Monday, January 03, 2022

মুমিন জীবনের বৈশিষ্ট্য

মুমিন জীবনের বৈশিষ্ট্য

এম এ রাজ্জাক হাওলাদার 

ভূমিকা:

মানুষের মধ্যে যাদের ঈমান রয়েছে মহান আল্লাহর প্রতি, রাসূলগণের প্রতি, ফেরেশতাগণের প্রতি, আসমানী গ্রন্থসমূহের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি তারাই মুমিন। আমাদের সমাজে দাবীদার অনেক মুমিন রয়েছেন কিন্তু তাদের মধ্যে মুমিনের বৈশিষ্ট্য আছে কি না তা খুঁজে দেখা দরকার। তাই আমাদের আজকের বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয়েছে মুমিন জীবনের বৈশিষ্ট্য। 

মুমিন জীবনের বৈশিষ্ট্য:

    মুমিনতো তারা যারা আল্লাহর হুকুম আহকামে জীবন সাজাতে পেরেছে। তাই মুমিনের জীবনের কতিপয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিম্নে আলোচনা করছি।

ক.বিনয়-নম্র:

    আল-কুরআনের আলোকে বলতেগেলে ঐ সুরাটির কথা স্মরণ আসে তা হলো:

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্র; যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে এবং যারা তাদের সালাতসমূহ হেফাযত করে। তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে। (সূরা মুমিনূন-২৩: ০১-১১)

২.আল্লাহর ভয় অন্তর প্রকম্পিত হয়:

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنْفَالِ قُلِ الْأَنْفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম। বলে দিন, গণীমতের মাল হলো আল্লাহর এবং রাসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য কর-যদি ঈমানদার হয়ে থাক। যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। সে সমস্ত লোক যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তারাই হল সত্যিকার ঈমানদার! তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রুযী। (সূরা আনফাল-৯৬: ০১-০৪)

৩.মতবিরোধে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা নিসা-: ৫৯)

৪.আল্রাহর বিধান বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর:

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশকরে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করার কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।(সূরা নূর-২৪: ০২)

৫.সুদ-ঘুষ বর্জন করা:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। (সূরা বাকারা-: ২৭৮-২৭৯)

৬.ইহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করা:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। (সূরা মায়েদা-: ৫৭)

৭.নেক/কল্যাণ কাজে অগ্রনী ভুমিকা পালন:

إنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ

নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে সালাত ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তাওবা-: ৫৭)

৮.একজন মুমিন মুমিনের বন্ধু:

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা'আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সূরা তাওবা-: ৭১)

হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَامِرٍ، قَالَ: سَمِعْتُهُ يَقُولُ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَرَى المُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ، كَمَثَلِ الجَسَدِ، إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالحُمَّى

নুমান ইবনে বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মুমিনদেরকে একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে আক্রান্ত হয়। (বুখারী : ৬০১১)

৯.মুমিনগণ দৃষ্টি নত রাখেন:

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। (সূরা নূর-২৪: ৩০-৩১)

১০. মদ, জুয়া, প্রতিমা পূজা ও লটারী থেকে দূরে থাকে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ

হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়েদাহ-: ৯০-৯১)

১১.গুনাহ বা অপরাধকে বড় করে দেখে:

عَنِ الحَارِثِ بْنِ سُوَيْدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ، حَدِيثَيْنِ: أَحَدُهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالآخَرُ عَنْ نَفْسِهِ، قَالَ: إِنَّ المُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ فَقَالَ بِهِ هَكَذَا، قَالَ أَبُو شِهَابٍ: بِيَدِهِ فَوْقَ أَنْفِهِ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, সে যেন একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি বর্ণনাকারী আবু শিহাব নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন। (বুখারী : ৬৩০৮)

১২. নিজের জন্য যা পছন্দ অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করা:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ - أَوْ قَالَ: لِجَارِهِ - مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ

আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজের জন্য যা পছন্দ কর তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। অপর বর্ণনায় প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে। (মুসলিম : ৭৪ ; বুখারী : ১৩)

১৩. খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করা:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার আনীত জীবন বিধানের বিপরীতে কোন ব্যক্তি তার মন্দ অভ্যাস পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না। (আস সুন্নাতু লিইবনে আসেম : ১৫)

১৪. ভালো কাজ মুমিনকে আনন্দ দেয় আর মন্দ কাজ ব্যথিত করে:

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: إِذَا سَرَّتْكَ حَسَنَتُكَ، وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَمَا الْإِثْمُ؟ قَالَ: إِذَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ شَيْءٌ فَدَعْهُ

আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (স.) কে জিজ্ঞাসা করল, ঈমান কি? মহানবী (স.) বললেন, যখন ভালো কাজ তোমাকে আনন্দ দেবে এবং মন্দ কাজ তোমাকে ব্যথিত করবে তখন তুমি মুমিন। তিনি বললেন, গুনাহ কি? মহানবী (স.) বললেন, যখন কোন কিছু বিবেককে দংশন করে তবে তা ছেড়ে দিন। (আহমদ : ২২১৬৬)

১৫. লজ্জাশীল হওয়া:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ - أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ - شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশী অথবা ষাটটির কিছু বেশী। সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এ কথা স্বীকার করা, আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। (বুখারী : ০৯ ; মুসলিম : ৫৯)

১৬.সাধ্যানুযায়ী মন্দকাজে বাধাদান কর:

عَنْ ابى سعيد الخدرى رضى الله عنه سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ করতে দেখলে সে স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) প্রতিহত করবে। যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে মুখে তা প্রতিহত করবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে তবে অন্তর দ্বারা ঘৃণা করবে। আর এটাই ঈমানের সর্বনি¤œ স্তর। (মুসলিম : ৮১)

১৭. আমানতের হেফাজত ও ন্যায় পথে চলা:

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ مؤمنون

যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে। (সূরা মুমিনূন : ০৮)

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ , وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তির মধ্যে আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে ব্যক্তি প্রতিশ্রুতি পালন করে না তার দ্বীনদারী নেই। (শুয়াবিল ঈমান : ৪০৪৫)

১৮. গণকের কথায় বিশ্বাস না করা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে মিলিত হলো অথবা পিছন দিক থেকে মিলিত হলো অথবা গণকের কাছে গেল এবং গণক যা বললো তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মদ (স.)-এর উপর নাযিলকৃত কুরআনের বিরুদ্ধাচারণ করলো। (ইবনু মাজাহ : ৬৩৯)

১৯.খাদ্যাভ্যাসে পরিমাণে কম খাওয়া:

عَنْ نَافِعٍ، قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ، لاَ يَأْكُلُ حَتَّى يُؤْتَى بِمِسْكِينٍ يَأْكُلُ مَعَهُ، فَأَدْخَلْتُ رَجُلًا يَأْكُلُ مَعَهُ فَأَكَلَ كَثِيرًا، فَقَالَ: يَا نَافِعُ، لاَ تُدْخِلْ هَذَا عَلَيَّ، سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: المُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ، وَالكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ

নাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকীনকে ডেকে আনা হতো। একদা আমি তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসলাম। লোকটি খুব অধিক আহার করল। তিনি বললেন, নাফি! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে না। আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি, মুমিন এক পেটে খায়। আর কাফির সাত পেটে খায়। (বুখারী-৫৩৯৩)

২০.ভালো কথা বলা, প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া এবং মেহমানকে সম্মান করা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিম্বাস রাখে, সে যেন মেহমানের সম্মান করে। (বুখারী : ৬৪৭৫)

২১. প্রতিবেশীকে অভুক্ত না রাখা:

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْمُسَاوِرِ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:

 لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, যে নিজে পেট ভরে খায় অথচ তার পাশে প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে। (শুয়াবিল ঈমান : ৩১১৭)

২২. ব্যভিচার, মদপান, চুরি ও লুটতরাজ না করা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً، يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ حِينَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোন ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোন মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন লুটতরাজ মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে, যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে। (বুখারী : ২৪৭৫)

২৩. আল্লাহ ও রাসূলকে বেশী ভালোবাসা:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেঃ (ক) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া (খ) কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা এবং (গ) কুফুরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা। (বুখারী : ১৬)

২৪. আল্লাহকে খুশী করার জন্য কাউকে ভালোবাসা:

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ، وَأَبْغَضَ لِلَّهِ، وَأَعْطَى لِلَّهِ، وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الْإِيمَانَ

আবু উমামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (স.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশী করার জন্য কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহকে খুশী করার জন্য কাউকে ঘৃণা করে, আল্লাহকে খুশী করার জন্য কাউকে কিছু দেয় এবং আল্লাহকে খুশী করার জন্য কাউকে কিছু দিতে মানা করে। সে তার ঈমান পরিপূর্ণ করলো। (আবু দাউদ : ৪৬৮১)

২৫. আল্লাহকে রব, ইসলামকে ধর্ম এবং মুহাম্মদ (স.)-কে রাসূল হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা:

عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: ذَاقَ طَعْمَ الْإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا

আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেনঃ সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসাবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসাবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসাবে মুহাম্মদ (স.)-কে সন্তুষ্ট চিত্তে স্বীকার করে। (মুসলিম : ৫৭)

২৬. নিন্দা দোষারোপ না করা:

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الفَاحِشِ وَلاَ البَذِيءِ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, নিন্দাকারী, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষী হয় না। (আবু দাউদ : ১৯৭৭)

মুমিনদের যে আটটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ পছন্দ করেন:

আল্লাহ কাদের ভালোবাসেন? কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ এমন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে লোকের কথা উল্লেখ করেছেন, যাদের তিনি ভালোবাসেন এখানে আল্লাহর ভালোবাসার পাত্রদের থেকে আট প্রকার ব্যক্তি সম্পর্কে কুরআনের বিবরণ দেখে নেওয়া যাক

১.তওবাকারী

আল্লাহ ঐলোকদের ভালোবাসেন যারা বারবার আল্লাহর কাছে তওবা করে আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাকারার-২/২২২)

২.পবিত্রতা রক্ষাকারী

যারা নিজেদেরকে বিভিন্ন অপবিত্রতার হাত থেকে রক্ষা করে চলে, আল্লাহ তাদেরকেও ভালোবাসেন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,

لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيهِ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ

তুমি কখনো সেখানে দাড়াবে না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।” (সূরা তাওবা-/১০৮)

৩. সৎকর্মকারী

সৎকর্ম সম্পাদনকারী এবং সকল কাজে এহসান বা কল্যাণ অবলম্বনকারী ব্যক্তিদের আল্লাহ ভালোবাসেন কুরআনের ভাষায়,

وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা বাকারা-/১৯৫)

অন্য আয়াতে এসেছে,

فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ وَنَسُوا حَظًّا مِمَّا ذُكِّرُوا بِهِ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَى خَائِنَةٍ مِنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আল-মায়েদা-/১৩)

 ৪. আল্লাহকে ভয়কারী

নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করা ব্যক্তিদের আল্লাহ ভালোবাসেন কুরআনে আল্লাহ বলেন,

بَلَى مَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ وَاتَّقَى فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ

যে লোক নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ন করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে (তার প্রতি ভয়কারী) ভালবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান-/৭৬)

৫. আল্লাহর উপর নির্ভরকারী

যারা নিজেদের সকল কাজের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করুন, আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান-/১৫৯)

 ৬. ন্যায়পরায়ণ

ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের আল্লাহ ভালোবাসেন কুরআনে বলা হয়েছে,

 

سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّالُونَ لِلسُّحْتِ فَإِنْ جَاءُوكَ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ وَإِنْ تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَنْ يَضُرُّوكَ شَيْئًا وَإِنْ حَكَمْتَ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

এরা মিথ্যা বলার জন্যে গুপ্তচরবৃত্তি করে, হারাম ভক্ষণ করে। অতএব, তারা যদি আপনার কাছে আসে, তবে হয় তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিন, না হয় তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। যদি তাদের থেকে নির্লিপ্ত থাকেন, তবে তাদের সাধ্য নেই যে, আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে। যদি ফয়সালা করেন, তবে ন্যায় ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মায়েদা-/৪২)

অপর আয়াতে এসেছে,

وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা হুজরাত-৪৯/৯)

৭. ধৈর্যধারণকারী

আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের ভালোবাসেন কুরআনে তিনি বলেন,  

وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ

আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জিহাদ করেছে; আল্লাহর পথে তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর পথে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা ধৈর্যধারন করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান-/১৪৬)

৮. আল্লাহর পথে জিহাদকারী

আল্লাহর পথে যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের সবর্স্ব নিয়ে জিহাদ বা চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন কুরআনে বলা হয়েছে,

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ

আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” (সূরা সফ-৬১/৪)

আল্লাহ আমাদের এসকল বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাধ্যমে তার ভালোবাসা লাভের জন্য যোগ্য করে তুলুন

উপসংহার:

আজকের আলোচেনা থেকে আমরা মুমিন জীবনের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের কথা জানতে পারলাম। এবার মিলিয়ে দেখবো আমাদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না। না থাকলে আমরা এগুলো অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো। যাতে করে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সার্বিক কল্যাণ হাসিল করা যায়। আমিন।

  

No comments:

Post a Comment

razzakhowlader59@gmil.com