Saturday, January 01, 2022

মৃত্যু ও পরকালীন জীবন

 


মৃত্যু ও পরকালীন জীবন

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার

ভূমিকা:

    এ ক্ষণস্থায়ড দুনিয়া হতে প্রত্যেক প্রাণী আল্লাহর দেয়া নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর আল্লাহর দরবারে চলে যাওয়াই হলো মৃত্যু। প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যু আল্লাহতায়ালার কাছে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মৃত্যুর দিন, তারিখ, সময় সবই নির্ধারিত, নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোন প্রাণীর মৃত্যু হবে না এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরও কেউ জীবিত থাকবে না।

    পরকালের আরবী শব্দ আখিরাতআর আখিরাত অর্থ শেষ পরিণতি, ইংরেজীতে যাকে বলে Heareafter. পরিভাষায়: মৃত্যুর পর হতে মানুষের যে অনন্ত জীবনকাল আরম্ব হবে তাকে আখিরাত বা পরকাল বলে।

  

মৃত্যু:

    মৃত্যুই প্রতিটি জীবনের অমোঘ পরিণতি। নিজের মৃত্যু আমরা চাইনা, উপরন্ত মৃত্যুর কথা চিন্তাও করতে চাই না। অপনজনদের মৃত্যুতে ব্যথিত হই। কিন্তু শত আপত্তি, বেদনা আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও মৃত্যুই জীবনের বড় সত্য। আরো বড় সত্য হলো কখন মরব তা আমরা কেউই জানি না। জীবনের জন্য আমরা এত লালায়িত সে জীবনটি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের তুলনায় কিছুই নয়। এজন্য  জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে মৃত্যুর প্রস্ততি নেওয়া দরকার।

মৃত্যু যে অনিবায সত্য সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ (سورة ال عمران ــ 185)

প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান পাবে। (সুরা আলে-ইমরান-/১৮৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (سورة الجمعة ــ 8)

আপনি বলে দিন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করছ, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখোমুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদের কে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। (সূরা জুমুআহ-৬২/)

হাদীসে এসেছে,

 

যে একান্তই বাধ্য হলে কেউ বলতে পারে, হে আল্লাহ, যতক্ষণ আমার জন্য জীবন কল্যাণকর ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখুন। আর যখন আমার জন্য মৃত্যু অধিকতর কল্যাণকর হয় তখন আমাকে মৃত্যূ দিন। (বুখারী, আস-সহীহ-/২১৪৬,২৩৩৭; মুসলিম-/২০৬৪)

অন্য হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَشْهَدُ لَهُ أَرْبَعَةٌ أَهْلُ أَبْيَاتٍ مِنْ جِيرَانِهِ الْأَدْنَيْنَ، إِلَّا قَالَ: قَدْ قَبِلْتُ عِلْمَكُمْ فِيهِ، وَغَفَرْتُ لَهُ مَا لَا تَعْلَمُونَ " (احمد ـــ 13541)

হযতর আনাস (রা:) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূল (.) বলেছেন, যদি কোনো মুসলিমের মৃত্যুর পরে তার নিকটতম প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে ৪ (চার) ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, তারা তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া খারাপ কিছুই জানে না তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। (হাকিম, আল-মুসতাদরাক-/৫৩৪; আমাদ-১৩৫৪১; আল-মুসনাদ-/৪০৮,/২৪২; আলবানী, আহকামুল জানাইয-৪৫পৃ. হাদীসটি সহীহ)

 

সৌভাগ্যের মৃত্যুর আমল ও উপায়

 

১.আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন

ঈমান মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে এবং এর ওপর অবিচল থাকে মৃত্যুর সময় তার কোনো যন্ত্রণা থাকে না; বরং তার শেষ পরিণাম শুভ হয়। ইরশাদ হয়েছে,

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (13) أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (14)

নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ অতঃপর অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময়) তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিকারী! তারা তথায় চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করত, এটা তারই প্রতিফল। (সুরা : আহকাফ-৪৬ : ১৩-১৪)

 

