মাদকের
ক্ষতিকর প্রভাব ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ইসলাম
এম এ রাজ্জাক হাওলাদার
ভুমিকা:
মহান আল্লাহ মানুষের স্রষ্টা। তিনিই ভাল
জানেন কোন বিধান মেনে ও কোন জিনিস খেয়ে তারা ভাল থাকবে। পৃথিবীর অধিকাংশ জিনিসই
তিনি মানব জাতির জন্য হালাল করেছেন। আর যে সমস্ত জিনিস মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর
সেগুলোই তিনি হারাম করেছেন। হারামকৃত জিনিসগুলোর মধ্যে মদ একটি। মদ মানবদেহ বিশেষ
করে মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি বস্তু। যা গ্রহণ করলে মানুষের মস্তিষ্ক
বিকৃতি ঘটে এবং শারীরিক নানা সমস্যা তৈরি করে। ইসলাম এই মদকে হারাম করেছে সুন্দর
সমাজ উপহার দেয়ার জন্য। আমাদের আজকের আলোচ্যবিষয় মাদকের ক্ষতিকর দিক ও মাদকমুক্ত
সমাজ গঠনে ইসলাম।
মদের
পরিচয়:
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ
تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ
يَعْقِلُونَ
খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মাদক ও
উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই
বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল-১৬:৬৭)
হাদীসে
এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ مُسْكِرٍ
حَرَامٌ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ
يَتُبْ، لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যা কিছু নেশা তৈরী করে তাই মদ। আর যাই নেশার
উদ্রেক করে তাই হারাম। যে লোক দুনিয়াতে মদ পান করবে, আবার সব সময় এই কাজ করে তাওবাহ না করেই
মৃত্যুমুখে পতিত হবে, সে আখিরাতে তা
পান করতে পারবে না। (মুসলিম-৫১১৩)
অন্য
একখানা হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى مِنْبَرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، يَقُولُ: أَمَّا بَعْدُ، أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ نَزَلَ تَحْرِيمُ
الخَمْرِ، وَهْيَ مِنْ خَمْسَةٍ مِنْ: العِنَبِ وَالتَّمْرِ وَالعَسَلِ
وَالحِنْطَةِ وَالشَّعِيرِ وَالخَمْرُ مَا خَامَرَ العَقْلَ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ (স.) এর
মিম্বরে আরোহন করে বলতে শুনেছি যে, হে লোক সকল! মদপানের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ
হয়েছে আর তা হচ্ছে পাঁচ প্রকার: খুরমা থেকে, আঙ্গুর থেকে, মধু থেকে, গম থেকে এবং যব থেকে। আর মদ হল যা সুস্থ
বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। (বুখারী-৪৬১৯)
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে মদ, গাজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন এগুলো মাদক দ্রব্য। এছাড়া যা কিছু
নেশার সৃষ্টি করে সবই মাদকদ্রব্য হিসাবে গণ্য।
মাদকের
ক্ষতিকর প্রভাব:
কুরআন ও হাদিসের বক্তব্য থেকে এটা দিবালোকের
ন্যায় পরিষ্কার যে, মানুষের জন্য
উপকারী কোন বস্তু আল্লাহ তা’আলা হারাম করেননি। অতএব বুঝতে হবে যাকিছু তিনি হারাম করেছেন, সেগুলোর মধ্যে অবশ্যই মানব জাতির জন্য কোন না
কোন অকল্যাণ রয়েছে। মাদকতার মধ্যে যে সমস্ত ক্ষতিকর দিক রয়েছে সেগুলো নিম্নে
আলোচনা করা হলো।
ক.মদের
মাধ্যমে শয়তান মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে:
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ
بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ
وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে
শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে
বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও
কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়িদাহ-৫:৯১)
খ.যিকির
ও সালাতের প্রতিবন্ধকতা:
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ
بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ
وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে
শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে
বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও
কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়িদাহ-৫:৯১)
গ.মদ্যপায়ীর
সালাত কবুল হয় না:
عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، قَالَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ شَرِبَ الخَمْرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ
صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَإِنْ عَادَ
لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهُ صَلاَةً أَرْبَعِينَ صَبَاحًا، فَإِنْ تَابَ تَابَ
اللَّهُ عَلَيْهِ، فَإِنْ عَادَ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهُ صَلاَةً أَرْبَعِينَ
صَبَاحًا، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَإِنْ عَادَ الرَّابِعَةَ لَمْ
يَقْبَلِ اللَّهُ لَهُ صَلاَةً أَرْبَعِينَ صَبَاحًا، فَإِنْ تَابَ لَمْ يَتُبِ اللَّهُ
عَلَيْهِ، وَسَقَاهُ مِنْ نَهْرِ الخَبَالِ قِيلَ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ:
وَمَا نَهْرُ الخَبَالِ؟ قَالَ: نَهْرٌ مِنْ صَدِيدِ أَهْلِ النَّارِ.هَذَا
