হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
এম এ
রাজ্জাক হাওলাদার
(১ম পর্ব)
ভুমিকা:
বৈধ ও
হালাল উপার্জনের উপর
নির্ভর করা এবং
অবৈধ ও হারাম
উপার্জন বর্জন করা
মুসলিমের জন্য অন্যতম
ফরয ইবাদত। শুধু
তাই নয়, এর
উপর নির্ভর করে
তার অন্যান্য ফরয
ও নফল ইবাদত
আল্লাহর নিকট কবুল
হওয়া বা না
হয়য়া। বিষয়টির গুরুত্ব
সম্পর্কে সচেতন না
হওয়ার কারণে অনেক
মুসলিম এ বিষয়ে
কঠিন বিভ্রান্তির মধ্যে
নিপতিত। অনেক ধার্মিক
মানুষ রয়েছেন যারা
সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদির
বিষয়ে অনেক সচেতন
হলেও হারাম উপার্জনের
বিষয়ে মোটেও সচেতন
নন। কুরআন-হাদীসের
দৃষ্টিতে এটি বক-ধার্মিকতা
ছাড়া কিছুই নয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা
বলেন,
يَا
أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا
تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ (سورة المؤمنون ــ 51)
হে রাসূলগণ,
তোমরা পবিত্র বস্তু
হতে আহার কর
এবং সৎকর্ম কর।
তোমরা যা কর
সে বিষয়ে আমি
অবহিত।
(সূরা মুমিনুন-২৩:৫১)
হাদীসে এসেছে,
عَنِ
النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الحَلاَلُ
بَيِّنٌ وَالحَرَامُ بَيِّنٌ،
وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ، لاَ يَدْرِي كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ أَمِنَ
الحَلاَلِ هِيَ أَمْ مِنَ الحَرَامِ، فَمَنْ تَرَكَهَا اسْتِبْرَاءً لِدِينِهِ
وَعِرْضِهِ فَقَدْ سَلِمَ، وَمَنْ وَاقَعَ شَيْئًا مِنْهَا، يُوشِكُ أَنْ
يُوَاقِعَ الحَرَامَ،
হালাল সুষ্টষ্ট,
হারামও সুষ্পষ্ট। আর
এদুয়ের মাঝখানে রয়েছে
কিচু সন্দেহজনক জিনিস।
অধিকাংশ লোকেরা অবগত
নয় যে, এগুলো
হালাল নাকি হারাম।
কাজেই যে ব্যক্তি
এসব সন্দেহজনক জিনিস
থেকে দুরে থাকল,
সে তার দ্বীন
ও ইজ্হতকে হেফাযত
করল। পক্ষান্তারে যে
ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষেয়ে
জড়িয়ে পড়ল, সে
হারামের মধ্যে ফেঁসে
গেল।
(তিরমিযি-১২০৫ শামেলা)
হালাল ও হারামের পরিচয়ঃ
হালালঃ হালাল শব্দের অর্থ হচ্ছে বৈধ, উপকারী ও কল্যানকর বস্তু ও কাজসমূহ। যা কিছু মানুষের জন্য উপকারী ও কল্যানকর
ওই সকল কাজ ও বস্তুকে মহান আল্লাহ পাক মানুষের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। যেমন:
নামাজ, রোজা,
হজ,
জাকাত, পর্দা করা, গরুর গোশত ইত্যাদি। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে যে সব
বিষয়কে ইসলামে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামি পরিভাষায়
সেটাই হালাল।
আল্লামা ইউসুফ
কারযাভী তার “ইসলামে হালাল হারামের বিধান” গ্রন্থে বলেন-মুবাহ, নিষিদ্ধ নয় এমন শরীয়ত প্রনেতা যা করার অনুমতি দিয়েছেন বা যা করতে নিষেধ করেন
নি তাই হালাল।
হারামঃ হারাম শব্দের অর্থ হচ্ছে ক্ষতিকর, অবৈধ,
অকল্যানকর কাজ ও বস্তুসমূহ। যে সমস্ত কাজ বা বস্তু মানুষের
জন্য অপকারী বা ক্ষতিকর তার সব কিছুই ইসলামে মহান আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। যেমন: শুকরের গোশত,
ঘুষ,
সুদ,
বেপর্দা এবং সকল পাপ কর্ম ইত্যাদি। অর্থাৎ, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে যে সকল বিষয়কে ইসলামে অবৈধ বলে ঘোষণা
করা হয়েছে,
ইসলামি পরিভাষায় সেটাই হারাম।
আল্লামা ইউসুফ কারযাভী তার “ইসলামে হালাল হারামের বিধান” গ্রন্থে বলেন-শরীয়ত দাতা
যা স্পস্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন,যা করলে পরকালে অবশ্যই
জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হতে হবে,অনেক সময় দুনিয়ায় ও দন্ড
ভোগ করতে হবে,তাই হারাম।
খাবার দু‘ই প্রকার:
পবিত্র
বস্তু হতে আহার করা সৎকর্ম করার পূর্ব শর্ত। বৈধ ও অবৈধতার দুইটি৬ প্রকার রয়েছে।
এক প্রকার খাদ্য স্থায়ী ভাবে অবৈধ। যেমন শুকরের মাংস, মদ, প্রবাহিত রক্ত, মৃত
জীবের মাংস ইত্যাদি। এই প্রকারের অবৈধ খাদ্য বাধ্য হলে ভক্ষণ করা যাবে বলে কুরআন
কারীমে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রকারের অবৈদ খাদ্য উপার্জন
সংক্রান্ত। সুদ, জুয়া, ঘুম, ডাকাতি, যুলুম, যৌতুক, অবৈধ মজুদদারি, অবৈধ ব্যবসা,
চাঁদাবাজি, ওজনে-পরিমাপে কম দেওয়া, ভেজাল দেওয়া, প্রতারণা বা মিথ্যার মাধ্যমে
ক্রয়বিক্রয় করা, চাকুরিতে চুক্তিমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়া, সরকারের বা জনগণের সম্পদ
অবৈধভাবে ভোগ করা ইত্যাদি এ জাতীয় অবৈধ খাদ্যা। কুরআন-হাদীসে এ প্রকারের অবৈধ
খাদ্য কোনো কারণে বা প্রয়োজনে বৈধ হবে বলে বলা হয়নি।
অবৈধ উপার্জন থেকে আত্মরক্ষা:
মহান
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا
تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى
الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ
وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ
তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের
অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। এবং মানুষের ধন-সম্পদ জেনে শুনে অন্যায়ভাবে
ভক্ষণ করার জন্য তা বিচারকগণের নিকট পেশ করো না। (সূরা বাকারা-২:১১৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ
إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا
أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে
অপরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না; তবে তোমাদের পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা
করা বৈধ। (সূরা নিসা-৪:২৯)
(চলবে---বাকী পর্ব ফেইসবুকে দেখুন)
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
এম এ
রাজ্জাক হাওলাদার
(২য় পর্ব)
উপার্জিত হালাল রিজিক সর্বোত্তম রিজিক:
(১)নিজ হাতে উপার্জিত হালাল রিজিক সর্বোত্তম রিজিক। নবী-রাসূলদের জীবনই হলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হজরত আদম (আ:) কৃষিকাজ করে
জীবিকা নির্বাহ করতেন। হজরত দাউদ (আ:) তৈজসপত্র, লৌহবর্ম
ও অস্ত্র তৈরি করে বিক্রয় করতেন। আমাদের প্রিয় নবী (স.) বাল্যকালে ছাগল চরাতেন এবং
যৌবনে খাদিজা (রা:)-এর ব্যবসা পরিচালনা করে রোজগার করেছেন। মোট কথা, প্রত্যেক নবীই কোনো না কোনো পেশা অবলম্বন করেছিলেন। প্রিয় নবী (স.) বলেছেন,
নিজের শ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত
খাদ্যের তুলনায় উত্তম খাবার কেউ খেতে পারে না। আর আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ:)শ্রম
করে উপার্জন করতেন ও খাবার জোটাতেন। (সহীহ
বুখারী-২০৭৭)
(২)ইসলাম অলসতা, কর্মবিমুখতা
পছন্দ করে না। হালাল উপার্জনে আত্মনিয়োজিত ব্যক্তি
কর্মঠ হিসেবে গড়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ (স.) বর্ণনা করেন,
عَنِ الزُّبَيْرِ
بْنِ العَوَّامِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ: «لَأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ
حَبْلَهُ، فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ، فَيَبِيعَهَا،
فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ
أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ»
তোমাদের কারো রশি দিয়ে কাঠ বেঁধে এনে
তা বিক্রি করা এবং তা দিয়ে নিজের সম্মান বাঁচানো, মানুষের
কাছে হাত পাতার চেয়ে উত্তম।(সহীহ বুখারী-১৪৭১)
হজরত রাফে ইবনে খাদিজা (রা:) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(স.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,
عَنْ رِفَاعَةَ بْنِ رَافِعِ (رضـ)
اَنَّ النَّبِىَّ (صـ) سُئِلَ اَئُّ الْكَسْبِ اَطيَبُ ؟ قَالَ عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ (رواه البزار ــ بلغ المرام ــ782)
সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির নিজস্ব
শ্রমলব্ধ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।(মুসনাদে
আহমাদ-৪/১৪১; বুলুগুল মারাম-৭৮২)
(৩)হালাল উপার্জন
না করার পরিণাম: সম্বন্ধে হাদিসে কঠোর শাস্তির কথা বলা
হয়েছে। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,
যে দেহের গোশত হারাম খাদ্য দিয়ে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না। হারাম খাদ্য দিয়ে গঠিত দেহের জন্য
জাহান্নামের আগুনই উত্তম।(মেশকাত-২৬৩৪)
(৪)হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। উপার্জন হালাল না হলে বান্দার ইবাদত ও দোয়া কোনো কিছুই কবুল হবে না। হাদিস
শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স.)এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ
করে বলেন,
যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করেছে, যার চুলগুলো এলোমেলো, শরীর ধুলামলিন যে
আসমানের দিকে হাত তুলে ইয়া রব! ইয়া রব! বলছে অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম, তার
জীবিকা হারাম। এতদসত্ত্বেও কিভাবে তার দোয়া কবুল হতে পারে? (সহীহ
মুসলিম-২৩৯৩)
(চলবে---বাকী পর্ব ফেইসবুকে দেখুন)
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
এম এ
রাজ্জাক হাওলাদার
(৩য় পর্ব)
হারাম উপার্জনের পথ সমুহঃ
১.অবৈধ
ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করাঃ অবৈধ ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করা ইসলামি শরীয়তে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ
وَ تُدۡلُوۡا بِہَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَال
النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ
অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদেরকে (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের
সম্পদের কোন অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পার।(সুরা বাকারা-২:১৮৮)
অপর
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا
تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ
تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ
اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا
হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ
অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক
সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না।
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।(সুরা নিসা-৪:২৯)
এ
সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন- যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ বা অবৈধ ভাবে কোন মুসলিমের অধিকার চিনিয়ে নিবে আল্লাহ
তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করবেন এবং জান্নাত তার জন্য নিষিদ্ধ করবেন। এক ব্যক্তি
প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর
রাসুল, যদি সামান্য
কোন দ্রব্য হয়? তিনি বললেন, আরাক গাছের একটি কর্তিত ডাল ও যদি এভাবে
গ্রহণ করে তাহলে এই শাস্তি। (সহিহ মুসলিম-১/১২২)
অপর
হাদিসে এসেছে,
রাসুল (স.) বলেন, যে ব্যক্তি
অন্যায় ভাবে বা জুলুম করে এক বিঘত পরিমান জমি গ্রহণ করবে কেয়ামতের দিন তাকে সপ্ত
পৃথিবী সহ সেই জমিন তার গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে।(সহীহ বুখারী-৩/১১৬৮)
২.ইয়াতীমের
সম্পদ অন্যায় ভাবে গ্রাস করাঃ অবৈধ উপার্জনের অন্য একটি পন্থা হলো ইয়াতীম,সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা দুর্বল শ্রেনির
লোকদের সম্পদ অন্যায় ভাবে গ্রাস করা।এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কঠিন নিষেধাজ্ঞা জারি
করে ঘোষণা করেন-
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ
الۡیَتٰمٰی ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِہِمۡ نَارًا ؕ وَ
سَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا
নিশ্চয় যারা ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে
ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে; আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ
করবে।(সুরা নিসা-৪:১০)
এ সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন- যদি কেউ কোন
অমুসলিম নাগরিক বা প্রবাসীকে জুলুম করে,তাকে অপমান করে,তাকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব প্রদান করে বা
তার ইচ্ছা ও আগ্রহ ছাড়া তার নিকট থেকে কোন কিছু গ্রহণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন আমি
তার বিপক্ষে বাদী হব।(সুনানু আবু দাউদ-৩/১৭০.হাদিসটি হাসান)
৩.মাপে
বা ওজনে কম দেওয়াঃ কুরআন ও
হাদিসে বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ অবৈধ লেনদেনের মধ্যে অন্যতম হলো ওজনে বা মাপে কম
দেওয়া।এর নিষেধাজ্ঞায় আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-
وَیۡلٌ لِّلۡمُطَفِّفِیۡنَ ــــ الَّذِیۡنَ
اِذَا اکۡتَالُوۡا عَلَی النَّاسِ یَسۡتَوۡفُوۡنَ ـــ وَ اِذَا کَالُوۡہُمۡ اَوۡ
وَّزَنُوۡہُمۡ یُخۡسِرُوۡنَ
ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য।যারা
লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে।আর যখন তাদেরকে মেপে দেয়
অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়।(সুরা মুতাফফিফীন-৮৩:১-৩)
এ
সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন- যখন কোন সম্প্রদায়ের মানুষেরা মাপে বা ওজনে কম বা ভেজাল দিতে থাকে, তখন তারা দুর্ভিক্ষ,জীবন যাত্রার কাঠিন্য ও প্রশাসনের বা
ক্ষমতাশীলদের অত্যাচারের শিকার হয়।(সুনানু ইবনে মাজাহ-২/১৩৩২)
৪.প্রতারণা
বা ধোকা দেওয়াঃ পবিত্র কুরআন
ও হাদিসে বিশেষ ভাবে নিষেধকৃত অন্য অবৈধ উপার্জন হলো প্রতারণা বা ধোকার মাধ্যমে
উপার্জন।যাকে আরবিতে গিশশ বলা হয়।প্রস্তুতকারক সংস্থা বা দেশের নাম পরিবর্তন করা,উপাদান উপকরণ হিসেবে পণ্যের লেভেলে যা লিখা
আছে তার চেয়ে কম দেওয়া,এক পণ্য দেখি
অন্য পণ্য দেওয়া গিশশ এর
অন্তর্ভুক্ত।আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে এ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ঘোষণা করেন-
وَ لَا تَلۡبِسُوا الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ
تَکۡتُمُوا الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
আর তোমরা হককে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করো না
এবং জেনে-বুঝে হককে গোপন করো না।(সুরা বাকারা-২:৪২)
এ
সম্পর্কে রাসুল সঃ বলেন- যে ব্যক্তি আমাদেরকে ফাকি বা ধোকা দিবে আমাদের সাথে তার কোন সম্পর্ক
নাই।(সহীহ মুসলিম-১/৯৯)
৫.কর্মক্ষেত্রে
ফাকি দেওয়াঃ কর্ম
ক্ষেত্রে ফাকি দিয়ে,যথাযথ দায়িত্ব
পালন না করে,চুক্তি
মোতাবেক কাজ সম্পাদন না করে তার বেতন ভোগ করাও হারাম উপার্জনের অন্যতম একটি
পথ।সরকারি বা বেসরকারি যে কোন কর্মস্থলে কর্মদাতার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে
কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়া,কর্মে অবহেলা