২.সৎ ও ভালো কাজে আত্মনিয়োগ

কোনো মুমিনের শেষ পরিণাম ভালো হওয়ার আলামত হলো, মৃত্যুর আগেই যাবতীয় পাপ থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা এবং সৎকাজ ও আল্লাহর আনুগত্যের তাওফিকপ্রাপ্ত হওয়া।

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ فَقِيلَ: كَيْفَ يَسْتَعْمِلُهُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: يُوَفِّقُهُ لِعَمَلٍ صَالِحٍ قَبْلَ الْمَوْتِ.(ترمذى ــ 2142)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাহকে  মৃত্যুবরণের আগে সৎ কাজের সুযোগ দান করেন। (তিরমিজি-২১৪২)

 

৩.শেষ কথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

বিখ্যাত সাহাবি মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ " ( مسند احمد ـــ 22034)

যে ব্যক্তির শেষ কথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহহবে (অর্থাৎ এই কলেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ-২২০৩৪)

সুতরাং মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘবে অধিক পরিমাণে এই কলেমা পাঠের বিকল্প নেই।

 

৪.আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ

মুমিনমাত্রই আল্লাহর প্রতি এই সুধারণা পোষণ করবে যে তিনি অবশ্যই মৃত্যুর সময় বান্দার মৃত্যু কষ্ট লাঘব করবেন। কারণ আল্লাহর প্রতি যে যেমন ধারণা করবে আল্লাহ তার সঙ্গে এমন আচরণই করবেন। এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي، (بخارى ــ 7405)

আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি (আচরণ করি)। আমি তার সঙ্গে থাকি। (বুখারী-৭৪০৫)

অন্য হাদিসে জাবির (রা.) বলেন,

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَبْلَ وَفَاتِهِ بِثَلَاثٍ، يَقُولُ: «لَا يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ بِاللهِ الظَّنَّ» (مسلم ـــ 2877) شملا ــ81)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (মুসলিম-৭১২১,মুসলিম-২৮৭৭ ইফা-৬৯৬৫;ইসে-৭০২৩; শামেলা-৮১)

 

৫.সালাতের প্রতি যত্নশীল

যারা ফরজ ও সুন্নত সালাতের প্রতি যত্নশীল হবে মহান আল্লাহ তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করবেন এবং জান্নাতে তাদের বিশেষ স্থান দেবেন। নবী (স.) বলেছেন,

 

যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সংরক্ষণ করবে তথা যথাযথভাবে অজু করে যথা সময়ে উত্তমরূপে রুকু-সিজদা করে সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। (মুসনাদে আহমদ-৪/২৬৭)

তা ছাড়া সুন্নত সালাতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً مِنَ السُّنَّةِ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الجَنَّةِ: أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ العِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الفَجْرِ.

যে ব্যক্তি সব সময় ১২ রাকাত সুন্নত সালাত আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। এ সুন্নতগুলো হলো, জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের (ফরজের) পর দুই রাকাত। এশার (ফরজের) পর দুই রাকাত এবং ফজরের (ফরজের) আগে দুই রাকাত।  (তিরমিযী-৪১৪)

 

৬.পুণ্যের কাজে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা

প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো পুণ্যের কাজ পছন্দ করা। ভালো কাজের প্রচেষ্টা করা। আর পুণ্যের কাজে প্রচেষ্টা মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَنَائِعُ الْمَعْرُوفِ تَقِي مَصَارِعَ السُّوءِ، وَصَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ، وَصِلَةُ الرَّحِمِ تَزِيدُ فِي الْعُمُرِ»

ভালো ও পুণ্যের কাজ খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রাখে, গোপনে দান আল্লাহর ক্রোধ ঠাণ্ডা করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বয়স বৃদ্ধি করে। (তাবরানি কাবির-৮০১৪)

 

৭.বেশি পরিমাণে মৃত্যুর স্মরণ

মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করার বড় একটি উপকার হচ্ছে, অন্তর থেকে দুনিয়ার আসক্তি দূর হয় এবং পরকালের চিন্তা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ يَعْنِي الْمَوْتَ.

সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। (তিরমিযী-২৩০৭)

.কবর জিয়ারতে মৃত্যুর স্মরণ

কবর জিয়ারত মৃত্যু ও আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অন্তরে কবরের শাস্তির ভয়াবহতা সৃষ্টি করে। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তওবা এবং মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণে সাহায্য করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ-১৫৭১)

 

মৃত্যু কী?

ডার্টমুথের নিউরোলজি অ্যান্ড মেডিসিনের প্রফেসর জেমস বারনাট বলেন, ‘‘কোনো ধরনের লাইফ সাপোর্টে না থাকা কোনো ব্যক্তির হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে বা কয়েক মিনিট রক্ত সঞ্চালন বন্ধ থাকলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’’ এটা মৃত্যুর প্রথাগত বা প্রচলিত ধারণা। এ রকম আরও ধারণা রয়েছে। তবে মৃত্যুর কোনো সুনির্দিষ্ট মুহূর্ত নেই বা এমন কোনো সুনির্দিষ্ট একটি মুহূর্ত নেই, যখন একজন ব্যক্তির সর্বাঙ্গ একসঙ্গে মারা যায়। মৃত্যুর আগে শরীরে ধারাবাহিক ছোট ছোট মৃত্যু ঘটে।

জেমস বারনাট বলেন, মৃত্যুর দুটি সংজ্ঞা রয়েছে। প্রথাগত একটি সংজ্ঞা হলো কোনো ধরনের লাইফসাপোর্টে না থাকা ব্যক্তির রক্ত সঞ্চালন ও শ্বাসযন্ত্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া।

অপর স্নায়বিক সংজ্ঞা হলো মস্তিষ্কের মৃত্যু এর মানে মস্তিষ্কের সব ধরনের ক্রিয়াকলাপ ও সক্ষমতা অপরিবর্তনীয় বা স্থায়ীভাবে স্থগিত হয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চালু থাকতে পারে। তবে কিছু দেশ এবং ধর্ম মস্তিষ্কের মৃত্যুকে মৃত্যু বলে গ্রহণ করে না। তবে বেশির ভাগই গ্রহণ করে থাকে। কারণ, আমাদের প্রযুক্তি এখন অত্যাধুনিক। তবে এরপরও আমরা আরও কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারি, যা মৃত্যুর ঘোষণার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, অল্প কিছু স্নায়ু যদি সচল থাকে, তবে কি তা মস্তিষ্কের মৃত্যুর এই সংজ্ঞার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? পূর্ণাঙ্গ মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘোষণার আগে মস্তিষ্কের কতটুকু অংশ মৃতহওয়া প্রয়োজন? শরীরের অন্যান্য অংশ কতটা সময় কার্যকর থাকে?

কেনেডি ইনস্টিটিউট অব এথিকসের রবার্ট ভেচ বলেন, মৃত্যুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা মূলত একটি ধর্মীয় বা দার্শনিক প্রশ্ন।

জীববিজ্ঞানের ভাষায়, প্রাণ আছে এমন কোনো জৈব পদার্থ বা জীবের জীবনের সমাপ্তিই হলো মৃত্যু। তা হলে জীবন কী? গবেষক, শিক্ষক ও লেখক অধ্যাপক আহমদ শরীফ সংক্ষেপে জীবনের সংজ্ঞায় বলেছিলেন, ‘জাগ্রত সময়ের অনুভূত চেতনার সমষ্টিই জীবন।তাহলে এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, চেতনার স্থায়ী বিনাশই হলো মৃত্যু। অর্থাৎ মস্তিষ্কের মৃত্যু মানেই মৃত্যু। তবে এ ক্ষেত্রেও রয়েছে জটিলতা। মস্তিষ্কের মৃত্যু হলে চিকিৎসকেরা রোগীকে মৃত জ্ঞান করেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করতে পারেন না যতক্ষণ পর্যন্ত হৃৎস্পন্দন বন্ধ না হয়। ডা: মাহফুজ উল্লাহ বলেন, স্থায়ীভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ না হলে কাউকে মৃত ঘোষণা করা যায় না। এ জন্য চিকিৎসকেরা প্রয়োজনে ইসিজি করে নিশ্চিত হন।

 

পরকালীন জীবন:

প্রত্যেক মুসলমান এ কথা বিশ্বাস করে যে দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন নয়। মৃত্যুর পর রয়েছে অনন্তকালের জীবন। ইসলামের পরিভাষায় সেটাকে আখিরাত বা পরকাল বলা হয়। পরকালে দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসাব-নিকাশ হবে। ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান ও প্রতিফল দেওয়া হবে। পরকালে গোটা জীবনের প্রতিটি কাজ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। পরকালে সব মানুষ বিশেষভাবে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হবে, সেগুলোর কয়েকটি এখানে আলোচনা করা হলো

১. কবরে তিন প্রশ্ন:

পরকালের প্রথম ধাপ হলো কবর। কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। বারা বিন আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবরে মানুষকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে।

مَنْ رَبُّكَ، وَمَا دِينُكَ، وَمَنْ نَبِيُّكَ

এক. তোমার রব কে? দুই. তোমার দ্বিন কী? তিন. এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল? (আবু দাউদ-৪৭৫৩; তিরমিযী-৩১২০)

কবরবাসী যদি মুমিন হয়, তাহলে এসব প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারবে। আর যদি কাফির হয়, তাহলে বলবে, আফসোস! আমি কিছুই জানি না বলতে থাকবে

২. সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন:

হক দুপ্রকার। এক. আল্লাহর হক। দুই. বান্দার হক। আল্লাহর হকগুলির মধ্যে ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে সালাতের। যেমন আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

«إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ النَّاسُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ أَعْمَالِهِمُ الصَّلَاةُ»، قَالَ: " يَقُولُ رَبُّنَا جَلَّ وَعَزَّ لِمَلَائِكَتِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ: انْظُرُوا فِي صَلَاةِ عَبْدِي أَتَمَّهَا أَمْ نَقَصَهَا؟ فَإِنْ كَانَتْ تَامَّةً كُتِبَتْ لَهُ تَامَّةً، وَإِنْ كَانَ انْتَقَصَ مِنْهَا شَيْئًا، قَالَ: انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ؟ فَإِنْ كَانَ لَهُ تَطَوُّعٌ، قَالَ: أَتِمُّوا لِعَبْدِي فَرِيضَتَهُ مِنْ تَطَوُّعِهِ، ثُمَّ تُؤْخَذُ الْأَعْمَالُ عَلَى ذَاكُمْ  

নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন মানুষের আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। রাসুল (সা.) আরো বলেন, আমাদের রব ফেরেশতাদের বলবেনঅথচ তিনি সর্বাধিক অবগত, তোমরা আমার বান্দার সালাত দেখো, সে তা পরিপূর্ণ করেছে, নাকি অসম্পূর্ণ রেখেছে। যদি পরিপূর্ণ হয়, তাহলে পূর্ণই লেখা হবে। আর যদি তাতে কিছু কমতি থাকে, তাহলে তিনি বলবেন, তোমরা দেখো আমার বান্দার কোনো নফল (সালাত) আছে কি না। যদি তার নফল সালাত থাকে তিনি বলবেন, আমার বান্দার ফরজের ঘাটতিকে নফল দ্বারা পূর্ণ করো। অতঃপর এভাবেই অন্য আমলসমূহকে গ্রহণ করা হবে। (আবু দাউদ-৮৬৪)

অন্য হাদীসে এসেছে,

إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ العَبْدُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلاَتُهُ، فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ، فَإِنْ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ، قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ فَيُكَمَّلَ بِهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ يَكُونُ سَائِرُ عَمَلِهِ عَلَى ذَلِكَ

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কারো সালাত যদি সঠিক হয়, তাহলে সে সফলকাম ও কৃতকার্য হবে। আর সালাত যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (তিরমিযী-৪১৩; নাসাঈ-৪৬৫)

অর্থাৎ ছালাত যদি শুদ্ধ হয়, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম-কুঊদ, খুশু-খুযূ সহ সময় মত আদায় করে। আর যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তথা আদায় করেনি অথবা অশুদ্ধ হয়েছে অথবা গৃহীত হয়নি, তাহলে সে ছওয়াব লাভে ব্যর্থ হবে এবং শাস্তি ভোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আর বান্দার হকগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম বিচার করা হবে অন্যায় রক্তপাত বা হত্যার। যেমন ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেন,

أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ الصَّلَاةُ، وَأَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ فِي الدِّمَاءِ

সর্বপ্রথম বান্দার ছালাতের হিসাবে নেয়া হবে। আর মানুষের পরস্পরের মাঝে সর্বপ্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত বা অন্যায় হত্যারউল্লেখ্য, হাদীছের আলোকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর হক ও বান্দার হকের মধ্যে সর্বপ্রথম আল্লাহর হকের হিসাব নেয়া হবে।

৩. বিশেষ পাঁচ বিষয়ে প্রশ্ন

ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন,

لاَ تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ، عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ، وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَ أَبْلاَهُ، وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ، وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ

কিয়ামতের দিন পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত আদম সন্তানের পা তার প্রতিপালকের সামনে নড়বে না। (তাকে প্রশ্ন করা হবে) তার জীবনকাল সম্পর্কে, সে তা কিভাবে কাটিয়েছে। তার যৌবনকাল সম্পর্কে, সে তা কিভাবে শেষ করেছে। তার সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোন পথে ব্যয় করেছে। আর সে যে জ্ঞান অর্জন করেছে, সে বিষয়ে কী আমল করেছে।’ (তিরমিযী-২৪১৬)

৪. আল্লাহর নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন:

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে দুনিয়াতে অসংখ্য নেমত দান করেছেন। তিনি বলেন, وَإِن تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاতোমরা যদি আল্লাহর নেমতকে গণনা কর, তাহলে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না (সূরা নাহল-১৬/১৮)

আর এ সকল নেমত সম্পর্কে তিনি তাঁর বান্দাদের জিজ্ঞেস করবেন, যাতে সে তা স্বীকৃতি দেয় এবং এর হক আদায় করেছে কি না তা জানতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন,

ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ

তোমরা সেদিন অবশ্যই নেমতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে (তাকাছুর-১০২/৮)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,

عَن أبي هريرةَ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْم وَلَيْلَة [ص:1225] فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ: «مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ؟» قَالَا: الْجُوعُ قَالَ: «وَأَنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُمَا قُومُوا» فَقَامُوا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِي بَيْتِهِ فَلَمَّا رَأَتْهُ المرأةُ قَالَت: مرْحَبًا وَأهلا فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيْنَ فُلَانٌ؟» قَالَتْ: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ إِذْ جَاءَ الْأَنْصَارِيُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكرمَ أضيافاً مني قَالَ: فانطَلَق فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ: كُلُوا مِنْ هَذِهِ وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكَ وَالْحَلُوبَ» فَذَبَحَ لَهُمْ فَأَكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِذْقِ وَشَرِبُوا فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النعيمُ» . رَوَاهُ مُسلم

রাসূল (স.) একদা দিনে অথবা রাতে বেরিয়ে পড়েন। হঠাৎ আবু বকর ও উমরের সাথে তার দেখা হল। তিনি তাদের দুজনকে বললেন, ‘কোন প্রয়োজন তোমাদেরকে এই সময়ে বাড়ি থেকে বের করেছে’? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (স.)! ক্ষুধা। তিনি বললেন, ‘আমিও তাই। সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, আমাকে সে জিনিসই ঘর থেকে বের করেছে যা তোমাদেরকে বের করেছে। চল দেখিফলে তাঁরাও তাঁর সাথে চলতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তারা একজন আনছারী লোকের বাড়িতে এসে পৌঁছলেন। দেখলেন তিনি বাড়িতে নেই। তবে তার স্ত্রী রাসূল (স.)-কে দেখতে পেয়ে বললেন, মারহাবা! সুস্বাগতম! রাসূল (স.) তাকে বললেন, অমুক কোথায়? তিনি বললেন, আমাদের জন্য সুস্বাদু পানি আনতে গেছেন। ঠিক তখনি আনছারী লোকটি আসলেন। এসে রাসূল (স.) ও তাঁর দুই সাথীকে দেখে বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ! আজ আমার চেয়ে সম্মানিত অতিথি আর কেউ পায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি গিয়ে এক গুচ্ছ ফল নিয়ে এলেন, যাতে রয়েছে শুকনো, পাকা ও কাঁচা খেজুর। তারপর বললেন, আপনারা এগুলি থেকে খেতে থাকুন। এই বলে তিনি ছুরি নিলেন। রাসূল (স.) তাকে বললেন, ‘সাবধান দুধওয়ালা (ছাগল) যবাই করো নাতিনি তাঁদের জন্য (ছাগল) যবেহ করলেন এবং তারা সেই ছাগলের গোস্ত ও থোকা থেকে ফল খেলেন এবং পানও করলেন। যখন তারা তৃপ্ত ও পিপাসামুক্ত হলেন, তখন রাসূল (স.) আবূ বকর ও উমরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তোমরা এই নেমত সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে বাড়ি থেকে বের করেছিল, অতঃপর তোমরা ফেরার পূর্বেই এই নেমত পেয়ে ধন্য হলে।(মুসলিম-২০৩৮; মিশকাত-৪২৪৬)

