ইসলামে স্ত্রীর অধিকার
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভুমিকা:
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় স্ত্রীকে পৃথিবীর সর্বোত্তম নিয়ামত বলা হয়েছে। আর এই স্ত্রীর কাছে গেলে প্রশান্তি লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে
কুরআনুল কারীমে এসেছে:
وَمِنْ
آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا
وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ
يَتَفَكَّرُونَ (سورة الروم ــ 21)
আল্লাহর
এক নিদর্শন এই যে,
তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের
মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে
পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে
নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রূম-৩০: ২১)
আল্লাহ প্রদত্ত এই নিয়ামতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তার
অধিকারের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা দরকার। বর্তমান সমাজে অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে সে ভাবে
মূল্যায়ন করা হয় না। আল্লাহ ও মহানবী (স.) তাদেরকে যে অধিকারগুলো দিয়েছেন সেগুলো
থেকে বঞ্চিত করা হয়। সমাজ তাদেরকে বঞ্চিত করলেও দোষ দেয়া হয় ইসলামকে।
সুতরাং আজকের
আলোচনায় আমরা ইসলাম স্ত্রীকে কি কি অধিকার দিয়েছে। সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ইসলামে স্ত্রীর অধিকার
সমূহ:
নিম্নে ইসলামে স্ত্রীর অধিকার সমূহ নিয়ে
কুরআন হাদীসের আলোকে আলোচনা করছি।
(১)স্ত্রীর রয়েছে দুনিয়ার
শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের মর্যাদা পাওয়ার অধিকার:
عَنْ
عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،
قَالَ: الدُّنْيَا مَتَاعٌ، وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(স.) বলেছেন,
এই দুনিয়ার সবই নিয়ামত এবং দুনিয়ার
সর্বোত্তম নিয়ামত হলো পুণ্যবতী নারী। (মুসলিম : ৩৫৩৫)
عَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:
أَرْبَعٌ مَنْ أُعْطِيَهُنَّ فَقَدْ أُعْطِيَ خَيْرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ:
قَلْبٌ شَاكِرٌ، وَلِسَانٌ ذَاكِرٌ، وَبَدَنٌ عَلَى الْبَلَاءِ صَابِرٌ،
وَزَوْجَةٌ لَا تَبْغِيهِ خَوْنًا فِي نَفْسِهَا وَلَا مَالِهِ
আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
(স.) বলেছেন,
চারটি জিনিস যাকে দেয়া হয়েছে
তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যণই প্রদান করা হয়েছে। কৃতজ্ঞ আত্মা, যিকিরকারী জিহ্বা, মসিবতে ধৈর্য্যধারণকারী দেহ এবং এমন স্ত্রী যে তার নিজের ও
সম্পদের খেয়ানত করে না। (শুয়াবিল ঈমান : ৪১১৫)
(২)স্ত্রীর সদাচরণ পাওয়ার
অধিকার:
وَعَاشِرُوهُنَّ
بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا
وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
নারীদের
সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অত:পর যদি তাদেরকে অপছšদ কর, তবে হয়ত
তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে
আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা নিসা-৪ : ১৯)
(৩)স্ত্রীর কাছে ভালো মনে
হওয়ার মত আচরণ করা:
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، وَخَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ
لِنِسَائِهِمْ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম
চরিত্রের ব্যক্তি। যে সব লোক নিজেদের স্ত্রীর কাছে তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম।
(তিরমিযী : ১১৬২)
(৫)মহানবী (স.) স্ত্রীদের
কাছে ভালো ছিলেন:
عَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ:
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي
আব্দুল্লাহ
ইবনে (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে
উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে উত্তম। (ইবনে মাজাহ : ১৯৭৭)
(৬)স্ত্রীর প্রতি সহনশীল হওয়া:
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ، فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ
مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ
تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا
بِالنِّسَاءِ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা নারীদের উত্তম নসীহত প্রদান করবে। কেননা
নারী জাতিকে পাঁজরের বাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে উপরের
হাড়টি বেশী বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদেরকে নসীহত করতে
থাক। (বুখারী : ৩৩৩১)
(৭)স্ত্রীর অর্থনৈতিক অধিকার:
وَأُحِلَّ
لَكُمْ مَا وَرَاءَ ذَلِكُمْ أَنْ تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُمْ مُحْصِنِينَ غَيْرَ
مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُمْ بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ
فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُمْ بِهِ مِنْ بَعْدِ
الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
এদেরকে
ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ
করবে,
তাকে তার নির্ধারিত হক দান
কর। তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয়
আল্লাহ সুবিজ্ঞ,
রহস্যবিদ। (সূরা নিসা-৪ : ২৪)
(৮) স্ত্রীকে সন্তুষ্টচিত্তে মোহর প্রদান করা:
وَآتُوا النِّسَاءَ
صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا
فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
আর তোমরা
স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচছন্দ্যে
ভোগ কর। (সূরা নিসা-৪:০৪)
(৯) মোহর নিয়ে কোনরূপ প্রতারণা না করা:
عَنْ
مَيْمُونٍ الْكُرْدِيِّ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا مَرَّةً وَلَا مَرَّتَيْنِ وَلَا ثَلَاثَةً حَتَّى بَلَغَ
عَشْرَ مِرَارٍ: أَيُّمَا رَجُلٍ تَزَوَّجَ امْرَأَةً بِمَا قَلَّ مِنَ الْمَهْرِ
أَوْ كَثُرَ لَيْسَ فِي نَفْسِهِ أَنْ يُؤَدِّيَ إِلَيْهَا حَقَّهَا، خَدَعَهَا،
فَمَاتَ وَلَمْ يُؤَدِّ إِلَيْهَا حَقَّهَا، لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