করা এ সবই এর অন্তর্ভুক্ত।এ বিষয়ে সকলের সচেতন হতে হবে অন্যথায় হারাম উপার্জনের
জন্য জাহান্নামের জ্বালানি হতে হবে।
৬.গুলুল
তথা সরকারি বা জনগণের সম্পদ গ্রাস করাঃ কুরআন ও হাদিসে নিষদ্ধ অন্যতম একটি বিষয় হলো
গুলুল।সকল প্রকার অবৈধ উপার্জনকেই গুলুল বলা হয়।তবে বিশেষ ভাবে সরকারি বা জনগনের
সম্পদ কোন নেতা, কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নাগরিক কর্তৃক দখল,গ্রাস বা ভক্ষণ করাকে গুলুল বলা হয়। বর্তমান
সময়ে গুলুল করা আমাদের সমাজে পেশায় রুপান্তরিত হয়েছে।দেশের এই ক্রান্তিকালেও আমরা
গুলুল থেকে বিরত হচ্ছিনা।পাপী ছাড়া কোন ভাল মানুষ এসব কাজ করতে পারেনা।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-
وَ مَا کَانَ لِنَبِیٍّ اَنۡ یَّغُلَّ ؕ وَ مَنۡ
یَّغۡلُلۡ یَاۡتِ بِمَا غَلَّ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ۚ ثُمَّ تُوَفّٰی کُلُّ نَفۡسٍ
مَّا کَسَبَتۡ وَ ہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ
আর কোন নবীর জন্য উচিত নয় যে, সে খিয়ানত করবে। আর যে খিয়ানত করবে, কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে তা নিয়ে যা সে
খিয়ানত করেছে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে পুরোপুরি দেয়া হবে যা সে উপার্জন করেছে
এবং তাদেরকে যুলম করা হবে না।(সুরা আলে ইমরান-৩:১৬১)
৭.ঘুষঃ অবৈধ উপার্জনের অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো ঘুষ।
যে ব্যক্তি কোন কর্মের জন্য বেতন, সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করেন, সেই কাজের জন্য সেবা গ্রহণ কারী সংশ্লিস্ট
ব্যক্তি বা অন্য কারো থেকে কোন প্রকার হাদিয়া,বখশিশ বা বদলা নেওয়াই ঘুষ।যেমন, কোন অফিসের কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো যেকোন
ধরনের ফাইল সাইন করা এবং যত শীঘ্র সম্ভব তা পাশ করে দেওয়া। কিন্তু তিনি যদি এই
কাজের জন্য সংশ্লিস্ট ব্যক্তির কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ দাবী করে বা গ্রহণ করে তাই
ঘুষ।
এছাড়া নেতা,কর্মকর্তা,কর্মচারি,বিচারক প্রমুখকে তাদের কৃপাদৃস্টি আকৃস্ট
করার জন্য যে হাদিয়া প্রদান করা হয় তাও ঘুষ বলে হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে।ঘুষের
ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا
الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ
الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো
নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(সুরা মায়িদাহ-৫:৯০)
এ
সম্পর্কে ওমর রাঃ বলেন-
لَعَنَةُ اللهِ عَلَى الرَّاشِىْ
وَالْمُرْتَشِىَ (بخارى ــ مسلم ــ ابوداؤد ــ3582) عَنْ عَبْدُ اللهِ بْنِ عَمْرٍ
(رضـ) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (صـ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত, নবী
করিম (স.) বলেছেন, ঘুষ গ্রহণকারী এবং ঘুষদানকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর
লা‘নত। (বুখারী-; মুসলিম-;
সুনান আত
তিরমিজি-৩/৬২২)
৮.সুদ: সুদ অবৈধ উপার্জনের অন্যতম একটি
হাতিয়ার।সুদের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দেয়।এটি একটি অভিশপ্ত সামাজিক
ব্যাধি। সুদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-
الَّذِينَ
يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ
الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ
الرِّبَا وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ
مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ
وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (275)
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ
كَفَّارٍ أَثِيمٍ (276) إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ
وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (277) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ
مُؤْمِنِينَ (278) فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ
وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ
وَلَا تُظْلَمُونَ (279)
যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা
এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা
হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর
সে বিরত হল, যা গত হয়েছে
তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী
হবে।
আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে
দেন। আর আল্লাহ কোন অতি কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না।
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট
আছে, তা পরিত্যাগ
কর, যদি তোমরা
মুমিন হও।
কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা
যুলম করবে না এবং তোমাদের যুলম করা হবে না।(সুরা বাকারা ২:২৭৫-২৭৯)
এ
সম্পর্কে রাসুল (স.)