حَدِيثٌ حَسَنٌ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদ পানকারী ব্যক্তির চল্লিশ দিনের সালাত কবুল
হয় না। এরপর যদি সে তাওবা করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে
মদ পান করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করেন না। এরপর যদি সে
তাওবা করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদ পান করে তবে
আল্লাহ তায়ালা তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করেন না। এরপর যদি সে তাওবা করে তবে
আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা কবুল করেন। সে যদি চতুর্থ বারে মদ পানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ
তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তায়ালা তার তাওবা
কবুল করেন না এবং তাকে নাহরুল খাবাল থেকে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হর হে আবু আব্দুর
রহমান! নাহরুল খাবাল কি? তিনি বলেন
জাহান্নামীদের পুঁজের ঝর্ণা। (তিরমিযী-১৮৬২)
ঘ.মদ্যপায়ীর
ঈমান থাকে না:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي
وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ
يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً،
يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيهَا أَبْصَارَهُمْ، وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَعَنْ ابْنِ
شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، وَأَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِثْلِهِ، إِلَّا
النُّهْبَةَ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তখন সে মু’মিন থাকে না। যখন কেউ মদ পান করে তখন সে মু’মিন থাকে না। যে চুরি করে চুরি করার সময় সে
মু’মিন থাকে না
এবং কোন ছিনতাইকারী এমনভাবে ছিনতাই করে যে, মানুষ তার দিকে অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে থাকে; তখন সে মু’মিন থাকে না। (বুখারী-৬৭৭২)
ঙ.মাদকতা
কিয়ামতের আলামত:
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ:
سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثًا لاَ
يُحَدِّثُكُمْ بِهِ غَيْرِي، قَالَ: " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ
يَظْهَرَ الجَهْلُ، وَيَقِلَّ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتُشْرَبَ
الخَمْرُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ، حَتَّى يَكُونَ
لِخَمْسِينَ امْرَأَةً قَيِّمُهُنَّ رَجُلٌ وَاحِدٌ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) এমন একটি হাদিস শুনেছি
যা আমি ছাড়া আর কেউ তোমাদের বর্ণনা করবে না। তিনি বলেন, কিয়ামতের কতক নিদর্শন হল: অজ্ঞতা প্রকাশ পাবে, ইলম হ্রাস পাবে, ব্যভিচার প্রকাশ পেতে থাকবে, মদ্যপান ব্যাপক হবে, পুরুষের সংখ্যা কমবে আর নারীদের সংখ্যা বেড়ে
যাবে, এমনকি পঞ্চাশ
জন নারীর পরিচালক হবে একজন পুরুষ। (বুখারী-৫৫৭৭)
চ.মদ
বুদ্ধিকে বিলুপ্ত করে:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى مِنْبَرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، يَقُولُ: أَمَّا بَعْدُ، أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ نَزَلَ تَحْرِيمُ
الخَمْرِ، وَهْيَ مِنْ خَمْسَةٍ مِنْ: العِنَبِ وَالتَّمْرِ وَالعَسَلِ
وَالحِنْطَةِ وَالشَّعِيرِ وَالخَمْرُ مَا خَامَرَ العَقْلَ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ (স.) এর
মিম্বরে আরোহন করে বলতে শুনেছি যে, হে লোক সকল! মদপানের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ
হয়েছে আর তা হচ্ছে পাঁচ প্রকার: খুরমা থেকে, আঙ্গুর থেকে, মধু থেকে, গম থেকে এবং যব থেকে। আর মদ হল যা সুস্থ
বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে। (বুখারী-৪৬১৯)
ছ.দুনিয়ায়
মদ পান কারি আখিরাতে
বঞ্চিত হবে:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ مُسْكِرٍ
حَرَامٌ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ
يَتُبْ، لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ – مسلم
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যা কিছু নেশা তৈরী করে তাই মদ। আর যা নেশার উদ্রেক
করে তাই নিষিদ্ধ। যে লোক দুনিয়াতে মদ পান করবে, আবার সব সময় এ কাজ করে তাওবা না করেই
মৃত্যুমুখে পতিত হবে, সে আখিরাতে তা
পান করতে পারবে না। (মুসলিম-৫১১৩)
এ
সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ
فِيهَا أَنْهَارٌ مِنْ مَاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِنْ لَبَنٍ لَمْ
يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ
مِنْ عَسَلٍ مُصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِنْ
رَبِّهِمْ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاءً حَمِيمًا فَقَطَّعَ
أَمْعَاءَهُمْ
পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং
পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা।
পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা
জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা
তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচিছন্ন করে দেবে? (সূরা মুহাম্মদ-৪৭:১৫)
জ.মদের
সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের উপর আল্লাহ অভিসম্পাৎ বর্ষণ:
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَعَنَ اللَّهُ الْخَمْرَ، وَشَارِبَهَا،
وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَمُبْتَاعَهَا، وَعَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا،
وَحَامِلَهَا، وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদ, তা পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদক, শোধনকারী, যে উৎপাদন করায়, সরবরাহকারী এবং যার জন্য সরবরাহ করা হয় এদর
সকলকে আল্লাহ রা’নত করেছেন। (আবু দাউদ-৩৬৭৪)
ঝ.মদ্যপায়ীকে
আল্লাহ ধ্বংস করবেন:
عن أَبُى مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ، وَاللَّهِ مَا
كَذَبَنِي: سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:
لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ، يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ وَالحَرِيرَ،
وَالخَمْرَ وَالمَعَازِفَ، وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ،
يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ، يَأْتِيهِمْ - يَعْنِي الفَقِيرَ -
لِحَاجَةٍ فَيَقُولُونَ: ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا، فَيُبَيِّتُهُمُ اللَّهُ،
وَيَضَعُ العَلَمَ، وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ
القِيَامَةِ
আবু মালিক আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি
হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি
এমন অনেক দল হবে যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন
তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে
রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দিবেন, আর বাকী লোকদের তিনি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত
বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (বুখারী-৫৫৯০)
মাদকমুক্ত
সমাজ গঠনে ইসলাম:
পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম মাদকের ক্ষতিকর
দিকগুলো বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হয়নি। মারাত্মক ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য থেকে কিভাবে মানব
জাতিকে মুক্ত রাখা যায় সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কুরআন ও হাদিসে
মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে যে সমস্ত ব্যবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে, নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করা হলো।
ক. মদের
প্রতি আকর্ষণ কমানো:
জাহেলী যুগ ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে মদ বৈধ
ছিল। এরপরও যে জিনিস ভবিষ্যতে হারাম হবে তা মহানবী (স.) ও তাঁর কিছু বিচক্ষণ
সাহাবী কোন দিন স্পর্শ করেন নি। উমর (রাঃ) ও মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) একদিন মহানবী
(স.) এর কাছে যেয়ে আরজ করলেন মদের বিষয়ে একটি ফয়সালা হওয়া দরকার। কারণ এটি মানুষের
মস্তিষ্কের স্বাভাবিক অবস্থাকে বিলুপ্ত করে দেয়। তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ
كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া স¤পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের
জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর
পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। (সূরা বাকারা-২:২১৯)
এই আয়াতে মদ হারাম করা হয়নি তবে মদের ক্ষতিকর
দিক বর্ণনা করা হয়েছে। এর ফলে মদের প্রতি আকর্ষণ কমে আসে এবং বুদ্ধিমান সাহাবীগণ
মদ পরিত্যাগ করেন।
খ.
মদপানের বিষয়টি সীমিত করা:
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ একটি নিমন্ত্রণে কিছু
লোককে খাওয়া শেষে মদ পান করান। এরপর সালাতের ইমামতিতে আবদুর রহমান ইবনে আউফ
মতান্তরে আলী ইবনে আবি তালিব মতান্তরে একজন সাহাবী কুরআন মাজীদ সঠিকভাবে তিলাওয়াত
করতে পারছিলেন না। তখন কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا
الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ
হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।
(সূরা
নিসা-৪:৪৩)
এই আয়াত অবতীর্ণ হলে কিছু মানুষ চিন্তা করল
যে কাজ যথাসময়ে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অন্তরায় এমন জিনিস আমরা আর পান করবো না।
আবার কিছু লোক ভাবল যে, নিষেধ তো করা
হয়নি। তাই তারা সালাতে সময় বাঁচিয়ে মদ পান করার অভ্যাস জারি রাখেন।
গ.
চুড়ান্তভাবে মদ হারাম ঘোষণা:
এরপর আরো একটি ঘটনা ঘটে। আতবান ইবনে মালেক
কয়েকজন সাহাবীকে নিমন্ত্রণ করেন। খাওয়া শেষে যথারীতি মদ পান করানো হয়। সা’দ বি আবু ওয়াক্কস নেশাগ্রস্ত হয়ে কবিতা
আবৃত্তি করে আনসারদের দোষরোপ করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে আক আনসার উটের হার সা’দের দিকে ছুঁড়ে মারলে সা’দ মারাত্মকভাবে আহত হন। তিনি রাসূলুল্লাহ (স.)
