নববর্ষ-তথা
থার্টি ফাস্ট নাইট
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
সূচনা:
প্রতি বছরের শেষান্তে ৩১ ডিসেম্বর! ঘড়ির কাটায় যখন রাত ১২টা পেরোলেই ১লা জানুয়ারী নতুন বছর। পটকা
তারায় হঠাত ঝলমলিয়ে উঠবে পৃথিবীর আকাশ। লাল, নীল,
সবুজ সোনালী, আরো কত রং পেছনের পায়ের অবাঞ্চিত রঙ্গিন ছাপগুলো মুছে ফেলার
অবাস্তব চেষ্টায় পুরোটা পৃথিবীকে অভুতপূর্ব রংয়ে রঙ্গিন করে তোলা হবে এ রাতটিতে।
নতুন বছরের সূচনাগাঁথা গেয়ে গেয়ে ধর্ম বর্ণ পরিচয় ভুলে গিয়ে হাজার মুখ একটাই
স্বপ্নের কলি গাইবে,
হ্যাপি নিউ ইয়ার!(Happy new
year) হ্যাপি নিউ ইয়ার!! (Happy new year) আরো কত কি যে হবে হয়! পাপ-পঙ্কিলতার
অযাচিত বরণে পবিত্র সূচনাতেই অপবিত্র বসন জড়াবে আরো একবার এ আবহ পৃথিবীর দেহখানা।
বিশ্বের বিধর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
#থার্টি
ফাস্ট নাইটের ইতিকথা:
ঐতিহাসিক ভাবে এটা জানা যায় যে খ্রীস্টপূর্ব
আনুমানিক ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন শুরু হয়। তার অনেক
পরে বিবর্তন হয়ে আধুনিক কালে এসে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা
জানুয়ারি নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয়। ইংরেজি সকল মাসের নাম মূলত বিভিন্ন
প্রাচীন দেব-দেবীর নামে প্রবর্তিত হয়েছে। যেমন- জানুয়ারি মাসের নামকরণ হয় 'জানুস' নামক রোমান দেবতার নামে। প্রাচীন কালের সে
দেবতার দু'দিকে দু'মুখ বিশিষ্ট মূর্তি আজও বিশ্বের বিভিন্ন
জাদুঘরে সযত্নে সংরক্ষিত আছে। প্রাচীন কালের এসকল মানুষের বিশ্বাস ছিল 'জানুস' নামক ঐ দেবতা অতীত ও ভবিষ্যৎ দুটোই দেখতে
পেতেন।
তাই মনে করা হত, এজন্যই আগের বছরের শেষ আর নতুন বছরের শুরুর
দিকে ঘোরানো তার দুই মুখ বিশিষ্ট মূর্তি। জানুসের নামে তারা বিভিন্ন উৎসব ও পূজা
করত। যেকোন শুভকাজের শুরুতে তারা জানুসকে স্মরণ করত ও ভক্তি-শ্রদ্ধাসহ তার পূজা
করত। সুতরাং
নববর্ষ-তথা
থার্টিফাস্ট নাইটসহ ইহুদি, খৃস্টান ও
মুশরিকসহ বিজাতীয়দের কোন উৎসব-আয়োজন মুসলমান কর্তৃক উদযাপন করতে পারে না।
বর্তমান "থার্টি ফাস্ট নাইট" আর
কিছুই নয়, জানুসকে
(জানুয়ারি) স্বাগত জানাবার আধুনিক রূপ মাত্র! আসলে আমরা নিজেদেরকে যতটা ডিজিটাল
ভাবি, আমরা চিন্তাও
করতে পারি না, শয়তান তার
চেয়েও শক্তিশালী ডিজিটাল ফিতনা-পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়!
সুতরাং এ সমস্ত অনুষ্ঠান
কি ইসলাম সমর্থিত?