বলেন-
اَلرِّبَا سَبْعُنَ حُوْبًا اَيْسَرُهَا اَنْ
يَنْكِحُ الرَّجثلُ اُمَّهُ (ابن ماجه ــ 2360)
সুদের মধ্যে ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে।এর মধ্যে
সর্বনিম্ন গুনাহ হলো নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমতুল্য।(বায়হাকি ও
সুনান ইবনে মাজাহ-২৩৬০)
রাসুল
(স.) আরো বলেন-
عَنْ عَبْد ِ اللهِ، قَالَ: «لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا
وَمُؤْكِلَهُ»، قَالَ: قُلْتُ: وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ؟ وَقَالَ: «هُمْ
سَوَاءٌ»
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্নিত, রাসুল (স.) সুদ গ্রহিতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং সুদের লেনদেনের সাক্ষীদ্বয়ের
প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তিনি বলেছেন, পাপের দিক থেকে তারা সবাই সমান
অপরাধী।(সহীহ মুসলিম-১৫৯৮;শামেলা-১০৬; মিশকাত সুদ অধ্যায়)
৯.জুয়াঃ অবৈধ উপার্জনের অন্যতম আরেকটি পথ হচ্ছে
জুয়া।প্রত্যেক ঐ মুআমালাকে জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত
থাকে। [জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-২/৩৩৬]
كُلُّ شَيْءٍ مِنَ الْقِمَارِ فَهُوَ مِنَ
الْمَيْسِرِ حَتَّى لَعِبِ الصِّبْيَانِ بِالْجَوْزِ
প্রত্যেক বাজি মাইছির তথা জুয়ার অন্তর্ভূক্ত
এমনকি শিশুদের হারজিতের খেলাও জুয়ার অন্তর্ভূক্ত। [তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/১১৬, সূরা মায়িদা-৯০-৯৩]
মূলত জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত থাকে, এমন অর্থের খেলার নাম জুয়া।
ইসলামে জুয়াকে হারাম ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা
বলেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا
الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ
الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো
নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।(সুরা মায়িদা-৫:৯০)
১০.যৌতুকঃ যৌতুক একটি মারাত্নক সামাজিক ব্যধি।যার
কারনে সমাজে নির্যাতিত হচ্ছে হাজার হাজার নারী।অবৈধ উপার্জনের অন্য একটি দিক হলো
যৌতুক।যা স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।ইসলামি শরীয়ত
যৌতুক কে সম্পুর্ন হারাম ঘোষণা করেছে।হারাম খাদ্য ভক্ষণ করার পর আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাইলে আল্লাহ হয়ত মাফ করে দিতে পারেন কিন্তু যৌতুকের মাধ্যমে অর্জিত টাকা
ভক্ষনের অপরাধ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না।আমাদের সমাজে যা প্রচলিত ইসলামে রয়েছে
তার উল্টো টা।ইসলাম বলেছে স্বামী যেন স্ত্রী কে বিয়ে করার পর তাকে মোহর দিয়ে দেয়।এ
সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন-
وَ اٰتُوا النِّسَآءَ صَدُقٰتِہِنَّ نِحۡلَۃً ؕ
فَاِنۡ طِبۡنَ لَکُمۡ عَنۡ شَیۡءٍ مِّنۡہُ نَفۡسًا فَکُلُوۡہُ ہَنِیۡٓــًٔا
مَّرِیۡٓــًٔا
আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের
মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি
তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও। (সুরা নিসা-৪:৪)
যেখানে পুরুষ কর্তৃক স্ত্রীকে মোহরানা দেওয়ার
কথা রয়েছে সেখানে আমাদের সমাজ অন্যায় ভাবে যৌতুকের মত জঘন্য একটি কাজ অসহায় মেয়ের
বাবার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।যা সম্পুর্ন আল্লাহর আদেশ লংঘনের অন্তর্ভুক্ত।
(চলবে---বাকী পর্ব ফেইসবুকে দেখুন)
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
এম এ
রাজ্জাক হাওলাদার
(৪র্থ পর্ব)
বৈধ উপার্জনের সুফলঃ
(১) জীবনে হালাল পথ অবলম্বন একজন মুসলিমের
জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেয়। কারণ হাশরের ময়দানে প্রত্যেক মুসলিমকে যে-৫টি
প্রশ্ন করা হবে যার সঠিক উত্তর ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা, সেগুলো
সঠিক উত্তর তারাই দিতে পারবে যারা ইহজীবনে হালাল পথ অবলম্বন করেছে এবং জীবনে তার
প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
(২) হালাল পথ অবলম্বন করে সম্পদ উপার্জন মহান
আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।
(৩) কেয়ামতের দিন পুরস্কার হিসেবে জান্নাত লাভ।
(৪) হালাল উপার্জন ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত।