তিরমিযী শরিফের হাদীসে এসেছে, রাসূল (স.) বলেন,

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مِنَ النَّعِيمِ الَّذِي تُسْأَلُونَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ظِلٌّ بَارِدٌ وَرُطَبٌ طَيِّبٌ وَمَاءٌ بَارِدٌ

সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন যে সকল নেমত সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে তা হ, শীতল ছায়া, পবিত্র খেজুর ও ঠান্ডা পানীয়। (তিরমিযী-২৩৬৯)

রাসূল (স.) আরো বলেন,

إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِي الْعَبْدَ مِنْ النَّعِيمِ أَنْ يُقَالَ لَهُ أَلَمْ نُصِحَّ لَكَ جِسْمَكَ وَنُرْوِيَكَ مِنْ الْمَاءِ الْبَارِدِ

নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন বান্দা সর্বপ্রথম যে নেমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে তা হল তাকে বলা হবে, আমরা কি তোমার শরীরকে সুস্থ রাখিনি এবং ঠান্ডা পানি দ্বারা তোমাকে পরিতৃপ্ত করিনি’? (তিরমিযী-৩৩৫৮; মিশকাত-৫১৯৬)

আর নেমতের হক হল এর শুকরিয়া আদায় করা, অর্থাৎ আল্লাহর নেমত সম্পর্কে বলা, তাঁর আনুগত্যে এবং বৈধ কাজে সেগুলিকে ব্যবহার করা। যদি কোন ব্যক্তি এগুলি করে, তাহলে সে যেন এসবের হক আদায় করল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। সে আল্লাহর সন্তষ্টি লাভেও ধন্য হবে। আর যদি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে, তাহলে সে যেন নেমতকে অস্বীকার করল।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (স.) বলেন,

إِنَّ الله لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا

আল্লাহ্ তাআলা ঐ বান্দার ওপর অবশ্যই সন্তষ্ট হন, যে কোন খাদ্য খেলে এর জন্য তাঁর প্রশংসা করে। অথবা কোন পানীয় পান করলে এর জন্য তাঁর প্রশংসা করে

৫. অঙ্গ-প্রতঙ্গ সম্পর্কে প্রশ্ন:

আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولًا

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’ (সূরা বনী ইসরাঈল-১৭/৩৬)

কাতাদাহ (রহঃ) বলেন,

لا تقل رأيت ولم تر، وسمعت ولم تسمع، وعلمت ولم تعلم، فإن الله تعالى سائلك عن ذلك كله

তুমি বল না যে, আমি দেখেছি অথচ আদৌ দেখনি। আমি শুনেছি অথচ আদৌ শুননি। আমি জানি অথচ জানো না। কেননা আল্লাহ তাআলা এসবকিছু সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করবেন

কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর এসবকিছুই মহান রবের দেয়া বড় নেমত। আর এগুলি সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন আমাদের জিজ্ঞেস করা হবে, সেগুলি কি আল্লাহর আনুগত্যে ও সৎকাজে ব্যবহার করে এগুলির শুকরিয়া আদায় করা হয়েছে, না এগুলি আল্লাহর অবাধ্য ও পাপাচারের কাজে লাগানো হয়েছে? সুতরাং এগুলির সদ্ব্যবহার করতঃ শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কিন্ত অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে গাফেল। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ هُوَ الَّذِي أَنشَأَكُمْ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ

বল, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দান করেছেন কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়। কিন্তু তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর (সূরা মুলক-৬৭/২৩)

৬. জিহাদ, ইলম ও সম্পদের প্রশ্ন:

ক্বিয়ামতের দিন বান্দাকে আল্লাহ প্রদত্ত যে সকল বড় নেমত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে তন্মধ্যে রয়েছে ইলম, সম্পদ ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। তার কাছে জানতে চাওয়া হবে, সে এগুলোর ক্ষেত্রে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা যথাযথ আদায় করেছে কি-না? সে কি এগুলির হেফাযত করেছে, না সেগুলি নষ্ট করেছে?

«إِن أول النَّاس يقْضى عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أَمر بِهِ فسحب على وَجهه حَتَّى ألقِي فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعلم ليقال عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ [ص:72] نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল (স.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে লোকটির ফায়ছালা করা হবে সে হল একজন শহীদ। তাকে নিয়ে আসা হবে। তাকে তার নেমতগুলি স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে এবং সেও তা চিনতে পারবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি এবিষয়ে কি আমল করেছ? সে বলবে, আমি তোমার রাস্তায় যুদ্ধ করেছি, এমনকি শাহাদত বরণও করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি যুদ্ধ করেছ এজন্য যে, তোমাকে যেন বীর বলা হয়। আর তা বলাও হয়েছে।

অতঃপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে টেনেহেঁচড়ে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে। ফলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আর এক ব্যক্তি যে জ্ঞান অর্জন করেছে এবং তা অন্যকে শিক্ষাও দিয়েছে। আর সে কুরআন তিলাওয়াত করতো। তাকে নিয়ে আসা হবে। তিনি তাকে তার নেমতগুলি স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সে তা স্মরণ করবে। তিনি তাকে বলবেন, তুমি এসব নেমতের কি আমল করেছ? সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা অন্যকেও শিক্ষা দিয়েছিতোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন তিলাওয়াতও করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ যাতে তোমাকে বলা হয় সে আলিম এবং কুরআন পড়েছ যাতে তোমাকে বলা হয় সে ক্বারী। আর তা বলাও হয়েছে।

অতঃপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে, ফলে তাই করা হবে। অতঃপর আরেক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ অনেক প্রাচুর্য দান করেছেন। সর্বপ্রকার সম্পদ তাকে দিয়েছেন। তাকেও নিয়ে আসা হবে। তাকে তার নেমতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে এবং সেও তা স্মরণ করবে। তাকে বলবেন, তুমি এসবের ব্যাপারে কি আমল করেছ? সে বলবে, যে পথে খরচ করলে তুমি সন্তষ্ট হও এমন সব ক্ষেত্রে আমি তোমার সন্তষ্টির জন্যে খরচ করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি তা করেছ যাতে তোমাকে বলা হয় দানবীর। সুতরাং তা বলা হয়েছে। অতঃপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে, ফলে তাই করা হবে(মুসলিম-১৯০৫; মিশকাত-২০৫)

৭. ওয়াদা ও অঙ্গীকার সম্পর্কে প্রশ্ন:

ক্বিয়ামতের দিন আমাদের দেয়া অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,

وَأَوْفُواْ بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولًا

আর তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে (বনী ইসরাঈল-১৭/৩৪)তিনি আরো বলেন,

وَلَقَدْ كَانُوا عَاهَدُوا اللهَ مِن قَبْلُ لَا يُوَلُّونَ الْأَدْبَارَ وَكَانَ عَهْدُ اللهِ مَسْؤُولًا

অথচ তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে নাবস্ত্ততঃ আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করা হবে (সূরা আহযাব-৩৩/১৫)

৮. কুফর ও শিরক সম্পর্কে প্রশ্ন:

দুনিয়াতে যারা কুফরী করে ও আল্লাহর সাথে শরীক করে, তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। মহান আল্লাহ্ বলেন,

تَاللهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ

আল্লাহর কসম! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর, সে বিষয়ে অবশ্যই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে (সূরা নাহল-১৬/৫৬)

