তাওবার
গুরুত্ব ও ফযীলত
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভূমিকা:
মানুষকে সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল করে সৃষ্টি করা
হয়েছে। এজন্য মানুষ প্রতিটি পদে পদে ভুল করে, অপরাধ করে। সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হয়, তার নাফরমানি
করে ও অকৃতজ্ঞ হয়৷ অন্যায়-অপরাধে জীবন কাটিয়ে দেয়, গুনাহে গুনাহে
জর্জরিত করে ফেলে জীবনের অংশ। একসময় তার হুঁশ হয়, চেতনা খুঁজে পায়, তখন সেই পাপের
পথ থেকে সে ফিরে আসে। ফিরে আসে মহান সৃষ্টিকর্তার পথে, শ্বাশত চির
শান্তির পথে। যেখানে আছে শুধু সুখ আর সুখ। মানুষের অন্যায় – অপরাধের রাজ্য
থেকে এই ফিরে আসার নাম তাওবা। তাওবার মাধ্যমে সে তার পাপ-পংকিলতায় ভরা জীবনের
অবসান ঘটিয়ে আলোকিত জীবন গঠন করে। মহান আল্লাহ তার অপার অনুগ্রহে বান্দার জন্য এই
একটি পথ খুলে দিয়েছেন, যেন তার প্রতিটি বান্দাই অনাবিল সুখের ঠিকানা
জান্নাতে স্থান পায়।
সুতরাং যে কোন ব্যক্তি অন্যায়-অপরাধ করে তাওবা
করবে, তার জীবনের সমস্ত পাপ আল্লাহ মিটিয়ে দেবেন।
তাকে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করে নেবেন। কেননা তাওবা ছাড়া কোন ব্যক্তির
কবিরা গুনাহ মাফ হয় না। তাইতো মুমিন জীবনে তাওবার গুরুত্ব অনেক, এর ফযীলতও অনেক। সঠিক নিয়মে, সমস্ত শর্ত
পূরণ করে তাওবা করলে তবেই সেই তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।
মানব জীবনে কথা বলতে ও কাজ করতে গেলে ভুল হতে
পারে। মানব জাতির পিতা আদম (আঃ) ভুল করেছিলেন। তাঁর সন্তান হিসাবে আমরাও ভুল করে
থাকি। ভুল বা গুনাহ করলে অন্তর কলুষিত হয়ে যায়। আর সে কলুষিত অন্তরকে পরিশুদ্ধ
করার জন্য তাওবা করা জরুরী।
তাওবার
ফযীলত:
তাওবার ফযীলত অনন্ন্য যা
আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। নিন্মে তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করছি।
১.তাওবাকারীগণ
সর্বোত্তম ব্যক্তি:
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
قَالَ: كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, প্রত্যেক আদম সন্তাই গুনাহগার। আর
গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকারীগণ উত্তম। (ইবনে মাজাহ : ৪২৫১)
২.গুনাহ
হওয়াটাই স্বাভাবিক:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ
اللهُ بِكُمْ، وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ، فَيَسْتَغْفِرُونَ اللهَ فَيَغْفِرُ
لَهُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন, আমি তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা যদি পাপ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের
নিশ্চিহ্ন করে এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করতেন যারা পাপ করে ক্ষমা চাইতো এবং তিনি
তাদের মাফ করে দিতেন। (মুসলিম : ৬৮৫৮)
৩.মু’মিনগণ
গুনাহকে বড় করে দেখে:
عَنِ الحَارِثِ بْنِ سُوَيْدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ
مَسْعُودٍ، حَدِيثَيْنِ: أَحَدُهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، وَالآخَرُ عَنْ نَفْسِهِ، قَالَ: إِنَّ المُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ
كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الفَاجِرَ
يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا، قَالَ
أَبُو شِهَابٍ: بِيَدِهِ فَوْقَ أَنْفِهِ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট
মনে করে, সে যেন একটা
পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা
করছে যে, সম্ভবত
পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি বর্ণনাকারী আবু শিহাব নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন। (বুখারী
: ৬৩০৮)
৪.হানযালা
ও আবু বকর (রাঃ)এর উপলব্ধি:
عَنْ حَنْظَلَةَ الْأُسَيِّدِيِّ، قَالَ: - وَكَانَ مِنْ كُتَّابِ
رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ: لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ،
فَقَالَ: كَيْفَ أَنْتَ؟ يَا حَنْظَلَةُ قَالَ: قُلْتُ: نَافَقَ حَنْظَلَةُ،
قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ مَا تَقُولُ؟ قَالَ: قُلْتُ: نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ، حَتَّى
كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ
وَالضَّيْعَاتِ، فَنَسِينَا كَثِيرًا، قَالَ أَبُو بَكْرٍ: فَوَاللهِ إِنَّا
لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ، حَتَّى دَخَلْنَا
عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قُلْتُ: نَافَقَ
حَنْظَلَةُ، يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وَمَا ذَاكَ؟ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ نَكُونُ عِنْدَكَ، تُذَكِّرُنَا
بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ، حَتَّى كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ
عِنْدِكَ، عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ، نَسِينَا
كَثِيرًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي
نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي، وَفِي
الذِّكْرِ، لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ،
وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
রাসূলুল্লাহ সা এর কাতিব হানযালাহ আল উসাইদী
(রাঃ) বলেন, একদা আবু বকর
সিদ্দিক (রাঃ) আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন, হে হানযালাহ তুমি কেমন আছ? জবাবে আমি বললাম, হানাযালাহ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। সে সময় তিনি
বললেন, সুবহানাল্লাহ
তুমি কি বলছ? হানযালাহ
(রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ (স.) এর কাছে থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনান
যেন আমরা উভয়টি চাক্ষুষ দেখি। আর আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (স.) এর কাছ থেকে বের হয়ে
আপন স্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই তখন এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। আবু
বকর (রাঃ) বললেন, আমারও একই
অবস্থা। নিশ্চয় আমরা এ বিষয় নিয়ে আল্লাহর রাসূলের সাথে সাক্ষাত করবো। তারপর আমি
এবং আবু বকর (রাঃ) রওয়ানা করলাম এমনকি রাসূলুল্লাহ (স.)এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানাযালাহ তো মুনাফিক হয়ে
গেছে। রাসূলুল্লাহ (স.)বললেন, তা কী? আমি বললাম, আমরা আপনার কাছে থাকি আর আপনি আমাদের জান্নাত
ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যেন আমরা তা সরাসরি দেখতে পাই। তারপর আমরা যখন আপনার নিকট হতে
বের হই এবং স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি
ও ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই সে সময় আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। রাসূলুল্লাহ (স.)
বললেন, যে সত্তার
হাতে আমার জীবন আমি তাঁর কসম করে বলছি। আমার কাছে থাকাকালে তোমাদের যে অবস্থা হয়
যদি তোমরা সব সময় এ অবস্থায় অনড় থাকতে এবং সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকিরে পড়ে থাকতে
তা অবশ্যই ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত। হে
হানযালাহ! এক ঘন্টা আল্লাহর যিকিরে এবং এক ঘন্টা দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করবে। এ কথাটি
তিনি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম : ৬৮৫৯)
৫.আল্লাহর
রহমত থেকে হতাশ না হওয়া:
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا
تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا
إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا
لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ
বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম
করেছ, তোমরা আল্লাহর
রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী
হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত
হবে না। (সূরা যুমার-৩৯: ৫৩-৫৪)
৬.তাওবাকারীকে
ক্ষমা করার ৯৯ ভাগ নিজে সংরক্ষিত রেখেছেন:
عن سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ:
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: جَعَلَ
اللَّهُ الرَّحْمَةَ مِائَةَ جُزْءٍ، فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ
جُزْءًا، وَأَنْزَلَ فِي الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا، فَمِنْ ذَلِكَ الجُزْءِ
يَتَرَاحَمُ الخَلْقُ، حَتَّى تَرْفَعَ الفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا،
خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: ‘‘আল্লাহ রহমত বা দয়াকে একশত ভাগে বিভক্ত
করেছেন। তার মধ্যে ৯৯ ভাগ নিজের মধ্যে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে ০১ ভাগ
পাঠিয়েছেন। ঐ এক ভাগ পাওয়ার কারণেই সৃষ্টজগত পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া
তার বাচ্চার উপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে, সে ব্যথা পাবে।” (বুখারী : ৬৩০০ ; মুসলিম : ৬৮৬৫)
৭. গুনার
পরিমাণ যত বেশীই হোক আল্লাহ ক্ষমাশীল:
عن أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا
ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ
فِيكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ
السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ
آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ
تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, বরকতময় আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে
থাকবে এবং আমার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক তোমাকে আমি ক্ষমা করবো, এত গুনাহ আমি পরওয়া করবো না। হে আদম সন্তান!
তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করবো না। হে আদম সন্তান! তুমি
যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে
অংশীদার না করে থাক, তাহলে আমিও
তোমার কাছে পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব। (তিরমিযী : ৩৫৪০)
৮.একশত
খুনীর আসামি তাওবা করে ক্ষমা পেয়েছে:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ
رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِنْسَانًا، ثُمَّ خَرَجَ يَسْأَلُ، فَأَتَى
رَاهِبًا فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ: هَلْ مِنْ تَوْبَةٍ؟ قَالَ: لاَ، فَقَتَلَهُ،
فَجَعَلَ يَسْأَلُ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: ائْتِ قَرْيَةَ كَذَا وَكَذَا
فَأَدْرَكَهُ المَوْتُ، فَنَاءَ بِصَدْرِهِ نَحْوَهَا، فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ
مَلاَئِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلاَئِكَةُ العَذَابِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ
أَنْ تَقَرَّبِي، وَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وَقَالَ: قِيسُوا
مَا بَيْنَهُمَا، فَوُجِدَ إِلَى هَذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ، فَغُفِرَ لَهُ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল। যে ৯৯
জন মানুষকে হত্যা করেছিল। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, এই দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি কে? এক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিকে দেখিয়ে দেয়া হলো। সে
তার নিকট যেয়ে বলল, সে ৯৯ জনকে
হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় কি তাঁর জন্য তাওবা আছে? প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি বলল, না। তখন সে তাকেও হত্যা করে শতক পূর্ণ করল।
পুনরায় সে জিজ্ঞেস করল, এই দুনিয়াতে
সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি কে? এক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিকে দেখিয়ে দেয়া হলো। সে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিকে বলল, সে একশ জনকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবা আছে? প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি বললেন, হ্যাঁ। এমন কে আছে যে আল্লাহ ও তার তাওবার
মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক এলাকায় চলে যাও। সেখানে কিছু লোক
আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন আছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হও। নিজের ভূমিতে
আর কখনো ফিরে এসো না। কারণ এ অঞ্চল ভয়ঙ্কর খারাপ। তারপর সে চলতে লাগল। যখন সে মাঝ
পথে পৌঁছে তখন মৃত্যুবরণ করলো। এবার রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে তার
ব্যাপারে বাক-বিতন্ডা শুরু হল। রহমতের ফেরেশতারা বললেন, সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে
তাওবার উদ্দেশ্যে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বললেন, সে কখনো সৎ কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের
আকৃতিতে এক ফেরেশতা আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাঁদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বানালেন। তিনি
তাঁদেরকে বললেন, তোমরা উভয়
স্থান পরিমাপ কর। এই উভয় স্থানের যেটি সন্নিকটে সে অনুযায়ী এর
ফয়সালা হবে। তারা পরিমাপ করে দেখলেন যে, সে ঐ এলাকারই বেশী নিকটবর্তী যেখানে পৌঁছার
জন্য সে সংকল্প করেছিল। অতঃপর রহমতের ফেরেশতা তার রূহ নিয়ে গেল। (বুখারী : ৩৪৭০ ; মুসলিম : ৬৯০১)
৯.তাওবার
মাধ্যমে ব্যভিচারিণীর গুনাহ মাফ:
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ
أَتَتْ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ حُبْلَى مِنَ
الزِّنَى، فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللهِ، أَصَبْتُ حَدًّا، فَأَقِمْهُ عَلَيَّ،
فَدَعَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِيَّهَا، فَقَالَ:
أَحْسِنْ إِلَيْهَا، فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِي بِهَا فَفَعَلَ، فَأَمَرَ بِهَا
نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَشُكَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا،
ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ:
تُصَلِّي عَلَيْهَا يَا نَبِيَّ اللهِ وَقَدْ زَنَتْ؟ فَقَالَ: لَقَدْ تَابَتْ
تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ سَبْعِينَ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ
لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ تَوْبَةً أَفْضَلَ مِنْ أَنْ جَادَتْ بِنَفْسِهَا
لِلَّهِ تَعَالَى
ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বলেন, জুহাইনাহ গোত্রের এক মহিলা মহানবী (স.) এর
নিকট আসল। সে ব্যভিচারের মাধ্যমে সন্তানসম্ভবা হয়েছে। সে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমি শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তির