(৫) উপার্জনে হালাল পথ অবলম্বন করা মহান
আল্লাহর ইবাদত করার শামিল।
(৬) পৃথিবীতে অগাধ সম্মানের অধিকারী হওয়া।
(৭) মহান আল্লাহর রহমত প্রাপ্তি।
(৮) মানসিক প্রশান্তি লাভ ও মানবিক সকল
গুনাবলী অর্জন করা, ইত্যাদি।
জীবনে হালাল পথ অবলম্বন করলে ইহজাগতিক ও
পরজাগতিক উভয় জগতে প্রশান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়।
অবৈধ বা হারাম উপার্জনের পরিণতি:
(ক)এবাদত কবুল হয় না:
আল্লাহর এবাদত করার সময় যে সব উপকরণ ব্যবহৃত হয় সেগুলো যদি অবৈধ পন্থায়
অর্জিত হয় তাহলে ঐ হারাম উপকরণগুলো যতক্ষণ
দেহে থাকবে ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের কোন এবাদত-বন্দেগী
কবুল করবে না। রাসূল করিম (স.) বলেন,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: «مَنِ
اشْتَرَى ثَوْبًا بِعَشَرَةِ دَرَاهِمَ، وَفِيهِ
دِرْهَمٌ حَرَامٌ، لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهُ صَلَاةً مَادَامَ عَلَيْهِ
কোন ব্যক্তি যদি দশ হিরহাম দ্বারা একটি কাপড়
ক্রয় করে,
যার এক দিরহাম হারাম পন্থায় অর্জিত, তবে ঐ
কাপড় যতদিন তার পরনে থাকবে ততদিন আল্লাহ তায়ালা তার কোন প্রকার সালাত কবুল করবেন
না।(মুসনাদে আহমদ-৫৭৩২শামে)
(খ)দু‘আ কবুল হয় না:
বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি চেয়ে অথবা মনের কোন চাওয়া-পাওয়া জানিয়ে প্রায়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট আমরা প্রার্থনা বা দু‘আ করে থাকি। আমাদের উপার্জন যদি হয় অবৈধ, তাহলে
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সেই দু‘আ গ্রহণ করবে না। রাসূল (স.) বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ،
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ
السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَهُ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ، يَا
رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ،
وَغُذِّيَ بِالحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ.)ترمذى ــ2989)
রাসূল (স.) একবার
এক ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে।
ফলে তার চেহারা হয়ে গেছে উস্কু-খুস্ক ও ধুলি-ধুসরিত। এ অবস্থায় সে তার হাত দুখানি আসমানের দিকে তুলে বলতে থাকে,
হে প্রভু! হে প্রভু! (এ
বলে দু‘আ করতে থাকে) অথচ সে যা কিছু
পানাহার করে (খ্যাদ্য), যা কিছু পরিধান
করে (বস্ত্র), যা কিছু ব্যবহার করে,
তার সবটাই হারাম। কাজেই কিভাবে তার দু‘আ কবুল
হবে। (তিরমিযি-২৯৮৯শামেলা)
(গ)হারাম উপার্জন সদকা করলে কোন সাওয়াব মিলে না:
আমরা অনেক সময় পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে অনাথ-এতিমদের দেখে ২/১টি
টাকা দান করে থাকি। কখনও কখনও মসজিদ, মাদ্রাসা বা জনকল্যাণকর
কোন সংস্থায় অনুদান দিয়ে থাকি। অনেক সময় মরহুম পিতা-মাতা,
দাদা-দাদি, নানা-নানি ইত্যাদি নিকটাত্মীয়দের জন্য সদকার ব্যবস্থা করে থাকি। যদি এসব ব্যয়
হারাম উপার্জন থেকে করা হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে কোন সওয়াব দান করবেন
না। রাসূল (স.) বলেছেন,
لاَيَكْسِبُ عَبْدً مَالِ حَرَامٌ
فَيَتَصَدَّقُ مٍنْهُ فَيَقَبْلُ مِنْهُ
وَرلاَ يَنْفِقُ مِنْهُ فَيَبَارَكَ لَهُ فِيْهِ وَلاَ يَتْرُكْهُ خَلِفَ ظُهْرِهِ
ــــ (مشكوة ،،احمد )
কোন বান্দা অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদ যদি
সদকা করে,
তবে উহা কবুল হবে না। যদি ঐ মাল (সংসারের
অন্যান্য কাজে) খরচ করে, তবে তাতে বরকত
হবে না। যদি হারাম সম্পদ রেখে সে মারা যায় তবে উহা তাকে দোযখে নিয়ে যাওয়ার পাথেয়
হবে। আল্লাহ তায়ালা মন্দ দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন না বরং ভাল দ্বারা মন্দকে মিটিয়ে দেন। খারাপ জিনিষ অপর খারাপ জিনিসকে
নিশ্চিহৃ করতে পারে না। (মেশকাত- আহমদ-
)
(ঘ)হারামে বর্ধিত দেহ জান্নাতে যাবে না:
কোন লোক ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত আবেদ বা পরহিযগারই
হউক না কেন, আয়-উপার্জনে
যদি তার হালালিয়াত না থাকে, হারাম খাদ্য যদি তার দেহের
সাথে মিশ্রিত হয়ে যায় তাহলে সে দেহ নিয়ে জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব। হাদীসে এসেছে,
لَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ (دارمى ــ 2657)