তিনি আরো বলেন,

ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيهِمْ وَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنْتُمْ تُشَاقُّونَ فِيهِمْ قَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ إِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوءَ عَلَى الْكَافِرِينَ

এরপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেন, কোথায় আমার শরিকরা, যাদের কারণে তোমরা (নবীদের সঙ্গে) শত্রুতা করতে? তখন (ফেরেশতা বা মুমিনরা) যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, তারা বলবে, নিশ্চয়ই সব লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল আজ শুধু কাফিরদের জন্যই। (সুরা নাহল-১৬/২৭)

৯. ফেরেশতাগণের প্রতি মিথ্যারোপ সম্পর্কে :

দুনিয়াতে এক শ্রেণীর মানুষ ফেরেশতাগণের প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং তাদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলে, তারা নাকি নারী জাতি। এমনকি তারা তাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। এমর্মে মহান আল্লাহ্ বলেন,

وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَنِ إِنَاثًا أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ

আর তারা ফেরেশতাদের নারী গণ্য করে, যারা দয়াময়ের বান্দা। তবে কি তারা তাদের সৃষ্টির সময় উপস্থিত ছিল? তাদের (এখনকার) সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা হবে এবং (কিয়ামতের দিন) তারা জিজ্ঞাসিত হবে (সূরা যুখরুফ-৪৩/১৯)

১০. রাসূলগণের দাওয়াতে সাড়া দেয়া সম্পর্কে:

আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাঁদের উম্মতদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তারা তাঁদের দাওয়াত কবুল করেছে কি-না? এমনকি তিনি তাঁর রাসূলগণকেও জিজ্ঞেস করবেন, তাঁরা তাঁদের ওপর অর্পিত রিসালতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন কি-না? তাঁরা স্বীয় উম্মতদের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছেন কি-না? মহান আল্লাহ বলেন,

ماذا أجبتم المرسلين

সেদিন তাদের ডেকে আল্লাহ বলবেন, নবীদের আহবানে তোমরা কিরূপ সাড়া দিয়েছিলে? (সূরা ক্বাছাছ-২৮/৬৫)

তিনি আরো বলেন,

فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ

অতঃপর যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলগণকে অবশ্যই আমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসাবাদ করব (সূরা রাফ-৭/৬)

এ আয়াতের তাফসীরে ইবনু জারীর ত্বাবারী (রহঃ) বলেন, ‘যাদের নিকট আমি আমার রাসূলগণকে পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করব, আমার পক্ষ থেকে রাসূলগণ তাদের নিকট যে আদেশ-নিষেধ নিয়ে এসেছিলেন, তারা তা অনুযায়ী কি আমল করেছে? আমি তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছি তারা কি তা পালন করেছে, আমি যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করেছিলাম তারা কি তা থেকে বিরত থেকেছে এবং আমার আনুগত্য মেনে নিয়েছে? না তারা আমার অবাধ্য হয়েছে এবং সেগুলির বিরোধিতা করেছে? আমি যে সকল রাসূলগণকে উম্মতদের নিকট পাঠিয়েছি তাঁদেরকেও জিজ্ঞেস করব, তাঁরা কি তাদের নিকট আমার রিসালত পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে আমি যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম তা কি আদায় করেছেন, না তাঁরা এ ব্যাপারে কমতি করেছেন, ফলে তাঁরা অবহেলা করেছেন এবং তাদের নিকট তা পৌঁছে দেননি’? (তাফসীরে ত্বাবারী-১২/৩০৫-৩০৬ পৃঃ)

 

উপসংহার

পরিশেষে আল্লাহ্ তাআলা যেন আমাদেরকে দ্বীনের ওপরে চলা এবং খাঁটি মুসলিম ও মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফীক্ব দান করেন। সৎ আমল করা এবং কবর সহ পরকালের সকল স্তরে হিসাব সহজ করে দেন। ক্বিয়ামতের দিন যাবতীয় ফিৎনা থেকে আমাদের রক্ষা করে পুলছিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। তার অশেষ রহমতে আমাদেরকে তাঁর জান্নাত লাভে ধন্য করেন-আমীন

 

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com