যেখানে যিনা ব্যাবিচার, মদ,
শরাব, অশ্লীল, অশালীন, বেহায়াপনা কাজ চলে তা কখনোই ইসলামে গৃহীত নয় বরং তা ইসলাম
বহির্ভূত,নৈতিকতা বিরোধী, কাট্টা হারাম অনুষ্ঠান।
#থার্টি
ফাস্ট নাইট সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিকোন:
রাসূলুল্লাহ (স.) মদিনায় হিজরতের পর মদীনা বাসী কর্তৃক
উদযাপিত হতে থাকা দুটি উৎসব উদযাপন মুসলিমদের জন্য বন্ধ করে দেন। এর একটি হল ‘‘নওরোজ বা তথা নববর্ষ’’ যা
বছরের প্রথম দিন উদযাপিত হত আর অন্যটির নাম হল ‘‘মিহিরজান’’। এই উৎসব দু'টির বিপরীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মুসলিমদের জন্য আনন্দ উৎসব নির্ধারিত হয় অন্য দু'টি দিনে- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহা নামে।
মহান
আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ
وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যু
বরণ করো না”। (সূরা আল-ইমরান-৩:১০২)
মুসলিম হতে হলে মহান আল্লাহ্ তা'আলা যা আদেশ করেছেন তা পালন করতে হবে আর যা
নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনই মুসলিম জীবনের একমাত্র
লক্ষ্য হতে হবে। যারা ইসলামের অনুসারী নয় বরং ইসলাম ধর্মকে সুযোগ পেলেই অবমাননা
করে এবং তাওহীদ
ভিত্তিক এক আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে না তাদের উৎসব, রীতিনীতি ও কালচার পালন করে এবং তাদেরকে
বন্ধু হিসেবে গ্রহন ও সমর্থন করে আপনি নিজেকে মুসলিম দাবি করছেন!?
আল্লাহ্
তা'আলা
আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ
اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ
قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ
مُؤْمِنِينَ
হে মুমিনগণ, তোমরা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যারা তোমাদের দীনকে উপহাস ও খেল-তামাশারূপে
গ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য
থেকে তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে ও কাফিরদেরকে। আর আল্লাহর তাকওয়া
অবলম্বন কর, যদি তোমরা
মুমিন হয়ে থাক। (সূরা আল-মায়িদা-৫:৫৭)
তিনি
আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ
وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ
مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
হে মুমিনগণ, ইহুদি ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ
করো না। বরং তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ
জালিম কওমকে হিদায়াত দেন না। (সূরা আল-মায়িদা-৫:৫১)
আপনি নিজেকে মুসলিম দাবী করছেন তো, তাই না! আবার “হ্যাপি নিউ ইয়ার” বলে বিজাতীয় উৎসবকে সমর্থন করে তাদের
বন্ধুত্বও অর্জন করতে চাচ্ছেন, তাই তো! উপরোক্ত কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে
এখন নিজের অবস্থানটি নিজেই বুঝে নিন! অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা ইতিমধ্যেই
প্রিপারেশন নিচ্ছেন থার্টিফাস্ট নাইটের ব্যাপারে! একবার ভেবে দেখেন কি করতে
যাচ্ছেন আপনারা ?
আল্লাহ্ তা'আলা ঠিক এ ব্যাপারেই বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ
وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ
يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে
বিষয়ে তাদের কোন (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর
রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো। (সূরা আল-আহযাব-৩৩:৩৬)
আমাদের নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
যখন হিজরতের পর মদিনায় আগমন করলেন, তখন দেখলেন মদীনায় তাদের দু’টি দিন ছিল, যেখানে তারা খেলাধুলা-উৎসব করত। তিনি জিজ্ঞেস
করলেন: এ দু’টি দিন কি? তারা বলল: আমরা (জাহিলি যুগে) এ দু'টি দিনে খেলাধুলা ও এদেরকে কেন্দ্র করে উৎসব
পালন করতাম।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ)
বললেন:
عَنْ أَنَسٍ،
قَالَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ
وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟
قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
"إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا
خَيْرًا مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى، وَيَوْمَ الْفِطْرِ " ( سنن ابي داود
ــــ 1134)