ঐ গোশ্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যা হারাম
উপায়ে বর্ধিত হয়েছে। (দারেমী-২৬৫৭)
অন্য হাদীসে এসেছে,
لاَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذْئِ بَحَرَامٍ
(ارشاد رسول ــ87 ــطبرانى )
ঐ শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা
হারাম জীবিকা দ্বারা বর্ধিত হয়েছে। (ইরশাদে রাসূল-৮৭; তাবারানী)
(ঙ)চুরি করা জিনিস নিয়েই চোরের হাশর-নশর:
কোন লোক যদি দুনিয়াতে কোন বস্তু আত্মসাৎ করে
তাহলে কিয়ামতের দিন ঐ বস্তুটি কাঁধে নিয়েই সে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে।
হাশরবাসীরা সকলেই সেদিন জানতে পারবে যে অমুক সাধু লোকটি আসলে ছিল একটি চোর বা
আত্মসাৎ কারী। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَدِيِّ بْنِ
عَمِيرَةَ الْكِنْدِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ، فَكَتَمَنَا مِخْيَطًا، فَمَا فَوْقَهُ كَانَ
غُلُولًا يَأْتِي بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»، قَالَ: فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ أَسْوَدُ مِنَ الْأَنْصَارِ كَأَنِّي أَنْظُرُ
إِلَيْهِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اقْبَلْ عَنِّي عَمَلَكَ، قَالَ: «وَمَا
لَكَ؟» قَالَ: سَمِعْتُكَ تَقُولُ: كَذَا وَكَذَا، قَالَ: «وَأَنَا أَقُولُهُ
الْآنَ، مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَلٍ، فَلْيَجِئْ بِقَلِيلِهِ وَكَثِيرِهِ، فَمَا أُوتِيَ
مِنْهُ أَخَذَ، وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهَى»
আমরা তোমাদের কাউকে যদি সরকারী পদে নিয়োগ দেই
এবং সে যদি তারপর একটা সুই পরিমাণ বস্তু অথবা তার চেয়েও বেশি কিছু আমাদের থেকে
গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারী রূপে
গন্য হবে। কিয়ামতের দিন তা নিয়েই হাশরের
ময়দানে হাজির হবে।---তা থেকে সে যেন বিরত থাকে।(সহীহ মুসলিম-১৮৩৩;শামে-৩০)
(ছ)আত্মসাৎকৃত বস্তু আগুনের রূপ ধারণ করবে:
হাদীসে রয়েছে,
عَنْ مَالِكِ بْنِ
أَنَسٍ، يُقَالُ لَهُ مِدْعَمٌ، فَبَيْنَمَا هُوَ يَحُطُّ رَحْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ سَهْمٌ عَائِرٌ، حَتَّى أَصَابَ ذَلِكَ العَبْدَ،
فَقَالَ النَّاسُ: هَنِيئًا لَهُ الشَّهَادَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلْ،
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِي أَصَابَهَا يَوْمَ
خَيْبَرَ مِنَ المَغَانِمِ، لَمْ تُصِبْهَا المَقَاسِمُ، لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا» فَجَاءَ رَجُلٌ حِينَ سَمِعَ ذَلِكَ مِنَ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشِرَاكٍ أَوْ بِشِرَاكَيْنِ،
فَقَالَ: هَذَا شَيْءٌ كُنْتُ أَصَبْتُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «شِرَاكٌ - أَوْ شِرَاكَانِ - مِنْ نَارٍ» (بخارى ــ4234)
এক ব্যক্তি মিদআম নামক একটি গোলামকে রাসুল (স.) এর নিকট হাদিয়া প্রাদান করল। একদা সে রাসুল (স.) এর সাওয়ারীর উপর থেকে হাওদা (গদী) নামিয়ে
রাখছিল। এমন সময় অজ্ঞাত ব্যক্তি থেকে একটি তীর এসে তাকে বিদ্ধ করল। ফলে সে মারা
গেল। লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, তার জন্য জান্নাত মোবারক
হোক। তখন রাসূল (স.) বললেন, কখনও নয়, সেই
সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, খয়বর
যুদ্ধের গণীমতের মাল থেকে বন্টন ব্যতিত সে যে চাদরখানা হস্তগত করেছে, তা
অবশ্যেই আগুন হয়ে তাকে গগ্ধ করছে।------। (সহীহ বুখারী-৪২৩৪)
(চলবে---বাকী পর্ব ফেইসবুকে দেখুন)
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব ও হারাম উপার্জনের পরিণতি
এম এ
রাজ্জাক হাওলাদার
(৫ম পর্ব)-শেষ
হারাম
উপার্জনের পরিণতীর আরো কিছু দিক:
(১)অবৈধ
সম্পদের দ্বারা দান করলে তা কবুল হবেনাঃ এ সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন-
বৈধ জীবিকার ইবাদত ছাড়া কোন প্রকার ইবাদত
আল্লাহর নিকট উঠানো হবেনা।(সহীহ বুখারী-২/৫১১)
রাসুল (স.) আরো বলেন-
لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ
بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ (بخارى ــ63)
ওযু গোসল ছাড়া নামাজ কবুল হয়না, আর অবৈধ সম্পদের কোন দান কবুল হয়না।(সহীহ
বুখারী-১/৬৩)
(২)অবৈধ