এর আনসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (স.) দোয়া করলেন, اللهم بين فى الخمر بيانا شافيا তখন মদপানকে নিষিদ্ধ করে আয়াত
নাযিল হয়।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا
الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ
الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ إِنَّمَا يُرِيدُ
الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ
وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ
أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব
শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা
কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে
শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্র স¥রণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়িদাহ-৫:৯০,৯১)
এ
প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে,
عَنْ عَمْرٍو، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ،
قَالَ: لَمَّا نَزَلَ تَحْرِيمُ الْخَمْرِ قَالَ عُمَرُ: اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا
فِي الْخَمْرِ بَيَانًا شِفَاءً، فَنَزَلَتِ الْآيَةُ الَّتِي فِي الْبَقَرَةِ
{يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ}
[البقرة: ২১৯] الْآيَةَ، قَالَ:
فَدُعِيَ عُمَرُ فَقُرِئَتْ عَلَيْهِ، قَالَ: اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِي
الْخَمْرِ بَيَانًا شِفَاءً، فَنَزَلَتِ الْآيَةُ الَّتِي فِي النِّسَاءِ {يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى}
[النساء: ৪৩]
فَكَانَ مُنَادِي
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ
يُنَادِي: أَلَا لَا يَقْرَبَنَّ الصَّلَاةَ سَكْرَانُ ، فَدُعِيَ عُمَرُ
فَقُرِئَتْ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِي الْخَمْرِ بَيَانًا
شِفَاءً، فَنَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ} [المائدة:
৯১]
قَالَ عُمَرُ:
انْتَهَيْنَا
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদ হারাম হওয়া সম্পর্কিত আদেশ তখনও নাযিল
হয়নি। আমি বললাম, হে আল্লাহ!
আমাদের জন্য মদের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিন। অতঃপর সূরা বাকারার ২১৯ নং আয়াত
অবতীর্ণ হলো: তারা তোমাকে মদ ও জুয়া স¤পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের
জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর
পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। অতঃপর উমর (রাঃ) কে ডাকা হলো এবং তাকে এ আয়াত পড়ে
শুনানো হলো। তিনি বললেন, মদের ব্যাপারে
সুস্পষ্ট করে দিন।
অতঃপর সূরা নিসার ৪২ নং আয়াত অবতীর্ণ হলো: হে
ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।
এরপর যখন সালাতের জামাআত প্রস্তুত হতো রাসূলুল্লাহ (স.) এর ঘোষক ঘোষনা করতেন, সাবধান মাতাল অবস্থায় সালাতের কাছেও আসবে না।
উমর (রাঃ) কে ডাকা হলো এবং তাকে এ আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি আবার দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! মদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে বলে
দিন। তখন সূরা মায়িদার ৯০ ও ৯১ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়। হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব
শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা
কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে
শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহ্র স¥রণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? উমর (রাঃ) বলেন, আমরা এ সব কাজ বর্জন করলাম। (আবু দাউদ-৩৬৭০)
ঘ.
মদপানের অপরাধের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছে ইসলাম:
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ح حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ،
حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ
النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَرَبَ فِي الخَمْرِ بِالْجَرِيدِ
وَالنِّعَالِ، وَجَلَدَ أَبُو بَكْرٍ أَرْبَعِينَ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) মদ পানের জন্য গাছের ডø এবং জোতা দ্বার মেরেছেন। আর আবু বকর (রাঃ)
চল্লিশ চাবুক মেরেছেন। (বুখারী-৬৭৭৩)
ঙ. মদের
অল্প পরিমাণকেও হারাম ঘোষণা করেছে ইসলাম:
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا أَسْكَرَ كَثِيرُهُ،
فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (স.)
বলেছেন, নেশা জাতীয়
বস্তু বেশী পরিমাণে যা হারাম তা কম পরিমাণেও হারাম। (আবু দাউদ-৩৬৮১)
চ. মদকে
সকল পাপের চাবী বলে সতর্ক করেছে ইসলাম:
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: أَوْصَانِي
خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تَشْرَبِ الْخَمْرَ، فَإِنَّهَا
مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বন্ধু মুহাম্মদ (স.) আমাকে উপদেশ
দিয়েছেন, শরাব বা মদ পান করো না, কারণ এটি সমস্ত পাপাচারের চাবী। (ইবনে
মাজাহ-৩৩৭১)
উপসংহার:
প্রিয় ভাইয়েরা! উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি
যে, মহান আল্লাহ
আমাদের জন্য যাকিছু হালাল করেছেন, সেগুলো খাদ্য ও পানীয় হিসাবে গ্রহণ করে আমরা
জীবন যাপন করবো। আর ক্ষতিকর বিবেচনায় যাকিছু হারাম করেছেন বিশেষ করে মাদকদ্রব্য
থেকে দূরে থাকবো। যাতে করে সুন্দর একটি সমাজ নিজেদের জন্য গড়তে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে
শান্তির সমাজ উপহার দিতে পারি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমোদের সেই তাওফিক দান
করুন। আমিন।
No comments:
Post a Comment
razzakhowlader59@gmil.com