এসেছি। নিশ্চিতই আমরা সত্য
বলছি। তিনি বললেনঃ কিছুই না, তোমরা মনগড়া একটি কথা নিয়েই এসেছ। এখন
ধৈর্যধারণই উত্তম। সম্ভবতঃ আল্লাহ্ তাদের সবাইকে একসঙ্গে আমার কাছে নিয়ে আসবেন
তিনি সুবিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(ইউসুফ : ৮০-৮৩)
৭।
অধৈর্য্যের একটি নমুনা সূরা কাহাফে বর্ণিত হয়েছে : (বুখারী-৪৭২৭)
فَوَجَدَا عَبْدًا مِنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِنْ
عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا قَالَ لَهُ مُوسَى هَلْ
أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا قَالَ إِنَّكَ لَنْ
تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَى مَا لَمْ تُحِطْ بِهِ خُبْرًا
قَالَ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا وَلَا أَعْصِي لَكَ أَمْرًا قَالَ
فَإِنِ اتَّبَعْتَنِي فَلَا تَسْأَلْنِي عَنْ شَيْءٍ حَتَّى أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ
ذِكْرًا
অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের
সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার
পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। মূসা
তাঁকে বললেনঃ আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন? তিনি বললেনঃ আপনি আমার সাথে কিছুতেই
ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না। যে বিষয় বোঝা আপনার আয়ত্তাধীন নয়, তা দেখে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে? মূসা বললেনঃ আল্লাহ্ চাহেন তো আপনি আমাকে
ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না। তিনি বললেনঃ যদি আপনি আমার
অনুসরণ করেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে
কিছু বলি। (কাহাফ : ৬৫-৭০)
فَانْطَلَقَا حَتَّى إِذَا رَكِبَا فِي السَّفِينَةِ خَرَقَهَا
قَالَ أَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا إِمْرًا قَالَ
أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِي
بِمَا نَسِيتُ وَلَا تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا
অতঃপর তারা চলতে লাগলঃ অবশেষে যখন তারা নৌকায়
আরোহণ করল, তখন তিনি তাতে
ছিদ্র করে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি কি এর আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে এতে ছিদ্র
করে দিলেন? নিশ্চয়ই আপনি
একটি গুরুতর মন্দ কাজ করলেন। তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য ধরতে পারবেন না
? মূসা বললেনঃ আমাকে আমার ভুলের জন্যে অপরাধী
করবেন না এবং আমার কাজে আমার উপর কঠোরতা আরোপ করবেন না। (কাহাফ : ৭১-৭৩)
فَانْطَلَقَا حَتَّى إِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهُ قَالَ أَقَتَلْتَ
نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُكْرًا قَالَ أَلَمْ
أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا قَالَ إِنْ سَأَلْتُكَ عَنْ
شَيْءٍ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِي قَدْ بَلَغْتَ مِنْ لَدُنِّي عُذْرًا
অতঃপর তারা চলতে লাগল। অবশেষে যখন একটি
বালকের সাক্ষাত পেলেন, তখন তিনি তাকে
হত্যা করলেন। মূসা বললেন? আপনি কি একটি
নিষ্পাপ জীবন শেষ করে দিলেন প্রাণের বিনিময় ছাড়াই? নিশ্চয়ই আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।
তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবেন না।
মূসা বললেনঃ এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে সাথে রাখবেন না। আপনি আমার
পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত হয়ে গেছেন। (কাহাফ : ৭৪-৭৬)
فَانْطَلَقَا حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا
أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ
يَنْقَضَّ فَأَقَامَهُ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا قَالَ
هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِعْ
عَلَيْهِ صَبْرًا
অতঃপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে
তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা
তাদের অতিথেয়তা করতে অঙ্গীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি পতনোন্মুখ প্রাচীর
দেখতে পেলেন, সেটি তিনি
সোজা করে দাঁড় করিয়ে
দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি ইচছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক আদায় করতে
পারতেন। তিনি বললেনঃ এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে
আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি, আমি তার
তাৎপর্য বলে দিচ্ছি। (কাহাফ : ৭৭-৭৮)
أَمَّا السَّفِينَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِينَ يَعْمَلُونَ فِي
الْبَحْرِ فَأَرَدْتُ أَنْ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَاءَهُمْ مَلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ
سَفِينَةٍ غَصْبًا وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا
أَنْ يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا فَأَرَدْنَا أَنْ يُبْدِلَهُمَا
رَبُّهُمَا خَيْرًا مِنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا وَأَمَّا الْجِدَارُ
فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنْزٌ
لَهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَنْ يَبْلُغَا
أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنْزَهُمَا رَحْمَةً مِنْ رَبِّكَ وَمَا فَعَلْتُهُ
عَنْ أَمْرِي ذَلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِعْ عَلَيْهِ صَبْرًا
নৌকাটির ব্যাপারে-সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র
ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দেই। তাদের অপরদিকে
ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা ছিনিয়ে নিত। বালকটির ব্যাপার তার
পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত
করবে। অতঃপর আমি ইচছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিন্ঠতর
একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক। প্রাচীরের ব্যাপার-সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন
বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার
পালনকর্তা দায়বশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন
উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা। (কাহাফ : ৭৯-৮২)
৮।
ধৈর্য্যের প্রকারভেদ:
প্রকাশ থাকে যে সবর তিন প্রকার। যথা :-
(ক) আনুগত্য ও দায়িত্ব পালনে সবর।
الصبر على فعل الطاعات وأداء الواجبات
(খ) গুনাহের কাজ না করা ও হারাম কাজে লিপ্ত না
হওয়ার বিষয়ে সবর।
الصبر على فعل المعاصى و إرتكاب المحرمات
(গ) বিপদে আপদে সবর।
الصبر عند البلاء والمصائب
৯।
ধৈর্য্য হল আলোকবর্তিকা:
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: " الطُّهُورُ شَطْرُ
الْإِيمَانِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ
وَاللهُ أَكْبَرُ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ
نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ، وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ
أَوْ عَلَيْكَ، وَالنَّاسُ يَغْدُونَ، فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُوبِقُهَا، أَوْ
مُبْتَاعٌ فَمُعْتِقُهَا
আবু মালেক আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক। আলহামদু লিল্লাহ
মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবেএবং সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ আসমান ও
জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। সালাত হচ্ছে একটি উজ্জ্বল
জ্যোতি। সাদাকাহ হচ্ছে দলীল। ধৈর্য্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর কুরআন হবে তোমার পক্ষে
অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে আমলের
বিনিময়ে বিক্রি করে। আমলের বিনিময়ে নিজেকে আল্লাহর আযাব থেকে মুক্ত করে অথবা সে
তার নিজের ধ্বংস করে। (মুসলিম-২৪৫৩)
১০।
ধৈর্য্য আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় একটি গুণ:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ لأَشَجِّ عَبْدِ القَيْسِ: إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا
اللَّهُ: الحِلْمُ، وَالأَنَاةُ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আব্দুল কায়েস গোত্রের নেতা আশাজ্জকে মহানবী
(সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে
এমন দুটি গুণ রয়েছে যেগুলো আল্লাহ তায়ালা অধিক পছন্দ করেনঃ সহিষ্ণুতা ও স্থিরতা।
(তিরমিযী-২০১১)
عَنْ أَبِي حَلْبَسٍ يَزِيدَ بْنِ مَيْسَرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ
أُمَّ الدَّرْدَاءِ، تَقُولُ: سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ، يَقُولُ: سَمِعْتُ
أَبَا الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: - مَا سَمِعْتُهُ
يُكَنِّيهِ قَبْلَهَا، وَلَا بَعْدَهَا - يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ
يَقُولُ: يَا عِيسَى إِنِّي بَاعِثٌ مِنْ بَعْدِكَ أُمَّةً إِنْ أَصَابَهُمْ مَا
يُحِبُّونَ، حَمِدُوا اللَّهَ وَشَكَرُوا، وَإِنْ أَصَابَهُمْ مَا يَكْرَهُونَ،
احْتَسَبُوا، وَصَبَرُوا، وَلَا حِلْمَ، وَلَا عِلْمَ قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ
هَذَا لَهُمْ وَلَا حِلْمَ، وَلَا عِلْمَ قَالَ: أُعْطِيهِمْ مِنْ حِلْمِي،
وَعِلْمِي
আবু দারদা (রাঃ) বলেন, আমি আবুল কাসেম মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলতে
শুনেছি যে, মহান আল্লাহ
ঈসা (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ হে ঈসা! তোমার পরে এমন এক জাতিকে প্রেরণ করবো যারা
পছন্দের কিছু পেলে আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে আর অপছন্দের কিছু পেলে
ধৈর্য্য ও সংযম প্রদর্শন করবে। (আহমদ-২৭৫৪৫, শুয়াবিল ঈমান-৯৪)
১১। ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য