উপার্জনে আল্লাহ বরকত দেন নাঃ অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদে আল্লাহ তায়ালা
কখনো বরকত দেন না।সে কখনো মনতুস্টি পায়না।এসম্পর্কে রাসুল সঃ বলেন-
فَمَنْ يَأْخُذْ مَالًا
بِحَقِّهِ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ، وَمَنْ يَأْخُذْ مَالًا بِغَيْرِ حَقِّهِ
فَمَثَلُهُ، كَمَثَلِ الَّذِي يَأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ»
যে ব্যক্তি বৈধ পন্থায় ধনসম্পদ গ্রহন করে তার
সম্পদে বরকত দেওয়া হয়।আর যে ব্যক্তি অবৈধভাবে কোন সম্পদ গ্রহণ করে তার উদাহারন হলো
সে ব্যক্তির মত যে খায় অথচ পরিতৃপ্ত হয়না।(সহীহ মুসলিম-১০৫২; শামেলা-১২১)
(৩)অবৈধ
উপার্জন দিয়ে দান করলে সওয়াবের পরিবর্তে পাপ পাবেঃ অবৈধ উপার্জন থেকে ব্য্য করলে আল্লাহ বরকত
দেন না।উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার নিজের জাহান্নামের পাথেয় হয়।এ
সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন-
وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
যে ব্যক্তি অবৈধ ভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর
তা দান করে, সে এই দানের
জন্য কোন সওয়াব পাবেনা এবং তার পাপ তাতে ভোগ করতে হবে।(সহিহ ইবনে হিব্বান-৮/১১)
ইবনে
আব্বাস (রাঃ)-কে এই মর্মে প্রশ্ন করা হলো যে এক ব্যক্তি একটি প্রশাসনিক দায়িত্বে
ছিল।তখন সে জুলুম করে এবং অবৈধভাবে ধন সম্পদ উপার্জন করে।পরে সে তাওবা করে এবং সে
সম্পদ দিয়ে হজ করে,দান করে এবং
বিভিন্ন জনকল্যাণ মুলক কাজে ব্যয় করে।তখন ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন- হারাম বা পাপ কখনো
পাপ মোচন করেনা।বরং হালাল টাকা থেকে ব্যয় করলে পাপ মোচন হয়।(ইবনে রজব, জামিউল উলুম-১২৭পৃ.)
(৪)অবৈধ
উপার্জন কারীর ইবাদত কখনো কবুল হয়না।
(৫)অবৈধ
উপার্জন কারীর শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। তার স্থান হবে জাহান্নামে।এ সম্পর্কে রাসুল (স.)
বলেন- ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা যার শরীর হারাম খাদ্যে গঠিত বা বৃদ্ধি
প্রাপ্ত হয়েছে।
(৬)অবৈধ
উপার্জন কারীর পাপ আল্লাহ ততক্ষন পর্যন্ত ক্ষমা করবেন না যতক্ষন না যার ক্ষতি করে উপার্জন
করা হয়েছে সে ক্ষমা না করে।
অবৈধ
উপার্জন কারীর করনীয়ঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাপে লিপ্ত ব্যক্তি অগণিত
মানুষের ওজনে কম দিয়েছেন, ঘুষ নিয়েছেন, সরকারের বা জনগণের সম্পদ গ্রাস করেছেন, কর্মে ফাকি দিয়েছেন এমতাবস্থায় কিভাবে তিনি
তাদের পাওনা শোধ করবেন এ বিষয়ে যদি কারো অনুশোচনা হয় তাহলে সে নিম্নোক্ত পদ্ধতি
অবলম্বন করতে পারেন যার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেও করতে পারেন।
১. সকল প্রকার অবৈধ উপার্জন সম্পুর্ন রুপে বর্জন
করবেন।
২. অবৈধ ভাবে উপার্জিত সমস্ত অর্থ সম্পদ মাযলুম
বা যাদের থেকে অবৈধ ভাবে নিয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় ও দান
করবেন।এতে কখনোই নিজে কোন পূণ্যের আশা করবেন না।তবে হয়ত আল্লাহ দয়া করে এর সওয়াব
মাযলুমদেরকে প্রদান করবেন এবং তাকে পাপমুক্ত করবেন।
৩. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইবেন।
৪. বেশি বেশি নেক কর্ম করবেন।
উপসংহার:
প্রিয় মুসল্লিয়ান!
আজেকে আলোচনার শেষ
প্রান্তে বলতে হয়
যে,
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার
তাগিদে মানুষকে কোন
না কোন পন্থায়
উপার্জন করতেই হয়।
হাত গুটিয়ে বসে
থাকলে কেউ মুখে
খাবার তুলে দিবে
না। সেই জন্য
আল্লাহ তায়ালা হালাল
উপার্জনের জন্য পৃথিবীতে
ছড়িয়ে পড়তে হবে।
শেষ করছি রাসূল (স.)-এর একটি বাণী শুনিয়ে তা হলো:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:
«يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لاَ يُبَالِي المَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ،
أَمِنَ الحَلاَلِ أَمْ مِنَ الحَرَامِ»
মানুষের সামনে
এমন এক যুগ
আসবে, যখন মানুষ
মোটেই পরওয়া (খেয়াল)
করবে না যে,
সে যা নিচ্ছে
বা গ্রহণ করছে,
তা কি হালাল
উপায়ে হচ্ছে না
হারাম উপায়। (অর্থাৎ
মানুষ হালাল হারামের
মধ্যে কোনই তারতম্য
করবেনা)।(সহীহ
বুখারী-২০৫৯)
মহান আল্লাহ
তায়ালা আমাদের সকলকে
হালাল উপার্জনের গুরুত্ব
ও হারাম উপার্জনের
পরিণতি সঠিক ভাবে
অনুদাবন চলতে পারি
সেই তাওফিক দান
করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com