"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন: ঈদুল আদহা ও ঈদুল ফিতর”। (আবু দাউদ:১১৩৪; আহমদ: ১৩২১০; হাকেম: ১১২৪)
ইব্নে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ এ হাদীসের
ব্যাখ্যায় বলেন: “এ হাদিস
প্রমাণ করে কাফেরদের উৎসব পালন করা হারাম। কারণ নবী (সাঃ) আনসারদের জাহিলি যুগের
দুই ঈদের উপর মুসলমানদের জন্য বহাল রাখেননি এবং তাদের রীতি মোতাবেক তাতে খেলাধুলা-উৎসবের
অনুমতি দেননি। তিনি বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের এ "দু'টি দিনের পরিবর্তন করে নতুন দুটি দিন ঠিক করে
দিয়েছেন"।
এ "পরিবর্তনের" দাবি আরও দু'টি দিন যোগ না করে পূর্বের দু'টি দিনের উৎসব-আয়োজন-আ'মল বাতিল করে দিয়ে নতুনভাবে দু'টি উৎসব-আ'মল তথা দুই ঈদ উৎসব দিয়ে তার "প্রতিস্থাপন"
করা। কারণ, বদল করার পর
উভয় বস্তুকে আর একসাথে জমা করা যায় না! বদল শব্দের অর্থই একটি ত্যাগ করে অপরটি
গ্রহণ করা” [ফায়দুল কাদির: ৪/৫১১]
সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পবিত্র কুরআনের
তাফসীর গ্ৰন্থ বহুল প্রচারিত "তাফসীর
ইবনে কা'সীর" এর রচয়িতা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বিশিষ্ট
সহীহ তাফসীরকার ইব্নে কা'সীর
রাহিমাহুল্লাহ উক্ত প্রসংগে বলেন:
عَنْ جَابِرِ بْنِ
عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: «إِنَّمَا جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ الشُّفْعَةَ فِي كُلِّ مَا لَمْ يُقْسَمْ،
فَإِذَا وَقَعَتِ الْحُدُودُ وَصُرِّفَتِ الطُّرُقُ فَلَا شُفْعَةَ»
কোন মুসলিমের সুযোগ নেই কাফেরদের সামঞ্জস্য
গ্রহণ করা- না তাদের ধর্মীয় উৎসবে, না মৌসুমি উৎসবে, আর না তাদের কোন ইবাদতে।আর সুনির্দিষ্ট এ
ব্যাপারেই নবী (সাঃ)-র সহীহ হাদীস: “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য
রাখল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত”। [আবু দাউদ: ৩৫১৪, আহমদ: ৫১০৬]
আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র বাণীর মাধ্যমে আমাদের
নির্দেশ দিচ্ছেন আমরা মুসলিম হয়ে এমন যেন না করি যে ইসলামের কতক অংশ অনুসরণ করি
এবং কতক অংশ অনুসরণ না করি!
তাইতো আল্লাহ্ সতর্ক করে বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ
হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং
শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু” । (সূরা বাকারা-২:২০৮)
অতএব কোন মুসলিমের জন্য কোনক্রমেই বৈধ নয় যে
সে মুসলিম হয়ে ইহুদি, খৃস্টান ও
মুশরিকদের উৎসব যেমন- নববর্ষ ও অন্যান্য উৎসব সমূহ পালন করবে। কারণ, সহীহ
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ،
قَالَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ
وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟
قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ،
মুসলমানদের জন্য ঈদোৎসব ব্যতিত যে কোন দিবস
উদযাপন, বিজাতীয়
নববর্ষ যা (প্রচলিত
থার্টিফাস্ট নাইট নামে পরিচিত) পালন এবং ইহুদি, খৃস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য মুশরিকদের কোন
উৎসব মুসলমান কর্তৃক উদযাপন করা হারাম। (আবু দাউদ:১১৩৪, আহমদ: ১৩২১০)
এ প্রসঙ্গে রাসূল ﷺ বলেছেন,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»
যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভূক্ত একজন বলে গণ্য হবে। ( আবূ দাঊদ-৪০৩১; মেশকাত-৪৩৪৭; আলবানী বলেন হাদীসটি হাসান সহীহ)
অর্থাৎ, কেউ নিজেকে সত্যিকারের মুসলিম হিসেবে দাবী
করলে কুরআন ও সুন্নাহ ব্যতিত তার অন্য কিছুর অনুসরণ করার সুযোগ নেই! আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা আমাদের
মুসলিমদেরকে যে ভাষায় তাঁর নিকট প্রার্থনা করতে বলেছেন তা হলো:
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ
أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)
ইয়া আল্লাহ্! (আপনি) আমাদেরকে সরল সঠিক পথের হিদায়াত দিন। তাঁদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন, যাঁদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যাঁরা
পথভ্রষ্টও নয়। (সূরা আল ফাতিহা-১:৬-৭)
# থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে আমাদের অনুভূতি কি?
প্রত্যহ যখন দিন আর রাত অতিবাহিত হয় একটি বছর সমাপ্ত হয় তখন
প্রতিটি মুসলামানদের অনুভূতি কি? আনন্দের
না বেদনার,
না চিন্তার?