وَهُوَ زَانٍ
মাইমুন আল
কুদরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীকে কম অথবা বেশী মোহর নির্ধারণ করে
বিয়ে করে,
আর মনে মনে চিন্তা করে যে সে
মোহর পরিশোধ করবে না;
তবে সে স্ত্রীকে ধোকা দিল।
অতঃপর সে মোহর আদায় না করেই মারা যায়, তবে কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারী হিসাবে সাক্ষাত করবে। (মু’জামুল আওসাত : ১৮৫১)
(১০)স্ত্রীর থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা:
وَعَلَى
الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
আর
সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ পিতার উপর হলো সে সমস্ত নারীর খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত
নিয়ম অনুযায়ী। (সূরা বাকারা-২ : ২৩৩)
عَنْ
حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا
رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: أَنْ
تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ،
وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِগ্ধ،
قَالَ أَبُو دَاوُدَ: وَلَا تُقَبِّحْ أَنْ تَقُولَ: قَبَّحَكِ اللَّهُ
হাকীম
ইবনে মু’আবিয়া আল-কুশায়রী (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা আমি
বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? রাসূলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান
করলে তাকেও পোশাক পরিধান করাবে। তার মুখমন্ডলে প্রহার করবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যে রাখবে।
(আবু দাউদ : ২১৪২)
(১১)স্ত্রীকে আমানত মনে করা:
عَنْ
جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى حجة الودع
فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ،
وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا
يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ
فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ
وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
জাবির
ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বিদায় হজ্জের ভাষনের এক পর্যায়ে বলেছেন, তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে
আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদেরকে নিজেদের
জন্য হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তার যেন তোমাদের শয্যায় এমন কাউকে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা
অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত
ভরণ-পোষণে ও পোশাক-পরিচ্ছদের হক রয়েছে। (মুসলিম : ২৮৪০)
(১২) স্ত্রীর সাথে কার্পণ্য না করা:
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: قَالَتْ هِنْدُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ
أَبَا سُفْيَانَ رَجُلٌ شَحِيحٌ، فَهَلْ عَلَيَّ جُنَاحٌ أَنْ آخُذَ مِنْ مَالِهِ
مَا يَكْفِينِي وَبَنِيَّ؟ قَالَ: خُذِي بِالْمَعْرُوفِ
আয়শা
(রাঃ) বলেন,আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আবু সুফিয়ান কৃপণ লোক। আমার ও সন্তানের
জন্য যথেষ্ট হয় এমন কিছু যদি তার মাল থেকে গ্রহণ করি, তবে কি আমার গুনাহ হবে? তিনি বললেন, ন্যায়সঙ্গতভাবে গ্রহণ করতে পার। (বুখারী : ৫৩৭০)
(১৩) একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা:
فَانْكِحُوا
مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ
أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى
أَلَّا تَعُولُوا
আর যদি
তোমরা ভয় কর যে,
এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে
পুরণ করতে পারবে না,
তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে
যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন,
কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি
এরূপ আশঙ্কা কর যে,
তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত
আচরণ বজায় রাখতে পারবে না,
তবে একটিই অথবা তোমাদের
অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে;
এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না
হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।(সূরা নিসা-৪:০৩)
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:
إِذَا كَانَ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ
يَوْمَ القِيَامَةِ وَشِقُّهُ سَاقِطٌ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে লোকের দু’জন স্ত্রী আছে সে লোক যদি তাদের মধ্যে সমতা না রাখে তবে
কিয়ামতের দিন সে লোক তার দেহের এক পার্শ্ব ভাঙ্গা অবস্থায় উপস্থিত হবে। (তিরমিযী :
১১৪১)
(১৪) স্ত্রীকে নিয়ে পর্যটনে যাওয়া:
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ،
فَأَيَّتُهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا مَعَهُ، وَكَانَ يَقْسِمُ لِكُلِّ
امْرَأَةٍ مِنْهُنَّ يَوْمَهَا وَلَيْلَتَهَا، غَيْرَ أَنَّ سَوْدَةَ بِنْتَ
زَمْعَةَ وَهَبَتْ يَوْمَهَا وَلَيْلَتَهَا لِعَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَبْتَغِي بِذَلِكَ رِضَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
আয়শা
(রাঃ) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (স.) সফরের
মনস্থ করলে স্ত্রীগণের মধ্যে লটারির ব্যবস্থা করতেন। যার নাম আসতো তিনি তাকে নিয়েই
সফরে বের হতেন। এছাড়া প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য একদিন একরাত নির্দিষ্ট করে দিতেন। তবে
সাওদা বিনতে যাম’য়াহ (রাঃ) নিজের দিন ও রাত মহানবী (স.) এর স্ত্রী আয়শা
(রাঃ) কে দান করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) এর সন্তুষ্টি কামনা
করতেন। (বুখারী : ২৫৯৩)
(১৫) স্ত্রীর বিনোদনের ব্যবস্থা করা:
عَنِ
ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ،
قَالَتْ: لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَوْمًا عَلَى بَابِ حُجْرَتِي وَالحَبَشَةُ يَلْعَبُونَ فِي المَسْجِدِ،
وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتُرُنِي بِرِدَائِهِ،
أَنْظُرُ إِلَى لَعِبِهِمْ
আয়শা
(রাঃ) বলেন,
একদা আমি রাসূলুল্লাহ (স.)