প্রার্থনা:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ
وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের
মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
(বাকারাহ-১৫২)
১২। সাহসিকতার কাজ:
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ
عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ
الْأُمُورِ
হে বৎস! নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর।
নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। (লোকমান-১৭)
১৩। সবরকারীদের জন্য সুসংবাদ:
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ
مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا
إِلَيْهِ رَاجِعُونَ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ
وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা
ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহ্র জন্য এবং আমরা
সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্র অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত
রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। (বাকারাহ : ১৫৫-১৫৭)
১৪। সবরকারীগণ হিসাব ব্যতীত সাওয়াব লাভ
করবেন:
قُلْ يَا عِبَادِ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ
أَحْسَنُوا فِي هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا
يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের
পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী
প্রশস্ত। যারা সবরকারী, তারাই তাদের
পুরস্কার পায় অগণিত। (যুমার-১০)
১৫। সবরকারীদের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়:
وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا
الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ
بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
যারা তাদের রবের সন্তুষ্টির লাভের উদ্দেশ্যে
সবর করে, সালাত কায়েম
করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে এবং ভাল
কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে তাদের জন্য রয়েছে আীরাতের শুভ পরিণাম বা জান্নাত।
(রা’দ-২২)
১৬। আবেদগণের চেয়েও ধৈর্য্যশীলদের প্রতিদান
বেশী:
مَا عِنْدَكُمْ يَنْفَدُ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ بَاقٍ
وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا
يَعْمَلُونَ
তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং
আল্লাহ্র কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ
হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে
প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত। (নাহল-৯৬)
১৭। ইচ্ছা করলেই ধৈর্য্যধারণ করা যায় এবং এটি
উত্তম ও ব্যাপক নিয়ামত:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: إِنَّ
نَاسًا مِنَ الأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، فَأَعْطَاهُمْ، ثُمَّ سَأَلُوهُ، فَأَعْطَاهُمْ، ثُمَّ سَأَلُوهُ،
فَأَعْطَاهُمْ حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ، فَقَالَ يَكُونُ عِنْدِي مِنْ خَيْرٍ
فَلَنْ أَدَّخِرَهُ عَنْكُمْ، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ، وَمَنْ
يَسْتَغْن: يُغْنِهِ اللَّهُ وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللَّهُ، وَمَا
أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْرًا وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কিছু সংখ্যক আনসারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
এর কাছে চাইলে তিনি তাদের দিলেন, পুনরায় তারা চাইলে তিনি তাদের দিলেন। এমনকি
তাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে
আমার নিকট জমা রাখি না। তবে যে চাওয়া থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে
পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে
অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য্যধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম
ও ব্যাপক কোন নিয়ামত কাউকে দেয়া হয়নি। (বুখারী-১৪৬৯)
১৮। মু’মিন সর্বাবস্থায় লাভবান হয়:
عَنْ صُهَيْبٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ،
وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ،
فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ، صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ
সুহাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মু’মিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য
কল্যাণকর। মু’মিন অন্য কেউ
এই বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর গুজার করে। এটা তার
জন্য কল্যাণকর। আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসীবতে পতিত হলে সবর করে। এটাও তার জন্য
কল্যাণকর। (মুসলিম-৭৩৯০)
১৯। বিপদ একা আসে না, পুরষ্কারসহ আসে:
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ
فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ
بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ, وَبِهَذَا الإِسْنَادِ عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ
مَعَ عِظَمِ البَلاَءِ، وَإِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ،
فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা যখন কোন বান্দার কল্যাণ সাধন
করতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাঁর কোন
বান্দার অকল্যাণ সাধন করতে চান তখন তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হতে বিরত থাকেন।
তাারপর কিয়ামতের দিন তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। (তিরমিযী-২৩৯৬)
এই সনদেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ যখন কোন
জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে বিপদে ফেলে পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে
লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য আল্লাহর অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। (তিরমিযী-২৩৯৬, হাসান অন্যান্য)
২০। জান্নাতী মহিলা:
عن عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، قَالَ: قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ:
أَلاَ أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ قُلْتُ: بَلَى، قَالَ: هَذِهِ
المَرْأَةُ السَّوْدَاءُ، أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فَقَالَتْ: إِنِّي أُصْرَعُ، وَإِنِّي أَتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللَّهَ لِي، قَالَ: ্রإِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ
اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَكِগ্ধ فَقَالَتْ:
أَصْبِرُ، فَقَالَتْ: إِنِّي أَتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللَّهَ لِي أَنْ لاَ
أَتَكَشَّفَ، فَدَعَا لَهَا حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا مَخْلَدٌ، عَنِ
ابْنِ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَنِي عَطَاءٌ:
্রأَنَّهُ رَأَى أُمَّ زُفَرَ تِلْكَ
امْرَأَةً طَوِيلَةً سَوْدَاءَ، عَلَى سِتْرِ الكَعْبَةِ
আতা ইবনে আবু রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি মহিলা দেখাবো না
? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, ঐ কালো রঙের মহিলাটি, সে নবী (সাঃ) এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমি
বিবস্ত্র হয়ে পড়ি। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। মহানবী (সাঃ)
বললেন, তুমি যদি চাও
ধৈর্য্যধারণ করতে পার। তোমর জন্য জান্নাত আছে। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি
তোমাকে আরোগ্য দান করেন। স্ত্রীলোকটি বলল, আমি ধৈর্য্যধারণ করবো। তবে এইটুকু দোয়া করুন
আমি যেন ঐ অবস্থায় বিবস্ত্র না হয়ে পড়ি। মহানবী (সাঃ) তার জন্য এই দোয়া করলেন।
(বুখারী-৫৬৫২)
২১। বিপদমুক্ত মানুষের বিপদ কামনা:
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: يَوَدُّ أَهْلُ العَافِيَةِ يَوْمَ القِيَامَةِ حِينَ يُعْطَى أَهْلُ
البَلاَءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا
بِالمَقَارِيضِ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে বিপদে পতিত ধৈর্য্যধারণকারী
মানুষদের যখন প্রতিদান দেয়া হবে, তখন পৃথিবীতে বিপদমুক্ত মানুষেরা আকাঙ্খা বা
আফসোস করবে, হায়! দুনিয়াতে
যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরা টুকরা করা হতো। (তিরমিযী-২৪০২)
২২। অন্ধ ব্যক্তির ধৈর্য্যধারণের বিনিময়ে
জান্নাত লাভ করবে:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ قَالَ: إِذَا
ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ، عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الجَنَّةَ
يُرِيدُ: عَيْنَيْهِ، تَابَعَهُ أَشْعَثُ بْنُ جَابِرٍ، وَأَبُو ظِلاَلٍ هِلاَلٌ،
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
আনাস (রাঃ) ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ আমি যদি আমার কোন
বান্দাকে তার অতি প্রিয় দুটি বস্তু সম্পর্কে পরীক্ষায় ফেলি, আর তাতে ধৈর্য্যধারণ করে, তাহলে আমি সে দুটির বিনিময়ে জান্নাত দান
করবো। আনাস (রাঃ) বলেন, দুটি প্রিয়
বস্তু সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়। (বুখারী-৫৬৫৩)
২৩। ধৈর্য্যধারণের ফলে গুনাহ মাফ হয়ে যায়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ: مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ
وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا
كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবরের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা
করে দেন। (বুখারী-৫৬৪১)
২৪। ধৈর্য্যশীলগণ ক্ষতিগ্রস্ততা থেকে নাজাত
লাভ করে:
وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ
آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا
بِالصَّبْرِ
কসম যুগের! নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু
তারা নয়, যারা বিশ্বাস
স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের। (আসর
: ১-৩)
২৫। যে যে ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করা প্রয়োজন:
আমাদের জীবনের বহু ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণের
প্রয়োজন হয়। কোন কোন ক্ষেত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে
অজ্ঞতা থাকতে পারে। তাই এ পর্যায়ে ধৈর্য্যধারণের ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে আলোকপাত
করবো ইনশা আল্লাহ।
ক। যুদ্ধক্ষেত্রে:
أَبُو النَّضْرِ، مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، كُنْتُ
كَاتِبًا لَهُ، قَالَ: كَتَبَ إِلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي أَوْفَى، حِينَ
خَرَجَ إِلَى الحَرُورِيَّةِ، فَقَرَأْتُهُ، فَإِذَا فِيهِ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِي لَقِيَ فِيهَا
العَدُوَّ، انْتَظَرَ حَتَّى مَالَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ قَامَ فِي النَّاسِ
فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ، لاَ تَمَنَّوْا لِقَاءَ العَدُوِّ، وَسَلُوا اللَّهَ
العَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الجَنَّةَ
تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الكِتَابِ،
وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الأَحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ
উমর ইবনে উবাইদুল্লাহ এর আযাদকৃত গোলাম আবু
নযর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনে উবাইদুল্লাহ এর লেখক ছিলাম।
তিনি বলেন, তাঁর নিকট
আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) একখানি পত্র লিখেন, যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি
পত্রটি পাঠ করলাম- তাতে লেখা ছিল যে, শত্রুর সঙ্গে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সূর্য ঢলে যাওয়া অবধি অপেক্ষা কললেন। অতঃপর তিনি তাঁর সাহাবীদের
সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিলেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা
করার কামনা করবে না এবং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তার দোয়া করবে। অতঃপর যখন তোমরা
শত্রুর সামনা-সামনি হবে তখন তোমরা ধৈর্য্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারির ছায়ায় অবস্থিত। অতঃপর
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! কুরআণ অবতীর্ণকারী, মেঘমালা চালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাভূতকারী, আপনি কাফেরদের পরাস্ত করুন এবং আমাদেরকে
তাদের উপর বিজয় দান করুন। (বুখারী-৩০২৪)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا
وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায়
দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে
সমর্থ হতে পার। (আলে ইমরান-২০০)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ
إِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ
مِنْكُمْ مِائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ
لَا يَفْقَهُونَ الْآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنْكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا
فَإِنْ يَكُنْ مِنْكُمْ مِائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ وَإِنْ يَكُنْ
مِنْكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ
الصَّابِرِينَ
হে নবী, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য।
তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ
লোক, তবে জয়ী হবে
হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন। এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন
আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের
উপর এবং তিনি জেনে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে। কাজেই তোমাদের
মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে
আল্লাহ্র হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু'হাজারের উপর আর আল্লাহ্ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের
সাথে। (আনফাল : ৬৫-৬৬)
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ
مُبْتَلِيكُمْ بِنَهَرٍ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَنْ لَمْ
يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ فَشَرِبُوا
مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا
مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالَ
الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلَاقُو اللَّهِ كَمْ مِنْ فِئَةٍ قَلِيلَةٍ
غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি
নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তু যে লোক হাতের
আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষ অবশ্য তেমন গুরুতর হবে না। অতঃপর সবাই পান
করল সে পানি, সামান্য
কয়েকজন ছাড়া। পরে তালুত যখন তা পার হলো এবং তার সাথে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালুত এবং তার সেনাবাহিনীর সাথে
যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহ সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে।
(বাকারাহ : ২৪৯)
খ। মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সময় ও নির্যাতিত
হওয়ার সময়:
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا
كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ
اللَّهِ وَلَقَدْ جَاءَكَ مِنْ نَبَإِ الْمُرْسَلِينَ
আপনার পূর্ববর্তী অনেক পয়গাম্বরকে মিথ্যা বলা
হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছা পর্যন্ত তারা
নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহ্র বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে
পয়গাম্বরদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে। (আনয়াম : ৩৪)
গ। বালা-মুসিবতের সময়:
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ
عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ
الْأُمُورِ
হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর।
নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। (লুকমান-১৭)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ
مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ الَّذِينَ
إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ
رَاجِعُونَ أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ
هُمُ الْمُهْتَدُونَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা
ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহ্র জন্য এবং আমরা
সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ্র অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত
রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। (বাকারাহ : ১৫৫-১৫৭)
ঘ। রোগক্রান্ত হলে:
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: يَوَدُّ أَهْلُ العَافِيَةِ يَوْمَ القِيَامَةِ حِينَ يُعْطَى أَهْلُ
البَلاَءِ الثَّوَابَ لَوْ أَنَّ جُلُودَهُمْ كَانَتْ قُرِضَتْ فِي الدُّنْيَا
بِالمَقَارِيضِ
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে বিপদে পতিত ধৈর্য্যধারণকারী
মানুষদের যখন প্রতিদান দেয়া হবে, তখন পৃথিবীতে বিপদমুক্ত মানুষেরা আকাঙ্খা বা
আফসোস করবে, হায়! দুনিয়াতে
যদি কাঁচি দ্বারা তাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরা টুকরা করা হতো। (তিরমিযী : ২৪০২)
عن عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، قَالَ: قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ:
أَلاَ أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ قُلْتُ: بَلَى، قَالَ: هَذِهِ
المَرْأَةُ السَّوْدَاءُ، أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فَقَالَتْ: إِنِّي أُصْرَعُ، وَإِنِّي أَتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللَّهَ لِي، قَالَ:
إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ
يُعَافِيَكِ فَقَالَتْ: أَصْبِرُ، فَقَالَتْ: إِنِّي أَتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللَّهَ
لِي أَنْ لاَ أَتَكَشَّفَ، فَدَعَا لَهَا حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، أَخْبَرَنَا
مَخْلَدٌ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَنِي عَطَاءٌ: أَنَّهُ رَأَى أُمَّ زُفَرَ
تِلْكَ امْرَأَةً طَوِيلَةً سَوْدَاءَ، عَلَى سِتْرِ الكَعْبَةِ
আতা ইবনে আবু রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতি মহিলা দেখাবো না
? আমি বললাম, অবশ্যই। তিনি বললেন, ঐ কালো রঙের মহিলাটি, সে নবী (সাঃ) এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমি
বিবস্ত্র হয়ে পড়ি। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। মহানবী (সাঃ)
বললেন, তুমি যদি চাও
ধৈর্য্যধারণ করতে পার। তোমর জন্য জান্নাত আছে। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি
তোমাকে আরোগ্য দান করেন। স্ত্রীলোটি বলল, আমি ধৈর্য্যধারণ করবো। তবে এইটুকু দোয়া করুন
আমি যেন ঐ অবস্থায় বিস্ত্র না হয়ে পড়ি। মহানবী (সাঃ) তার জন্য এই দোয়া করলেন।
(বুখারী : ৫৬৫২)
ঙ। প্রতিবেশীর মন্দ আচরণে;
চ। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনে;
ছ। জীবিকার সংকীর্ণতায়;
জ। প্রিয়জন হারানোর বেদনায়;
ঝ। সন্তান-সন্তুতি লালন-পালনে;
উপসংহার:
আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ধৈর্য্য মানব জীবনে অতি উন্নতমানের এক গুণ।
এটি অর্জন করতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাতে সার্বিক কল্যাণ হাসিল করা সম্ভব।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com