একজন আরবি
কবি বিষয়টি তার একটি পংক্তিতে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলছেন।
তিনি বলেনঃ
ﻳﺴﺮﺍﻟﻨﺎﺱ
ﻣﺎﺫﻫﺐ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻰ + ﻭﻟﻜﻦ ﺫﻫﺎﺑﻬﻦ ﻟﻪ ﺫﻫﺎﺑﺎ
মানুষকে
আনন্দ করে দিনের পর দিন রাতের পর রাতের আগমন। কিন্তু কবি বলেনঃ আমার অনুভূতি ব্যতিক্রম। রাত শেষ হওয়ার পর নতুন এক ভোর
দেখার জন্য প্রফুল্লচিত্বে আমি অপেক্ষা করতে পারি না বছর শেষে নতুন আরেকটি বছর কে
আমি স্বাগত জানানোর জন্য আনন্দ করতে পারিনা। আমার অনুভুতি হলো: যেমন-
১.যে সকল দিনগুলো
চলে গেল তা তো আমার জীবনের একটা অংশ।
২.আমার জীবনের একটি
ক্যালেন্ডার শেষ হয়ে গেল।
৩.আমার জীবন ছোট হয়ে এলো।
৪.আমার জন্য এটাতো আনন্দের ব্যাপার নয়।
৫.আমার জন্য এটা চিন্তার বিষয় রয়েছে।
৬.আমার জীবন থেকে একটি বছর
অতিক্রম করছি।
৭.আগামী বছর পাদার্পন করতে
যাবো কি?
৮.আমি গত বছর কিভাবে কাটালাম।
৯.আগামী বছর কিভাবে কাটাবো
আমার এটা চিন্তার বিষয়।
১০.গত একটি বছরের হিসাব করার
সময় আনন্দের সময় নয়। এটি অনুভুতির সময় অতিক্রম করা।
উপরের কথাগুলো কি আমরা কখনো চিন্তা করে দেখেছি? প্রশ্ন সকলের কাছে.......।
#নতুন বছরের আমাদের অঙ্গীকার ও
প্রত্যাশা:
১.হে
আল্লাহ আমাদের সকলকে ঋণমুক্ত করুন।
২.অভাবমুক্ত
করুন।
৩.হতাশামুক্ত
করুন।
৪.রোগমুক্ত
করুন।
৫.দুশ্চিন্তামুক্ত
করুন।
৬.শত্রুমুক্ত
করুন।
৭.করোনা
মুক্ত করুন।
৮.একটি
সুন্দর জীবন দান করুন।
পুরাতন বছরের সকল ভুল ক্রটি ও পাপ অন্যায় সকল অপরাধ আল্লাহ
সকলকে ক্ষমা করুন। নববর্ষের নব উদ্যোমে আগামীর পথ চলা শুরু হোক এই প্রত্যাশা মহান
আল্লাহ তায়ালার দরবারে।
#আমাদের অন্তরে একটি জিজ্ঞাসা:
আল্লাহ তা’য়ালা তো
আমাদের কে আনন্দ করার জন্য সৃষ্টি করেন নি, সৃষ্টি করছেন তার ইবাদাত করার জন্য। আমরা কি তা করছি? আমাদের অন্তরে একটি জিজ্ঞাসা! মানুষ আসে মানুষ যায়। কোথা থেকে
আসে? কেন আসে? কোথায় যায়? দিন যত
যায়,
রাত যত যায়, বয়স যত বাড়ে একজন বিবেকবান মানুষ তার মনকে এই প্রশ্নগুলো
বিদ্ধ করা চাই,
কেন এলাম? কি করছি? কোথায়
যাবো?
এই প্রশ্নগুলো যার অন্তরে
থাকবে প্রক্রিতপক্ষে সেই বুদ্ধিমান। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রতিটি কাজের হিসাব নিয়ে তার উপযুক্ত বদলা দিবেন।
যেমটি পবিত্র কুরআনের ঘোষণা। আল্লাহ
তা’য়ালা বলেন,
فَمَنْ
يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ (7) وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ
شَرًّا يَرَهُ (8)
অতঃপর কেউ
অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে
পাবে। (সূরা যিলযাল-৯৯:৭,৮)
শেষকথা:
এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা এবং মুসলিম সমাজ
থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান
অনুযায়ী। আল্লাহ! আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান
করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com