কে আমার ঘরের দরজায় দেখলাম। তখন হাবশার লোকেরা মসজিদে বর্শা দ্বারা খেলা করছিল।
আল্লাহর রাসূল তাঁর চাদর দ্বারা আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি ওদের খেলা অবলোকন
করছিলাম। (বুখারী : ৪৫৪)
عَنْ
عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا كَانَتْ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ قَالَتْ: فَسَابَقْتُهُ فَسَبَقْتُهُ عَلَى
رِجْلَيَّ، فَلَمَّا حَمَلْتُ اللَّحْمَ سَابَقْتُهُ فَسَبَقَنِي فَقَالَ: هَذِهِ
بِتِلْكَ السَّبْقَةِ
আয়শা
(রাঃ) বর্ণিত,
তিনি এক সফরে মহানবী (স.) এর
সাথে ছিলেন। তিনি বলেন,
আমি তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি
মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সাথে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিয়ে বিজয়ী হলেন। তিনি বললেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ : ২৫৭৮)
(১৬)স্ত্রীর বান্ধবীদেরকে মূল্যায়ন করা:
عَنْ
عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كُنْتُ أَلْعَبُ بِالْبَنَاتِ عِنْدَ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ لِي صَوَاحِبُ يَلْعَبْنَ
مَعِي، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ
يَتَقَمَّعْنَ مِنْهُ، فَيُسَرِّبُهُنَّ إِلَيَّ فَيَلْعَبْنَ مَعِي
আয়শা
(রাঃ) বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ (স.) এর
সামনে পুতুল খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করতো। রাসূলুল্লাহ (স.) ঘরে
প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাতো। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং
তারা আমার সঙ্গে খেলতো। (বুখারী : ৬১৩০)
(১৭) স্ত্রীকে বিপথগামিতা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা:
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا
النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ
اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে
রক্ষা কর,
যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা'আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।
(১৮) স্ত্রীকে ইবাদতের দিকে উৎসাহিত করা:
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
رَحِمَ اللَّهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى، وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ،
فَإِنْ أَبَتْ، نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، رَحِمَ اللَّهُ امْرَأَةً قَامَتْ
مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ، وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى، نَضَحَتْ فِي
وَجْهِهِ الْمَاءَ
আবু
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন যে রাতে সজাগ হয়ে নিজে
সালাত আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও সজাগ করে। স্ত্রী উঠতে না চাইলে সে তার
মুখমন্ডলে পানি ছিটায়। (আবু দাউদ : ১৩০৮)
(১৯) স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করা:
عَنْ
عُمَرَ بْنِ حَمْزَةَ الْعُمَرِيِّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَعْدٍ،
قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً
يَوْمَ الْقِيَامَةِ، الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ، وَتُفْضِي إِلَيْهِ،
ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا
আবু সাঈদ
খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম
পর্যায়ের,
যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত
হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। (মুসলিম :
৩৪৩৪)
عَنْ
عُمَرَ بْنِ حَمْزَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ
أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الْأَمَانَةِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ،
الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ، وَتُفْضِي إِلَيْهِ، ثُمَّ يَنْشُرُ
سِرَّهَا وَقَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ: إِنَّ أَعْظَمَ
আবু সাঈদ
খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় আমানত খেয়ানতকারী যে তার
স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। (মুসলিম :
৩৪৩৫)
উপসংহার:
প্রিয় ভাইয়েরা! পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,
দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া
শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে স্ত্রী। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) তাদের জন্য অনেক হক
নির্ধারণ করেছেন। সে হকগুলো সঠিকভাবে আদায় করা প্রত্যেক স্বামীর জন্য অপরিহার্য। আর তা করলে প্রতিটি দম্পতি দুনিয়াতে
সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবে। মহান আল্লাহ সকল স্বামীকে তাদের স্ত্রীগণের
অধিকার যথাযথভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com