উপযুক্ত হয়েছি, অতএব আমার উপর
তা কার্যকর করুন। তখন মহানবী (স.) তার অভিভাবককে ডাকলেন এবং বললেন, তাকে ভালোভাবে দেখাশোনা করো। তারপর সে যখন
সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করলো এরপর আল্লাহর রাসূল
তার প্রতি শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার আদেশ
দিলেন এবং তাকে পাথর মারা হলো। অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার সালাত আদায় করলেন। উমর
(রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ
নবী! আপনি তার জানাযার সালাত আদায় করলেন অথচ সে তো ব্যভিচার করেছিল? তিনি বললেন, সে এমনভাবে তাওবাহ করেছে, যদি তা মদিনার ৭০ জন লোকের মাঝে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তা যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার
চেয়ে অধিক উত্তম তাওবাকারী কখনো দেখেছো? সে তো তার জীবন আল্লাহর জন্য দিয়ে দিয়েছে।
(মুসলিম : ৪৩২৫)
১০. গুনাহ করলে তাওবা করার আদেশ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً
نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ
جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা'আলার কাছে তাওবা কর-আন্তরিক তাওবা। আশা করা
যায় যে, তোমাদের
পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (সূরা তাহরীম-৬৬ : ০৮)
১২। তাওবা
করার ক্ষেত্রে বিলম্ব করতে নেই:
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ
السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ
عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত: মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তাওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে
দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।
(সূরা নিসা-৪: ১৭)
১১. মৃত্যুর পূর্বে তাওবা কবুল হয় না:
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ
حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا
الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا
أَلِيمًا
আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু
উপস্থিত হয়, তখন বলতে
থাকে: আমি এখন তাওবা করছি। আর তাওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের
জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা-৪: ১৮)
وعَن عبد الله ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ
يُغَرْغِرْ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, রূহ কন্ঠাগত না হওয়া পর্যন্ত (মৃত্যূর
যন্ত্রনা শুরু না হওয়া পর্যন্ত) আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবা কবুল করেন। (তিরমিযী : ৩৫৩৭)
১২.তাওবা করলে গুনাহগুলো পুন্য দ্বারা
পরিবর্তন করা হয়:
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا
يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ
وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ
الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ
عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ
اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে
না, আল্লাহ যার
হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ
ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন
তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে কিন্তু যারা
তাওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত
করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ফুরকান-২৫ : ৬৮-৭০)
১৩.তাওবার দ্বারা অন্তর পরিষ্কার হয়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ
فِي قَلْبِهِ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ، صُقِلَ قَلْبُهُ، فَإِنْ
زَادَ، زَادَتْ، فَذَلِكَ الرَّانُ الَّذِي ذَكَرَهُ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ:
{كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ} [المطففين
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে
একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে তাওবা করলে, পাপ কাজ ত্যাগ করলে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে
তার অন্তর পরিচ্ছন্ন হয়। সে আরো গুনাহ করলে সেই কারো দাগ বেড়ে যায়। এই সেই মরিচা
যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ কখনেই নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে মরিচা
ধরিয়েছে। (সূরা মুতাফফিফীন-৮৩ : ১৪) {ইবনে মাজাহ : ৪২৪৪}
১৪.বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ অত্যন্ত
খুশী হন:
عن أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ وَهُوَ عَمُّهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ
عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ، مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ
بِأَرْضِ فَلَاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ،
فَأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتَى شَجَرَةً، فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا، قَدْ أَيِسَ مِنْ
رَاحِلَتِهِ، فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا، قَائِمَةً عِنْدَهُ،
فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ: اللهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي
وَأَنَا رَبُّكَ، أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, বান্দাহ যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে তখন
আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও বেশী আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সাওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল।
তারপর তার সাওয়ারীটি হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ
হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে
পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনি সে তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর
সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আর আমি তোমার প্রভু। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে
ভুল করে ফেলেছে। (মুসলিম : ৬৮৫৩)
১৫.নবী করিম (স.)প্রতি দিন একশত বার তাওবা করতেন:
عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ الْأَغَرَّ، وَكَانَ مِنْ
أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يُحَدِّثُ ابْنَ عُمَرَ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أَيُّهَا
النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللهِ، فَإِنِّي أَتُوبُ، فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ،
مَرَّةٍ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা
কর। আমিও আল্লাহর কাছে দিনে একশত বার তাওবা করি। (মুসলিম : ৬৮৫২)
তাওবার
প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব:
যে ব্যক্তি কৃত অন্যায়ের জন্য তওবা করবে, সে অবশ্যই আল্লাহর নাফরমানীর কাজ থেকে সর্বদা
বিরত থাকতে সচেষ্ট হবে। আল্লাহ পাকের তরফ থেকে আরোপিত ফরজ সমূহকে যত্নসহকারে আদায়
করবে। বান্দার অধিকার খর্ব হলে যেমন- কাউকে গাল-মন্দ, গীবত-শেকায়াত, অত্যাচার-নির্যাতন
করলে তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়া।
তাই
ইমাম রাজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বান্দার উচিত সর্বদা আল্লাহর দরবারে তাওবা
করা। তিনি কয়েকটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন-
১.শয়তান
দুর্বল হয়:
হজরত
আলী (রা.)এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, এমন একজন
ব্যক্তি সম্পর্কে, যে গোনাহ করে তাওবা করে; পুনরায় গোনাহ
করে। আবার তাওবা করে আবার গোনাহ করে। আবার গোনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার
তাওবা-ইস্তিগফার করে। এ রূপ করতে থাকা ব্যক্তির কি অবস্থা হবে? হজরত আলী
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সর্বদা তাওবা-ইস্তিগফার করতে
থাকা। কেননা তাওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে
গোনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।
২.আল্লাহর
নিকট তাওবা পছন্দনীয় কাজ:
হজরত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তাওবা করতে
থাক। কেননা আমি নিজে দৈনিক ১০০ বার তাওবা করি।
৩.তাওবা
কারীর জন্য আল্লাহ ক্ষমা:
হজরত
আবু আইউব (রা.)বর্ণনা করেন, আমি প্রিয় নবী (স.)এর নিকট একথা শুনেছি, যা তোমাদের
নিকট থেকে গোপন রেখেছিলাম তা এই, তিনি বলেছেন, যদি তোমরা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার মহান
দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার না করতে, তবে আল্লাহ তাআলা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতেন, যারা গোনাহ
করে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা করতো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করতেন।
(মুসলিম)
৪.তাওবা
ইস্তিগফার মহান আল্লাহ নিয়ামত:
বান্দার
জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা-ইস্তিগফারের সুযোগদান এক মহা নিয়ামাত স্বরূপ। তাঁর এ
নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করা বিশ্ব মুসলিমের জন্য একান্ত অপরিহার্য বিষয়। তাই
মুসলিম উম্মাহর উচিত মহান আল্লাহর দরবারে প্রতিদিন তাওবা-ইস্তিগফার তথা ক্ষমা
প্রাথনা করা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের হাদিসের উপর আমল করা।
উপসংহার:
আজকের আলোচেনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, মানব জীবনে গুনাহ হওয়াটা স্বাভাবিক। আর গুনাহ
হয়ে গেলে কাল বিলম্ব না করে তাওবা করা উচিত। যাতে করে নিষ্পাপ অবস্থায় দুনিয়া থেকে
বিদায় নিয়ে অনন্ত কালের পারলৌকিক জীবনে শান্তি লাভ করা যায়।মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের
সেই তৌফিক দান করুন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com