মোবাইলে কুরআন পড়া ও শুনা যাবে কি?
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর স্ক্রিনে কুরআন দেখে
পড়ার ফজিলত, কাগজের কুরআন
দেখে পড়ার ফজিলতের সমান হবে কি?
মোবাইলে কুরআন করিম স্পর্শ করার হুকুম কি? এবং কুরআন সফটওয়ার ইন্সটলকৃত মোবাইল নিয়ে
টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে কি ?
কাগুজে কুরআন হার্ডকপি দেখে কুরআন তেলাওয়াত ও
সফটওয়্যার কপি তথা ল্যাপটপ, মোবাইল ও
কম্পিউটার স্ক্রিনে কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব দুটো এক নহে। হার্ডকপি তথা কাগুজে
কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে যে গাম্ভীর্য ও ইমেজ রয়েছে তা অন্যান্য সফটওয়্যার কপিতে না
থাকাই স্বাভাবিক।
কুরআন যেহেতু মাখলুক নহে বরং শাশ্বত চিরন্তন। তাই আমাদের সামনে দৃশ্যমান কুরআন হল লাওহে
মাহফুজের যে কুরআন সে মূল কুরআনের প্রতিচ্ছবি মাত্র। এ প্রতিচ্ছবি যেখানেই
পরিদৃষ্ট হোক না, তা দেখে পড়া
মানে কুরআন দেখে পড়ার হুকুমে হবে। চাই কুরআনের লিখিত রূপটি পাথরে খোদাই করা থাকুক
বা মোবাইল,ল্যাপটপ, কম্পিউটারের স্ক্রীনে থাকুক, বা কোন কাগজ বা পাতায় লিখিত আকারে থাকুক। সব
কিছুর বিধান একই।
অর্থাৎ দেখে পড়লে কুরআন দেখে পড়ার সওয়াব হবে।
এসব নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা যাবে না। তবে মোবাইলে থাকা কুরআন এ্যাপস যদি বন্ধ করা
থাকে, তথা মোবাইল
স্ক্রীনে দৃশ্যমান না থাকে, তাহলে উক্ত
মোবাইল নিয়ে টয়লেটে প্রবেশে কোন সমস্যা নেই। যেমনটা হাফেজদের হৃদয়ে কুরআন সংরক্ষিত
থাকা সত্বেও তাঁরা যেমন টয়লেটে প্রবেশ করে থাকেন তেমনি যে মোবাইলে কুরআন সংরক্ষিত
রয়েছে সে মোবাইল সাথে করে টয়লেটে প্রবেশ করতে কোন বাধা নেই। ইহাই বর্তমান সময়কার
ফকিহ্ ও মুফতিদের অভিমত।
অনেক আলেমগন স্পর্শ করাকেও নাজায়েয বলেন, তাদের কথার ভিত্তি হলো স্ক্রীনে কোন আবরন
নেই বিধায় উপর দিয়ে সরাসরি আয়াত স্পর্শ করা না-জায়েয৷
তবে এ ক্ষেত্রে তাত্বিক কথা হলো মোবাইল স্ক্রীনে আবরন আছে৷ তাছাড়া অধিকাংশ
মোবাইলে গ্লাস পেপারও থাকে যা স্পষ্ট আবরন৷ তাই স্ক্রীনে থাকা কুরআন শরীফ অযু
ছাড়া স্পর্শ করা বৈধ৷ তবে অযু সহ স্পর্শ করাই উত্তম এবং ইহা তাকওয়ারও দাবি।
কুরআন তেলাওয়াতের পূর্ণ সওয়াব পেতে হলে মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ এর স্ক্রিনে তেলাওয়াত
করার সময় ওজু সহকারে স্পর্শ করবে। এতে তেলাওয়াতের পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে এবং
গাম্ভীর্যও বজায় থাকবে।
ﻭﻗﺎﻝ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳـﻼﻡ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻌﻤﺪﺓ ( ﺹ 384 ) : “ ﺍﻟﻮﺟﻪ ﻓﻲ
ﻫﺬﺍ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ
ﺍﻟﻠﻮﺡ ﺍﻟﻤﺤـﻔﻮﻅ
ﻫﻮ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﻛﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ
ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ
ﺣﺠﺮﺍً ﺃﻭ ﻟﺤﺎﻓﺎً، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻣِﻦْ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺼﺤﻒ ﺑﻌﻴﻨﻪ
ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﺤﻞ ﻭﺭﻗﺎً ﺃﻭ ﺃﺩﻳﻤﺎً ﺃﻭ
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﺬﻱ ﻓﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻛﺬﻟﻚ؛ ﻷﻥ ﺣﺮﻣﺘﻪ
ﻛﺤﺮﻣﺘﻪ، ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺃﻥ ﻻ ﻳﻤﺴﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻭﻥ ﻭﺟﺐ
ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ
ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺴـﻤﺎﺀ ﺃﻭ ﺍﻷﺭﺽ، ﻭﻗﺪ
ﺃﻭﺣـــﻰ ﺇﻟﻰ ﺃﻭ ﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﺳﻢ ﺟﻨﺲ ﻳﻌﻢ ﻛﻞ ﻣﺎ
ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﻣُﻄَﻬَّﺮَﺓً { [ﺍﻟﺒﻴﻨﺔ 2: ] ،
ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : } ﻓِﻲ ﺻُﺤُﻒ ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ :
}ﺭَﺳُﻮﻝٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺘْﻠُﻮ ﺻُﺤُﻔﺎً
ﻣُﻜَﺮَّﻣَﺔٍ ﻣَﺮْﻓُﻮﻋَﺔٍ ﻣُﻄَﻬَّﺮَﺓٍ { [ ﻋﺒﺲ 14-13: ] . ﻓﻮﺻﻔﻬﺎ ﺃﻧﻬﺎ
ﻣﻄﻬﺮﺓ ﻓﻼ ﻳﺼﻠﺢ ﻟﻠﻤﺤﺪﺙ ﻣﺴﻬﺎ
আমাদের কাছে যে কুরআন রয়েছে এটি সেই কুরআনই
যা লৌহে মাহফুজে রয়েছে। যেমন কুরআন তাই, যা কুরআনের মাঝে রয়েছে, চাই তার স্থান পাতা হোক, বা চামড়া হোক, বা পাথর হোক বা মোড়ক হোক।সুতরাং আসমানে
অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম প্রযোজ্য। যেহেতু তা পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না, জমিনে থাকা কুরআনের ক্ষেত্রে একই বিধানকে
আবশ্যক করে। কেননা এ কুরআনের সম্মান সে কুরআনের মতই। অথবা আয়াতে কিতাব দ্বারা
উদ্দেশ্য হল ইসমে জিনস। যা কুরআনকে বুঝাচ্ছে, চাই তা আসমানে থাকুক বা জমিনে থাকুক। (শরহুল উমদাহ-৩৮৪)
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।(সূরা
ওয়াকিয়া-৭৯)
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com